ক্যালভিন চক্রের পরমিত তাপমাত্রা হলো-

Created: 2 years ago | Updated: 2 years ago
Updated: 2 years ago

ক্যালভিন চক্র (পথ) বা C3—চক্র (Calvin Cycle Phase or C3-Cycle)

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেলভিন ক্যালভিন (Melvin Calvin, 1911–1997) তাঁর দুজন সহকর্মী জে. ব্যাশাম ও এন্ড্রু বেনসনের সহযোগিতায় তেজস্ক্রিয় CO2 ব্যবহার করে সন্ধানী পদ্ধতিতে (tracer technique) ১৯৪৭-১৯৪৯ সালে Chlorella নামক এককোষী শৈবালে কার্বন বিজারণের চক্রাকার গতিপথ আবিষ্কার করেন। এজন্য এ পথটি ক্যালভিন চক্র নামে পরিচিত (১৯৬১ সালে সালোকসংশ্লেষণের উপর বিশেষ অবদানের জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। আবার এ পথের প্রথম স্থায়ী জৈব পদার্থ তিন কার্বনবিশিষ্ট ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড। এজন্য এ পথটি C -চক্র নামেও পরিচিত) যে সমস্ত উদ্ভিদে C♭-চক্রের মাধ্যমে CO, এর বিজারণ হয় সেগুলো C,-উদ্ভিদ নামে অভিহিত হয়।

ক্যালভিন চক্রের বিক্রিয়াগুলো নিম্নলিখিতভাবে বর্ণনা করা যায়।

১. বায়ু থেকে CO2 পাতার পত্ররন্ধ্র দিয়ে প্রবেশ করে প্রথমে কোষে এবং পরে ক্লোরোপ্লাস্টে যায়। সেখানে ৫- কার্বনবিশিষ্ট ও দুটি ৩-ফসফেটযুক্ত রাইবুলোজ - ১.৫-বিসফসফেটের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রথমে ৬-কার্বনবিশিষ্ট বিটা-কিটো এসিড (B-Keto acid) নামক মধ্যবর্তী ও অস্থায়ী পদার্থের সৃষ্টি করে। এটি সৃষ্টি করার জন্য রাইবুলোজ বিসফসফেট কার্বক্সিলেজ অক্সিজিনেজ (Ribulose bis-phosphate Carboxylase Oxygenase, rubisco) নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম অংশ গ্রহণ করে (পৃথিবীতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম হলো rubisco কারণ এটি প্রাকৃতিক – জগত এবং জীবজগতের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন তৈরি করে)। অস্থায়ী কিটো এসিড এক অণু পানির সাহায্যে দুটি
৩-কার্বনবিশিষ্ট । ৩-ফসফোগ্নিসারিক এসিড তেনা উৎপন্ন করে যা CO, বিজারণের প্রথম স্থায়ী পদার্থ এখানে প্রকৃতপক্ষে ৬ অণু CO, ও ৬ অণু রাইবুলোজ বিসফসফেট অংশগ্রহণ করে ৬-অণু বিটা-কিটো এসিড ও পরে ১২ অণু ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড তৈরি করে।

২. ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিডের (3PGA) সঙ্গে ATP বিক্রিয়ার ফলে ফসফোরাইলেশন ঘটে ১,৩- বিসফসফোগ্লিসারিক এসিড (BPGA) উৎপন্ন হয়। এখানে ATP শক্তি খরচ করে। এ বিক্রিয়ায় ফসফোগ্লিসারোকাইনেজ নামক এনজাইমের প্রয়োজন হয় এবং ATP শক্তি যোগায় ফলে ১ অণু ADP মুক্ত হয়।

৩.  ১,৩-বিসফসফোগ্লিসারিক এসিড এখন NADPH + H+ দ্বারা বিজারিত হয়ে ৩-ফসফোগ্লিসারালডিহাইড (3PGAL) অণুতে পরিণত হয়। এ সময় ৩-ফসফোগ্লিসার্যালডিহাইড ডিহাইড্রোজিনেজ নামক এনজাইম বিক্রিয়া ঘটায়। আলোক অধ্যায়ে উৎপন্ন NADPH + H+-এ বিক্রিয়ায় শক্তি যোগায় এবং NADP হিসেবে মুক্ত হয়।

৪. এক অণু ৩ - PGAL ট্রায়োজ ফসফেট আইসোমারেজ এনজাইমের সহায়তায় এক অণু DHAP-এ পরিণত হয়।3-PGAL ও DHAP পরস্পর যুক্ত হয়ে ফ্রুক্টোজ-১, ৬-বিসফসফেট উৎপন্ন করে। এটি সালোকসংশ্লেষণের ফলে উৎপন্ন প্রথম ৬C যুক্ত শর্করা।

৫. ফ্রুক্টোজ-১, ৬-বিসফসফেট যৌগটি ফ্রুক্টোজ-১, ৬- বিসফসফাটেজ এনজাইমের সহায়তায় এক অণু ফসফেট মুক্ত করে ফ্রুক্টোজ-৬ ফসফেটে পরিণত হয়।

৬. ফ্রুক্টোজ-৬--ফসফেট এক অণু ৩ ফসফোগ্লিসারালডিহাইডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি ৪C যুক্ত শর্করা এরিথ্রোজ -৪- ফসফেট ও একটি পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করা জাইলুলোজ -৫ -ফসফেট গঠন করে।

৭. এরিথ্রোজ-৪-ফসফেট যৌগটি ডাই-হাইড্রক্সি অ্যাসিটোন ফসফেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেডোহেপ্টুলোজ-১,৭- বিসফসফেট নামক ৭C যুক্ত শর্করা গঠন করে।

৮. সেডোহেপ্টুলোজ-১, ৭-বিসফসফেট পরবর্তী পর্যায়ে আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে সেডোহেপ্টুলোজ-৭- ফসফেটে পরিণত হয়।

৯. সেডোহেপ্টুলোজ-৭-ফসফেট ট্রান্সকিটোলেজ এনজাইমের সহায়তায় আবার এক অণু PGAL এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক অণু রাইবোজ ৫- ফসফেট ও এক অণু জাইলুলোজ-৫-ফসফেট গঠন করে ।

১০. রাইবোজ-৫-ফসফেট আইসোমারেজ এনজাইমের মাধ্যমে রাইবুলোজ -৫ -ফসফেটে পরিণত হয় এবং জাইলুলোজ- ৫-ফসফেট যৌগটিও এপিমারেজ এনজাইমের সাহায্যে রাইবুলোজ -৫ -ফসফেটে পরিণত হয়।

১১. ক্যালভিন চক্রের শেষ পর্যায়ে রাইবুলোজ ৫- ফসফেট যৌগ ফসফোরাইবুলোজ কাইনেজ এনজাইমের সাহায্যে ATP যৌগের সঙ্গে বিক্রিয়া করে রাইবুলোজ-১, ৫- বিসফসফেট (RuBP) গঠন করে। এই রাইবুলোজ-১.৫- বিসফসফেট পুনরায় CO গ্রহণ করে এই চক্র চালু রাখে।

নগ্নবীজী উদ্ভিদ, টেরিডোফাইটস, ব্রায়োফাইটস এবং শৈবালের যত উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তাদের সবগুলোতেই C চক্র পাওয়া গেছে। অধিকাংশ গুপ্তবীজী উদ্ভিদে, বিশেষ করে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে C3; চক্র বর্তমান। বেশ কিছু একবীজপত্রী উদ্ভিদেও C3, চক্র দেখা দেখা যায়। ১১টি গণের সপুষ্পক উদ্ভিদে C4 এবং C3 উভয় চক্ৰই পাওয়া গেছে (Salisbury, 1986)।

C3 উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

১. C3 উদ্ভিদের স্টোমাটা দিনে খোলা থাকে এবং রাতে বন্ধ থাকে।

২. C3 উদ্ভিদের পাতায় বান্ডলসীথ ঘিরে মেসোফিল কোষের কোন পৃথক স্তর থাকে না অর্থাৎ ক্র্যাঞ্জ অ্যানাটমি অনুপস্থিত

৩. ক্লোরোপ্লাস্টে একই রকম গ্রানাম থাকে।

৪. C3 উদ্ভিদ প্রধানত মেসোফাইটিক (যেসব উদ্ভিদ স্বাভাবিক ও পরিমিত পানি সরবরাহ আছে এরূপ স্থানে বাস করে)।

৫. এ সকল উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের জন্য সুবিধাজনক তাপমাত্রা ১০ - ২৫° সে.।

৬. বাতাসে ২০% এর বেশি O, থাকলে এদের কার্বন বিজারণ বাধাগ্রস্ত হয়। বাতাসে ৫০ – ১৫০ ppm (parts per million) CO2 এর উপস্থিতিতে C, চক্র ভালো চলে।

৮. এদের শর্করা উৎপাদন ক্ষমতা প্রজাতিভেদে নিম্ন থেকে উচ্চ

৯. এ সকল উদ্ভিদে ক্যালভিন চক্রের (C) মাধ্যমে দিনের বেলা CO, আত্তীকরণ ঘটে।

১০. উদ্ভিদে রাইবুলোজ-১, ৫-বিসফসফেট প্রথমে CO, গ্রহণ করে)

১১. এ উদ্ভিদে ক্যালভিন চক্রের প্রথম স্থায়ী যৌগ হচ্ছে ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড।

Content added || updated By
Promotion