অনলাইন ব্যাংকিং
বর্তমানে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড একমূহূর্তের জন্য পরিচালনার কথা ভাবা যায় অসম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রকাশ আমাদের ব্যাংকিং খাত। এখানে যাবতীয় লেনদেন হিসাব-নিকাশ, অর্থ স্থানান্তরসহ সব কাজই এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই সম্পন্ন হচ্ছে। মাত্র কিছু সময়ের জন্য যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ত্রুটি-বিচ্যুতির কারনে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটে তাহলে একটি ব্যাংকের চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের যে ক্ষতি হয় সেটা কোনো না কোনোভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু একটি ব্যাংকের অনলাইন ভিত্তিক কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে সেই ব্যাংকের পক্ষে একদিনও টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই আজ ব্যাংকিং খাতে তথ্য প্রযুক্তির অবদান সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য ও প্রযুক্তির (আইসিটি) কারনে দেশে প্রথাগত ব্যাংকিং মাধ্যমের লেনদেনকে ছাড়িয়ে গেছে অনলাইন ভিত্তিক লেনদেন।
এর ব্যাংক খাতের সামগ্রিক ও উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, অন্যদিকে এই খাতের মুনাফা বৃদ্ধিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নির্ভুল লেনদেনের মাধ্যমে গ্রাহকের সন্তুষ্টি বাড়াতেও আইসিটির ব্যবহার
অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথাগত ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে এখন বছরে গড়ে ১৭০ কোটি বার লেনদেন হচ্ছে। আর আইসিটির কারনে অনলাইনে ২০০ কোটি বারের বেশি লেনদেন হচ্ছে। আর আইসিটির কারণে অনলাইনে একজন কর্মী এখন বছরে গড়ে ১০ হাজার লেনদেন সম্পন্ন করছেন। ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত ব্যাংকের একজন কর্মীর গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজারের কম। অর্থাৎ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকে ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আবার আইসিটিতে বিনিয়োগ ব্যাংক খাতের জন্য অবশ্যই লাভজনক। ব্যাংকের আইসিটি খাতে এক টাকা খরচ করলে তা কতোটা মুনাফা নিয়ে আসে তা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিটিতে এক টাকা বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের জন্য তা ১৩৬ টাকা সমান উৎপাদনশীলতা তৈরি করে। এর বিপরীতে প্রযুক্তি বহির্ভূত খাতে এক টাকা খরচ করলে সেটি ৫৮ টাকার সমপরিমাণ উৎপাদনশীলতা নিয়ে আসে। একইভাবে আইসিটি বিষয়ে জ্ঞান আছে, এমন একজন কর্মীর পেছনে এক টাক কচ করা হলে ব্যাংকের তায় বাড়ে ২৫ টাকার সমান। মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বীরে ধীরে আইসিটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। সে সময় লাংকের একজন কর্মী গড়ে ৪১ কোটি টাকা লেনদেন করতেন। সেই ২০১৫ সালে বেড়ে ১৬০ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ লেনদেন সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে একজন কর্মীর আর্থিক লেনদেনের দক্ষতার এ সময়ে প্রায় চারগুণ বেশি বেড়েছে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকের মুনাফাও বেড়ে গেছে একথা আজ অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং, ই-ক্যাশ, রেডি ক্যাশ মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, এটিএম বুথ, অনলাইন ব্যাংকিং ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টধারীরা অতি সহে ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন। এম আই সি আর ও সি আর চেকের আবির্ভাবে চেক জালিয়াতি বন্ধ হয়েছে। বিদ্যুৎ গ্যাস, পাখি বিল সহ অনলাইন মার্কেটিং এর সুবিধা ব্যাংক তথ্য প্রযুক্তির আশীর্বাদ হিসাবধারীদের দিতে পারছে। ফলে দেশের ব্যাতি খাতে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার দিন
দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল ত্রুটি অনিয়ম ও সম্ভাৰা সকল ঝুঁকি এড়িয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যথার্থ প্রয়োগ ঘটিয়ে আরে এগিয়ে যাবে, এই হোক আমাদের সবার একান্ত প্রত্যাশা।
ঋণ খেলাপির সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ সমূহ গ্রহণ করা যেতে পারেঃ