C4 উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণে প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলো-

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

এ হ্যাচ এন্ড স্ল্যাক চক্র বা C4 - সালোকসংশ্লেষণ (Hatch & Slack Cycle or C4 - Photosynthesis)

যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রথম উৎপন্ন স্থায়ী যৌগ ৪-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো অ্যাসিটিক এসিড উৎপন্ন হয় তাকে C4 সালোকসংশ্লেষণ বা C4-চক্র বলে।

বিজ্ঞানী হুগো কর্টসচক, হ্যার্ট এবং জর্জ বার ১৯৬৫ সালে প্রথম দেখান যে, আখ গাছের পাতায় সালোকসংশ্লেষণের ফলে প্রথম উৎপন্ন স্থায়ী যৌগ অক্সালো অ্যাসিটিক এসিড (OAA) ফসফোগ্লিসারিক এসিড নয়। পরে অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী এম.ডি. হ্যাচ ও সি.আর.স্ল্যাক ১৯৭০ সালে আখ ভুট্টা, (আপাং প্রভৃতি গাছে সালোকসংশ্লেষণের একটি বিশেষচক্র (cycle) আবিষ্কার করেন, যেখানে অক্সালো অ্যাসিটিক এসিডের মাধ্যমে কার্বন আত্তীকরণ প্রক্রিয়াটি ঘটে। তাঁদের নাম অনুসারে এই চক্রটিকে হ্যাচ এন্ড ব্ল্যাক চক্র বলা হয়। যেসব উদ্ভিদে এ ধরনের চক্র দেখা যায় তাদেরকে C4 উদ্ভিদ বলে । এ পর্যন্ত ৩টি একবীজপত্রী এবং ১৬টি দ্বিবীজপত্রী গোত্রে C4-চক্র দেখা যায়। তবে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে কোন উদ্ভিদেই শুধু C3-চক্রের মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ ঘটেনা। এদের পাতায় C3-চক্রও পাশাপাশি কার্যকর থাকে।

পাতার মেসোফিল কোষ এবং বান্ডলসীথ কোষ সম্মিলিতভাবে এই গতিপথ সম্পন্ন করে । হ্যাচ এন্ড স্ল্যাক চক্রে দুটি পর্যায়ে কার্বোক্সিলেশন বিক্রিয়া ঘটে। একটি ঘটে মেসোফিল কোষের ক্লোরোপ্লাস্টে এবং অপরটি ঘটে বান্ডলসীথের ক্লোরোপ্লাস্টে ।

হ্যাচ এন্ড স্ল্যাক চক্রটি নিম্নলিখিত কয়েকটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়:


(i). বায়ুমন্ডলের CO2 প্রথমে ফসফোইনল পাইরুভিক এসিড (PEP)-এর সাথে যুক্ত হয়ে ৪-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো অ্যাসিটিক এসিড (OAA) উৎপন্ন করে। বিক্রিয়াটি PEP কার্বক্সিলেজ এনজাইমের উপস্থিতিতে ঘটে।

PEP + CO2 + H2O (PEP কার্বক্সিলেজ)→  OAA

(ii). OAA পরবর্তীতে ম্যালিক এসিড বা অ্যাসপারটিক এসিডে পরিণত হয়। উপরের বিক্রিয়াগুলো পাতার মেসোফিল টিস্যুতে ঘটে।

OAA + NADPH + H+ • ম্যালিক ডিহাইড্রোজিনেজ
→ম্যালিক এসিড + NADP+
অথবা,

OAA + NH3 + NADPH + H+(অক্সালো অ্যাসিটিক ডিহাইড্রোজিনেজ)→অ্যাসপারটিক এসিড + H2O

(iii). মেসোফিল টিস্যুতে সৃষ্ট ম্যালিক এসিড বান্ডলসীথ কোষের ক্লোরোপ্লাস্টে প্রবেশ করে এবং ডিকার্বক্সিলেজ এনজাইমের (ডিকার্বক্সিলেশন বিক্রিয়া) উপস্থিতিতে পাইরুভিক এসিড ও CO2 উৎপন্ন করে ।

ম্যালিক এসিড (ডিকার্বক্সিলেজ) → পাইরুভিক এসিড + CO2

(iv) এভাবে উৎপন্ন CO2 রাইবুলোজ বিসফসফেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যালভিন চক্রে প্রবেশ করে এবং সালোকসংশ্লেষণে শর্করা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।

(v). পাইরুভিক এসিড বান্ডলসীথ কোষ থেকে মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে আসে এবং পুনরায় PEP প্রস্তুত করে।

পাইরুভিক এসিড+ ATP+Pi ((পাইরুডেট ফসফোকাইনেজ) Mg++) → PEP + AMP + PPi (পাইরোফসফেট)

উদ্ভিদ এবং এদের বৈশিষ্ট্য

গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ১৯টি গোত্রের ৯০০ প্রজাতিরও অধিক উদ্ভিদে C4, চক্র বিদ্যমান (Salishburi, 1996)। Poaceae গোত্রের অনেক উদ্ভিদ এবং Cyperaceae গোত্রের বেশ কিছু উদ্ভিদে C4 চক্র লক্ষ করা যায়। যেমন- ধান গম, ওট, বার্লি, আখ, জোয়ার, ভুট্টা ইত্যাদি। তিন শতাধিক দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে C4 চক্র বর্তমান বলে জানা গেছে। অধিকাংশ C4, উদ্ভিদ একবীজপত্রী ঘাস এবং নলখাগড়া জাতীয় (Sedges)।

 

নিচে C4 উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. C. উদ্ভিদ প্রচুর আলোতে এবং ৩০ - ৪৫° সে. তাপমাত্রা যুক্ত অঞ্চলে বেশি জন্মে। প্রধাণত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের একবীজপত্রী উদ্ভিদ এবং বেশ কিছু দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদেও এ চক্র দেখা যায় ।

২. এরা উচ্চতাপমাত্রায় সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে।

৩. এরা পানির অপচয় কম করে এবং শুষ্ক অঞ্চলেও অভিযোজিত হতে পারে।

৪. এদের মেসোফিলে বেশ দূর পর্যন্ত উন্মুক্ত বায়ুকুঠুরী থাকে যাতে এ টিস্যু সহজেই অধিক পরিমাণে CO, শোষণ ও আত্তীকরণ করতে পারে।

৫ পাতার পরিবহন টিস্যুর চতুর্দিক ঘিরে সুগঠিত বাণ্ডলসীথ অবস্থান করে। বাণ্ডলসীথের চারদিকে ঘিরে মোসোফিল কোষের এক বা একাধিক স্তর থাকতে পারে। এরূপ অন্তর্গঠনকে ক্রাঞ্জ অ্যানাটমি (Kranz Anatomy) বলে।

৬. বাণ্ডলসীথ কোষ ও মেসোফিল কোষে অনেক প্লাজমোডেজমাটা থাকে।

৭. এদের ক্লোরোপ্লাস্ট দুই রকমের (dimiorphic)। মেসোফিল ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রানাম থাকে কিন্তু বাণ্ডলসীথ ক্লোরোপ্লাস্টে সাধারণত গ্রানাম থাকে না।

৮. বাণ্ডলসীথ ক্লোরোপ্লাস্টে প্রচুর স্টার্চ দানা থাকে, কিন্তু মেসোফিল ক্লোরোপ্লাস্টে সাধারণত স্টার্চ দানা থাকে না।

৯. এ চক্রে rubisco এনজাইম মেসোফিলে থাকে না, বাণ্ডলসীথে অবস্থান করে।

১০. উদ্ভিদে আলোকশ্বসন (photorespiration) প্রায় অনুপস্থিত এবং সহজে শনাক্ত করা যায় না। তাই সালোকসংশ্লেষণে উৎপাদিত শর্করার অপচয় কম হয়।

C4 চক্রের গুরুত্ব

১. C4 উদ্ভিদে অধিক তাপমাত্রায় (30° – 45°) সালোকসংশ্লেষণ সংঘটিত হতে পারে। কিন্তু C3 উদ্ভিদে কম তাপমাত্রায় (১০°-২৫°C) CO2 বিজারণ ঘটে।

২. C4 উদ্ভিদের CO2 গ্রাহক ফসফোইনল পাইরুভিক অ্যাসিড C3উদ্ভিদের CO2 গ্রাহক রাইবুলোজ ১.৫ বিসফসফেট অপেক্ষা অধিক কার্যকর।

৩. মরু উদ্ভিদে পত্ররন্ধ্র আংশিকভাবে বন্ধ থাকলেও C4 গতিপথ চলতে পারে।

8. CO2 এর অত্যন্ত কম ঘনত্বে C4 গতিপথ চলতে পারে।

৫. C4 উদ্ভিদে ফটোরেসপিরেশন ও প্রস্বেদন কম হয় বলে CO2 বিজারণ বেশি হয়

৬. C4 উদ্ভিদের পাতায় ক্র্যাঞ্জ অ্যানাটমি-র জন্য এর খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা বেশি ও অতি সহজে এটি পরিবাহিত হতে পারে।

Content added By
Promotion