ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বাক্যটি কোন কালের?
কাল : ক্রিয়া সংঘটনের সময়কে কাল বলে।
১. আমরা বই পড়ি। ‘পড়া’ ক্রিয়াটি এখন অর্থাৎ বর্তমানে সংঘটিত হচ্ছে।
২. কাল তুমি শহরে গিয়েছিলে। ‘যাওয়া’ ক্রিয়াটি পূর্বে অর্থাৎ অতীতে সম্পন্ন হয়েছে।
৩. আগামীকাল স্কুল বন্ধ থাকবে। ‘বন্ধ থাকা' কাজটি পরে বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে। সুতরাং, ক্রিয়া, বর্তমান, অতীত বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হওয়ার সময় নির্দেশই ক্রিয়ার কাল। এ হিসেবে ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকার : ১. বর্তমান কাল, ২. অতীত কাল এবং ৩. ভবিষ্যৎ কাল।
ক্রিয়াপদ : ক্রিয়ামূল অর্থাৎ ধাতুর সঙ্গে কাল সময় ও পুরুষ জ্ঞাপক (ক্রিয়া) বিভক্তিযোগে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। ক. পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য দেখা যায়। যেমন-
আমি যাই। তুমি যাও। আপনি যান। সে যায়। তিনি যান। (সাধারণ ভবিষ্যৎ কালে নাম পুরুষ ও মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ অভিন্ন।)
খ. বচনভেদে ক্রিয়ার রূপের কোনো পার্থক্য হয় না। যথা-
আমি (বা আমরা) যাই। তুমি (বা তোমরা) যাও। আপনি (বা আপনারা) যান। সে (বা তারা) যায় ৷
তিনি (বা তাঁরা) যান । গ. সাধারণ, সম্ভ্রমাত্মক, তুচ্ছার্থকভেদে মধ্যম ও নাম পুরুষের ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য হয়ে থাকে
(উত্তম পুরুষে হয় না)। যেমন –
কালের প্রকারভেদ
ক্রিয়া সংঘটনের প্রধান কাল বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় :
১. বর্তমান কাল: ক. সাধারণ বর্তমান বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান
খ. ঘটমান বর্তমান
গ. পুরাঘটিত বর্তমান
২. অতীত কাল: ক. সাধারণ অতীত
খ. নিত্যবৃত্ত অতীত
গ. ঘটমান অতীত
ঘ. পুরাঘটিত অতীত।
৩. ভবিষ্যৎ কাল
ক. সাধারণ ভবিষ্যৎ
খ. ঘটমান ভবিষ্যৎ
গ. পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ
বর্তমান কাল
১. সাধারণ বর্তমান কাল : যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণভাবে ঘটে, তার কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলে। যেমন— সে ভাত খায়। আমি বাড়ি যাই। ক. নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল : স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়াকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলে। যথা-
সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়। (স্বাভাবিকতা )
আমি রোজ সকালে বেড়াতে যাই। (অভ্যস্ততা)
নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ
(১) স্থায়ী সত্য প্রকাশে : চার আর তিনে সাত হয়।
(২) ঐতিহাসিক বর্তমান অতীতের কোনো ঐতিহাসিক ঘটনায় যদি নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের প্রয়োগ হয়, তাহলে তাকে ঐতিহাসিক বর্তমান কাল বলে।:যেমন- বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
(৩) কাব্যের ভণিতায় : মহাভারতের কথা অমৃত সমান । কাশীরাম দাস ভনে শুনে পুণ্যবান ৷
(৪) অনিশ্চয়তা প্রকাশে কে জানে দেশে আবার সুদিন আসবে কি না। :
(৫) ‘যদি’, ‘যখন’, ‘যেন' প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগে অতীত ও ভবিষ্যৎ কাল জ্ঞাপনের জন্য সাধারণ বর্তমান কালের ব্যবহার হয়। যেমন-
বৃষ্টি যদি আসে, আমি বাড়ি চলে যাব।
সকলেই যেন সভায় হাজির থাকে।
বিপদ যখন আসে, তখন এমনি করেই আসে।
সাধারণ বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ
(১) অনুমতি প্রার্থনায় (ভবিষ্যৎ কালের অর্থে) : এখন তবে আসি।
(2) প্রাচীন লেখকের উদ্ধৃতি দিতে (অতীত কালের অর্থে) : চণ্ডীদাস বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।
(3) বর্ণিত বিষয় প্রত্যক্ষীভূত করতে (অতীতের স্থলে) : আমি দেখেছি, বাচ্চাটি রোজ রাতে কাঁদে।
(8) ‘নেই’, ‘নাই” বা ‘নি' শব্দযোগে অতীত কালের ক্রিয়ায় : তিনি গতকাল হাটে যাননি।
খ. ঘটমান বর্তমান কাল : যে কাজ শেষ হয়নি, এখনও চলছে, সে কাজ বোঝানোর জন্য ঘটমান বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যথা—হাসান বই পড়ছে। নীরা গান গাইছে ।
ঘটমান বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ
(1) বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিতে ঘটমান বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যথা-বক্তা বললেন, “শত্রুর অত্যাচারে দেশ আজ বিপন্ন, ধন-সম্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে, দিকে দিকে আগুন জ্বলছে।”
(2)ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অর্থে : চিন্তা করো না, কালই আসছি।
গ. পুরাঘটিত বর্তমান কাল : ক্রিয়া পূর্বে শেষ হলে এবং তার ফল এখনও বর্তমান থাকলে, পুরাঘটিত বর্তমান
কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন-
এবার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।
এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি।
অতীত কাল
১. সাধারণ অতীত : বর্তমান কালের পূর্বে যে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে, তার সংঘটন কালই সাধারণ অতীত কাল। যেমন-
প্রদীপ নিভে গেল। শিকারি পাখিটিকে গুলি করল।
সাধারণ অতীতের বিশিষ্ট ব্যবহার
(১) পুরাঘটিত বর্তমান স্থলে : ‘এক্ষণে জানিলাম, কুসুমে কীট আছে।’
(২) বিশেষ ইচ্ছা অর্থে বর্তমান কালের পরিবর্তে : তোমরা যা খুশি কর, আমি বিদায় হলাম । নিত্যবৃত্ত অতীত : অতীত কালে যে ক্রিয়া সাধারণ অভ্যস্ততা অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাকে নিত্যবৃত্ত অতীত কাল বলে। যেমন- আমরা তখন রোজ সকালে নদী তীরে ভ্রমণ করতাম ।
নিত্যবৃত্ত অতীতের বিশিষ্ট ব্যবহার
(১) কামনা
(2) অসম্ভব কল্পনায় : ‘সাতাশ হতো যদি একশ সাতাশ'।
(৩) সম্ভাবনা প্রকাশে : তুমি যদি যেতে, তবে ভালোই হতো।
৩. ঘটমান অতীত কাল : অতীত কালে যে কাজ চলছিল এবং যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, তখনও কাজটি সমাপ্ত হয়নি-ক্রিয়া সংঘটনের এরূপ ভাব বোঝালে ক্রিয়ার ঘটমান অতীত কাল হয়। যেমন- কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা তখন বই পড়ছিলাম। বাবা আমাদের পড়াশুনা দেখছিলেন। ৪. পুরাঘটিত অতীত কাল : যে ক্রিয়া অতীতের বহু পূর্বেই সংঘটিত হয়ে গিয়েছে এবং যার পরে আরও কিছু ঘটনা ঘটে গেছে, তার কালকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলা হয়। যেমন-
সেবার তাকে সুস্থই দেখেছিলাম। কাজটি কি তুমি করেছিলে? (ক) অতীতে সংঘটিত ঘটনার নিশ্চিত বর্ণনায় : পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে এক লক্ষ সৈন্য মারা গিয়েছিল।
আমি সমিতিতে সেদিন পাঁচ টাকা নগদ দিয়েছিলাম।
(খ) অতীতে সংঘটিত ক্রিয়ার পরম্পরা বোঝাতে শেষ ক্রিয়াপদে পুরাঘটিত অতীত কালের প্রয়োগ হয়। যেমন - বৃষ্টি শেষ হওয়ার পূর্বেই আমরা বাড়ি পৌঁছেছিলাম ।
ভবিষ্যৎ কাল
সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল : যে ক্রিয়া পরে বা অনাগত কালে সংঘটিত হবে, তার কালকে সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল
বলে। যথা-আমরা মাঠে খেলতে যাব। শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে।
সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ
(১) আক্ষেপ প্রকাশে অতীতের স্থলে ভবিষ্যৎ কাল ব্যবহার হয়। যেমন-কে জানত, আমার ভাগ্য এমন হবে? সেদিন কে জানত যে ইউরোপে আবার মহাযুদ্ধের ভেরি বাজবে?
(২) অতীত কালের ঘটনা সম্পর্কিত যে ক্রিয়াপদে সন্দেহের ভাব বর্তমান থাকে, তার বর্ণনায় সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের ব্যবহার হয়। যেমন ভাবলাম, তিনি এখন বাড়ি গিয়ে থাকবেন। তোমরা হয়তো ‘বিশ্বনবি’ পড়ে থাকবে।
১. ঘটমান ভবিষ্যৎ ক্রিয়ার রূপ
নাম পুরুষ সাধারণ : –ইতে থাকিবে/−তে থাকবে। (করিতে থাকিবে/করতে থাকবে)।
নাম পুরুষ ও মধ্যম পুরুষ : -ইতে থাকিবেন/-তে থাকবেন। (করিতে থাকিবেন/করতে থাকবেন) ।
মধ্যম পুরুষ সাধারণ : –ইতে থাকিবে/−তে থাকবে। (করিতে থাকিবে/করতে থাকবে) ।
মধ্যম পুরুষ তুচ্ছার্থক : –ইতে থাকিবে/−তে থাকবি। (করিতে থাকিবি/করতে থাকবি)।
উত্তম পুরুষ : –ইতে থাকিব/তে থাকব। (করিতে থাকিব/করতে থাকব)।)
যে কাজ ভবিষ্যৎ কালে চলতে থাকবে তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ বলে।
লক্ষ করার বিষয়, এখানে মূল ক্রিয়ার সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়ার –ইতে । -তে বিভক্তি যুক্ত হয় এবং সেই সঙ্গে থাক্ ধাতুর, সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়। জ্ঞাতব্য : মূল ধাতুর সঙ্গে –ইতে/তে-বিভক্তি যোগে যে অসমাপিকা ক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তা অপরিবর্তনীয় এবং
কোনো কালবাচক নয়। মূল ধাতুর সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালের কোনোরূপ ক্রিয়া বিভক্তিই যুক্ত হয় না। অর্থের দিক
থেকে ঘটমান ভবিষ্যতের ক্রিয়াপদ সৃষ্টি হয়েছে মনে করা যেতে পারে। রূপের দিক থেকে এগুলো সাধারণ
ভবিষ্যতের ক্রিয়ার রূপ মাত্র। তাই অনেকে ঘটমান ভবিষ্যতের ক্রিয়াপদের রূপ আছে বলে স্বীকার করেন না।
২. পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ ক্রিয়ার রূপ : যে ক্রিয়া সম্ভবত ঘটে গিয়েছে, সাধারণ ভবিষ্যৎ কালবোধক শব্দ ব্যবহার করে তা বোঝাতে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল হয়
পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কালের অর্থ প্রকাশের জন্য মূল ধাতুর সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়া বিভক্তি-ইয়া/এ যোগ করে এবং থাক্ ও গম্ ধাতুর সঙ্গে সাধারণ ভবিষ্যতের ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত করে যৌগিক ক্রিয়াপদ তৈরি হয়। যথা গিয়ে থাকব/যাইয়া থাকিব ।