পাতলা কাঠ কেটে নকশা নির্মাণের জন্য অতি সরু যে করাত ব্যবহার করা হয় তার নাম কী?
• বোর্ড ও কাগজ দিয়ে কয়েকটি শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারব।
• কাঠের জিনিস তৈরি করার কিছু হাতিয়ারের ব্যবহার করতে পারব ।
• কাঠ দিয়ে ধীরে ধীরে পুতুল তৈরি করতে পারব ।
• কাঠের ঘোড়া তৈরি করতে পারব।
• কাঠ কেটে নকশা তৈরি করতে পারব ।
• মাটির কাজ করার ছোটখাটো হাতিয়ার ব্যবহার করতে পারব ।
• মাটির কয়েল, ফুলদানি, পুতুল ও বিভিন্ন রকম কারুশিল্প তৈরি করতে পারব
• মাটির কয়েল দিয়ে পাত্র তৈরি করতে পারব।
• মাটির ফলকে চিত্র ও নকশা তৈরি করতে পারব ।
• বেল বা কদবেলের খোলস দিয়ে পুতুল তৈরি করতে পারব।
• পালক দিয়ে ফুল তৈরি করতে পারব ।
• নিজেদের কল্পনাশক্তি খাটিয়ে অন্যান্য জিনিসও তৈরি করতে পারব ।
• পালকের তৈরি ফুল দিয়ে ঘর সাজাতে এবং উপহার দিতে পারব ।
• ফেলনা উল বা পাট দিয়ে হাঁসের ছানা তৈরি করতে পারব।
পাঠ : ১
কাগজ ও বোর্ড কাগজ দিয়ে শিল্পকর্ম
জীবনযাত্রার প্রয়োজনে প্রতিদিন কতভাবে যে আমরা কাগজ ব্যবহার করছি তা বলে শেষ করা যাবে না । কাগজকে সভ্যতার বাহন বললে ভুল হবে না। পড়ালেখার বইখাতা থেকে শুরু করে মুদির দোকানের ঠোঙা পর্যন্ত দৈনন্দিন জীবনের হাজারো প্রয়োজনে কাগজ ব্যবহার হয় । ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে কাগজ দিয়ে কিছু শিল্পকর্ম করতে শিখেছি? এবার কিছু ব্যবহার্য জিনিস তৈরি করা এবং কাগজের সাথে সম্পর্কিত কিছু কাজ শিখব। কাজগুলো শিখলে তা নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তো লাগবেই, পাশাপাশি সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে । বিভিন্ন কাজে আমরা বিভিন্ন রকম কাগজ ব্যবহার করি। যেমন- ইনভেলাপ তৈরির জন্য সাধারণ লেখার কাগজ বা অফসেট পেপার, আবার বই-খাতা বাঁধাই করার জন্য প্রয়োজনমতো শক্ত কাগজ, বোর্ড কাগজ, পিচবোর্ড ইত্যাদি এবং অ্যালবাম তৈরির জন্য ধূসর রঙের শক্ত বোর্ড কাগজ, পিচবোর্ড, নকশা করা মার্বেল কাগজ ইত্যাদি। কী ধরনের কাগজ ব্যবহার করা হবে তা প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নেব। আসল কথা হলো কোন পদ্ধতিতে কোন জিনিস তৈরি করা যায় তা জেনে নেওয়া।
পাঠ : ২, ৩, ৪ ও ৫
বোর্ড কাগজ দিয়ে বিভিন্ন শিল্পকর্ম
শক্ত সাদা কাগজে পাখি, মাছ বা যে-কোনো জীবজন্তুর ছবি এঁকে কেটে নিই। ছবির উভয় পাশে রং করি। এবার ছবিগুলোর উপরদিকটায় লম্বা সুতো দিয়ে আটকিয়ে নিই। চার-পাঁচটি ছবি কাঠির মাথায় সুতোর কাঠিগুলো আড়াআড়ি ধরে শক্ত সুতো বা তার দিয়ে বেঁধে দিই। উপরের দিকটা ধরার সুবিধার জন্য সুতা লম্বা রাখি
পাঠ : ৬
কাঠের তৈরি শিল্পকর্ম
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে কাঠ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি হয়ে আসছে। পোড়ামাটির ফলকচিত্রের মাধ্যমে আমরা যেমন আমাদের প্রাচীন শিল্পকর্মের নিদর্শন পাই, ঠিক তেমনি পাই কাঠের মূর্তি, কারুকার্যখচিত স্তম্ভ, থাম, তোরণ, দরজা, আসবাবপত্র ও অন্যান্য ব্যবহারিক জিনিসে। আমাদের জাতীয় জাদুঘর ও অন্যান্য স্থানীয় ঐতিহাসিক জাদুঘরে এরকম অনেক নিদর্শন আছে। যে-কোনো মেলায় গেলেই আমরা কাঠের তৈরি হরেক রকমের পুতুল, হাতি, ঘোড়া ইত্যাদি নানা প্রকার খেলনা দেখতে পাই। এক সময় আমরাও হয়তো এরকম কিছু কাঠের তৈরি খেলনা, যেগুলো দিয়ে খেলা করতে খুবই মজা পাই। যদি নিজের হাতে কাঠ দিয়ে এমনি একটি পুতুল, খেলনা কিংবা অন্য কোনো সুন্দর জিনিস তৈরি করতে পারি তাহলে খুব আনন্দ হবে। এবার কাঠ, বাঁশ দিয়ে পেনসিল বক্স ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস তৈরি করার পদ্ধতি জেনে নিই। প্রাথমিক পর্যায়ে কাঠের পুতুল, পশুপাখি ইত্যাদি তৈরি করার জন্য খুব নরম কাঠই সবচেয়ে উপযোগী। নরম কাঠ সহজেই নিজের ইচ্ছেমতো কাটতে পারব। আমাদের দেশে সহজে ও কম দামে যেসব কাঠ পাওয়া যায় তার মধ্যে শিমুল ও কদম কাঠই সবচেয়ে নরম ও সুলভ। তাই পুতুলের জন্য শিমুল কিংবা কদম কাঠ জোগাড় করি। কিছু-কিছু কাজের জন্য 'প্লাই-উড' (Ply- Wood) ব্যবহার করতে হবে। 'প্লাই-উড' হলো পাতলা পাতলা কাঠ একটির ওপর আরেকটি বসিয়ে জোড়া দিয়ে তৈরি করা তক্তা ।
উপকরণ
কাঠের শিল্পকর্মের জন্য কাঠই যে প্রধান উপকরণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার যেসব কাজ করব তার জন্য শিমূল ও কদম কাঠ কিংবা এরকম নরম কোনো কাঠ, 'প্লাই-উড' পেলিগাম কিংবা আইকা আঠা, শিরীষ কাগজ, ভাঙা কাচের টুকরো, চাইনিজ লেকার কিংবা এনামেল রং ইত্যাদি। হাতুড়ি, বিভিন্ন ধরনের বাটালি, ধারালো শক্ত ছুরি, হাত করা, লোহা কাটার করাত 'হ্যাক- স ( Hack saw) ফ্রেট স্য' (Frat Saw) স্কেল, তুলি ইত্যাদি। ‘ফ্রেট-স্য' হলো পাতলা কাঠে নকশা নির্মাণের জন্য ফ্রেমে আঁটা অতি সরু করাত বিশেষ ।
পাঠ : ৭
কাঠের পুতুল
কাঠ দিয়ে প্রথমে খুব সহজ একটা পুতুল তৈরি করি । ঝুড়ি মাথায় একটি নারী। এই পুতুলের জন্য ৩ সেমি পুরু, ৩ সেমি. চওড়া ও ১৫ সেমি. লম্বা এক টুকরো নরম কাঠ নিই। কদম কিংবা শিমুল কাঠ এরকম কাজে খুব উপযোগী। ধারালো বাটালি দিয়ে ঠেলে ঠেলে প্রথমে কাঠের শির চারটি মেরে দিই। এবার খুব সাবধানে আস্তে আস্তে কেটে যাই, যতক্ষণ না কাঠের টুকরোটি সরু রুলারের মতো আগাগোড়া সমানভাবে গোল হয়ে যায়। গোল করে কাটার পর কাঠের টুকরোটির ব্যাস হলো মোটামুটি ৩ সেমি. আর লম্বা রইল ১৫ সেমি.। স্কেল দিয়ে প্রথমে ঠিক সাড়ে সাত সেন্টিমিটার মেপে কাঠের চারপাশ ঘুরিয়ে দাগ দিই। দাগের ওপরে নিচে দুপাশেই সাড়ে সাত সেন্টিমিটার করে কাঠটি দুভাগ হয়ে গেল। এবার মাঝের দাগ থেকে ওপরের দিকে প্রথমে সাড়ে তিন সেন্টিমিটার তারপর আর আড়াই সেন্টিমিটার মেপে চারদিক ঘুরিয়ে দাগ দিই। দেখি, পেনসিলের দাগ দিয়ে কাঠটি মোট চারভাগে ভাগ হয়ে গেল । প্ৰথম ভাগে দেড় সেন্টিমিটার এবং চতুর্থ ভাগে সাড়ে সাত সেন্টিমিটার। লোহা কাটার করাত বা 'হ্যাক-স্য' দিয়ে পেনসিলের সব কয়টি দাগ বরাবর কাঠের চারদিকে ঘুরিয়ে সামান্য গভীর করে কাটি। কাটার গভীরতা যেন চারদিকেই সমান হয়। ছবিটি ভালো করে লক্ষ করি এবং ছবিতে প্রদর্শিত নিদর্শন অনুযায়ী ধারালো বাটালি দিয়ে ঠেলে কাঠের চারদিক ঘুরিয়ে খাঁজ কাটি। খাঁজ কাটার জন্য প্রয়োজন হলে ধারালো ছুরিরও ব্যবহার করতে পারি। সব কয়টি খাঁজ কাটা হয়ে গেলে মোটামুটিভাবে একটি পুতুলের আদল এসে গেছে। ঝুড়ি মাথায় কোনো নারীর মতো। শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে পুতুলটিকে মসৃণ করি। মসৃণ করার পর ঝেড়ে মুছে পুতুলটিকে পরিষ্কার করে নিই যাতে এর গায়ে কাঠের কোনো কণা বা ধুলা লেগে না থাকে। ছুতোর মিস্ত্রির কুঁদন যন্ত্র (Turning implement) ব্যবহার করে এরকম একটি পুতুল পাঁচ-ছয় মিনিটের মধ্যেই তৈরি করা যায়। ভবিষ্যতে কোনোদিন এই যন্ত্রের ব্যবহার শিখতে পারলে খুব সহজে অল্প সময়ে এরকম অনেক কিছু তৈরি করতে পারব।
এবার পুতুলটি রং করার পালা। কী কী রং লাগাব পুতুলের গায়ে? পুতুলের মুখে ও শরীরে হালকা হলুদ রং, শাড়ির জন্য লাল রং, শাড়িতে সাদা রঙের নকশা আর কালো ও সাদা রং মিলিয়ে পাড়। তারপর কালো রং দিয়ে চুল, নাক ও চোখ, লাল রং দিয়ে ঠোঁট আর বাদামি রঙের ঝুড়ি। পরে আরও কিছু পুতুল তৈরি করে আমাদের পছন্দমতো বিভিন্ন রং লাগাতে পারব। সবুজ শাড়ি, নীল শাড়ি, বেগুনি শাড়ি কতরকম রং লাগানো যাবে! অন্য কোনো রং লাগাবার আগে পুতুলের সারা শরীরে হালকা হলুদ রং লাগিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নেবার পর শাড়ি, চুল ও চোখ-মুখের রং দেব। রং করার জন্য মোটা ও সরু দুরকমের তুলি ব্যবহার করব। মোটা তুলি দিয়ে ঝুড়ি, চুল, মুখ, শরীর ও শাড়িতে রং লাগানোর পর সন্তু তুলি দিয়ে নাক, চোখ, ঠোঁট, শাড়ির পাড় ও নকশা আর ঝুড়ির বুনন আঁকব। সরু তুলি দিয়ে সব কাজ করতে গেলে রং সমানভাবে লাগবে না । কৌটার চাইনিজ লেকার বা এনামেল রং বেশি ঘন হলে সামান্য তারপিন মিশিয়ে একটু পাতলা করে নেব কিন্তু বেশি পাতলা করব না। রং করা শেষ হলে দেখব সুন্দর একটা পুতুল তৈরি হয়েছে ।
পাঠ : ৮
কাঠের ঘোড়া
পুতুল ও পাখির মতো খুব সহজেই একটি ঘোড়া তৈরির চেষ্টা করি। ঘোড়ার জন্য ২ সেমি. পুরু, ১০ সেমি. চওড়া ও ১৬ সেমি. লম্বা এক টুকরো নরম কাঠ নিই। কাঠের দুপিঠ ঘষে মসৃণ করি। কাঠের সমান মাপের কাগজের ওপর ছবি দেখে অনুরূপ একটি ঘোড়ার ছবি আঁকি। কার্বন কাগজ দিয়ে কাঠের ওপর ঘোড়ার ছবির ছাপ তুলি। ছাপের রেখা বরাবর 'ফ্রেট-স্য' দিয়ে কেটে ঘোড়াটি আলাদা করে ফেলি। ছবিতে ঘোড়ার নির্মাণ- কৌশলের পর্যায়গুলো ক্রমানুসারে দেখানো হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এক - একটি পর্যায়ের ছবি মন দিয়ে দেখি এবং তা অনুসরণ করে প্রয়োজনমতো সোজা ও বাঁকা মুখের বাটালি দিয়ে ঠেলে ঠেলে একটু একটু করে কেটে কিছুটা গোলাকৃতি করি। তারপর ঘোড়ার কেশরের অংশটি দুপিঠ থেকে কেটে কেটে পাতলা করে আধা
সেন্টিমিটারের কাছাকাছি নিয়ে আসি। কান দুটি বাদ দিয়ে কেশর পাতলা করব। লেজের অংশটি কেটে পাতলা করে এক সেন্টিমিটারে করব। মাথার কপালের দিকটা পুরু থাকবে কিন্তু মুখের দিকটা কিছু পাতলা হয়ে যাবে। মুখের নিচে গলার দিকটা মুখের থেকে সামান্য পাতলা ও কিছুটা গোলাকৃতি করি। সামনের দুটি পা বোঝাবার জন্য পারের অংশের দুপিঠে সামান্য গাজ কেটে দিই। পেছনের পা দুটির জন্যও তা-ই করি ।
কান দুটির মাঝখানটা কেশরের সীমারেখা পর্যন্ত সামান্য কেটে আলাদা করে দিই। যখনই যেখানে কাটৰ দুপিঠ থেকে সমানভাবে কাটব, তাহলে ঘোড়া যে পাশ থেকেই দেখি না কেন দুপাশ সমান দেখব। ১ সেমি, পুরু, ৫ সেমি. চওড়া ও ১১ সেমি. লম্বা এক টুকরো কাঠের ওপর চারপাশে সমান ছেড়ে ঘোড়াটিকে দাঁড় করিয়ে নিচ দিক থেকে সামনের ও পেছনের পা বরাবার সরু তারকাটা মেরে আটকিয়ে দিই। এখন ঘোড়াটিকে যেখানেই রাখি না কেন সামান্য নড়াচড়াতেও পড়ে যাবে না। শিরীষ কাগজ দিয়ে পথে ঘোড়াটিকে মসৃণ করে চাইনিজ লেকার কিংবা এনামেল রং দিয়ে আমার পছন্দমতো রং করে নিই ।
পাঠ : ৯
কাঠের নকশা
কাঠ কেটে তৈরিকৃত নকলা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। একবার নকশা কাটার কৌশলটা আয়ত্ত করতে পারলে তা প্রয়োগ করে হরেক রকম জিনিস তৈরি করতে পারব। নকশা কেটে যেমন ঘরের সাজসজ্জার জিনিস তৈরি করতে পারব তেমনি আসবাবপত্র, দরজার প্যানেল ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসের শোভাবর্ধনের কাজেও ব্যবহার করতে পারব ।
কাঠ কেটে নকলা তৈরি করার আগে নকশাটি কাগজে এঁকে নিতে হবে। যত বড় নকশা তৈরি করতে চাই ঠিক তত বড় করে পছন্দমতো একটি নকলা আঁকি । প্রথম প্রথম একটু মোটা ধরনের নকশা দিয়ে কাজ আরম্ভ করি। কাজের কৌশল আরম্ভ করার পর ক্রমে ক্রমে অনেক সূক্ষ্ম নকশাও তৈরি করতে পারব। নকশার ভেতরের ও বাইরের অপ্রয়োজনীয় কাঠ কেটে ফেলে দিয়ে নকশা তৈরি করতে হবে। অসাবধানতাবশত যাতে নকশার কাঠ কাটা না পড়ে তার জন্য নকশার ভেতরের অপ্রয়োজনীয় এলাকা পেনসিল বা বলপেনের রেখা দিয়ে ভর্তি করে দিলে অপ্রয়োজনীয় অংশ সহজে চোখে পড়বে, ভুল হওয়ার সাবনা থাকবে না ।
নকশা কাটার জন্য তিন বা চার পরত -এর ভালো প্লাইউড অথবা মোটামুটিভাবে আধা সেন্টিমিটার পুরু ভালো নরম কাঠ নিই । শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে কাঠের দুপিঠ সামান্য মসৃণ করি। কার্বন কাগজ বসিয়ে কাঠের ওপর কাগজে আঁকা নকশার ছাপ তুলি। বলপেনের রেখা দিয়ে ভর্তি করে নকশার ভেতরের অপ্রয়োজনীয় এলাকা চিহ্নিত করি। সরু তুরপুন দিয়ে অপ্রয়োজনীয় এলাকার প্রত্যেকটিতে এর সীমারেখার খুব কাছাকাছি জায়গায় ‘ফ্রেট-স্য’ ঢোকাবার জন্য একটি করে ছিদ্র করে নিই। আয়োজন সবই শেষ হলো। এবার নকশা কাটার পালা ।
শিল্পকলা শিক্ষকদের কাছ থেকে ‘ফ্রেট-স্য’ ব্যবহার করার নিয়ম ভালো করে জেনে নেব। ‘ফ্রেট-স্য’ খুব পাতলা কাঠে নকশা নির্মাণের জন্য ফ্রেমে আঁটা অতি সরু করাত বিশেষ। ফ্রেমে আঁটা করাতটি ফ্রেম থেকে খোলা যায়, আবার ফ্রেমে আটকানো যায়, খুব টান করা যায়, একটু ঢিলেও করা যায় ।
দুপাশে কান লাগানো নাট ঘুরিয়ে এসব করা যায়। এবার নকশা কাটতে চেষ্টা করি। করাতের সামনের মাথা ফ্রেম থেকে আলগা করে কাঠের অপ্রয়োজনীয় এলাকার একটি ছিদ্রের ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে মাথাটি আবার ফ্রেমে আটকিয়ে নিই। নাট ঘুরিয়ে করাতটি যথাসম্ভব টান করে নিই। মাত্রাতিরিক্ত টান করতে গেলে করাত ছিঁড়ে যেতে পারে, আবার ঢিলে থাকলে কাঠ কাটার সময় ভেঙে যেতে পারে। তাই খুব সাবধানে কাজ করব। এবার অপ্রয়োজনীয় এলাকার সীমারেখা বরাবর ‘ফ্রেট-স্য’ চালিয়ে অপ্রয়োজনীয় অংশটি কেটে আলাদা করে ফেলি। একটি অংশ কাটা শেষ হলে করাতের মাথা ফ্রেম থেকে আলগা করে করাতটি বের করে আনি এবং আরেকটি অপ্রয়োজনীয় অংশের ছিদ্র দিয়ে ঢুকিয়ে আটকিয়ে নিই। এভাবে প্রত্যেকটি অপ্রয়োজনীয় অংশ কাটার পর নকশার বাইরের সীমারেখা বরাবর ‘ফ্রেট-স্য’ চালিয়ে পুরু নকশাটি কেটে বের করে ফেলি। নকশা তৈরি হলো। এবার শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে অমসৃণ জায়গাগুলো ও একটি পিঠ ভালোভাবে মসৃণ করে নিই । কাঠের রং বাজায় রেখে স্বচ্ছ বার্নিশের প্রলেপ দিয়ে নিই। নকশাটি গৃহ সজ্জার কাজে বা আসবাবপত্রের শোভাবর্ধনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
পাঠ : ১০
মাটির তৈরি শিল্পকর্ম
মাটির তৈরি জিনিস আমরা সব সময়ই দেখি। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারও করি। মাটির হাঁড়ি-পাতিল, সরা, গামলা, কলস, সোরাই, খোরা, সানকি, চাড়ি, মটকি ইত্যাদি অসংখ্য জিনিস আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। সভ্যতার আদিযুগ থেকে মানুষ মাটির পাত্র ও বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে শিখেছে। সেগুলোর গঠন ও গড়নপদ্ধতি অবশ্যই ছিল আদিম ধরনের। যুগ যুগ ধরে মানুষ পুরুষানুক্রমিক অর্জিত জ্ঞান, বুদ্ধি, সৌন্দর্যবোধ ও কলাকৌশল কাজে লাগিয়ে মাটির শিল্পকর্মের রূপ সেই আদিম এবড়ো- থেবড়ো অবস্থা থেকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আজকাল আমরা চীনামাটির তৈরি যেসব সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র ও বাসন-কোসন ব্যবহার করি তা তো আসলে মাটি দিয়েই তৈরি। তা অবশ্য নিখুঁত বিশুদ্ধ সাদা মাটি, যার মধ্যে মাটির মৌলিক উপাদান ছাড়া অন্য কোনো উপাদান বা ভেজাল নেই। মাটি সম্পর্কে পরে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারব। মানুষ আদিমকাল থেকে এ পর্যন্ত মাথা খাটিয়ে মাটির জিনিস তৈরি করার যতরকম কলাকৌশল আবিষ্কার করেছে তার মধ্যে চাকার ব্যবহার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ । মাটির পাত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে কুমারের চাকা যে কী প্রচণ্ড গতি সঞ্চার করেছে একটু চিন্তা করলেই তা বুঝতে পারব । ইতোমধ্যে কয়েল পদ্ধতিতে মাটির পাত্র তৈরি করতে শিখেছি। একটি পাত্র তৈরি করতে আমাদের প্রায় সারাদিন লেগে যায় ৷
কুমাররা কিন্তু ঘুরিয়ে ঐ সময়ে এরকম কয়েকশো পাত্র তৈরি করতে পারে। কুমারবাড়ি গেলে দেখতে পারব চোখের নিমেষে কেমন করে তারা এক-একটি পাত্র তৈরি করতে পারে। তাই বলে কি মাটির শিল্পকর্ম তৈরিতে কয়েল পদ্ধতি অপ্রয়োজনীয় ও অকেজো হয়ে পড়েছে? মোটেই না। ছোট-বড় অনেক জিনিসই আছে যা কয়েল পদ্ধতিতেই তৈরি করতে হয়, চাকা দিয়ে করা যায় না। তাই এই পদ্ধতির গুরুত্বও কম নয়। কাজের মধ্য দিয়ে এই পদ্ধতি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলে আমরা মাটির পাত্র ছাড়াও অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরি করতে পারব। ইতোমধ্যে মাটির কয়েল দিয়ে আমরা যেসব পাত্র তৈরি করেছি সেগুলোর ভেতরদিকই শুধু মসৃণ করেছি, বাইরের দিক রয়েছে খাঁজকাটা। আমরা হয়তো মনে করতে পারি মাটির কয়েন্স দিয়ে কোনোকিছু তৈরি করলে বাইরের দিকটায় কয়েলের খাঁজ রাখতেই হয়। না, এরকম কোনো নিয়ম নেই। ইচ্ছা করলেই ভেতরে বাইরে দুদিকেই মসৃণ করতে পারি। তবে এক্ষেত্রে কয়েল তৈরির জন্য মাটির লতাটি পেনসিলের চেয়ে সামান্য একটু মোটা রাখতে হবে। মাটি থাকবে যথাসম্ভম্ব নরম। এবার মাটির কয়েল দিয়ে ভেতর-বাহির মসৃণ একটি পাত্র তৈরির চেষ্টা করি।
উপকরণ ও হাতিয়ার
যেহেতু মাটির পাত্র তাই মাটিই তার মূল উপকরণ । পাত্র তৈরির জন্য অতি সাধারণ সামান্য কিছু হাতিয়ারের প্রয়োজন, যা এর আগেও আমরা ব্যবহার করেছি। এবার অতি সাধারণ দু-একটা জিনিসের নাম যোগ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় হাতিয়ারের তালিকা জেনে নিই ।
১) কাঠের মসৃণ বেলোন অথবা বাঁশের একটা চোঙা।
২) বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি ছুরি ।
৩) কাঠের পাতলা চটা দিয়ে তৈরি 'মডেলিং
টুল ।
৪) কাঠ বা বাঁশের কাঠির মাথায় তার লাগিয়ে তৈরি ‘মডেলিং টুল'।
৫) চোখা মাথার একটি ছোট ছুরি বা চাকু। ছুরিটি লোহা কাটার করাতের ভাঙা টুকরো দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে।
৬) একটি স্কেল।
৭) লোহা কাটার করাতের ছোট-বড় টুকরো ।
৮) এক টুকরো স্পঞ্জ বা ফোম
৯) এক টুকরো মোটা পুরনো কাপড় ।
এই হাতিয়ারগুলো জোগাড় করা আমাদের জন্য মোটেই কঠিন হবে না। এর মধ্যে কয়েকটি তৈরি করে নিতে হবে।
পাঠ : : ১১
মাটির কয়েল দিয়ে মসৃণ পাত্র তৈরি
মাটি দিয়ে কয়েল কীভাবে তৈরি করতে হয় তা তো আমরা জানি। পাত্র তৈরির কাজ আরম্ভ করার আগে কাগজে পাত্রটির ছবি ও নকশা এঁকে নিই। পাত্রটি যত বড় হবে ছবি ও নকশা ঠিক তত বড় করে আঁকব। তাতে কাজের সময় কিছুক্ষণ পরপর মাপ ও গড়ন নকশার সাথে মিলিয়ে দেখতে সুবিধা হবে। এবার কী ধরনের পাত্র তৈরি করব তা ঠিক করে নিই। একটা ফুলদানি করি, তবে সাদামাটা চোঙার আকৃতি নয়।
ফুলদানির গড়ন নিচের দিক থেকে আস্তে আস্তে মোটা হয়ে ওপরের দিকে উঠবে। বেশ উঁচু হওয়ার পর আবার ছোট হয়ে একটা গলার মতো হবে। মুখের ব্যাস হবে গলার থেকে সামান্য বেশি। সব মিলিয়ে ফুলদানিটির গড়ন হবে লম্বাটে । গলায় একটা মালা এঁকে দিলে বেশ লাগবে। ফুলদানির ছবি ও নকশা এঁকে নিই, তারপর তৈরির কাজ আরম্ভ করি। প্রথমে পরিমাণমতো মাটি বেলোন অথবা বাঁশের চোঙায় বেলে এক সেন্টিমিটার রুটির মতো তৈরি করে নকশার মাপ অনুযায়ী ফুলদানির তলার জন্য কাটি। এবার মাপমতো একটি মাটির কয়েল তৈরি করে তলার কিনারা বরাবর বসাই। বসাবার আগে কয়েলের নিচ ও তলার কিনারা পানি দিয়ে স্যাঁতসেঁতে করে নিতে ভুলব না। প্রথমে কয়েলের বাইরের দিকে বাম হাতের মাঝের আঙ্গুল দিয়ে হালকা চাপ রেখে ডান হাতের তর্জনীর মাথা দিয়ে একটু একটু করে ভেতরের দিকের মাটি নিচের দিকে টেনে নামিয়ে তলার সাথে কয়েলটি জোড়া দিই। কয়েল যেন সম্পূর্ণ গোল থাকে। এবার বাম হাতের মাঝের আঙ্গুলটি কয়েলের ভেতরের দিকে বসিয়ে ডান হাতের তর্জনীর মাথা দিয়ে কয়েলের বাইরের দিকের মাটি টেনে নামিয়ে তলার সাথে জোড়া দিই। কয়েলটি ভেতর-বাহির দুদিকেই তলার সাথে যুক্ত হয়ে গেল। নকশা দেখে মাপ অনুযায়ী দ্বিতীয় কয়েল তৈরি করে প্রথম কয়েলের ওপর বসাই এবং একই নিয়মে ভেতর ও বাইরের
মাটি টেনে নামিয়ে তলার সাথে জোড়া দিই। কয়েলটি ভেতর-বাহির দুদিকেই তলার সাথে যুক্ত হয়ে গেল। নকশা দেখে মাপ অনুযায়ী দ্বিতীয় কয়েল তৈরি করে প্রথম কয়েলের ওপর বসাই এবং একই নিয়মে ভেতর ও বাইরের মাটি টেনে নামিয়ে জোড়া দিই। এভাবে একটির ওপর আরেকটি কয়েল বসিয়ে নকশা অনুযায়ী ফুলদানিটি তৈরি করি। কয়েকটি কয়েল বসানোর পর এক এক বার কাঠের মডেলিং টুল দিয়ে টেনে ও ঘষে ফুলদানির ভেতরের ও বাইরের অসমান মাটি সমান করে নেব। একটি বিষয়ে অবশ্যই খুব সজাগ থাকতে হবে, তা হলো প্রত্যেকটি কয়েল তৈরির সময় নকশা অনুযায়ী মাপ দেখে নিতে হবে। নিচ থেকে প্রত্যেকটি কয়েলে ব্যাস একটু একটু করে বেড়ে বেড়ে ওপরের দিকে উঠেছে আবার একটু একটু করে কমে কমে গলার
মাঝামাঝি গিয়ে একটু একটু বেড়েছে। প্রত্যেকটি কয়েল বসানোর সময় জোড়ার জায়গাটা পানি দিয়ে অবশ্যই ༣ স্যাঁতসেঁতে করে নেব। গড়ন শেষ করার পর এবার ফুলদানিটি মসৃণ করার পালা। লোহা কাটার করাতের ভাঙা টুকরো দিয়ে খুব সহজেই ফুলদানির বাইরের দিকটা মসৃণ করে নিতে পারি। করাতের কাঁটা-কাঁটা দিক দিয়ে চারদিক থেকে টেনে টেনে চেঁছে ফুলদানির গায়ের উঁচু-নিচু মাটি প্রথমে সমান করে নিই। এবার করাতের টুকরোর সোজা দিকটা একটু কাত করে ধরে টেনে পাত্রের ওপরটা হালকাভাবে চেঁছে মসৃণ করি। ভেজা স্পঞ্জ বা ফোম চিপড়ে নিয়ে তা দিেেয় স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় পাত্রটির গা ঘষে দিই। দেখি পাত্রটি আরও মসৃণ হয়ে গেছে। সবশেষে ছুরির চোখা মাথা দিয়ে খোদাই করে ফুলদানিটির গলার নিচে মালার মতো একটি অলঙ্কার এঁকে দিই। একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন- ফুলদানি তৈরির কাজ এক দিনে শেষ করতে না পারলে পলিথিন দিয়ে জড়িয়ে রাখব।
ফুলদানিটি এখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভালো করে লক্ষ করি । দেখব তৈরি ফুলদানি হয়তো আমার আঁকা ছবি ও নকশার সাথে হুবহু মিলছে না। হয়তো গড়নে পার্থক্য হয়ে গেছে, কোথাও কোথাও বাঁকা হয়ে গেছে। হোক না এরকম, তাতে কী আসে যায়? একটা ফুলদানি যে তৈরি করতে পারলে সেটা কি কম কথা, কম আনন্দের? প্রথম প্রথম এরকম হবেই, ঘাবড়াবার কিছুই নেই। অনেকদিন চর্চার পর সবই ঠিক হয়ে যাবে। তবে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে। কয়েল পদ্ধতিতে যে কোনো আকৃতির যত খুশি বড় জিনিস তৈরি করতে পারব। সবার আগে প্রয়োজন পদ্ধতিটিকে ভালোভাবে আয়ত্ত করে নেওয়া। ছবির নকশা ও নমুনা দেখে পাত্রগুলো তৈরি করতে চেষ্টা করি।
পাঠ : ১২৩ ১৩
মাটির ফলকের নকশা
পোড়ামাটির ফলকে শিল্পকর্মের জন্য আমাদের দেশ এক সময় খুবই বিখ্যাত ছিল। দেশের প্রাচীন শিল্পকর্মের যেসব নিদর্শন আমরা এখনও দেখতে পাই, বলতে গেলে তার প্রায় সবকিছুই পোড়ামাটির ফলকচিত্রের মধ্যে পড়ে। পাহাড়পুর ও ময়নামতির বৌদ্ধবিহারে প্রাপ্ত ফলকচিত্রে যেসব হাজার বছরের পুরনো শিল্পকর্মের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় তেমনি বগুড়ার মহাস্থানগড়, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে প্রায় তিনশো বছর আগে পর্যন্ত, ক্রমানুসারে পরবর্তী বিভিন্ন সময়ের শিল্পকর্মের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় পোড়ামাটির এই ফলকচিত্রের মধ্যেই। ছবি বা অন্য কোনো মাধ্যমে শিল্পকলা বিষয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের তেমন কোনো নিদর্শন আমরা দেখতে পাই না। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি আমাদের কাছে ঐতিহ্যগতভাবে পোড়ামাটির চিত্রের গুরুত্ব কত বেশি। তাহলে মাটির ফলকে একটি ছবি তৈরি করি ।
উপকরণ ও হাতিয়ার লাগবে ফুলদানি তৈরি করার সময় যা ব্যবহার করেছি তাই। নতুনের মধ্যে এক সেন্টিমিটার পুরু স্কেলের মতো লম্বা দুটি কাঠের রুল হলে কাজের সুবিধা হবে। মাটির ফলকে ছবি তৈরি করার আগে ছবিটি কাগজে এঁকে নিতে হবে। মানুষ, পশু, পাখি আমাদের যা খুশি তা আঁকতে পারি। মাটির ফলকে যত বড় ছবি করব ঠিক তত বড় ছবি আঁকি। তরকারির ঝুড়ি মাথায় লুঙ্গি পরা একটি গাঁয়ের লোক আঁকি। খুব ভালো হবে। লোকটির চারপাশে কিছু জায়গা রেখে ছবির ফ্রেমের মতো বর্ডার দিই। একটু পাতলা কাগজের ওপর কার্বন কাগজের সাহায্যে বর্ডারসহ ছবির একটি অনুলিপি বা কপি করে বর্ডার বরাবর মাটির ফলকে চিত্র ও নকশা তৈরির কিছু নমুনা চারদিকে কেটে রাখি। এবার পাঁচ ছয় সেন্টিমিটার ব্যাসের এক দলা নরম মাটি নিই। সিমেন্টের মেঝের ওপর কিংবা পিঁড়ির ওপর রেখে প্রথমে হাত দিয়ে চেপে একটু চ্যাপ্টা করে নিই। বেলোন অথবা বাঁশের চোঙা দিয়ে এই চ্যাপ্টা করা মাটি বেলে, এক সেন্টিমিটার পুরু রুটির মতো মাটির
ফ্ল্যাব বা ফলক তৈরি করি। মাটি বেলার সময় এক সেন্টিমিটার পুরু কাঠের রুল দুটি মাটির দুপাশে বসিয়ে, তার ওপর আমার ছবির কার্বন কপি বসাই। স্কেল ধরে কাগজের বর্ডার- বরাবর ছুরির মাথা দিয়ে চারদিকেরও বাড়তি মাটি কেটে দিই, এবার চোখা করে কাটা পেনসিলের মাথা হালকাভাবে ছবির ওপর দিয়ে চালিয়ে যাই, যাতে নিচের মাটিতে হালকা দাগ পড়ে। সম্পূর্ণ ছবির ওপর দিয়ে পেনসিল চালানো শেষ হয়ে গেলে কাগজটি মাটির ওপর থেকে তুলে নিই। দেখি, মাটির ফলকের ওপর ছবির সুন্দর ছাপ পড়ে গেছে। প্রথম যখন মাটির কাজ শিখতে আরম্ভ করেছিলাম তখন নরম মাটির ঢেলা খালিহাতে চেপে, টেনে ও টিপে টিপে কীভাবে বিভিন্ন আকৃতির পুতুল, হাতি, ঘোড়া তৈরি করেছি তা আমাদের মনে আছে। এখন মাটির ফলকে ছবি তৈরির সময় তোমার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।
কাগজে প্রথম যে ছবিটি এঁকেছি তা সামনে রাখি। এবার নরম মাটি নিই এবং ছবি দেখে টিপে টিপে পর্যায়ক্রমে মানুষটির মাথা, শরীর, হাত, পা, লুঙ্গি ইত্যাদির আদলে এক-একটি অংশ তৈরি করে মাটির ফলকে বসাবার পর আরেকটি অংশ তৈরি করে বসাব। এগুলো যাতে ফলকের ওপর ভালোভাবে মিলেমিশে বসতে পারে তার জন্য নিচের দিকটা চ্যাপ্টা বা সমান করে নিই, ওপরের দিকটা শরীরের গড়ন অনুযায়ী হবে। ফলকের যেখানে যখন এক-একটি অংশ বসাব তখন ছবির ছাপ অনুযায়ী ফলকের ঐ জায়গাটায় একটুখানি পানি লাগিয়ে বাঁশের চোখা ছুরি দিয়ে আঁচড়ে আঁচড়ে কিছুটা কাদা কাদা করে নিয়ে তবে বসা বসিয়ে একটু চাপ দিই যাতে অংশটি ভালোভাবে বসেও নিচে বাতাস থাকতে না পারে। লক্ষ করি চাপ দেওয়ার সময় নিচ থেকে কিছু-কিছু কাদা বেরিয়ে আসছে। বাঁশের ছুরির চোখা মাথা দিয়ে টেনে কাদাটুকু সমান করে দিই। এভাবে ফলকের ওপর মাটি বসিয়ে ছবি তৈরির কাজ সম্পন্ন করে নিই। এবার দেখি,
মাটির ফলকের ওপর তরকারির ঝুড়ি মাথায় লুঙ্গি পরা গাঁয়ের লোকটির ছবি কেমন সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। ছবি তৈরির কাজ কিন্তু এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ছবিটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খুব ভালো করে দেখি । কোথাও একটু মাটি লাগিয়ে কিংবা লাগাতে হলে জায়গাটা পানি দিয়ে একটু স্যাঁতসেঁতে করে মাটি লাগাই । গড়ন ঠিক করার পর ছবির চারদিকে ফলকের কিনারা বরাবর দুই সেন্টিমিটার চওড়া ও প্রায় এক সেন্টিমিটার উঁচু করে মাটি বসিয়ে ফ্রেমের মতো করি। এবার বাঁশের ছুরি দিয়ে খুব সাবধানে একটু একটু করে চেঁছে ফ্রেমসহ ছবিটিকে মসৃণ করে নিই। মসৃণ করার পর ছুরির চোখা মাথা দিয়ে খোদাই করে লোকটির চোখ, মুখ ও লুঙ্গির চেক এঁকে দিই। মাথার ঝুড়িতে ও কয়েকটি আঁচড় দিয়ে বুনন দেখাতে পারি ।
মাটির ফলকে ছবি তো তৈরি করলাম। এবার ছবিটাকে ঝুলানোর একটা ব্যবস্থা করা দরকার। মাটি দিয়ে হাতের আঙ্গুলের মাথার সমান দুটি মালা তৈরি করি। ঝাড়ুর শলা বা এরকম সরু কিছু দিয়ে মালার ভেতরে মোটা সুতা ঢোকাবার মতো ছিদ্র করি। মালা দুটির এক পাশ সামান্য কেটে একটু সমান করে নিই। এবার ছবির পেছন দিকে ওপরে দুই কোনায় মালা দুটি বসিয়ে ভালো করে জোড়া দিই। মালা দুটির ছিদ্র যেন বন্ধ না হয় এবং লম্বালম্বিভাবে বসে। মালা দুটির ভেতর দিয়ে শক্ত সুতা পরিয়ে এ - ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে পারি আবার কোনোকিছুর সাথে ঠেস দিয়ে কোনো মানানসই জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখতে পারি। যেভাবেই রাখি খুব সুন্দর দেখাবে ।
মাটি দিয়ে কিছু পাত্র ও ফলকচিত্র তৈরি করা তো শেখা হলো। মাটির তৈরি এসব জিনিস ভালো করে শুকিয়ে পোড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ছায়ায় রেখে ধীরে ধীরে শুকোতে হবে তা তো জানা আছে। এতে সময় লাগবে সত্যি কথা, কিন্তু বাঁকা হওয়ার বা ফেটে যাওয়ার ভয় থাকে না। ভালো করে শুকাল কি না, তা বুঝব কী করে? একটা শুকনো জিনিস হাতে নিয়ে তার তলায় বা পেছনের দিকে নখ দিয়ে একটু আঁচড় দিলে যদি দেখি আঁচড়ের জায়গাটা সাদাটে হয়ে গেছে তাহলে বুঝবো জিনিসটি ভালোভাবেই শুকিয়ে গেছে। তা না হলে আরও শুকাতে হবে। শুকনো জিনিস ভেজা হাতে ধরলে বা পানি লাগলে ফেটে যাবে তাই খুব সাবধান থাকব। আশেপাশে কোথাও কুমারবাড়ি থাকলে কুমারদের কাছ থেকে আমাদের তৈরি জিনিসগুলো পুড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। তা না হলে কাঠের ভুসি অথবা ধানের তুষ দিয়ে নিজেই পোড়াতে পারি ।
পাঠ : ১৪
ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম
কাজে লাগবে না বলে অনেক জিনিস আমরা ফেলে দিই। মনে করি আবর্জনা তাই ফেলে দিই, এ ছাড়া আর কী করার আছে? আমরা কদবেল খেয়ে খোলস ফেলে দিই। যেমন- হাঁস-মুরগির মাংস থেকে পালকগুলোকে আমরা আবর্জনা মনে করি। নগণ্য ফেলনা জিনিস আমাদের কল্পনাশক্তি, চিন্তা-ভাবনা এবং সুন্দর জিনিস তৈরির আগ্রহটাকে কাজে লাগিয়ে দেখি না এই ফেলে দেওয়া কদবেলের খোলস, পালক ইত্যাদি দিয়ে সুন্দর কোনো কিছু তৈরি করতে পারি কি না?
কদবেলের খোলস দিয়ে খেলনা বা পুতুল
আমাদের দেশে কদবেল পাওয়া যায়। পাকা কদবেল খেয়ে খোসা আমরা ফেলে দিই। পাকা কদবেলের মুখে ছোট একটি ফুটো করে কাঠি ঢুকিয়ে সাবধানে ভেতরের নির্যাসটুকু বের করে নিয়ে, কদবেলের খোসা আস্ত রাখলে এটা দিয়ে সুন্দর পুতুল তৈরি করতে পারব । আস্ত খালি খোসা কয়েকদিন রেখে দিলে শুকিয়ে যাবে । এবার একটি ছুরি দিয়ে আস্তে আস্তে চেঁছে এটিকে মসৃণ করে নিই। এভাবে দুইটি কদবেলের খোসা ঠিক করে নিই। এরপর একটিতে হলুদ রং (ভার্নিশ কালার) করি। অন্যটি পছন্দমতো যে-কোনো রং করি। দ্বিতীয় বলটিতে কিছু বালি অথবা ছোট ছোট কাঁকর দিয়ে ভরে ভারী করি। দ্বিতীয় বলটির উপর প্রথম বলটি আইকা গাম দিয়ে আটকিয়ে দিই। এবার হলুদ বলটিতে চুল, চোখ, মুখ ও ঠোঁট আঁকি এবং অন্য বলটিতে নকশা এঁকে নিই। দেখি কেমন চমৎকার একটি পুতুল তৈরি হয়ে গেল। এটি পড়ার টেবিলে পেপার ওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতে পারি অথবা বন্ধুদেরও উপহার দিতে পারব
পাঠ : ১৫
পালক দিয়ে ফুল
হাঁস-মুরগির ছোট সাদা পালকগুলো আলাদা করে পানিতে গোলানো লাল, হলুদ, বেগুনি ইত্যাদি রঙে চুবিয়ে শুকিয়ে নিই। মুরগির লম্বা সাদা পালকও সবুজ রং করে শুকিয়ে নিতে হবে। কিছু হলুদ রং করে শুকিয়ে রাখি। মুরগির সবুজ, নীল, কালচে সবুজ পালকগুলোও বেছে পরিষ্কার করে রাখি। সামান্য শক্ত এক টুকরো সবুজ রঙের কাগজ নিয়ে এক টাকার কয়েনের সমান গোল একটি চাকতি তৈরি করি। সবুজ রঙের উপযুক্ত কাগজ না পেলে সাদা কাগজই রং করে শুকিয়ে নিতে পারি। কাগজের চাকতিটির পরিধি থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এক জায়গায় কেটে নিই। এবার কাটা এক পাশের ও অপর পাশ তুলে শক্ত আঠা দিয়ে জোড়া দিই। দেখি, চাকতির মাঝখানটায় কোণের মতো গর্ত হয়ে গেল। এবার গর্তের দিকে চাকতির ভেতরে আইকা আঠা লাগিয়ে যে-কোনো এক রঙের ছোট ছোট পালক ফুলের পাপড়ির মতো এক এক করে বসিয়ে দিই। চারদিক ঘুরিয়ে পালক বসানোর পর দেখি জিনিসটি কেমন সুন্দর ফুলের মতো দেখাচ্ছে। এবার ঝাড়ুর শলা (নারকেলপাতার শলা) বিশ-একুশ সেন্টিমিটার লম্বা করে কাটি। শলার মাথায় আঠা লাগিয়ে হলুদ রঙের তুলা জড়িয়ে এক সেন্টিমিটার ব্যাসের আমলকীর মতো একটি গুটি তৈরি করি। শলার মাথাটি যেন গুটির ভেতরে ঢোকানো থাকে এবং গুটি যেন শলার সাথে শক্ত হয়ে লেগে থাকে। শলার অপর মাথাটা পালকের ফুলের
মাধান দিয়ে ঢুকিয়ে টেনে নিচে নামিয়ে দিই, যাতে তুলার পুটিটি ফুলের পাপড়ির ঠিক মাঝখানে চেপে বসে যায়। বসানোর আগে গুটির নিচের দিকে ভালো করে আইকা আঠা লাগিয়ে পালক দিয়ে ফুল তৈরি করি। এভাবে ফেলনা জিনিস দিয়ে কেটে-হেঁটে আঠা লাগিয়ে অনেক কিছু করা যায়। এবার পলাটির সারা পারে আঠা লাগিয়ে পাতলা সবুজ কাগজ দিয়ে সুন্দর করে মুড়ে নিই। কাপজে মোড়া হয়ে গেলে সবুজ রঙের কয়েকটি লম্বা পালকের গোড়ার দিকে পেলিলাম বা আইকা আঠা লাগিয়ে শলার সাথে জুড়ে দিই যাতে পালকগুলো পাতার মতো দেখায়। সবুজ রং করা পালকের সাথে দুই-তিনটা সবুজ-নী, কালচে-সবুজ রঙের পালক বসালে খুবই সুদর দেখাবে। এভাবে পালক বসানোর পর পালকের গোড়া ময়দার আঠা লাগানো পাতলা সবুজ কাগজ পেঁচিয়ে ঢেকে দিই। এবার দেখি পালকের তৈরি ফুল, পাতা ও ডাঁটাসহ কেমন সুন্দর দেখাচ্ছে। এভাবে নানান রঙের ফুল তৈরি করে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখলে খুব সুন্দর দেখাবে। পালক দিয়ে ফুল তৈরি করার একটি পদ্ধতি জানা হলো। এবার নিজেদের বুদ্ধিতে, নিজেদের পছন্দমতো অন্য কোনোরকমের ফুল বা অন্য কোনো জিনিস তৈরি করার চেষ্টা করব।
পাঠঃ ১৬ ও ১৭
পাটের আঁশ বা ঊল দিয়ে সুন্দর একটি হাঁসের ছানা তৈরি
আমরা উল দিয়ে পমপম তৈরি করেছি। ঠিক একই নিয়মে পাটের আঁশ দিয়ে একটি হাঁসের ছানা তৈরি করতে পারি। নিচের ছবি দেখে অনায়াসে হাঁসের ছানাটি তৈরি করতে পারব। মোটা কাগজ যারা না পাবে তারা পুরনো চিঠির পোস্টকার্ড নিয়ে তিন ইঞ্চি ব্যাসের দুইটি গোলাকৃতি এঁকে কেটে নেবে। যত্ন গোলাকৃতি দুটির ঠিক মাঝে ছোট করে গোল এঁকে কেটে বের করি। এর পর সুই-এর সাহায্যে উল অথবা পাটের আঁশ পরিরে গোল চাকতি দুটো একসাথে নিয়ে এমনভাবে বার বার ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ ভরব যেন একটুও ফাঁক না থাকে । এবার কাঁচি দিয়ে চারধার একটু কেটে কাগজের চাকতি দুটোর ফাঁকে একটু শক্ত করে সুতো বা উল দিয়ে বেঁধে নেব। এবার কাগজ ছিড়ে ফেলে দিয়ে একটা অংশ কাঁচি দিয়ে হেঁটে মাথার আকৃতি করি। এবং
নিচের অংশ শরীরের কাজ করবে। (যারা পাটের আঁশ দিয়ে করবে তারা সরু তার ভাঁজ করে একটি সুইয়ের মতো করে নেবে)। এবার কাগজ কেটে চোখ ও ঠোঁট বানিয়ে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেব। চোখের রং কালো ও ঠোঁট হলুদ বা লাল করে দিলে সুন্দর দেখাবে। এবার হাঁসটি তৈরি হয়ে গেলে হাঁসের গলায় সুন্দর সরু ফিতা বেঁধে দিলে আরও সুন্দর দেখাবে।
এভাবে তিনটি হাঁসের ছানা তৈরি করে একটি সেট বানাতে পারি। এটি আমরা বন্ধুদের জন্মদিনে উপহার দিতে পারি বা নিজের ঘরে রেখে সাজাতে পারি। বন্ধুদের উপহার দেবার জন্য আমরা তিনটি পুতুলের সেট তৈরি করে নিতে পারি। একটি বড় ও দুটো ছোট হাঁসের ছানা তৈরি করে একটি হার্ডবোর্ড বা মোটা বোর্ড কাগজ লম্বা করে কেটে, হাঁসের ছানাগুলোর নিচের অংশে আঠা লাগিয়ে পর পর তিনটি ঐ হার্ডবোর্ডে সাজিয়ে নিই।
পাঠ : ১৮৩ ১৯
ফেলনা উল বা পাটের আঁশ দিয়ে ফুল তৈরি
ফুল সবারই প্রিয়। ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্যে আমাদের সবার মন ভরে যায় এখন একটি ফুল তৈরি করা শিখব তার, উল অথবা পাটের আঁশ দিয়ে ।
প্রস্তুতপ্রণালি
প্রথমে ২৪ নং তার কেটে উলের কাঁটা বা যে-কোনো সরু কাঠির গোড়ায় তার আটকিয়ে বার বার ঘুরিয়ে স্প্রিং তৈরি করি। স্প্রিং তৈরি শেষ হলে কাঠি থেকে স্প্রিং খুলে নিই।
এবার স্প্রিংয়ের দুই মাথা দুহাতে ধরে টান দিয়ে আন্দাজমতো লম্বা করে নিই, স্প্রিং খুব বেশি ফাঁক না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখব। এবার ফুলের পাপড়ি যত বড় করতে চাই, তার দুইগুণ সমান স্প্রিং কেটে নেব। স্প্রিংয়ের দুমাখা আটকিয়ে পাপড়ির আকার করে নেব। এবার উল বা সুতা অথবা পাটের আঁশ স্প্রিংয়ের পাপড়ির গোড়ায় একমাথা বেঁধে অন্য মাথা ধরে একপাশ হতে অন্যপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ পাপড়ি করব। উল বা সুতোর শেষ মাথা পাপড়ির গোড়ায় সোজা এনে বেঁধে দেব। এভাবে পাঁচটি পাপড়ি তৈরি করে নেব। ২০ নং তার ডাঁটা তৈরির জন্য আন্দাজমতো কেটে নেব। ডাঁটার মাথা সামান্য বাঁকিয়ে হলুদ বা পছন্দমতো উল বা কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে ফুলের রেণু বানিয়ে নিই। ঐ পাঁচটি পাপড়ি একের পর এক রেণুর নিচে বেঁধে ফুলটি তৈরি করি। বোঁটার সাথে সবুজ বা ব্রাউন সুতা বা কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেব। ফুলের পাপড়ির মতো করে একটি পাতা তৈরি করি। পাতাটি ডাঁটার সাথে আটকিয়ে দিই। ডাঁটাসহ একটি সুন্দর ফুল তৈরি হলো। এভাবে অনেকগুলো ফুল তৈরি করতে পারি। নিজের ঘরে ফুলদানিতে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারি অথবা বন্ধুদের উপহার দিতে পারি।