পোশাক-পরিচ্ছদ ও কর

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - | NCTB BOOK
2

বসত্রশিল্পের প্রসারের ফলে আজকাল বাজারে নানা ধরনের তন্তুর সুতা ও কাপড় পাওয়া যায়। তন্তু থেকে
বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুতা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত এই সুতা দিয়ে আবার নানা পদ্ধতিতে বিভিন্ন
প্রকৃতির বর প্রস্তুত করা হয়। একেক ধরনের বস্ত্রের বৈশিষ্ট্য একেক রকমের হওয়ায়, এদের ব্যবহার ও
যত্নও ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই প্রতিটি পরিবারের উচিত তার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক তত্ত্বর কাপড় নির্বাচন
করা। এছাড়া পোশাক একটি ব্যয়বহুল সামগ্রী হওয়ায় এর স্টিচিং, ফিটিং, ফিনিশিং, মূল্য ইত্যাদির আলোকে
পোশাক ক্রয় করতে হবে। সভ্য সমাজে পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেলাই করার দক্ষতা থাকলে ঘরে
পোশাক তৈরি করাই ভালো। অল্প সময়ে সুন্দর ও পরিপাটিভাবে পোশাক সেলাই করতে হলে কতকগুলো ধাপ
বা পর্যায় অনুসরণ করতে হয়।

এই বিভাগ শেষে আমরা-

-সুতা তৈরির ধাপসমূহ এবং বিভিন্ন প্রকার বুননের বর্ণনা দিতে পারব।

-বয়স, উপলক্ষ, আবহাওয়া, আয় ইত্যাদির ভিত্তিতে পোশাক নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়সমূহ ব্যাখ্যা
করতে পারব।

-পোশাক ক্রয়ের সময় স্টিচিং, ফিটিং, ফিনিশিং, মূল্য ইত্যাদির আলোকে বত্রের গুণাগুণ ব্যাখ্যা
করতে পারব।

-পোশাক তৈরির জন্য কত্র প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব।

-পোশাকভেদে দেহের মাপ নেওয়ার পদ্ধতি ও বস্ত্র কাটার নীতি বর্ণনা করতে পারব।

-ড্রাফটিং অনুসারে এপ্রোন তৈরির পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব।

 

 

 

Content added By

সুতা তৈরি ও বুনন

0

পাঠ ১ - সুতা তৈরির সাধারণ পদ্ধতি

আমরা যে পোশাক পরিধান করি তা মূলত প্রস্তুত করা হয় বস্ত্র থেকে। এই বছর বুনন, নিটিং, ফেন্টিং, বন্ডিং,
ব্রেইডিং ইত্যাদি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করা হয়। সুতা হচ্ছে বুনন বা নিটিং প্রক্রিয়ার মূল উপকরণ। তোমরা
কি জানো কীভাবে এই সুতা উৎপাদন করা হয়। এই পাঠে আমরা সুতা তৈরির সাধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু
ধারণা লাভ করব।

সুতা তৈরির সাধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে যে সুতা তৈরির মূল উপাদান কী?
সুতার মূল উপাদান হচ্ছে তন্তু। এই সুতা উৎপাদনে যে তত্ত্ব ব্যবহার করা হয় তা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম তন্তু
হতে পারে আবার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম তন্তুর মিশ্রণেও সুতা তৈরি করা যেতে পারে। কমপক্ষে আধা ইঞ্চি বা
তার চেয়ে বড় অসংখ্য আঁশের সমন্বয়ে সুতা উৎপাদনের বিষয়টি সত্যই বিস্ময়কর। এরূপ তন্তু সমানভাবে লম্বা
করে একত্রে পাক বা মোচড় দিলে সুতা উৎপাদিত হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে বত্র উৎপাদনের জন্য একগুচ্ছ
তত্ত্বকে পাক বা মোচড় দিয়ে একত্রে সন্নিবেশ করে যা তৈরি করা হয় তাই সুতা।

দেখা গেছে যে সুতা উৎপাদনের সময় যদি তত্ত্বতে বেশি পাক বা মোচড় দেওয়া হয় তাহলে সেই সুতা বেশি শত্রু
হবে, কম উজ্জ্বল হবে, দৈর্ঘ্যে কমে যাবে এবং এক পর্যায়ে ছিড়ে যাবে।

তোমরা খেয়াল করবে যে কিছু কিছু কাপড় আছে মোটা ও খসখসে প্রকৃতির। দেখা গেছে যে, এ ধরনের
কাপড় তৈরিতে যে সুতা ব্যবহার করা হয় তা ছোট আঁশ বা তন্তু থেকে উৎপাদিত। অন্যদিকে লম্বা তন্তু থেকে
উৎপাদিত সুতা মসৃণ ও উজ্জ্বল হওয়ায় এরূপ সুভার তৈরি করও মসৃণ ও উজ্জ্বল প্রকৃতির হয়ে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে তন্তু থেকে সুতা তৈরির কোনো নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি নেই। বিভিন্ন তন্তুর জন্য সুতা তৈরির
পদ্ধতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তুলা, ফ্ল্যাক্স, পশম ইত্যাদি তন্তুর ক্ষেত্রে সুতা তৈরির প্রথম পর্যায় হচ্ছে
কার্ডিং। কার্ডিং করার সময় তন্তু থেকে ধুলা, বালি, আলগা ময়লা এবং অতিরিক্ত খাটো তন্তুগুলো দূরীভূত হয়।

সুতা তৈরির দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে কম্বিং। মোটা সুতা বা কাপড়ের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির প্রয়োজন নাই। কিন্তু খুব
মিহি ও মসৃণ সুতা বা কাপড়ের ক্ষেত্রে তন্তু থেকে অতিরিক্ত খাটো তন্তুগুলো বাদ দেওয়ার জন্য কার্ডিং এর পর
কম্বিং করতে হয়। ফলে অবশিষ্ট উপযুক্ত দৈর্ঘ্যের তন্তুগুলো একটি পাতলা আস্তরণে রূপান্তরিত হয়। এই
পাতলা আস্তরণকে স্লাইভার বলে।

ফ্ল্যাক্স বা লিনেন সুতার ক্ষেত্রে কম্বিং প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয় না। এর পরিবর্তে কম্বিং এর অনুরূপ যে প্রক্রিয়াটি
প্রয়োগ করা হয় তাকে বলে হেকলিং। খুব মিহি সুতা পেতে হলে লিনেনের তত্ত্বগুলোকে লম্বা হতে হয় এবং
স্লাইভারে তন্তুর অবস্থান সমান্তরাল হতে হয়। তাই এমন সুতার জন্য লিনেনে অনেক বেশি হেকলিং এর
প্রয়োজন হয়।

রেশমের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি লম্বা তন্তুকে একত্র করে পেঁচিয়ে রাখা হয়। এই পেঁচানোকে রিলিং বলে।
এভাবে কয়েকটি তত্ত্বকে একত্রীকরণ ও মোচড়ানোকে বলা হয় থ্রোয়িং।

তন্তু থেকে সুতা তৈরির সবশেষ পর্যায় হচ্ছে স্পিনিং। এ ধাপের পূর্বে রোডিং প্রক্রিয়ায় তন্তুর পাতলা আস্তর বা
স্লাইভারকে টেনে আরও সরু করা হয় এবং পরবর্তীতে পাক বা মোচড় দিয়ে সুতায় পরিণত করা হয়। স্লাইভার
মোচড় দেওয়ার ফলে তন্তুগুলো একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িয়ে সুতার রূপ ধারণ করে। রেয়ন, নাইলন
ইত্যাদি কৃত্রিম তন্তুতেও পাক বা মোচড় দেওয়া হয়। দেখা গেছে যে ছোট তন্তুতে বড় তন্তুর তুলনায় বেশি পাক
বা মোচড় দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সাধারণত মোচড়ের পরিমাণ বেশি হলে সুতাটি বেশি শক্ত হয়। তবে
মাত্রাতিরিক্ত মোচড়ের ফলে সুতা ছিঁড়ে যেতে পারে। মূল ভঙ্গুর দৈর্ঘ্য ও গুণাগুণ ভেদে সুতা কাটার সময়
মোচড়ের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে।

পাঠ ২- বুনন

আমরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পারব যে আমাদের মায়েরা যে শাড়ি, ব্লাউজ পরিধান করে সেই
কাপড়ের সাথে আমাদের সালোয়ার, কামিজ কিংবা শার্ট, প্যান্ট-এর কাপড়ের প্রকৃতি এক নয়। এর কারণ
কী বলতে পারবে? বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বস্ত্র উৎপাদন পদ্ধতি। আমরা
ইতোমধ্যে জেনেছি যে বস্ত্র বিভিন্ন উপায়ে উৎপাদন করা যায়। এই বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত
পদ্ধতিটি হচ্ছে বুনন ।

যে যন্ত্রের সাহায্যে বুনন প্রক্রিয়ায় কর উৎপাদন করা হয়
তাকে বলে তাঁত। এই তাঁত হস্ত চালিত বা বস্ত্ৰ চাপিত
হতে পারে। তাঁতের মধ্যে এক সেট সুতা লম্বালম্বিভাবে
সাজানো থাকে, যাকে টানা বা ওয়ার্ন বলে। এই টানা
সুতার ভিতর দিয়ে আরও এক সেট সুতা আড়াআড়িভাবে
চালনা করে কত্র উৎপাদন করা হয়। মাকু নামক একটি
যন্ত্রের সাহায্যে আড়াআড়িভাবে চালিত এই সুতাকে
পড়েন বা ওয়েট বলে। কাজেই আমরা বুঝতে পারছি।
যে তাঁতের সাহায্যে টানা ও পড়েন সুতার পারস্পরিক
সমকৌণিক বন্ধনকেই বুনন বলে।

হস্ত চালিত তাঁত

দেখা গেছে যে বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র উৎপাদনের জন্য বয়ন পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই মৌলিক বুননকে
তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা-সাদাসিধা বুনন, টুইল বুনন, সাটিন ও স্যাটিন বুনন।

ক. সাদাসিধা বুনন- আমরা বাজার থেকে যেসব শংখ,
ওয়েল, পপলিন কাপড় কিনে থাকি সেগুলো মূলত
সাদাসিধা বুনন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়। এই বুননের
মাধ্যমে গামছা, লুঙ্গি, তাঁতের শাড়ি ইত্যাদিও তৈরি করা
হয়। বা বয়ন পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে সহজ বুনন
হচ্ছে এটি। এই বুননে একটি পড়েন সুতা একটি টানা
সুতার উপর নিচ দিয়ে অতিক্রম করে। বুননে টানা ও
পড়েন সুতাগুলো অত্যন্ত কাছাকাছি অবস্থান করে, ফলে
কাপড় খুব মসৃণ ও টেকসই হয় এবং কাপড়ের
উপরিভাগ রং করা ও ছাপার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী
হয়। এ ধরনের কাপড় ময়লা হলে চোখে পড়ে এবং
সহজেই পরিষ্কার করে নেওয়া যায়।

 

 

 

খ. টুইল বুনন- আমরা জিন্স, ড্রিল, গ্যাবার্ডিন ইত্যাদি যে বসের পোশাক
পরিধান করি তাই টুইল বুননের কর। এই বুননে পড়েন সুতা টানা সুতার
মধ্য দিয়ে এমনভাবে চলাচল করে যে কাপড়ের উপরিভাগে কোনাকুনি
একটি ডাব ফুটে উঠে, ভাই একে তেরছা বুননও বলে। এই বুননের কাপড়
বেশ মজবুত হয়। ময়লা পড়লে সহজে বোঝা যায় না। তবে যখন বোঝা
যায় তখন ময়লা পরিষ্কার করা সাদাসিধা বুননের মতো সহজসাধ্য হয়
না।
গ. সাটিন ও স্যাটিন বুনন- তেরছা বুননের মতো সাটিন ও
স্যাটিন বুননে শিররেখাটি স্পষ্ট হয়ে উঠে না। সাটিন
বুননের সময় পড়েন সুতাটি একটি টানা সুতার উপর এবং
চারটি বা তার অধিক টানা সুতার নিচ দিয়ে চলাচল করে।
অন্যদিকে স্যাটিন বুননে পড়েন সুতাটি একটি টানা সুতার
নিচ এবং চারটি বা তার অধিক টানা সুতার উপর দিয়ে
চলাচল করে। এই দুই ধরনের বুননেই টুইলের মতো
অবিচ্ছিন্ন কর্ণ না থাকায় কাপড়ের উপরিভাগ মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখায়। এই বুননের কাপড় দিয়ে সাধারণত
সালোয়ার, কামিজ, পাঞ্জাবি, পায়জামা, ফ্রক, পর্দার কাপড়, বিছানার কভার, সজ্জামূলক পোশাক ইত্যাদি তৈরি
হয়। এ ছাড়া কোট, স্যুট ও সেরওয়ানীর কাপড়ের লাইনিং-এর জন্যও ব্যবহার করা হয়। এই বুননে কাপড়ের
উপরিভাগে বেশিরভাগ সুতা ভাসমান অবস্থায় থাকে, তাই সচরাচর ব্যবহারের জন্য এ ধরনের কাপড়
উপযোগী নয়।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। তন্তু থেকে সুতা তৈরির সর্বশেষ পর্যায় কোনটি?

(ক) নিটিং

(খ) বন্ডিং

(গ) স্পিনিং

(ঘ) গ্লোয়িং

২। নিচের কোন তন্তু থেকে সুতা তৈরির সময় বেশি পাক দিতে হয়?

(ক) রেশম

(ঘ) নাইলন

(গ) তুলা

নিচের অনুচ্ছেদটি মনোযোগ দিয়ে পড় এবং ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও ।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আপনান সাহেব একটি স্পিনিং মিলে চাকরি করে। সেখানে সে তোয়ালে, গামছা,
বিছানার চাদর ইত্যাদির জন্য সুতা তৈরি করার সময় প্রথমেই তন্তুকে কার্ডিং করে নেন।

৩। আদনান সাহেব কোন তন্তু দিয়ে সুতা তৈরি করেন?

(ক) রেশম

(খ) নাইলন

(গ) পশম

(ঘ) তুলা

৪। এই তত্ত্ব থেকে পরিধেয় বস্ত্রের জন্য সুতা তৈরি করতে কার্ডিং-এর পর আদনান সাহেব কী করবেন?

কম্বিং

(খ) হেকলিং

(গ) রিলিং

(ঘ) স্পিনিং

সৃজনশীল প্রশ্ন

(ক) বুনন কী?

খ) সুতা বলতে কী বোঝায়?

(গ) ১নং চিত্রের বয়ন পদ্ধতিতে তৈরি কাপড় ময়লা হলে পরিষ্কার করা সহজ। ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) তুমি কি মনে কর ১ ও ২ নং উভয় চিত্রের বয়ন পদ্ধতির কাপড় ছাপা নকশার জন্য উপযোগী?
উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও ।

 

 

 

Content added By

পোশাক নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়

3

পাঠ ১- পোশাক নির্বাচন

তোমরা যখন ছোট ছিলে তখন মা-বাবা তোমাদের পোশাক নির্বাচন করতেন। এখন ভূমি বড় হয়েছ। তত্ত্ব ও
বিভিন্ন কস্ত্র সম্পর্কে তোমার কিছু ধারণা হয়েছে। কাজেই এখন তোমার বা পরিবারের সদস্যদের পোশাক
নির্বাচনে তুমি নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। আমরা জানি সভ্য সমাজে সব পরিবারের জন্যই পোশাক
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে বিভিন্ন পরিবারের বত্রের প্রয়োজন ভিন্ন ভিন্ন হয়। কেননা সব পরিবারের
প্রয়োজন ও সামর্থ্য একই রকম হয় না। তবে সব পরিবারেই পোশাকের নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা থাকে। আবার
কতকগুলো বিষয় আছে যা পরিবারের এই চাহিদাগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করে। নিচে পোশাক নির্বাচনে এ
ধরনের কিছু বিবেচ্য বিষয়ের উপর আলোচনা করা হলো।

আয় অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের পোশাক নির্বাচন

পরিবারের সদস্যদের পোশাক-পরিচ্ছদ নির্বাচনে প্রথমেই আসে আয়ের প্রসঙ্গ। পরিবারের আয় আবার কিছু
বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন- পরিবারের কতজন সদস্য উপার্জন করছে? তাদের পেশা কী? পরিবারের
অন্যান্য বিষয় সম্পত্তি হতে অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে কিনা ইত্যাদি। দেখা গেছে যে পরিবারের মোট আর্থিক
আয় বেশি হলে পোশাকের খাতে ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। অন্যদিকে আয় কম হলে
স্বল্প টাকায় বুদ্ধিমত্তার সাথে সময় উপযোগী পোশাক নির্বাচন করা হলে অনেক সময় দামি পোশাকের চেয়েও
বেশি প্রশংসা পাওয়া যায়।

বয়স অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের পোশাক নির্বাচন

একটি পরিবারে বিভিন্ন বয়সের সদস্য থাকে। পরিবারের সদস্যদের বয়সকে পোশাক নির্বাচনকালে প্রাধান্য
দিতে হবে। কেননা বিভিন্ন বয়সের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাহিদা অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করতে
হয়। সাধারণত নবজাতকদের শরীর থাকে খুবই স্পর্শকাতর এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও থাকে
কম। তাই এদের জন্য হালকা রং, নরম জমিন ও সাধারণ ডিজাইনের পোশাক নির্বাচন করতে হবে, যাতে
করে ময়লা লাগলে সহজেই পরিষ্কার করা যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে হলে তাদের জন্য বোতাম, হুক, সেফটিপিন
ইত্যাদি বর্জিত নিরাপত্তামূলক পোশাক (safety measure garments) নির্বাচন করতে হবে।

স্কুলে যাওয়ার পূর্বে বা প্রাকবিদ্যালয় বয়সে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে তাদের
কোনো ধারণা থাকে না। তাই তাদের জন্য কিছুটা ঢিলেঢালা কিন্তু খুব লম্বা নয়, এমন পোশাক নির্বাচন করতে
হবে। এদের পোশাক নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রঙের পোশাকের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে
যেন পোশাকে জীবজন্তু, গাছপালা, পশুপাখি বা প্রাকৃতিক কতুর ছাপ থাকে। এতে করে স্কুলে যাওয়ার আগেই
তারা বিভিন্ন রং ও চারপাশের নানা ধরনের বস্তু সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। প্রাকবিদ্যালয় বয়সের
শিশুরা যেন নিজেরাই নিজেদের পোশাক খুলতে পারে ও পরতে পারে সেজন্য নিচের ছবির মতো
আত্মনির্ভরশীল পোশাক-পরিচ্ছদ (self-help garments) নির্বাচন করতে হবে।

কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ বোধ গড়ে উঠে। অনেক সময় পোশাক-পরিচ্ছদ
নির্বাচনের এ ধাপে মা-বাবার সাথে কিশোর-কিশোরীদের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য এ
বয়সের ছেলেমেয়েদের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, তবে উক্ত পোশাক যেন
আমাদের সমাজ বা কৃষ্টি বহির্ভূত না হয় সে দিকেও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

অবসর জীবন বা বৃদ্ধ বয়সে পোশাকের চাহিদা কমে যায় বলে পোশাক নির্বাচনের সময় তাদের অবহেলা
করলে চলবে না। এ সময়ের জন্য ওজনে হালকা, আরামদায়ক ও সরল নকশার পোশাক নির্বাচন করতে হবে।

মৌসুম অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন

পোশাকের উৎপত্তির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাইরের প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করা।
আমাদের দেশ ষড় ঋতুর দেশ হলেও পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা তিনটি ঋতুকে প্রাধান্য দেই।
শীতকালে পশমি কাপড়ের বেশি প্রয়োজন হয়। কেননা পশম তন্তুর মধ্যে যে বাতাস ঢুকে থাকে তা দেহের
উপর চাপ সৃষ্টি করে; এর ফলে দেহের তাপমাত্রা বের হতে পারে না; ফলে আরাম অনুভূত হয়। গ্রীষ্মকালে
গরমে ঘাম বেশি হয় তাই এ সময় সুতি, লিনেনের মতো ভাপ সুপরিবাহী কদর বেশি নির্বাচন করা উচিত।
এছাড়া বর্ষা ঋতুতে কাপড় ধোয়া ও শুকানোর সুবিধার জন্য নাইলন, টেট্রন, জর্জেট, পলিয়েস্টার জাতীয়
কাপড় বেশি উপযোগী। দেখা গেছে সুপ্তি বস্ত্রের দাম কম হলেও ঘামে নষ্ট হয়ে যাবার কারণে এক বছরের
পোশাক অন্য বছর অনেক সময় পরা যায় না। অন্যদিকে পশমি বস্ত্র ও কৃত্রিম তন্তুর বত্র একটু বেশি দাম
দিয়ে কিনলেও যত্ন সহকারে রাখলে কয়েক বছর একই পোশাক ব্যবহার করা যায়। পোশাক নির্বাচনে এ
বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

উপলক্ষ অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন

সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন
ধরনের পোশাকের প্রয়োজন হয়। যেমন- গায়ে হলুদ, বিয়ে, ঈদ, মিলাদ, পূজা, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী
ইত্যাদি। আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের জন্য সাধারণত সুন্দর, তুলনামূলকভাবে দামি ও বৈচিত্র্যময় পোশাক দরকার
হয়। এছাড়া মসজিদ, গির্জা, মন্দির প্রভৃতি স্থানে যাওয়ার সময় আমরা সাদাসিধা ধরনের বিশেষ পোশাক
নির্বাচন করে থাকি। কাজেই সামাজিক প্রথা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে বিভিন্ন উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির
পোশাক নির্বাচন করতে হয়।

সদস্যদের পেশা অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন

আমরা সমাজে নানা পেশার লোক দেখতে পাই। যেমন- উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাধারণ অফিসার, পিয়ন,
ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শ্রমিক, ডাক্তার, নার্স, বৈমানিক, সৈনিক, অগ্নিনির্বাপক কর্মী ইত্যাদি। কে কোন ধরনের
পোশাক নির্বাচন করবে তা নির্ভর করে তার পেশার উপর। যেসব পেশায় নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম রয়েছে তাদের
পোশাক নির্বাচনে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন নেই। তবে যাদের পেশায় ইউনিফর্ম নেই তাদের
পোশাক নির্বাচনে খেয়াল রাখতে হবে যেন তা অটিপৌরে বা অনানুষ্ঠানিক পোশাক না হয়। কেননা পেশা ও
সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী পোশাক পরলে মানুষ কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং সম্মান পায় ।

কৃষ্টি ও জাতীয়তা অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন

প্রত্যেক সমাজেরই নিজস্ব কিছু রীতিনীতি থাকে। যেমন- পাশ্চাত্যের মহিলারা প্যান্ট, শার্ট, স্কার্ট, টপস
ইত্যাদি পরে। আমাদের দেশের সামাজিক রীতি অনুসারে মহিলারা শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ ইত্যাদি পরে।
পুরুষেরা নির্বাচন করে লুঙ্গি, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, পায়জামা ইত্যাদি। অন্যদিকে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার
চাকমা মহিলারা লুঙ্গি ও ব্লাউজ পরে। সিলেট জেলার মনিপুরী অঞ্চলের মহিলারা লুঙ্গির মতো করে এক
টুকরা কাপড় পরে, স্থানীয় ভাষায় যাকে 'ফনের' বলে। এছাড়া তারা ব্লাউজ এবং ওড়নাও ব্যবহার করে।
কৃষ্টি ও জাতীয়তা পরিবারের সদস্যদের পোশাক নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। সুতরাং নিজেদের পোশাক
নির্বাচন করার সময় প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুযায়ী মানানসই পোশাক নির্বাচন করা উচিত। দেখা গেছে
সমাজ ও সম্প্রদায় কর্তৃক স্বীকৃত পোশাক মানুষের মনে সামাজিক নিরাপত্তা ও মানসিক তৃপ্তি আনে এবং
আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় ।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। কোন বয়সের ছেলেমেয়েদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ বোধ গড়ে উঠে?

(ক) কৈশোর

(খ) প্রাক-কৈশোর

(গ) যৌবন

(ঘ) প্রারম্ভিক কৈশোর

২। পরিবারের সদস্যদের পোশাক নির্বাচনে প্রাধান্য বিস্তার করে-

(i) কৃষ্টি

(ii) জাতীয়তা

(iii) নিরাপত্তা

নিচের কোনটি সঠিক?

(ক) i ও ii

(খ) i ও iii

(গ) ii ও iii

(ঘ) i, ii ও iii

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও

নাছিমার অফিস বাড়ি থেকে অনেক দূরে হওয়ায় পোশাক নির্বাচনে জর্জেটকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু গ্রীষ্ম ঋতুতে

লিনেন কাপড় বেছে নেন।

৩। নাছিমার প্রাধান্য দেওয়া কাপড়টি

(i) ধোয়া ও শুকানো সহজ

(II) ইস্ত্রি ছাড়াও পড়া যায়

(iii) তাপ সুপরিবাহী

নিচের কোনটি সঠিক?

(ক) i ও ii

(খ) i ও iii

(গ) ii ও iii

() i, ii ili

৪। নাছিমার গ্রীষ্মকালে নির্দিষ্ট তত্ত্বর কাপড় বেছে নেওয়ার কারণ?

(ক) দামে সস্তা

(খ) তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি

(গ) সহজে তাপ চলাচল করে

(ঘ) দীর্ঘদিন ব্যবহারের অনুপযোগী

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। সালমা হক তার দুই মেয়ে নাহি ও নিমুর জন্য জামা কিনতে মার্কেটে যান। নিম্ন তিন মাস বয়সী হওয়ায়
হালকা রঙের সিনথেটিকস কাপড়ের উপর নকশা করা জামা কেনেন। আর চার বছর বয়সী নাহির জন্য
ঢিলেঢালা উজ্জ্বল বর্ণের বিভিন্ন প্রাণীর ছাপা সম্বলিত সামনে বোতাম দেওয়া জামা কেনেন। সালমা হক
বাড়ি এসে নিমুকে জামা পরালে নিমু অসস্তিবোধ করে।

(ক) আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের জন্য সাধারণত কোন ধরনের পোশাক দরকার?
(খ) গ্রীষ্মকালীন পোশাক কিরূপ হওয়া উচিত বুঝিয়ে দাও।

(গ) নিমুর অস্বস্তিবোধ করার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) সালমা হকের নির্বাচিত পোশাক নাহির জন্য উপযোগী তুমি কি একমত? স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

Content added By

পোশাক ক্রয়ে বিবেচ্য বিষয়

0

পাঠ ১ - স্টিচিং, ফিটিং, ফিনিশিং ও মূল্য

পরিবারের পোশাকের চাহিদা মেটানোর জন্য সদস্যদের সংখ্যা, চাহিদার ধরন, উপলক্ষ, আবহাওয়া, আরাম ও
সৌন্দর্য, যত্নের সুবিধা ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনা করে পোশাক ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়। বাজারে বিভিন্ন
সাইজের, বিভিন্ন ডিজাইনের ও বিভিন্ন মূল্যের তৈরি পোশাক আজকাল পাওয়া যায়। যখন পোশাকের চাহিদা
যেটাতে তৈরি পোশাক ক্রয় করা হয় তখন কয়েকটি বিষয় না দেখে ক্রয় করলে পোশাক পরিধানকারীর আরাম
ও সৌন্দর্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেগুলো হলো-

পোশাকের স্টিচিং অর্থাৎ সেলাই

ফিটিং অর্থাৎ দেহাকৃতির সাথে মানানসই কিনা

ফিনিশিং অর্থাৎ পোশাকের সামগ্রিক সৌন্দর্য।

মূল্য অর্থাৎ যে দামে ক্রয় করা হচ্ছে

পোশাকের স্টিচিং-

স্টিচিং বলতে ক্রয় করা পোশাকটির সেলাইয়ের মান ও প্রকৃতির ধরন বোঝানো হয়েছে। স্টিচিং-এর উপর
পোশাকের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। উন্নত স্টিচিং-এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-

-সেলাইয়ের সুতা মজবুত হবে।

-সুতার রং পাকা হবে।
-পোশাকের রঙের সাথে সুতার রং মানানসই হবে।

-সেলাই পরিচ্ছন্ন হবে অর্থাৎ জট বাধা কিংবা ভাঙা ভাঙা হবে না।

-পোশাকের যেসব স্থানে চাপ পড়ে সেসব স্থানে দুইবার সেলাই থাকবে।

-সেলাইয়ের বাইরের অংশে ওভার লকিং সেলাই থাকবে। এর ফলে পোশাকের প্রাপ্তধার থেকে সুতা

উঠতে পারে না।
-ওড়নার ধারে হেম অথবা মেশিনে সেলাই করা থাকবে।

সেলাইয়ের ধারে কমপক্ষে ১.৩ সে. মি. বা ০.৫ ইঞ্চি কাপড় থাকতে হবে। তা না হলে পরিধানের
পর চাপে সেলাই ফেসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফিটিং-

তৈরি পোশাক কেনার সময় পরিধানকারীর দেহাকৃতির সাথে মানানসই নকশা, আকার ও আনুসঙ্গিক বিষয়
বিবেচনা করতে হয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এবং পরিধানকারীর বয়স, পেশা, দেহাকৃতির ধরন ইত্যাদির
সমন্বয় সাধন করে পোশাক ক্রয় করা উচিত। পোশাকের ফিটিং এমন হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে উঠা-বসা,

হাঁটা-চলা ইত্যাদি নৈমিত্তিক কাজে অসুবিধা না হয়। এজন্য পরিধানকারীর দেহের প্রকৃত মাপের সাথে কিছু
বাড়তি মাপ যোগ করা হয়। যেমন- বুকের প্রকৃত মাপ ৩২ ইঞ্চি বা ৮১.২৮ সে.মি. হলে, তার সাথে সেলাই-এর
জন্য ১ ইঞ্চি বা ২.৫৪ সে.মি. এবং আরামদায়কতার জন্য ২ ইঞ্চি বা ৫.০৮ সে.মি. যোগ দেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া পোশাক ক্রয়ের সময় দেখতে হবে পোশাকের কোথাও যেন কোনো কৃষ্ণন টান বা ঢিলা না থাকে।

তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে ফিনিশিং বলতে পোশাকটির সেলাইয়ের মান, নকশার উপযুক্ততা, ফিটিং ইত্যাদির
সমন্বিত অবস্থাকে বোঝায়। ফিনিশিং মূল্যায়নের জন্য তৈরি পোশাকে সংযোজিত লেবেল অনেকভাবে
পর্যবেক্ষণ করতে হয়। লেবেলের মাধ্যমে মূল্য, সাইজ, যত্নের উপায় ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য জানা যায়।

মূল্য-

পরিবারের কর বা পোশাক ক্রয়ের জন্য মোট খরচের নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে পারিবারিক
বাজেটের নির্ধারিত অংকের টাকার মধ্যেই পোশাক ক্রয়ের চেষ্টা করতে হয়। নির্দিষ্ট বাজেটের উপর ভিত্তি
করে পোশাক ক্রয় করা হলে তা পরিবারের অর্থ ব্যবস্থাপনার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না।

বর্তমানে তৈরি পোশাকে যুগান্তকারী পরিবর্তন ও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। এর ফলে পছন্দসই তৈরি পোশাকটি
বেশ চিন্তাভাবনা করে ক্রয় করতে হয়। দোকানে যখন কম ভিড় থাকে তখন হাতে সময় নিয়ে অনেক দোকান
ঘুরে মূল্য যাচাই করে দেখতে হয়। প্রয়োজনে অভিজ্ঞজনের সাথে তথ্য যাচাই করে নেওয়া যায়। এতে ঠকার
সম্ভাবনা থাকে না।

আমাদের দেশে Fixed Price অর্থাৎ নির্ধারিত মূল্যের দোকান তুলনামূলকভাবে কম। তাই ক্রয়ের সময়
দরদাম করতে হয়। পরিচিত দোকান এবং সুনাম আছে এমন সব দোকান থেকে কেনা ভালো। এতে
একদিকে যেমন ঠকার ভয় থাকে না, অপর দিকে কাপড় ও পোশাকের মানও ভালো হয়। এছাড়া বড় বড়
দোকানে বছরে ২-১ বার মূল্যহ্রাসে তৈরি পোশাক বিক্রয় করা হয়। ঐ সময় ভালোভাবে দেখে কিনতে পারলে
মূল্যের সাশ্রয় হয়।

কাজ পোশাক ক্রয়ের বিবেচ্য বিষয়গুলো বর্ণনা কর।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। পোশাকের স্থায়িত্ব কিসের উপর নির্ভর করে?

(খ) সৌন্দর্য

(ক) রং

(খ) স্টিচিং

(গ) মূল্য

২। বক্সের গুণাগুণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ কোথায় থাকে?

(খ) রঙে

(ক) সুতায়

(খ) জমিনে

(গ) লেবেলে

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও

মুক্তি বেশির ভাগই কেনা পোশাক পরে এবং বারবারই কেনা পোশাকে নানাবিধ সমস্যা ধরা পড়ে। এতে
সে খুবই বিরক্ত হয়। বাঘবীর পরামর্শে এবার সে দর্জির তৈরি পোশাক পরে। পোশাকটি পরে সে
স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

৩। মুক্তির ক্রয়কৃত পোশাকে কোনটি বজায় থাকে না?

(ক) মূল্য

(খ) আধুনিকতা

(গ) পোশাকের আরাম

(ঘ) ডিজাইন

৪। মুক্তির দর্জির পোশাক ও ক্রয়কৃত পোশাকের পার্থক্য হলো-

(i) স্টিচিং

(ii) ফিটিং

(iii) ফিনিশিং

নিচের কোনটি সঠিক?

(*) iii

(গ) ii ও iii

(খ) i ও iii

(ঘ) i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। তন্বী ঈদের সময় তাড়াহুড়া করে বেশি দাম দিয়ে তৈরি পোশাক কেনে। খেতে বসে তরকারির ঝোল পড়ে
কাপড়টি নষ্ট হয়। ধোয়ার পর সে দেখতে পেল কাপড়টির সেলাইগুলো খুলে খুলে গেছে। সুতারও রং
উঠে গেছে। তার পুরা অর্থটাই বিফলে যায়।

পোশাকের স্থায়িত্ব কিসের উপর নির্ভর করে?

(খ) স্টিচিং বলতে কী বোঝায়?

(গ) তন্বীর কেনা পোশাকের ত্রুটিটি ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) বাজারদর যাচাই করে পোশাক ক্রয় করলে তরীকে উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতিতে পড়তে হতো
না-তুমি কি একমত? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

২। সায়মা প্রতিবারই পোশাক কিনে সমস্যায় পড়ে। সেদিন ক্রয়কৃত জামাটি কেনার পর দেখে গায়ে ওটা বেশ
চাপা। কাঁধগুলো বড়, উঠা-বসা করতে কষ্ট হয়। এছাড়াও পোশাকটির বাহ্যিক অমসৃণতা ধরা পড়ে।
পোশাক বদলাতে গিয়ে দেখতে পায় পোশাকের রং গায়ে লেগেছে। ওর খালা পোশাকের লেবেল দেখে
পোশাক ক্রয় করার পরমর্শ দেন। পোশাক ক্রয়ে স্টিচিং, ফিটিং ও লেবেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।

(ক) তৈরি পোশাক শিল্পে ফিনিশিং কী?

(খ) পরিধানকারীর মাপের সাথে বাড়তি মাপ যোগ করা হয় কেন?

(গ) পোশাক ক্রয়ে সায়মার দৈহিক ফিটিং-এর জন্য লক্ষণীয় বিষয়-ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) খালার পরামর্শটি পোশাক ক্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ— উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

 

 

 

 

 

Content added By

পোশাক তৈরি

1

সভ্য সমাজে সব পরিবারের জন্যই পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেলাই করার দক্ষতা থাকলে এবং পর্যাপ্ত
সময় হাতে থাকলে ঘরে পোশাক তৈরি করাই ভালো। কারণ নিজেরা ঘরে পোশাক তৈরি করলে কম মূল্যে
পোশাক তৈরি করা যায়; পোশাকের ফিটিং, সেলাই-এর মান এবং সমাপ্তিকরণ ভালো হয়। অল্প সময়ে সুন্দর
ও পরিপাটিভাবে পোশাক সেলাই করতে হলে কতকগুলো ধারাবাহিক ধাপ বা পর্যায় অনুসরণ করতে হয়।

পাঠ ১ পোশাক তৈরির জন্য কর প্রস্তুতকরণ
-

বিভিন্ন ধরনের তন্তু যেমন তুলা, ফ্ল্যাক্স, রেশম, পশম, নাইলন, রেয়ন ইত্যাদি থেকে বস্ত্র উৎপাদন করা
হয়। এই বসা থেকে তৈরি হয় পোশাক। কাটি হাতে বা মেশিনে বোনা হতে পারে কিংবা তাঁতের তৈরিও
হতে পারে। পোশাকের জন্য নির্বাচিত কাপড়টির তৈরির পদ্ধতি বিভিন্নরকম হওয়ার জন্য কাপড়ের মাঝে
কখনো কখনো ফাঁক থেকে যায়। পোশাক তৈরির আগে কাপড় ধুয়ে নিলে এই ফাঁকগুলো ঠিক হয়ে যায়। যদি
কাপড় না ধুয়ে বুননের ফাঁক সমৃদ্ধ কাপড় দিয়ে পোশাক প্রস্তুত করা হয় তবে তা দিয়ে তৈরি পোশাক ধোয়ার
পর সংকুচিত হয়ে পরিধানের অনুপযোগী হয়ে যায়। তাই ছাঁটার আগে কাপড়গুলো প্রস্তুত করে নিলে পোশাক
ছোট হওয়ার কোনো ভয় থাকে না। পোশাক ছাঁটার আগে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে কাপড় প্রস্তুত করা

হয়। এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো—

১। সংকুচিত করা— যেসব কাপড় পানিতে ভেজানো যায় সেগুলো প্রথমে কয়েক ভাজ করে একটি পরিষ্কার
গামলায় রেখে তার মধ্যে এমনভাবে পানি দিতে হবে যেন কাপড়টি ভালোভাবে ডুবে থাকে। এভাবে ৮/৯
ঘণ্টা রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে এপাশ ওপাশ করে দিতে হবে। তারপর পানি থেকে কাপড়টি ভুলে
দু'হাতের তালুর মধ্যে রেখে চাপ দিয়ে পানি বের করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কাপড়টি নিংড়ানো উচিত নয়।
এরপর কাপড়টি ঝেড়ে শুকাতে দিতে হবে। যদি খুব তাড়াতাড়ি কাপড় সংকুচিত করার দরকার হয় তবে
দু'টি পাত্র নিয়ে একটি পাত্রে গরম পানি এবং অপরটিতে ঠাণ্ডা পানি নিতে হবে। এবার কাপড়টি কয়েক
ভাঁজে ভাঁজ করে একবার গরম পানিতে ও একবার ঠাণ্ডা পানিতে ৫-১০ মিনিট করে রাখতে হবে। এভাবে
৫/৬ বার করার পর কাপড়টি শুকাতে দিতে হবে।

কাপড় সংকুচিত করা

২। কাপড়ের ধার সোজা- করা ছাঁটার সময় কাপড়ের ধার সোজা না থাকলে পোশাক ছাঁটতে অসুবিধা হয়।
এজন্য কাপড় ছাঁটার আগে ধারগুলো সোজা করে নিতে হয়। কাপড় পানিতে ভিজিয়ে সংকুচিত করার পর
অল্প ভেজা থাকতেই একটি টেবিলের উপর সমান ভাবে বিছিয়ে দুই দিক টেনে সোজা করতে হয়। এছাড়া
প্রয়োজনে কাপড়ের আড় দিকের একটি সুতা টেনে তুলে ঐ বরাবর কাপড় ছেঁটে ধার সোজা করা যায়।

কাপড়ের ধার সোজা করা
৩। ইস্ত্রি করা- কাপড় সংকুচিত করার পর অনেক সময়ই কাপড়ে ভাঁজ পড়ে। কাপড়ের এই কুঁচকানো
-
ভাব দূর করার জন্য ইস্ত্রি করা প্রয়োজন। সবসময় কাপড়ের উল্টাদিকে লম্বালম্বিভাবে ইসিএ করতে হয়
এবং বরের তন্তুর প্রকৃতি অনুসারে ইস্ত্রির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে নিতে হয়।

ছাপা বা রঙিন কাপড়ের রং পাকা কিনা তা কাপড় কাটার পূর্বেই পরীক্ষা করা উচিত। এক্ষেত্রে কাপড়ের
কিনারা থেকে সামান্য কাপড় সাবান ও হালকা গরম পানি সহযোগে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আবার পুরা কাপড়ের
সংগে মিলিয়ে দেখতে হবে। যদি কাপড়ের ছাপা উঠে যায় বা রং বিবর্ণ হয় তবে ১ গজ কাপড়ে একমুঠো
লবণ দিয়ে পানিতে প্রায় ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে সংকুচিতকরণের পাশাপাশি রঙও পাকা হয় ।

কাজ পোশাক তৈরির জন্য বস্ত্র প্রস্তুতকরণের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ কর।

পাঠ ২- দেহের মাপ নেওয়ার পদ্ধতি

মানানসই ফিটিং সমৃদ্ধ পোশাক তৈরির অন্যতম শর্ত হলো নকশা অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিধানকারীর দেহের
বিভিন্ন অংশের মাপ নেওয়া। পরিকল্পনা অনুসারে প্রথমে কাগজে মূল নকশা অংকন করা হয়। মাপ অনুসারে মূল
নকশাকে পরে চূড়ান্ত নকশা বা প্যাটার্নে রূপ দান করা হয়। সর্বশেষে চূড়ান্ত নকশা অনুযায়ী কাপড় ছাঁটা ও
সেলাই করে পোশাক তৈরি করা হয়।

পোশাকভেদে দেহের বিভিন্ন অংশের মাপ নেওয়া হয়। তাই কামিজ তৈরির সময় দেহের যেসব অংশের মাপ
নেওয়া হয়, প্যান্ট তৈরির সময় সেসব অংশের মাপ নেওয়া হয় না।

যে কোনো পোশাকের পরিকল্পনা করা হোক না কেন মাপ নেওয়ার সময় মোটামুটিভাবে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি

লক্ষ রাখা উচিত। যেমন-

১) একটি দৃঢ় অথচ নমনীয় ও সঠিক মাপার ফিতা ব্যবহার করতে হবে ।

২) মাপার সময় ফিতা সোজা করে ধরা উচিত ।

৩) কখনো নিজের মাপ নিজে নেওয়া ঠিক নয়। এতে মাপ ঠিক হয় না।

৪) মাপ নেওয়ার সময় সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
৫) কোমরের মাপ নেওয়ার সময় কোমরের স্বাভাবিক ভাঁজে আলগাভাবে ফিতা রেখে মাপ নিতে হবে।

৬) বুকের মাপ নেওয়ার সময় পূর্ণ শ্বাস গ্রহণ করে মাপ নিতে হবে।

৭) হিপের মাপ নেওয়ার সময় সবচেয়ে ফীত অংশের উপর ফিতা রেখে মাপ নিতে হবে।

৮) কোমর, বুক ও হিপের মাপ নেওয়ার সময় ফিতার নিচে চারটি আঙুল বিছিয়ে রাখতে হবে।
৯) হাতার ঘের, পলা, প্যান্টের মৌরী প্রভৃতি মাপ নেওয়ার সময় দু'টি আঙুল ফিতার নিচে রাখতে হবে।

১০) ফুল হাতার লম্বার মাপ নিতে হলে কব্জি থেকে ১.৯০ সে.মি. বেশি মাপ নিতে হবে।

১১) যে ব্যক্তির মাপ নেওয়া হবে তাকে একটি ফিটিং ড্রেস পরে নিতে হবে।

১২) প্রতিটি মাপ নেওয়ার সাথে সাথে তা খাতা বা নোট বুকে লিখে রাখতে হবে ।

পোশাক তৈরিতে শরীরের যেসব অংশের মাপ নিতে হয়, সেলাই-এর পরিভাষায় সেগুলোর বিশেষ নাম
রয়েছে। এখানে শরীরের বিভিন্ন অংশের নাম উল্লেখ করে মাপ নেওয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-

১। ফুল ঝুল বলতে পোশাকের লম্বা মাপকে বোঝায়। যেমন- কামিজের ক্ষেত্রে ২ নং চিত্রে ক-খ পর্যন্ত
-
পোশাকের ঝুলের মাপ। অন্যদিকে প্যান্ট বা সালোয়ারের ক্ষেত্রে ৩ নং চিত্রে গ-ঘ পর্যন্ত মাপ ।

২। পুট-মেরুদণ্ডের সবচেয়ে উঁচু হাড় থেকে কাঁধের শেষ প্রান্তের উঁচু হাড় পর্যন্ত মাপকে পুট বলে। ২ নং

চিত্রে ক-গ পর্যন্ত মাপ ।

৩। গলা গলার মধ্যবিন্দুকে কেন্দ্র করে চারদিক বেষ্টন করে গলার মাপ নিতে হয়।

৪। হাতা কাঁধের শেষ প্রান্ত থেকে কব্জি বরাবর বা ইচ্ছামতো লম্বা মাপ।

৫। মুহরি বাহু বা কব্জির ঘেরের মাপকে মুহরি বলে। ২ নং চিত্রে চ-ও বাহুর ঘেরের মাপ।

৬। বুক -বুকের সবচেয়ে স্ফীত অংশের ঘেরের মাপ। ১ নং চিত্রে ক-খ বরাবর বেষ্টন করে যে মাপ।

দেহের বিভিন্ন অংশের মা

৭। কোমর কটি রেখার চারদিকের ঘেরের মাপ। ১ নং চিত্রে গ-ঘ বরাবর বেষ্টন করে যে মাপ ।

৮। হিপ কোমর থেকে ১৭.৭-২২.৮ সে.মি. নিচের সবচেয়ে স্ফীত অংশের ঘেরের মাপ। ১ নং চিত্রে - চ
বরাবর বেষ্টন করে যে মাপ।

৯। মৌরী - ফুলপ্যান্ট, পায়জামা, সালোয়ার প্রভৃতি পোশাকের পায়ের ঘেরের মাপ। ৩ নং চিত্রে ঝঞ বিন্দু
বরাবর বেষ্টন করে পছন্দমতো যে মাপ ।

পাঠ ৩- কর কাটার নীতি

কাপড় ছাঁটায় সৃজনশীলতা আনতে হলে কতকগুলো কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এ কৌশলগুলো সম্পর্কে
নিচে আলোচনা করা হলো-

১। কাপড়টি টেবিলের বাইরে যেন ঝুলে না পড়ে সেজন্য সমান করে টেবিলের উপর বিছিয়ে নিতে হবে।
২। কাপড়ের সোজা দিক ভিতরে রেখে উল্টা দিকে সবগুলো প্যাটার্ন বিছিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে

প্রয়োজনীয় কাপড় আছে কিনা।

৩। কাপড় ছাঁটার সময় ভাঁজের কৌশল অবলম্বন করা দরকার। লম্বালম্বি দিক অনুযায়ী কাপড় ছাঁটলে
পোশাকের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব বাড়ে এবং কাপড়ের অপচয়ও রোধ করা যায়।

৪। কাপড় ছাঁটার সময় কাপড়ের
ছাপার দিকে বিশেষ নজর রাখা
উচিত। ছাপা কাপড়ের ফ্রক
কাটতে হলে ড্রাফটগুলো
এমনভাবে কাপড়ের উপর বিছাতে
হবে যেন পোশাকের উপরের
অংশের ছাপার সাথে নিচের
অংশের ছাপার একটি সুন্দর মিল
থাকে।

৫। পাড় সহ যেসব কাপড় পাওয়া যায়
সেগুলো হাঁটার সময় পাড় যেন
পোশাকের নিচের দিকে থাকে
সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অনেক সময় পাড়গুলো আলাদা ভাবে হেঁটে লাগালেও পোশাক দেখতে সুন্দর
লাগে।

৬। কাপড়ের উপর সব ধরনের প্যাটার্ন বিছিয়ে আলপিন দিয়ে প্যাটার্নগুলো আটকিয়ে কাপড় ছাঁটতে হয়।

৭। কাপড় ছাঁটার সময় মাঝারি আকারের (১৭.৭৮ সেন্টিমিটার- ২০.৩২ সেন্টিমিটার) ধারালো কাঁচি
ব্যবহার করতে হবে। কাপড় কখনো হাতে রেখে হাঁটা উচিত নয়। প্যাটার্ন ও কাপড় এক হাতে চাপ
দিয়ে ধরে অন্য হাতে কাঁচি চালাতে হয়।

ড্রাফটের মাধ্যমে কাপড় ছেঁটে কীভাবে একটি পোশাক তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে আমরা এখন জানার চেষ্টা
করব। এ প্রসঙ্গে খুবই সাধারণ একটি পোশাক কিচেন এপ্রোনের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। রান্নাঘরে
তেল, মশলার দাগ থেকে পরিধেয় পোশাক রক্ষার জন্য কিচেন এপ্রোন ব্যবহার করা হয়।

৮৬.৫ সে.মি./৩৪” লম্বা ও ৪৬ সে.মি./ ১৮" প্রস্থ বিশিষ্ট
এপ্রোন তৈরি করতে হলে ১নং চিত্র অনুযায়ী ৯১.৪৪
সে.মি./৩৬” লম্বা এবং ২২.৮৬ সে.মি./৯” চওড়া বিশিষ্ট ক
খ গ ঘ একটি আয়তাকার কাগজ নিতে হবে। এরপর ১নং
চিত্রানুসারে ও থেকে চ পর্যন্ত বাঁকাভাবে হাতার সেইপ করতে
হবে। এখন ৯১.৪৪ সে.মি./৩৬” লম্বা এবং ৪৬ সে.মি./ ১৮
চওড়া বিশিষ্ট একটি কাপড়কে লম্বালম্বিভাবে দুই ভাঁজ করে।
কাগজের ড্রাফট ফেলে হাঁটার পর ভাঁজ খুললে ২নং চিত্রের
মতো এপ্রোনের আকৃতি হবে।

কিচেন এপ্রোন

এবার এপ্রোনের প্রাপ্ত ধারগুলোতে হেম সেলাই দিলে উপরে ও নিচে প্রায় ৫ সে.মি./২" এর মতো কমে
এপ্রোনটির মাপ ৮৬.৫ সে.মি./৩৪" তে দাঁড়াবে। সবশেষে এপ্রোনের কোমরের দুই দিকে দুইটি লম্বা ফিতা
ও গলার উপরে বখেয়া সেলাই এর সাহায্যে চিত্রের ন্যায় ফিতা সংযোজন করলেই এপ্রোন তৈরি হয়ে যাবে।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। পরিধানকারীর মাপ অনুসারে কাগজে কী তৈরি করা হয়?

(ক) চূড়ান্ত নকশা

(খ) মূল ড্রাফট

(গ) ড্রেপিং পদ্ধতি

২। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হয়-

(ঘ) প্যাটার্ন ড্রাফটিং

(i) পরিবারের আয়ের বিষয়টি

(ii) পোশাক ব্যাবহারকারীর বয়স

(iii) কোন ঋতুতে পোশাকটি ব্যবহৃত হবে

নিচের কোনটি সঠিক?

(ক) তি

(*) ie iii

(গ) ii ও iii

(ঘ) i, ii ও iii

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও

মিতু তার জামা তৈরির প্রয়োজনীয় কাপড় কিনে পরিচিত একজন দর্জিকে দিয়ে জামাটি বানায়। জামাটি
কয়েকদিন পরার পর ধুতে গেলে রং উঠে হালকা হয়ে যায়। পরবর্তীতে সে জামাটি পরতে গিয়ে দেখে
তার গায়ে লাগছে না। এটি বেশ ছোট হয়ে গিয়েছে।

৩। মিতুর জামা তৈরির ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজন ছিল?

ক. সঠিক ভাজের কৌশল অনুসরণ করা

খ. তৈরির পূর্বে কাপড় ইস্ত্রি করা

গ. তৈরির পূর্বে কাপড় ধুয়ে নেওয়া

৪। মিতুর জামাটি পরার উপযোগী হতো, যদি জামার কাপড়টি -

(i) ফ্ল্যাক্স তন্তু দিয়ে তৈরি করা হতো

(ii) সংকুচিত করে নেওয়া

(iii) একজন দক্ষ দর্জিকে দিয়ে তৈরি করানো হতো

নিচের কোনটি সঠিক?

(*) is i

(গ) ii ও iii

() i'e iii

(ঘ) i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। ফিরোজা বেগম কিচেন এপ্রোন তৈরির জন্য ১ গজ লংক্লথ কাপড় কেনেন। ড্রাফট ব্যবহার না করে এক
গজ কাপড় লম্বালম্বিভাবে ভাঁজ করে ঝুল ৩৪" এবং বুক ৩২" মাপে কিচেন এপ্রোন তৈরি করেন।
এপ্রোন তৈরির পর পরে দেখা গেল ফিরোজা বেগমের দেহে এপ্রোনটি সঠিকভাবে লাগছে না।

(ক) মানানসই ফিটিং পোশাক তৈরির অন্যতম শর্ত কী?

(খ) কোন পদ্ধতিতে দ্রুত প্যাটার্ন তৈরি করা যায়- বুঝিয়ে বলো।

(গ) উদ্দীপকের মাপ অনুসারে একটি কিচেন এপ্রোনের ড্রাফট তৈরি কর।

(ঘ) ফিরোজা বেগমের শরীরে কিচেন এপ্রোনটি সঠিকভাবে লাগার জন্য ড্রাফট আবশ্যক-তুমি কি
একমত? স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

সমাপ্ত

Content added || updated By
Promotion