SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

বাংলাদেশের কোন নদীতে রুই মাছ প্রকৃতিতে ডিম দেয়?

Created: 2 years ago | Updated: 1 month ago

রুই মাছের প্রজনন ও জীবনবৃত্তান্তঃ (Reproduction and Life-history):

প্রজনন তন্ত্র (Reproductive system) : জনন ঋতুতে জনন অঙ্গ বা গোনাড (gonad) পূর্ণ বিকশিত হয়। পুরুষ মাছে একজোড়া লম্বা শুক্রাশয় (testis) ও স্ত্রী মাছে একজোড়া লম্বা ডিম্বাশয় (ovary) পটকার নিচে উদরীয় গহ্বরের পিছনে শায়িত। শুক্রাশয় পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ মেসোৱকিয়াম (mesorchium) পর্দা দিয়ে দেহপ্রাচীরে ঝুলানো থাকে। ডিম্বাশয় পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ মেসোভেরিয়াম (mesovarium) দিয়ে দেহপ্রাচীরে ঝুলানো থাকে। প্রত্যেক শুক্রাশয় থেকে একটি করে শুক্রনালি সৃষ্টি হয়। দুটি শুক্রাশয়ের দুটি শুক্রনালি পেছন দিকে এক হয়ে রেচনজনন রন্ধ্র পথে বাইরে মুক্ত। স্ত্রী মাছ ডিম্বাশয় জোড়া আকারে বড় ডিম্বনালিহীন। পরিপক্ক ডিম্বাশয় থেকে জনন ঋতুতে ডিম দেহগহ্বরে মুক্ত হয়। এখান থেকে ডিম রেচন-জনন সাইনাসের প্রাচীর থেকে অস্থায়ী এজাড়া জনন রন্ধ্র (genita apernure)- পথে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। রুই মাছের ডিম প্রচুর কুসুম (yolk) সমৃদ্ধ।

প্রজনন (Reproductive) : রুই মাছ সাধারণত দুবছর বয়সে জননক্ষম হয়ে ওঠে। জনন ঘটে স্রোতযুক্ত নদীর পানিতে, বন্ধ পানিতে নয়। বাংলাদেশে আগে ৩ বছর বয়সে জননক্ষম হতো। কিন্তু অন্তঃপ্রজননের (incoding) কারণে এখন রুই মাছে এক বছর বয়সেই জনন ঘটে। জুন-জুলাই মাসের দিকে এরা প্রজননের জন্য তৈরি হয়। সাধরণত স্ত্রী মাছ ৫১-৭০ সেমি এবং পুরুষ মাছ ৬৫ সেমি লম্বা হলে প্রজননের জন্য তৈরি হয়। এ মাছ প্রতি কেজি দেহ ওজনের জন্য এক লক্ষ থেকে চার লক্ষ ডিম উৎপাদন করে থাকে।
 

নিষেক (Fertilization) : নদীর পানি যখন ফুলে ওঠে তখন রুই মাছ নদীর অগভীর অংশে প্রবল বর্ষণের মধ্যে ঝাঁক বেঁধে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ হয়। প্রজননের সময় নদীর পানির তাপমাত্রা ২৭-৩০°
 সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।এসময় পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে এবং পানি ঘোলা থাকে। স্ত্রী মাছ প্রথমে পানিতে ডিম (egg) ছাড়লে পুরুষ মাছ তার উপর বীর্য (sperm) ছড়িয়ে দেয়। রুই মাছের নিয়ে দেহের বাইরে নদীর পানিতে সম্পন্ন হয় বলে একে বহিঃনিষেক (extermal fertilization) বলে। নিষিক্ত ডিমকে জাইগোট বলে।

রুই মাছের জীবন চক্র (Life cycle of Labeo Rohita):

জাইগোট সৃষ্টির ৩০-৪৫ মিনিট পরই ক্লিভেজ শুরু হয়। ক্লিভেজ মেরোব্লাস্টিক ধরনের। কোনো প্রাণীর ডিমে যখন ভেজিটাল পোলে (মেরুতে) বেশি পরিমাণে কুসুম থাকায় সম্পূর্ণ ডিমটি ক্লিভেজ প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হতে পারেনা তখন নিষিক নিউক্লিয়াসটি কুসুমের পৃষ্ঠতলে একটি ক্ষুদ্র অংশে আশ্রয় নিয়ে ক্লিভেজের প্রস্তুতি নেয়। অংশটি ক্রমশ একটি ছোট ঢিবির মতো দেখায়। এ অংশের ভিতর ক্লিভেজ ঘটে। এ ধরনের ক্লিভেজকে মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ (meroblastit cleavage) বলে।

ক্লিভেজ শুরু হওয়ার পর নিউক্লিয়াসটি ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ এমন সংখ্যক কোষে বিভক্ত হতে থাকে। ক্লিভেজের ফলে সৃষ্ট প্রতিটি কোষকে ব্লাস্টোমিয়ার (blastomere) বলে। ভ্রূণটি এসময় এক থোকা আঙ্গুরের মতো দেখায়। এর নাম মরুলা (morula)। ভ্রূণের পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে মরুলা ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেশি ঝাঁকুনিতে ভ্রূণ কুসুম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। ব্র্যাস্ট্রোমিয়ারগুলো আরও বিভক্ত ও সুশৃঙ্খল হয়ে ব্লাস্টোডার্ম (blastoderm) নামক এককোষীয় স্তরে বিন্যস্ত হয়। ক্লিভেজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাস্টোমিয়ারগুলোর মাঝে একটি ফাঁপা জায়গা সৃষ্টি হয়ে বৃদ্ধি পায়। এ ফাঁপা স্থানটি হচ্ছে ব্লাস্টোসিল (blastocoel)। অগটিকে তখন ব্লাস্টুলা (blastula) বলে। ব্লাস্টোডার্মের কোষগুলো প্রথম দিকে কুসুমের উপর টুপির মতো বিন্যস্ত থাকে। কোষ বিভাজন অব্যাহত থাকায় কোষগুলো কুসুমকে ঘিরে প্রসারিত হয় এবং এক পর্যায়ে ব্লাস্টোপোর (blastopore) নামক একটি ছিদ্রপথ ছাড়া সমগ্র আবৃত হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য ব্লাস্টোপোরও বন্ধ হয়ে যায়। ব্লাস্টুলা ধীরে ধীরে দ্বিস্তরী গ্যাস্ট্রুলা (gastrula)–য় পরিবর্তিত হয়।

গ্যাস্ট্রুলার পিছন দিক থেকে লেজ ও সামনের দিক থেকে বিভিন্ন অঙ্গের সূচনা হয়। যে প্রক্রিয়ায় গ্যাস্ট্রুলা থেকে বিভিন্ন অঙ্গ তৈরি হয় তার নাম অর্গানোজেনেসিস (organogenesis)। ভূণের মধ্যে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয় এবং ১৫-১৮ ঘন্টার মধ্যে ডিমের ভিতর থেকে লার্ভা (larva) বেরিয়ে আসে। এ লার্ভাকে ডিমপোনা বা রেণুপোনা বলে । এমন অবস্থায় পোনা কোন খাদ্য গ্রহণ করে না এবং কুসুম থেকে পুষ্টি নেয়। লার্ভা দশার পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপঃ

*৬ ঘন্টা পর লার্ভা মাঝে মধ্যে উপরে-নিচে নড়া-চড়া করে। কুসুমের দুই প্রাস্ত তখন সরু হয় এবং লার্ভার হৃৎপিন্ডের কুসুম থলির সামনে অবস্থান নেয়। তখন কুসুম থলি বেশ বড় থাকে। এ অবস্থায় লার্ভা পানির তলদেশে বেশ সময় কাটায় এবং কুসুম থলি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে।

*১২ ঘন্টা পর লার্ভার চোখের রঙ কালো হতে থাকে। ক্রোমাটোফোর উৎপন্ন হওয়ায় এমন হয়। এসময় কুসুম থলি সরু লম্বা হয়।

*২৪ ঘন্টা পর কুসুম থলির পিঠে কালো দাগ দেখা দিতে শুরু করে। লাভায় ফুলকা আর্চ দৃশ্যমান হয়। চোখ মাথার উপরে অবস্থান নেয় এবং নটোকর্ড পিছন দিকে (লেজের দিকে) ঊর্ধ্বমুখী হয়। তখন লেজ ও পায়ু-পাখনা স্পষ্ট দেখা যায়। এ সময় লার্ভা স্বচ্ছ থাকে, তবে ফ্যাকাশে হলদে রঙেরও হতে পারে।

*৩৬ ঘন্টা পর লার্ভায় বক্ষ-পাখনা ও নিচের ঠোঁট স্পষ্ট দেখা যায়। পৃষ্ঠ-পাখনায় কিছু কালো দাগ এবং পুচ্ছ-পাখনায় পুচ্ছ দণ্ড দেখা দেয়।

*৪৮ ঘণ্টা পর লার্তা কিছুটা লম্বা হয়ে ৬.০-৬.৪ মি.মি. হয়। এ সময় কুসুম থলি সামনের দিকে সামান্য উত্তল হয় এবং বায়ু থলি দেখা দেয়। লার্ভার মাথায় ক্রোমাটোফোর উৎপন্ন হতে থাকে, তাই মাথা কালো রঙ ধারণ করে। তখন ফুলকা আর্চ স্পষ্ট এবং দেহ ফ্যাকাশে হলদে রঙে পরিবর্তিত হয়।

*৭২ ঘন্টা পর লার্ভার বায়ু থলি ডিম্বাকার ধারণ করে এবং বক্ষীয় পাখনা স্পষ্ট হতে শুরু করে। পিঠের দু’পাশ উজ্জ্বল হলুদ রঙ ধারণ করে, কুসুম থলি বিলীন হয়ে যায় এবং লার্ভা দশার সমাপ্তি ঘটে। তাপমাত্রার কারণে এ সময়ের কম-বেশি হতে পারে।

*৯৬ ঘন্টা পর লার্ভার মুখ স্পষ্ট হয়ে খাদ্য গ্রহণ শুরু করে। কুসুম থলি প্রায় মিলিয়ে যায় এবং এটি ধানীপোনা বা আঙ্গুলিপোনা হিসেবে পরিচিত হয়।

 *৫ দিন বয়সের পোনা ৮.০-৮.৫ মি.মি. লম্বা হয়। এ সময় লেজের কাছে লাল দাগ দেখা যায়, যা দেখে একে রুই মাছের পোনা বলে শনাক্ত করা যায়। কানকোর রেখা সুস্পষ্ট গঠিত হয়। নটোকর্ডের শেষ প্রান্ত কিছুটা বেঁকে যায় এবং পাখনাগুলোতে রশ্মি আরও স্পষ্ট হয়। 

*১০ দিন বয়সে পোনার দৈর্ঘ্য হয় ১৫-১৮ মি.মি.। সবগুলো পাখনায় পূর্ণাঙ্গ সংখ্যক পাখনা-রশ্মি বিকশি হয়। নাসারন্ধ্র দেখা যায় এবং অন্তঃস্থ বিভাজন স্পষ্ট হয়।

*১৫ দিন বয়সের পোনার দৈর্ঘ্য হয় ২৩ মি.মি.। তখন মুখের দুপাশে একটি করে বার্বেল (barbel) দেখা দেয়, পায়ুর অবস্থান ও খাদ্যনালি স্পষ্ট হয়। এ অবস্থায় আঁইশ দৃশ্যমান না হলেও পোনার দৈহিক গড়ন মোটামুটি সম্পূর্ণ হয়। 

*এরপর মাছটির কেবল আঙ্গিক পরিবর্তন ও আকারের পরিবর্ধন ঘটে। স্ত্রীমাছ আকারে পুরুষ অপেক্ষা বড় হয়। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী ও পুরুষ মাছ যৌন পরিপক্কতা লাভ করে ও প্রজননে সক্ষম হয়।

Content added By

Related Question

View More