বাংলা ভাষায় উপসর্গ, প্রত্যয় ও সমাসের প্রক্রিয়ায়ের শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে কিসের সূত্র কাজে লাগে?

Created: 1 year ago | Updated: 8 months ago
Updated: 8 months ago

পাশাপাশি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। পৃথিবীর বহু ভাষায় পাশাপাশি শব্দের একাধিক ধ্বনি নিয়মিতভাবে সন্ধিবদ্ধ হলেও বাংলা ভাষায় তা বিরল। যেমন 'আমি এখন চা আনতে যাই' বাংলা ভাষার এই বাক্যটিকে সন্ধির সূত্র অনুযায়ী 'আম্যেখন চানতে যাই' বলা যায় না। তবে বাংলা ভাষায় উপসর্গ-প্রত্যয় দিয়ে এবং সমাস প্রক্রিয়ায় শব্দগঠনের ক্ষেত্রে সন্ধির সূত্র কাজে লাগে।

সন্ধি তিন প্রকার: স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি।

১. স্বরসন্ধি

স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনকে স্বরসন্ধি বলে।

সূত্র-১: অ/আ+অ/আ = আ। যেমন - উত্তর-অধিকার উত্তরাধিকার, আশা+অতীত = আশাতীত 

সূত্র-২: ই/ঈ+ই/ঈ = ঈ। যেমন - অতি+ইন্দ্রিয় = অতীন্দ্রিয়, পরি+ঈক্ষা = পরীক্ষা 

সূত্র-৩: উ/ঊ-উ/ঊ = উ। যেমন - মরু+উদ্যান = মরূদ্যান 

সূত্র-৪: অ/আই/ঈ = এ। যেমন - শুভ+ইচ্ছা = শুভেচ্ছা 

সূত্র-৫: অ/আ+উ/ঊ = ও। যেমন - সূর্য উদয় = সূর্যোদয় 

সূত্র-৬: অ/আ+ঋ = অর্। যেমন - মহাঋষি = মহর্ষি 

সূত্র-৭: অ/আ+ঋত = আর্। যেমন - শীতঋত = শীতার্ত 

সূত্র-৮: অ/আ+এ/ঐ = ঐ। যেমন - জন+এক = জনৈক 

সূত্র-৯: অ/আ+ও/ঔ = ঔ। যেমন - বন+ওষধি = বনৌষধি 

সূত্র-১০: ই/ঈ+অন্য স্বর য+স্বর। যেমন - প্রতি+এক = প্রত্যেক 

সূত্র-১১: উ/ঊ-অন্য স্বর বৃস্বর। যেমন - সু+অল্প = স্বল্প 

সূত্র-১২: ঋ+অন্য স্বর = র্স্বর। পিতৃ+আলয় = পিত্রালয়

সূত্র-১৩: এ+ অন্য স্বর = অম্+স্বর। যেমন - শে+অন = শয়ন 

সূত্র-১৪: ঐ+ অন্য স্বর = আস্-স্বর। যেমন - নৈ+অক = নায়ক 

সূত্র-১৫: ও + অন্য স্বর অব্‌+স্বর। যেমন - গো+আদি = গবাদি 

সূত্র-১৬: ঔ+ অন্য স্বর আব্‌-স্বর। যেমন - নৌ+ইক = নাবিক।

 

কিছু স্বরসন্ধি সূত্র অনুসরণ করে না, সেগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি বলে। যেমন কুল+অটা = কুলটা (সূত্র অনুসারে কুলাটা হওয়ার কথা)। গো+অক্ষ = গবাক্ষ (সূত্র অনুসারে গবক্ষ হওয়ার কথা) ইত্যাদি।

২. ব্যঞ্জনসন্ধি

ঘরে-ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে-স্বরে ও ব্যঞ্জনে-ব্যঞ্জনে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।

ক. স্বর+ব্যঞ্জন

স্বর+ছ = স্বর+চচ্ছ। যেমন কথা+ছলে কথাচ্ছলে, পরি+ছেদ = পরিচ্ছেদ। 

এখানে পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী ছ-এর জায়গায় চচ্ছ হয়েছে।

খ. ব্যঞ্জন+স্বর

ক/চ/ট/ত/প+স্বর = গ/জ/ড (ড়)/দ/ব। যেমন দিক্+অন্ত দিগন্ত, সৎ+উপায় সদুপায়

স্বরধ্বনিগুলো ঘোষবৎ হয়। এখানে ঘোষবৎ স্বরধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী অঘোষ ধ্বনি (ক, চ, ট, ত, প) পরিবর্তিত হয়ে ঘোষধ্বনিতে (গ, জ, ড, দ, ব) পরিণত হয়।

গ. ব্যঞ্জন+ব্যঞ্জন

ব্যঞ্জনসন্ধিতে একটি ধ্বনির প্রভাবে পার্শ্ববর্তী ধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেমন- 

চলৎ-চিত্র = চলচ্চিত্র (এখানে চ-এর প্রভাবে ত হয়েছে চ)

বিপদ্‌+জনক = বিপজ্জনক (এখানে জ-এর প্রভাবে দ হয়েছে জ) 

উৎ+লাস = উল্লাস (এখানে ল-এর প্রভাবে ত হয়েছে ল) 

বাক্+দান = বাগ্দান (এখানে ঘোষধ্বনি দ-এর প্রভাবে ক হয়েছে গ)

তৎ+মধ্যে = তন্মধ্যে (এখানে নাসিক্য ধ্বনি ম-এর প্রভাবে ত হয়েছে ন) 

শম্+কা = শঙ্কা (এখানে কণ্ঠ্যধ্বনি ক-এর প্রভাবে ম হয়েছে ঙ) 

সম্+চয় = সঞ্চয় (এখানে তালব্যধ্বনি চ-এর প্রভাবে ম হয়েছে ঞ) 

সম্+তাপ = সন্তাপ (এখানে দন্ত্যধ্বনি ত-এর প্রভাবে ম হয়েছে ন) 

সম্+মান = সম্মান (এখানে ওষ্ঠ্যধ্বনি ম-এর প্রভাবে ম অপরিবর্তিত রয়েছে) 

ষম্+থ = ষষ্ঠ (এখানে মূর্ধন্যধ্বনি ষ-এর প্রভাবে থ হয়েছে ঠ)।

কিছু ব্যঞ্জনসন্ধি নিয়ম ছাড়া হয়, সেগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। যেমন গো+পদ = গোষ্পদ, এক+দশ = একাদশ, বৃহৎ+পতি বৃহস্পতি ইত্যাদি।

৩. বিসর্গসন্ধি

বিসর্গসন্ধিতে বিসর্গের কয়েক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়:

১. বিসর্গ বিদ্যমান থাকে: মনঃ+কষ্ট = মনঃকষ্ট, অধঃপতন = অধঃপতন, বয়ঃসন্ধি = বয়ঃসন্ধি 

২. বিসর্গ 'ও' হয়ে যায়: মনঃ+যোগ – মনোযোগ, তিরঃ-ধান = তিরোধান, তপঃ+বন = তপোবন 

৩. বিসর্গ 'র' হয়ে যায়: নিঃ-আকার নিরাকার, পুনঃ+মিলন = পুনর্মিলন, আশীঃ+বাদ = আশীর্বাদ

৪. বিসর্গ শ/ষ/স্ হয়: নিঃ+চয় = নিশ্চয়, দুঃ+কর = দুষ্কর, পুরঃ+কার = পুরস্কার

৫. কিছু কিছু সন্ধিতে পূর্ববর্তী স্বর দীর্ঘ হয়: নিঃ+রব = নীরব, নিঃ+রস = নীরস, নিঃ+রোগ = নীরোগ।

Content added || updated By
Promotion