প্রাসঙ্গিক তথ্য
দেশের ভেতরে বা বাইরে তাজা অবস্থায় ফল প্রেরণ করার মৌলিক কাজগুলো একই ধরনের। যেমন
(ক) স্থানীয় বা আঞ্চলিক বাজারের বা দেশের বাইরের চাহিদা মোতাবেক গাছ থেকে ফল তালোর বয়স নির্ধারণ
(খ) গাছ থেকে ফল তালোর পর মাঠে ছায়াযুক্ত ঠান্ডা স্থানে ফল জড়ো করা
(গ) বৃষ্টি বা খারাপ আবহাওয়ার সময় ফল না পাড়া
(ঘ) ফল সংগ্রহ করে রোদ ছড়ায়ে না রাখা
(ঙ) সমতল স্থানে মাদুর বা তাজা পাতা বিছায়ে গদির মত করে তার উপর ফল রাখা
(চ) ফল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা ।
(ছ) কাটা, ফাটা, রোগ ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত ফল আলাদা করা
(জ) ছোট, মাঝারী ও বড় ফল আলাদা করে পৃথক পৃথক ঝুড়িতে বা প্যাকেটে প্যাকিং করা
(ঝ) মাঠ হতে নির্দিষ্ট স্থানে (বাজার, আড়ৎ, স্টেশন, ট্রাক স্ট্যান্ড, ঘাট, বিমান বন্দর) পরিবহন করা ।
কাজের ধাপ
বাজারজাতকরণের পূর্বে স্থানের দূরত্ব, বাজারে ক্রেতার ধরন ও চাহিদার উপর নির্ভর করে ফলের গ্রেডিং ও প্যাকিং করতে হয় । গ্রেডিং ও প্যাকিং-এর উপর ফলের গুণগত মান অনেকাংশে নির্ভরশীল ।
বাজারজাতকরণের জন্য প্যাকিং
(১) নিরাপদ প্যাকিং করার জন্য ফল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে ।
(২) ফলের গ্রেড অনুসারে পৃথক পৃথক প্যাকেটে ফল সাজাতে হবে,
(৩) ফল একের অধিক স্তরে সাজাতে হলে উভয় স্তরের মাঝে নরম গদির মত করে পাতা, কাগজ বা খড় কুটা দিতে হবে ।
(৪) পরিবহন প্যাকেট বায়ুরোধী না হলে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
(৫) দ্রুত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
(৬) হিমায়িত গাড়িতে পরিবহন করা হলে ফল অনেকটা নিরাপদ থাকবে ।
বাজার তথ্য সংগ্রহ
১) বেশি করে ফল উৎপাদন পরিকল্পনা থাকলে বাজারের পণ্য সরবরাহ ও চাহিদার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এ ব্যাপারে বাজার কমিটির সাথে যোগাযোগ করতে হবে ।
(২) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা পরিসংখ্যান বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে অঞ্চল বিশেষে ফল উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
(৩) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণয়নকৃত হাটবাজারের ট্যারিফ সার্ভে তথ্য নেয়া যেতে পারে,
(৪) স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের জন্য আড়ৎ বা গুদামসমূহের হিসেব বিপণন বিভাগের নিকট হতে নিতে হবে।
(৫) ফড়িয়া বা দালালদের নিকট হতে ফল উৎপাদন ও বিক্রয় বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে । কেননা তারা স্থানীয়ভাবে ঘুরে ঘুরে পণ্য ক্রয় করে ও আড়তে পাঠায়। তারা যদি ব্যাংক হতে বা ধনী ব্যবসায়িদের নিকট হতে অগ্রীম টাকা পায় তাহলে ক্রয়ের ও বিক্রয়ের আগ্রহ এক ধরনের হবে। আবার নিজ পুঁজিতে ক্রয় ও বিক্রয় করে থাকলে আগ্রহ অন্য ধরনের হবে । যা বাজার দরের ওপর প্রভাব ফেলে ।
বাজার তথ্য বিশ্লেষণ
(১) ফল উৎপাদান ও চাহিদার পরিমাণ এবং বিক্রয় স্থানগুলোর অবস্থান এবং সুবিধা-অসুবিধা
(২) ফল পরিবহণ সুবিধা এবং প্রেরণকৃত স্থানসমূহের চাহিদা জানতে হবে, জানতে হবে ।
(৩) বিভিন্ন ফল একইসাথে একই বাজারে বাজারজাতকরণ না করে বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা করতে হবে
(৪) উৎপাদান বেশি হলে বা বাজারে সরবরাহ বেশি হলে অতিরিক্ত ফল সংরক্ষণ করার সুবিধা আছে কিনা তা জানতে হবে,
(৫) ফল উৎপাদন অঞ্চলে উৎপাদিত ফলের জাতগুলোর তথ্য জানতে হবে। কেননা একই জাতের ফল বেশি লাগানো হলে সেগুলো একই সাথে উৎপাদিত হবে এবং একই সাথে বাজারে আসবে। যা বাজারমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ন্যায্য মূল্য বা উচ্চ মূল্য নিশ্চিতকরণ
(১) বাজারের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
(২) বিভিন্ন ধরনের ফলের উৎপাদন এলাকা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সময়ে উৎপন্ন হয় এমন ধরনের ফলের জাত নির্বাচন করতে হবে। উৎপাদন কারিদের নিয়ন্ত্রিতভাবে (সময় ও পরিমাণ উৎপাদন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে ।
(৩) উৎপাদকগণ এক সাথে যাতে বাজারে ফল না আনে সেজন্য প্রচার ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে
(৪) স্থানীয়ভাবে বা কেন্দ্রিয়ভাবে এলাকা ভিত্তিক ফল উৎপাদনের সঠিক তথ্য থাকতে হবে । যাতে বাজারে পণ্য সরবরাহের কর্মসূচি প্রণয়ন করা সম্ভব হয় । সব এলাকায় যেহেতু সব ধরনের ফল উৎপন্ন একই সময়ে হয় না । সেহেতু উৎপাদন এলাকা হতে যেখানে চাহিদা আছে সেখানে সরবরাহের পরিমাণ নিরূপণ করে দেয়া যায় । এছাড়া পণ্য চলাচলের কর্মসূচি তৈরি করা যায় ।
(৫) অতিরিক্ত পণ্য উৎপন্ন হলে বা বাজারে সরবরাহ বেশি হলে হিমায়িত গুদামে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে । বাজারে সরবরাহ কমে গেলে তখন হিমাগার হতে সরবরাহ করতে হবে ।
(৬) প্রতি এলাকার জন্য সমবায় বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
(৭) প্রতিটি পণ্যের স্বীকৃত উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করে ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য ধার্য করতে হবে । যাতে বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেলেও উৎপাদনকারী সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় ।
(৮) উৎপাদনকারীগণ পণ্য বিক্রয় না করে সমবায় বাজারে সরবরাহ দিয়ে গেলে সমবায় বাজার সে পণ্য বিক্রয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। তাতে কৃষকদের হয়রানি বন্ধ হতে পারে ।
(৯) সমবায় বাজার উৎপাদক কর্তৃক সরবরাহকৃত ফল পরিষ্কার, গ্রেডিং ও প্যাকিং করে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে ।
(১০) কৃষকদের ফল উৎপাদনে আগ্রহ বজায় রাখার জন্য উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি হলে সে সময়ে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ।
আরও দেখুন...