নভেল করোনা ভাইরাস (কোডিড-১৯) ও আর্থিক প্রণোদনা' বিষয়ে ২৫০ শব্দে একটি রচনা লিখুন ।
নভেল করোনা ভাইরাস (কোডিড-১৯) ও আর্থিক প্রণোদনা
নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে উৎসাহ জোগাতে, ক্ষতি কাটাতে সহায়তা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে যে আর্থিক প্যাকেজ বা বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেটিই আর্থিক প্রণোদনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি কাটাতে এই ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। সরকার ঘোষিত খাতভিত্তিক প্রণোদনার মধ্যে শিল্প ঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ বাবদ পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এর পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, প্রি-শিপমেন্ট ঋণ বাবদ পাঁচ রাজার কোটি টাকা, গরিব মানুষের নগদ সহায়তায় ৭৬১ কোটি টাকা, অতিরিক্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকার বাইরেও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রণোদনার সুবিধাভোগী হবেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, শিল্প-কারখানার মালিক ও কৃষক। তবে করোনার কারণে ক্ষতি কাটাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার বেশিরভাগ সুবিধাভোগী হবেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করেই সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
সম্ভাব্য পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার মূলত চারটি কৌশল অবলম্বন করবেঃ ক) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি; খ) আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন; গ) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি; এবং ঘ) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি ।
ক) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করাঃ সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে 'কর্মসৃজনকে' মূলত প্রাধান্য দেয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসী বায় নিরুৎসাহিত করা হবে। আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপি'র অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪%) বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির উপর কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না।
খ) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়নঃ ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
গ) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধিঃ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলোঃ (১) বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ; (২) ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয়; (৩) লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ; (৪) "বয়স্ক ভাতা' এবং 'বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা; এবং (৫) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা; ইত্যাদি।
ঘ) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করাঃ অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
এই চারটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে মূলত যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবেঃ
ক) ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদানঃ ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক- ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪.৫০ শতাংশ ঋণ গ্রহিতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪.৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।
খ) ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদানঃ ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক- ক্লায়েন্ট রিলেশনের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ প্রদান করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহিতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।
গ) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফ (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) এর সুবিধা বাড়ানোঃ ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি এর আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফ-এর বর্তমান আকার ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমান অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফ-এর বর্তমান সুদের হার লেবার +১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২,৭৩%) কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।
ঘ) প্রি-শিপিং ক্রেডিট ফাইনেন্সিং স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।