পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক বলতে সাধারণত কিছু সুনির্দিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা ও আচরণের মাধ্যমে একজন ডাক্তার, নার্স বা অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের তত্ত্বাবধানে থেকে রোগীদের প্রাথমিক যত্ন ও পরিচর্যা প্রদানের কার্যক্রমকে বুঝানো হয়ে থাকে। আর যিনি এই প্রাথমিক যত্ন প্রদানের কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন তাকে বলা হয় পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান বা কেয়ার গিভার বা সেবা প্রদানকারী। পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক বা সেবা প্রদানের এই ধারণাটি আমাদের দেশে তুলনামূলক নতুন, কিন্তু উন্নত বিশ্বে এটি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান যেকোনো বয়সের পেশেন্ট বা রোগী নিয়ে কাজ করে থাকেন। তবে এই সেবা প্রদানের কাজটি অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে একটু বেশিই প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে। বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশিদিন বেঁচে থাকছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ ও ব্যাধি। বিশ্বায়নের এই যুগে ক্রমবর্ধমান এই বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সাধারণ সেবা দেওয়ার মত সময় অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের হাতে থাকে না। এই জন্য অসুস্থ রোগী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক বা কেয়ারগিভিং সেবা একটি অপরহার্য্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য হচ্ছে একজন ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতা বাঁ ভালো থাকার (ওয়েলবিং) একটি পূর্ণাঙ্গ অবস্থা; কেবলমাত্র রোগ কিংবা দূর্বলতা না থাকাই নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই সংজ্ঞানুযায়ী, একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের চারটি দিক রয়েছে। যেমন-
১। শারীরিক: শরীরের বিভিন্ন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ শারীরিক স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মানব দেহের গঠন ও কার্যক্রমকে যথাক্রমে এনাটমি ও ফিজিওলজি নামে অবহিত করা হয়। যে ব্যক্তির শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো আছে তার শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং প্রক্রিয়াগুলো ভালোভাবে কাজ করছে বলা যায়। এটি শুধুমাত্র রোগের অনুপস্থিতির কারণেই নয়। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম সবই শারীরিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অবদান রাখে। শারীরিকভাবে সুস্বাস্থের অধিকারী একজন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং প্রত্যাহিক জীবনের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড সাধারণত নিজে নিজেই সম্পাদন করতে পারেন।
২। মানসিক: মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যের এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি তার নিজের সক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপের সাথে মোকাবিলা করতে পারে এবং উৎপাদনশীল এবং ফলপ্রসূভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে তার সামাজিক গোষ্ঠী বা কমিউনিটিতে কার্যকরভাবে অবদান রাখতে সক্ষম হয়।
৩। সামাজিক স্বাস্থ্য: সামাজিক স্বাস্থ্য বলতে সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গঠন ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত হবার ও অবদান রাখার জন্য আমাদের ব্যক্তিগত সক্ষমতাকে বুঝায় এটি বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে আমরা কতটা স্বাচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে পারি তার সাথেও সম্পর্কযুক্ত। সামাজিক সম্পর্ক আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৪। আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য: আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য বলতে একটি অতিমানবীয় শক্তির উপর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করে বিভিন্ন কর্মকান্ড ও আচরণের মাধ্যমে একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনের সামগ্রিক বিষয়কে বুঝানো হয় । আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক দিকগুলোর মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে।
স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করতে গেলে একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানকে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কিছু পরিভাষা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। এছাড়াও স্বাস্থ্য সেবায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দের সংক্ষেপিত রূপ বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শব্দসমূহ সুনির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। কোনো শব্দ যদি ভুলভাবে ব্যবহার কিংবা ব্যখ্যা করা হয়, এর পরিণতি ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু করে রোগীর মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। এইজন্য এই সকল শব্দ ও পরিভাষা খুবই সতর্কতার সাথে প্রয়োগ ও ব্যাখ্যা করা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করার পূর্বশর্ত। চিকিৎসাশাস্ত্রে যেকোনো শব্দ মূলত দুই, তিন বা তার বেশি অংশে গঠিত। যেমন:
প্রিফিক্স | রুট | সাফিক্স |
একটি শব্দাংশ যেটি শব্দমূলের পুর্বে বসে তার অর্থ পরিবর্তন করে থাকে। | রুট হলো একটি শব্দাংশ যেটি শব্দটির মূল অর্থ ধারন করে থাকে। প্রিফিক্স ও সাফিক্সের মাঝের অংশটুকুই হলো মুলত রুট বা শব্দমুল। | সাফিক্স শব্দমূলের পরে বসে এর অর্থ পরিবর্তন করে থাকে । সাফিক্স ও প্রিফিক্স সাধারণত একাকী ব্যবহৃত হয়না। |
যেমন: প্রিফিক্স Dys (Difficult) এবং শব্দমূল pnea ( breathing) এর সমন্বয়ে আমরা পাই Dyspnea (ডিসনিয়া) যার অর্থ difficulty breathing বা শ্বাসপ্রশাসে জটিলতা। আবার, মাস্ট বা mast (স্তন) শব্দমূল সাফিক্স ectomy (কেটে) এর সাথে সংযুক্ত হয়ে তৈরি হয় mastectomy, যার অর্থ হলো স্তন অপসারণ করা। এভাবে সচরাচর ব্যবহৃত হয় এরকম কিছু স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা সম্পর্কিত কিছু পরভাষার অর্থ বুঝা ও প্রয়োগ করা একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের জন্য অপরিহার্য।
মেডিকেল এরিয়া | শব্দমূল উদাহরণ |
Agents of Infection- Fungi | 'myc' meaning 'fungus' as in 'mycosis' |
Body Fluids- Saliva | ‘sial’ meaning ‘saliva' as in 'sialogram' |
Body structure or anatomy-regions of the body | 'pneumon' meaning 'lung' in 'pneumonia' |
Chemical compounds- sugar | 'gluc' meaning 'sugar' as in 'glucose ' |
Colours | 'leuk' meaning 'white' as in ‘leukomia’ |
Physical factors- temperature | 'therm' meaning ‘heat’ as in 'thermometer ' |
Prefix | Meaning | Prefix | Meaning | Suffix | Meaning |
a-or-an | without | hypo- | deficiency | algia | Pain |
ab- | away from | inter- | between | cele | Swelling |
ad- | towards | intra | inside | dema | Swelling |
anti | against | pan- | all | Ectomy | Surgical removal |
asthen | weakness or lack | poly | Many | ism | Condition |
bi | two | post | After or behind | itis | Inflammation |
endo | within | pre | before | osis | Disease or condition |
edem- | Swelling | sub | Below | pathy | Disease |
epi | upper | Super/supra | Above | Sclerosis | Hardening |
hyper | Excessive | trans | Across |
এ সংশ্লিষ্ট কিছু উদাহরণ নিম্নের ছকে উল্লেখ করা হলো:
মূল শব্দ | বাংলা উচ্চারণ | প্রায়োগিক অর্থ |
Tachycardia | ট্যাকিকার্ডিয়া | স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হৃদস্পন্দন |
Bradycardia | ব্র্যাডিকার্ডিয়া | স্বাভাবিকের চেয়ে কম হৃদস্পন্দন |
Hypertension | হাইপারটেনশন | স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তচাপ |
Hypotension | হাইপোটেনশন | স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তচাপ |
Polyuria | পলিইউরিয়া | স্বাভাবিকের চেয়ে প্রশাবের পরিমাণ বেশি হওয়া |
Oliguria | অলিগুরিয়া | স্বাভাবিকের চেয়ে প্রশাবের পরিমাণ কম হওয়া |
Hyperthermia | হাইপারথার্মিয়া | শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া |
Hypothermia | হাইপোথার্মিয়া | শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া |
Asthma | এজমা | হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট |
Acute | একিউট | রোগের তাৎক্ষণিক তীব্র অবস্থা |
Chronic | ক্রনিক | রোগের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা |
Lungs | লাংস | ফুসফুস |
Heart | হার্ট | হৃৎপিণ্ড |
Kidney | কিডনি | বৃক্ক |
Brain | ব্রেইন | মস্তিষ্ক |
Liver | লিভার | যকৃত |
Stomach | স্টোমাক | পাকস্থলি |
শরীরের অবস্থান বর্ণনা করার জন্য বিশেষ কতগুলো পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। যেমন:
|
|
Abbreviation বা সংক্ষেপিত শব্দ হলো চিকিৎসা সম্পর্কিত পরিভাষার সংক্ষিপ্ত রূপ যেটা কোনো কিছু লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সময় ও স্থান সেইভ করে। এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য শব্দ সংক্ষেপ ব্যবহার করতে হয়। সঠিক শব্দ জানা না থাকলে অনুমানের উপর ভর করে না লিখে তার পূর্ণ রূপ লেখতে হয় যাতে করে সঠিক যোগাযোগ নিশ্চিত হয়। সাধারণত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীকে ওষধ খাওয়াতে গেলে প্রেসক্রিপশনে থাকা নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রয়োগ করার জন্য শব্দ-সংক্ষেপ জানা অতীব জরুরি। বহুল ব্যবহৃত কিছু মেডিক্যাল এব্রেভিয়েশন হলো:
সংক্ষেপিত রূপ | পুর্ণ রূপ | সংক্ষেপিত রূপ | পুর্ণ রূপ |
BID | Twice a day | NaCl | Sodium Chloride |
TDS | three times a day | DM | Diabetes Mellitus |
Ac | before meals | DOB | Date of Birth |
Amp | Ampule | ENT | Ear, Nose, Throat |
Ant | Anterior | HTN | hypertension |
BMI | Body Mass Index | Hx | history |
BP | Blood Pressure | Inj. | Injection |
RBS | Random Blood Sugar | IM | Intramascular |
FBS | Fasting Blood Sugar | IV | Intravenous |
C.C. | Chief Complaint | SC | Sub cutenous |
C/O | Complaints of | Mm of Hg | Milimeters of Mercury |
C&S | Culture and Sensitivity | mMol | Mili mole |
CBC | Complete Blood Count | Rx | Prescription |
Cap. | Capsule | Syr | Syrup |
Tab. | Tablet | Tsp | Teaspoon |
cc | Cubic Centimeter | RBC | Red Blood Cell |
Cm | Centimeter | WBC | White Blood Cell |
CNS | Central Nervous System | Mcg | microgram |
XR | X-ray | NS | Normal Saline |
CXR | chest x-ray | ICU | Intensive Care Unit |
পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানকে কাজ করতে হয় একটি হেন কেয়ার টাম বা স্বাস্থ্য সেবা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে। এই দলটি গঠিত হয় ক্লায়েন্ট বা সেবা গ্রহীতা ব্যক্তি, তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্য এবং স্বাস্থ্য সেবা দানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি বা পেশাজীবীর সমন্বয়ে।
স্বাস্থ্যসেবা দানকারী দলের প্রত্যেকেরই আছে সুনির্দিষ্ট কিছু বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতা এবং তারা প্রত্যেকেই তাদের দলীয় উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়নের জন্য অবদান রেখে থাকেন, যা হলো একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা প্রদান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রোগীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা প্রদান করা। স্বাস্থ্য সেবা দলের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে ‘পেশেন্ট বা রোগী বা ক্লায়েন্ট' এবং বাকি সদস্যরা প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো সম্পাদন করে থাকে। একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের জন্য স্বাস্থ্য সেবা দলের বিভিন্ন সদস্যদের সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচের ছকে এ সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:
স্বাস্থ্য সেবাদানকারী দলের সদস্য | প্রধান কর্তব্যসমূহ |
ডাক্তার | রোগীর রোগ নির্নয়ের কাজটি করে থাকেন, চিকিৎসা ও ঔষধের নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন, মেডিক্যাল অর্ডার দিয়ে থাকেন এবং মেডিক্যাল কেয়ারের সামগ্রিক কাজটি তদারকি করে থাকেন। একজন ডাক্তারের বিশেষায়িত প্র্যাকটিসের ধরন বহুবিধ হতে পারে যেমন: কার্ডিওলোজিষ্ট, নিউরোলোজিষ্ট, বা ইউরোলোজিষ্ট, সার্জন, সাইকিয়াট্রিষ্ট বা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ প্রভৃতি। |
রেজিস্টার্ড নার্স | করা ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নার্সিং সেবা প্রদান করা, নার্সিং ও অন্যান্য অধীনস্ত স্বাস্থ্য সেবা সদস্যদের কাজের তদারকি করা। ডাক্তারের ন্যায় একজন নার্সেরও বিশেষায়িত সেবার বিভিন্ন ধরন হতে পারে; যেমন আইসিইউ নার্স, মেনটার হেল্থ এন্ড সাইকিয়াট্রিক নার্স, পেডিয়াট্রিক নার্স প্রভৃতি |
ফিজিওথেরাপিষ্ট | শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রিত নড়চড়া বা ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীর শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা |
স্পীচ থেরাপিষ্ট | রোগীর কথা বলা, চাবানো বা গলধকরণের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা। |
অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট | রোগীর প্রাত্যহিক জীবনের কর্মকাণ্ড নিজে নিজের সম্পাদন করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট থেরাপি বা কর্মসূচি প্রদান করা। |
ডায়েটিশিয়ান | রোগীর চাহিদা ও খাদ্য-পুষ্টির প্রয়োজন অনুযায়ী ডায়েট প্ল্যান করে থাকেন যেটা রোগীকে সেরে উঠতে বা সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। |
সোশ্যাল ওয়ার্কার | একজন পেশাজীবী যিনি রোগীর প্রাত্যহিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে রোগীকে সামাজিক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষম রাখতে ভূমিকা রাখান। |
সাইকোলোজিষ্ট | মানসিক রোগ নির্নয় ও প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের কাজটি করে থাকেন। |
ফার্মাসিষ্ট | ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীকে ঔষধ প্রদানের কাজটি করে থাকেন এবং রোগীকে ওষধ সেবনের পদ্ধতি, এর কার্যকারিতা ও সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় হেল্থ এডুকেশন দিয়ে থাকেন। |
প্যাথোলোজিষ্ট | ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর রোগ নির্নয়ের জন্য বিভিন্ন ল্যাব টেস্টের কাজটি করে থাকেন এবং রোগ নির্নয়ে ডাক্তারকে সহযোগীতা করে থাকেন। |
একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান স্বাস্থ্য সেবার অনেক জায়গায় কাজ করতে পারেন। সেবার ধরন অনুযায়ী এগুলো অনেক রকমের হতে পারে। সকল সেটিংসেই পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের কাজের ধরন মোটামুটি একই রকম। যেমন :
হাসপাতাল বা ক্লিনিক : হাসপাতাল বা ক্লিনিক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিছু কিছু হাসপাতাল হচ্ছে জেনারেল, যেখানে সবধরনের রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। আবার বিশেষায়িত হাসপাতালে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সেবা দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ; মেডিসিন, | সার্জারি বা অপারেশন সংক্রান্ত, কার্ডিওলোজি বা হৃদযন্ত্র সম্পর্কিত, | ইমারজেন্সি বা জরুরি সেবা, ইনটেনসিভ কেয়ার বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, সাইকিয়াটিক বা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, সেটার্নাল ও চাইচ্চ হেলুন বা না ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রভৃতি। | |
ডাক্তারের চ্যাম্বার: ডাক্তারগণ সাধারণত তাদের বিশেষায়িত দক্ষতার ভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকের পাশাপাশি ব্যক্তিগত চ্যাম্বারেও রোগী দেখে থাকেন। এসকল ক্ষেত্রে রোগীর বিভিন্ন শারীরিক ভাইটাল সাইন্স বা অত্যাবশ্যকীয় লক্ষণসমূহ পরিমাপ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। | |
নার্সিং হোম: নার্সিং হোম হল বয়স্ক বা কোনো শারীরিক বা মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের আবাসিক যত্ন প্রদানের একটি সুবিধাস্থল। নার্সিং হোমগুলোকে দক্ষ নার্সিং সেবা কেন্দ্র, দীর্ঘমেয়াদী যন্ত্র প্রদান কেন্দ্র, গুড্ড হোম, এসিস্টেড লিভিং ফেসিলিটি, বিশ্রামের জ্বর, নিরাময় হোম হিসাবেও উল্লেখ করা যেতে পারে। নার্সিং হোমের ধারণাটি আমাদের দেশে এখনো প্রচলিত নয়, তবে উন্নত বিশ্বে এটি বহুল পরিচিত। | |
বৃদ্ধাশ্রম বা ওল্ড হোম: ওল্ড হোম হল এমন একটি জায়গা যেখানে বয়োঃবৃদ্ধগণের যত্ন করা হয়, যারা সাধারণত নিজেদের স্বাভাবিক কার্যাবলি শারীরিক ঘুমতার কারণে আগের মত নিতে পারেন না তাদের পরিচর্যা করা হয়। এ ধরনের সেবাকেন্দ্র আমাদের দেশেও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। | |
হোম কেয়ার সেটিংস: বর্তমানে অনেক ব্যক্তিই নিজের বাড়িতে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন। হোমকেয়ার এজেন্সিগুলো ক্লায়েন্টের প্রয়োজন অনুযায়ী সব ধরনের বয়সের মানুষের জন্যই বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে মূলত সার্বক্ষণিকভাবে একজন কেয়ারপিভারের মাধ্যমে রোগী বা ক্লায়েন্টকে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি ডাক্তার বা নার্সের মাধ্যমে প্রয়োজन অনুযায়ী বিশেষায়িত সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এই ধারণাটি খুবই সাম্প্রতিক হলেও অল্প কদিনেই এর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর | সময়কাল থেকে বহু হোম কেয়ার এজেন্সি এ ধরনের সেবা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেছে, যেখানে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করার জন্য ব্যাপক সংখ্যক কেয়ারগিভারের চাহিদা রয়েছে। | |
ডে-কেয়ার সেন্টার: ডে কেয়ার সেন্টার হলো সাধারণত এমন একটি সেবা প্রদান কেন্দ্র যেখানে কর্মজীবি বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাকে রেখে চাকুরী বা অন্যান্য কাজ করে থাকে। এ ধরনের সেবা কেন্দ্রে বিভিন্ন বয়সী বাচ্চাদেরকে গোসল করানো, খাবার খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো এরকম নানারকম কাজ সম্পাদন করতে হয়। খেলাধুলার মাধ্য েবাচ্চাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা করার পাশাপাশি বাচ্চাদের সার্বিক যন্ত্রে কেয়ারগিভার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। | |
হস্পাইস কেয়ার সেন্টার: হস্পাইস (বা হস্পিস) ফেরার সেন্টারে অসুস্থ ব্যক্তির যত্ন, স্বাচ্ছন্দ ও জীবন মানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে সেবা প্রদান করা হয়। এরূপ কোনো কোনো সময় কোনো গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ওষধ বা অন্য কোনো উপায়ে রোগ নিরাময় সম্ভব হলে তার মৃত্য প্রক্রিয়াটিকে সহজ ও সহনশীল করার জন্য এ ধরনের সেবা প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বে চালু তাছে। আমাদের দেশেও এটির প্রচলন আস্তে আস্তে শুরু হচ্ছে যেখানে প্রচুর সংখ্যক কেয়ারগিভারের প্রয়োজন রয়েছে। |
হোম কেয়ার সেটিংসে অসুস্থ ব্যক্তিকে সেবা দেওয়ার জন্য কেয়ারপিভারকে বিশেষ কিছু বিষয়ে নজর দিতে হয়৷ বাড়িতে রোগীকে আরাম ও বিশ্রাম দেওয়ার জন্য কোলাহলমুক্ত, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা দরকার। আর সে কারণেই রোগীর জন্য আলো বাতাস পূর্ণ, স্বাস্থ্যসম্মত একটি পৃথক কক্ষের প্রয়োজন হয়। রোগীকে নির্দিষ্ট কক্ষে রেখে তার উপযুক্ত সেবা শুষা করতে পারলে রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতি, রোগমুক্তি আরোগ্য, আরাম অথবা উপশম করা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
রোগীর কক্ষের সাজসরঞ্জাম: রোগীর কক্ষটি খোলামেলা ও ছিমছাম হলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র ও সাজসরঞ্জাম রোগীর কক্ষে রাখা উচিৎ নয়। শুধুমাত্র রোগীর উপযুক্ত পরিচর্যা ও প্রাত্যহিক জীবনে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নির্দিষ্ট স্থানে পুজিয়ে রাখতে হয়, যাতে সহজেই তা হাতের কাছে পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
রোগীর কক্ষের ব্যবস্থাপনার মধ্যে প্রথমে কক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কক্ষের আসবাবপত্র, রোগীর পোষাক-পরিচ্ছদ, বিছানা, বালিশ, চাদর সবকিছুই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখা দরকার। পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে সহজে রোগ নিরাময় বা আরামদায়ক অবস্থা নিশ্চিত হয়। অপরদিকে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ রোগীর জন্য মোটেও নিরাপদ নয়; এটি রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর। রোগীর ঘর প্রতিদিন ফিনাইল বা ডেটল পানি দিয়ে ভালো করে মুছতে হবে। রোগীর ব্যবহৃত প্লেট, গ্লাস, বেডপ্যান ইত্যাদি সরঞ্জাম প্রতিদিন ডিশ পাউডার ও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে শুকনো করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। কক্ষের দরজা ও জানালায় সাদা ও হালকা রঙের পর্দা ব্যবহার করলে ভালো হয়। পর্দা ব্যবহার করলে বাইরের ধুলাবালি ও কড়া রোদ কক্ষে প্রবেশ করতে পারেনা। রোগীর ব্যবহৃত প্রতিদিনের ময়লা কাপড়গুলো প্রতিদিন ভালোভাবে ধুয়ে শুকাতে হবে। এছাড়া বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, মশারি, তোয়ালে বা গামছা, রুমাল ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। দরজা ও জানালার গ্রিল ডেটল পানি দিয়ে মুছতে হবে। রোগীর ব্যবহারের লেপ, তোষক, কম্বল, কাঁথা ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করার জন্য মাঝে মাঝে রোদে দিতে হবে। রোগির মলমূত্রাদি যথাসম্ভব দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। রোগীর কক্ষ সংলগ্ন বাথরুম, টয়লেট প্রতিদিন ফিনাইল, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত রাখতে হবে। মেঝে পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত রাখতে হবে। রোগীর কক্ষে যেন মশা-মাছির উপদ্রব না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। রোগীর কক্ষ ও বসবাসের পরিবেশ ভালো হলে তা রোগীর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠার জন্য সহায়ক হয়।
স্বাস্থ্য খাত একটি রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। বলা হয়ে থাকে, যে দেশের জনগণ স্বাস্থ্যের দিক থেকে এগিয়ে, সে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে গতিশীল। হেল্থ কেয়ার সিস্টেম বলতে স্বাস্থ্য চাহিদা মেটাতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সম্পদের একটি নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন ও ব্যবস্থাপনাকে বুঝানো হয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সরকারি খাতে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা এবং ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। এটি বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সামগ্রিক কার্যাবলি পরিচালনা করে থাকে। এর অধীনস্ত কয়েকটি অধিদপ্তরের নাম হলো; স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, মেডিকেল শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর প্রভৃতি। সরকারি খাতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মূলত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। যথা: প্রাইমারি বা প্রাথমিক, সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক ও টারশিয়ারি বা প্রান্তিক । এই তিনটি পর্যায়ে আছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান যেখানে একজন ব্যক্তি তার প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারে। অনেক সময় স্বাস্থ্য সমস্যার জটিলতার কারণে একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন পর্যায়ের সেবাও গ্রহণ করতে হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশে তিন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। যথা: গ্রাম্য পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক্স, ইউনিয়ন পর্যায়ে আছে ইউনিয়ন সাব-সেন্টার এবং উপজেলা বা থানা পর্যায়ে রয়েছে উপজেলা হেল্থ বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এরপর, জেলা পর্যায়ে আছে জেলা সদর হাসপাতাল যেগুলোকে বলা হয় মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। জেলা হাসপাতালসমূহের সেবা দানের পরিধি ও ব্যবস্থাপনা প্রাথমিক পর্যায়ের সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে একটু বিস্তৃত। আবার টারশিয়ারি বা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে চিত্রের সাহায্যে সহজেই বুঝা যায়ঃ
একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিক রোগীর প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালসমুহে সাধারণত সব ধরনের রোগিকেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। একইভাবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতেও সব ধরনের রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বিভাগীয় পর্যায়ের বিশেষায়িত বা স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালসমূহে নির্দিষ্ট ধরনের রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয় যেমন: জাতীয় মানসিক হাসপাতালে শুধু মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আবার একইভাবে, জাতীয় কিডনি হাসপাতালে শুধুমাত্র কিডনী রোগী, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে শুধুমাত্র হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে সেবা দেওয়া হয়। একইভাবে নাক-কান-গলা, ফুসফুস ও যন্ত্র, মস্তিষ্ক প্রভৃতি নির্দিষ্ট অন্নগান ৰা অঙ্গ সংশ্লিষ্ট রোগের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। আবার মেডিকেল কলেজ বা জেনারেল হাসপাতালসমূহে বিশেষায়িত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ সকল ধরনের রোগীর জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রভৃতি। নিম্নে একটি বৃহৎ হাসপাতালে যে ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে তার একটি তালিকা প্রদান করা হলো:
যেকোনো সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালেই জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যায় আগত রোগীদের তাতক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি বা জরুরি বিভাগ চালু থাকে। এখানে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংক্ষক ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী সবসময়ই থাকতে হয়। যেকোনো হাসপাতালের সবচে' ব্যস্ততম বিভাগ হলো এই জরুরি বিভাগ। এখানে বিভিন্ন জরুরি সমস্যা নিয়ে রোগী আসলেও সড়ক বা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় আত ব্যক্তিরাই বেশি আসেন। এছাড়াও হার্ট এটাক, ব্রেইন স্ট্রোক এধরনের রোগীও এসে থাকেন।
বহির্বিভাগ সেবা একটি হাসপাতাদের নিয়মিত সেবাদান পদ্ধতি। এখানে রোগীরা তাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে এসে টিকেট কাটার পর নির্দিষ্ট ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য লাইনে অপেক্ষা করে। সাধারণত যে সকল সমস্যা আপাতত তেমন ইমার্জেন্সি নয় সেগুলোই বহির্বিভাগে দেখানোর উপযোগী। বহির্বিভাগে রোগীর জন্য কোনো শয্যা বা রাত্রিযাপনের ব্যবস্থার প্রয়োজন পরেনা। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী যদি কোনো রোগীর ভর্তির প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে অন্তঃবিভাগ বা ইনডোর সেবার জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়। কিংবা কিছু নির্দেশনা গ্রহণ করে রোগী বাসায় চলে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফলো আপ ভিজিটে আসেন।
হাসপাতাল অন্তঃবিভাগ: ভর্তিকৃত রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় এখানে। রোগীর সমস্যা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ইনডোর বা অন্তঃবিভাগ রয়েছে। যেমন:
এছাড়াও থাকে প্যাথোলজি বিভাগ যেখানে রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন নমুনা পাঠানো হয়। ফার্মেসি ডিপার্টমেন্ট থাকে যেখানে রোগীদের জন্য ওষধ-পত্র পাওয়া যায়। রোগীদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার জন্য থাকে ফুড এন্ড ডায়েট ডিপার্টমেন্ট। বড় বড় সরকারি হাসপাতাল গুলোতে অসহায় ও দুঃস্থ রোগীর আর্থিক সহায়তার জন্য থাকে সমাজ কল্যাণ বিভাগ যেগুলো সাধারণত বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীন পরিচালিত।
যেকোনো হাসপাতালেই রোগীকে সেবাদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি আছে যেগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে যেকোনো ব্যক্তি বা রোগী বাংলাদেশের যেকোনো হাসপাতালে সেবা নেয়ার অধিকার রাখা। কোনো রোগী হাসপাতালে আসলে আনুসঙ্গিক কাজ-কর্ম সারার পর ডাক্তার যখন রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখনি মূলত চিকিৎসা সম্পর্কিত মুল কাজটি আরম্ভ হয়। চিকিৎসা প্রথমেই রোগীর সমস্যা শুনেন, কিছু প্রশ্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেন এবং একটা সাময়িক বা প্রভিশনাল ভায়াগনোসিস করে থাকেন। এর উপর ভিত্তি করে ডাক্তার প্রয়োজন ভেদে বিভিন্ন উন্নত পরীক্ষা নিরীক্ষার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। পরিপূর্ণভাবে রোগ নির্ণয়ের পরই ভাষার নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা দিয়ে থাকেন যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারিত হয়।
রোগীর ইতিহাস গ্রহণ, রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনা
একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান কর্মস্থলে অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজের অন্যান্য উপাদান সমূহের পাশাপাশি রোগীর নিরাময় মূলক সেবাসমূহ প্রদান করে থাকেন। তিনি কর্মস্থল-এ অবস্থান করে সাধারণ রোগসমূহ নির্ণয় ও ইহার ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনে রেফার করতে সক্ষম হবেন। সেবা গ্রহীতার অসুবিধা সমূহের জন্য প্রথমে তাকে রোগ নির্ণয় করতে হয়। এই জন্য রোগীর পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সবকিছুই ধারাবাহিকভাবে করা হলে রোগ নির্ণয় করা সহজতর হবে। পদক্ষেপ সমূহ উল্লেখ করা হল:
১. রোগীর ইতিহাস গ্রহণ
২. রোগীর শারীরিক পরীক্ষা
(ক) রোগীর সাধারণ পরীক্ষা ও
(খ) রোগীর সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা
৩. ল্যাবরেটরি পরীক্ষা: যখনই রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন তখন সেবা প্রদানকারী রোগের ব্যবস্থাপনা দিবেন। ব্যবস্থাপনা দিতে সমর্থ না হলে তিনি উপযুক্ত কোনো হাসপাতাল/ ক্লিনিক বা চিকিৎসকের নিকট প্রেরণ করবেন এবং পরবর্তীতে রোগীর চিকিৎসার জন্য ফলোআপ করতে হবে।
রোগীর সীমিত নিরাময়মূলক সেবা প্রদান পদ্ধতি:
১) রোগীর ইতিহাস গ্রহণ: হাসপাতালে প্রথম যখন একজন রোগী আসেন তখন চিকিৎসক প্রথমেই রোগীর পূর্ণ ইতিহাস নেন। তার অসুখটি কীভাবে হলো, কখন থেকে হলো, কতদিন ধরে আছে- সম্পূর্ণ ইতিহাসটি তার কাছ থেকে নেওয়া হয়। এগুলোকে বলা হয় রোগীর চীফ কমপ্লেইন বা মূল সমস্যা নেওয়ার পর পারিবারিক ইতিহাস নেওয়া হয়। জানা হয়, তার পরিবারে এ সমস্ত রোগ আছে কি না। এরপর তার অতীত ইতিহাস নেওয়া হয়। এই রোগটি তার আগে কখনো ছিল কি না, সেটি জানা হয়। তার মেডিক্যাল, সার্জিকেল দুটো ইতিহাসই নেওয়া হয়। নারী হলে তার নারীস্বাস্থ্যের ইতিহাসটিও নেওয়া হয়। তার পেশাগত ইতিহাসও নেওয়া হয়। সে ধূমপান করে কি না, মদ্যপান করে কি না, সেগুলোও জানা হয়। অথবা মাদকাসক্ত কি না সেগুলোও জানা হয়। এগুলো নেওয়ার পর জিজ্ঞেস করা হয়, আরো কোনো অসুবিধা আছে কি না।
২) শারীরিক পরীক্ষা: এরপরের পর্যায় হলো, রিভিউ অব সিস্টেম। প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা দেখা হয়। যদি রোগী কাশি নিয়ে আসে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয় অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস বা অ্যালার্জি ছিল কি না। রিভিউ অব সিস্টেমের (পদ্ধতির পর্যবেক্ষণ) ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে যাওয়া হয়। শুরু হয় চোখ দিয়ে। তার চোখে কোনা অসুবিধা আছে কি না। দৃষ্টি ঝাপসা হওয়ার সমস্যা আছে কি না। তার মাথাব্যথা রয়েছে কি না। তার প্রতিটি সিস্টেম (পদ্ধতি) অনুযায়ী অবস্থা জিজ্ঞেস করা হয়।
রোগীর সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা: রোগীর প্রধান অসুবিধা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পরীক্ষাসমূহ।
উদাহরণ-১: পেটে ব্যথার ক্ষেত্রে পেট পরীক্ষা করতে হবে; পেটের কোথায় ব্যথা- নাভীর চারদিকে কিংবা তলপেটে; পেট ফুলে আছে কি না, টেন্ডার কিনা ইত্যাদি।
উদাহরণ-২: শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে - বুক পরীক্ষা (ফুসফুস ও হৃৎপিন্ড) করতে হবে।
উদাহরণ-৩: কোনো ক্ষত থাকলে (ক্ষতের পরীক্ষা করা, ক্ষত হতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না, ক্ষত পরিষ্কার আছে কি না, ক্ষতে কোনো ইনফেকশন সংক্রমণ চিহ্ন আছে কি না, ক্ষতে কোনো বাহ্যিক বস্তু বা Foreign Body আছে কিনা) ।
ব্যবস্থাপনা: ব্যবস্থাপনার ৪টি পর্যায়, যথা :
১। সাধারণ ব্যবস্থাপনা যেমন- রোগীর বিশ্রাম ও রোগের কারণ অনুযায়ী খাদ্য নির্ণয়
২। লক্ষণ ও উপসর্গের ব্যবস্থাপনা। যেমন- ব্যথার জন্য ব্যথানাশক বড়ি
৩। নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা- রোগের কারণ নির্ণয়পূর্বক চিকিৎসা প্রদান। যেমন- কৃমিনাশক বড়ি।
৪। জটিলতার ব্যবস্থাপনা। যেমন- কৃমির জন্য যদি ইন্টেসটিনাল অবস্ট্রাকশন বা অস্ত্র বাধাগ্রস্ত হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে উন্নতর চিকিৎসা প্রদান।
চিকিৎসকগণ এভাবে রোগের ইতিহাস গ্রহণ করার মাধ্যমে উপসর্গসমূহ এবং পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলসমূহ বিশ্লেষণ পূর্বক সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করে বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান দিয়ে থাকেন। এই সামগ্রিক কাজটি এক জনের নেতৃত্বে হলেও কাজটি কখনোই একা করা সম্ভব হয়না। নার্স, প্যাথোলোজিষ্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী সবাই মিলে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম হিসেবে এই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করতে হয়। ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পেশাজীবিদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদান করে এবং নিজেদের কার্যপরিধিতে উল্লেখিত সেবাসমূহ রোগীদেরকে সুচারুরূপে প্রদান করার মাধ্যমে কেয়ারগিভার এই স্বাস্থ্যসেবা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান সাধারণত একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তার বা নার্স বা অন্যান্য পেশাদার স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে একজন অসুস্থ, আহত বা অক্ষম (ডিসেবল্ড) ব্যক্তিকে প্রাথমিক ও মৌলিক সেবা প্রদানের কাজ করে থাকে। পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করার একটি বড় অংশ হচ্ছে অসুস্থ, আহত বা অক্ষম ব্যক্তিকে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদান করা যেমন; খাওয়ানো, গোসল করানো, জামা-কাপড় পরিধান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সহায়তা প্রদান করা টয়লেট ব্যবহার ও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সহায়তা প্রদান করা প্রভৃতি। এছাড়াও, চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী বেসিক হেল্থ স্ক্রিনিং (Health Screening) যেমন; ভাইটাল সাইন, শরীরের উচ্চতা ও ওজন প্রভৃতি পরিমাপ করা ও তত্ত্বাবধায়কের নিকট রিপোর্ট করা। প্রাতিষ্ঠানিক সেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারী দল বা হেল্থ কেয়ার টিমের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে রোগীর ভর্তি ও ছাড়পত্র পূরণ, রোগী স্থানান্তর ও একটি নিরাপদ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিতকরণে একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশয়ানের গুরুত্ত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। হোম বেড কেয়ারের ক্ষেত্রে এই কাজগুলো করতে হয় বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে। যেহেতু একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানকে সাধারণত একজন রোগীর সাথে অনেকখানি সময় ব্যয় করতে হয়, তাই রোগীর কোনো বিশেষ পরিবর্তন, অসুবিধা বা অন্যান্য বিষয় প্রথম নজরে আসতে পারে একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানেরই। যেমন, রোগীর ঘুমের সমস্যা, ক্ষুদামন্দা হওয়া কিংবা পরের দিনের বিশেষ কোনো কাজ যেমন, ডাক্তারের কাছে যাওয়া, কিংবা রোগ নির্নয়ের স্যাম্পল বা নমুনা দেওয়ার জন্য প্যাথলজিতে যাওয়া প্রভৃতি। উক্ত কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পাদন করার মাধ্যমে একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান একজন রোগীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও আচরণ প্রকাশ পায়। পরবর্তী অনুচ্ছেদে একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের প্রাথমিক কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য লিপিবদ্ধ করা হলো, যদিও কাজের ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে এতে কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে ।
সেবাগ্রহীতার প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান অনেক বিস্তৃত কাজ করতে পারে। প্রাথমিকভাবে রোগীর বসবাসের পরিবেশের পরিষ্কার পরচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, চিকিৎসা সেবায় সহায়তা করা, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করা, রোগীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা ও ডাক্তারকে জানানো এবং সার্বক্ষণিক সাহচার্য প্রদান করা প্রভৃতি।
এ সমস্ত কাজ সাধারণত পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী সম্পাদন করে থাকে যেটিকে বলা হয় ‘কেয়ার প্ল্যান' বা যত্নের দৈনিক পরিকল্পনা। কেয়ার সুপারভাইজার বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই মূলত এই কেয়ার প্ল্যান প্রণয়ন করে থাকেন। ওল্ড হোম, হস্পিস কেয়ার বা হোম কেয়ার সেটিংস; যেখানেই কাজ করুক না কেন, যত্নের দৈনিক এই পরিকল্পনা প্রায় একই রকম। নিম্নে বৃদ্ধাশ্রম বা ওল্ড হোমের জন্য প্রণীত একটি কেয়ার প্ল্যান প্রদান করা হলো যেখান থেকে পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান তার নিয়মমাফিক কাজের তালিকা সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভ করবে।
কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে অনেক কিছুই শেখার ও করার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু, কোনো কিছু জানলেই তা প্রয়োগ করতে হবে এমনটি নয়। আগে দেখতে হবে উপরে উল্লেখিত কার্যতালিকার মধ্যে অথবা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ন্যস্ত কাজের মধ্যে এটি পড়ে কিনা। এমন অনেক কাজ আছে যেগুলো কেয়ারগিভারের কাজ নয় কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে করে ফেলি, কিংবা করলে রোগীর কোনো ক্ষতি হবেনা বা জবাবদিহিতা করতে হবেনা। নিচে এরকম কিছু কাজের উদাহরণ দেওয়া হলো :
কর্মক্ষেত্রে পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান একজন পেশাদার কেয়ারগিভার হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। এই পেশাগত পরিচয় সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন (সনদ) অর্জনের মাধ্যমে অর্জিত হয়। তবে, একজন পেশাজীবি কেয়ারগিভার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে কেবল প্রশিক্ষণ ও সনদই যথেষ্ট নয়। পেশাদারিত্ব বলতে সাধারণত নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ সঠিক আচরণের মাধ্যমে নিজের সর্বোচ্চ দক্ষতা দিয়ে সম্পাদন করাকে বুঝানো হয়। একজন কেয়ারগিভার তার আচার-আচরণ, যোগাযোগের দক্ষতা, পোষাক- পরিচ্ছদ, ইতিবাচক মনোভাব প্রভৃতির মাধ্যমে পেশাদারিত্বের গুণাবলি ফুটিয়ে তুলতে পারেন সহজেই। এক্ষেত্রে নিচের কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচ্য :
সময় | কাজ |
সকাল ৬.৩০-৭ টা | সকালে চা বা অন্যান্য পানীয় প্রদান করবেন। |
সকাল ৭-৮টা | নিজে পরিপাটি হয়ে মেম্বারদের সাথে কুশল বিনিময় করা এবং মনোযোগ দিয়ে তাঁর সমস্যা সকালে চা বা অন্যান্য পানীয় প্রদান করবেন। শুনবেন। সমস্যাটি তখনই সমাধানযোগ্য হলে সমাধান করবেন, না হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের নিশ্চয়তা প্রদান করবেন। মেম্বার ঘুমিয়ে থাকলে ঘুম থেকে উঠাবেন; দাঁত মাজা, হাত মুখ ধোয়া ও অন্যান্য কাজে সাহায্য করবেন; ইনসুলিন দেবেন ও ওষুধ খাওয়াবেন (ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী), বিছানা তৈরি করে দেবেন, ঘর পরিষ্কার করবেন। |
সকাল ৮- ৯:৩০টা | মেম্বারদের নাস্তা ওষুধ খাওয়াবেন। |
সকাল ৯:৩০-১১টা | নার্স এবং ফিজিওথেরাপিস্ট তাদের কাজ করবেন এবং কেয়ারগিভারগণ হোম মেম্বারদের হাল্কা নাস্তা পরিবেশন করবেন। |
সকাল ১১-দুপুর ১টা | হোম মেম্বারদের গোসল করাবেন, তাদের কাপড় ধোবেন, ফ্লোর পরিষ্কার করবেন, লন্ড্রি সার্ভিস ও রুম ক্লিনিং নিশ্চিত করবেন, ছাদে কাপড় শুকাতে দেবেন, জানলার গ্লাস ও থাই গ্লাস পরিষ্কার করবেন; টেবিল, চেয়ার, আলমারি, শেল্ফ ইত্যাদি পরিষ্কার করবেন; নিজে গোসল করবেন । |
দুপুর ১-২টা | মেম্বারদের লাঞ্চ করাবেন, ওষুধ খাওয়াবেন; ডাইনিং টেবিল পরিষ্কার করবেন |
দুপুর ২-৪টা | মেম্বারদের বিশ্রামের সময় এবং কেয়ারগিভারদের ব্যক্তিগত কাজের সময়। এই সময়টায় প্রয়োজনীয় নিজের কাজকর্ম শেষ করবেন। |
বিকেল ৪-০ : ৪-৩০টা | মেম্বারদের বিকেলের নাস্তা পরিবেশন করবেন। |
বিকেল ৪-৫:৩০টা | মেম্বারদের ছাদে পরিভ্রমণ করাবেন, কেউ লাইব্রেরি বা ইনডোরে আগ্রহি হলে তাকে সাহায্য করবেন, শুকাতে দেওয়া কাপড় আনবেন ও মেম্বারকে বুঝিয়ে দেবেন। |
বিকেল ৫:৩০-রাত ৮টা | মেম্বারদের সাথে থাকবেন, গল্প করবেন, টিভি দেখবেন। এ সময় মেম্বারদের কোনো কাজ থাকলে সহযোগিতা করবেন। |
রাত ৮টা- ৯টা | হোম মেম্বারদের রাতের খাবার খাওয়াবেন, ওষুধ খাওয়াবেন এবং ডাইনিং টেবিল পরিষ্কার করবেন। |
রাত ৯- ১০টা | মেম্বারদের সাথে থাকবেন, গল্প করবেন, টিভি দেখবেন, মেম্বারদের বিছানা তৈরি করে দেবেন, জানালা বন্ধ করবেন, দরজা বন্ধ করবেন। |
রাত ৯.৩০-১০টা | রাতের প্রয়োজনীয় পথ্য, পানীয় পরিবেশন করবেন। |
ক্লায়েন্ট বা ব্যক্তি যিনি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন, তার আছে কিছু মৌলিক অধিকার। যেমন:
এই মৌলিক অধিকারগুলো স্বাস্থ্যসেবার যেকোনো সেটিংসেই মোটামুটি একই রকম। ওল্ড হোমে এগুলোকে বলা হয় রেসিডেন্ট্স রাইট্স বা প্রবীন নিবাসীর অধিকার। সেবাগ্রহীতা রোগী হলে এগুলোকে বলা যায় পেশেন্ট্স রাইট্স বা রোগীর অধিকার; তেমনি হোম কেয়ারের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ক্লায়েন্ট্স রাইট্স। নিজের অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে একজন ক্লায়েন্ট, রোগী বা প্রবীন ও তার পরিবার তাদের চাওয়া-পাওয়া মেটাতে সচেষ্ট থাকতে পারেন। ক্লায়েন্ট ও তার স্বজনদেরকে এসকল অধিকার সম্পর্কে অবহিত এবং রক্ষা করা একজন কেয়ারগিভারের দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।
বৃদ্ধাশ্রমে নিবাসীর অধিকার সংরক্ষণে পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের করণীয়
একজন পেশাজীবী হিসেবে পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানেরও আছে কিছু মৌলিক অধিকার। যেমন:
বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে কেয়ারগিভারের চাহিদা ব্যাপকহারে বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারিতেও এটার গুরুত্ব ব্যাপক হারে উপলব্ধি করা গেছে। উন্নত প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সেবার ব্যাপক উন্নতির ফলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এটি ৭২.৮ বছর। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৭১.২ বছর আর নারীর গড় আয়ু ৭৪.৫ বছর (তথ্যসূত্রঃ বিবিএস ২০২০)। উন্নত বিশ্বে গড় আয়ু আরো বেশি। লক্ষণীয় যে, যে দেশের অর্থনীতি যত বেশি উন্নত সে দেশের গড় আয়ু সাধারণত তত বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ অতি সম্প্রতি স্বল্প উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। যার ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নতি গতিশিল হচ্ছে। এর সাথে বেড়ে যাচ্ছে মানুষের গড় আয়ু। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধাশ্রম ও হোম কেয়ারের চাহিদা। পাশাপাশি হাসপাতালে দীর্ঘমেয়াদী সেবা লাভ করছে এমন রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই বর্ধিত চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রশিক্ষিত কেয়ারগিভারের বিকল্প নেই। এর সাথে ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে দেশের বাইরেও কেয়ারগিভার হিসেবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে জাপান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এই চাহিদার শীর্ষে।
দেশ | গড় আয়ু (বছর) |
জাপান | ৮৩.৭ |
নরওয়ে | ৮২.৪ |
আয়ারল্যান্ড | ৮২.৩ |
সুইজারল্যান্ড | ৮৩.৮ |
জার্মানি | ৮১.৩ |
অস্ট্রেলিয়া | ৮৩.৪ |
হল্যান্ড | ৮২.৩ |
চিত্র: কয়েকটি দেশের নারী ও পুরুষের গড় আয়ু
নিম্নে কেয়ারগিভারের কিছু সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হলো:
আরও দেখুন...