নিচের কোনটি পূরণবাচক সংখ্যাশব্দ নয়?
যেসব শব্দ দিয়ে সংখ্যা বোঝায়, সেগুলোকে সংখ্যাবাচক শব্দ বা সংখ্যাশব্দ বলে। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয় প্রভৃতি সংখ্যাশব্দ- এগুলো এখানে কথায় লেখা হয়েছে। আবার বিশেষ কিছু বর্ণ বা সংকেত দিয়ে এগুলো প্রকাশ করা যায়, যথা: ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ প্রভৃতি সংখ্যাশব্দ এগুলো এখানে অঙ্কে বা সংখ্যাবর্ণে লেখা হয়েছে। দূরত্ব, দৈর্ঘ্য, আয়তন, খণ্ড, তাপমাত্রা ইত্যাদি পরিমাপের ক্ষেত্রে সংখ্যাশব্দের ব্যাপক ব্যবহার হয়।
সংখ্যাশব্দ দুই রকমের: ক্রমবাচক ও পূরণবাচক। ক্রমবাচক, যথা: এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ। পূরণবাচক, যথা: প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম।
একের পর এক যে সংখ্যাগুলো আসে, সেগুলো ক্রমবাচক সংখ্যাশব্দ। যেমন ১ (এক), ২ (দুই), ৩ (তিন), ৪ (চার), ৫ (পাঁচ), ৬ (ছয়), ৭ (সাত), ৮ (আট), ৯ (নয়), ১০ (দশ), ১১ (এগারো), ১২ (বারো), ১৩ (তেরো), ১৪ (চোদ্দ), ১৫ (পনেরো), ১৬ (ষোলো), ১৭ (সতেরো), ১৮ (আঠারো), ১৯ (উনিশ), ২০ (বিশ) ইত্যাদি।
ক্রমবাচক সংখ্যাবর্ণের সুবিধা হলো এতে ১ থেকে ৯ এবং ০ দিয়ে অসীম সংখ্যার পূর্ব পর্যন্ত ক্রম তৈরি করা যায়।
ক্রমবাচক সংখ্যাশব্দের এক বা একাধিক প্রতিশব্দ রয়েছে। এগুলো কখনো স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হয়, কখনো সমাসবদ্ধ শব্দের পূর্বপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন 'দুই' সংখ্যাশব্দের প্রতিশব্দ 'দ্বি', 'দু', এবং 'দো'। 'তিন' সংখ্যাশব্দের প্রতিশব্দ 'ত্রি' এবং 'তে'।
পূরণবাচক সংখ্যাশব্দ দিয়ে কোনো সংখ্যার ক্রমিক অবস্থান ও পরিমাণকে বোঝায়। যেমন 'এক' সংখ্যার ক্রমিক অবস্থান 'প্রথম', 'প্রথমা', 'পহেলা' ইত্যাদি। এগুলোকে পূরণবাচক সংখ্যাশব্দ বলে।
পূরণবাচক সংখ্যাশব্দ তিন ধরনের হয়: ১. সাধারণ পূরণবাচক, ২. তারিখ পূরণবাচক ও ৩. ভগ্নাংশ পূরণবাচক।
ক্রমবাচক সংখ্যার পর্যায় বা অবস্থানকে নির্দেশ করতে সাধারণ পূরণবাচক হয়ে থাকে। যেমন – প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম, একাদশ বা এগারোতম ইত্যাদি। সাধারণ পূরণবাচক সংক্ষিপ্ত রূপেও লেখা যায়। যেমন ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম ইত্যাদি।
১১ থেকে ১৮ পর্যন্ত সংখ্যার পূর্ণ পূরণবাচক ও সংক্ষিপ্ত পূরণবাচক দুই রকম: একাদশ (১১শ) ও এগারোতম (১১তম), দ্বাদশ (১২শ) ও বারোতম (১২তম), ত্রয়োদশ (১৩শ) ও তেরোতম (১৩তম), চতুর্দশ (১৪শ) ও চোদ্দতম (১৪তম), পঞ্চদশ (১৫শ) ও পনেরোতম (১৫তম), ষোড়শ (১৬শ) ও ষোলোতম (১৬তম), সপ্তদশ (১৭শ) ও সতেরোতম (১৭তম), অষ্টাদশ (১৮শ) ও আঠারোতম (১৮তম)।
১৯ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সংখ্যার সংক্ষিপ্ত পূরণবাচকে শুধু 'তম' প্রত্যয় যোগ করা হয়। যথা: উনিশতম বা ঊনবিংশতিতম (১৯তম), বিশতম বা বিংশতিতম (২০তম), একুশতম বা একবিংশতিতম (২১তম), আটাশতম বা অষ্টাবিংশতিতম (২৮তম), উনপঞ্চাশতম বা ঊনপঞ্চাশত্তম (৪৯তম), আশিতম বা অশীতিতম (৮০তম), নব্বইতম বা নবতিতম (৯০তম), নিরানব্বইতম বা নবনবতিতম (৯৯তম) ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় সাধারণ পূরণবাচকের নারীবাচক রূপের ব্যবহার আছে। যেমন প্রথমা (১মা), দ্বিতীয়া (২য়া), তৃতীয়া (৩য়া), চতুর্থী (৪র্থী), পঞ্চমী (৫মী), ষষ্ঠী (৬ষ্ঠী), সপ্তমী (৭মী), অষ্টমী (৮মী), নবমী (৯মী), দশমী (১০মী), একাদশী (১১শী), দ্বাদশী (১২শী), ত্রয়োদশী (১৩শী), চতুর্দশী (১৪শী), পঞ্চদশী (১৫শী), ষোড়শী (১৬শী), সপ্তদশী (১৭শী), অষ্টাদশী (১৮শী) ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় তারিখ নির্দেশ করার জন্য সংখ্যাশব্দের পূরণবাচকে নির্দিষ্ট কিছু প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যথা: পহেলা বা পয়লা (১লা), দোসরা (২রা), তেসরা (৩রা), চৌঠা (৪ঠা), পাঁচই (৫ই), ছয়ই (৬ই), সাতই (৭ই), আটই (৮ই), নয়ই (৯ই), দশই (১০ই), এগারোই (১১ই), বারোই (১২ই), তেরোই (১৩ই), চোদ্দই (১৪ই), পনেরোই (১৫ই), ষোলোই (১৬ই), সতেরোই (১৭ই), আঠারোই (১৮ই), উনিশে (১৯শে), বিশে (২০শে), একুশে (২১শে), বাইশে (২২শে), তেইশে (২৩শে), চব্বিশে (২৪শে), পঁচিশে (২৫শে), ছাব্বিশে (২৬শে), সাতাশে (২৭শে), আটাশে (২৮শে), উনত্রিশে (২৯শে), ত্রিশে (৩০শে), একত্রিশে (৩১শে)।
কখনো পূর্ণসংখ্যার থেকে খানিকটা কম বা খানিকটা বেশি বোঝাতে ভগ্নাংশ পূরণবাচক হয়। যেমন- আধ, সাড়ে, পোয়া, সোয়া, দেড়, আড়াই, তেহাই ইত্যাদি।