নহ্-ধাতুর সাধারণ বর্তমান উত্তম পুরুষের চলিত রূপ কোনটি ?
আমি যাই ৷
ক্রিয়া-বিভক্তি : সাধু ও চলিত
আপনারা যাবেন।
সে যাচ্ছে।
তাঁরা যাচ্ছিলেন।
ওপরে যা-ধাতুর সঙ্গে ‘ই’, ‘বেন’, ‘চ্ছে’ ও চ্ছিলেন' বিভক্তি যুক্ত করে সমাপিকা ক্রিয়াপদগুলো গঠিত হয়েছে। ধাতুর উত্তর যে সকল বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করে, ঐ সমস্ত বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে ক্রিয়া বিভক্তি বলা হয় ।
১. বিভক্তিসমূহ ক্রিয়ার কাল, পুরুষ ও বাচ্যভেদে বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে। যেমন- আমি যাই—সাধারণ বর্তমান কালে উত্তম পুরুষের ক্রিয়াপদ। আপনারা যাবেন—সাধারণ ভবিষ্যৎ কালে (সম্ভ্রমাত্মক) মধ্যম পুরুষের ক্রিয়াপদ।
সাধু ও চলিত রীতিভেদেও ক্রিয়াবিভক্তির পরিবর্তন হয়। যথা-
সাধু চলিত
আপনি ভাত খাইয়াছেন ৷ আপনি ভাত খেয়েছেন ৷
তাহারা বাড়ি যাইতেছে। তারা বাড়ি যাচ্ছে।
২.প্রযোজক ক্রিয়াতেও ক্রিয়াবিভক্তির অনুরূপ পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন-
সাধু রীতি (প্রযোজক) চলিত রীতি (প্রযোজক)
আমি তাহাকে দিয়া কাজটি করাইয়াছি। আমি তাকে দিয়ে কাজটি করিয়েছি।
রত্ন মণিকে গান শিখাইতেছিল। রত্না মণিকে গান শেখাচ্ছিল।
ধাতুর গণ : ‘গণ’ শব্দের অর্থ শ্রেণি। কিন্তু ধাতুর ‘গণ’ বলতে ধাতুগুলোর বানানের ধরন বোঝায়। ‘ধাতুর গণ’ ঠিক করতে দুটি বিষয় লক্ষ রাখতে হয়। যেমন—
(ক) ধাতুটি কয়টি অক্ষরে গঠিত?
(খ) ধাতুর প্রথম বর্ণে সংযুক্ত স্বরবর্ণটি কী ?
‘হওয়া’ ক্রিয়ার ধাতু ০ হ (হ্ + অ)। ‘হ’ একাক্ষর ধাতু এবং প্রথম বর্ণ হ্-এর সাথে স্বরবর্ণ ‘অ’ যুক্ত আছে। সুতরাং হ-আদিগণের মধ্যে ল-ধাতু (ক্রিয়াপদ-লওয়া) পড়বে।
বাংলা ভাষার সমস্ত ধাতুকে বিশটি গণে ভাগ করা হয়েছে। যথা—
১। হ-আদিগণ হ (হওয়া), ল (লওয়া) ইত্যাদি।
2। খা—আদিগণ খা (খাওয়া), ধা (ধাওয়া), পা (পাওয়া), যা (যাওয়া) ইত্যাদি।
৩। দি—আদিগণদি দি (দেওয়া), নি (নেওয়া) ইত্যাদি।
৪।শু—আদিগণ চু (চোঁয়ানো), নু (নোয়ানো), ছু (ছোঁয়া) ইত্যাদি ।
৫ ৷ কর্-আদিগণ কর্ (করা), কম্ (কমা), গড় (গড়া), চল্ (চলা) ইত্যাদি ।
৬। কহ্—আদিগণ কহ্ (কহা), সহ্ (সহা), বহ্ (বহা) ইত্যাদি।
৭। কাট্— আদিগণ গাঁথ্, চাল্, আক্, বাঁধু, কাঁদ্, ইত্যাদি।
৮।গাহ আদিগন চাহ্, বাহ্, নাহ্ (নাহান সান) ইত্যাদি।
৯। লিখ্-আদিগণ কিন্, ঘির্, জিত্, ফির্, ভিড়, চিন্ ইত্যাদি ।
১০। উঠ আদিগণ উড়, শুন্, ফুট্, খুঁজ, খুল্, ডুব্, তুল্ ইত্যাদি।
১১। লাফা-আদিগণ কাটা, ডাকা, বাজা, আগা (অগ্রসর হওয়া) ইত্যাদি।
১২। নাহা-আদিগণ গাহা ইত্যাদি ।
১৩। ফিরা—আদিগণ ছিটা, শিখা, ঝিমা, চিরা ইত্যাদি। :
১৪। ঘুরা- আদিগণ উঁচা, লুকা, কুড়া (কুড়াচ্ছে) ইত্যাদি।
১৫। ধোয়া-আদিগণ শোয়া, খোঁচা, খোয়া, গোছা, যোগা ইত্যাদি।
১৬। দৌড়া—আদিগণ পৌঁছা, দৌড়া ইত্যাদি। :
১৭। চট্কা—আদিগণ সম্ঝা, ধম্কা, কচ্লা ইত্যাদি ।
১৮। বিগড়া-আদিগণ হিড়া, ছিট্কা, সিট্কা ইত্যাদি। :
১৯। উল্টা— আদিগণ দুমড়া, মুড়া, উচা ইত্যাদি ।
২০। ছোবলা – আদিগণ কোঁচকা, কোঁকড়া, কোদলা ইত্যাদি ।
ধাতু-বিভক্তির রূপ
প্রযোজক ধাতুর রূপ
প্রযোজক ধাতুর চলিত রূপ সাধনে কখনো কখনো মূল ধাতুর সঙ্গে শুধু প্রযোজক রূপটি যুক্ত হয়। যেমন— শিক্ষক ছাত্রটিকে পড়াইয়াছেন। – সাধু রূপ
[√ পড় + আ= পড়া (প্রযোজক ধাতু) + ইয়াছেন (বিভক্তি)।
শিক্ষক ছাত্রটিকে পড়িয়েছেন – চলিত রূপ।
[ √পড় + ০ (অর্থাৎ প্রযোজক-প্রকরণের আ যুক্ত হলো না) + ইয়েছেন = পড়িয়েছেন— চলিত
রূপ।] চলিত রূপে আরও কয়েকটি ধাতুর পরিবর্তন লক্ষণীয়- হ-ধাতু দাঁড়াও, তোমাকে হওয়াচ্ছি।
শিখ-ধাতু : কে তোমাকে গান শেখাচ্ছে?
শুন্ -ধাতু : এ কী কথা শোনালি রে।
পরিশিষ্ট : ধাতুর চলিত রূপ সাধনে কতিপয় পরিবর্তন
১. মূলস্বর অ-কারান্ত
কহ্ ধাতু : কইতাম, কইলাম, কইতি, কইতিস, কয়েছিস ইত্যাদি।
২. মূলস্বর আ-কারান্ত
(ক) খা-ধাতু : খেলাম (খাইলাম), খেলেন (খাইলেন), খেল, খেলে, (খাইল), খেয়েছে ইত্যাদি। (খ) যা-ধাতু : গেল (যাইল), গিয়েছিল, যেত-যেতো (যাইত), যেতেছিল, যাচ্ছিল (যাইতেছিল) ইত্যাদি। (গ) গাহ্ (গৈ)—ধাতু : (চলিত রূপ)— গাইত, গাইলাম, গেয়েছি, গেয়েছিলাম, গেয়েছ, গাইলে,
গাইতিস, গাইছিস, গাইবে, গাবে, গাইব, গাব ইত্যাদি ।
৩. মূলস্বর ই বা ঈ-কারান্ত : শিখ্ ধাতু (চলিত রূপ)-শেখো, শেখেন, শেখে (শিখে), শিখিস, শিখলাম, শেখ ইত্যাদি ।
৪। মূলস্বর উ-কারান্ত : শুন্ ধাতু – শোনো, শোনেন, শোনে, শুনলাম, শুনেছি, শুনতাম, শুনেছিস, শোনাও
ইত্যাদি।
৫। মূলস্বর এ-কারান্ত : দে, (দি) ধাতু-দিই, দেয়, দেন, দিন, দাও, দিলাম, দিয়েছিলাম, দিতাম (দিতুম),
দেব (দেবো), দিচ্ছে, দিচ্ছিলুম, দাও, দে, দিন, দিক, দিয়ো (দিবো) ইত্যাদি। ৬। মূলস্বর ও-কারান্ত : ধো-ধাতু-ধোয়, ধোন, ধোও, ধুচ্ছিস, ধুইবি, ধুয়েছিল, ধোস, ইত্যাদি। বাকি সবগুলো উ-কার যুক্ত ধাতুর রূপের ন্যায়।
প্রযোজক ধাতুর চলিত রূপ সাধনে কয়েকটি পরিবর্তন
(বন্ধনীর মধ্যে সাধু রূপটিও দেখানো হলো)
(ক) মূলস্বর অ-কারান্ত : ‘হ’ – হইয়েছে (হওয়াইয়াছে), হইয়েছিস (হওয়াইয়াছিস), হইয়েছিলুম (হওয়াইয়াছিলাম), হওয়াচ্ছি (হওয়াইতেছি), হয়ায়ো (হওয়াইও) ।
(খ) মূলস্বর ই-ঈ-কারান্ত : হলে প্রযোজক ধাতুর চলিত রূপ কখনো ই-কারান্ত এবং কখনো এ- কারান্ত হয়। যেমন – (সাধু) শিখ > (চলিত) শেখ (ধাতু)।
রূপ সাধন : শিখাই-শেখাই-শিখুই। শেখাও শিখোও। শেখালুম,- শিখোলুম। শেখালে শিখোলে। শেখাতুম- শিখোতুম। শেখাতিস-শিখেতিস। শেখাত-শিখোতো। শেখাবি-শিখোবি। শিখাচ্ছি-শিখেচ্ছি (শিখাচ্ছি)। শেখাচ্ছে-শিখুচ্ছে। শেখাচ্ছিল-শিখেচ্ছিল। শেখাও শেখোও। শেখ শিখো।
(গ) মূলস্বর উ-কারান্ত : এর দুটো রূপ দেখা যায়। বন্ধনীর মধ্যে দ্বিতীয় রূপটিও দেখানো হলো ৷ শুন-ধাতুর রূপ সাধন : শুনাই (শোনাই)। শোনাও (শুনোও)। শুনান (শুনোন)। শোনায় (শুনোয়)। শুনানি (শুনোনি)। শুনালুম (শুনোলুম)। শোনাতুম (শুনোতুম)। শোনাতিস (শুনেতিস—শুনোতিস—শুনুতিস)। শোনাব (শুনোব)। শোনাচ্ছ (শুনাচ্ছ)। শোনাও (শোনোও)। শোনাস (শুনোস) ইত্যাদি।
বাক্য গঠন : আহা! কী হওয়াটাই না তুমি হওয়ালে। দাঁড়াও তোমাকে শেখাচ্ছি। তুই আর আমাকে কী শিখুবি ?
রোজ তোমাকে কত রূপকথা শোনাই। ‘কী কথা শুনালি মোরে'। ওকে তুমি কী শুনাচ্ছ ?
কয়েকটি অসম্পূর্ণ ধাতু
বাংলা ভাষায় কয়েকটি ধাতুর সকল কালের রূপ পাওয়া যায় না। সাধারণ সহকারী ক্রিয়া গঠনে এদের কয়েকটি রূপ পাওয়া যায় মাত্র। যেমন –
১. আ-আইল>এল। আইলেন>এলেন। আইলে এলে। আইলি>এলি। আইলাম>এলাম। আয় (অনুজ্ঞা)।
২.√আছ্ – (বর্তমান কালে) : আছে, আছেন, আছ, আছিস, আছি। (অতীত কালে) ছিল, ছিলেন, ছিলে, ছিলি, ছিলাম ।
৩.নহ্ ধাতু–(বর্তমান কালে) : নন, নহে, নহেন > নন, নহ, নও, নহস, নহিস, নস, নহি, নই ।
৪. বট্ ধাতু – (বর্তমান কালে) : বটে, বটেন, বট, বটিস, বটি।
৫. থাক্ (রহ্) ধাতু (বর্তমান কালে) : থাকে, থাকেন, রহেন, থাক, (রও), থাকিস, (রস, রোস, রহিস), থাকি (রই), থাকে (রয়) ইত্যাদি।
অতীত কাল : রহিত (রইত), রহিতেন (রইতেন), রহিতাম (রইতাম—রইতুম) ইত্যাদি। ভবিষ্যৎ কাল : রোসো)। রহিবে, (রইবে, রবে), রহিবেন (রইবেন), রহিবি (রইবি), রহিব (রইবো), রহিস (রোস)
বাক্য গঠন : ‘কোথাকার জাদুকর এলি এখানে। ’ ‘আইল রাক্ষসকুল প্রভঞ্জন বেগে।' কেমন আছিস? কোথায় ছিলি? সে ব্যক্তিটি তুমি নও। ‘একা দেখি কুলবধূ, কে বট আপনি? ‘আজি ঘরে একলাটি পারবো না রইতে। ' রোসো, তোমাকে মজা দেখাচ্ছি। ‘হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোন খানে।’