কোন বাগধারার অর্থ 'মন্দভাগ্য' ?
যে শব্দ বা শব্দ সমষ্টি বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে নিজস্ব অর্থ অতিক্রম করে অপর কোনো বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, সেই শব্দ বা শব্দ সমষ্টিকে বলা হয় বাগ্ধারা।
বাগধারা বাংলা ভাষার বিশিষ্ট সম্পদ। বাগ্ধারার মাধ্যমে বক্তার মনের গভীর ভাবকে অল্প কথায় সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায়। এগুলো ভাষাকে শক্তিশালী, ব্যঞ্জনাময় ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। তাই সব ভাষাতেই বাগ্ধারার বিশেষ প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
নিচে বাগ্ধারার কিছু নমুনা দেওয়া হলো।
অ আ ক খ : (প্রাথমিক জ্ঞান) : তোমার তো দেখছি অ আ ক খ জ্ঞান নেই, চাকরিটা পেলে কীভাবে?
অকালকুষ্মাণ্ড : (অপদার্থ) : অকালকুষ্মাণ্ড ছেলেকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না।
আমড়াগাছি করা : (তোষামুদে) : আজকাল আমড়াগাছি না করলে কোনো কাজ হাসিল হয় না।
ইঁদুর কপালে : (মন্দভাগ্য) : এত বড় চাকরি পেয়েও ধরে রাখতে পারলে না, তোমার মতো ইঁদুর কপালে আর কে আছে!
উজানের কই : (সহজলভ্য) : মোবাইল ফোন এখন উজানের কইয়ের মতো, যেখানে সেখানে পাওয়া যায়।
কাপুড়ে বাবু : (বাহ্যিক সভ্য) : আজকাল সত্যিকার অর্থে ভদ্রলোক নেই, সবাই কাপুড়ে বাবু।
খিচুড়ি পাকানো : (জটিল করা) : যা বলবে সহজ করে বল, অযথা খিচুড়ি পাকিয়ো না।
গরজ বড় বালাই : (প্রয়োজনে গুরুত্ব ) : পরীক্ষা ঘাড়ের ওপর, তাই বই কিনতে হবে, গরজ বড় বালাই।
ঘর থাকতে বাবুই ভেজা : (সুযোগ থাকতে কষ্ট) : বাবার অগাধ টাকা, অথচ তুমি কিনা টিউশনি করে চলো, ঘর থাকতে বাবুই ভেজা কেন?
চোখে সাঁতার পানি : (অতিরিক্ত মায়াকান্না) : ব্যাঙের শোকে সাপের চোখে দেখি সাঁতার পানি।
ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধা : (বৃথা চেষ্টা) : বাবার সামান্য আয়ে সংসারই চলে না, সেখানে আমার প্রাইভেট পড়ার শখ ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধার মতোই হাস্যকর।
ঝাঁকের কৈ : (একই দলভুক্ত) : ওরা সবাই ঝাঁকের কৈ; একই উদ্দেশ্য নিয়ে চলে।
টাকার গরম : (অর্থের অহংকার) : টাকার গরমে মোহনের পা মাটিতে পড়ে না।
তামার বিষ : (অর্থের কু-প্রভাব) : মেধাবী ছেলেকে তামার বিষে ধরায় সে এবার পরীক্ষায় ফেল করেছে।
তুলসী বনের বাঘ : (ভণ্ড) : রনি দিনে যে বাড়িতে কাজ করে, রাতে সেই বাড়িতেই চুরি করতে যায় ; ও হচ্ছে তুলসী বনের বাঘ।
দুধে-ভাতে থাকা : ( সুখে থাকা ) : 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। ’
নাড়ির টান : (গভীর মমত্ববোধ) : বিদেশে গিয়েও অনেকে দেশের প্রতি নাড়ির টান অনুভব করেন৷
পালের গোদা : (দলপতি) : পালের গোদা ধরা পড়েছে, এবার বাকিরাও ধরা পড়বে।
পেটে পেটে বুদ্ধি : (দুষ্টুবুদ্ধি) : মেয়েটির পেটে পেটে এত বুদ্ধি জানতাম না তো!
ব্যাঙের আধুলি : (সামান্য অর্থ) : ব্যাঙের আধুলি সম্বল করে ব্যবসা করা যায় না।
ভিটায় ঘুঘু চরানো : (সর্বস্বান্ত) : তোমার ভিটায় ঘুঘু চরিয়ে ছাড়ব।
মাছের মায়ের পুত্রশোক : (মিথ্যা শোক) : গরিবের জন্য বড়লোকের দরদটা মাছের মায়ের পুত্রশোকের মতোই।
শিবরাত্রির সলতে : (একমাত্র সন্তান) : অর্জুন তার বাবা-মায়ের শিবরাত্রির সলতে, তাই সবাই তাকে সব সময় চোখে চোখে রাখে।
সোনার পাথরবাটি : (অসম্ভব বস্তু) : সাপের পাঁচ পা দেখা আর সোনার পাথরবাটিতে স্যুপ খাওয়া – দুটোই আমার কাছে আষাঢ়ে গল্পের মতো।
হ-য-ব-র-ল : (বিশৃঙ্খল) : বাবার মৃত্যুতে গোছানো সংসারটা কেমন যেন হ-য-ব-র-ল হয়ে গেল৷