পোশাকের পারিপাট্য ও ব্যক্তিত্ব (চতুর্দশ অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন তন্তু - গার্হস্থ্যবিজ্ঞান | NCTB BOOK
358
Please, contribute by adding content to পোশাকের পারিপাট্য ও ব্যক্তিত্ব.
Content

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও

গায়ের রং শ্যামলা হওয়ায় রিতু বরাবরই পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেন। তার দেহের রং ও ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই রঙের কাপড়। তিনি ব্যবহার করেন।

ব্যক্তিত্ব (পাঠ ১)

131

আমরা একটু লক্ষ করলে দেখতে পারব যে আমাদের ক্লাসের প্রত্যেকেরই বিশেষ কিছু গুণ রয়েছে। যার ফলে আমরা একজন অন্যজন থেকে আলাদা। ব্যক্তিবিশেষের এই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোর সমষ্টি হচ্ছে ব্যক্তিত্ব। আমাদের শারীরিক গঠন, চালচলন, কণ্ঠস্বর, মেজাজ ও আবেগের মাধ্যমেই ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। উত্তম ব্যক্তিত্বের প্রভাবে একজন মানুষ অন্য মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে, আবার দুর্বল ব্যক্তিত্বের কারণে মানুষ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।
আমরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পারব যে, উত্তম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তির হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে তার দেহের সৌন্দর্য, আত্মবিশ্বাস ও কাজের প্রতি আগ্রহ। পৃথিবীর প্রত্যেকের মতো আমরাও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। তবে বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে সুস্থ ও আর্কষণীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারব। উত্তম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে জীবনের যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করতে পারে। রুগ্ন স্বাস্থ্য ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, কারণ স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে তার প্রতিটি কাজে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ ফুটে ওঠে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি যে শরীর ও মনের পূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গঠন করা যায়।

ব্যক্তিত্বের সামাজিক মূল্য অনেক বেশি। আমরা জীবনের মান, সম্মান, সামাজিক মর্যাদা প্রভৃতি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব দিয়ে অর্জন করতে পারি। কাজেই সফলতার পাশাপাশি সবার গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য অবশ্যই আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে, নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে, পরিবেশ উপযোগী পারিপাট্য বজায় রেখে, বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে সুস্থ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারি।

আমরা কি বলতে পারব পারিপাট্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যক্তিত্বের সাথে এর সম্পর্কই-বা কী? স্কুলে আসার আগে আমরা নিশ্চয়ই পরিপাটি হয়ে এসেছি। পারিপাট্য বলতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকেই বোঝানো হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেহ, সময় উপযোগী রুচিশীল পোশাক এবং মার্জিত চলাফেরার মাধ্যমেই উত্তম ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করা যায়। আর এরূপ ব্যক্তির চলাফেরা ও পরিপাটি বেশভূষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই সহজ করতে সাহায্য করে।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, অপরিষ্কার দেহ কিংবা অপরিচ্ছন্ন মূল্যবান পোশাকে পারিপাট্য আনা যায় না। সুবেশী হতে হলে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া দরকার। অন্যদিকে এলোমেলো চুল, অপরিষ্কার দাঁত, নখ, হাত-পা ইত্যাদি যেকোনো অবস্থাতেই বিরক্তির সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত গোসল করে হাত, পা, চুল, নখ ইত্যাদির যত্ন নেওয়া উচিত।

পারিপাট্য রক্ষায় নখ, হাত, চুল, পা ইত্যাদির যত্ন

পারিপাট্য রক্ষায় উপযুক্ত পোশাকের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা উপযুক্ত পরিবেশে দেশীয় কৃষ্টির সাথে মিল রেখে এবং ঋতু অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করব। যেমন- আমাদের দেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশের জন্য এমন পোশাক নির্বাচন করব যা সহজে ঘাম শোষণ করে নেয়, ধোয়া যায় ও ইস্ত্রি করা যায়। এছাড়া দেহের আকৃতির সাথে মিল রেখে চুল বাঁধব। প্রসাধনসামগ্রী কখনো খুব বেশি ব্যবহার করব না। এতে ত্বকেরও ক্ষতি হয়। সব সময় ত্বকের রং, দেহের আকৃতি, উচ্চতা, ব্যক্তিত্ব, রুচি ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে পোশাক পরিধান করব, এতে করে মনে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে, মন প্রফুল্ল থাকবে এবং কাজে উৎসাহ আসবে।

কাজ ১- ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য কীভাবে পারিপাট্য রক্ষা করা যায়? দলীয়ভাবে উপস্থাপন করো।
Content added By

ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের সম্পর্ক (পাঠ ২)

385

ব্যক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা আচরণই হচ্ছে তার ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের একটি সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সুন্দর পোশাক রুচিশীল মনের পরিচয় দেয় এবং ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। কাজেই দেখা যায় যে, পোশাক ও ব্যক্তিত্ব এ দুটি একে অন্যের পরিপূরক। তবে এক্ষেত্রে জানতে হবে যে কোন পোশাক কার জন্য কতটুকু উপযুক্ত? আর এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে সবার আগে আমাদের নিজেকে জানতে হবে। অর্থাৎ আমার নিজের গায়ের রং, উচ্চতা, ওজন, দেহের গঠন, বয়স, মুখের আকৃতি ইত্যাদির দিকে লক্ষ রেখে পোশাক নির্বাচন ও পরিধান করতে হবে। এছাড়া যেসব বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, সেগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

১. পোশাকের ছাপা- বড় ও ছোট ছাপা ব্যক্তিত্বের ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। বড় বড় ছাপার নকশাবহুল পোশাকে স্থুলকায় ব্যক্তিকে আরও স্থুলকার দেখায়। তাই খর্বাকৃতি ও স্থুলকায়দের জন্য ছোট ছোট ছাপার পোশাক উপযোগী।

২. পোশাকের রং পোশাকের জন্য উপযুক্ত রং নির্বাচন করেও আমরা দেহের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারব। পোশাকের রং দেহের সাথে মানানসই না হলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব অনেকখানি ম্লান হয়ে যায়। দেহের ত্বক, চুল ও চোখের রঙের সাথে মিল রেখে পোশাকের রং নির্বাচন করা উচিত। যাদের দেহের রঙ উজ্জ্বল তারা যেকোনো রঙের পোশাকই নির্বাচন করতে পারে, তবে শ্যামলা রঙের ব্যক্তিদের হালকা রঙের পোশাকে ভালো দেখায়। লাল, হলুদ, কমলা রংগুলো গাঢ় ও উজ্জ্বল হওয়ায় দূর থেকে এদের চোখে পড়ে। যেহেতু এই উষ্ণ রংগুলোর তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি, তাই গরমকালে এ ধরনের রঙের পোশাকে আরও গরম অনুভূত হয়। এই রঙের পোশাকে পাতলা গড়নের ব্যক্তিকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী বলে মনে হয়।

অন্যদিকে নীল, সবুজ, নীলাভ সবুজ ইত্যাদি রং হালকা ও স্নিগ্ধ হওয়ায় এদের ঠান্ডা মনে হয়। তাই গরম কালে এ রঙের পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে।
৩. লম্বা এবং আড়াআড়ি রেখার পোশাক- চেক ও স্ট্রাইপ কাপড় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ লম্বা বা খাড়া রেখার পোশাক ব্যক্তির দেহ কাঠামোকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে বড় করে তোলে। অন্যদিকে আড়াআড়ি রেখার পোশাকে অতিরিক্ত লম্বা ব্যক্তির দেহ কাঠামোকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ছোট দেখায়।

পোশাকে আড়াআড়ি ও খাড়া রেখার প্রভাব

৪. পোশাকের আকার পোশাকের আকারের তারতম্য করেও দেহাকৃতির ওপর প্রভাব ফেলা যায়। পাতলা গড়নের ব্যক্তির জন্য ঢিলেঢালা, ফুল হাতা, ছোট গলার পোশাক বিশেষ উপযোগী। আবার বড় গলা, ছোট হাতার আঁটোসাঁটো পোশাকে স্থূলকায় ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী মনে হবে।
৫. পোশাকের পরিচ্ছন্নতা- ব্যক্তিত্ব বিকাশে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরিচ্ছদের সাথে সাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আগেই জেনেছি যে নোংরা হলে দামি পোশাকও বিরক্তির সৃষ্টি করে। এ অবস্থা মানুষের ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে না।
৬. সমাজের রীতিনীতি- ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করার জন্য সমাজের রীতিনীতির দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন ধরনের পোশাক পরিধান না করাই ভালো। এতে ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য ফুটে উঠে না।
সর্বোপরি পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজসজ্জা, অলংকার ইত্যাদি সামগ্রী উপলক্ষ্য, নিজের সামর্থ্য ও অনুষ্ঠানের ভাবধারার প্রতি লক্ষ রেখে পরিধান করলে আত্মতৃপ্তির পাশাপাশি ব্যক্তিত্বও সবার কাছে প্রশংসিত হয়।

কাজ ১- ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের ডিজাইনের সম্পর্ক লেখো।
Content added By

অনুশীলনী

104

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

১. পাতলা ব্যক্তির জন্য কোন ধরনের হাতার পোশাক বিশেষ উপযোগী?

ক. ছোট হাতা
খ. ফুল হাতা
গ. খ্রী কোয়ার্টার
ঘ. হাতকাটা

২. উপলক্ষ্যের প্রতি লক্ষ রেখে পোশাক নির্বাচন করলে
i. অপরের প্রশংসা পাওয়া যায়
ii. ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়
iii. আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
জবা ও রেবা দুই বোন। জবা আকারে লম্বা। অন্যদিকে রেবা শ্যামলা ও আকারে ছোট। তাই রেবা পোশাক নির্বাচনে সচেতন।

৩. কোন রেখার পোশাক জবাকে আপাতদৃষ্টিতে ছোট দেখাবে?

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

৪. রেবার পোশাকের জন্য নিচের কোনটি অধিকতর উপযোগী

ক. গাঢ় রঙের বড় ছাপা
খ. হালকা রঙের বড় ছাপা
গ. হালকা রঙের ছোট ছাপা
ঘ. গাঢ় রঙের ছোট ছাপা

সৃজনশীল প্রশ্ন:

১. কমল ও কারিনা দুই ভাই বোন। গায়ের রং ও দেহের কাঠামোতে একে অপরের বিপরীত। কারিনা কৃষ্ণকায় এবং কমল স্থুলকার। পোশাকের ক্ষেত্রে কমল হালকা রং ও ছোট ছোট ছাপাকে প্রাধান্য দেয়। কারিনা ঢিলেঢালা কিন্তু উজ্জ্বল গাঢ় রঙের পোশাক পছন্দ করে। দাম নয়, পোশাকের নকশা ও আরামের বিষয়টি কমল ও কারিনা সব সময় বিবেচনা করে থাকে।

ক. ব্যক্তিত্ব কী?
খ. "পোশাক ও ব্যক্তিত্ব এ দুটি একে অন্যের পরিপূরক"- ব্যাখ্যা করো।
গ. পোশাক নির্বাচনে কারিনার উজ্জ্বল গাঢ় রঙের পোশাক নির্বাচনের কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের সম্পর্ক বিবেচনায় কমল ও কারিনার পোশাক নির্বাচন কতটা যথার্থ হরেছে আলোচনা করো।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...