শিশুবিকাশ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - | NCTB BOOK
2

 

শিশু বিকাশ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা

বয়ঃসন্ধির পরিবর্তন অতি দ্রুত সংগঠিত হয়। অনেক সময় পূর্ব প্রস্তুতি এবং বিজ্ঞানসম্মত ধারণার অভাবে এ
সময়ের বিকাশ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। বয়ঃসন্ধিতে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা থেকে
নিজেকে রক্ষা করার কৌশল জানা অত্যন্ত জরুরি। নিজেকে রক্ষা করা ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি
যেমন- মাদকাসক্তি, যৌতুক, বাল্য বিবাহ ইত্যাদি প্রতিরোধ করা বয়ঃসন্ধির ছেলে-মেয়েদের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিশুর সাধারণ রোগব্যাধি সংক্রমণমুক্তকরণ, টিকা ও ইনজেকশনের প্রয়োজনীয়তা জানা
প্রয়োজন। তাছাড়া আমাদের আশেপাশে বসবাসকারী বিভিন্ন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু আমরা দেখতে পাই,
যাদের সম্পর্কে সচেতন হওয়াও আমাদের দায়িত্ব।

এই বিভাগ শেষে আমরা-

বয়ঃসন্ধির পরিবর্তন এবং এই পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব।

এ বয়সে পরিবার ও সমাজের সাথে খাপ খাওয়ানোর কৌশল বর্ণনা করতে পারব।

• শিশুর সাধারণ রোগ-ব্যাধিগুলোর লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ বর্ণনা করতে পারব।

• বিভিন্ন রোগের সংক্রমণমুক্তকরণ টিকা, ইনজেকশনের এর বর্ণনা দিতে পারব।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর বৈশিষ্ট্য ও তাদের প্রতি করণীয় আচরণ ব্যাখ্যা করতে পারব।

মাদকাসক্তি, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, যৌন-নিপীড়ন ইত্যাদি প্রতিকূল অবস্থা থেকে
নিজেকে রক্ষা করার উপায় ব্যাখ্যা করতে পারব।

বন্ধু নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় এবং প্রচার মাধ্যমের ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করতে পারব ।

Content added By

বয়ঃসন্ধিকাল

0

পাঠ ১ - বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন

১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর বয়সকে কৈশোরকাল বলা হয়। এই কৈশোর কালেরই অপর নাম
বয়ঃসন্ধিকাল। বয়ঃসন্ধিকাল দ্রুত পরিবর্তনের সময়। এ সময়ের শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন যৌনাঙ্গের পরিবর্তন। অন্যান্য সকল পরিবর্তনের মতো যৌন
পরিবর্তনও এক ধরনের বিকাশ। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি শিশু পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত হয়। এই
পরিবর্তনের ধরন ও কারণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে অনেক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, মনটা
সবসময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। তাই বয়ঃসম্প্রিক্ষণ বয়সটিকে ঝড়-ঝঞ্ঝার বয়স বলে মনে করা হয়।


বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরিবর্তন সম্পর্কে আমরা কেন জানব?

-এ বয়সের শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানলে আমাদের পূর্ব-প্রস্তুতি থাকবে।

-সহজভাবে পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারব এবং পরিবর্তন সম্পর্কে কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না।

-পরিবারে ছোট ভাই বা বোনকে পূর্ব-প্রস্তুতি দিতে পারব।

-কৈশোরের যে কোনো ছেলেমেয়েকে পরিবর্তন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারব।

-অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করতে পারব।

-পরিবারের বড়দের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে পারব।

-সহজেই পরিবার ও সমাজের সাথে খাপ খাওয়াতে পারব।

১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর বয়সকে আমরা কৈশোরকাল বলি। কৈশোরকালেরই অন্য একটি নাম
বয়ঃসন্ধিকাল। তবে কৈশোরকালের প্রথমদিক অর্থাৎ ১০/১১ থেকে ১৪/১৫ বছর সময়টাই বয়ঃসন্ধিকাল
হিসাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বয়ঃসন্ধিতে দেহের আকার-আকৃতির পরিবর্তন হয়। ছেলেমেয়েদের উচ্চতা ও ওজন
দ্রুত বাড়তে থাকে। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধিতে তারা পূর্ণবয়স্কের রূপ ধারণ করে। এ সময়ে
ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন শুরু হয় ।

যে সব ছেলে-মেয়েদের নির্দিষ্ট বয়সের অনেক আগে এ পরিবর্তন শুরু হয়, তাদের অকাল পরিপক্ক (Early
Mature) বলা যায়। আর যাদের নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছু পরে এ পরিবর্তন শুরু হয়, তাদের বিলম্বিত

৩৪

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান

পরিপক্ক (Late Mature) ছেলে বা মেয়ে বলা হয়। তাড়াতাড়ি পরিবর্তন বা দেরিতে পরিবর্তন- কোনোটিই
দুশ্চিন্তার কোনো বিষয় নয়। বংশগত কারণ, আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে এই পরিবর্তনের সময়কাল
একেক জনের একেকরকম হয়। অপুষ্টির কারণেও পরিবর্তন দেরিতে আসতে পারে।

পাঠ ২ – বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনের কারণ

তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনের কারণ কী? কেনইবা হঠাৎ করে ১০/১১ বছর
বয়সে এই পরিবর্তন শুরু হয়? হ্যাঁ, এখন আমরা বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জানব। বয়ঃসন্ধির
পরিবর্তনের জন্য দায়ী আমাদের দেহে উৎপন্ন কিছু রাসায়নিক পদার্থ যা হরমোন নামে পরিচিত।

হরমোন কী?

মানুষের দেহে কতকগুলো বিশেষ গ্রন্থি থাকে। গ্রন্থি হলো একগুচ্ছ কোষ যা বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থ
নিঃসরণ করে। এই সব রাসায়নিক পদার্থ স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় এবং সরাসরি রক্তে
মিশে যায়। এই হরমোন রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, দেহের অনেক
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটায় এবং দেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জৈব রাসায়নিক
পদার্থই হলো হরমোন। হরমোন নিঃসরণ কম বা বেশি হলে বিকাশের ধারা বিঘ্নিত হয়। মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি
নিয়ন্ত্রণ করে যে হরমোন, তার নাম গ্রোথ হরমোন। এ হরমোন যতদিন নিঃসরিত হয়, ততদিন মানুষ লম্বা
হয়, বিভিন্ন অস্থি সুগঠিত হয়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়।
বলে মানুষের বৃদ্ধিও বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের সকলের মস্তিষ্কের তলদেশে পিটুইটারি নামক গ্রন্থি
অবস্থিত। বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গোনাডোট্রপিক হরমোন
নিঃসৃত হয়। এ হরমোন ছেলেদের শুক্রাশয়ের বৃদ্ধি ঘটায়। তখন শুক্রাশয় থেকে ক্ষরিত হয় টেস্টোস্টেরন
হরমোন।

এই টেস্টোস্টেরন হরমোন ছেলেদের বিভিন্ন
পরিবর্তনে দায়ী প্রধান হরমোন যা দ্বারা ছেলেদের
শুক্রাণু তৈরি হয় এবং গোঁফ, দাড়ি ও শরীরের
বিভিন্ন স্থানে লোম গজায়।

মেয়েদের দেহে গোনাডোট্রপিক হরমোনের ক্ষরণ
ডিম্বাশয়কে পূর্ণতা দেয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে
ক্ষরিত হয় ইস্ট্রোজেন। এই হরমোনের কারণে
মেয়েদের ঋতুস্রাবসহ শারীরিক ও মানসিক
বিভিন্ন পরিবর্তন হয়।

দেহের আকৃতি যতদিন অপরিণত থাকে অর্থাৎ শিশুর মতো থাকে ততদিন ছেলেমেয়েরা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি
আকর্ষণ অনুভব করে না। কিন্তু মাধ্যমিক বা গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য অর্জন শুরুর পর বিপরীত লিঙ্গের প্রতি
আকর্ষণ অনুভব করে। তোমরা এখন বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে বা মেয়ে। এ বয়সের পরিবর্তন সম্পর্কে
তোমাদের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। এ বয়সের যেসব ছেলে-মেয়ে তাদের দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা, প্রশ্ন ইত্যাদি
নির্ভরযোগ্য কারও কাছে প্রকাশ করতে পারে, তাদের আচরণ কম বিঘ্নিত হয়।

 

পাঠ ৩ বয়ঃসন্ধিকালে পরিবারের সাথে খাপ খাওয়ানো

বয়ঃসন্ধিকালে পরিবারে বিশেষ করে বাবা-মার সাথে ছেলেমেয়েদের সম্পর্কের পরিবর্তন আসে। প্রায়ক্ষেত্রেই
এই সম্পর্ক অবনতির দিকে যায়। এ জন্য বাবা-মা এবং সন্তান উভয়পক্ষকেই দায়ী করা যেতে পারে। কীভাবে
পরিবারের সাথে সুন্দরভাবে খাপ খাওয়াতে হবে এ কৌশল শেখার আগে জেনে নেই, কেন এ ধরনের
সমস্যাগুলো হয়ে থাকে।

মনোভাবের পার্থক্য: মা-বাবা ও বয়ঃসন্ধিক্ষণের সন্তানদের মনোভাবে অনেক পার্থক্য থাকে। যেমন-
মা-বাবা যে টিভি অনুষ্ঠান পছন্দ করেন, সন্তানদের তা ভালো লাগে না। বয়সের পার্থক্য, সামাজিক
বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য মনোভাবের পার্থক্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানরা মা-বাবাকে বর্তমান যুগের
অনুপোযুক্ত মনে করে। এ কারণে মা-বাবার নির্দেশকে প্রায়ই তারা অমান্য করে।

বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছেলেমেয়েরা স্বাধীনভাবে চলতে পছন্দ করে। তাদের কোনো
কাজে বড়দের হস্তক্ষেপ তারা পছন্দ করে না। পরিবারের আরোপিত বিধিনিষেধের বিরোধিতা করে।
অনেক সময় মনে করা হয় যে তাদের প্রতি অন্যায়, অবিচার করা হচ্ছে। এজন্য তারা ক্ষুব্ধ হয়।

 শৈশবে আচরণে মেয়ে বা ছেলের পার্থক্য করা হয় না। অথচ বড় হওয়ার সাথে
সাথে মেয়েদেরকে মেয়েদের মতো আচরণ করার জন্যে চাপ দেওয়া হয়। এ অবস্থা মেনে নিতে মেয়েদের
কষ্ট হয়। নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে না ফেরা, একা কোথাও যেতে না দেওয়া বিপরীত লিঙ্গের সাথে
মেলামেশায় আপত্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো মতবিরোধ ঘটায়।

দায়িত্ব পালনে অনিহা-শারীরিক পরিবর্তনের জন্য বয়ঃসন্ধিক্ষণে ক্যালরি বা শক্তি ক্ষয় বেশি হয়।
কাজে অনিহা, যে কোনো কাজে বিরক্তি, পড়াশোনায় একঘেয়েমি ও ক্লান্তি আসতে পারে। এ সময়ে
মা-বাবা লেখাপড়ায় আরও বেশি সময় ব্যয় ও মনোযোগী হওয়ার উপর জোর দেন ও সবসময় সতক
করেন। এ নিয়ে সন্তানদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং মা-বাবার সাথে সন্তানদের দূরত্ব বাড়ে।

অর্থনৈতিক চাহিদা : বয়ঃসন্ধিতে ছেলেমেয়েদের বন্ধুদের সাথে বেড়ানো, পোশাক পরিচ্ছদ কিংবা শিক্ষা
উপকরণের চাহিদা থাকে। অসচ্ছলতা বা যে কোনো কারণে পরিবার চাহিদা পূরণ করতে না পারলে বা না
চাইলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

বাবা মার সম্পর্ক-বাবা-মায়ের মধ্যে মতবিরোধ বা সুসম্পর্ক না থাকলে সন্তানের মধ্যেও অশান্তি বিরাজ করে।

সকল মা-বাবার মধ্যে সন্তানদের জন্য স্নেহ-ভালোবাসার কোনো ঘাটতি থাকে না। সন্তানদের মলিন মুখ,
কষ্ট, দুশ্চিন্তা তাদেরকেও কষ্ট দেয়। স্নেহ-মমতা প্রকাশের ভঙ্গি একেক বাবা-মায়ের একেকরকম হয়।
সবসময়ই মনে রাখা দরকার যে, বাবা-মায়ের সবরকম বিধি-নিষেধের উদ্দেশ্যই থাকে সন্তানদেরকে
সঠিকভাবে গড়ে তোলা।

অনেক সময় মা-বাবা সন্তানের চাহিদা বুঝতে পারেন না। সেক্ষেত্রে সন্তানদের উচিত মা-বাবার কাছে
চাহিদার কথা খোলামেলা ভাবে প্রকাশ করা। শিক্ষা সংক্রান্ত চাহিদা যেমন- বইপত্র, অন্যান্য শিক্ষা সরঞ্জাম কী
কাজে লাগবে এবং কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা বাবা-মায়ের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা বা
তাদেরকে বুঝিয়ে বলা। পারিবারিক দায়িত্ব পালনে কোনো অসুবিধা থাকলে বা শারীরিক কোনো সমস্যা
মা-বাবাকে খোলামেলা বললে পরিস্থিতির জটিলতা অনেক কম হয়।

তোমরা হয়তো ভাবতেই পার না যে, বাবা-মায়ের মতবিরোধ দূর করতে তোমরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পার।
কী করলে মা-বাবা খুশি হবেন, কিসে তাদের সম্পর্ক ভালো হবে এটির কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই।
তোমাকেই বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে বুঝতে হবে তোমাকে কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে হবে।

মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, কাজ করার দক্ষতা। যে কোনো পরিবেশে
খাপ খাওয়ানোর জন্য এসব সম্পদ আজীবন সাহায্য করে। বয়ঃসন্ধিক্ষণ বয়সটাই প্রয়োজনীয় দক্ষতা
অর্জনের উপযুক্ত সময়। ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে- এটা মনে রেখে এ সময়ে তোমাদের যা যা
করতে হবে-

-মা-বাবা ও অন্যান্য সদস্যদের যথাযোগ্য সম্মান ও ভালোবাসা দিতে হবে।

-স্কুলের পড়াশোনায় আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

-মা-বাবা যে দায়িত্ব দেন, তা মনোযোগের সাথে পালন করতে হবে।

-অপ্রয়োজনে ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত তোমাদের নিজেদেরই নিতে হবে।

-যে কোনো সমস্যায় বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

এভাবেই তোমাদের সাথে পরিবারের দন্দ্ব, মতবিরোধ দূর হবে, পরিবারের সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায়
থাকবে, পারিবারিক পরিবেশটাকে তোমার কাছে মনে হবে- অনেক আনন্দের, অনেক সুখের।

পাঠ ৪ - বয়ঃসন্ধিকালে সমাজের সাথে খাপ খাওয়ানো

পরিবারের বাইরে আমরা সবচেয়ে বেশি সময় কাটাই স্কুলে ও সমবয়সী দলে।

স্কুলের সাথে খাপ খাওয়ানো-তোমরা কি কখনো এভাবে ভেবে দেখেছ যে, স্কুলে তোমরা কতটা সময়
ব্যয় কর? জেনে রাখ, একটি শ্রেণিতে বছরে এক হাজারেরও বেশি ঘণ্টা তোমরা স্কুলে কাটাও। স্কুলের
পরিবেশে যদি ভালোভাবে খাপ খাওয়ানো যায়, তবে পরবর্তী জীবনে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানো সহজ হয়।
আবার, স্কুল জীবনের সফলতার উপর পরবর্তী জীবনের সফলতা অনেকখানি নির্ভর করে।

১২ বছর বয়সের মাহিয়াত। বাবার বদলির কারণে আজ প্রথম দিন নতুন স্কুলে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে সে
ভাবতে থাকে, ক্লাসের বন্ধুরা কেমন হবে? সকলে কি আমাকে পছন্দ করবে? আমি কি স্কুলের শিক্ষকের সব
প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব? মাহিয়াতের ভাবনা থেকে নিশ্চয়ই উপলব্ধি করা যায় যে, স্কুলে আমাদের অনেক
কিছুর সাথে খাপ খাওয়াতে হয়। যেমন- প্রত্যেক বিষয়ের পড়া, শিক্ষক, সহপাঠীর আচরণ, ক্লাস রুটিন
ইত্যাদি অনেক কিছু।

তোমরা একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝতে পারবে যে, শিক্ষকরা সব ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে একরকম আচরণ করেন
না। যারা ভদ্র, বিনয়ী, ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের কথা শোনে, সেসব ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকরা বেশি
প্রশংসা ও উৎসাহ প্রদান করেন। আর যারা স্কুলের নিয়ম ভঙ্গ করে, পড়াশুনায় অমনোযোগী, তাদেরকে
শিক্ষকরা পছন্দ করেন না। শিক্ষকের প্রশংসা ও উৎসাহ স্কুলের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বাড়ায়,
লেখাপড়ায় সফলতা দেয়। এ লক্ষ্যে তোমাদের যা যা করণীয়-

-ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের পাঠদান শোনা।

-যে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা থাকলে শিক্ষকের কাছে বুঝে নেওয়া।

-শিক্ষকের প্রশ্নের স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর দেওয়া ।

-যথাসময়ে শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ সম্পন্ন করা।

-দলীয় কাজে নিজের দায়িত্ব বুঝে নেওয়া ও যথাযথভাবে তা পালন করা

-স্কুলের নিয়ম মেনে চলা।

-অসুস্থতার সময় ছাড়া নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকা।

মনে রাখবে, শিক্ষকের সহায়তা ও তোমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ দুটি মিলে তোমাদের শেখার কাজটি
অনেক বেশি সহজ ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে।

সহপাঠী, সমবয়সী দলের সাথে খাপ খাওয়ানো বলতে পার- সহপাঠী বা সমবয়সী দলের মধ্যে কেন একজন
সবার প্রিয় হয়, আবার কেনইবা একজনকে সবাই পছন্দ করে না, দূরে ঠেলে দেয়? এই কারণগুলো আমাদের
জানা দরকার। সমবয়সীদের কাছে জনপ্রিয় হতে হলে কয়েকটি আচরণের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে
হয়।

 

যারা যখন তখন কাউকে আঘাত করে, ঝগড়া মারামারি করে, কোনো ধরনের সহযোগিতা করে না, সমস্যা
তৈরি করে, খেলাধূলার সময় নিয়ম মানে না, মিথ্যা বলে তাদেরকে সবাই প্রত্যাখান করে।

স্কুলে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত যেসব কার্যক্রম চলে, সেগুলোতে অংশগ্রহণ করা জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম উপায়।
যেমন- খেলাধুলায় অংশ নেওয়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, গান, অভিনয়, বিতর্ক, কুইজ প্রতিযোগিতা করা,
বিজ্ঞান মেলা, প্রদর্শনীতে দলের সক্রিয় সদস্য হওয়া ইত্যাদি।

স্কুল, সহপাঠী ও সমবয়সী দলের সাথে খাপ খাওয়ানো ছাড়াও আত্মীয়-যজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে
সুসম্পর্ক বজায় রাখা বয়ঃসন্ধিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আত্মীয়ফজনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা, বয়স্ক
আত্মীয়দের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া, প্রতিবেশীদের সাথে দেখা হলে কুশল বিনিময় করা,
সকলের বিপদের মুহূর্তে এগিয়ে আসা ইত্যাদি কাজের মধ্য দিয়ে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যায়।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. আমাদের সকলের মস্তিষ্কের তলদেশে কোন গ্রন্থি অবস্থিত?

ক. থাইরয়েড গ্রন্থি

খ. পিটুইটারি গ্রন্থি

গ. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি

ঘ. শুক্রাশয় গ্রন্থি

২. বয়ঃসন্ধিক্ষণে কোন ধরনের পরিবর্তনের জন্য শক্তি বেশি ক্ষয় হয়?

ক. দৈহিক বৃদ্ধি

খ. মনোভাবের তারতম্য

গ. বন্ধুত্বের আধিক্য

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর পাও

ঘ. কঠোর শাসন

১৫ বছরের কণা প্রায়ই সন্ধ্যার পর বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যায়। আজ এ বন্ধুর জন্মদিন, কাল ও বন্ধুর
জন্মদিন লেগেই আছে। তাঁর স্বাধীন চলাফেরা বাবা-মা মেনে নেন না। প্রায়ই তাকে এ বিষয়ে বকাঝকা
করেন এবং কণার উপর ক্ষুব্ধ হন।

৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত কণার এই আচরণের কারণ-

ক. বাবা মার অধিক খেয়াল

গ. বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত মেলামেশা

৪. উপরোক্ত পরিস্থিতিতে কণার-

খ. স্বাধীনভাবে চলাফেরা

ঘ. সুনির্দিষ্ট বয়সে মানসিক পরিবর্তন

পরিবারের সাথে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে

ii. মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে

iii. শারীরিক দক্ষতা হ্রাস পেতে পারে

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i७॥

গ. ii ও iii

খ. i ও iii

ঘ. i, ii ও ইইই

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. জয়া ও রিমি ১৪ বছরের যমজ দুই বোন। তারা সবসময়ই টিভি দেখা, ঘুরে বেড়ানো, সাজগোজ ইত্যাদি
নিয়ে ব্যস্ত থাকে। লেখাপড়ায়ও তারা অমনোযোগী। মেয়েদের এই পরিবর্তন মা কিছুতেই মেনে নেন
না। আবার তিনি মেয়েদের সাথে সকল কথা খোলাখুলিভাবে প্রকাশও করেন না।

ক. কোন বয়সকে আমরা কৈশোর কাল বলে থাকি?

খ. হরমোন নিঃসরণ যথাযথভাবে না হলে কী হয়?

গ. জয়া ও রিমির সমস্যার কারণ উল্লেখ করে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. জয়া ও রিমির মায়ের ভূমিকা তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে কি? উদ্দীপকের
আলোকে বিশ্লেষণ কর।

২. ১০ম শ্রেণির জাভেদের ২ বছরের ছোট বোন কণা। ছোট থেকে দুই ভাই-বোন এক সঙ্গে বড় হচ্ছে,
খেলছে, বেড়াচ্ছে। কিছুদিন ধরে বাবা-মা জাভেদের কিছু পরিবর্তন খেয়াল করেন। সে নিজেকে আড়াল
করে চুপি চুপি সেলুনে যায়। লুকিয়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা দেখে। কণাও স্কার্ট, টপ এসব
পরতে চায়। সেও আগের মতো নেই। কণা চিত্র জগতের বই, বড়দের বই এসব থেকে বড়দের নানা
কিছু জানতে চেষ্টা করে। মা বিষয়টি খেয়াল করেন। তাদের এ পরিবর্তনগুলো বাবা-মা সহজ করে
বুঝিয়ে দেন। মা কণার বয়সের উপযোগী বই উপহার দেন।

ক. কৈশোর কালের অন্য একটি নাম কী?

খ. বয়ঃসন্ধিক্ষণ বয়সকে ঝড়-ঝঞ্চার বয়স বলা হয় কেন?

গ. জাভেদের মধ্যে কোন ধরনের পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

ঘ. জাভেদ ও কণার সঙ্গে বাবা-মার সহজ সম্পর্ক ওদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের সহায়ক
কথাটি বিশ্লেষণ কর।

Content added By

রোগ সম্পর্কে সতর্কতা

0

রোগ সম্পর্কে সতর্কতা

আমাদের চারপাশে নানা ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু ঘুরে বেড়ায়, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এর মধ্যে
কতকগুলো জীবাণু ক্ষতিকর । এই ক্ষতিকর জীবাণু খাদ্য, শ্বাস গ্রহণ, চামড়া ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের
শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগ সৃষ্টি করে। তবে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলেই আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি
না। কারণ জীবাণুকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের শরীরে নানারকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আছে । এই
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যদি শক্তিশালী না হয় তবে জীবাণু জয়ী হয়, আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা জ্বর,
সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ইত্যাদি নানা রোগে আক্রান্ত হই। তাই বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সতর্কতা এবং
সংক্রমণমুক্তকরণ টিকা ও ইনজেকশন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন ।

পাঠ ১ - শিশুর সাধারণ রোগব্যাধি

সঠিক যত্নের অভাবে অতি শৈশবে শিশুরা নানা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যে সকল কারণে শিশুরা
সহজেই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলো হচ্ছে-

জন্মের সময় ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম।

নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে জন্ম গ্রহণ।

শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময় মায়ের অসুস্থতা বা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব।

জন্মের পরই শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ানো। মায়ের প্রথম দুধকে শালদুধ বলে। এই দুধে
কলোস্ট্রাম নামক পদার্থ থাকে যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।

 

জন্মের ছয় মাস পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার বা পরিপুরক খাবার না দেওয়া।

সময়মতো রোগ প্রতিরোধক টিকা বা ইনজেকশন না দেওয়া।

উপর্যুক্ত কারণে শিশুরা শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে, ফলে সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। শিশুরা যে সকল সংক্রামক
রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলো আলোচনা করা হলো-
 

জ্বার: জ্বার সম্পর্কে সকলেরই নিশ্চয়ই ধারণা আছে। আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮.৪°
ফারেনহাইট। তবে ছোট শিশুদের দেহের তাপমাত্রা থাকে ৯৯° ফারেনহাইট। তাপমাত্রা যদি এর চেয়ে বৃদ্ধি
পায় তবেই জ্বর বলে ধরা হয়। জ্বর নানা কারণে হতে পারে। যেমন- ইনফেকশন, অ্যালার্জি ইত্যাদি ।

অল্প জ্বর হলে যা করণীয়:
-

পাতলা সুতির জামা পরিধান করা।

.
আলো বাতাসপূর্ণ ঘরে থাকা।

মাথা ধুয়ে শরীর ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা।

স্যালাইন, ফলের রস, শরবত, সুপ, পাতলা দুধ ইত্যাদি তরল খাবার বেশি করে খাওয়া।

চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলা।

 

উচ্চ জ্বর হলে করণীয় - ১-৫ বছরের শিশুর মধ্যে উচ্চ জ্বরের প্রবণতা দেখা যায়। এতে দেহের তাপমাত্রা
১০৫° ফা. পর্যন্ত হতে পারে, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।

উচ্চ জ্বরে শিশুর যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে-

• খিঁচুনি, চেহারায় অস্বাভাবিকতা

• শ্বাসক্রিয়া ও নাড়ির গতি বৃদ্ধি

• অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

• ঘনঘন বমি ও পাতলা মলত্যাগ।

এই ক্ষেত্রে যা করতে হবে -

জ্বর না কমা পর্যন্ত মাথায় পানি ঢালতে হবে।
এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে সমস্ত শরীর বারবার
ভালো করে মুছে দিতে হবে। দেহের
তাপমাত্রা কমে আসলে শুকনা কাপড় দিয়ে
শরীর মুছে জামা পরাতে হবে।

 

-জ্বর যদি ১০৪° ফা. ১০৫° ফা. হয় তবে জামা খুলে গোসল করাতে হবে। এতে তাপমাত্রা ২/৩
ডিগ্রি কমে আসবে।

-ঘরে মুক্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে, শিশুকে হাল্কা সুতির জামা পরাতে হবে।

-দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

জ্বরে খাদ্য ব্যবস্থা -

-জ্বর হলে বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, কোষকলা ক্ষয় হয়। ফলে দেহের প্রোটিন ও অন্যান্য খাদ্য
উপাদানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাই মাছ, ছোট মুরগি, দুধ-রুটি, পাতলা করে দুধ-সুজি, সুপ, নরম
ভাত, পাতলা ডাল, নরম খিচুড়ি ইত্যাদি সহজ পাচ্য খাবার দিতে হবে।

-জ্বরে ঘামের সাথে শরীর থেকে প্রচুর পানি, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লবণ বের হয়ে যায় এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই ফলের রস, সবজির সুপ, শরবত, ডাবের পানি, স্যালাইন ও
অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে ।

পাঠ ২ ডায়রিয়া

ডায়রিয়া প্রধানত পানিবাহিত রোগ। ডায়রিয়া হলে খাদ্যদ্রব্য বেশিক্ষণ অস্ত্রে না থাকায় এগুলোর পরিপাক
ও বিশোষণ সম্পূর্ণ হয় না ফলে খাদ্য উপাদানগুলো দ্রুত পায়খানার সাথে বের হয়ে যায়। প্রচুর অশোষিত
পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে মল তরল হয়।

এর ফলে শিশুর মধ্যে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় -

ঘনঘন পাতলা মলত্যাগ হয়

বমি বমি ভাব বা বমি হয়

মাথার তালুর মধ্যভাগ দেবে যায়

চোখ কোটরাগত হয়

• শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়

• জিভ ও ঠোঁট শুকিয়ে যায়

• শিশুর ওজন হ্রাস পায়

অবস্থা বেশি খারাপ হলে শিশু অচেতন হয়ে পড়ে।

 

 

করণীয়• ডায়রিয়া হওয়ার সাথে সাথে শিশুকে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। এতে মারাত্মক পানিশূন্যতা
থেকে শিশু রক্ষা পাবে। যতবার মলত্যাগ করবে ততবার খাবার স্যালাইন শিশুকে বেশি
পরিমাণে দিতে হবে।

• স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি শিশুকে মায়ের দুধ দিতে হবে।

• তরল খাবার, যেমন - ফলের রস, রাইস স্যালাইন, লেবুর শরবত ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।
• পাতলা মলত্যাগ বেশি হলে এবং শিশু মুখে স্যালাইন খেতে না পারলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে
যেতে হবে।

খাওয়ার স্যালাইন - ঘন ঘন পাতলা মলত্যাগের ফলে শরীর থেকে প্রচুর জলীয় অংশ বের হয়ে যায়। যার
সাথে পটাশিয়াম বাই কার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং গ্লুকোজ নামক উপাদান বের হয়ে যায়। স্যালাইন
খাওয়ার ফলেই সে অভাব পূরণ হয়। স্যালাইনে যে সকল উপাদান থাকে সেগুলো হচ্ছে- সোডিয়াম ক্লোরাইড,
সোডিয়াম সাইট্রেট, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, গ্লুকোজ, নিরাপদ পানি। ঘরে সহজেই খাবার স্যালাইন তৈরি করে
শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। ঘরে স্যালাইন তৈরির পদ্ধতি-

উপকরণ

গুড় / চিনি
লবণ

পরিমাণ

এক মুঠ
তিন আঙুলের এক চিমটি
আধ লিটার

নিরাপদ ঠাণ্ডা পানি

একটি পাত্রে আধ লিটার নিরাপদ খাবার পানি, গুড়/চিনি ও লবণ নিয়ে একটি চামচ দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে
স্যালাইন তৈরি করতে হবে। তৈরি স্যালাইন ১২ ঘন্টার মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে। ডায়রিয়ার রোগীকে
স্যালাইন খাওয়ানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন রোধ করা।

স্যালাইন খাওয়ানোর নিয়ম -

মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না।

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যতবার পাতলা মলত্যাগ করবে ততবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
শিশু বমি করলেও একটু অপেক্ষা করে আবার খাওয়াতে হবে।

স্যালাইনের পাশাপাশি সুপ, ফলের রস, জাউভাত খাওয়ানো যেতে পারে।

পাতলা পায়খানা ও বমি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্যালাইন চলবে।

প্রয়োজনে রাইস স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

 

রোগ সম্পর্কে সতর্কতা

প্রতিরোধের উপায়y -

সবসময় ফুটানো নিরাপদ পানি বা টিউবওয়েলের পানি পান করতে হবে।

দুধ ভালোমতো ফুটিয়ে পান করতে হবে।

খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখতে হবে, যাতে মাছি বা পোকা-মাকড় বসতে না পারে।

খাবার গরম করে খেতে হবে।

বাসি পঁচা খাবার বর্জন করতে হবে।

পরিষ্কার থালা-বাসন বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে খাবার খেতে হবে।

মলমূত্র ত্যাগের পর হাত সাবান বা ছাই দিয়ে ধুতে হবে।

বাজার থেকে আনা ফলমূল ভালো করে নিরাপদ পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে।

 

পাঠ ৩ – সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও কৃমি
-

সর্দি-কাশি - সর্দি ও কাশির সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত। অ্যালার্জি কিংবা বিভিন্ন ইনফেকশনজনিত
কারণে সর্দি-কাশি হতে পারে। সাধারণত হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লেগে সর্দি-কাশি হয় এবং সেই সাথে
অনেক সময় সামান্য জ্বরও থাকে। সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময়, গ্রীষ্মকালে অধিক ঘাম ও ধুলা-বালি
থেকে এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

করণীয় -

রুমাল বা টিসু ব্যবহার করা।

গরম পানি ও লবণ দিয়ে গড়গড়া করা।

প্রচুর পানি বা পানি জাতীয় খাবার যেমন- স্যালাইন, ফলের রস খেতে হবে।

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা - ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসজনিত, বায়ুবাহিত, সংক্রামক ব্যাধি। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার ১৮
থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগটি প্রকাশ পায়। শিশুদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ দিন এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৩ থেকে
৫ দিন রোগটি স্থায়ী হয়। এই রোগে অধিক জ্বর, সেই সাথে সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা ও
গলাব্যথা থাকতে পারে। গ্রীষ্মকালে এই রোগটির প্রকোপ বেশি থাকে এবং যেখানে অনেক লোকের বাস
সেখানে রোগটি দ্রুত ছড়ায়।

 

করণীয় -

-হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করতে হবে এবং যেখানে-সেখানে কফ, থুতু ফেলা যাবে না।

-আক্রান্ত শিশুটিকে অন্যান্য শিশু থেকে পৃথক রাখতে হবে।

-তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভালো করে মাথা ধুয়ে শরীর মুছে ফেলতে হবে।

-তরল ও নরম খাবার খাওয়াতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে।

সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধের উপায় -

• ঋতু পরিবর্তনের সময় উপযুক্ত পোশাক পরতে হবে। গ্রীষ্মের সময় অধিক ঘাম হলে জামা খুলে শরীর মুছে ফেলতে হবে।

নিরাপদ পানি বা শরবত পান করা। ব্যায়াম ও বিশ্রাম নেওয়া, সুষম খাদ্য গ্রহণ, রোগটি যখন সংক্রামক আকারে ছড়ায় তখন বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন- লোকজনের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

কৃমি কৃমি মানুষের অস্ত্রে পরজীবি রূপে থাকে। আমাদের দেশের শিশুরাই এর দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়। কৃমি

শিশুর একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। শিশুরা তিন ধরণের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। যথা-

১. গোলকৃমি

২. সুতাকৃমি

এবং

৩. বক্রকৃমি

১। গোলকৃমি- এই কৃমি গোলাকার, আকারে বড়, দেখতে কেঁচোর মতো। তাই অনেকে কেঁচোকৃমিও বলে। কাঁচা শাকসবজি ও ফলের মাধ্যমে এ কৃমির ডিম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং পরে অস্ত্রের মধ্যে এ কৃমির উৎপত্তি হয় । আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে নিচের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় -

শিশুর পেট বড় হয়ে ফুলে যায়। বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, ওজন কমে যায় বদহজম ও দৈহিক দুর্বলতা দেখা দেয়। পেটে ব্যথা হয়, অপুষ্টি ও রক্তশূণ্যতা দেখা দেয় ।

২। সুতাকৃমি- এই কৃমি ছোট এবং সুতার মতো দেখায়। ত্রীকৃমি মলদ্বারে এসে ডিম পাড়ে। শিশুরা যখন মলদ্বার চুলকায় তখন নখের মধ্যে চলে আসে, পরে খাবার ও কাপড় চোপড়ের মাধ্যমে তা পরিবারের সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর লক্ষণগুলো হচ্ছে- মলদ্বার খুব চুলকায় ও মলদ্বারে কৃমির ডিম দেখা যায়।

৩। বক্রকৃমি- যেসব শিশু খালিপায়ে মাটির পথ দিয়ে হেঁটে বেড়ায় তাদের মধ্যে এই কৃমি দেখা যায়। এই কৃমির ডিম চামড়ার মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং অস্ত্রে প্রবেশের ফলে বড় কৃমিতে পরিণত হয়। লক্ষণ হচ্ছে- রক্তসল্পতা দেখা দেয়, ফলে শিশুকে ফ্যাকাশে দেখায় ।

 

 

 

প্রতিরোধের উপায়—

-যেখানে-সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ না করা। পাকা টয়লেট ব্যবহার করতে হবে।

-খাবার খাওয়ার আগে ও মল-মূত্র ত্যাগের পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

-কাঁচা ফলমূল ধুয়ে খেতে হবে। ঠাণ্ডা ও বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।

-হাতের নখ ছোট ও আঙুল পরিষ্কার রাখতে হবে।
জুতা বা স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে চলাফেরা করতে হবে।

- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবারের সবাইকে একসাথে কৃমিনাশক ঔষধ খেতে হবে।

পাঠ ৪ - হাম, যক্ষ্মা, পোলিওমাইলাইটিস, মাম্পস

হাম:হাম ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। যে কোনো বয়সেই মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে
৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ১৪ দিনের
মধ্যে হাম দেখা দেয়। এই রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে-

প্রথমে সর্দি হয়, নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে, মাথাব্যথা হয়, মুখমণ্ডল ফোলা মনে হয়।

১০৩° ফা.- ১০৪° ফা. পর্যন্ত জ্বর উঠে। ৩/৪ দিন পর ঘামাচির মতো দানা বা র্যাশ প্রথমে
কানের পেছনে দেখা যায়, পরে সারা শরীর ও মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। গাঢ় গোলাপি ও লাল
রঙের র‍্যাশে সারা শরীর ফুলে যায়। র্যাশ বের হওয়ার ৫/৬ দিন পর র্যাশগুলোর রং হালকা হয়ে
যায়, জ্বর কমে আসে। ৯/১০ দিন পর দানা শুকিয়ে চামড়া উঠতে থাকে।

চোখে র‍্যাশ উঠলে চোখের পাতা ও মনি ফুলে যায়, চোখ লাল হয়ে যায়।
গলার ভিতরেও র্যাশ উঠে ফলে শিশুর খেতে খুবই কষ্ট হয় ও বমি হয়।

হাম সেরে যাওয়ার পর অনেক সময় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

করণীয়

হাম হওয়ার সাথে সাথে শিশুকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। শুশ্রূষাকারী ছাড়া কারও ঐ ঘরে
প্রবেশ করা উচিত নয়। শুষাকারী সুস্থ ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশার আগে কাপড় বদলিয়ে
সাবান দিয়ে হাত-মুখ ভালো করে ধুয়ে নেবে। রোগীর ব্যবহৃত সব জিনিস আলাদা রাখতে হবে ।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। রোগ যাতে জটিল না হয় সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

তরল খাদ্য ঘন ঘন খেতে দিতে হবে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

প্রতিরোধের উপায় –

4502

যে বাড়িতে হাম দেখা দেবে সে বাড়িতে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।

৯ মাস বয়সে শিশুকে হামের টিকা দিতে হবে ।

 

যক্ষ্মা – যক্ষ্মা এক প্রকার মারাত্মক সংক্রামক রোগ। মাইক্রো- ব্যাকটিরিয়াল টিউবারকুলোসিস নামক একপ্রকার
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ ছড়ায়। যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি ও থুতু থেকে এ
রোগের জীবাণু ছড়ায় ও অন্যকে আক্রান্ত করে।

লক্ষন:

-প্রথমে অল্প অল্প জ্বর ও কাশি হয়।

-ক্ষুধা কমে যায়, শিশু ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে..
ওজন কমে যায়।

-আক্রান্ত গ্রন্থি ফুলে যায়, ব্যথা হয়, ক্ষতে

সৃষ্টি হয়।
-ক্রমাগত এবং দীর্ঘদিন খুসখুসে কাশি, কফ
এবং কফের সাথে রক্ত বের হয় ।

-রাতে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, নাড়ির ক্রমাগত
দ্রুত স্পন্দন, দেহে ক্লান্তি ভাব আসে।

যক্ষ্মায় আক্রান্ত শিশু

করণীয় - রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে
নিশ্চিত হতে হবে এবং নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে। রোগীকে পৃথক ঘরে পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে, উপযুক্ত
পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। আলো, বাতাসপূর্ণ ঘরে রোগীকে রাখতে হবে। যক্ষ্মা রোগীর
কফ, থুতু যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। যক্ষ্মা রোগীর ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও থালা-বাসন
আলাদা করে রাখতে হবে ও পরিষ্কার করতে হবে।

প্রতিরোধ - জন্মের পর এক ডোজ বিসিজি টিকা দিয়ে শিশুকে যক্ষ্মা রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।

পোলিওমাইলাইটিস ১০ বছরের কম বয়সের শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ভাইরাসটি শরীরে
প্রবেশের পর ৭ হতে ১০ দিন সময় লাগে রোগটি প্রকাশ পেতে।
-

লক্ষণগুলো হচ্ছে-

-১-৩ দিনের মধ্যে শিশুর সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, সামান্য জ্বর হয়।

-৩-৫ দিন পর মাথার যন্ত্রণা থেকে ঘাড় শক্ত হয়ে যায়,
হাত বা পা অবশ হয়ে যায়। শিশু দাঁড়াতে চায় না, দাঁড়
করাতে চাইলে কান্নাকাটি করে, আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ
দুর্বল হতে থাকে এবং পরে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে
পারে।

-শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী মাংসপেশি এই ভাইরাস দ্বারা
আক্রান্ত হলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

করণীয় এই রোগটির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিরোধের উপায় চার ডোজ পোলিও টিকা খাওয়ালে শিশু পোলিও থেকে রক্ষা পায়।

মাম্পস মাম্পস ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এই রোগ সব বয়সের মানুষের হয়। তবে ৫ থেকে ১৫
বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি হয়। বিশেষত শীতকালে এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। রোগটি
সংক্রমিত হওয়ার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায় ।

লক্ষণ - রোগের শুরুতে জ্বর হয়, ঘারের পাশে কানের নিচে একপাশ বা উভয় পাশ ফুলে যায়, ব্যথা হয়, পরে
সে ব্যথা মুখে ছড়িয়ে পড়ে। মুখ খুলতে অসুবিধা হয়। শুক্রাশয়, অগ্ন্যাশয়, ডিম্বাশয়, হৃৎপিণ্ড, চোখ, কান
ইত্যাদি অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে ।

করণীয় - শিশুকে তরল খাবার যেমন- দুধ, ফলের রস, সুপ ইত্যাদি দিতে হবে। গরম পানি ও লবণ দিয়ে
গার্গল করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

পাঠ ৫ সংক্রমণমূক্তকরণ টিকা, ইনজেকশন—

রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই উত্তম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাস্থ্যসেবায় সম্প্রসারিত
টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ, উল্লেখযোগ্য ও সময় উপযোগী পদক্ষেপ। ইপিআই একটি
বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সংক্রমণ রোগ থেকে শিশুদের অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব রোধ করা। তাই
বিশ্বব্যাপী রোগ প্রতিরোধের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করা অনেক
সহজ এবং কম ব্যয় সাপেক্ষ।

আমাদের দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো। এক বছরের কম বয়সের
শিশুদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং বেশির ভাগ রোগ এই বয়সেই হয়ে থাকে। তাই শিশুকে রোগ
প্রতিরোধক সব কয়টি টিকা নিয়মানুযায়ী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে হবে ।

 

 

ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে টিকা দিয়ে যে রোগগুলো প্রতিরোধ করা যায় সেগুলো হচ্ছে-

বিসিজি টিকা যক্ষ্মা রোগে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা দেওয়ার ২ সপ্তাহ পর টিকার স্থান লাল হয়ে
-
ফুলে যায়। আরও ২/৩ সপ্তাহ পর শক্ত দানা, ক্ষত বা ঘা হতে পারে। ধীরে ধীরে এই ক্ষত বা ঘা শুকিয়ে
যায়, দাগ থাকে। জন্মের পরই এই টিকা দেওয়া হয়।

ওপিভি টিকা – ওপিভি (ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন) টিকা পোলিও (পোলিও মাইলাইটিস) রোগ প্রতিরোধ করে।
জন্মের পর ৬ সপ্তাহের মধ্যে ১ম ডোজ, ২৮ দিন পর ২য় ডোজ, পরবর্তী ২৮ দিন পর ৩য় ডোজ এবং ৯ মাস

পূর্ণ হলে ৪র্থ ডোজ দিতে হয়।

পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন – এই টিকা ৫টি রোগ যেমন- ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি
এবং হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি প্রতিরোধ করে। জন্মের ৬ সপ্তাহ পর প্রথম ডোজ এবং ২য় ও ৩য় ডোজ
২৮ দিন অন্তর অন্তর দিতে হয়।

হামের টিকা – হামের টিকা শিশুকে হাম রোগ থেকে প্রতিরোধ করে। শিশুর বয়স ৯ মাস পূর্ণ হলে এই টিকা
দিতে হয়।

টিটি টিকা (টিটেনাস টক্সয়েড) টিটি টিকা ধনুষ্টংকার রোগ থেকে রক্ষা করে।

১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের সকল মহিলাকে এবং যে সকল শিশুর ডিপিটি / পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দেওয়ার পর

খিঁচুনি হয়েছে তাদের এই টিকা দিতে হবে।

কাজ প্রতিরোধক টিকার নাম ও রোগের নাম চার্টে দেখাও।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত ?

ক. ৯৭° ফারেনহাইট

গ. ৯৯.৪° ফারেনহাইট

২. জলাতঙ্ক ও প্লেগ রোগ হয় কেন?

ক. কীটপতঙ্গের কামড়ে

গ. দূষিত পানির মাধ্যমে

খ. ১৮.৪° ফারেনহাইট

ঘ. ১০০° ফারেনহাইট

খ. জীবাণুযুক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে

ঘ. জীবজন্তুর কামড়ে

রোগ সম্পর্কে সতর্কতা

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও

তমার গত রাত হতে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব হচ্ছে, চোখও প্রায় কোটরে ঢুকে গেছে।
বাড়িতে কোনো স্যালাইন প্যাকেট না থাকায় ওর মা তাৎক্ষণিকভাবে চিনির শরবত দেন। এতে অবস্থার
উন্নতি না হলে পাশের বাড়ির খালাম্মা এসে তমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।

৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত কারণে তমার শরীরে ঘাটতি হয়—

ক. গ্লুকোজ, নিরাপদ পানি, সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সাইট্রেট, ক্লোরিন
খ. গ্লুকোজ, জলীয় অংশ, পটাশিয়াম বাই কার্বনেট, সোডিয়াম ক্লোরাইড

গ. সোডিয়াম সাইট্রেট, নিরাপদ পানি, গ্লুকোজ, ক্লোরিন ও জলীয়াংশ

ঘ. গ্লুকোজ, নিরাপদ পানি, সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সাইট্রেট ও পটাশিয়াম ক্লোরাইড

৪. পাশের বাড়ির খালাম্মা দ্রুত তমাকে হাসপাতালে না নিলে কী হতে পারত—

দেহে মারাত্মকভাবে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি

II. জিভ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া

iii. অচেতন হয়ে যাওয়া

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. ii

গ. ii ও iii

x. i, ii s iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. কর্মজীবি আছিয়া সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মস্থলে থাকে। তাঁর ৫ বছরের মেয়ে তুলি
শারীরিকভাবে দুর্বল থাকার কারণে সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। ২-৩ দিন ধরে সে অল্প অল্প জ্বরে ভুগছে।
আজ কর্মস্থল থেকে ফিরে তুলির খিঁচুনি ও চেহারার অস্বাভাবিকতা দেখতে পায়। দেহের তাপমাত্রা ১০৪°
যা এ উঠলে প্রতিবেশী তাহমিনা তুলির শরীরের জামাকাপড় দ্রুত খুলে ফেলে এবং মাথায় ও গায়ে পানি
দিয়ে তার কমিয়ে আনে।

ক. মায়ের প্রথম দুধকে কী বলা হয়?

খ. আমাদের দেহ কতভাবে রোগ সংক্রামিত হয়?

গ. দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বে তুলিকে কী প্রক্রিয়ায় সুস্থ করা যেত- ব্যাখ্যা কর।

ঘ. তুমি কি মনে কর তাহমিনার দ্রুত সিদ্ধান্তই তুলির হার কমাতে সহায়ক- মতামত দাও।

৫২

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান

২. ফাইজা ৪ বছরের শিশু। গত ৩/৪ দিন ধরে তার বেশ জ্বর। সারা শরীর দানায় ভরে গেছে। ঠিকমতো
খেতেও পারছে না। ফাইজার বয়স যখন ৯ মাস পূর্ণ হয়েছিল তখন ওর মা শিশুকে প্রতিরোধক টিকা
দেন নি। চিকিৎসক ওর মাকে ঠাণ্ডা লাগাতে বারণ করেন। কারণ এতে নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে।
মায়ের সতর্কতা ও সেবায় ফাইজা সহজেই সুস্থ হয়ে উঠে।

ক. শিশুরা কত ধরনের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়?

খ. সর্দি-কাশি কখন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

গ. ফাইজার যে রোগ হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. মায়ের সতকর্তা ও শুশ্রূষা ফাইজাকে উদ্দীপকে উল্লিখিত জটিল রোগ থেকে সহজেই সুস্থ করে
ভোলে- বিশ্লেষণ কর।

 

Content added By

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু

0

আমরা চারপাশে যেসব শিশু দেখি তারা নিশ্চয়ই সবাই একইরকম নয়। কিছু শিশু শারীরিক, মানসিক ও
বুদ্ধিগত দিক থেকে সমাজের অন্যান্য সাধারণ শিশু থেকে আলাদা । যেসব শিশুর জন্য বিশেষ শিক্ষা, যত্ন ও
পরিচর্যার দরকার হয়, তারাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। তারা হচ্ছে— প্রতিবন্ধী শিশু, অটিস্টিক শিশু ও
প্রতিভাবান শিশু। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী শিশু সম্পর্কে তোমরা সপ্তম শ্রেণিতে পড়েছ। এই পাঠে তোমরা
অটিস্টিক শিশু ও প্রতিভাবান শিশু সম্পর্কে জানবে।

 

পাঠ ১ ও ২- অটিস্টিক শিশু

আমরা আমাদের চারপাশে যে শিশুদের দেখি তাদের সকলের আচরণ কি একইরকম? কখনোই না। যেমন-
বাড়িতে কোনো অতিথি আসলে কোনো শিশু তার দিকে এগিয়ে যায়, সব প্রশ্নের স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর দেয়। আবার
অন্য একটি শিশু অতিথি দেখলেই সামনে থেকে সরে পড়ে, তার দিকে তাকায় না, ভয় পায়। এইসব ছোটখাট
অসঙ্গতি খুবই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন এইসব অসঙ্গতির এক বা
একাধিক রূপ একই শিশুর মধ্যে প্রকটভাবে থাকে এবং সকলের কাছে সেগুলো গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা ছাড়িয়ে
যায়। এইসব অক্ষমতার কারণ সকলের কাছে স্পষ্ট থাকে না। যেমন- দৃষ্টিশক্তি সাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও
চোখে চোখে তারা তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। কিংবা বাকশক্তি স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও কোনো কথা
স্বাচ্ছন্দ্যে বুঝিয়ে বলতে পারে না। এ ধরনের শিশুর অক্ষমতাগুলোর সীমা বা আওতা বিশাল। বুদ্ধিবৃত্তীয় ও
আচরণগত সীমাবদ্ধতার এই সব শিশুই অটিস্টিক শিশু বা অটিজমের শিকার।

অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়। অটিজম বিকাশগত অক্ষমতা ও নিউরোবায়োলজিক্যাল ডিজঅর্ডার।
অটিজমের সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত অজানা। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অধিক হারে অটিজম আক্রান্ত হতে
দেখা যায়। অটিজমের ক্ষেত্রে মেয়ে ও ছেলে শিশুর অনুপাত প্রায় ১৪৪। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বর্তমানে
অটিজম আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব অটিস্টিক সচেতনতা দিবস প্রতি
বছর ২ এপ্রিল পালন করা হয়।

অটিজমের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য- আমরা সাধারণত যেসব রোগে ভুগে থাকি, তার লক্ষণগুলো সবার ক্ষেত্রে প্রায়
একই থাকে। যেমন- টাইফয়েড হলে জ্বর হয়। কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সমস্যা বা লক্ষণ একই হবে
তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। জন্মের পর থেকেই অটিজমের কারণে শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে থাকে।
লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় দেড় থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যে।

অটিজম শিশু বিকাশের তিনটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

১. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া (Social interaction)- অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ না থাকা, কে কী
করছে তা নিয়ে কৌতূহল না থাকা, অন্যের আচরণ বুঝতে না পারা।

২. যোগাযোগ (Communication) - কথা বলতে না শেখা, কোনোমতে কথা বলা, কথা বলতে

পারলেও অন্যের সাথে আলাপচারিতা করতে সমর্থ না হওয়া।

৩. আচরণ (Pattern of Behavior ) - পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ অর্থাৎ একই কাজ বারবার করা।
নিজস্ব রুটিন অনুযায়ী আচরণে অভ্যস্ত এবং এতে অনমনীয় থাকা।

১. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এ ক্ষেত্রে যে ধরনের সীমাবদ্ধতা দেখা যায়-

বাবা-মা বা নিয়মিতভাবে দেখা হচ্ছে এমন আপনজনদেরও চোখে চোখ রেখে তাকায় না। চোখে
চোখ দিয়ে যোগাযোগ অক্ষমতা অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে প্রকটভাবে দেখা যায়।

• শিশুকে নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না। সে হয়তো নামের ব্যাপারটা বুঝতেই পারে না।

কোনো ধরনের আনন্দদায়ক বস্তু বা বিষয় সে অন্যদের সাথে শেয়ার করে না। যেমন- নতুন খেলনা
পেলে স্বাভাবিক শিশুরা যেমন সবাইকে দেখায়, অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে কোনো খেলনার প্রতি

আগ্রহ থাকলেও সেটা নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকে না।

স্বাভাবিক শিশুরা কারও কোলে চড়তে বা আদর পেতে পছন্দ করে। কিন্তু অনেক অটিস্টিক শিশু এ
ব্যাপারে নিস্পৃহ থাকে। অন্য কারও সংস্পর্শে যাওয়াটা তারা তেমন পছন্দ করে না।

২. যোগাযোগ- এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো হলো-

২-৩ বছর বয়সে শিশু যে সমস্ত শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, অটিস্টিক শিশুরা তা পারে না।

অনেক সময় ৩-৫ বছর বয়সেও দু'তিন শব্দের বেশি দিয়ে বাক্য বলতে পারে না। নিজের

চাহিদাগুলো থার্ড পার্সনে বলে। নিজের নাম যদি হয় আসিফ তাহলে বলে 'আসিফ খাবো।
যে কোনো ছড়া অল্প কিছু শব্দের মধ্যে সব সময় বলে। যেমন- তাই তাই মামা যাই দুধ খাই লাঠি
পালাই। কিংবা আয় চাঁদ টিপ যা ইত্যাদি একই শব্দ বা বাক্যাংশ বারবার উচ্চারণ করার প্রবণতা

দেখা দিতে পারে। বাবা-মা মানা করলেও শোনে না বরং বিরক্ত হয়, রেগে যায়।

৩. আচরণ- এ ক্ষেত্রে যে ধরনের অসঙ্গতি থাকে তা হলো-

অটিস্টিক শিশুরা বিশেষ ধরনের আচরণ বারবার করতে থাকে। হয়তো শরীর দোলাতে থাকে,
আঙ্গুল নাড়াতে থাকে, খেলনা বাক্সে ঢোকায়, আবার বের করে- এভাবে পুনরাবৃত্তিমূলক কাজে দীর্ঘ
সময় কাটিয়ে দেয়।

অনেক অটিস্টিক শিশুই পেন্সিল ধরার স্বাভাবিক কায়দাটি পারে না, তারা মুঠোবন্দী করে ধরে।

তারা রুটিন মেনে চলতে ভালোবাসে। যেমন- বিছানায় যাওয়ার আগে হাতমুখ ধোওয়ার অভ্যাস
থাকলে হঠাৎ একদিন তা বাদ পড়লে সে চিৎকার করে। এরকম প্রতিক্রিয়ার কারণে অটিস্টিক
শিশুদেরকে জেদি বলে মনে করা হয়। বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও গেলে সে অস্বস্তি বোধ করে।

অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে সাধারনত পঁচিশ শতাংশের খিঁচুনি থাকতে পারে।

উপরের লক্ষণগুলো সব অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একসাথে নাও থাকতে পারে। এ ধরনের কয়েকটি লক্ষণ বেশি
দিন ধরে থাকলে অবশ্যই শিশুটিকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
হলো, শিশুকে সমবয়সী শিশুদের সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। এর মাধ্যমে একই বয়সী অন্য শিশুর
সাথে তুলনা করে শিশুর যে কোনো অস্বভাবিকতা নির্ণয় করা সম্ভব। শিশুর অটিজম দ্রুত শনাক্ত করে শিক্ষা
কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। যত কম বয়সে অটিজম শনাক্ত করা যায়, বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
তত তাড়াতাড়ি তার আচরণের উন্নয়ন সম্ভব।

 

সমাজে অটিজম নিয়ে অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা আছে। এ কারণে অটিজম সম্পর্কে বাস্তবতাগুলো আমাদের
স্পষ্টভাবে জানা দরকার। অনেকে মনে করেন যে, অটিজম নিরাময়যোগ্য। চিকিৎসায় তা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে
যায়। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, অটিস্টিক শিশুরা আজীবন এই অক্ষমতার সমস্যায় ভোগে। অটিস্টিক শিশুর
সমস্যাগুলো কখনোই পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব তা হলো- নিবিড় পরিচর্যা ও যত্নের মাধ্যমে
তার অক্ষমতা কমিয়ে আনা, যথাযথ সহযোগিতা, বিশেষ শিক্ষা দিয়ে পরিণত বয়সে তাকে যথাস
আত্মনির্ভর করা।

অনেক সময় মনে করা হয় যে, অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তি সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী। কিন্তু বাস্তবতা হলো অটিস্টিক
কেউ হয়তো বিশেষ কোনো কাজে দক্ষতা দেখাতে পারে কিন্তু এটা নিছকই ব্যতিক্রম ঘটনা। ২০-৩০% অটিস্টিক
শিশুর বুদ্ধিবৃত্তীয় অক্ষমতা থাকে না। এ ধরনের অটিজমকে অ্যাসপারগার সিনড্রোম বলা হয়। এদের অনেকেই
গণিতের মতো বিষয়ে সাভাবিক শিশুদের মতোই দক্ষতা অর্জন করতে পারে। তাদের মূল সমস্যা হলো
কথাগুলোকে সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। প্রশ্ন করা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া
কিংবা কারও কথায় তারা মন্তব্য করতে পারে না।

অটিস্টিক শিশুদের জন্য আছে বিশেষ ধরনের স্কুল। এসব স্কুলে অটিস্টিক শিশুদেরকে প্রথাগত শিক্ষার
পাশাপাশি তাদের জন্য উপযোগী কোনো পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নিবিড় যত্ন ও পরিচর্যার
মাধ্যমে তাদের অক্ষমতা একটু একটু করে কমিয়ে আনার চেষ্টা করাই বিশেষ শিক্ষার উদ্দেশ্য।

অটিজম স্কুলের ছাত্রীর নিজের আঁকা ছবি

অটিজম স্কুলের পাঠদান

অটিজম স্কুলের ছাত্র আদিল, বয়স ১৩ বছর। অটিস্টিক শিশু আদিল সম্পর্কে তার মায়ের উক্তি— “আদিল
কী কী পারে না, সে হিসাব আমি রাখতে চাই না। কী পারে সে কথাগুলোই বলতে চাই। ওকে নিয়ে যখন একা
থাকি, তখন অনেক সময় মনেই হয় না- ওর কোনো সমস্যা আছে। আদিল নিজের দৈনন্দিন কাজগুলো

মোটামুটি ভালোই করতে পারে। সে পাঁচ তলা থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে নিচতলা থেকে বাসায় আগত মেহমানকে
সঙ্গে করে আনতে পারে। আবার মেহমানকে বিদায় দিয়ে চাবি নিয়ে বাসায় আসতে পারে। আদিল যথাসাধ্য
চেষ্টা করে তার কথা আমাকে বুঝিয়েই ছাড়ে। এ জন্যই তো বলতে চাই- অদিল এখন স্বাভাবিক শিশু।”
আদিলের এটুকু সক্ষমতায় তার মা তৃপ্ত। আদিলের মায়ের এই দৃঢ় মনোবল সকল অটিস্টিক শিশুর
পরিবারের জন্য প্রেরণা।

আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যেই অটিজম সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ কারণে এই
বিশেষ শিশুদের অভিভাবকদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। রাস্তাঘাটে চলাচলে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে
কিংবা সামাজিক কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানে কোনো কোনো অটিস্টিক শিশুর অস্থিরতায় অনেকেই বিরক্ত হন।
অভিভাবকদের অনেক সময়ই এ ধরনের মন্তব্য শুনতে হয় যে পাগল বাচ্চাটিকে না আনলেও পারতেন।
এভাবে পারিবারিক, সামাজিক কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে এরা থাকে উপেক্ষিত। ভালোবাসাহীন বিভিন্ন মন্তব্যে
অভিভাবকরা হয়ে পড়েন বড় অসহায়। এসো আমরা সবাই অটিস্টিক শিশু ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াই।
অটিস্টিক শিশুর সহযোগিতায় গণসচেতনতা তৈরি করি।

পাঠ ৩ – প্রতিভাবান শিশু

কোনো কোনো শিশু অধিকাংশ শিশুর তুলনায় এক বা একাধিক ক্ষমতার দিক থেকে উল্লেখযোগ্য পারদর্শিতা
প্রদর্শন করে থাকে। এরূপ শিশুরা প্রতিভাবান শিশু। প্রতিভাবান শিশু একাডেমিক শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্পকলা,
নেতৃত্ব, গবেষণা বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে উন্নত অবস্থান ও পারদর্শিতার প্রমাণ দেয়। শিশুর মধ্যে যখন
বিভিন্ন দক্ষতা ও গুণাবলির সমন্বয় ঘটে তখন তারা প্রতিভাবান শিশু। এরাও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর মধ্যে
পড়ে। কারণ বিশেষ ধরনের পরিবেশ বা সুযোগ দেওয়া না হলে তাদের প্রতিভার সর্বোচ্চ বিকাশ হয় না।

প্রতিভাবান শিশুর বৈশিষ্ট্য—-

১। শারীরিক দিক দিয়ে প্রতিভাবান শিশু ও সমবয়সী অন্যান্য শিশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। সমাজে
মেধাবী শিশু বলতেই মনে করা হয়- চোখে চশমা, হাতে বইয়ের বোঝা নিয়ে থাকা একটি শিশু। এরকম
ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সমবয়সীদের চেয়ে প্রতিভাবান শিশুর শারীরিক কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে
না। সমবয়সীদের ভিড়ে প্রতিভাবান শিশুকে পৃথকভাবে চেনা যাবে না।

২। বুদ্ধিমত্তা- বুদ্ধি পরিমাপ করার কিছু পদ্ধতি আছে যা দ্বারা শিশুর শারীরিক বয়সের তুলনায় মানসিক
বয়স পরিমাপ করা হয়। বুদ্ধি পরিমাপের একককে বলা হয় বুদ্ধাংক বা Intelligence quotient
সংক্ষেপে IQ। সাধারণত IQ ৭০ বা তার নিচে হলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, ১০০ হলে সাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন
এবং IQ ১৩০-এর উপরে হলে তাকে প্রতিভাবান বলে ধরে নেওয়া হয়।

৩। প্রতিভাবান শিশুদের মানসিক দক্ষতা বেশি হয়। তারা সমস্যা সমাধানের এবং প্রশ্ন করার বিশেষ দক্ষতা
রাখে। তুলনামূলকভাবে কম বয়সে এদের ভাষার বিকাশ হয়। তাদের শব্দ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ থাকে।
সাধারণের চেয়ে কতু সম্পর্কে তারা বেশি জানে। এ ধরনের ছেলেমেয়েরা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নীরিক্ষা
করে অনেক কিছু শেখে।

৪। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য প্রদর্শন করে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে। তাদের মনোযোগ
ও স্মরণশক্তি অসাধারণ থাকে। একবার পড়লেই মনে থাকে। ফলে তারা তাড়াতাড়ি ও সহজেই শিখতে
পারে। নিজের ক্লাসের ২/৩ ক্লাস উপরের পড়া বুঝতে পারে।

৫। প্রতিভাবান শিশুরা সৃজনশীল হয়। তারা কোনোকিছু উদ্ভাবন করতে পারে, নতুনভাবে চিন্তা করতে
পারে। তাদের চিন্তাগুলো গতানুগতিক হয় না। তাতে স্বাতন্ত্র্য্য ও নিজস্বতা বেশি থাকে। যে কোনো
সমস্যা সমাধানে অনেকগুলো পথ তারা উদ্ভাবন করতে পারে।

৬। অনেক সময় প্রতিভাবানরা সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করে থাকে। যেমন- নেতৃত্ব দেওয়ার
ক্ষমতা, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করা ইত্যাদি।

যদি কোনো শিশুর মধ্যে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তবে তার ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ
যত্ন ও উন্নত পরিবেশ না পেলে শিশুর প্রতিভা ঠিকমতো বিকাশ লাভ করে না। শিশু যে উন্নত বুদ্ধিমত্তা নিয়ে
জন্মগ্রহণ করে উপযুক্ত পরিবেশে সেই বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটে।

প্রতিভাবান শিশুর জন্য করণীয় -

প্রতিভাবান শিশুরা যাতে শিক্ষার মধ্যে আনন্দ পায়, উৎসাহ পায় তার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

প্রতিভাবানদের জন্য সমবয়সীদের চেয়ে উপরের শ্রেণিতে পাঠ দানের ব্যবস্থা করে পাঠ্য বিষয়
ত্বরান্বিতকরণ, সমৃদ্ধকরণ ও বৈচিত্র্যময় করা যেতে পারে।

যে ক্ষেত্রেই মেধার পরিচয় পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রেই মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কেউ
পড়াশোনায় দক্ষতার পরিচয় না দেখালেও সংগীত, সাহিত্য, খেলাধুলা, চিত্রাংকন ইত্যাদি ক্ষেত্রে
উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখালে তাকে সেক্ষেত্রে মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে ।

তাদের ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশের জন্য বহুবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে- যাতে শিশুর
শিক্ষণের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আসে। যেমন- পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, চিত্রাংকন, বিতর্ক
প্রতিযোগিতা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।

 

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। বিশ্ব অটিস্টিক দিবস কোনটি?

(ক) ২ ফেব্রুয়ারি

(খ) ২ এপ্রিল

(গ) ২ জুন

(ঘ) ২ জুলাই

২। প্রতিভাবান শিশু তারা-

(ক) যাদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক হয়।

(খ) যারা ছোটদের খুবই স্নেহ করে

(গ) যারা যুক্তিপূর্ণ কথা বলে

(ঘ) যারা অন্যদের সাথে সহজে মেশে না।

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও

সজল ও বাবুল দুই ভাই। ছোট ভাই সজল একা একা খেলতে পছন্দ করে। চোখে চোখে তাকায় না।
বাবা-মা ও অন্য শিশুর সাথে ঠিকভাবে কথা বলতে সমস্যা হয়। দিন দিন তার আচরণে অনগ্রসরতা
দেখা যায়।

৩। সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সজলের সমস্যা হলো-

(ক) অন্যকে খেয়ালই করে না এমন আচরণ করা

(খ) পরিচিত মুখ দেখলে হাসে কিন্তু চেনে না

(গ) ক্ষুধা পেলে তার থাকে প্রকাশ করে দেখায়

(ঘ) খেলনা পেলে অন্যদের সঙ্গে খেলা শুরু করে

৪। সজলের বাবা-মার অবস্থায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা হলো-

(i) অন্যের সাথে সজলের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করা।

(ii) তার প্রতিভার সন্ধান করা।

(iii) তাকে বিশেষ স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া।

নিচের কোনটি সঠিক?

(ক) তি

(গ) ii ও iii

(*) i iii

(ঘ) i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। মিসেস রেহানার ৮ বছরের ছেলে রনি স্কুলের অন্য ছেলেদের মতো পড়াশোনা পারে না, শিক্ষক প্রশ্ন
করলে উত্তর দেয় না, একই কথা বারবার বলে, খেলাধুলাতেও পিছিয়ে থাকে। শিক্ষকরা প্রায়ই অভিযোগ
করেন। মিসেস রেহেনা নিজে ছেলেটির যত্ন করেন। তারপরেও কোনো কিছুতে তার শেখার আগ্রহ দেখা
যায় না। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি রনিকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং মিসেস রেহানাকে
রনির জন্য বিশেষ শিক্ষা ও যত্নের পরামর্শ দেন।

ক. অটিস্টিক শিশুর সমস্যার নাম কী?

খ. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলতে কী বোঝায়?

গ. কী কারণে রনি অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. পরিবারের সকল সদস্যের সহযোগিতায় রনির ক্ষমতার বিকাশ সম্ভব-কথাটির সঙ্গে তুমি কি
একমত? যুক্তি দাও।

২। কাঠমিস্ত্রি রশীদের ৬ বছরের ছেলে রোমেল অল্প সময়ে পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করে ফেলে। কৌতূহলের
বিশে সে বাবার যন্ত্রপাতির নাম ও ব্যবহার জেনে ফেলে। বাবা যতই শাসন করে না কেন, ছেলের যুক্তির
কাছে কথা বলতে পারে না। বাড়িওয়ালা রশীদের ছেলেটিকে বিশেষভাবে যত্ন নেয়ার জন্য নিজেই
ছেলেটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ক. কত বছর বয়সে অটিস্টিক শিশুর লক্ষণ দেখা যায়?

খ. অটিস্টিক শিশুর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর?

গ. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর মধ্যে রোমেল কোন প্রকৃতির ব্যাখ্যা কর।

ঘ. 'বাড়িওয়ালার সহযোগিতা রোমেলের প্রতিভা বিকাশের সহায়ক' বক্তব্যটি যুক্তি সহকারে
মূল্যায়ন কর।

Content added By

বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করা

0

পাঠ ১ মাদকাসক্তি

যে কোনো পরিবেশ বা অবস্থা দুটি দিক থেকে বিচার করা হয়। যে অবস্থা আমাদের সুবিধা দেয়, ভালো
করে, কোনো রকম ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না, এটি অনুকূল অবস্থা। যেমন- ভালো বন্ধুর সঙ্গ, শিক্ষকদের
উৎসাহ, প্রশংসা, স্কুলে লেখাপড়া ইত্যাদি। এ অবস্থা আমাদের কাম্য। অন্য দিকে যে অবস্থা আমাদের জন্য
ক্ষতিকর, আমাদের ভালো করে না, এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক নয়, সেটাই প্রতিকূল অবস্থা। যেমন- অ
সঙ্গ, বখাটে দলের হয়রানির শিকার, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি। এগুলো আমাদের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা দেয় যা
আমরা কখনোই চাই না।

বর্তমানে মাদকাসক্তি কথাটি এত বেশি প্রচলিত যে, তোমরাও এ সম্বন্ধে ইতোমধ্যেই অনেক কিছু জেনে গেছ।
সারা বিশ্ব আজ মাদকদ্রব্য সেবন সংক্রান্ত সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের দেশেও মাদকাসক্তির ভয়াবহতা দিন
দিন বেড়েই চলেছে। আমরা এখন মাদকদ্রব্য কী, কীভাবে এতে আসক্তি হয়, এর ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী
এবং এর ভয়ংকর পরিণতির কথা জানব।

মাদকদ্রব্য এক ধরনের পদার্থ যা ব্যবহার বা সেবন করলে আমাদের শরীর ও মনের ক্ষতি হয়, ব্যবহারকারীর
মধ্যে নেশা তৈরি করে, পর্যায়ক্রমে গ্রহণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে ঐ দ্রব্য যখন
সেবনের দরকার হয় তখনকার অবস্থাকে বলা হয় আসক্তি। বিড়ি, সিগারেট, তামাকের ধোয়া সেবন হলো
ধূমপান। গাঁজা, আফিম, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা এগুলো সবই মাদকদ্রব্য। ধূমপান এবং এসব দ্রব্য যখন
ব্যক্তির মধ্যে আসক্তি বা নেশা তৈরি করে তখনকার অবস্থাই হলো মাদকাসক্তি।

কৈশোরকাল কৌতূহলের বয়স। নিছক কৌতূহলের বশেই অনেকে মাদক গ্রহণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে
চায়। অনেক সময় যে কোনো ব্যর্থতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য মাদক গ্রহণের অভ্যাস তৈরি হয়ে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৈশোরের ছেলে-মেয়েরা খারাপ দলে মেশার ফলে মাদকদ্রব্য সেবনে জড়িত হয়।
মাদকাসক্ত সঙ্গীরা নিজের কাজের সহযোগী খোঁজে। তারা এটি গ্রহণে প্ররোচনা দেয়। এভাবে সঙ্গদোষে
মাদকের বদ অভ্যাস গড়ে উঠে। মাদকদ্রব্য গ্রহণের স্বাস্থ্যগত পরিণাম বা অন্যান্য ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে না
জানার কারণে প্রথম দিকে সেবনকারী সমস্যার ভয়াবহতা বুঝতে পারে না। যখন এর বিপদ বুঝতে পারে
তখন সেবন ছেড়ে দেয়া তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাকে সুস্থ করার জন্য তার নিজের প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির
সাথে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে আস্তে আস্তে সুস্থ ব্যক্তি রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মতো হয়ে যায়। এটি তাকে আস্তে
আস্তে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। মাদকাসক্তি কোনো ব্যক্তিকে, তার পরিবারকে এবং এভাবে সমাজ জীবনকে
নানা দিক দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে। ব্যবহারকারীর শারীরিক অসুস্থতা যেমন- মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও
ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়। এছাড়া স্বাভাবিক প্রজনন ক্রিয়ার জটিলতা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, শিক্ষা
গ্রহণে অক্ষমতা এবং পারিবারিক সম্পর্কেরও অবনতি ঘটায়।

মাদক ব্যবহারকারীরা নানারকমের অসামাজিক কাজ করে। যেমন- চুরি, ছিনতাই, হাইজ্যাক ইত্যাদি। এ
সকল আচরণ বিভিন্নরকম সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। ব্যক্তি জীবনে ও সমাজ জীবনে মাদকাসক্তির
ক্ষতিকর দিক-

শারীরিক ক্ষতি

শ্বাসনালি, হৃদযন্ত্রের ক্ষতি, কাজ করার
ক্ষমতা হ্রাস, রক্ত দূষণ, অনিদ্রা, খাবারে
অরুচি, পেট ব্যথা, এইডস, হেপাটাইটিস-বি
সংক্রমণের আশতক।

মানসিক ক্ষতি

শেখার ক্ষমতা হ্রাস, পড়াশোনায় অমনোযোগী,
স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, উদ্যমের অভাব,
অলসতা, অবসাদ ও বিষণ্ণতা, উগ্র আচরণ।

আর্থিক ক্ষতি ও নৈতিক অবক্ষয়

পরিবারকে আর্থিক সংকটে ফেলা, ধার
নেয়া, চুরি করা, ন্যায়-অন্যায় রোগ না
থাকা, মিথ্যা বলা।

মাদকাসক্তি

সামাজিক সমস্যা

কাজ করার আগ্রহ কমে যাওয়া, মায়া-মমতা
ও ভালোবাসার অভাব, সহজে অপরাধ
জগতে প্রবেশ।

মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো কত ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা জানলাম। এই ক্ষতির দিকগুলো তোমাদের
বারবার মনে করতে হবে। তোমরা দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে কোনো দিনই মাদকের ছোবলে ধরা দেবে না।
নিজেদের এই প্রতিজ্ঞা ছড়িয়ে দেবে পাড়া, মহল্লায় এবং সমবয়সী বন্ধু দলে।

মানুষের জীবনে কখনো কখনো খারাপ সময় আসতেই পারে। যার কারণে বিষণ্ণতা আসে, আসে হতাশা। এই
হতাশাকে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট কখনোই চিরস্থায়ী নয়। মাদককে 'না'
বলার শক্তিই মাদক প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায়।

পাঠ ২- বাল্য বিবাহ, যৌতুক

বাল্য বিবাহ - জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ১৯৯০ এ যে সকল দেশ স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ তার মধ্যে
অন্যতম। আমরা জানি যে, এই সনদে জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত প্রত্যেককেই শিশু বলা হয়েছে। এই
সনদে উল্লেখ আছে ১৮ বছরের নিচে মেয়েরা এবং ২১ বছরের নিচে ছেলেরা বিয়ে করতে পারবে না।

তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছ বাল্যবিবাহ বলতে কী বোঝায়? ছেলের বয়স ২১ বছরের নিচে এবং মেয়ের বয়স
১৮ বছরের নিচে যে বিয়ে হয় তাই বাল্যবিবাহ। শুধুমাত্র ছেলের বয়স ২১-এর কম বা শুধু মেয়ের বয়স
১৮-এর কম হলে সেই বিয়েকেও বাল্য বিবাহ বলা হয়। বাল্যবিবাহে বর বা কনে যে কোনো একজন বা
উভয়ে শিশু থাকে।

বাল্যবিবাহের নীতিটি মানার ক্ষেত্রে মূল বাধাটি হচ্ছে আমাদের দেশে দরিদ্র, অশিক্ষিত পরিবারে অভিভাবকরা
শিশুর সঠিক বয়সের হিসাব রাখেন না এবং সব শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা হয় না। আমাদের দেশে আর্থিক ও
সামাজিক নিরাপত্তার জন্য মেয়েদের বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়ে থাকে।

ছেলেদের ক্ষেত্রেও অভাব অনটনকেই দায়ী করা যেতে পারে। মেয়ে পক্ষ থেকে অর্থ পাওয়ার আশায় ছেলেদের

বয়সের আগেই বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়।

মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ কেন ক্ষতিকর?

১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে হলে সঠিক সময়ের আগে বা কম ওজনের সন্তান জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রাপ্ত বয়সের তুলনায় কিশোরীদের সন্তান জন্ম দেওয়া অনেক কঠিন ও বিপজ্জনক। কিশোরীর
গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান জন্মের প্রথম বছরের মধ্যে মারা যাওয়ার আশঙ্কাও বেশি।

১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত কোনো মেয়ের শরীর সন্তান প্রসবের জন্য উপযুক্ত হয় না। তাই এ বয়সে
গর্ভধারণ ডয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- সময়ের আগে জন্মানো, উচ্চ রক্ত চাপ,
খিঁচুনি, রক্তস্বল্পতা, প্রসবে জটিলতা, এমনকি মা ও সন্তান উভয়েরই মৃত্যু হতে পারে।

ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহে লেখাপড়ার ক্ষতি হয় বা লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। সন্তান হলে
তাদেরকে মা-বাবার দায়িত্ব বহন করতে হয়। এতে মানসিক চাপ বাড়ে আবার আর্থিক সংকটেরও সৃষ্টি হতে
পারে। সুতরাং মেয়েদের ১৮ বছরের আগে এবং ছেলেদের ২১ বছরের আগে যে কোনো বিয়েকে প্রতিরোধ
করতে হবে। নিজের ক্ষেত্রে এরকম প্রস্তাব প্রত্যাখান করতে হবে। অন্যদের ক্ষেত্রেও যে কোনো ভাবে বাধা
দিতে হবে। বাল্যবিবাহের কুফলগুলো অভিভাবকদের বলতে হবে।

 

 

 

যৌতুক

একটি বিয়েতে দুইটি পক্ষ থাকে বরপক্ষ এবং কনেপক্ষ। এ দুই পক্ষকে উপহার দেওয়ার প্রচলন যুগ যুগ
ধরে চলে আসছে। কিন্তু যখন যে কোনো পক্ষকে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্যবান সম্পদ, অর্থ দেওয়ার জন্য আর
একপক্ষ দ্বারা বাধ্য হতে হয় তখন সেটা যৌতুক হিসাবে গণ্য হয়। এটাকে অন্য কথায় দাবি বলা যেতে পারে।
আমাদের দেশে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মেয়ে পক্ষের উপর এই দাবি বা যৌতুকের বোঝা চাপানো হয়। বর্তমানে এই
দাবি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। যৌতুক ছাড়া দরিদ্র পরিবারে মেয়েদের বিয়ে কল্পনাই করা যায় না।
যৌতুকের বোঝা চাপানো সেই পরিবারটির উপর এক ধরনের নির্যাতন। বাংলাদেশে যৌতুক নিরোধ আইন,
১৯৮০ এ বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি কনেপক্ষ বা বরপক্ষের কাছে যৌতুক দাবি করলে ১-৫ বছর পর্যন্ত
কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বাংলাদেশে যৌতুক গ্রহণের প্রধান কারণ হলো
পরিবারটির আর্থিক অসচ্ছলতা ও বেকারত্ব। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে যৌতুকের মাধ্যমে পরিবারটি
সচ্ছলতা খোঁজে।

যৌতুকের ক্ষতিকর দিক— বরপক্ষের দাবি মেটানোর জন্য কনেপক্ষের পরিবারে অনেক রকম সমস্যার সৃষ্টি
হয়। অনেক পরিবারে জমি বিক্রি করা হয়, ব্যাংকের সঞ্চিত টাকা তুলে ফেলতে হয়। অনেক সময় পরিবারের
ছোট সদস্যদের লেখাপড়ার জন্য সঞ্চিত অর্থ যৌতুকের জন্য ব্যয় হয়। সুতরাং যৌতুকের কুফল সম্পর্কে
সমাজের সকলকে সচেতন করতে হবে।

তুমি মেয়ে কিংবা ছেলে যেই হও না কেন যৌতুক প্রথা প্রতিরোধে তোমাদের সোচ্চার হতে হবে। নিজেদের
পরিবারে, আত্মীয়-যজন অথবা প্রতিবেশী পরিবারে যৌতুকের শর্তে যেন কোনো সম্পর্কের বন্ধন তৈরি না হয়।
তার বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

পাঠ ৩ – যৌন নিপীড়ন
-

সাধারণত যৌন বিষয়ক কথাবার্তার মধ্যে একটু গোপনীয়তা, একটু সংকোচ জড়িয়ে থাকে। আমাদের
চারপাশে যৌন নিপীড়নের যেসব করুণ চিত্র ঘটে চলেছে, সেগুলোর পরিণতি হয় খুবই বেদনাদায়ক। এসব
প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করা ও অন্যদেরকে সতর্ক করা খুবই জরুরি। কী করলে যৌন
নিপীড়নের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না তা জানতে হবে। তাই সুস্থ স্বাভাবিক
জীবনের লক্ষ্যে এ পাঠটিকে তোমরা অত্যন্ত জরুরি একটি পাঠ মনে করবে। যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে সকলকে
সচেতন করার জন্য এ পাঠটির গুরুত্ব অনেক বেশি।

যৌন বিষয়ক কথা, ইঙ্গিত, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দিয়ে কাউকে বিরক্ত করা হলো যৌন হয়রানি। আর অন্যের
দ্বারা শরীরের গোপন অংশে স্পর্শ বা আঘাত যৌন নিপীড়নের মধ্যে পড়ে। বয়ঃসন্ধিকালে বিপরীত লিঙ্গের
প্রতি আকর্ষণ ও যৌন বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক সময় অনেক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। কয়েকদিনের জন্য রাশেদা বেড়াতে এসেছে আত্মীয়ের বাড়িতে। কিশোরী রাশেদার
আনন্দ আর ধরে না। বিকাল হতে না হতেই পাশের বাড়ির পরিচিত ভাইয়ের সাথে ঘুরতে বের হয় সে। নদীর
পাড়ের বাঁধা রাস্তার পাশ দিয়ে আখের ক্ষেত, নদীর সৌন্দর্য, মাঝি, নৌকা ইত্যাদি উপভোগ করতে করতে
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। ফেরার পথে কিশোর ছেলেটির মাথায় খারাপ চিন্তা আসে। সে রাশেদার হাতটি ধরে
এবং কাছে আসতে চায়। রাশেদা সজোরে হাত ছাড়িয়ে নেয় এবং দ্রুত হেঁটে নিজেকে রক্ষা করে। ঘটনাটি সে
কাউকে বলতে পারে না। প্রায়ই ঘটনাটি তার মনে কষ্ট দেয়। রাস্তায় যে কোনো কিশোর দেখলে ভয়ে চমকে
উঠে। তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছ যে, এরকম পরিস্থিতিতে তোমরাও পড়তে পার?

যে কোনো বয়সে যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তবে কৈশোরে এসব ঘটনা
ঘটার সম্ভাবনা অন্য সব বয়সের চেয়ে বেশি থাকে। যারা যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার হয় তাদের
মধ্যে অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে-

সব সময় ঐ ঘটনা মনে পড়তে থাকে, মন থেকে আতংক বা ভয় দূর হয় না।

কাউকে বলতে না পারায় মানসিক চাপ পড়ে, ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ আসে না।

অনেক ক্ষেত্রে লজ্জা ও অপমান সহ্য করা নিজের ও পরিবারের জন্য কষ্টদায়ক হয়।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কৈশোরে মেয়েদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঝুঁকি বেশি থাকে। পাড়ার বখাটে
দল কিংবা সহপাঠীদের দ্বারা যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু যৌন নিপীড়ন সমবয়সীরা ছাড়াও

 

 

যে কোনো নিকট আত্মীয়, পরিচিত ব্যক্তি, বয়স্ক যে কোনো সদস্যদের দ্বারা হতে পারে। এসব প্রতিকূল অবস্থা
থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আমাদের যে যে বিষয়ে সতর্ক
থাকতে হবে সেগুলো হলো-

• বাড়িতে কখনোই একা না থাকা।

অন্যকে আকর্ষণ করে এমন পোশাক না পরা।
পরিচিত কিংবা অপরিচিত ব্যক্তি পায়ে হাত দিলে তাকে এড়িয়ে যাওয়া বা পরিত্যাগ করা।

পরিচিত, অপরিচিত কারও সাথে একা বেড়াতে না যাওয়া।
মন্দ স্পর্শ টের পেলে অবশ্যই তা সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবাকে জানানো।

পাড়ার বখাটে দলের হয়রানিতে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না করে কৌশলে উপেক্ষা করা। যেমন- জুতা
খুলে দেখানো, চড় দেখানো, গালাগাল ইত্যাদি না করে বৃদ্ধির সাথে পরিস্থিতি সামলানো।

যৌন নিপীড়নের আর এক ধরনের ভয়ংকর চিত্র তোমাদের জানা দরকার। অনেক সময় শৈশবের
ছেলে-মেয়েরা পরিবার ও সমাজের বয়স্ক সদস্য কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। পরিবারের খুব কাছের
আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তি শিশুটিকে যে কোনো সময়ে একা পেয়ে এ ধরনের গর্হিত কাজ করতে পারে।
ব্যক্তিটির সাথে পরিবারের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ট থাকে বলে তার সাথে সন্তান একা বাড়িতে থাকলে মা-বাবার
কোনো রকম দুশ্চিন্তা হয় না। ছেলে শিশুরাও পুরুষ ব্যক্তির দ্বারা শরীরের গোপন অঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হতে
পারে। এ ধরনের নিপীড়নে শিশুরা প্রচণ্ড ভয় পায়। অপরাধী শাসায় বলে তারা বিষয়টি কাউকে বলতে পারে
না। এতে তাদের নানা ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সমাজে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে নিপীড়নের শিকার হয়- তাকেই দোষারোপ করা হয়। আমাদের উচিত অপরাধীর মুখোশ
সকলের কাছে খুলে দেওয়া এবং তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার
দায়িত্ব প্রত্যেকটি মা-বাবার এবং আমাদের সকলের।

পাঠ ৪ বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা
 

আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সাকিব। সে অনেক ভালো। আমি তাকে বিশ্বাস করতে পারি। আমি তাকে আমার
এমন ভিতরের কথা বলতে পারি যা অন্য কেউ জানবে না। সে কাউকে বলে দেবে না এটাও বুঝতে পারি।
আমার অনেক বন্ধু আছে। কিন্তু সে আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা একে অন্যের আবেগ অনুভূতি
বিনিময় করি। কখনো একে অন্যকে দুঃখ দিই না বা আঘাত দিয়ে কথা বলি না। বিপদে পড়লেই একে
অন্যকে সাহায্য করি। সে যখন ভুল পথে যায়, আমি তাকে সতর্ক করি। আবার আমার ক্ষেত্রে সেও এমনটি
করে। আমরা সব বন্ধু মিলে অনেক কথাই বলি কিন্তু এমন কিছু কথা যেটা শুধু তাকেই বলা যায়।

বয়ঃসন্ধিক্ষণের এক কিশোর তার বন্ধু সম্পর্কে এভাবেই বর্ণনা করে। পূর্বের পাঠে সমবয়সী দলের কথা
তোমরা জেনেছ। কিন্তু বন্ধু কারা বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বৈশিষ্ট্য কী এটা তোমরা উপরের উক্তিগুলোর মধ্যে দিয়ে
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ।

বন্ধুর সংজ্ঞা একেক বয়সে একেক রকম থাকে। ছোটবেলায় খেলার সাথীরাই বন্ধু। স্কুলের প্রথম দিকে
ক্লাসের সকলেই তার বন্ধু। কিন্তু মধ্য শৈশবে কিংবা কৈশোরে বন্ধু তারাই যাদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস
থাকে, সহযোগিতা থাকে, অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে। তারা একে অন্যকে বুঝতে পারে। এ সময়ের বন্ধুত্ব এতই
গভীর থাকে যে তাদের একই রকম পছন্দ থাকে, একই রকম আগ্রহ থাকে, তারা পরস্পরের প্রতি অনুগত
থাকে। যে কোনো বিপদে একজনকে ছেড়ে অন্যজন সরে পড়ে না। বন্ধুত্বের মধ্যে খোলামেলা, স্পষ্ট,
লুকোচুরি না করে কথাবার্তা চলে। একজন অন্যজনের প্রতি গভীর স্নেহ-মমতা থাকে। যে কোনো কিছু তারা
সহজেই বন্ধুকে বলতে পারে। এতে মানসিক চাপ কমে।

এতক্ষণ আমরা জানলাম বন্ধুত্ব আমাদের জীবনে অনেকখানি স্থান দখল করে আছে। এই বন্ধু যখন
ভালোবন্ধু হয়, তখন তা আমাদের বিকাশে সহায়তা করে। ভালো বন্ধু দিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়,
স্কুলে অংশগ্রহণ বাড়ে।

বিভিন্ন অনিয়ম, অসৎ কাজ, বদ অভ্যাস, বন্ধুদের মধ্য দিয়েই তৈরি হয়। খারাপ বন্ধু আমাদের জীবনে ধ্বংস
ডেকে আনতে পারে। বন্ধু যখন আমাদের জীবনে এত গভীরভাবে প্রভাব ফেলে তখন আমাদের অবশ্যই বন্ধু
নির্বাচনে সতর্ক হওয়া দরকার।

কাজ তোমার সহপাঠীর মধ্যে থেকে দুজন বন্ধুর নাম উল্লেখ কর। তারা কেন তোমার বন্ধু লেখ।

কৈশোরে বন্ধু আমাদের কীভাবে সাহায্য করে?

বন্ধুত্ব দেয়-

সাহচর্য, কাজে উৎসাহ ও উদ্দীপনা। বন্ধুত্বের মাধ্যমে
প্রয়োজনীয় কতু আদান-প্রদান করা যায়, একে
অন্যের দুর্বল দিকের প্রতি সচেতন হওয়া যায়।
অন্যদের তুলনায় আমি কেমন সেটা বন্ধুর মাধ্যমে
বোঝা যায়। আর আমি ঠিক কাজটি করছি কিনা- এ
ধারণাও বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া যায়।

ভালো ও খারাপ ক্যু চেনার উপায়

ভালো বন্ধু

• ভালো বন্ধু পড়াশোনায় মনোযোগী

• সত্য কথা বলে

• স্কুল ও সমাজের নিয়ম মেনে চলে

• সকলের সাথে ভালো আচরণ করে

• গঠনমূলক কাজ করে

• ভালো কাজে উৎসাহী থাকে

• যৌন পরিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত কথাবার্তা বলে

• ধূমপান ও মাদক প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকে

খারাপ বন্ধু

• পড়াশোনায় অমনোযোগী

• মিথ্যা বলতে সংকোচ বোধ করে না

• স্কুল ও সমাজের নিয়ম মানে না

• ঝগড়া, মারামারি করে

• সমস্যা তৈরি করে

• অসৎ কাজে উৎসাহী থাকে

• অশ্লীল আলোচনা করে

• ধূমপান করে, অন্যকে ধূমপানে প্ররোচিত করে

অনেক সময় বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্ব হয়। এক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে- যেন সম্পর্কের একটি
সীমারেখা থাকে। তোমরা পূর্বের পাঠে জেনেছ যে, বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছেলে ও মেয়েদের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ
বাড়ে। সুতরাং প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেলামেশা মুগ্ধতা আনতে পারে, যা এ বয়সের জন্য ক্ষতিকর।

কাজ খারাপ ও ভালো বন্ধু চেনার উপায়গুলো কী?

পাঠ ৫- প্রচার মাধ্যম

প্রচার মাধ্যম বলতে রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজ, কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইন প্রচারমাধ্যম
ইত্যাদিকে বুঝি। এ সকল প্রচার মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার আমাদের জ্ঞান বিকাশকে বাড়িয়ে দেয়। আমরা প্রচুর
তথ্য জানতে পারি। যে কোনো বিষয়ে সঠিক ধারণা পাই, অল্প সময়ে খবর পাঠাতে পারি, যোগাযোগ সহজ হয়।

বিরতিহীনভাবে টেলিভিশন দেখা ক্ষতিকর। টিভিতে অধিক সময় ব্যয় করলে লেখাপড়া, খেলাধুলা বা অন্যান্য
কাজের সময় কমে আসে। এ ছাড়াও তারা প্রাকৃতিক আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত হয়। তারা এমন অনেক
অনুপোযোগী অনুষ্ঠান দেখে- যার কারণে তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করতে উৎসাহিত হতে পারে।
অনেকক্ষণ টিভি দেখলে শারীরিকভাবেও ক্লান্তি আসে।

টিভির এমন অনেক অনুষ্ঠান আছে যা দেখলে বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়। যেমন পশুপাখি সম্পর্কীয় অনুষ্ঠান। এ
ধরনের অনুষ্ঠান তাদের জীবন যাপন সম্পর্কে ধারণা দেয়। বইপত্র পড়ে যা শেখা হয়েছে সেটারই যেন ব্যবহারিক
জ্ঞান হয়। আবার টিভির কিছু চ্যানেলে এমন অনুষ্ঠানও দেখান হয়, যা আমাদের ক্ষতি করে। যেমন- সহিংসতা,
ছিনতাই, মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি। এগুলো দেখার ফলে অনুরূপ স্বভাব আমাদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এ
কারণে টিভি দেখার উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। দেখার জন্য টিভির কিছু নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান নির্বাচন করতে
হবে। যে অনুষ্ঠানগুলো শিক্ষামূলক বা সামাজিক কিংবা শিশু-কিশোরদের বয়সোপযোগী- সেসব অনুষ্ঠান আমাদের
বুদ্ধি ও সামাজিক দক্ষতা বাড়ায়।

-সকলে একসাথে টিভির কোনো
অনুষ্ঠান দেখলে বেশি শেখা যায়।
অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন এবং
আলাপ আলোচনায় অনুষ্ঠানের
বিষয়বস্তু স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ।

-পড়ার ঘরে টিভি না রাখা বা
টিভির ঘরে পড়াশোনা করা উচিত
নয়। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়।

- ছাত্রজীবনে খুব অল্প সময় টিভি
দেখার জন্য ব্যয় করলে পড়াশোনার
ক্ষতি কম হয়।

বড়দের সাথে টিভি দেখলে জিজ্ঞাসার মাধ্যমে অনেক বেশি জানা যায়

প্রচার মাধ্যমের মধ্যে অন্যতম একটি মাধ্যম হলো কম্পিউটার। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, আবহাওয়া, পরিবেশ
রক্ষা, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ব্যবহার অনেক সুবিধা দেয়। আমরা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করি
তাহলে মূল্যবান ও উপকারী এই যন্ত্রটিও আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কম্পিউটারে ওয়েব সাইট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা প্রচুর তথ্য পাই। যখন যা জানতে চাওয়া হয় অল্প
সময়েই তা সংগ্রহ করতে পারি। লেখাপড়ার কাজে সর্বশেষ তথ্যগুলো আমাদের জানাকে সমৃদ্ধ করে।
এছাড়াও অত্যন্ত কম সময়ে ও সহজভাবে আমরা কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারি।

অনেক সময় কম্পিউটারকে আমরা খেলার সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহার করি। যারা অনেক বেশি গেইম খেলে তারা
যখন গেইম খেলে না, তখনও ঐ গেইম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। তারা বুঝতে পারে যে তারা বেশি সময় ধরে
খেলছে কিন্তু তারা নেশাগ্রস্তের মতো এটা বন্ধ করতে পারে না। এসব ছেলে-মেয়ের মধ্যে নানা ধরনের
স্বাস্থ্য সমস্যা ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

.
-গেইম খেলায় শরীরের ওজন অতিরিক্ত বাড়তে পারে।

-দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকার জন্য চোখের সমস্যা হতে পারে।

-দীর্ঘ সময় বসে থাকার জন্য ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা হতে পারে।

-দৈনন্দিন জীবনের জ্ঞান কম হয়।

-বাইরে খেলাধুলার সময় ও আগ্রহ কমে আসে।

-সকলের সাথে বেড়ানো, দেখা-সাক্ষাৎ কম হয়।

-শিক্ষা উপকরণ হিসাবে কম্পিউটারের ব্য

ইন্টারনেটে এমন অনেক সাইট আছে, যেগুলোতে প্রবেশ প্রাপ্ত বয়সের আগে নিষিদ্ধ। অনেক সময়ে
কৈশোরের ছেলেমেয়েরা কৌতূহলের কারণে ঐসব নিষিদ্ধ সাইটে প্রবেশ করে। এতে তাদের নৈতিক
অবনতির সম্ভাবনা থাকে।

খুব দ্রুত যে কোনো খবর ছড়িয়ে দেওয়ার বড় একটি মাধ্যম হলো ফেসবুক। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকের
মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি করা এবং যোগাযোগ করা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। যেসব ছেলেমেয়েরা অনলাইন
যোগাযোগে বেশি সময় ব্যয় করে, তাদের সাথে মা-বাবার দ্বন্দ্ব, বিরোধ বেশি হয়। কম্পিউটারকে শিক্ষা
সহায়ক উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করলে আমরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারব।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. কৌতূহলের বয়স কোনটি?

ক. একবছর বয়স

খ. কৈশোর কা

গ. যৌবন কাল

২. মাদকদ্রব্য গ্রহণে সামাজিক কোন সমস্যা হয়?

ঘ. বৃদ্ধ কাল

ক. কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়

গ. পারিবারিক আর্থিক সংকট হয়

খ. শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়

ঘ. সহজে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও

জাভেদ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলগঠন, বন্ধুপ্রীতি এগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল এবং ঘরে দেরি করে।
ফিরত। ঘরে দেরি করে ফেরার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে মেজাজ করত। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে ধর্মের শিক্ষকের
কাছে মাদকাসক্তির মন্দ দিক, ভালো বন্ধু, মন্দ বন্ধু, পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে জেনেছে। সে আরও
জেনেছে এ বয়সে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেলামেশার ফলে নিজের ক্ষতি হতে পারে। এখন সে খুব সতর্কতার
সাথে চলাফেরা করে।

 

 

বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করা

৩. জাভেদের মতো কিশোররা মাদকাসক্তির কুফল কাদের মাঝে ছড়িয়ে দেবে?

ক. নিজ শ্রেণি ও সকল শ্রেণিতে

খ. ঘরে ঘরে ও আত্মীয় সজনদের মাঝে

গ. পাড়ায় ও ভাইবোনদের মাঝে

ঘ. পাড়া, মহল্লা ও বন্ধুবান্ধবদের মাঝে

ঘ. i, ii ও iii

৪. ধর্মীয় শিক্ষকের শিক্ষা জাভেদকে সচেতন করবে-

খারাপ দলে না মেশার

ii. স্বাস্থ্যগত পরিণাম সম্পর্কে

iii. ছেলেমেয়েদের বন্ধুত্বে

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii

গ. ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. ১০ম শ্রেণির কামাল মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান। বাবা-মা দুজনেই চাকরি নিয়ে খুব ব্যস্ত। বন্ধু
এজাজের সঙ্গে সে প্রাইভেট পড়তে যায়। ইদানীং সে ঘরে দেরি করে ফেরে, খেতে চায় না, পড়াশোনায়
মনযোগ কম এবং শরীর সব সময়ই খারাপ থাকে। কারণে অকারণে এজাজের কাছে চলে যায়।
বাবা-মা কিছু বলতে গেলে মিথ্যা বলতে সংকোচ বোধ করে না। কামালের এই আচরণ বাবা মা-কে
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে।

ক. প্রতিকূল অবস্থা কী?

খ. মাদকাসক্তি বলতে কী বোঝায়?

গ. এজাজের বন্ধুত্ব কামালের পড়াশোনাকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ভালো বন্ধু নির্বাচনের মাধ্যমে কামালের বর্তমান অবস্থা উত্তরণ সম্ভব”- উক্তিটির সাথে তুমি
কি একমত? যুক্তি দাও ।

জুলেখা সপ্তম শ্রেণিতে গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করে। ওর দাদা-দাদি ওর বিয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
ছেলেপক্ষ অনেক কিছুই দাবি করছে। কিন্তু টিভিতে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো জানার পর
জুলেখার বাবা এখন জুলেখার বিয়ে না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।

ক. জাতিসংঘ সনদে কত বছর বয়সকে শিশু বলা হয়েছে?

খ. কম্পিউটারে আমরা সহজে তথ্য পাই কেন?

গ. দাদা-দাদির উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের কোন অধিকার লঙ্ঘিত
হয়েছে- ব্যাখ্যা কর।

ঘ. জুলেখার বাবার সিদ্ধান্ত জুলেখাকে দৈহিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে-তুমি কি একমত? যুক্তি দেখাও।

Content added By
Promotion