জনাব সাইফ ভাবছেন তার কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হবে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে দেশে লকডাউন চলছে। ঘরের বাইরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তখনই তার মনে পড়ল 'সেবা' চেইন শপের কথা। প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট অফিস ও আউটলেট থাকলেও সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য ক্রয়, অর্থ আদান-প্রদান, পণ্য বিক্রয় প্রভৃতি ব্যবসায়িক কাজ অনলাইনের মাধ্যমেও করে থাকে। তাই জনাব সাইফ তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকে প্রয়োজনীয় পণ্যের অর্ডার দিলেন। এক্ষেত্রে 'সেবা' চেইন শপের অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কাজ করা ই-বিজনেসের অন্তর্ভুক্ত অন্যদিকে শুধু পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের অংশটুকু ই-কমার্সের অন্তর্ভুক্ত।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগমনে মানুষের জীবন-ধাঁচ, ক্রয়-বিক্রয় স্টাইল, ব্যবসায়ের ধরনেও পরিবর্তন আসছে। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার সময় গতানুগতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অন্যদিকে ই-বিজনেস ও ই-মার্কেটিং মানুষের জন্য এক অনন্য, অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ অধ্যায়ের আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা ই-কমার্স, ই-বিজনেস, উভয়ের মধ্যে পার্থক্যসহ এর লক্ষ্য ও উদ্ভাবন সম্পর্কে জানতে পারবে।
পুরো পৃথিবী এখন ইন্টারনেট নির্ভর। ব্যবসায়ের ধরনেও বৈচিত্র্য এসেছে। আজ থেকে দু'তিন দশক পূর্বে মানুষ যা চিন্তাও করেনি তা এখন বাস্তব। ঘরে বসেই এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়— এটিই বর্তমান বাস্তবতা। আর এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের কারণে। ব্যবসায় খাত নির্বাচন, ব্যবসায়ের সম্ভাবনা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে এখন উচ্চ শিক্ষিতরাও ভাবছেন। কেননা এখন অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চান। অনেক বিশেষজ্ঞরাই মনে করছেন আগামী সময়টা হবে ই-বিজনেস-এর। সময় ও অর্থ বাঁচাতেও ই-বিজনেস-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ অধ্যায়ের আলোচনা শেষে আমরা ই- বিজনেস-এর সুবিধা-অসুবিধা, ই-বিজনেস ও ই-কমার্সের ধারণা ও পার্থক্য, ট্রেডিশনাল ব্যবসায় ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারব।
ই-বিজনেস আমাদের পণ্য বা সেবা কেনা-বেচা সহজতর করে তুলেছে। আমাদেরকে এখন স্বশরীরে বাজারে উপস্থিত হতে হয় না। আমরা ঘরে বসেই পণ্যের কেনা-বেচা করতে পারি। ১৯৯৬ সালে ই-বিজনেস শব্দের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। International Business Machines Corporation (IBM)-এর মার্কেটিং এবং ইন্টারনেট দল প্রথম শব্দটি ব্যবহার করে।
(সূত্র: en.wikipedia.org/wiki/Electronic_business ) নতুন শতাব্দী, নবদিগন্তের সূচনা। বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় কার্যক্রমের ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতিতে ই-বিজনেস আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত শব্দ। ই-বিজনেসকে ইলেকট্রনিক বিজনেস (Electronic business) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিচে ই-বিজনেস-এর কতিপয় উপাদান তুলে ধরা হলো:
অনলাইন কমিউনিটিস বা সম্প্রদায় হলো একাধিক ব্যক্তির সমষ্টি, যারা একই ধরনের আগ্রহ (Common interest) বা উদ্দেশ্য অর্জনে একে অপরের সাথে অনলাইনে যোগাযোগ করে। একে সামাজিক বা ভার্চুয়াল সম্প্রদায়ও বলা হয় । অনলাইন কমিউনিটিস একটি তথ্য ব্যবস্থা (Information system) হিসেবে কাজ করতে পারে যেখানে সদস্যরা পোস্ট করা, আলোচনায় মন্তব্য করা, পরামর্শ দেওয়া, সহযোগিতা করা, চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া প্রভৃতি কাজ করতে পারে। ফেইসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি হলো এ ধরনের ব্যবস্থা।
ই-বিজনেস (E-business) এর পূর্ণরূপ হলো ইলেকট্রনিক বিজনেস (Electronic Business)। সাধারণ ভাষায়, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাবতীয় বিধি-বিধান অনুসরণ করে যে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে ই-বিজনেস বলে। এ প্রক্রিয়ায় পণ্য ও সেবার কেনা-বেচা ছাড়াও ক্রেতা সেবা, ফান্ড প্রসেসিং প্রভৃতি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ব্যাপক অর্থে, ই-বিজনেস হলো ইন্টারনেট, কম্পিউটার এবং ওয়েবভিত্তিক ব্যবসায় কার্যক্রম যার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পণ্য ও সেবার বিনিময় হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পর দূরবর্তী জায়গায় অবস্থান করলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করে সব ধরনের ব্যবসায়িক কাজ করা যায় ।
জেনে রাখো : ই-বিজনেস সম্পর্কে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা According to M. K. Pratt Ben Cole, “E-business (Electronic business) is the conduct of business process on the internet.” According to Chaffey and Smith, “E-business is defined as the use of electronic network for business.” |
---|
ই-বিজনেস বা অনলাইন বিজনেস মূলত এক ধরনের ব্যবসায় লেনদেন যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক দূরে থেকে, ক্রেতার সংস্পর্শে না এসেও পণ্যের বেচা-কেনা করা যায়।
উপরের আলোচনা থেকে ই-বিজনেস-এর যেসব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে সেগুলো নিম্নরূপ—
• এটা ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসায়,
• অনলাইন ব্যবসায় কার্যক্রমের নিয়ম-কানুন অনুসরণ,
• ক্রেতা-বিক্রেতার দূরত্ব,
• ক্রেতা-বিক্রেতার সরাসরি যোগাযোগ না করা।
ই-বিজনেস বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। বিষয়টি পুরো বিশ্বকে যেভাবে একটি প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়েছে, তেমনি বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যক্তিগত দূরত্ব। এটি একদিকে ক্রেতাবান্ধব, অন্যদিকে অনিশ্চয়তাপূর্ণ। অর্থাৎ, ই-বিজনেসের সুবিধা-অসুবিধা উভয় দিকই বিদ্যমান ।
বর্তমানে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। আর এ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে আধুনিককালের ব্যবসায় জগতের নতুন আবিষ্কার ই-বিজনেস। নিচে ই-বিজনেস-এর সুবিধাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
ক. ই-বিজনেসের ক্ষেত্রে ভোক্তার সুবিধাসমূহ (Consumer benefits in e-business):
১. ক্রেতা সেবা ত্বরান্বিত করা (Expedites customer service): ক্রেতারাই মুখ্য- এ ধারণাকে গুরুত্ব দিয়ে ক্রেতাদের জন্য যেকোনো সেবা তরান্বিত করা হয় ই-বিজনেস-এর মাধ্যমে। ক্রেতাদের যেকোনো সেবা দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌছে দেয়াই ই-বিজনেস-এর অন্যতম কাজ।
২. ক্রেতাবান্ধব পরিষেবা (Customer friendly service): ক্রেতারা কোন ধরনের পণ্য পেতে চায়, সে পণ্য কীভাবে পেতে পারে এবং পণ্যটি কখন কিনবে ইত্যাদি বিষয় জানা যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি। আর এ সকল তথ্য জানার পরে খুব সহজে ই-বিজনেস পদ্ধতিতে ক্রেতাদের পরিষেবা প্রদান করা যায় ।
৩. ২৪/৭ ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা (Operating activities based on 24/7 ) : ই-বিজনেস-এর অন্যতম সুবিধা হলো ক্রেতারা সপ্তাহের প্রতিদিন দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময় তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারে। অর্থাৎ, ক্রেতা তার সুবিধামতো সময়ে ই-বিজনেসের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার কেনা- বেচা করতে পারে।
৪. ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়তে সহায়তা (Assist to increase brand awareness) : ই-বিজনেস-এর মাধ্যমে ক্রেতারা সহজেই বিভিন্ন নতুন নতুন পণ্যের পরিচিতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। এক্ষেত্রে পণ্যের ব্র্যান্ড নাম সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে ক্রেতারা সহজেই তাদের পছন্দের পণ্যটি ক্রয়ের অর্ডার করতে পারে।
৫. অত্যধিক তথ্য সরবরাহ (Provid more information) : ই-বিজনেস এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ক্রেতারা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ই-বিজনেস প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের পণ্য পছন্দের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য বা সেবার ধরন, বৈশিষ্ট্য, কার্যকারিতা, মেয়াদ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য তথ্য তুলে ধরে।
৬. সহজ প্রবেশাধিকার (Easy entrance): ই-বিজনেসের মাধ্যমে যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ক্রেতারা পণ্য কেনা-বেচাসহ লেনদেন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে। ই-বিজনেসে ২৪/৭ দিনই গ্রাহকরা পণ্যের অর্ডার করতে পারে। এমনকি, সারা বছর জুড়ে একজন গ্রাহক তার ব্যালেন্স চেক করতে পারে, অর্থ প্রদান করতে পারে।
১. বিশ্বময় বাজার (Worldwide market): বর্তমান যুগ আধুনিক ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগ। এ যুগে এক দেশের পণ্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে নিমিশেই। কেননা ই-বিজনেস ওয়েবভিত্তিক বা ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় এর বাজার বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ।
২. গণ কাস্টমাইজেশন (Public customization): ই-বিজনেস প্রক্রিয়ায় খুব সহজেই গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পণ্য ও পরিষেবা তাৎক্ষণিকভাবে কাস্টমাইজ করা যায়। যেমন, ই-বিজনেস চালু হবার আগে ক্রেতারা ফোর্ড-এর মোটরগাড়ি ক্রয় করতে চাইলে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট রঙের গাড়ি অর্ডার করতে পারত না। কিন্তু ই-বিজনেস ওয়েবসাইটভিত্তিক হওয়ায় ক্রেতারা এখন সহজেই তাদের পছন্দ অনুযায়ী গাড়ি ক্রয়ের অর্ডার করতে পারেন।
৩. সময় এবং ব্যয় হ্রাস (Reducing time & cost) : ই-বিজনেস আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে টেকসই বিজনেস। এ ধরনের বিজনেসে তেমন কোনো অর্থ বা সময় ব্যয় করতে হয় না। কেননা কেউ সাহস করে উদ্যোগী হতে চাইলেই ই-বিজনেস চালু করা সম্ভব।
৪. অনলাইন সংযোগ প্রতিষ্ঠা (Establishing online conncetivity): যারা কোনো দিন অনলাইন সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা পাননি, তারাও বর্তমানে নিজ উদ্যোগে অনলাইন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। বিশ্বের সব দেশের অধিকাংশ মানুষ অনলাইন কেনা-বেচায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন সময়ে অনলাইন বা ই-বিজনেস-এর মাত্রা ঈর্ষান্বিতভাবে বেড়েছে।
৫. নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ (Attracting new customer) : ই-বিজনেস প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে যে কারো জন্য নতুন নতুন ক্রেতা আকর্ষণ করা অত্যন্ত সহজ। কেননা অনলাইনের বাজার অংশে ঢুকলেই দেশি-বিদেশি অসংখ্য ক্রেতা লক্ষ করা যায়। উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে নতুন ক্রেতা আকর্ষণে সার্চ ইঞ্জিন এবং কনটেন্টের ওপর নির্ভর করতে হয়।
১. চাকরির সুযোগ সৃষ্টি (Creating job opportunity): ই-বিজনেস একদিকে যেমন মানুষকে উদ্যোগী করে তোলে, তেমনি সমাজের কিছু লোকদের জন্য চাকরির সুযোগও তৈরি করে। যেমন, ই-বিজনেস যদি কেউ শুরু করে সেক্ষেত্রে তার কিছু মানবসম্পদের প্রয়োজন হয়। তবে এমন কিছু ই-বিজনেস প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা তাদের কর্মচারীদের বাড়িতে বসেও কাজ করার অনুমতি প্রদান করে থাকে।
২. সরকারি সেবা প্রদানের মাধ্যমে (Medium of providing government service): অনলাইন বা ই- বিজনেস প্রক্রিয়ায় জনসাধারণকে বিভিন্নভাবে সরকারি সেবা প্রদান করা যায়। যেমন— ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করা, অনলাইনে ডাক্তারের পরামর্শ দেয়া। এছাড়াও গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করাও ই-বিজনেস বা অনলাইন বিজনেস-এর আওতাভুক্ত।
৩. কার্যকর গ্রাহক সেবা (Effective customer service ) : গ্রাহকরা যখন-তখন অনলাইনে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে থাকে। কোনো গ্রাহকের কোনো প্রশ্ন থাকলেও তার উত্তর অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো যায়। ই-বিজনেসের মাধ্যমে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করা সম্ভব হয়।
৪. ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা (Crossing geographical boundaries): ই-বিজনেস মানেই
হলো পুরো পৃথিবী একটি মাত্র গ্রাম (Village)। ই-বিজনেস-এর প্রভাবে এক দেশের পণ্য বা সেবা
ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বের যেকোনো দেশে পৌঁছে যাচ্ছে।
৫. অনলাইন সেবা-শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য (Online services: education & health): ই-বিজনেস বা অনলাইন প্রক্রিয়ায় বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের বিষয় সম্পর্কে ঘরে বসেই জানতে পারছে। এছাড়া ঘরে বসেই অনলাইনে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারছে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ই-বিজনেস বিশ্বব্যাপী এক অপার সম্ভাবনা তৈরি করেছে যার দ্বারা প্রতিষ্ঠান, ভোক্তা ও সমাজ সুবিধা ভোগ করছে।
বিশ্বের উন্নত দেশের ন্যায় আমাদের প্রিয় বাংলাদেশও ই-বিজনেস কার্যক্রমে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরও ই-বিজনেস কার্যক্রমের প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে আরেকটু সময় লাগবে। কতিপয় আগ্রহী, সাহসী ও উদ্যোগী মানুষ এ ধরনের অনলাইন ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হলেও এখনো অনেক মানুষ সাহস ও সুন্দর পরিবেশের অভাবে ই-বিজনেস থেকে দূরে রয়েছে। যেকোনো নতুন ব্যবসায়ে সফল হতে একটু বেশি সময় লাগেই। ই-বিজনেস যেহেতু ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায় সেহেতু ইন্টারনেটের গতি সন্তোষজনক না হলে এ ব্যবসায়ের প্রতি অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে না। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে সবার জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে। তারপরও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সন্তুষ্ট নয়। যেমন- ‘5G' চালু হওয়ার পরেও অনেক গ্রাহকই সন্তুষ্ট নয়। নিচে ই-বিজনেস- এর অসুবিধাগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার অভাব (Lack of security & safety): অনলাইন বিজনেস বা ই-বিজনেসে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকায় অনেকেই এ ধরনের ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত হতে চায় না।
২. ব্যক্তিগত স্পর্শ বা সম্পর্কের অভাব (Lack of personal touch and relationship): ই-বিজনেসের অন্যতম প্রধান অসুবিধা হলো এক্ষেত্রে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে তেমন কোনো কার্যক্রম সম্পন্ন হয় না । এছাড়া পণ্যের স্পর্শ ছাড়া পণ্য সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণাও লাভ করা সম্ভব নয়। এর ফলে পণ্যের প্রকৃত স্বাদ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ক্রেতারা তেমন কোনো ধারণা লাভ করতে পারে না।
৩. বিলম্বে পণ্য সরবরাহ (Delay in product delivery): ই-বিজনেস প্রক্রিয়ায় সরাসরি পণ্য ডেলিভারি করা সম্ভব হয় না। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিলম্বের মাত্রা আরও অত্যধিক।
৪. সুনির্দিষ্ট গ্রাহক চিহ্নিত করা (Identifying specific customer) : ই-বিজনেস প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট গ্রাহক বা ক্রেতা খুঁজে পাওয়া ততোটা সহজ ব্যাপার নয়। আবার সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে পেলেও সে প্রকৃত ক্রেতায় পরিণত হবে কি-না তাও বিচার-বিশ্লেষণের ব্যাপার।
৫. অনাগ্রহ (Disinterest) : আমাদের দেশের ই-বিজনেসের আরেকটি বড় সমস্যা হলো অনাগ্রহ। ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায় হওয়ায় অনেকেই ই-বিজনেস থেকে দূরে থাকতে চায়। তবে ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
ই-বিজনেস কৌশল হলো এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল পক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে Alfred Chandler বলেন, "E-business strategy is the determination of the basic long term goals and objectives of an enterprise." নিচে ই-বিজনেস-এর কৌশলসমূহ বর্ণনা করা হলো-
১. কর্পোরেট স্তরের কৌশল ( Corporate level strategy): সর্বোচ্চ স্তরের কৌশলই হলো কর্পোরেট স্তরের কৌশল, যেখানে একটি ই-বিজনেস ফার্মের সবকিছু সম্পৃক্ত। এ স্তরে সাধারণত সিইও (Chief executive officer) এবং উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণ (Top level manager) সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পৃক্ত থাকেন ।
২. ব্যবসায় একক কৌশল ( Business unit strategy): এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে এক একটি ব্যবসায় এককের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ই-বিজনেস প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন গ্রাহক আকর্ষণে এ ধরনের কৌশল কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৩. পরিচালনাগত কৌশল ( Operational strategy): পরিচালনাগত কৌশল হলো একটি ই-বিজনেস ফার্মে যারা জড়িত (যেমন— বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রক্রিয়া ও সম্পদ) তাদের নিয়ে ফার্মের উদ্দেশ্য অর্জন করা। ই-বিজনেস প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো— ওয়েবসাইট ডিজাইন, হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর প্রয়োজনীয়তা এবং লজিস্টিকস প্রক্রিয়া।
ই-বিজনেস (E-business) এর পূর্ণরূপ হলো ইলেকট্রনিক বিজনেস (Electronic Business)। সাধারণ ভাষায়, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাবতীয় বিধি-বিধান অনুসরণ করে যে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে ই-বিজনেস বলে। এ প্রক্রিয়ায় পণ্য ও সেবার কেনা-বেচা ছাড়াও ক্রেতা সেবা, ফান্ড প্রসেসিং প্রভৃতি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ব্যাপক অর্থে, ই-বিজনেস হলো ইন্টারনেট, কম্পিউটার এবং ওয়েবভিত্তিক ব্যবসায় কার্যক্রম, যার দ্বারা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পণ্য ও সেবার বিনিময় হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পর দূরবর্তী জায়গায় অবস্থান করলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করে সব ধরনের ব্যবসায়িক কাজ করা যায়।
জেনে রাখো ■ ই-বিজনেস সম্পর্কে M. K. Pratt Ben Cole বলেছেন, “E-business (Electronic business ) is the conduct of business process on the internet.” |
---|
ই-বিজনেস বা অনলাইন বিজনেস মূলত এক ধরনের ব্যবসায় লেনদেন যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক দূরে থেকে, ক্রেতার সংস্পর্শে না এসেও পণ্যের বেচা- কেনা করা যায়।
উপরের আলোচনা থেকে ই-বিজনেস-এর যেসব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে সেগুলো নিম্নরূপ—
• এটি ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসায়,
• অনলাইন ব্যবসায় কার্যক্রমের নিয়ম-কানুন অনুসরণ,
• ক্রেতা-বিক্রেতার দূরত্ব,ক্রেতা-বিক্রেতার সরাসরি যোগাযোগ করতে হয় না।
অন্যদিকে, ই-কমার্স হলো এক ধরনের ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক। ই-কমার্স-এর পূর্ণরূপ হলো Electronic Commerce, যাকে সংক্ষেপে E-commerce হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আরেকটু স্পষ্ট করে বলতে গেলে ই-কমার্স বলতে ইন্টারনেট অথবা অন্য কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পণ্য, সেবা বা ধারণার কেনা-বেচার কাজকে বোঝায়।
উল্লেখ্য যে, আধুনিক ই-কমার্স-এখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে (www) ব্যবহার করছে। উপরের আলোচনা থেকে ই-কমার্স সম্পর্কে যে সকল বৈশিষ্ট্য আমরা খুঁজে পাই তা নিচে উল্লেখ করা হলো—
• এটি একটি ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক;
• ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বেচা-কেনা; এর মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার, তথ্য প্রদান করা হয়। সুতরাং, ই-বিজনেস এবং ই-কমার্স হলো আধুনিক ব্যবসায়ের এমন দুটি ইলেকট্রনিক পদ্ধতি, যেগুলো পণ্য বা সেবার উৎপাদন, এগুলোর মার্কেটিং, কেনা-বেচা, মূল্য পরিশোধ ইত্যাদি অনলাইন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার ব্যবস্থাকে সহজ করেছে।
ই-কমার্স | ই-বিজনেস |
---|---|
ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়- বিক্রয়ের যে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তাকে ই-কমার্স বলে। | অন্যদিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে ই-বিজনেস বলে। |
এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক লেনদেন সংঘটিত হয়। | এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালিত হয়। |
এটি পরিচালনার জন্য ওয়েবসাইটের প্রয়োজন। | এটি পরিচালনার জন্য ওয়েবসাইট, CAM (Computer Aided Engineering), ERP (Enterprise Resource Planning ) সফটওয়্যারের প্রয়োজন। |
বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধানত ইন্টারনেট ব্যবহার হয়ে থাকে। | ই-বিজনেসে ইন্টারনেট (Internet), ইন্ট্রানেট (Intranet) ও এক্সট্রানেট (Extranet) ব্যবহৃত হয়ে থাকে। |
অর্থ সংক্রান্ত লেনদেন সম্পন্ন হয়ে থাকে। | এক্ষেত্রে আর্থিক এবং এ সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে লেনদেন সম্পন্ন হয়ে থাকে। |
ই-কমার্স হলো ই-বিজনেসের সাবসেট। | ই-বিজনেস হলো সম্পূর্ণ সুপারসেট। |
ট্রেডিশনাল ব্যবসায় (Traditional business ) ট্রেডিশনাল ব্যবসায় বলতে রিটেইল সুপারমার্কেট অথবা শো-রুমকে বোঝানো হয়ে থাকে। সেখান থেকে আঞ্চলিকভাবে ক্রেতাদের নিকট পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসায়ে পরিচালনাগত ব্যয় অত্যধিক। কেননা এক্ষেত্রে শো-রুম অথবা স্টোর খরচ বিদ্যমান। এছাড়া ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের জন্য কোনো না কোনো শো-রুম বা দোকানে যেতে হয়।
ই-ব্যবসায় বা ই-বিজনেস হলো ব্যবসায়ের একটি নতুন মাত্রা বা ধরন। ই-বিজনেস ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত তা হলো— অনলাইনের মাধ্যমে পরিকল্পনা, সংগঠন, পণ্য প্রস্তুত এবং মার্কেটিং। বর্তমানে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক উপায়ে এ ধরনের ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সব কাজ ইলেকেট্রনিক উপায়ে অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ই-বিজনেস-এর বৈশিষ্ট্য—
১. সহজ গঠন
২. ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা নেই
৩. কম খরচ
৪. সময়ের পর্যাপ্ততা
৫. মার্কেটিং কৌশলে কম খরচ
৬. ই-বিজনেস সরকারি ভর্তুকি গ্রহণ করে
৭. এখানে কিছু নিশ্চয়তা বিদ্যমান
৮. ব্যক্তিগত যোগাযোগের অস্বিত্ব নেই
৯. ক্রেতা-বিক্রেতা সরাসরি একত্রিত হয় না
১০. পণ্য সরবরাহে বিলম্ব
১১. বিশ্বের যে কেউ যেকোনো প্রান্ত থেকে এ ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে।
১২. আর্থিক ঝুঁকির পরিমাণ অত্যধিক।
ট্রেডিশনাল ব্যবসায় | ই-ব্যবসায় |
---|---|
এটি গঠন করা তুলনামূলক কঠিন | এটি গঠন করা সহজ |
এ ধরনের ব্যবসায় গঠন করতে মার্কেটপ্লেসের দরকার হয়। | এক্ষেত্রে মার্কেট প্লেস এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। |
এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মূলধনের প্রয়োজন। | এক্ষেত্রে নামমাত্র মূলধন দিয়েই ব্যবসায় শুরু করা যায়। |
এক্ষেত্রে অসংখ্য মানবসম্পদ প্রয়োজন। | এক্ষেত্রে নামমাত্র মানবসম্পদ হলেই চলে । |
সবক্ষেত্রে ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। কেননা মধ্যস্থব্যবসায়ী বিদ্যমান। | ই-ব্যবসায়ে ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। |
এ ধরনের ব্যবসায়ে ঝুঁকি তুলনামূলক কম। | এক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি। |
ট্রেডিশনাল ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি সীমিত। | ই-বিজনেসের আওতা বা পরিধি পুরো বিশ্বব্যাপী। |
সময়, সুযোগ ও পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে না পারলে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে ছিটকে পড়বে। করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো যখন টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছিল তখনই নতুন সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। আর ব্যবসায়ের এই নতুন ধরন বা সুযোগের নামই হলো ই-বিজনেস। ট্রেডিশনাল ব্যবসায় থেকে কেন ই ব্যবসায়ে আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. তুলনামূলক খরচ কম : ই-বিজনেসের পরিচালনা খরচ খুবই কম।
২. বিশ্বব্যাপী বাজার : ই-বিজনেস জনপ্রিয় হবার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এর বাজার পরিধি। পুরো পৃথিবী জুড়ে এ ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
৩. সহজে ও দ্রুত ক্রেতাদের ফিডব্যাক পাওয়া যায় : ই-বিজনেস প্রক্রিয়ায় ইন্সটেন্ট ক্রেতাদের সাড়া পাওয়া যায়।
৪. সময় এবং খরচ কম: ট্রেডিশনাল ব্যবসায় থেকে ই-বিজনেসে আসার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো ক্রেতাদের সাথে কম সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করা যায়।
৫. সহজ গঠন : যে কেউ বাড়িতে বসেই ই-বিজনেস গঠন করে এ ধরনের ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে।
৬. সরকারি ভর্তুকি : ই-বিজনেস পরিচালনায় আগ্রহী ও উৎসাহী হতে সরকার অনলাইন ব্যবসায়ে এখন ভর্তুকি প্রদান করছে।
৭. কম মূলধন : ই-বিজনেস পরিচালনায় নামমাত্র মূলধনের প্রয়োজন পড়ে।
৮. ইন্টারনেট জ্ঞান : ই-বিজনেস পরিচালনায় ইন্টারনেট জ্ঞান থাকলেই চলে।
৯. ক্রেতা আকর্ষণ : অনলাইন বিজনেসে সহজেই ক্রেতাকে আকর্ষণ করা যায়।
১০. সবসময়ের জন্য খোলা : ই-বিজনেস ২৪/৭ দিন ভিত্তিতে পরিচালনা করা যায়।
▪️বাংলাদেশে ট্রেডিশনাল ব্যবসায়ের পাশাপাশি ই-বিজনেস করছে এমন কিছু ব্যবসায়ের নাম উল্লেখ করো ।
বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিচালনাকারী কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে যারা ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে ব্যবসায় শুরু করেছিল। বর্তমান আধুনিক ব্যবসায় জগতে বাজার ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রেডিশনাল ব্যবসায়ের পাশাপাশি ই-বিজনেসও শুরু করেছে। যেমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হলো— স্বপ্ন চেইন শপ, ওয়ালটন ইলেক্ট্রনিকস্, সিঙ্গার, প্রথম আলো প্রভৃতি।
ব্যবসায় ডকুমেন্টস বলতে ব্যবসায়ের সাথে । সম্পর্কিত সব ফাইল, নথি, কাগজপত্র, বই, প্রতিবেদন, রেকর্ড, চিঠি ইত্যাদিকে বোঝায়। যেকোনো ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে সেখানে কিছু লিগ্যাল ইস্যু এবং বিজনেস ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়। নিচে কয়েক ধরনের ব্যবসায় ডকুমেন্টস উল্লেখ করা হলো-
ব্যবসায়ের ডকুমেন্টস |
---|
আর্থিক চুক্তি বিজনেস রিপোর্ট কর্মচারী-কর্মকর্তার চুক্তি ইনভয়েস পার্টনারশিপ চুক্তি ভেন্ডর চুক্তি প্রাইভেসি পলিসি বিজনেস লাইসেন্স ট্রেড লাইসেন্স মন্ত্রণালয়ের আদেশ ইত্যাদি। |
নিচে ব্যবসায় ডকুমেন্টস এর প্রয়োজনীয়তা ও প্রয়োগ সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-
১. ব্যবসায়ের অখণ্ডতা/সততা সুরক্ষা (Safeguards business integrity ) : ব্যবসায়ের ডকুমেন্টস থাকা এতোটাই জরুরি যে, এর নিশ্চিত সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস বাধ্যতামূলক। ব্যবসায় ডকুমেন্টস বিভিন্ন গ্রাহক, বিনিয়োগকারী, এবং সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রকের কাছে প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি এবং সততা নিশ্চিত י করতে পারে।
২. নতুন সুযোগ উন্মোচন করে (Unveils new opportunity) : ব্যবসায় ডকুমেন্টস নতুন নতুন ব্যবসায় সুযোগ সৃষ্টি করে। ডকুমেন্টস না থাকলে অনেকেই ব্যবসায় বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে।
৩. সঠিক কর্পোরেট শাসন (Smooth corporate governance) : ব্যবসায়ের ডকুমেন্টস মানেই হলো এর গ্রহণযোগ্যতা বেশি হবে। ব্যবসায়ের নিয়ম-কানুন বা ব্যবসায়ের পরিচালনায় একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে সে অনুযায়ী সবাইকে চলতে হয়।
৪. ডকুমেন্টস আনুগত্য তৈরি করে (Documents create obedience) : একটি ব্যবসায়ের ডকুমেন্টস ঠিকঠাক থাকলে সকলেই সে ব্যবসায়ের প্রতি অনুগত থাকে।
Read more