বাক্যের ক্রিয়াকে যে চালায় তাকে বলে-

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

এক বা একাধিক শব্দ দিয়ে গঠিত পূর্ণ অর্থবোধক ভাষিক একককে বাক্য বলে। বাক্য দিয়ে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়। যেমন "সজল ও লতা বই পড়ে।" এটি একটি বাক্য। পাঁচটি শব্দ দিয়ে গঠিত এই বাক্যে বক্তার মনের ভাব পুরোপুরি প্রকাশিত হয়েছে।

বাক্যের মধ্যে স্থান পাওয়া প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে। এদিক দিয়ে পদ হলো বাক্যের একক। রূপতত্ত্ব অংশে শব্দশ্রেণি নামে বাক্যের এই পদ বিভাজনকে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপরের বাক্যের 'সজল', 'লতা' ও 'বই' হলো বিশেষ্য, 'ও' হলো যোজক এবং 'পড়ে' হলো ক্রিয়া।

বাক্যের মধ্যে একাধিক শব্দের গুচ্ছে অনেক সময়ে পদের মতো কাজ করে। তখন সেই একাধিক শব্দের গুচ্ছকে বর্গ বলা হয়। উপরের বাক্যে 'সজল ও লতা' একটি বর্গ।

সাধারণ বাক্যের প্রধান তিনটি অংশ: কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়া। বাক্যের ক্রিয়াকে যে চালায়, সে হলো কর্তা। যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে বলে কর্ম। আর বাক্যের মধ্যে যে অংশ দিয়ে কোনো কিছু করা, ঘটা বা হওয়া বোঝায় তাকে বলে ক্রিয়া। উপরের বাক্যে 'সজল ও লতা' হলো কর্তা, 'বই' হলো কর্ম এবং 'পড়ে' হলো ক্রিয়া।

প্রতিটি বাক্যকে উদ্দেশ্য ও বিধেয় এই দুই অংশে ভাগ করা যায়। বাক্যের যে অংশে কারো সম্পর্কে বলা হয়, সেই অংশ হলো বাক্যের উদ্দেশ্য। এছাড়া বাক্যের যে অংশে উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলা হয়, সেই অংশ হলো বাক্যের বিধেয়। উপরের বাক্যে 'সজল ও লতা' উদ্দেশ্য এবং 'বই পড়ে' বিধেয়।

গঠনগত দিক দিয়ে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: সরল, জটিল ও যৌগিক।

(১) সরল বাক্য: একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকলে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন- জেসমিন সবার জন্য চা বানিয়েছে। 

(২) জটিল বাক্য: একটি মূল বাক্যের অধীনে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য বা বাক্যাংশ থাকলে জটিল বাক্য তৈরি হয়। যেমন- যদি তোমার কিছু বলার থাকে, তবে এখনই বলে ফেলো।

(৩) যৌগিক বাক্য: এক বা একাধিক বাক্য বা বাক্যাংশ যোজকের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করে। যেমন- রহমত রাতে রুটি খায় আর রহিমা খায় ভাত।

বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়া থাকা-না থাকা বিবেচনায় বাক্যকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়: সক্রিয় বাক্য ও অক্রিয় বাক্য।

(১) সক্রিয় বাক্য: যেসব বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়া থাকে, সেগুলোকে সক্রিয় বাক্য বলে। যেমন- আমার মা চাকরি করেন।

(২) অক্রিয় বাক্য: যেসব বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়া থাকে না, সেগুলোকে অক্রিয় বাক্য বলে। যেমন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তবে অতীত ও ভবিষ্যৎ কালের প্রয়োগে এগুলো সক্রিয় বাক্য হয়ে যায়। যেমন- 'তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন' বা 'তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন'।

 

বক্তব্যের লক্ষ্য অনুযায়ী বাক্যকে বিবৃতিবাচক, নেতিবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক ও আবেগবাচক প্রভৃতি ভাগে ভাগ করা যায়:

(১) বিবৃতিবাচক বাক্য: সাধারণভাবে কোনো বিবরণ প্রকাশ পায় যেসব বাক্যে, সেগুলোকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। বিবৃতিবাচক বাক্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। যেমন- 

আমরা রোজ বেড়াতে যেতাম।

তারা তোমাদের ভোলেনি।

(২) প্রশ্নবাচক বাক্য: বক্তা কারও কাছ থেকে কিছু জানার জন্য যে ধরনের বাক্য বলে, সেগুলো প্রশ্নবাচক বাক্য। যেমন- 

তোমার নাম কী? 

সুন্দরবনকে কোন ধরনের বনাঞ্চল বলা হয়?

(৩) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: আদেশ, নিষেধ, অনুরোধ, প্রার্থনা ইত্যাদি বোঝাতে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য হয়। যেমন-

আমাকে একটি কলম দাও। 

তার মঙ্গল হোক।

(8) আবেগবাচক বাক্য: কোনো কিছু দেখে বা শুনে অবাক হয়ে যে ধরনের বাক্য তৈরি হয়, তাকে আবেগবাচক বাক্য বলে। যেমন- 

দারুণ! আমরা জিতে গিয়েছি। 

অত উঁচু পাহাড়ে উঠে আমি তো ভয়েই মরি।

Content added By
Promotion