রাগ
হিন্দুস্তানি সংগীতে রাগের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা শুনলে শ্রোতার মনোরঞ্জন হয় তাকে রাগ বলে। অবশ্য এ থেকে সংগীতে রাগের পূর্ণ চিত্র প্রকাশ হয় না। রাগ বলতে স্বর সমষ্টি দ্বারা গঠিত মনোরঞ্জনকারী এবং আরোহী ও অবরোহীর একটি বিশিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি রক্ষাকারী রচনাকে বোঝায়। প্রাচীন সংগীত শাস্ত্রে স্বর ও বর্ণ
দ্বারা বিভূষিত জনচিত্তের রঞ্জক ধ্বনি বিশেষকে রাগ বলা হয়েছে। স্বপ্ন এবং বর্ণের পারিভাষিক ব্যাখ্যায় বর্ণ সম্পর্কে বলা হয়েছে গাওয়ার প্রত্যক্ষ ক্রিয়াকেই বর্ণ বলে। বর্ণ চার প্রকার যথা স্থায়ী বর্ণ, আরোহী বর্ণ, অবরোহী বর্ণ এবং সঞ্চারী বর্ণ।
স্থায়ী বর্ণ
একই স্বরকে বার বার উচ্চারণ করাকে স্থায়ী বর্ণ বলে।
আরোহী বর্ণ ষড়জ থেকে নিষাদ পর্যন্ত পর পর স্বরগুলো গাওয়া হলে তাকে আরোহী বর্ণ বলে।
অবরোহী বর্ণ
নিষাদ থেকে বড়জে ফিরে আসাকে অবরোহী বর্ণ বলে।
সারী ব যে বর্ণে আরোহ ও অবরোহের মিশ্রণ ঘটে অর্থাৎ একত্রে মিলিত হয় তাকে সঞ্চারী বর্ণ বলে। যেকোনো গায়কের গায়কীর মধ্যে এই চারটি বর্ণ উপস্থিত থাকে। এ থেকে বোঝা যায় যে, প্রত্যক্ষ রাগের মধ্যে
নিশ্চিতরূপে আরোহ ও অবরোহ থাকা আবশ্যক।
সংগীতশাস্ত্রে রাগের দশটি লক্ষণের উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- গ্রহ, অংশ, মন্ত্র, তার, ন্যাস, অপন্যাস, অম্লত্ব, বহুত্ব, ধাড়বড় ও উদ্ভব।
বর্তমানকালে রাগের গড়নে যেসব লক্ষণ মেনে চলা হয় তা নিম্নে দেওয়া হলো: ১। রাগ রচনার জন্য কোনো ঠাট থেকে স্বর নিতে হবে।
২। কোনো রাগেই 'সা' স্বরটি বর্জিত হবে না।
৩। কোনো রাগেই মধ্যম (ম) ও পঞ্চম (প) স্বর এক সঙ্গে বর্জিত হবে না। অর্থাৎ ম ও প এর অন্তত একটি
থাকতে হবে।
৪। রাগে কমপক্ষে পাঁচটি স্বর থাকতে হবে। তবে পাঁচটি স্বর সপ্তকের একই অঙ্গে থাকলে চলবে
না। পূর্বাঙ্গ এবং উত্তরাঙ্গে কমপক্ষে দুইটি করে স্বর থাকতে হবে।
৫। রাগের রঞ্জকতা গুণ থাকতে হবে। ৬। রাগে কোনো বিশেষ রসের অভিব্যক্তি থাকবে।
৭। রাগে আরোহী এবং অবরোহী দুটোই থাকতে হবে এবং তা বিশেষ নিয়ম পদ্ধতি মেনে চলবে। ৮। রাগে বাদী, সমবাদী, অনুবাদী, বিবাদী (রাগ বিশেষে), বর্জিত (রাগের নিয়মমাফিক) স্বর থাকবে এবং
জাতি, পকড়, সময়, অঙ্গ, আলাপ বা বিস্তার, তান, বোলতান, বাঁট, সরগম, প্রভৃতি প্রদর্শিত হবে। ১৯ রাগের জাতি, বিভাগ, আরোহ ও অবরোহ স্বর ব্যবহারের ওপর নির্ভর করবে। যেমন: সম্পূর্ণ, ঘাড়ব, উদ্ভব এরূপ ৯টি জাতিভেদ আছে।
১০। কোনো রাগের আরোহ বা অবরোহে একই স্বরের শুদ্ধ ও বিকৃত রূপ পাশাপাশি অর্থাৎ পর পর লাগবে না। যেমন রে রে অথবা গগ স্বর। তবে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন: রাগ ললিত।
ঠাঁট ও রাগের তুলনা
ঠাট
১। সত্তকের স্বর থেকে ঠাট উৎপন্ন হয়।
২। ঠাটের সাত স্বর ক্রমানুসারে হতে হবে।
রাগ
১। আশ্রয় রাগ বা জনক রাগ (ঠাটবাচক) থেকে রাগের সৃষ্টি হয়।
২। রাগে স্বরের ব্যবহার জাতি অনুসারে হয়ে থাকে।
৩। ঠাট পাওয়া বা বাজানো যায় না।
৪। ঠাটে রক্ষকতা দরকার নেই।
৫। ঠাটে সাত স্বরের কম বা বেশি হবে না।
৩। রাগ পাওয়া বা বাজানো যায়।
৪। রাগে রক্ষকতা আবশ্যক। ৫। রাগের জাতি অনুসারে স্বর ব্যবহার হয়। পাঁচটির
৬। ঠাটে আরোহী ও অবরোহীর প্রয়োজন হয় না।
কম ঘরে রাগ হয় না। ৬। রাগে আরোহী ও অবরোহী দুইটিরই প্রয়োজন।
৭। ঠাটে বাণী, সমবাদী, অনুবাদী, বিবাদী, | (রাগ বিশেষে) ও বর্জিত স্বর এবং অঙ্গ, জাতি, পকড়, সময়, বিস্তার, তান, বোলতান, বাট, সরগম ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন নেই।
৭। রাগে বাদী, সমবাদী, অনুবাদী, বিবাদী (রাগ বিশেষে) ও বর্জিত স্বর নির্দিষ্ট থাকে এবং অঙ্গ, জাতি, পকড়, সময়, বিস্তার, স্তান, বোলতান, বাঁট, সরগম ইত্যাদি আবশ্যক।
৮। ঠাটে (স্মর কাঠামোতে প্রদর্শিত স্বর অনুযায়ী রাগের নাম অনুসারে ঠাটের নামকরণ করা হয়।
৮। রাগের নামকরণ স্বতন্ত্রভাবে করা হয়।
সপ্তক
সাধারণভাবে সপ্তক বলতে সাতটি স্বরের সমষ্টিকে বোঝায়। সপ্তক তিন প্রকার মন্ত্র সত্তক, মধ্য সপ্তক ও তার সপ্তক। মন্ত্র, মধ্য, তার সপ্তককে যথাক্রমে উদারা, মুদারা ও তারা সপ্তকও বলা হয়।
মন্ত্র সন্তকের যেকোনো একটি স্বর মধ্য সপ্তকে দ্বিগুণ উঁচুতে অবস্থান করে। আবার, মধ্য সপ্তকের যেকোনো একটি স্বর তার সপ্তকে দ্বিগুণ উঁচুতে অবস্থান করে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের কণ্ঠস্বর তিন সপ্তক অবধি ব্যবহার হয়। তবে সমবেত যন্ত্রসংগীতে, কর্ড ব্যবহারে ও রাগ আলাপে অতিরিক্ত আরও দুইটি সপ্তকের ব্যবহার হতে পারে যা অতি মন্ত্র ও অভি তার নামে চিহ্নিত।
আলাপ
রাগের চলন অনুযায়ী স্বর বিন্যাসই হচ্ছে আলাপ যা গীত আরম্ভের পূর্বে রাগের আবহ সৃষ্টি করার জন্য পরিবেশন করা হয়। আলাপ অর্থ কথোপকথন। আর কথোপকথনের মাধ্যমেই হয় পরিচয়। তাই রাগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচয়ের প্রক্রিয়াকেই আলাপ বলা যায়। আলাপের মাধ্যমেই রাগের রূপ প্রকাশ পায় এবং এতে শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। রাগের বাণী সমবাদী স্বরকে ঘিরে অনুবাদী স্বরসমূহের সহযোগিতায় আলাপ আবর্তিত হতে থাকে। বাদী সমবাদীকে ঘিরে আলাপ অংশ রাগের পরিচয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিবাদী স্বর রাগ বিশেষে আলাপের সাথে সংযুক্ত হয়ে রাগের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে। আলাপ প্রক্রিয়া স্বরের (সরগম) মাধ্যমে, বাণী বা পদ সহযোগে নোম তোম (ধ্রুপদ অঙ্গের পরিবেশনায় ) অথবা আ-কার ইত্যাদিভাবে করা যায়। আলাপ দুই প্রকার। যথা- নিবন্ধ আলাপ বা নোমুতোম আলাপ ও অনিবন্ধ আলাপ বা আকার আলাপ ।
নিবন্ধ বা নোম্-তোম্ আলাপ
নোম্-তোম্ আলাপ রাগের ধ্রুপদ শৈলী পরিবেশনে করা হয়। ধ্রুপদ গানের শুরুতে বেশি দীর্ঘ সময় ধরে এই নোম- তোম্ আলাপ করা হয়ে থাকে। বাণী বা পদের পরিবর্তে নে, তে, তেরি, চারু, নোম, তোম, তানা, দৃষ দেরে না, ইত্যাদি বর্ণ, অলংকার, মীড়, কর্ণ, গমক প্রভৃতিতে ভূষিত করে রাগের রূপ প্রকাশ করা হয়। ধ্রুপদে বাণী ও তাল সহযোগেও বিভিন্ন লয়ে আলাপ করা যায়।
অনিবন্ধ বা আ-কার আলাপ
রাগ পরিবেশনের শুরুতে কণ্ঠসংগীতে পদ বা বাণী উচ্চারণ না করে রাগে ব্যবহৃত স্বরগুলোকে আ-কার দ্বারা
সংক্ষেপে রাগের রূপ প্রকাশ করা হয়। আবার ভাল সহযোগে বাণী বা পদের এক ঘেয়েমী কাটাতে অথবা
সরগম প্রক্রিয়ার মাঝে মাঝে আ-কার আলাপ করা হয়।
বোলবিস্তার
বোল অর্থ কথা বা বাণী। বোলবিস্তার অর্থ কথার আলাপ। রাগ শুরু হওয়ার পরে ভালের ঠেকার সঙ্গে বিভিন্ন লয়ে বাণীর সাহায্য বা বাণীর অনুভূতিগুলো রাগের সুরের সাথে মিশিয়ে প্রকাশ করা যায় তাকে বোলবিস্তার বলা হয়। বোলবিস্তারে বন্দিশের মধ্যে যে সব শব্দ থাকে তা ব্যবহার করতে হবে। বন্দিশের বাইরের শব্দ নয়।
স্বরবিস্তার:
তাল সহযোগে রাগের পরিবেশন করার সময় বাণী বা আ-কারের পরিবর্তে কখনও কখনও সরগম সহযোগে
রাগের ভাব প্রকাশ করা হয়, থাকে স্বরবিস্তার বলে। স্বরবিস্তার বা সরগম করার সময় রাগের আবহ বা ঢংটি সরগম উচ্চারণের সাথে সাথে প্রযুক্ত হয়। বাদ্যযন্ত্র, যেমন- সরোদ, সেতার, বেহালা, বাঁশি, সানাই ইত্যাদিতে রাগ পরিবেশনার সময় ভাল ছাড়া এবং তাল সহযোগে বিস্তার করা হয়। তাল ছাড়া বিস্তারের সময় অনিবদ্ধভাবে লয় বা ছন্দ ব্যবহার করা হয়।
তান
বিস্তারের গতি দ্রুত ও অবিচ্ছিন্নভাবে সমাবিষ্ট হলে এরকম অলংকারিক ক্রিয়াকে জ্ঞান বলে। বিস্তার এবং তানের মধ্যে তুলনাগত গতির সাথে স্বর প্রয়োগের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়। বিস্তারের সময় স্বরগুলোকে ধীর গতিতে ব্যবহার করা হয় এবং প্রতিটি স্বর স্পষ্ট ও স্থিরভাবে পেয়ে বা বাজিয়ে রাগ-রূপের বিন্যাস করা হয়। কিন্তু তানের সময় স্বরগুলোকে তালের সাথে সামস্যপূর্ণ করে দ্রুততর ও অবিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ করা হয়।
তানের প্রধান উদ্দেশ্য গানের বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং কণ্ঠস্বরকে মার্জিত করা। যন্ত্রসংগীতে তানের প্রক্রিয়াকে "তোড়া বলা হয়। আধুনিককালে তান ত্রিয়া সরগম ও আ-কার উভয়ভাবেই করা হয়। তানের অনেক প্রকার আছে যাকে তানের জাতি বলা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ১। শুদ্ধতান বা সপাট তান ২। কূটতান ৩। মিশ্রতান ৪। বোলতান ৫ অলংকারিকতান ৬। গমকতান ৭। ছুটতান ইত্যাদি।
শুদ্ধতান বা সপটিতান
তান পরিবেশন করার সময় স্বরগুলোকে সরল গতিতে প্রকাশ করাকে শুদ্ধতান বলা হয়। শুদ্ধতানকে সপাট তানও বলা হয়। যেমন- রাগ ইমন এ সপাটতান নিয়ে গম ধনিসা।
কূটতান তান পরিবেশনের সময় স্বরগুলোকে বক্র গতিতে প্রকাশ করাকে কূটতান বলা হয়। কূট অর্থ জটিল। কূটতান অসংখ্য প্রকার হতে পারে। যেমন- সারে সাথ ধরে পথ সারে সারে সাথ রেগ সারে রেসা। এখানে সা রে গুগ তিনটি স্বরের মধ্যে তানের জটিল ক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
মিশ্রতান শুদ্ধ ও কূটতানের মিশ্রণে মিশ্রতান উৎপন্ন হয়। যেমন- রাগ ইমন-এ মিশ্র তাননিরে গম পথ পম পম গল্প রেগ মগ ধপ নিনি ধপ মগ রেসা।
বোলতান
বোল শব্দের অর্থ হচ্ছে কথা বা গানের ভাষা। ভাষাকে অর্থাৎ গানের বাণীকে তানের মতো করে পরিবেশন করলে তাকে বোলতান বলা হয়। যেমন- রাগ ভূপালীতে বোলতান। সারে গপ ধ ধ সাসা ধ রে সাস
অলংকারিকতান
বর্ণ বা অলংকারযুক্ত তানকে অলংকারিকতান বলা হয়। যেমন- রাগ ভূপালীতে অলংকারিক তান: সারে পরে গল্প গপ ধপ ধ
উপরিউক্ত তানের লেখা দেখে জটিল মনে হলেও তা আসলে অলংকারিক। এখানে সারেগ রেগন গপধ পধসা
অলংকারটির ঢং বা ছন্দ অবিচ্ছিন্নভাবে করা হয়েছে।
গমকতান
তান পরিবেশনের সময় স্বরগুলোকে গমকযুক্ত করা হলে তাকে গমকতান বলা হয়।
উচ্চ স্বর থেকে দ্রুত নিম্ন স্বরের দিকে বা নিম্ন স্বর থেকে দ্রুত উচ্চ স্বরের দিকে উল্লম্ফন বা ছুটে আসাকে ছুটতান বলা হয়।
বাজানোর সময় ডাইনা এবং যাঁরা দ্বারা পৃথক কিংবা যৌথভাবে কতিপয় ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই ধ্বনি সংখ্যা ১০টি এবং ধ্বনিগুলোকে বর্ণ বলা হয়। এই ১০টি বর্ণের মধ্যে ৬টি 'ডাইনার সাহায্যে ২টি 'বাঁয়া'র সাহায্যে এবং ২টি উভয় যন্ত্রের সাহায্যে উৎপন্ন হয়য়।
ক. 'ডাইনা'ৰ বৰ্ণ:
১। ডানা ২। তিন/ভি, ৩ তুন/তু
খ. 'বায়া'র বর্ণ:
৪ দিন/খুন ৫। তে/তি ৬। রে/টে ১/ক/কে/কা/কু। ক
২। গে/ মেঘ।
গ. যৌথভাবে 'ডাইনা' ও 'বাঁয়া'র সাহায্যে উৎপন্ন ১। ধা ২ দিন। হিন্দুস্তানি সংগীতে তালের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংগীত পরিবেশনায় শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সাথে একটি গতিময় আবহ সৃষ্টি হয়। এই গতি বা লয়ের স্থিতি নিরুপণের জন্য ভবলার পরিভাষা জানা একান্ত আবশ্যক। তাছাড়া তবলায় স্বতন্ত্র লেহড়া। বাদনও হতে পারে।
সংগীতে কালের পরিমাপকে ভাল বোঝায়। তাল সম্পর্কে তবলার পরিভাষায় একটু পরিষ্কার ধারণা দিতে গেলে বলা যায়- “ একাধিক মাত্রা দ্বারা ছন্দোবদ্ধভাবে গঠিত কয়েকটি পদের সমষ্টিকে ভাল বলে।” মাত্রা হচ্ছে তালের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ যা লয়কে পরিমাপ করে। ১/২/৩/৪ ইত্যাদি সংখ্যা দ্বারা মাত্রাকে নির্দিষ্ট করা হয়। আর কোনো ভালে একাধিক মাত্রা ছন্দোবদ্ধভাবে দুই বা ততোধিক পদ বা বিভাগ গঠন করে। প্রতিটি ভালের জন্য নির্দিষ্ট ঠেকা বা বোল থাকে। বোল রচিত হয় তবলার বর্ণ সহযোগে। উল্লেখ্য যে, তবলায় আরও অনেক যুক্ত বর্ণ আছে।
তাল দুই প্রকার। যথা: ক. সমপদী তাল ও খ. বিসমপদী তাল।
ক. সমপদী তালঃ যে সকল ভালের পদ বিভাগগুলো সমান সংখ্যক মাত্রার দ্বারা গঠিত সেই সকল ভালকে সমপদী তাল বলে। যথা: দাদরা, কাহারবা, ত্রিতাল, একতাল ইত্যাদি।
খ. বিসমপদী ভাল। যে সকল তালের পদ বিভাগগুলো অসমান সেই সব ভালকে বিসমপনী তাল বলে। যথা:
ভেগুড়া, ঝাঁপতাল, ধামার তাল ইত্যাদি।
লয়
সংগীতে আরোপিত সময়ের অবিচ্ছেদ্য গতিকে লয় বলে। লয় প্রধানত তিন প্রকার, যথাঃ ১। বিলম্বিত লয় ২। মধ্যলয় ও ৩। দ্রুতলয়। এ ছাড়া মাত্রার ভগ্নাংশ দ্বারা বহু প্রকার নগ্ন হতে পারে। যেমন- আড়, কুয়াড়, বিয়াড় ইত্যাদি। লয় থেকেই লয়কারীর সৃষ্টি।
আবর্তন যেকোনো ভালের ‘সম’থেকে 'সম' পর্যন্ত একবার ঘুরে আসাকে এক আবর্তন বলে। এইরূপ যতবার ঘুরবে তত আবর্তন হবে।
সম
যেকোনো ডালের প্রথম মাত্রাকে সম বলা হয়। 'সম' তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কারণ, 'সম' থেকেই
তালের শুরু এবং 'সম'-এ এসেই তালের শেষ। স্বরলিপিতে '+' যোগ চিহ্ন বা 'x' চিহ্ন দিয়ে সম
বোঝানো হয়। খালি বা ফাঁক (অনাঘাত)
তালের অন্তর্গত যে বিভাগকে হাতের সাহায্যে অনাঘাত দ্বারা প্রকাশ করা হয় তাকে খালি বা ফাঁক বলা হয়।
"o" [শূন্য] চিহ্ন দ্বারা ফাঁত চিহ্নিত করা হয়। তালি (আঘাত)
তালের অন্তর্গত বিভাগের প্রারম্ভিক মাত্রাতে তালি বা শব্দের দ্বারা আঘাত করে প্রকাশ করাকে তালি বলে। তালিকে স্বরলিপিতে হয়, ৩য় ইত্যাদি অবস্থানবাচক সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বোল বা ঠেকা
'ডাইনা' এবং 'বাঁয়া'র ন্যূনতম কতকগুলো বর্ণকে প্রয়োজনমতো নির্দিষ্ট মাত্রা, বিভাগ, ভাগি, খালি ঠিক রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ লয়ে বাজানোকে তালের বোল বা ঠেকা বলে।
আবর্তন
আবর্ত বা আবর্তন শব্দের অর্থ হলো চক্রাকারে ঘোরা। কোনো তালের প্রথম মাত্রা থেকে শেষ মাত্রা পর্যন্ত বাজাবার পর আবার প্রথম মাত্রায় ফিরে এসে নতুন করে পুরো তালটি বাজাতে হয়। এইভাবে প্রতিবারই একই নিয়মে
চক্রাকারে ঘুরতে হয়। একেই বলা হয় আবর্ত বা আর্বতন।
দাদরা তালের কথাই ধরা যাক। এটি ৬ মাত্রার তাল। ১ম থেকে ৬ষ্ঠ মাত্রার পর আবার ঘুরে আসতে হয়
প্রথম মাত্রায় এবং সম্পূর্ণ ভালটিকে এই ৬ষ্ঠ মাত্রার মধ্যেই ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে হয়। এইরকম যতবার
ঘোরা হবে, তাকে তত আবর্তন বলা হবে। প্রতিবার ঘোরার শেষে ১ম মাত্রায় এসে পড়লেই কিন্তু আবর্তন
সম্পূর্ণ হয়।
কায়দা
কোনো ভালের চেহারা এবং বৈশিষ্ট্যকে পুরোপুরি বজায় রেখে এবং তার মাত্রা ও বিভাগের কোনো পরিবর্তন
না করে, এক বা একাধিক আবর্তনে কিছু বাছাই করা বর্ণসমষ্টি নিয়ে রচিত এক বিশেষ ধরনের বোলকে কায়দা বলে। এই ধরনের বোলগুলির একটি খুব বড়ো রকমের বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, এই নির্দিষ্ট বর্ণসমষ্টিকে উল্টে-পাল্টে নানারকমভাবে বাজানো যায়। এই সময় নতুন কোনো বাণী কিন্তু এই সমষ্টির মধ্যে যুক্ত করা যায়
না। উদাহরণ হিসেবে ত্রিতালের একটি কায়দা দেওয়া হলো-
+
ধাতু
না।
তা তা
টে
ধাধ
फू না।
O
=
পাল্টা
কায়দার নির্দিষ্ট বর্ণ সমষ্টিকে এইভাবে উল্টে-পাল্টে এবং ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যে নতুন বোল রচিত হয়, তাকেই বলা হয় পাল্টা। কায়দা সম্বন্ধে আলোচনা করার সময় বলা হয়েছে যে এর বৈশিষ্ট্য হলো একে নানারকমভাবে উল্টে-পাল্টে বাজানো যায়। উল্টে-পাল্টে বাজানোর সময়েও কিন্তু তালের রূপ ঠিকমতো রাখতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কায়দার মূল রচনায় ব্যবহৃত বর্ণের বাইরের কোনো বর্ণ বাজানো হবে না। যেমন- কায়দার উদাহরণে
দেওয়া বোলটিকে এইভাবে বাজানো যেতে পারে পাল্টা হিসেবে-
+
খা তেটে। তে টে ধা
ধা তেটে। ধা
थ তেটে। ধা
তা তা তে টে। তে
+
রেলা
সংশ্লিষ্ট তালের তালি, খালি, বিভাগ ও ভালরূপকে পুরোপুরি বজায় রেখে ধিরধির ধিরধির কিটভক-জাতীয় বর্ণসমষ্টির প্রাধান্যে রচিত এক বিশেষ ধরনের বোলের নাম রেলা। আকৃতির দিক থেকে এই বোল অনেকটা কায়দার মতো। তবে কায়নার সঙ্গে রেলার প্রধান পার্থক্য এই যে, কায়দা সাধারণত বাজানো হয় আটগুণ লয়ে। উদাহরণ হিসেবে এখানে রিভালের একটি রেলার মূল রচনা দেওয়া হলো- কেটেডাক ধেরেধেরে কেটেতাক। ধাতেরে কেটেতাক ভুনা কেটেতাক।
ধাম তেরে
+
ভাঙতেরে কেটেভাক ধেরেধেরে কেটেভাক । ধাতেরে কেটেতাক ভুনো কেটেভাক
টুকড়া
কয়েকটি ছন্দোবদ্ধ বর্ণসমষ্টি নিয়ে হয় টুকড়া। কন্ঠসংগীতের তান এবং ততবান্যের জোড়ার মতোই তবলার
হলো টুকড়া। এই টুকড়া এক থেকে তিন আবর্তন পর্যন্ত হতে পারে। টুকড়ার মধ্যে বর্ণ, লয় বা অন্যকিছুর
বিধিনিষেধ বড়ো একটা থাকে না। যেকোনো বর্ণসমষ্টি, যেকোনো লয়কারীতে বাজানো যেতে পারে। এগুলি যেমন --
তিহাইযুক্তও
था
ভেরে
কেটে
কেটে
ধা|
তী
না
হয় না। न |
+
হতে পারে অথবা তিহাই ছাড়াও হতে পারে। টুকড়ার কিন্তু কোনো বিস্তার
S
| ধা তেরে
ভেরে
+
কেটে
ধাতু
খা এক S তা था চক
সাধারণভাবে তিহাইহীন এক বা দুই আবৃত্তির একটি বিশেষ ধরনের বোলকে গৎ বলা হয়। এর বিস্তার হয়। না, কিন্তু ঠায় বা বরাবর লয়ে বাজাবার পর একই সঙ্গে পরপর দ্বিগুণ ও চৌগুণ লয়ে বাজানো হয়।
যে সমস্ত গৎ এ আগাগোড়া একটি লয়-ই থাকে, তাকে শুদ্ধ লয়কারীর পৎ এবং একাধিক লয়বিশিষ্ট গথকে
মিশ্র বা মিশ্রিত লয়কারীর গৎ বলা হয়।
উদাহরণ স্বরূপ ত্রিতানের একটি গৎ এর নমুনা নিচে দেয়া হলো।
যে
ভাগে
তিন
নাগে
1
তেরেকেটে
কেড়ে
+
ভেটে
কতা
কতা
তেটে
ঘেড়ে
ধিন।
ধাপে
St
কেটে
1
ধিনা
+
তাকে তেকা
তেরেকেটে ধাধা
1
ধেরেধেরে
কেটেভাক ডাকতেরে কেটেডাক ।
মুখড়া ও মোহড়া
উপর্যুক্ত শব্দ দু'টি সম্বন্ধে অনেক মতভেদ। কোনো কোনো পণ্ডিত বলেন, জোরালো ছোটো বোলকে মুখড়া এবং মোলায়েম ছোটো বোলকে মোহড়া বলা হয়। আর একদল বলেন, সমে এসে মিলবার জন্য যে বোল বাজানো হয়, তাকেই বলা হয় মুখড়া বা মোহড়া। এদের মতে মুখড়া এবং মোহড়া একই জিনিস, কারণ 'মুখ' শব্দ থেকে এসেছে মুখড়া এবং 'মুহ' শব্দ থেকে এসেছে মুহুড়া বা মোহড়া।
ভিন্নমতে, গান বা বাজনা আরম্ভ করার সঙ্গে-সঙ্গে সমে এসে মিলবার জন্য যে ছোটো ধরনের বোল বাজানো
হয়, তাই হলো মুখড়া আর গান-বাজনার মাঝখানে যে বোল বাজানো হয়, তাকে বলে মোহড়া। এদের মতে
মুখড়াকে ছোটো উঠান বলা যেতে পারে। কেউ-কেউ আবার মুখড়া কথাটিকে প্রধানত গানের এবং মোহড়া
কথাটিকে তবলার বলে চিহ্নিত করেন। তাঁদের বক্তব্য, গায়কেরাই বেশির ভাগ মুখড়া কথাটি ব্যবহার করেন
এবং তবলিয়ারা ব্যবহার করেন মোহড়া শব্দটি।
উপরিউক্ত মতগুলি পর্যালোচনা করলে কিন্তু মনে হয় যে, এই শব্দ দু'টির মধ্যে খুববেশি পার্থক্য না থাকলেও, এদের পুরোপুরি এক বলা যায় না। বিতর্ক এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি না করে আমরা তাই প্রচলিত বোল অনুসারে এদের দু'টি ভাগেই আলাদা করে দেখাবো। এখানে একটি চার মাত্রার মুখড়া দেওয়া হলো। কানতেরে কেটেতাক্ তাতেৱে কেটেভার । ধা
সাধারণত এইরকম চার মাত্রা, ছয় মাত্রার ছোটো বোলকেই মুখড়া বলা যেতে পারে, যা বাজিয়ে মুখে বা সমৃ- আসা হয়। মুখড়ার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বড়ো এই জাতীয় বোলকে আমরা মোহড়া বলতে পারি। যেমন-
তাক তুনা
কেটেভাক তুনা
।
কেটেভার ভেৱেকেটে ডাকতা
তেরেকেটে ।
+
था
তেরেকেটে ডাকতা
ভেরেকেটে।
ধা
তেরেকেটে
তারুতা
তেরেকেটে। ধা
কোনো একটি বিহাইযুক্ত টুকড়াকে একই সঙ্গে পরপর তিনবার বাজিয়ে যদি স-এ এসে মিলে, তাহলে তাকে বলা হয় চক্রদার টুকড়া। চক্রাকারে ঘোরা হয় বলেই এর এইরকম নাম; অর্থাৎ বলা যেতে পারে যে টুকড়া এবং তিহাই- এই দু'টির মিশ্রণে তৈরি হয় একটি চক্রদার, কারণ চক্রদারে সম্পূর্ণ টুকড়াটিকেই তিহাই- এর মতো তিনবার বাজাতে হয়। যেমনা
ধান
ধিকিট
ধাতিরকিট
ধিকিট।
টতিট
কতাগ
ान ।
+
ভাগিন তান ISS ক্রি
কতি
ধিকিট।
ान
SSS
কতাগ
তাপিন
+ খাতিরকিট ধিকিটা কাংতি
+
SSS
।
ধান
ধিকিট
ধান
কতি
+
দিখিন । ভাগিন ডান
ধাতিরকিট ধিকিট।
ISS
ধাকি ধান
ssf
উতিট কাগ
ধান
O
=
পেশকার আদালতে যে কর্মচারি মামলার কাগজপত্র পেশ করেন, তাকে বলা হয় পেশকার এবং তাঁর পেশ করা কাগজপত্র থেকে যেমন কোনো মামলার জ্ঞাতব্য বিষয়গুলি জানা যায়, সেইরকম তবলায় যে বোল বাজানোর সঙ্গে-সঙ্গেই অলিয়া কী ভাল বাজাবেন, লয় ও পরকারীতে তাঁর দক্ষতা কতখানি, হাত কী রকম ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির একটা মোটামুটি আভাস পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় পেশকার। পার্থক্য এই যে, আদালতে পেশকার একজন ব্যক্তি, আর সংগীতে একটি বিশেষ ধরনের বোল। অন্যভাবেও বলা যায়, যেকোনো রাগ গাইবার আগে গায়ক যেমন আলাপের সাহায্যে সেই রাগের গতি-প্রকৃতি এবং বৈশিষ্টগুলির একটা মোটামুটি আভাস দেন, পেশকারও সেইরকম।
স্বভাবতই পেশকার বাজানো হয় লহরা শুরু করার সময়ে। কোনো ঘরানার বাদক শুরুতে উঠান বাজান, কোনো ঘরানার বাদক বাজান পেশকার। পরিবেশনের নিয়ম কিছুটা শিথিল হওয়ায় আজকাল অবশ্য উঠান বাজিয়ে ঠেকা ধরার পরে একই শিল্পী পেশকারও বাজান। পেশকার বাজানো হয় সাধারণত ঠার বা বরাবর লয়কে ভিত্তি করে। তবে মূল বোলটি প্রথমে বাজিয়ে তারপর তার বিস্তার যখন করা হয়, তখন কিন্তু বিভিন্ন নয়কারীর পরিচয়ই পাওয়া যায় । একটু দোলানো ছন্দের এই বিশেষ ধরনের বোলে ধীকৃ ধিতা বা ধীরু ধিতা জাতীয় বোল খুববেশি ব্যবহার করা হয়। যেমন-
ধিনধান্ত
ধিsers
।
ধাses
its
asers
ধন ধা
তিন তা
জিনাতাম।
ধামতি
ধাতি
ধাধা
ধিনধ
ইত্যাদি।
এটি বিভাগের একটি পেশকারের প্রারম্ভিক বোল। এই ভিড়-এর ওপরেই গড়ে তোলা হয় বিস্তারের ইমারত
এবং এই বোলের আসল কারিগরি সেখানেই।
ভাললিপি পরিচিতি
বিভাগ
তাল: রূপক
ছন্দ
সম বা তালি
৩/২/২ মাত্রার ছন্দ
চতুর্থ মাত্রা এবং ষষ্ঠ মাত্রায় তালি
খালি বা ফাঁক
বাদন
প্রথম মাত্রায় বিসমপনী
রূপক তালের তাললিপি
8 । ि। नि না। তিন বোল তিন তিন না চিহ্ন
তাল: একতাল
भ
বিভাগ
ছন্দ: সম বা তালি
খালি বা ফাঁক
পদ বাদন
বোল
O
=
৩/৩/৩/৩ মাত্রার ছন্দ
প্রথম মাত্রায় সম, চতুর্থ মাত্রা এবং দশম মাত্রার তালি
সমপনী তবলা
একতালের তাললিপি
8 ধিন ধিন খা খা খুন না। বহু তা ধাগে। ভেটে ধিন ধা ধিন চিহ্ন
বিভাগ
ছন্দ সম বা তালি খালি বা ফাঁক পদ
2/2/2/2/2/2 মাত্রার ছন্দ
প্রথম মাত্রায় সম, পঞ্চম, নবম এবং একাদশ মাত্রায়
তালি তৃতীয় এবং সপ্তম মাত্রায়
সমপনী পাখওয়াজ
বাদন
চৌতালের তাললিপি
বোল ধাধা দেন তা কং ভাগে। দেন তা তেটে কতা। পলি মেনে। ধা
চিহ্ন
তাল: সুরফাক্তা বা সুরফাক তাল
বিভাগ
2/2/2/2/2 মাত্রার ছন্দ। প্রথম মাত্রায় সম, পঞ্চম মাত্রা এবং সপ্তম মাত্রায় তালি
তৃতীয় এবং নবম মাত্রায়
ছন্দ সম বা তালি
খালি বা ফাঁক
বাদন
8 t
১১ ১২
د
সুরফাক্তা বা সুরফাঁকতালের তাললিপি
পাথওয়াজ
२ 8 ধানে দি ঘেড়ে নাগ। গদ দি । খেড়ে না । ধা
আরও দেখুন...