কোনটি একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য নয়?
বৃহদায়তন উৎপাদন ও লাভ অর্জন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা ভোগ করলেও ক্ষুদ্রায়তন একমালিকানা ব্যবসায় বিশেষ কতকগুলো ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করেছে। এ কারণে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি একমালিকানা ব্যবসায় আজও দক্ষতার সাথে টিকে আছে। নিন্মে এ কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো—
১। গঠন সুবিধা (Easy of formation): একমালিকানা ব্যবসায় গঠন করতে কোনোরূপ আইনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। যেকোনো লোক অল্প মূলধনে এরূপ ব্যবসায় গঠন করতে পারে । যেকোনো লোক অল্প মূলধনে এরূপ ব্যবসায় গঠন করতে পারে। কিন্তু বৃহদায়তন একমালিকানা প্রতিষ্ঠান গঠন করা কষ্টসাধ্য বলে অনেক লোক বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পক্ষপাতি নয়। এ কারণেই বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি একমালিকানা ব্যবসায় টিকে আছে ।
২। বিশেষ ক্ষেত্রের সুবিধা (Suitability of special field): বৃহাদায়তন ও ক্ষুদ্রায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্য ক্ষেত্রের প্রকৃতি ভিন্ন। কিছু ব্যবসা আছে যাতে বৃহদায়তন ব্যবসায় নিষ্প্রয়োজন যেমন-পান বিড়ির দোকান, মুদির দোকান, সেলুন প্রভৃতি ।
৩। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ (Opportunity to act independently): মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। অনেক মানুষ আছে যারা অন্যের চাকরি করতে পছন্দ করে না । তারা স্বল্প পুঁজি নিয়ে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে চায় । এরূপ মনোভাব একমালিকানা ব্যবসায় প্রতিফলিত হতে দেখা যায় ।
৪। অবস্থান (Location): বৃহদায়তন ব্যবসায় সাধাণত শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থাপিত হয় । গ্রামের আনাচে- কানাচে বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রায়তন একমালিকানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করা বাঞ্ছনীয়।
৫। আস্থা ও বিশ্বাস (Confidence and trust): এ ধরনের ব্যবসায়ের মালিক একজন মাত্র ব্যক্তি। তাই বৃহদায়তন ব্যবসায়ের মতো অন্যের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রয়োজন পড়ে না ।
৬। স্বল্প ব্যয় (Economy of cost ) : একমালিকানা ব্যবসায় সাধারণত মালিক নিজে বা পরিবারের লোকজন নিয়ে পরিচালনা করে থাকেন। ফলে ব্যবসায়ের সর্বস্তরে ব্যয় সংকোচন সম্ভব হয়। কিন্তু বৃহদায়তন ব্যবসায় এরূপ ব্যয় সংকোচন সম্ভব নয়। ফলে একমালিকানা ব্যবসায় বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি সাফল্যজনকভাবে টিকে থাকে ।
৭। সীমিত উৎপাদন ও চাহিদাসম্পন্ন দ্রব্যের জন্য উপযোগী (Suitable for products having limited production and demand): যেসব পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদা সীমিত এবং স্থানীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ সেসব পণ্যের উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় অধিক উপযোগী।
৮। সহজ পরিচালনা (Easy administration): সীমিত আয়তন ও সীমিত পণ্যের ব্যবসায় হওয়ায় একমালিকানা ব্যবসায় পরিচালনা করা সহজ হয়। কেননা বৃহদায়তন ব্যবসায়ের মতো পরিচালনাগত আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না।
৯। স্বল্প ঝুঁকি (Limited risk): অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় বলে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের তুলনায় ঝুঁকিও কম থাকে ।
১০। চাহিদার নমনীয়তা (Flexibility of demand): বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতার চাহিদা ও রুচি দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। এরূপ পরিবর্তিত রুচির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বৃহদায়তন ব্যবসায় অপেক্ষা ক্ষুদ্রায়তন একমালিকানা ব্যবসায় অধিক উপযোগী ।
পরিশেষে বলা যায়, বৃহদায়তন উৎপাদন ও বণ্টনের যুগেও একমালিকানা ব্যবসায় বাণিজ্য কার্যকর ভুমিকা রাখছে। বৃহদায়তন ব্যবসায়ে প্রতিযোগী না হয়ে তার সহযোগী হিসেবে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।