তথ্য-প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলোকে গতিশীল করে তুলেছে। কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান হলো চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু কম্পিউটারের প্রথম দিকের অপারেটিং সিস্টেমগুলো ছিল বর্ণভিত্তিক; যা নিয়ন্ত্রণ করা হতো বিভিন্ন মুখস্থকৃত কমান্ডের সাহায্যে। ধরা হয়, অ্যাপলে কম্পিউটারের প্রথম গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। এরপর মাইক্রোসফট কোম্পানি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করে। অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে কম্পিউটার তার সমস্ত উপাদানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এই উপঅধ্যায় থেকে আমরা অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবো।
অপারেটিং (Operating) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পরিচালনা, সিস্টেম (System) অর্থ হলো পদ্ধতি অর্থাৎ অপারেটিং সিস্টেম-এর অর্থ হলো পরিচালনা পদ্ধতি। অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে এমন একটি প্রোগ্রাম যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবসময় নির্বাহ হয় এবং অন্যান্য প্রোগ্রামের নির্বাহের পরিবেশ তৈরি করে। অন্যভাবে বলা যায়, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধন করে অভ্যন্তরীণ সমগ্র কর্ম-প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারকে অপারেটিং সিস্টেম বলে। মূলত অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) হলো একটি সিস্টেম সফটওয়্যার (System Software) যা কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কম্পিউটারের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারগুলো পরিচালনা করে থাকে। ANSI (American National Standards Institute)-এর মতে অপারেটিং সিস্টেমের সংজ্ঞা হলো—
“Operating system is a software which controls the execution of computer programs and which may provide scheduling, debugging input / output control, accounting. compilation, storage assignment, data management and related services.”
অর্থাৎ “অপারেটিং সিস্টেম একটি সফ্টওয়্যার যা কম্পিউটার প্রোগ্রামের নির্বাহকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং যা অনুসূচী, ভুল নির্ণয়, ইনপুট/আউটপুট নিয়ন্ত্রণ, হিসাব, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, ডেটা ব্যবস্থাপনা ও সম্পর্কযুক্ত কাজ করে থাকে। ”
অপারেটিং সিস্টেমের ভূমিকা (Importance of Operating System)
অন্যান্য সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামের ন্যায় অপারেটিং সিস্টেমও এক ধরনের সফটওয়্যার। কম্পিউটার সিস্টেম জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কম্পিউটার বুটিং করা থেকে শুরু করে বন্ধ করা পর্যন্ত সকল কাজই অপারেটিং সিস্টেমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের ব্যবহার সহজ করে দিয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষেও কম্পিউটার ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেমের কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে। অপারেটিং সিস্টেম হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে। কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ কাজগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। হার্ডওয়্যার দিয়ে যাবতীয় কাজ করানোর দায়িত্ব ব্যবহারকারীর পরিবর্তে অপারেটিং সিস্টেম পালন করে। কম্পিউটারে সব ধরনের সফটওয়্যার থাকলেও অপারেটিং সিস্টেম ব্যতীত এটি কোনো কাজ করে না। কম্পিউটারে সম্পাদিত তথ্যাবলি সংরক্ষণ, ফাইল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি নির্ণয়, সিস্টেম বণ্টন, তত্ত্বাবধান, ইনপুট ও আউটপুট অপারেশন, প্রোগ্রাম পরিচালনা — সর্বোপরি কম্পিউটারের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদনে অপারেটিং সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কম্পিউটার পরিচালনার জন্য অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
নিম্নে অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো-
১. প্রধান মেমোরির ব্যবস্থাপনা।
২. কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশকে নিয়ন্ত্রণ করা।
৩. প্রধান মেমোরিতে ফাইল ও অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম নিয়ে আসা এবং কাজ করানো।
৪. নতুন ডিস্ক বা সাময়িক অনুপযোগী ডিস্ককে কাজের উপযোগী করে তোলা।
৫. ডিস্কের ত্রুটি নির্ণয় ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সংশোধন।
৬. ইনপুট/আউটপুট ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা।
৭. স্থায়ী মেমোরিতে ফাইল সিস্টেম তৈরি করা।
৮. ব্যবহারকারীর সাথে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যাররের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা।
৯. ব্যবহারকারী ও প্রোগ্রামের নিরাপত্তা দেয়া।
১০. একাধিক কম্পিউটারের মাঝে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা।
১১. বিভিন্ন ধরনের ভুল-ত্রুটি নির্ধারণ করে ব্যবহারকারীকে জানানো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১২. একাধিক ব্যবহারকারী বা একাধিক প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ও বিভিন্ন কাজের সময়সূচী নির্ধারণ করা।
১৩. হার্ডওয়্যার সমূহের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, সমন্বয় সাধন ও মনিটরে বার্তা প্রদর্শন ।
অপারেটিং সিস্টেমের কাজ (Functions of Operating System )
অপারেটিং সিস্টেম অনেকগুলো প্রোগ্রাম নিয়ে গঠিত একটি সমন্বিত সফটওয়্যার। এই সিস্টেম সফটওয়্যার- এর অন্তর্ভূক্ত প্রোগ্রামগুলো কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে। নিম্নে অপারেটিং কাজগুলো দেওয়া হলো-
১. অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারকে সচল ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।
২. প্রসেসর (Processor) পরিচালনা (Management) করে অর্থাৎ প্রসেসরের বিভিন্ন কাজ এই সিস্টেমের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
৩. মেমোরি পরিচালনা করে, অর্থাৎ প্রধান মেমোরিতে ডেটা ও প্রোগ্রাম নিয়ে আসে এবং কার্যকরী করে।
৪. ইনপুট / আউটপুট যন্ত্রগুলো পরিচালনা করে অর্থাৎ প্রিন্টার, ফ্লপি ডিস্ক, হার্ডডিস্ক, মাউস, কী-বোর্ড, মনিটর প্রভৃতির নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সাধন করে।
৫. ফাইল পরিচালনা করে অর্থাৎ মেমোরিতে রক্ষিত বিভিন্ন ফাইল এক ডিভাইস হতে অন্য ডিভাইসে পাঠাতে এবং পরিবর্তন করতে সাহায্যে করে।
৬. অপারেটিং সিস্টেম নির্ধারণ করে কম্পিউটারের কোন কাজটি আগে কার্যকর হবে।
৭. অপারেটিং সিস্টেম কম্পাইলার, অ্যাসেম্বলার, ইউটিলিটি প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন, পরিচালনায় ও নির্দেশ গ্রহণে সহায়তা করে।
৮. অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিলে শব্দ, চিহ্ন ও Error message দিয়ে ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেয়।
৯. ডেটা ও প্রোগ্রাম ম্যানিপুলেশন (Manipulation), সিকিউরিটি (Security) এবং ইন্টিগ্রিটি বজায় রাখে। অর্থাৎ ডেটা আদান-প্রদান, স্থানান্তর ও সংরক্ষণের কাজ করে। অন্য কোনো ব্যবহারকারীর মাধ্যমে যেন কোনো কিছু নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখে।
১০. অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে যোগাযোগ (Communication) সহজ করে দেয় ।
১১. অপারেটিং সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন (Application) প্রোগ্রামগুলোকে নির্ধারণ করে কিভাবে ব্যবহারকারী কম্পিউটারের সাথে ইন্টার-অ্যাক্ট (Interact) করবে।
১২. ব্যবহারকারীর দেওয়া নির্দেশ গ্রহণ করে ধারাবাহিকভাবে প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করে।
অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারকে সচল করে। এটি কম্পিউটার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করে। অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমেই ব্যবহারকারী কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। কাজেই অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া কম্পিউটার শুধুমাত্র একটি যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না ।
অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া কম্পিউটার দিয়ে কোনো কাজ করা যায় না। কোনো একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যেমন একজন পরিচালকের প্রয়োজন তেমনি কম্পিউটার পরিচালনার জন্য অপারেটিং সিস্টেম প্রয়োজন। Abraham silberschatz তাঁর Operating System Concepts বইতে উল্লেখ করেছেন- An operating system works like a government। একটি দেশের সরকার নিজে যেমন কোনো কাজ করে না, কিন্তু এটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে; তেমনি অপারেটিং সিস্টেমও একটি কম্পিউটারের সকল হার্ডওয়্যার ডিভাইসগুলোকে কাজ করার উপযোগী করে তোলে এবং প্রোগ্রামার ও ব্যবহারকারীগণকে অন্য সকল সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সুষ্ঠুভাবে ও দক্ষভাবে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।
নিম্নের চিত্রের মাধ্যমে অপারেটিং সিস্টেম এর গুরুত্ব দেখানো হলো-
ক. কাজ করার পরিবেশ এবং ইন্টারফেস-এর উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করাযায়। যথা-
১. বর্ণ-ভিত্তিক (Text Based / Character User Interface-CUI) অপারেটিং সিস্টেম
২. চিত্র-ভিত্তিক (Graphical User Interface - GUI) অপারেটিং সিস্টেম
খ. ব্যবহারকারীর উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১. একক ব্যবহারকারী (Single User) অপারেটিং সিস্টেম
২. বহু জন ব্যবহারকারী (Multi User) অপারেটিং সিস্টেম।
গ. প্রসেসরের এর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
1. একক প্রসেসিং (Single Processing) অপারেটিং সিস্টেম
2. মাল্টি প্রসেসিং (Multi Processing) অপারেটিং সিস্টেম
ঘ. স্বত্ব-মালিকানার উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১. ওপেন সোর্স (Open Source) অপারেটিং সিস্টেম
২. প্রোপাইটারি (Proprietary) অপারেটিং সিস্টেম
ঙ. মেমোরি সংগঠন, বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালানো এবং সেকেন্ডারি বা সহায়ক মেমোরি ডিভাইসগুলোর উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-
1. ব্যাচ প্রসেসিং বা অফ-লাইন অপারেটিং সিস্টেম (Batch Processing Operating System )
2. মাল্টিপ্রোগ্রামিং বা মাল্টিটাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম (Multiprogramming or Multitasking )
3. মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেম (Multiprocessing Operating System )
4. রিয়েলটাইম অপারেটিং সিস্টেম (Realtime Operating System )
5. টাইম শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম (Time Sharing Operating System)
6. ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম
▪️ বর্ণ বা টেক্সটভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম
এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম হলো কমান্ড লাইন ইউজার ইন্টারফেস। ডিস্ক ফরমেটিং থেকে শুরু করে ফাইল ব্যবস্থাপনা এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সব কাজ কী-বোর্ডের কমান্ডের মাধ্যমে করতে হয়। তাই বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে অনেকগুলো কমান্ড মুখস্থ করতে হয়। যেমন- Linux, Unix, MS-DOS, PC DOS, CP/M ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেম।
বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো—
• বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম পরিচালনার জন্য Root Prompt বা Command Prompt (C:/> )ব্যবহৃত হয়।
• ডিস্ক ফরমেটিং থেকে শুরু করে ফাইল ব্যবস্থাপনা, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম, নতুন ডিভাইস শনাক্তকরণ সকল পর্যায়ের কাজই কমান্ড দিয়ে করতে হয়।
• এ ধরনের সিস্টেমের জন্য ব্যবহারকারীকে সকল কাজের কমান্ড মুখস্থ রাখতে হয়।
• নতুন কোনো হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার সংযোগ করা হলে কম্পিউটারকে বলে দিতে হয় কোথায় সংযোগ করা হয়েছে।
• নেটওয়ার্কিং বা ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যকর নয়। তবে ইউনিক্স বালিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে নেটওয়ার্কিং বা ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যকর হয়।
• অল্প কিছু কমান্ড মুখস্থ করেই কম্পিউটার পরিচালনা করা যায়।
• এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম খুব দ্রুত কাজ করতে পারে।
• মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম কার্যকর নয়।
• এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য কম্পিউটারে কম মেমোরির প্রয়োজন হয়।
বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর সুবিধাসমূহ
১. অল্প সময়ে বিভিন্ন রকম বর্ণ টাইপ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয় ।
২. অল্প কিছু কমাণ্ড মুখস্ত করেই কম্পিউটার পরিচালনা করা যায়।
বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর অসুবিধাসমূহ
১. বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে কী-বোর্ডের সাহায্যে বিভিন্ন বর্ণ টাইপ করে কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে হয়।
২. সবগুলো কমান্ডের জন্য নির্দিষ্ট বর্ণ এবং কী-বোর্ডের বাটনগুলো মুখস্ত রাখতে হয়।
৩. এই অপারেটিং সিস্টেমে কামান্ডের জন্য মেনু বা পুল ডাউন মেনু কমান্ড থাকে না।
৪. এই সিস্টেমে নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেটের ব্যবস্থা কার্যকর নয়।
৫. এটি বর্ণ ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে কার্যকর নয়।
▪️চিত্রভিত্তিক বা গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম
গ্রাফিক্সের বা চিত্রের মাধ্যমে কমান্ড প্রয়োগ করে কম্পিউটার পরিচালনা করার সফটওয়্যারকে চিত্রভিত্তিক বা গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম বলে। এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন প্রকার আইকন ও পুলডাউন মেনু ব্যবহার করে ডিস্ক ফরমেটিং থেকে শুরু করে ফাইল ব্যবস্থাপনা এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সব কাজ করতে হয়। প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামের আইকনের ওপর মাউস দিয়ে ডবল ক্লিক করলে প্রোগ্রামটি চালু হয়। তবে বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের মতো কমান্ড মুখস্থ করতে হয় না। Windows 95/98/Xp/2000/7, Mac OS ইত্যাদি চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ। অপারেটিং সিস্টেমের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো—
• চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে কম্পিউটার চালু করার পর ডেস্কটপে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আইকন বা প্রতীক থাকে।
• বিভিন্ন প্রকার আইকন এবং পুল ডাউন মেনু কমান্ড ব্যবহার করে কম্পিউটারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করা হয়।
• কমান্ডের জন্য মেনু এবং প্রতিটি মেনুর আওতায় অনেক পুল ডাউন মেনু কমান্ড থাকে।
• মাউসের সাহায্যে Icon এবং পুল ডাউন মেনু কমান্ড কার্যকরী করা যায়।
• নতুন কোনো হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার সংযোগ করা হলে কম্পিউটার নিজে থেকে বুঝতে পারে কোথায় সংযোগ করা হয়েছে।
• নেটওয়ার্কিং, শেয়ারিং ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
• এই ধরনের সিস্টেমের জন্য ব্যহারকারীকে কোনো ধরনের কমান্ড মুখস্থ রাখতে হয় না।
• মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম কার্যকর।
• এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য কম্পিউটারে বেশি মেমোরির প্রয়োজন হয়।
চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর সুবিধাসমূহ
১. চিত্র ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে কামন্ডগুলো মুখস্ত রাখার প্রয়োজন হয় না।
২. বিভিন্ন প্রকার আইকন এবং পুল ডাউন মেনু কমান্ড ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করা হয়।
৩. এখানে কমান্ডের জন্য মেনু ও পুল ডাউন মেনু কমান্ড থাকে ।
৪. এই অপারেটিং সিস্টেমে নেটওয়ার্কিং, শেয়ারিং, ইন্টারনেট ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
৫. এটি বর্ণের পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়াতেও কার্যকর 1
৬. মাউসের সাহায্যে যে কোনো স্থানে রেখে কাজ করা যায়।
৭. ফাইল, ফোল্ডার ও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের নাম মনে রেখেও কাজ করা যায়।
৮. শুধুমাত্র মাউস ব্যবহার করে কম্পিউটার পরিচালনা করা যায়।
চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর অসুবিধাসমূহ
১. মাউস নষ্ট হলে কম্পিউটার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।
২. কোনো প্রোগ্রাম মুছে গেলে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
▪️একক ব্যবহারকারী (Single User) অপারেটিং সিস্টেম
একজন ব্যবহারকারী একই সময়ে এক কম্পিউটারে কাজ করার জন্য যে ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাকে একক ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেম বলে। এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বর্ণভিত্তিক ও চিত্র ভিত্তিক উভয়ই হতে পারে। যেমন- MS DOS কে বর্ণভিত্তিক একক ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়। WINDOWS 311, WINDOWS 95, WINDOWS 98, WINDOWS 2000 কে চিত্র ভিত্তিক একক ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়।
সাধারণভাবে সিঙ্গেলে ইউজার অপারেটিং সিস্টেম দু'ধরনের হতে পারে। যথা-
• সিঙ্গেল ইউজার, সিঙ্গেল টাস্ক (Single User, Single Task) : এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে একজন ব্যবহারকারী একই সময়ে কেবলমাত্র একটি প্রোগ্রাম চালাতে পারে। হাতের তালুতে রেখে ব্যবহারযোগ্য পাম (Pump) কম্পিউটারের জন্য তৈরি Palm OS (Operating system) হলো সিঙ্গেল ইউজার, সিঙ্গেল টাস্ক অপারেটিং সিস্টেম।
• সিঙ্গেল ইউজার, মাল্টি টাস্কিং (Single User, Multitasking) : এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে একজন ব্যবহারকারী একই সময়ে একাধিক প্রোগ্রাম চালাতে পারে। যেমন— একই সময়ে লেখালেখির কাজের সাথে গান শুনতে পারে আবার সেইসাথে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারে। যেমন -উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম।
▪️ বহুজন ব্যবহারকারী (Multi User) অপারেটিং সিস্টেম
একই কম্পিউটারে একই সময়ে বিভিন্ন ইউজার একসঙ্গে কাজ করতে পারে এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমকে মাল্টিইউজার অপারেটিং সিস্টেম বলে। এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বর্ণভিত্তিক ও চিত্র ভিত্তিক উভয়ই হতে পারে। যেমন- UNIX কে বর্ণভিত্তিক মাল্টিইউজার অপারেটিং সিস্টেম বলে। এছাড়াও WINDOWS XP/VISTA / NT, WINDOWS SERVER 2000. WINDOWS SERVER 2003, WINDOWS SERVER 2008, Mac OS, Linux কে চিত্রভিত্তিক মাল্টিইউজার অপারেটিং সিস্টেম বলে।
বহুজন ব্যবহারকারী (Multi User) অপারেটিং সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য
• একসাথে একাধিক ব্যবহারকারী একটি কম্পিউটারে কাজ করতে পারে।
• যুগপৎভাবে একাধিক প্রোগ্রাম প্রসেস করা যায়।
• প্রোগ্রাম প্রসেসের দক্ষতা অনেক বেশি।
• নির্দিষ্ট সময়ে তুলনামূলক বেশি আউটপুট পাওয়া যায় ।
• কম্পিউটার সিস্টেমের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়।
• ব্যবহারকারীকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না।
• প্রোগ্রাম প্রসেসের দক্ষতা ইনপুট-আউটপুটের উপর নির্ভরশীল।
• তুলনামূলক বেশি মেমোরি প্রয়োজন হয়।
সিঙ্গেল ইউজার অপারেটিং সিস্টেম | মাল্টি ইউজার অপারেটিং সিস্টেম |
---|---|
১. ব্যাচ প্রসেসিং সিস্টেমে একজন মাত্র ব্যবহারকারী কোনো প্রোগ্রাম প্রসেস করতে পারে। | ১. মাল্টিইউজার সিস্টেমে একই সাথে একাধিক ব্যবহারকারী একটি প্রোগ্রাম কিংবা ভিন্ন ভিন্ন প্রোগ্রাম প্রসেস করতে পারে। |
২. একই সাথে একাধিক ব্যবহারকারী একটি কম্পিউটারে কাজ করার সুযোগ নেই। | ২. একই সাথে একাধিক ব্যবহারকারী একটি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। প্রয়োজনে একজন ব্যবহারকারীও প্রোগ্রাম প্রসেস করতে পারে। |
৩. একই সময়ে একটি মাত্র প্রোগ্রাম প্রসেস করা হয়। একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে প্রসেস করার সুযোগ নেই । | ৩. একসাথে এক বা একাধিক প্রোগ্রাম প্রসেস করা হয়। |
৪. একটি প্রোগ্রাম প্রসেস সম্পন্ন হওয়ার পর অন্য আরেকটি প্রোগ্রাম প্রসেস করা হয়। | ৪. একটি প্রোগ্রাম প্রসেস শেষ হওয়ার আগেই অন্য আরেকটি প্রোগ্রাম প্রসেস করতে পারে। |
৫. প্রোগ্রামগুলো ইনপুটের অর্ডার (FCFS-First Come First Serve) | ৫. প্রোগ্রামগুলো ইনপুটের অর্ডার অনুযায়ী প্রসেস করার প্রয়োজন হয় না। |
৬. একজন ব্যবহারকারী একটা নির্দিষ্ট সময়ে একটি মাত্র প্রোগ্রাম প্রসেস করতে পারে বলে এই পদ্ধতি অত্যন্ত ধীর গতির। | ৬. এক সাথে একাধিক প্রোগ্রাম প্রসেস করা যায় বলে এই পদ্ধতি অত্যন্ত দ্রুত গতির। |
কম্পিউটার মেমোরি বা সহায়ক যন্ত্র যেমন- হার্ডডিস্ক, ফ্লপি ডিস্ক, সিডি রম ইত্যাদিতে পরস্পর সম্পর্কিত তথ্যকে একক হিসাবে বিশেষ নাম দিয়ে একসাথে সংরক্ষণ করা হলে তাকে ফাইল বলে। অর্থাৎ ফাইল হলো কম্পিউটার মেমোরিতে সংরক্ষিত তথ্যগুলোর লজিক্যাল ইউনিট। মূলত পরস্পর সম্পর্কিত এক বা একাধিক রেকর্ড নিয়ে ফাইল গঠিত হয়।
নথি বা ডকুমেন্ট যেখানে ধরে রাখা হয় তাকে ফাইল বলে। ফাইলগুলোকে যে স্তরে স্তরে সাজানো হয় তাকে ডিরেক্টরি বলে ।
ফোল্ডার হলো কম্পিউটার মেমোরিতে এমন একটি ক্ষুদ্র অংশ যেখানে বিভিন্ন ধরনের পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক ফাইল সংরক্ষণ করা যায়। সংরক্ষিত ফাইলগুলোর নামের সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে ফোল্ডারের পরিচিতিমূলক নাম দেওয়া হয়ে থাকে।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ও ওপেনসোর্স ভিত্তিক লিনাক্স উভয়ই বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম।
যদিও বিশ্বজুড়ে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহারকারী সংখ্যা বেশি। সেই তুলনায় লিনাক্স বেশ পিছিয়ে। তবে কিছু কিছু সুবিধার কারণে ধীরে ধীরে লিনাক্স-এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। লিনাক্সের প্রতি সবার আগ্রহও দিনে দিনে বাড়ছে। নিম্নে এদের কিছু সুবিধা ও তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-
বিষয় | উইন্ডোজ | লিনাক্স |
---|---|---|
লাইসেন্স ও দাম | উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের লাইসেন্স ক্রয় করে ব্যবহার করতে হয়। লাইসেন্স এ উল্লিখিত সংখ্যক কম্পিউটার এর চেয়ে বেশি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। | লিনাক্স কার্ণেল ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। এটি ওপেন সোর্স অর্থাৎ বিনামূল্যে এটি ব্যবহার ও বিতরন করতে পারা যাবে। |
নিরাপত্তা ও তথ্যের গোপনীয়তা | উইন্ডোজ তাদের সার্ভিস এর উন্নতির জন্য কাস্টামারের বিভিন্ন তথ্য নিয়মিত জানা- অজানায় নিয়ে থাকে। | লিনাক্সে এমন কোনো সমস্যা নেই । |
কাস্টমাউজ সুযোগ | উইন্ডোজ-এ চাইলেও নিজের মতো করে কাস্টমাইজেশন করতে পারা যায় না। | লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম নিজের মনের মতো করে কাস্টমাইজও করে নেওয়া যায়। |
সমস্যায় সাপোর্ট কমিউনিটি | উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাপোর্ট স্টাফ রয়েছে যারা যে কোনো সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করে। | লিনাক্সে রয়েছে সারা বিশ্বের অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক যারা সর্বদা যে কোনো সমস্যায় সমাধান দিতে প্রস্তুত। |
হুমকি এবং সমস্যা | উইন্ডোজ সর্বাধিক ব্যবহৃত OS। হ্যাকার, স্প্যামারগুলো প্রায়শই উইন্ডোজকে টার্গেট করে। ফলে এখানে নিরাপত্তা কম। | লিনাক্স উইন্ডোজের চেয়ে অনেক স্থিতিশীল এবং সুরক্ষিত। এখানে নিরাপত্তা বেশি। |
নির্ভরযোগ্যতা | নির্ভরযোগ্যতা কম। | নির্ভরযোগ্যতা বেশি। |
অপারেটিং সিস্টেম হলো যে কোনো কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোগ্রাম। একটা আধুনিক কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম বিভিন্নমুখী এবং বেশ জটিল। যাই হোক, আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমের কার্যাবলিকে আমরা সাধারণত চার ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. প্রসেস ব্যবস্থাপনা
কম্পিউটারের প্রসেসর (Processor) একটা সিরিয়াল ডিভাইস হওয়ায় এটি একই সময়ে যে কোনো একটি প্রসেস (চলমান প্রোগ্রাম) এর কাজ করতে পারে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি যে, একটি কম্পিউটারে একই সাথে অনেক প্রসেস প্রক্রিয়াধীন থাকে। এখানে অপারেটিং সিস্টেমের কাজ হলো নির্ধারণ করা, কখন কোন প্রসেসটি কম্পিউটারের প্রসেসর দিয়ে ফাংশনাল কাজে ব্যবহৃত হবে।
২. মেমোরি ব্যবস্থাপনা
কম্পিউটারে কোনো প্রসেস চলার সময় প্রয়োজনীয় ফাইল স্টোরেজ (HDD অথবা SDD) থেকে র্যাম- এ লোড করে নেয়। এখানে অপারেটিং সিস্টেম এটাই ফিক্স করে, কোন প্রসেস মেমোরির কত টুকু জায়গা নেয় ও কতক্ষণ থাকবে এবং কীভাবে ব্যবহার করবে।
৩. স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা
অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ হলো সিস্টেম স্টোরেজকে সিস্টেম ফাইল হিসেবে রুপান্তরিত করা। ফলে আপনার কাঙ্ক্ষিত ফাইলটি স্টোরেজ-এ কোন অবস্থায় কতটুকু স্পেস নিয়ে আছে এটাও অপারেটিং সিস্টেম নিজেই নির্ণয় করে।
৪. সুরক্ষা ও নিরাপত্তা
কম্পিউটারের কোনো একটি কাজ যেন অন্য কোনো কাজে বিঘ্ন না ঘটায়, অপারেটিং সিস্টেম সেটা নিয়মিত দেখাশোনা করে। প্রতিটি কম্পিউটারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আরও দেখুন...