Cu(NH3)42+ যটিল আয়নের আকৃতি কোন ধরণের?

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

জারণ বিজারণ (Oxidation-Reduction)

প্রশ্নঃ জারণ ও বিজারণের ইলেকট্রনীয় মতবাদ উদাহরণসহ আলোচনা কর। 

উত্তরঃ আধুনিককালে ইলেকট্রন বর্জন ও গ্রহণের ভিত্তিতে জারণ বিজারণ বিক্রিয়ার ব্যাখ্যাকে জারণ বিজারণের মতবাদ বলে।

জারণঃ ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোন পরমাণু বা মূলক বা আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন দান করে সেই বিক্রিয়াকে জারণ বলে। কিন্তু যে রাসায়নিক সত্ত্বা e− দান করে তাকে বিজারক পদার্থ বলে।

বিজারণঃ ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোন পরমাণু বা মূলক বা আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেই বিক্রিয়াকে বিজারণ বলে। কিন্তু যে রাসায়নিক সত্ত্বা e− গ্রহণ করে তাকে জারক পদার্থ বলে।

উদাহরণঃ  সোডিয়াম ও ক্লোরিন এর পারস্পারিক বিক্রিয়ায় NaCl উৎপন্ন হয়।
2Na+Cl2​⟶2NaCl

এই বিক্রিয়াটি জারণ বিজারণের ইলেকট্রনীয় মতবাদের আলোকে নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলঃ 

ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে, এই বিক্রিয়ায় প্রত্যেক সোডিয়াম (Na) পরমাণু এর সর্ববহিঃস্থ স্তর হতে একটি ইলেকট্রন দান করে নিজে জারিত হয়ে সোডিয়াম আয়নে (Na+) পরিণত হয়। অপরদিকে প্রত্যেক ক্লোরিন পরমাণু সোডিয়াম প্রদত্ত একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিজে বিজারিত হয়ে ক্লোরাইড আয়নে (Cl−) পরিণত হয়। অতঃপর ভিন্নধর্মী উভয় আয়ন যুক্ত হয়ে NaCl গঠন করে।
জারণঃ 2Na (বিজারক) ⟶2Na++2e− 

বিজারণঃ Cl2​ (জারক) +2e−⟶2Cl− 

(+) করে, 2Na+Cl2​⟶2Na+Cl−বা 2NaCl  

কাজেই দেখা যায় যে, কোন পদার্থ জারিত হওয়ার সময় ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং বিজারিত হওয়ার সময় ইলেকট্রন গ্রহণ করে। জারণ বিক্রিয়ায় বিজারক যতটি ইলেকট্রন দান করে বিজারণ বিক্রিয়ায় জারক ততটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে। অর্থাৎ জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন আদান প্রদান ঘটে। ইহা ইলেকট্রনীয় মতবাদের মূল কথা।

প্রশ্নঃ ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে ব্যাখ্যা কর যে, জারণ ও বিজারণ যুগপৎ সংঘটিত হয়। 

উত্তরঃ  জারণ ও বিজারণ প্রক্রিয়া দুইটি পরস্পরের বিপরীত ও সম্পূরক। যখন কোন জারণ ক্রিয়া ঘটে তখন তার অনুবর্তী বিজারণ এবং যখন কোনো বিজারণ ক্রিয়া ঘটে তখন তার অনুবর্তী ক্রিয়াও অবশ্যই ঘটে।

ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে জারণ হচ্ছে ইলেকট্রন দান প্রক্রিয়া এবং বিজারণ হচ্ছে ইলেকট্রন গ্রহণ প্রক্রিয়া। নিম্নের উদাহরণের সাহায্যে ইলেকট্রনীয় মতবাদের ভিত্তিতে জারণ বিজারণ যুগপৎ সংঘটিত হয়। উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ করা হল– 

সোডিয়াম (Na) ও ক্লোরিন (Cl2​) পারস্পারিক বিক্রিয়ায় সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) উৎপন্ন করে।
বিক্রিয়াঃ 2Na(বিজারক) ⟶2Na++2e− 

               Cl2​  (জারক) +2e−⟶2Cl− 

(+) করে, 2Na+Cl2​⟶2Na+Cl− বা 2NaCl  

এ বিক্রিয়ায় ক্লোরিন সোডিয়ামকে জারিত করে NaCl এ পরিণত করে। বিক্রিয়াকালে প্রত্যেক Na পরমাণু একটি করে ইলেকট্রন দান করে। কাজেই এটি একটি জারণ প্রক্রিয়া। আবার প্রত্যেক ক্লোরিন পরমাণু একটি একটি করে ইলেকট্রন গ্রহণ করে। সুতরাং ক্লোরিন জারক পদার্থ। বিজারণের সংজ্ঞা মতে, বিজারণ প্রক্রিয়া হচ্ছে ইলেকট্রন গ্রহণ প্রক্রিয়া। যেহেতু বিক্রিয়াকালে ক্লোরিন ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেহেতু জারক পদার্থ জারণকালে নিজে বিজারিত হয়ে যায়।

আবার, সোডিয়াম ক্লোরিনকে বিজারিত করে NaCl এ পরিণত করে। এটি একটি বিজারণ বিক্রিয়া। কারণ, বিক্রিয়াকালে ক্লোরিন পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে। Na বিজারক পদার্থ কারণ ইহা ইলেকট্রন দান করে, জারণের সজ্ঞা মতে, জারণ প্রক্রিয়া হচ্ছে ইলেকট্রন দান প্রক্রিয়া। যেহেতু সোডিয়াম ইলেকট্রন দান করে সেহেতু বিজারক পদার্থ বিজারণকালে নিজে জারিত হয়ে যায়। সুতরাং দেখা যায় যে, জারক পদার্থ জারণকালে নিজে বিজারিত হয়ে যায় এবং বিজারক পদার্থ বিজারণকালে নিজে জারিত হয়ে যায়। অর্থাৎ জারণ  ছাড়া বিজারণ এবং বিজারণ ছাড়া শুধুমাত্র জারণ সংঘটিত হয় না, সুতরাং জারণ ও বিজারণ যুগপৎ সংঘটিত হয়।

প্রশ্নঃ  জারণ সংখ্যা বলতে কী বুঝ? জারণ সংখ্যা কিরূপে নির্ণয় করা হয়। 

উত্তরঃ কোন যৌগে একটি পরমাণু যে অবস্থায় আছে, মৌলের মুক্ত অবস্থা হতে সে অবস্থায় আসতে পরমাণুটিকে যতসংখ্যক ইলেকট্রক বর্জন বা গ্রহণ বা শেয়ার করতে হয়, সেই সংখ্যাকে ঐ যৌগে ঐ পরমাণুর জারণ সংখ্যা বলে। কোন যৌগে কোনো মৌলের উপরিস্থিত চার্জ সংখ্যাকে ঐ যৌগে মৌলটির জারণ সংখ্যা বলে।

ইলেকট্রন দান করলে জারণ সংখ্যা ধনাত্মক এবং ইলেকট্রন গ্রহণ করলে জারণ সংখ্যা ঋণাত্মক হয়। প্রকৃতপক্ষে কোন যৌগে কোন মৌল কতসংখ্যক কিরূপ তড়িৎ আধানযুক্ত, জারণ সংখ্যা তাই নির্দেশ করে। 

উদাহরণঃ আয়নিক যৌগে NaCl গঠনকালে Na পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন অপসারিত হয়েছে। সুতরাং এই যৌগে Na এর জারণ সংখ্যা +1 । অপরদিকে Cl পরমাণু একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করেছে। অপসারণের বিপরীত প্রক্রিয়া ঘটেছে বলেই এই যৌগে Cl এর জারণ সংখ্যা -1 । অবশ্য সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের সময়, শেয়ারকৃত ইলেকট্রনের প্রতি যে মৌলের আসক্তি বেশি তার জারণমান “-” চিহ্ন এবং যে মৌলের আসক্তি কম তার জারণ মান “+” চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন – HCl এ H এর জারণ মান +1 এবং Cl এর জারণ সংখ্যা -1 

জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের নিয়মঃ 

১। চার্জ নিরপেক্ষ যৌগে উহার মৌলসমূহের জারণ সংখ্যার বীজগণিতীয় যোগফল শূণ্য হবে। আয়নের বেলায় এই যোগফল আয়নের চার্জের সমান হয়। 

২। অক্সিজেনের জারণ সংখ্যা পার অক্সাইড -1, সুপারঅক্সাইড (KO2​) – ½ ধরা হয়, অক্সাইডে -2 ধরা হয়। 

৩। স্বাভাবিক মুক্ত অবস্থায় সব মৌলের জারণ সংখ্যা শূণ্য।

৪। আন্তঃ হ্যালোজেন যৌগসমূহে অধিকতর তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলের জারণ সংখ্যা -1 . 

৫। ক্ষারীয় ধাতুসমূহের জারণ সংখ্যা +1 এবং মৃৎক্ষার ধাতুসমূহের জারণ সংখ্যা +2. 

প্রশ্নঃ  জারণ সংখ্যা ও যোজনীর মধ্যে পার্থক্য লেখ।

উত্তরঃ  জারণ সংখ্যা ও যোজনীর মধ্যে পার্থক্য নিম্নে দেওয়া হলঃ

জারণ সংখ্যা ও যোজনীর মধ্যে পার্থক্য

কতিপয় জারক ও বিজারক পদার্থের উদাহরণ 

জারক পদার্থ : (ইলেকট্রন গ্রহণকারী)
1. Fe3++e−→Fe2+

(FeCl3​)

2. Sn4++2e−→Sn2+⟶+2e−​Sn

3.O22−​+2e−→2O2−

  (পারঅক্সাইড আয়ন) (H2​O2​)

 

 

 

4. Mn+7O4−8​+5e−+8H+→Mn2++4H2​O

(KMnO4​)

5. Cr2+12​O7−2​+6e−+14H+→2Cr3++7H2​O

(K2​Cr2​O7​)

6. I2​+2e−→2I−

7. Cu2++e−→Cu+

   (CuSO4​) 

তবে MnO4​ক্ষারীয় মাধ্যমে MnO4​  এবং নিরপেক্ষ মাধ্যমে MnO2​এ পরিবর্তন হয় এবং Mn এর জারণসংখ্যা যথাক্রমে +6 এবং +4 হয়।

কতিপয় বিজারক পদার্থের উদাহরণ এবং বিক্রিয়ার প্রকৃতি :

বিজারক পদার্থ (ইলেকট্রন দানকারী)

1. Fe2++→Fe3++e−(FeSO4​,FeCl2​) 

2.Sn2+→Sn4++2e−(SnCl2​)

3. 2I−→I2​+2e−(KI)

4. C+6​2​O+6​3​2−(অক্সালেট আয়ন)→2C+4​O+4​2​+2e− (H2​C2​O4​,Na2​C2​O4​)

5. 2S+4​2​O+6​3​2−(থায়োসালফেট আয়ন) →S+10​4​O−12​6​2−+2e−(Na2​S2​O3​)

                                                             (টেট্রাথায়োনেট আয়ন)

6. S2−→S+2e−(H2​ S) 

7. O2​2−​→O2​+2e−

H2​ S2​O8​ অণুতে (পারসালফিউরিক এসিড) S এর জারণ সংখ্যা কত? 

+1×2+x×2+(−1)×2+6×(−2)=0

বা, 2x – 12 = 0

∴x = + 6 

জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের কয়েকটি ব্যতিক্রম :

১. CrO5​ অণুতে 𝐂𝐫 এর জারণ সংখ্যা : প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী CrO5​ (পারক্রোমিক অক্সাইড) অণুতে Cr এর জারণ সংখ্যা +10 [CrxO−2​5​,x−10=0⇒x=+10] হওয়া উচিত। কিন্তু Cr এর 3d অরবিটালে 5টি এবং 4s অরবিটালে 1টি ইলেকট্রন থাকে। সুতরাং Cr এর জারণ সংখ্যা কখনোই +6 এর বেশি হওয়া সম্ভব নয়।

CrO5​এর গঠনাকৃতি থেকে দেখানো যায় Cr এর জারণ সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে +6। ধরা যাক, CrO5​ অণুতে Cr এর জারণ সংখ্যা = x।

∴x +1(−2) + 4(−1) = 0   (O এর জন্য) (O−O বন্ধনে আবদ্ধ O পরমাণুগুলির জন্য)

∴x = +6. সুতরাং CrO5​অণুতে Cr এর জারণ সংখ্যা = +6. 

২. H2​SO5​অণুতে S এর জারণ সংখ্যা : প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী, H2​SO5​(পারঅক্সোসালফিউরিক এসিড) অণুতে S এর জারণ সংখ্যা +8 [H2​ SO5​,x+2−10=0⇒x=+8] হওয়া উচিত। কিন্তু S এর সর্ববহিস্থ কক্ষে 6টি ইলেকট্রন থাকে। সুতরাং S এর জারণ সংখ্যা কখনোই +6 এর বেশি হওয়া সম্ভব নয়। H2​SO5​এর গঠনাকৃতি থেকে বোঝা যায় S এর জারণ সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে +6। ধরা যাক, H2S2O5অণুতে S এর জারণ সংখ্যা = 𝑥।
2(+1)                                                        +x                                 +2(−1)        +3(−2)=0

(H পরমাণুগুলির জন্য)      (O – O) বন্ধনে আবদ্ধ O- পরমাণুগুলির জন্য)                  (অপর O- পরমাণুগুলির জন্য)

∴x=+6 

সুতরাং,  H2​SO5​ অণুতে S এর জারণ সংখ্যা +6।

3. Na2​ S4​O6​ অণুতে S এর জারণ সংখ্যা : প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী, Na2​ S4​O6​ অণুতে S এর জারণ সংখ্যার গড়মান +2.5 [Na+12​ S+x4​O−2​6​,2(+l)+4x+6(−2)=0⇒x=+2.5] হওয়া উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে দুটি S পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ, তাদের জারণ সংখ্যা শূন্য হয়। বাকি দুটি S পরমাণুর ক্ষেত্রে জারণ সংখ্যা x হলে, 

x×2+2×0             + 6(−2)                       + 2(+1) = ০             

(S এর জন্য)      (S-S  এর জন্য)            (O এর জন্য Na এর জন্য)

বা, 2𝑥−12+2=0, 𝑥=+5

সুতরাং, Na2​ S4​O6​অণুতে যে দুটি S পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ তাদের জারণ সংখ্যা শূন্য এবং বাকি দুটি S পরমাণুর প্রতিটির জারণ সংখ্যা +5. 

4. Fe3​O4​  অণুতে 𝐅𝐞 এর জারণ সংখ্যা : প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী Fe3​O4​তে Fe এর জারণ সংখ্যা +8/3[3𝑥+4(−2)=0 বা 𝑥=8/3] হওয়া উচিত। এই মান Fe3​O4​ তে Fe এর জারণ সংখ্যা গড় মান প্রকাশ করে। প্রকৃতপক্ষে Fe3​O4​ হল FeO ও Fe3​O4​ এর মিশ্রণ যার সংযুক্তি হল FeO. Fe3​O4​। FeO তে Fe এর জারণ সংখ্যা হল +2 এবং Fe3​O4​ তে Fe এর জারণ সংখ্যা হল +3।

প্রশ্ন : জারণ অর্ধ বিক্রিয়া এবং বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়ার সংজ্ঞা দাও।

জারণ অর্ধ বিক্রিয়া : কোন জারণ বিজারণ বিক্রিয়ার যে অর্ধাংশে জারণ ঘটে তাকে জারণ অর্ধ বিক্রিয়া বলে। এক্ষেত্রে বিজারক পদার্থ ইলেকট্রন দান করে জারিত হয়।

বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়া : কোন জারণ বিজারণ বিক্রিয়ার যে অর্ধাংশে বিজারণ ঘটে তাকে বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়া বলে। এক্ষেত্রে জারক পদার্থ ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয়।

উদারহণ :  সোডিয়াম পরমাণু ও ক্লোরিন পরমাণু বিক্রিয়া কালে সোডিয়াম পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ করে সোডিয়াম আয়নে জারিত হয়, এটি জারণ অর্ধ বিক্রিয়া। ক্লোরিন পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ক্লোরাইড আয়নে বিজারিত হয়, এটি বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়া।

Na→Na++e− [জারণ অর্ধ-বিক্রিয়া]

Cl+e→Cl− [বিজারণ অর্ধ-বিক্রিয়া]

যোগ করে, Na+Cl→Na+Cl− [জারণ বিজারণ বিক্রিয়া]

প্রশ্ন: কপার সালফেট এবং পটাশিয়াম আয়োডাইডের বিক্রিয়াটি অর্ধবিক্রিয়ার সাহায্যে দেখাও।

উত্তর: কপার সালফেট (CuSO4​) এবং পটাশিয়াম আয়োডাইডের (KI) এর বিক্রিয়ায় CuSO4​(Cu2+)একটি জারক এবংKI(I−)একটি বিজারক পদার্থ। আধুনিক রীতি মতে, যে সকল মূলক বা আয়নের জারণ সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না তাদেরকে দর্শক আয়ন বলে এবং এদেরকে আয়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণে দেখানো হয় না। এক্ষেত্রে Cu2+ এবং I− বিক্রিয়ার অংশগ্রহণ করে।

এক্ষেত্রে ঘটমান অর্ধবিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপ:

জারণ অর্ধবিক্রিয়া : 2I−(aq)→I2​+2e−………(i)

বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া: 2Cu2+(aq)+2e−→Cu22+​(aq) বা 2Cu1+(aq)………(ii)

(i) নং ও (ii) নং যোগ করে পাই, 

2Cu2+(aq)+2I−(aq)→I2​+Cu22+​(aq) বা 2Cu1+(aq)

প্রয়োজনীয় আয়ন সরবরাহ করলে বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ হবে-

2CuSO4​(aq)+4KI(aq)→I2​+Cu2​I2​ বা 2CuI(aq)+2 K2​SO4(aq) (aq) 

ইহাই প্রদত্ত বিক্রিয়ার প্রকৃত জারণ-বিজারণ অর্ধবিক্রিয়ার সমীকরণ।

প্রশ্ন: অম্লীয় মাধ্যমে K2​Cr2​O7​এর পটাশিয়াম আয়োডাইডের বিক্রিয়া জারণ বিজারণের সাহায্যে সমতাসহ লিখ।

উত্তর: অম্লীয় মাধ্যমে পটাশিয়াম ডাইক্রোমেট (K2​Cr2​O7​) এবং পটাশিয়াম আয়োডাইডের (KI) বিক্রিয়ায় K2​Cr2​O7​(Cr2​O72−​) একটি জারক এবং KI(I−) একটি বিজারক পদার্থ। আধুনিক রীতি মতে, যেসব মূলক বা আয়ন এর জারণ সংখ্যার কোন পরিবর্তন ঘটে না তাদেরকে আয়নিক বিক্রিয়া সমীকরণে দেখানো হয় না। এক্ষেত্রে Cr2​O72−​এবং I–বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এখানে K+ আয়ন এবং SO4​2− দর্শক আয়ন।

এক্ষেত্রে সংঘটিত অর্ধবিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপ:

জারণ অর্ধবিক্রিয়া : 2I−(aq)→I2​+2e−……… (i)

বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া : Cr2​O72−​(aq)+6e−+14H+→2Cr3+(aq)+7H2​O……… (ii) 

(ii) নং এ প্রদত্ত H+ এসিড হতে আসে, যা Cr2​O7​2− এর অক্সিজেনকে পানিতে পরিণত করে। এখন ইলেকট্রনের সমতা বিধানের জন্য (i) নং কে 3 দ্বারা গুণ করে অতঃপর (ii) নং এর সাথে যোগ করে পাই-

Cr2​O7​2−(aq)+6I−(aq)+14H+(aq)→2Cr3+(aq)+3I2​+7H2​O

বিক্রিয়াটি যদি H2​SO4​ এর উপস্থিতিতে ঘটে তবে প্রয়োজনীয় আয়ন সরবরাহ করলে বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ হবে-

K2​Cr2​O7​+6KI+7H2​SO4​→4 K2​SO4​+Cr2​(SO4​)3​+3I2​+7H2​O

যদি HCl হয় তবে বিক্রিয়াটি হবে-

K2​Cr2​O7​+6KI+14HCl→8KCl+2CrCl3​+3I2​+7H2​O

প্রশ্ন: অম্লীয় পটাশিয়াম ডাইক্রোমেটের সাথে ফেরাস লবণের জারণ বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়ার সাহায্যে দেখাও।

উত্তর: অম্লীয় পটাশিয়াম ডাইক্রোমেটের (K2​Cr2​O7​) সাথে ফেরাস লবণ যেমন- ফেরাস সালফেটের (FeSO4) বিক্রিয়ায় K2​Cr2​O7​(Cr2​O72−​) জারক পদার্থ এবং FeSO4​(Fe2) একটি বিজারক পদার্থ। আধুনিক নিয়ম মতে, যে সকল মূলক বা আয়নের সংখ্যার কোন পরিবর্তন ঘটে না তাদেরকে আয়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণে দেখানো হয় না। এক্ষেত্রে Cr2​O7​2− এবং Fe2+ বিক্রিয়া করে । এখানে K+ আয়ন এবং SO42−​দর্শক আয়ন।

এক্ষেত্রে ঘটমান অর্ধবিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপ:

জারণ অর্ধবিক্রিয়া : Fe2+(aq)→Fe3+(aq)+e−……… (i)

বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া : Cr2​O7​2−(aq)+6e−+14H+→2Cr3+(aq)+7H2​O………(ii)

(ii) নং এ প্রদত্ত H+এসিড হতে আসে, যা Cr2​O72−​এর অক্সিজেনকে পানিতে পরিণত করে। এখন ইলেকট্রনের সমতা বিধানের জন্য। (i) নং কে 6 দ্বারা গুণ করে অতঃপর (ii) নং এর সাথে যোগ করে পাই-

6Fe2+(aq)+Cr2​O72​−(aq)+14H+(aq)→6Fe3+(aq)+2Cr3+(aq)+7H2​O

বিক্রিয়াটি যদি H2​SO4​ এর উপস্থিতিতে ঘটে তবে প্রয়োজনীয় আয়ন সরবরাহ করলে বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ হবে-

6FeSO4​+K2​Cr2​O7​+7H2​SO4​→3Fe2​(SO4)3​+Cr2​(SO4​)3​+7H2​O+K2​SO4​

প্রশ্ন: নিম্নলিখিত সমীকরণগুলোকে জারণ-বিজারণ বা রিডক্স সমীকরণে পৃথক করে লিখ।

(ক) 6Fe2++Cr2​O72−​+14H+→6Fe3++2Cr3++7H2​O

উত্তর: প্রদত্ত বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ-

6Fe2++Cr2​O72−​14H+→6Fe3++2Cr3++7H2​O

এই বিক্রিয়ায় এসিডের (H+) উপস্থিতিতে ডাইক্রোমেট আয়ন (Cr2​O7​2−) জারক হিসেবে কাজ করে। কারণ এখানে Cr এর জারণ সংখ্যা হ্রাস পায়। আবার Fe2+বিজারক হিসাবে কাজ করে। কারণ Fe2+ এর জারণ সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

এক্ষেত্রে ঘটমান অর্ধবিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপ:
জারণ অর্ধবিক্রিয়া:  Fe2+(aq)→Fe3+(aq)+e−………… (i)

বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া: 6Fe2+(aq)+6e−+14H+→2Cr3++7H2​O………..(ii)

ইলেকট্রনের সমতার জন্য (i) নং কে 6 দ্বারা গুণ করে অতঃপর প্রাপ্ত সমীকরণকে (ii) নং সাথে যোগ করে পাই

6Fe2++Cr2​O72−​+14H+→6Fe3++2Cr3++7H2​O

(খ) 2Cu2++4I−→Cu2​l2​
উত্তর: এক্ষেত্রে প্রদত্ত বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ-
2Cu2++4I−→Cu2​l2​
কপারের জারণ সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এ ক্ষেত্রে Cu আয়ন একটি জারক পদার্থ এবং I− আয়ন এর জারণ সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি বিজারক হিসেবে কাজ করে।
এক্ষেত্রে ঘটমান অর্ধবিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপঃ

জারণ অর্ধবিক্রিয়াঃ 4I−→I2​+2I−+2e−………………(i)

বিজারণ অর্ধর্বিক্রিয়াঃ 2Cu2++2e−→Cu2​2+⋯⋯⋯⋯(ii)

 ইলেকট্রনের সমতা বিধানের জন্য (i)+ (ii)→2Cu2++4I−→I2​+Cu2​2++2I−
বা, 2Cu2++4I−→Cu2​l2​+I2​

(গ) 2 S2​O3​2−(aq)+I2​(aq)→S4​O6​2−(aq)+2I−(aq)

উত্তর: এক্ষেত্রে প্রদত্ত বিক্রিয়াটি নিম্নরূপঃ

2 S2​O3​2−(aq)+I2​(aq)→S4​O6​2−(aq)+2I−(aq)

S এর জারণ সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এক্ষেত্রে একটি বিজারক পদার্থ এবং আয়োডিনের জারণ সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় একটি জারক পদার্থ হিসেবে এ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

এক্ষেত্রে ঘটমান অর্ধমান বিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপ :

জারণ অর্ধবিক্রিয়াঃ 2 S2​O3​2−(aq)→S4​O6​2−(aq)+2e−(aq)……(i)

বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া : I2​(aq)+2e−→2I−………(ii)
 (i)+ (ii)→ 2 S2​O3​2−(aq)+I2​(aq)→S4​O6​2−(aq)+2I−(aq)

(ঘ) KMnO4​+H2​SO4​+FeSO4​→Fe2​(SO4​)3​+K2​SO4​+MnSO4​+H2​O

উত্তরঃ প্রদত্ত বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ-

KMnO4​+H2​SO4​+FeSO4​→Fe2​(SO4​)3​+K2​SO4​+MnSO4​+H2​O

আয়রনের (Fe) জারণ সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়FeSO4​  একটি বিজারক পদার্থ। পক্ষান্তরে KMnO4​(MnO4​−) এ Mn এর জারণ সংখ্যা হাস পাওয়ায় +7 হতে +2 হওয়ায় ) KMnO4​বা MnO4​− একটি জারক পদার্থ। আধুনিক নিয়ম মতে, যে সব আয়ন বা মূলকের জারণ সংখ্যা মানের কোন পরিবর্তন ঘটে না তাদেরকে আয়নিক সমীকরণে দেখানো হয় না। এক্ষেত্রে Fe2+  এবং MnO4​−এর মধ্যে বিক্রিয়া ঘটে।
এক্ষেত্রে ঘটমান অর্ধবিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপঃ

জারণ অর্ধবিক্রিয়া : Fe2+(aq)→Fe3+(aq)+e−………… (i)

বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া : MnO4−​(aq) +5e−+8H+→Mn2+(aq)+4H2​O(l)………… (ii)

(ii) নং সমীকরণে প্রদত্ত আয়ন এসিড হতে আসে এবং এর অক্সিজেনকে পানিতে পরিণত করে। এখন ইলেকট্রনের সমতা বিধানের জন্য (i) নং কে 5 দ্বারা গুণ করে অতঃপর প্রাপ্ত সমীকরণকে (ii) নং এর সাথে যোগ করে পাই-

5Fe2++MnO4​−+8H+→5Fe3++Mn2++4H2​O 

H2​SO4​এসিডের উপস্থিতিতে বিক্রিয়াটি নিম্নরূপে পুর্ণ-সমতাকরণের মাধ্যমে নিম্নে দেওয়া হল-

10FeSO4​+2KMnO4​+8H2​SO4​→5Fe2​(SO4​)3​+2MnSO4​+K2​SO4​+8H2​O

(ঙ) 5C2​O4​2−+2MnO4​−+16H+→2Mn2++8H2​O+10CO2​

উত্তর : প্রদত্ত বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ-

5C2​O4​2−+2MnO4​−+16H+→2Mn2++8H2​O+10CO2​
এই বিক্রিয়ায় (H+) এসিডের উপস্থিতিতে পারম্যাঙ্গানেট আয়ন (MnO4​−) জারক হিসেবে কাজ করে। কারণ এখানে Mn এর জারণের সংখ্যা হ্রাস পায়। আবার অক্সালেট আয়ন (C2​O4​2−) এর C এর জারণ সংখ্যা +3 হতে +4 এ বৃদ্ধি পাওয়ায় আয়নটি বিজারক হিসেবে কাজ করে।

এক্ষেত্রে ঘটমান অর্ধবিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপ:

জারণ অর্ধবিক্রিয়া: C2​O4​2−→2CO2​+2e−…………… (i)

বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া: MnO4−​+5e−+8H+→Mn2++4H2​O………(ii)

ইলেকট্রনের সমতা বিধানের জন্য {(i)×5}+{(ii)×2}

5C2​O4​2−+2MnO4​−+16H+→2Mn2++8H2​O+10CO2​

প্রশ্ন: অম্লীয় পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণের সাথে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের বিক্রিয়া সমতাসহ লিখ।

উত্তর: অম্লীয় পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4​) দ্রবণের সাথে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (H2​O2​) এর বিক্রিয়ায় KMnO4​(MnO4​−)একটি জারক এবং H2​O2​(O2​−)একটি বিজারক পদার্থ । আধুনিক নিয়ম মতে, যে সব মূলক বা আয়নের জারণ সংখ্যা কোন পরিবর্তন হয় না তাদেরকে আয়নিক সমীকরণে দেখানো হয় না .

এক্ষেত্রে ঘটমান অর্ধবিক্রিয়াগুলো নিম্নরূপ :

জারণ অর্ধবিক্রিয়া : O2​2−→O2​+2e−…………. (i)

বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া : MnO4​−+5e−+8H+→Mn2++4H2​O ………… (ii)

ইলেকট্রনের সমতা বিধানের জন্য– {ix5}+{(ii)x2}

5O2​2−+2MnO4−​+16H+→5O2​+Mn2++4H2​O 

H2​SO4​ এসিডের উপস্থিতিতে ঘটলে এবং প্রয়োজনীয় আয়ন সরবরাহের পর বিক্রিয়া নিম্নরূপে লেখা হয়–

5H2​O2​+2KMnO4​+3H2​SO4​→5O2​+2KMnO4​+K2​SO4​+8H2​O 

প্রশ্ন: MnO4​+Br−+H+→MnO2​+BrO3​+H2​O

জারণ অর্ধ বিক্রিয়া : Br−+3H2​O→BrO3​+6H++6e−………(i)

বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়া : MnO4​+4H++3e−→MnO2​+2H2​O………(ii)

(i)+(ii)x2→ 

Br−+2MnO4−​+H2​O→BrO3−​+2MnO2​+2H+ 

প্রশ্ন: KBrO+53​+KBr−1+HCl→Br02​+KCl+H2​O

বা, BrO3−​+Br−+H+→Br2​+H2​O

জারণ অর্ধ বিক্রিয়া : 2Br−→Br2​+2e−………(i)

বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়া : 2BrO3−​+12H++10e−→Br2​+6H2​O……(ii)

(i)×5+(ii)→

2BrO3​−+12H++10Br−→6Br2​+6H2​O 

বা, BrO3​−+6H++5Br−→3Br2​+3H2​O

প্রশ্ন: K2​Cr+122​O7​+H2​SO4​+NaCI−1→Cr+62​(SO4​)3​+Cl2​0​+Na2​SO4​+H2​O

জারণ অর্ধ বিক্রিয়া : 2Cl−→Cl2​+2e−………(i)

বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়া : Cr2​O7​2−+6e−+14H+→2Cr3++7H2​O……… (ii)

(i)×3+(ii)→ 

6Cl−+Cr2​O7​2−+14H+→2Cr3++3Cl2​+7H2​O 

দর্শক আয়ন যোগ করে পাই,
6NaCl+K2​Cr2​O7​+7H2​SO4​→Cr2​(SO4​)3​+3Cl2​+7H2​O+3Na2​SO4​+K2​SO4​
 

Promotion