ব্যবসা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ - ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি | NCTB BOOK

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে যে সকল বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. পরিবহন ও যাতায়াতের সুবিধা (Transport and Traffic Facility): ব্যবসার সফলতা উন্নত পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। এজন্য এর অবস্থান নির্বাচনে পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ব্যবসার অবস্থান কেন্দ্রের সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলে একদিকে ক্রেতারা সহজেই ঐ স্থানে আগমন করতে পারে অপরদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে অতি সহজে সংগ্রহ করা যায়। এ জন্য পরিবহন ও যাতায়াত সুবিধার কেন্দ্রস্থলে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা গড়ে উঠেছে। 

২. ব্যবসার প্রকৃতি (Nature of Business): ব্যবসার অবস্থান নিরূপণের জন্য এর প্রকৃতি বিবেচনা করা হয় । এজন্য দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা সংগঠন ভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে । যেমন বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো শহরের কেন্দ্রস্থলে গড়ে উঠলেও ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামের যে কোনো সুবিধামতো স্থানে গড়ে ওঠে। 

৩. গুদামজাতকরণ সুবিধা (Ware Housing Facility): ব্যবসায়ী ক্রেতা বা ভোক্তাদের উদ্দেশে উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীর কাছ থেকে একসাথে ব্যাপক পরিমাণ পণ্য ক্রয় করে আনে। এজন্য তাকে গুদামজাত করে রাখতে হয় । তাই দেখা যায় বিভিন্ন শহর, বন্দর ও বাজার এলাকার আশপাশে প্রচুর গুদাম ঘর প্রতিষ্ঠা করা হয় । ব্যবসায়ীগণ তাদের পণ্য সংরক্ষণের সুবিধার জন্য এ সকল স্থানকে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনকে বিবেচনায় আনে । 

৪. কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা (Availability of Raw Materials): পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের উদ্দেশে ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবস্থান নির্বাচনের জন্য কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনা হয় । কারণ কাঁচামাল উৎপাদন এলাকায় গড়ে উঠলে উৎপাদন ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পায় । উদাহরণস্বরূপ চা উৎপাদন অঞ্চলে চা শিল্প, ইক্ষু উৎপাদন অঞ্চলের আশপাশে চিনিশিল্প প্রভৃতি ব্যবসা গড়ে ওঠে। 

৫. শ্রমশক্তির সহজপ্রাপ্যতা (Availability of Manpower): যে সমস্ত ব্যবসায় প্রচুর শ্রমশক্তি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর অবস্থান নির্বাচনে শ্রমিক কর্মীর সহজপ্রাপ্যতাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। কারণ শ্রমশক্তির সহজপ্রাপ্যতার কারণে আমাদের দেশে বহু বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেমন- বাটা কোম্পানি । তাছাড়া আমাদের দেশে সস্তায় এবং সহজে প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায় বিধায় এখানে অনেক গার্মেন্টস শিল্প গড়ে উঠেছে। 

৬. জ্বালানিশক্তির সহজপ্রাপ্যতা (Availability of Fuel): ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনে জ্বালানিশক্তির সহজপ্রাপ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে সহজে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লা প্রভৃতি সহজে পাওয়া যায় সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

৭. ক্রেতাদের অবস্থান (Standard of Customer): ক্রেতাদের মান, রুচি ও চাহিদা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনাপূর্বক ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ব্যবসার অবস্থানগত ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় ।

৮. জমির মূল্য (Value of Land) : বর্তমানে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনে প্রস্তাবিত ব্যবসার প্রয়োজনীয় জমির মূল্যকে বিবেচনায় আনা হয় । যেখানে উঁচু জমি বন্যামুক্ত সস্তায় পাওয়া যায় সেখানে ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে ।

৯. বাজারের সান্নিধ্য (Adjacent of Market): ব্যবসার অবস্থান সাধারণত বাজার এলাকায় গড়ে ওঠে। কারণ ব্যবসা মূলত বাজারকেন্দ্রিক। এজন্য ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনে পণ্যের বাজার এলাকাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হয় ।

১০. মূলধনের পরিমাণ (Amount of Capital): ব্যবসার উদ্যোক্তা কী পরিমাণ মূলধন সরবরাহ করতে পারবে তার উপর ভিত্তি করে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন করতে হয়। অধিক পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করতে পারলে এবং তা যদি বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান হয় তবে শহর এলাকায় বিবেচনায় আনতে হয় । অন্যথায় মূলধন স্বল্প হলে এবং তা যদি ক্ষুদ্রায়তন হয় সেক্ষেত্রে সুবিধামতো যে কোনো স্থানে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন করা যায়।

১১. ভাড়া অগ্রিম (Rent Advance) : অনেক সময় ব্যবসায়ীকে একসাথে প্রচুর টাকা অগ্রিম দিয়ে একটি নির্ধারিত ভাড়া চুক্তিতে ব্যবসার স্থান নির্বাচন করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীর পক্ষে টাকা সরবরাহ দেওয়ার সামর্থ্য কতটুকু সে বিষয়ে বিবেচনাপূর্বক ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন করা হয় ।

১২. সহযোগী ব্যবসার উপস্থিতি (Existance of Subsidiary Business ) : ব্যবসায়ের সফলতা অর্জনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয়। আর এজন্য দেখা যায় শিল্প কারখানার পাশে খুচরা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত কারখানার ব্যবসা গড়ে ওঠে ।

১৩. সম্প্রসারণের সুযোগ (Facility of Expansion) : ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনে এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সম্প্রসারণের সুযোগ-সুবিধা কতটুকু তা বিবেচনা করতে হয় । ভবিষ্যতে ব্যবসায়ের উন্নতির সাথে সাথে যেন এর সম্প্রসারণ করা যায় সে দিক লক্ষ রেখে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন করতে হয় ।

১৪. অন্যান্য বিষয় (Other Factors): ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা, বাজারজাতকরণ সুবিধা, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সুবিধা, ব্যাংক, বিমা কোম্পানি ইত্যাদির নৈকট্য প্রভৃতি সুবিধামতো অবস্থানে নির্বাচন করতে হয় ।

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কারণ ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনের উপর ব্যবসার সফলতা ও ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে । তাই ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনাপূর্বক অবস্থান নির্বাচন করতে হবে ।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion