রচনা লিখুন: করোনাকলীন সময়ে টেলিমেডিসিনের ভূমিকা ও প্রতিবন্ধকতা
করোনাকলীন সময়ে টেলিমেডিসিনের ভূমিকা ও প্রতিবন্ধকতা
টেলিমেডিসিন হল এমন একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা যেখানে রোগীকে সশরীরে চিকিৎসকের কাজে উপস্থিত হওয়ার "বিপরীত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেমনঃ মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ক্যানেরা ইত্যাদি ব্যবহার করে দূর থেকে তার অনুসের ধরন অনুধাবন করে চিকিৎসা দেয়ার পদ্ধতি। অপেক্ষাকৃত কম জটিল রোগে, চিকিৎসা পরবর্তী ফলোআপে, ওষুদের ভোজ সমন্বয় সাধনসহ বেশ কিছু ব্যাপারে এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর এবং সাশ্রয়ীও বটে। টেলিমেডিসিন মূলধারার চিকিৎসা পদ্ধতি বিকল্প নয় বরং তার পরিপুরক মাত্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী টেলিমেডিসিন হল Healing from a distance অর্থাৎ দূর হতে নিরাময়। এ ব্যবস্থ্য স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রোগীকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় চিকিৎসাকের লাঙ্গ সাক্ষাৎ করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেয়।
১৯২৪ সালে আমেরিকাতে বিশেষ ধরনের বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে দূর থেকে চিকিৎসা দেয়ার পদ্ধতি চালু ছিল। ১৯৪৮ সালে পেনসুলভেনিয়ার চিকিৎসকরা প্রথম একস্থান থেকে অন্য স্থানে মেডিকেল রিপোর্ট প্রদান করতে সক্ষম হয়। পরে কানাডীয় রেডিওলজিস্টরা একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেন যার মাধ্যমে মন্ট্রিল ও তার আশপাশের এলাকায় রেডিওলজি সংক্রান্ত রিপোর্ট বিনিময় করা সম্ভব হয়। ১৯৫৯ সালে নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট তাদের ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করার জন্য দূরদর্শন যন্ত্র ব্যবহার করে এবং এ প্রক্রিয়াটি ছিল পারস্পরিক আলোচনার সুযোগ সম্পন্ন। তবে বৃহৎ পরিসরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে টেলিমেডিসিন প্রথম চালু করে আমেরিকার সামরিক বাহিনী। ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আমেরিকার নাসা, জনস্বাস্থ্য বিভাগ এবং সামরিক বাহিনী টেলিমেডিসিন খাতে ব্যাপক অর্থ ও সময় ব্যয় করে যা আধুনিক টেলিমিডিসিনে ব্যবস্থার গোড়া পত্তন করে। সময়ের আবর্তনে এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে ধীরে ধীরে টেলিমেডিসিন আধুনিক রূপ লাভ করে। কয়েক ধরনের টেলিমেডিসিন রয়েছে। এগুলো হলোঃ
রিয়েল টাইম টেলিমেডিসিনঃ এ পদ্ধতির আরেক নাম হল লাইভ টেলিমেডিসিন বা ইন্টারেক্টিভ টেলিমেডিসিন। এখানে রোগী ও ডাক্তার দূরবর্তী অবস্থানে থাকাসত্ত্বেও ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে একে অপরকে সরাসরি দেখতে ও শুনতে পারে। এখানে রোগী ও ডাক্তার তাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইতে পারে। এ প্রক্রিয়ার সবচেয়ে সুবিধা হল রোগীর মানসিক ও শারীরিক ভাষা বোঝার সুযোগ শারীরিক পর্যবেক্ষণ, মেডিকেল রিপোর্ট মূল্যায়ন এবং অন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের সুযোগ।
রিমোট পেশেন্ট মনিটরিংঃ এ পদ্ধতির অন্য নাম সেলফ মনিটরিং বা সেলফ টেস্টিং পদ্ধতি। এ প্রক্রিয়াতে মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহার করে রোগী বাসায় বসে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা বা ক্লিনিকাল উপসর্গ সম্পর্কে জানতে ও জানাতে পারে। সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমনঃ কার্ডিওভাসকুলার ডিসিস, এজমা, ডায়াবেটিস মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি বেশি। ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতির সুবিধা হলেও এটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং রোগীবান্ধব।
স্টোর অ্যান্ড ফরওয়ার্ডঃ এ পদ্ধতির আরেক নাম এসাইনক্রোনাস টেলিমেডিসিন। এখানে রোগী তার সমস্ত মেডিকেল রেকর্ড, প্রয়োজনীয় ছবি, ভিডিও বা অন্য সব তথ্য বিশেষ ব্যবস্থায় ডাক্তারের কাছে প্রেরণ করেন এবং ডাক্তার তার সুবিধামতো সময়ে প্রেরিত ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থাপত্র দেন। সাধারণত ডার্মাটোলজি, রেডিওলজি এবং প্যাথলজি সংক্রান্ত চিকিৎসায় এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
টেলিমেডিসিনের উপকারিতাঃ নানাদিক বিবেচনায় টেলিমেডিসিনের উপকারী ভূমিকা অনস্বীকার্য। টেলিমেডিসিন একটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা যেখানে একটি মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা সম্পন্ন কম্পিউটার-ই চিকিৎসা উপকরণ হিসেবে যথেষ্ট। পাশাপাশি মেডিকেল রেকর্ড সংরক্ষণ এবং নিম্নোক্ত সুবিধাতো আছেই।
যাতায়াত খরচ বা অতিরিক্ত সময় নষ্ট না হওয়াঃ যেহেতু দূর থেকে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ থাকে তাই কষ্ট করে চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না এতে করে যাতায়াত খরচ লাগে না এবং চিকিৎসকের সিরিয়াল পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার দরকার হয় না।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা গ্রহণের সুযোগঃ যেসব দূরবর্তী বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব আছে সেখানকার লোকজন চাইলেই টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পছন্দমতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ পেতে পারে। এক্ষেত্রে রিয়েল টাইম এবং স্টোর ও ফরওয়ার্ড উভয় পদ্ধতি বেছে নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
সুবিধামতো সময়ে চিকিৎসা প্রদানঃ চিকিৎসক চাইলে তার পছন্দমতো সময়ে রোগীর পাঠান ছবি, ভিডিও, মেডিকে ইতিহাস, টেস্ট এবং অন্য রিপোর্ট পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন যাতে করে বাস্ত চিকিৎসকের সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
রোগ সংক্রমণের সুযোগ হ্রাসঃ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের চেম্বারের অপেক্ষমাণ রোগীর কাছে থেকে অন্যদের গে সংক্রমণের আশংকা থেকে যায় কিন্তু টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে এরকমটি হওয়ার সুযোগ নেই।
বৃদ্ধ ও শিশুদের বিশেষ সুবিধাঃ দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ বা শিশুকে হর-হামেশাই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয় অনেক ক্ষেত্রেই বেশ কষ্টকর এবং অসুবিধাজনক। টেলিমেডিসিন এক্ষেত্রে অনেকটাই সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
টেলিমেডিসিনের চ্যালেঞ্জ:
সাইবার সিকিউরিটিঃ টেলিমেডিসিনে যেহেতু ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ডাটা আদান-প্রদান হয় তাই হ্যাকারর প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য হ্যাকিংয়ের আশ্রয় নিতে পারে। কারিগরি দক্ষতাঃ টেলিমেডিসিন সেবা পাওয়ার জন্য ন্যূনতম কারিগরি দক্ষতা থাকা আবশ্যক তবে অনেকের ক্ষেত্রে এটি অনুপস্থিত যা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে ।
ইন্টারনেট সুবিধাঃ টেলিমেডিসিন সেবা পাওয়ার জন্য ইন্টারনেট সুবিধা অন্যতম নিয়ামক কিন্তু শতভাগ এলাকা বা মানুষ ইন্টারনেট সেবার আওতাভুক্ত এমনটি বলা যায় না অর্থাৎ তাদের জন্য এ সেবা পাওয়া কষ্টকর।
প্রেসক্রিপশন করার অসুবিধাঃ ইদানীং বেশ কিছু সফটওয়্যারের মাধমে দূরবর্তী স্থানে প্রেসক্রিপশন প্রদান সম্ভব হলে গ্রহীতার বিশেষ সুবিধা থাকতে হয় যা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
আইনি জটিলতাঃ এখন পর্যন্ত অনেক দেশেই টেলিমেডিসিনের জন্য সাদৃশ্যপূর্ণ আইন বা নিয়ম তৈরি হয়নি যে কারণে সেবা দাতা ও গ্রহীতার অধিকার সীমা নির্ধারণ করা কঠিন। এমনকি বড় আয়তনের দেশে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আইনের ভিন্নতা থাকলে তা আরও বেশি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় কারণ টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান বড় নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় না।
জরুরি সেবার সুযোগ না থাকাঃ জরুরি সেবার ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন অনেকটাই অনুপযোগী যেমনঃ হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক, হাড়ভাঙা, কেটে যাওয়া বা এমন কোনো সেবা যেখানে সেবাদাতার সরাসরি হাতের কাজ আছে কারণ এসব ক্ষেত্রে রোগী ও চিকিৎসকের সরাসরি সাক্ষাতের বিকল্প নেই।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জরিপের ফলাফলে প্রকাশিত হয়েছে যে, যারা টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেন তারা অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় উদ্বিগ্নতা, মানসিকচাপ ও দুশ্চিন্তা অনুভব করেন এবং তাদের ক্ষেত্রে অসুস্থতাজনিত হাসপাতালে। ভর্তি হার শতকরা ৩৮ ভাগ কম। বর্তমান সময়ে টেলিমেডিসিন একটি ১৭.৮ বিলিয়ন ডলারের শিল্প যার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি শতকরা ১৮.৪ ভাগ। অর্থাৎ এ শিল্প দ্রুত বর্ধনশীল এবং এ থেকে আলাদা থাকার সুযোগ কম। হাসপাতালের বহির্বিভাগের ওপর চাপ কমান, সেবাদাতা ও গ্রহীতার সুবিধা, সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছান, চিকিৎসা খরচ কমান প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় টেলিমেডিসিনে আমাদের আরও বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার।
একজন লেখক তিনিই যিনি লেখেন। তবে সব লেখা লিখেই লেখক হওয়া যায় না। লেখক সব ধরনের হতে পারে। তবে সৃজনশীল লেখকই হচ্ছে আমাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু। লেখক হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম একটি স্বাধীন সত্ত্বা।
একজন লেখক পুরোপুরি তার নিজের সত্ত্বার ওপরে বেঁচে থাকে। অনেকেই লেখক হবার সহজ উপায় খোঁজ করে। কিন্তু পড়তে পড়তে আর লিখতে লিখতেই শুধুমাত্র লেখক হওয়া যায়। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। লেখক অনেক ধরনের হতে পারে।
একজন সাংবাদিকও একজন লেখক। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ছড়া, সাহিত্য, প্রবন্ধ, রম্য, ব্লগ সব ধরনের লেখা যারা লেখে তারাই লেখক। অনেকেই মস্তিষ্কের মধ্যে ওকটা লেখার শক্তি পেয়ে যায় আর অনেকে হয়ত শিখে শিখে লেখক হয়।
সমাজ সভ্যতা কখনোই পুরোপুরি একজন লেখকের পক্ষে থাকে না। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপক্ষে চলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই একজন লেখক তার কলমের আঘাতে জর্জরিত করতে চায় সকল অন্যায়, অপবাদ। তাই হয়ত বেঁধে যেতে পারে সংঘাত। কলমই হচ্ছে একজন লেখকের দাঁড়ানোর জায়গা। কলম ছাড়া লেখকের অস্তিত্ব বিলীন। তবে সবাইকে যে প্রতিবাদ লিখতে হবে এমন কোনো কথা। কেউ কেউ মনোরঞ্জনের জন্যও লেখে। অনেকে আবার চাটুকারিতা করতে লেখে। কেউ আবার কীভাবে পুরষ্কার তুলে নেওয়া যায় সেই ধান্দা করার জন্য লেখে।
একজন লেখক হয়ে উঠতে পারে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্যকারী। সে কলমের ছোঁয়ায় প্রতিবাদ করতে অন্যায়ের আর ফুটিয়ে তুলবে ন্যায়ের কথা। লেখকের কলমের কালি প্রেরণার সুর হয়ে গান গাইবে। আর অশ্রুসিক্ত নয়নে হাসির ঝলক আনবে লেখকের কলম। একজন লেখকের প্রাণ তার লেখা, তার লেখার ভঙ্গি। সে তার লেখা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে অসুস্থ কোনো সভ্যতাকে। লেখক তার কলম দিয়ে জাগ্রত করতে পারবে মানুষের ভীতরে লুকিয়ে থাকা অদম্য সাহস।
একজন লেখক কল্পনাকে নিয়ে আসতে পারে বাস্তবে। আমাদের নিয়ে যেতে পারে কল্পনার গহীন বনে। লেখক আমাদের সবাক যুগ থেকে অবাক যুগে নিয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মাঝেই। লেখক জাগাতে পারে প্রেম, লেখক জাগাতে পারে নতুন কাজের স্পৃহা।
অনেকেই মনে করে লেখকের সকল বিষয়ে দ্বায় আছে। কিন্তু লেখকের মূলত কারো কাছেই কোনো দ্বায় নেই। তার দ্বায় থাকে শুধু নিজের মনের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে, নিজের সুপ্ত চেতনার কাছে। সমাজ কি ভাববে তা নিয়ে লেখক মাথা ঘামাবে না। লেখক ভয়ে নাথা নোয়াবে না। লেখক যতদিন বাঁচবে বীরের মতোই বাঁচবে।
সারা বিশ্বেই লেখকরা নির্যাতনের শিকার হয়। অনেকেই বলে থাকে লিখে কিছুই হয় না। তাই যদি হতো তাহলে লেখার জন্য লেখকের শাস্তি হতো না। লেখকের ফাঁসি হতো না।
লেখকের কলমে অনেক জোর। সেই জোর ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিতে পারে যেকোনো কিছু। বিশেষ করে সাংবাদিকরা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত হয় অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে। শাস্তি, সাজা বহু কিছু তাদের সহ্য করতে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখলে হুমকি আসে, হামলা মামলা বহু ঘটনাই ঘটে। কারণ শাসক, শোষক আর অন্যায়কারীদের অনেক ক্ষমতা। লেখকের সমাজের দায়মুক্তির জন্য জীবনও দিতে হয়। তাইতো একজন লেখক সমাজের শক্তি, সমাজের সম্পদ।
সাহিত্য হচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি তথা মানব-অভিজ্ঞতার কথা বা শব্দের বাঁধনে নির্মিত নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ। এই অর্থে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি উচ্চতর গুণাবলি সমন্বিত বিশেষ ধরনের সৃজনশীল মহত্তম শিল্পকর্ম। সাহিত্য-শিল্পীগণ যখন ‘অন্তর হতে বচন আহরণ’ করে আত্মপ্রকাশ কলায় ‘গীতরস ধারা’য় সিঞ্চন করে ‘আনন্দলোকে’ নিজের কথা- পরের কথা- বাইরের জগতের কথা আত্মগত উপলব্ধির রসে প্রকাশ করেন- তখনই তা হয়ে ওঠে সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের কথায় “বহিঃপ্রকৃতি এবং মানব-চরিত্র মানুষের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে-সঙ্গীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষা-রচিত সেই চিত্র এবং সেই গানই সাহিত্য।…সাধারণের জিনিসকে বিশেষভাবে নিজের করিয়া – সেই উপায়ে তাহাকে পুনরায় বিশেষভাবে সাধারণের করিয়া তোলাই হচ্ছে সাহিত্যের কাজ।” [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্য] সাহিত্য সত্য-সুন্দরের প্রকাশ হিসেবে প্রবহমাণ সময়ে যা ঘটে – সে-সবের মধ্য থেকে যা মহৎ, যা বস্তুসীমাকে ছাড়িয়ে বাস্তবাতীত প্রকাশ করে, যা জীবনের জন্য কল্যাণময় এবং মহৎ আদর্শের দ্যোতক তাকেই প্রকাশ করে। আসলে মহৎ সাহিত্য তাই- যা একাধারে সমসাময়িক-শাশ্বত-যুগধর্মী-যুগোপযোগী-যুগোত্তীর্ণ। সাহিত্য কেবল পাঠককে আনন্দ দেয় না- সমানভাবে প্রভাবিত করে পাঠক এবং সমাজকে।
আভিধানিকভাবে ‘সহিতের ভাব’ বা ‘মিলন’ অর্থে ‘সাহিত্য’ হলো কাব্য, নাটক, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সৃজনশিল্পের মাধ্যমে এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের সংযোগ স্থাপন; সাহিত্য¯্রষ্টা-সাহিত্যের সাথে পাঠকের এক সানুরাগ বিনিময়। কিন্তু আভিধানিক অর্থের নির্দিষ্ট সীমায় সাহিত্যের স্বরূপ-গতি-প্রকৃতি-বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতির সম্যক ধারণা দেওয়া যেমন অসম্ভব, কোনো বিশেষ সংজ্ঞায় তাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়াও তেমন দুঃসাধ্য। বাচ্যার্থ ও ব্যঞ্জনার্থর সীমাকে অতিক্রম করে নানা রূপে, রসে, প্রকরণ ও শৈলীতে সাহিত্যের নিরন্তর যাত্রা সীমা থেকে অসীমে। প্রত্যক্ষ সমাজপরিবেশ তথা সমকালীন বাস্তব পারিপার্শ্বিক, নিসর্গপ্রীতি ও মহাবিশ্বলোকের বৃহৎ-উদার পরিসরে ব্যক্তিচৈতন্য ও কল্পনার অন্বেষণ ও মুক্তি- আর এইভাবেই শ্রেণিবিভাজন, নামকরণ ও স্বরূপমীমাংসার প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে উঠে সাহিত্যের যাত্রা সীমাহীনতায়। প্রকৃত সাহিত্য তাই যেমন তার সমসময় যা যুগমুহূর্তের, তেমনই তা সর্বকালের সর্বজনের। মার্কসবাদী সাহিত্যতত্ত্বে বাস্তব সমাজজীবনকে ‘ভিত্তি’ আর শিল্প-সাহিত্যকে সমাজের উপরিকাঠামোর [ঝঁঢ়বৎংঃৎঁপঃঁৎব] অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সাহিত্যের মৌল উপকরণসামগ্রী আহৃত হয় জীবনের ভা-ার থেকে- সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বৈরিতার বিচিত্র-অনিঃশেষ ভা-ার থেকে। সাহিত্যসৃষ্টির মূলে সক্রিয় যে সৃজনী-ব্যক্তিত্ব তা নিছক বিমূর্ত কোনো সত্তা নয়; আত্মপ্রকাশ ও মানবিক সংযোগ ও বিনিময়ের বাসনায় অনুপ্রাণিত সে সত্তা তার ভাব-ভাবনা, বোধ ও বিশ্বাসকে এক আশ্চর্য কৌশলে প্রকাশ করে জনসমক্ষে কোনো একটি বিশেষ রূপ-রীতি-নীতির আশ্রয়ে। ব্যক্তিক অনুুভূতি-যাপিতজীবন-মিশ্রকল্পনার জগৎ থেকেই সৃষ্টি হয় সাহিত্যের; যুগান্তরের আলোকবর্তিকা হিসেবে সাহিত্য সত্যের পথে সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছে- সত্যকে সন্ধান করেছে। আসলে সাহিত্য এমনি এক দর্পণ- যাতে প্রতিবিম্বিত হয় মানবজীবন, জীবনের চলচ্ছবি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজজীবনে ঘটমান ইতিহাস- ইতিহাসের চোরাস্রােত নানাবিধ কৌণিক সূক্ষ্মতায়।
সাধারণত আত্মপ্রকাশের বাসনা, সমাজ-সত্তার সঙ্গে সংযোগ কামনা, অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ এবং রূপপ্রিয়তা- এই চতুর্মাত্রিক প্রবণতাই মানুষের সাহিত্য-সাধনার মৌল-উৎস। চতুর্মাত্রিক প্রবণতার [আত্মপ্রকাশের কামনা, পারিপার্শ্বিকের সাথে যোগাযোগ বা মিলনের কামনা, কল্প-জগতের প্রয়োজনীয়তা এবং সৌন্দর্য-সৃষ্টির আকাক্সক্ষা বা রূপমুগ্ধতা] মধ্যে সমাজসত্তার সঙ্গে সংযোগ-কামনা এবং অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ- এই উৎসদ্বয়ের মধ্যে নিহিত রয়েছে সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে আন্তর-সম্পর্কের প্রাণ-বীজ। সমাজ শিল্পীকে সাহিত্য-সাধনায় প্রণোদিত করে। ‘সহৃদয়-হৃদয় সংবাদ’এর মাধ্যমে সাহিত্যিকগণ লেখক-পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেন- উভয়ের হৃদয়বীণার তারগুলোকে একই সুতায় গেঁথে দেন। এর কারণে সাহিত্য দেশ-কাল-সমাজের সীমা অতিক্রম করে সর্বসাধারণের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। এর ফলে সাহিত্য হয়ে ওঠে সার্বজনীন-সর্বকালের মানুষের হৃদয়ের সামগ্রী এবং সাহিত্য¯্রষ্টাও হয়ে ওঠেন অনেক বড়। কিন্তু বর্তমান বাংলা সাহিত্যচর্চার গতি-প্রকৃতি, সমস্যা-সংকট-সমাধান কোন দিকে? এসব বিষয়ের সন্ধান- এ প্রবন্ধের অন্বিষ্ট।
লোকশিল্প
লোক শিল্প প্রতি টা মানুষের
(প্রবন্ধ লিখুন)আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধটি আমাদের লোককৃষ্টি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। লেখক এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন । এ বর্ণনায় লোকশিল্পের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধের পরিচয় রয়েছে।
আমাদের নিত্যব্যবহার্য অধিকাংশ জিনিসই এ কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ।
শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের শিল্পকে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য করা যেতে পারে । পূর্বে আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তার অনেকগুলোই অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন তার অন্যতম। ঢাকাই মসলিন অধুনা বিলুপ্ত হলেও ঢাকাই জামদানি শাড়ি অনেকাংশে সে স্থান অধিকার করেছে।
বর্তমানে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নকশি কাথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। এ শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে কীথা সেলাইয়ের অনুপ্রেরণা পেতেন । কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক-একটি পরিবারের কাহিনী, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবনগাঁথা ।
আমাদের দেশের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে নানা প্রকার শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকে। নানা প্রকার পুতুল, মূর্তি ও আধুনিক রুচির ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট ইত্যাদি তারা গড়ে থাকে।
খুলনার মাদুর ও সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। আমাদের দেশের এই যে লোকশিল্প তা সংরক্ষণের দায়িত আমাদের সকলের । লোকশিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি।
বাংলাদেশ, একটি দ্রুত উন্নতি লক্ষ্য নির্ধারণ করা দেশ, যা প্রচুর অর্থনৈতিক সম্পদের বেশিরভাগ সম্পদ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ মৌলিকভাবে চারটি প্রধান উৎস থেকে আসে: জমি, কাজ, উদ্যোগ, এবং মানুষের কাজের দক্ষতা। এই সম্পদের বিকাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদের মূল স্তম্ভ হল কৃষি। দেশটি একটি প্রধানত কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মূল হিসেবে প্রধানত শস্য ও ফসল চাষ প্রসঙ্গে বিকাশ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রধানত ধান, পাট, মশুর ডাল, আখ, পটল, পেঁপে, তেল সহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। অত্যন্ত উচ্চ মানের খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনের ফলে এই খাদ্য পণ্য রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সম্পদের গড়াতে সাহায্য করে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎস হল প্রবৃদ্ধি ও শিক্ষাগত উন্নতি। বাংলাদেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব কমে আসছে এবং মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। বিশেষত, প্রযুক্তির আগমন এবং বিনিয়োগে বৃদ্ধি নেওয়া হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক সম্পদের উন্নতির পথে সাহায্য করছে।
অন্যান্য উৎস হিসেবে প্রযুক্তিবিদ্যা এবং সেবা অংশ গুলির অগ্রগতি আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সম্পদ হল তার মানুষের চাকরিভার্থী শ্রমিকেরা। তাদের দক্ষতা, উদ্যোগ, ও সামর্থ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে অনেক উত্সাহজনক প্রগতি হয়েছে, তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ র
য়েছে। প্রধানতঃ গরিব মানুষের জন্য আর্থিক সম্পদের অগ্রগতি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনও বেশিরভাগ লোকের মধ্যে বৃদ্ধির অভাব আছে। তাছাড়া, পরিবেশের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সঠিক প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
পুনর্নির্মাণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পদের বিস্তার ও উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে। সঠিক নীতি নির্ধারণ, উদ্যোগের বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত প্রবর্তন এবং শিক্ষাগত উন্নতি এমন পরিবর্তন নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।
শেষ কথায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা দেশটির সমৃদ্ধি ও উন্নতির সাথে অবিভাজ্যভাবে সংযোগিত। একটি দ্রুত বৃদ্ধির উপায় হল সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোগের বৃদ্ধি করা। এই প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে আরও এগিয়ে যেতে পারে এবং তার মানুষের জন্য আরো উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।