আরশোলার হৃদযন্ত্রের স্পন্দন প্রতি মিনিটে কত বার হয় ?

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

ঘাস ফড়িং এর রক্ত সংবহন তন্ত্রঃ দেহের প্রয়োজনীয় উপাদান, পুষ্টি প্ৰবা, হরমোন ইত্যাদি রক্তের মাধ্যমে দেহকোষে পৌছানো এবং দেহকোষ বিপাকে সৃষ্ট বর্জ্য একইভাবে রেচন অঙ্গে নিয়ে আসার প্রক্রিয়ার নামই সংবহন। রক্তের পথ অনুসারে প্রাণিদেহে  ২ ধরনের দেখা যায়, যেমন-মুক্ত (open) বা ল্যাকুনার (lacunar) বদ্ধ সংবহনতন্ত্র।

মুক্ত সংবহন : যে সংবহনতন্ত্রে রক্ত হৃদ্যন্ত্র থেকে নালিকা পথে বের হয়ে উন্মুক্ত দেহগহ্বরে প্রবেশ দেহগহ্বর থেকে পুনরায় নালিকা পথে হৃদ্যন্ত্রে ফিরে আসে তার নাম মুক্ত সংবহন। অর্থাৎ রক্ত সবসময় র মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় না। চিড়িং, পতঙ্গ, মলাস্কা প্রভৃতি প্রাণীর দেহে এ ধরনের সংবহন দেখা যায়। বন্ধ সংবহন : যে সংবহনতন্ত্রে রক্ত সবসময় রক্তবাহিকা ও হৃদ্যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ আবদ্ধ থেকে প্রবাহিত কখনোই দেহ গহ্বরে যুক্ত হয় না তাকে বলে বন্ধ সংবহন। অ্যানিলিড জাতীয় অমেরুদন্ডী প্রাণিদেহে এবং সকল মেরুদণ্ডীয় প্রাণীতে এ ধরনের সংবহন দেখা যায়।

ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহনতন্ত্র অনুন্নত ও মুক্ত ধরনের এবং তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত হিমোসিল, হিমোলিক ও পৃষ্ঠীয় বাহিকা। নিচে এসব অংশের বর্ণনা দেয়া হলো।

ক. হিমোসিল (Haemocoel; গ্রিক, haima = রক্ত + koiloma = গহ্বর ) : ভ্রূণীয় পরিস্ফুটনের সময় প্রধান সিলোমিক গহ্বর ব্লাস্টোসিলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যে নতুন গহ্বরের সৃষ্টি করে তাকে হিমোসিল বা মিক্সোসিল (mixocoel) বলে। হিমোসিল তখন মেসোডার্মাল পেরিটোনিয়ামের পরিবর্তে বহিঃকোষীয় মাতৃকায় (extra cellular matrix) আবৃত থাকে। এটি রক্তপূর্ণ থাকে। ঘাসফড়িং-এর হিমোসিল দুটি অনুগ্রস্থ পর্দা (diaphragm) দিয়ে তিনটি প্রকোষ্ঠ বা সাইনাস (sinus)-এ বিভক্ত। হৃৎযন্ত্রের তলদেশ বরাবর অবস্থিত। পর্দাকে পৃষ্ঠীয় পর্দা এবং স্নায়ুরজ্জুর ঠিক উপরে বিস্তৃত পর্দাকে অঙ্কীয় পর্দা বলে। এদের উপস্থিতির ফলে সৃষ্ট সাইনাস-তিনটি নিম্নরূপ-

i. পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস (Pericardial sinus) এটি পৃষ্ঠীয় পর্দার ঠিক উপরে অবস্থিত। এতে হৃদ্যন্ত্র অবস্থান করে।

ii. পেরিভিসেরাল সাইনাস (Perivisceral sinus) এটি পৃষ্ঠীয় পর্দার নিচে অবস্থিত এবং পৌষ্টিকনালিকে ধারণ করে।

iii. পেরিনিউরাল সাইনাস (Perineural sinus): এটি অঙ্কীয়,

পর্দার নিচে অবস্থিত গহ্বর। এতে স্নায়ুরজ্জু অবস্থান করে। পর্দাগুলো ছিদ্রযুক্ত হওয়ায় রক্ত প্রয়োজন মতো এক সাইনাস থেকে অন্য সাইনাসে যাতায়াত করতে পারে। অভীয় পর্দাটি পায়ের ভিতরেও বিস্তৃত।

কাজ : হিমোসিল দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, রক্ত ও লসিকা ধারণ করে। এর মাধ্যমে খাদ্যরস ও বর্জ্যবস্তু পরিবাহিত হয়।

খ. হিমালিম্ফ (Haemolymph) বা বর্ণহীন প্লাজমা এবং এর মধ্যে ভাসমান অসংখ্য বর্ণহীন রক্তকণিকা বা হিমোসাইট (haemocyte) নিয়ে ঘাসফড়িং-এর রক্ত গঠিত। রঙ হিমোসিল নামক গহ্বরে লসিকা (lymph)-র সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে বলে ঘাসফড়িংসহ বিভিন্ন পতঙ্গের রক্তকে হিমোলিক বলে। হিমোগ্লোবিন বা অন্য কোন ধরনের স্থাসবন্ধক না থাকায় এর রক্ত বর্ণহীন, শ্বসনে তেমন কোন ভূমিকা রাখে না।

কাজ: খাদ্যসার, রেচনন্দ্রা, হরমোন ইত্যাদি পরিবহনে; অ্যামিনো এসিড, কার্বোহাইড্রেট প্রভৃতি জমা রাখা, জীবাণু ধ্বং করা, তঞ্চনে সাহায্য করা এবং ডানার সঞ্চালন ও খোলস মোচনে সহায়তা করা হিমোলিকের কাজ।পৃষ্ঠীয় বাহিকা (Dorsal vessel) : দেহের মধ্য-পৃষ্ঠীয় অবস্থানে রক্ষিত এটি প্রধান স্পন্দনশীল অঙ্গ। এ অঙ্গ দুটি অংশে বিভক্ত- (i) অস্ট্রিয়াবিহীন সোজা নলাকার সম্মুখ ও পশ্চাৎ অ্যাওর্টা এবং (i) হৃদযন্ত্র । ঘাসফড়িং-এ একটি লম্বাটে, নলাকার হত্যপ্ত থাকে। এটি বক্ষ ও উদরীয় অঞ্চলের পৃষ্ঠদেশে মাঝ বরাবর যে গহ্বরে থাকে তাকে ... পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস (pericardial sinus) বলে। হৃদ্যন্ত্রটি সাতটি ফানেল আকার প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। প্রতিটি প্রকোষ্ঠে পার্শ্বীয় দিকে একটি করে মোট একজোড়া ছিদ্র বিদ্যমান। ছিদ্রগুলোকে অস্টিয়া (ostia, একবচনে- ostium) বলে। অস্টিয়ামে কপাটিকা (valve) থাকে, যা রক্তকে হৃদযন্ত্রে কেবলমাত্র প্রবেশ করতে দেয় কিন্তু বের হতে দেয় না। টারগামের অক্ষীয় তলের দুপাশ থেকে অ্যালারি পেশি (alary muscle) নামক ত্রিকোণাকার পাখার মতো বিশেষ ধরনের পেশি উৎপন্ন হয়ে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসের প্রাচীরে যুক্ত হয় এবং হৃদযন্ত্রের পার্শ্বীয়-অঙ্কীয় দেশেও যুক্ত থাকে। ঘাসফড়িংয়ে ৬ জোড়া অ্যালারি পেশি থাকে। এদের সংকোচন প্রসারণ রক্ত সংবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া (Mechanism of Blood Circulation) হৎযন্ত্র ও অ্যালারি পেশির সংকোচন-প্রসারণের ফলেই ঘাসফড়িং-এর দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত প্রবাহিত হয়। প্রত্যন্ত্রের প্রতিটি প্রকোষ্ঠ ক্রমাগত ঢেউয়ের মতো সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয়। ঘাসফড়িং-এর হৃদযন্ত্রের স্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১১০ বার। রক্ত সংবহন প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্তভাবে সম্পাদিত হয়।ঘাসফড়িংয়ের রক্তকে হিমোলিম্ফ (haemolymph) বলে। হিমোলিম্ফ পৃষ্ঠীয় অঙ্গসমূহ 

(ক) রক্তরস (Plasma): এটি বর্ণহীন তরল। এর 70% ই পানি। এতে মস্তকের সাইনাস অবস্থায় থাকে।

(খ) রক্তকণিকা (Haemocytes): ঘাসফড়িংয়ের রক্তরসে হিমোসাইট নামক বর্ণহীন শ্বেতকণিকা থাকে। এদের প্রতি ঘন মিমি রক্তে 15-60 হাজার হিমোসাইট থাকে। ঘাসফড়িংয়ের রক্তে কোনো পেরিভিসেরাল শ্বসন রঞ্জক থাকে না। হিমোসাইট তিন ধরনের হয়, যথা- প্রোহিমোসাইট (23%), ট্রানজিশনাল হিমোসাইট (68%) এবং বৃহৎ হিমোসাইট (9%)। Amold (1972) এর মতে ঘাসফড়িংয়ের রক্তরসে প্রোহিমোসাইট প্লাজমাটোসাইট, গ্রানুলোসাইট এবং স্কেরিওল কোষ  নামক চার ধরনের হিমোসাইট থাকে। ঘাসফড়িংয়ের রক্তকণিকায় কোনো শ্বসন রঞ্জক থাকে না।

অ্যালারি পেশির সংকোচনের ফলে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস থেকে অস্টিয়ার মাধ্যমে হৃদ্যন্ত্রে প্রবেশ করে। পরে কাছে পর্যায়ক্রমে পিছন দিক থেকে সামনের দিকে সংকুচিত হওয়ায় রক্ত সম্মুখে প্রবাহিত হয় এবং অ্যাওর্টার ভিতর দিয়ে মোগিলে পৌঁছে। অস্টিয়ায় কপাটিকা থাকায় রক্ত প্রত্যন্ত্র থেকে বাইরে আসতে পারে না। একইভাবে হৃদ্যন্ত্রের প্রকোষ্ঠসমূহের সংযোগস্থলে কপাটিকা থাকায় রক্ত পিছনের দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। রক্ত প্রথমে মস্তকে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে পিছন দিকে প্রবাহিত হয়। হৃত্যন্ত্র যখন আবার প্রসারিত হয় তখন হিমোসিল হতে পেরিকার্ডিয়ামের প্রাচীরের ছিদ্রপথে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে ফিরে আসে। ঘাসফড়িং-এর সমাদেহে একবার রক্তপ্রবাহ সম্পন্ন হতে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে।

Content added || updated By
Promotion