কপোতাক্ষ নদ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য - কবিতা | | NCTB BOOK

সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে !

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;

সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে

শোনে মায়া-মন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে

জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে !

বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,

কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?

দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে ।

 

আর কি হে হবে দেখা? - যত দিন যাবে,

প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে

বারি-রূপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে

বঙ্গজ জনের কানে, সখে, সখা-রীতে

নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে

লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে
আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে
সতত, তোমার কথা ভাবি এ বিরলে
আর কি হে হবে দেখা। যত দিন যাবে।
যে লইছে তব নাম বঙ্গের সংগীতে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি স্তনে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে।
ব্রজাঙ্গনা কাব্য
বীরাঙ্গনা কাব্য
মেঘনাদ বধ কাব্য
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য
বিরহের ব্যাকুলতা
বিচ্ছেদের প্রতিকূলতা
সান্নিধ্যের উদ্বেলতা
ভালোবাসার আকুলতা
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে
দুগ্ধ-সোতোরূপী তুমি জন্মভূমি স্তনে
আর কি হে হবে দেখা?- যত দিন যাবে
পিতামাতা থেকে দূরে থাকার কষ্ট
মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা
স্বদেশপ্রেম
কপোতাক্ষ নদের প্রতি ভালোবাদ
কপোতাক্ষ নদকে
বঙ্গদেশের জনগণকে
বাংলা সাহিত্যকে
প্রবাসী বাঙালিকে
কবির স্বজাতিপ্রীতি
স্মৃতিকাতরতা
মাতৃভাষাপ্রীতি
সন্তানবাৎসল্য
নিশার স্বপনকে
কলকল ধ্বনিকে
স্বদেশ চেতনাকে
কপোতাক্ষ নদকে
শৈশবের বর্ণিল দিনের কথা মনে করে
কলকাতার বন্ধুদের কথা মনে করে
বাল্যজীবনের দুরন্তপনা মনে করে
নিজ গ্রামের কপোতাক্ষ নদের কথা মনে করে
স্মৃতির আবরণে দেশপ্রেম
প্রবাসজীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা
দেশের প্রতি মমত্ববোধ
কপোতাক্ষ নদের প্রতি ভালোবাসা
কপোতাক্ষ নদকে
বঙ্গদেশের জনগণকে
প্রবাসী বাঙালিকে
বাংলা সাহিত্যকে
সৌন্দর্যের অভাবে
তীব্র স্রোত না থাকায়
আত্মিক সম্পর্ক না থাকায়
কৰি বিদেশে থাকায়
বহু নদ দলে
কপোতাক্ষের জলে
সাগরের পানিতে
কল কল শব্দে
বহুদেশ দেখিয়াছি বহু নদ-দলে
আর কি হে হবে দেখা
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে
তীব্র অনুরাগ
তীক্ষ্ণ স্মরণশক্তি
স্মৃতি রোমন্ত্ৰন
প্রাপ্তির ছলনা
গিরিরূপী
দুগ্ধস্রোতোরূপী
বারিধারারূপে
অমরাবতীরূপে
ভাবের প্রবর্তনা
ভাবের পরিণতি
সূচনা ও উপসংহার
ভাবের প্রবর্তনা ও পরিণতি
ফ্রান্সের প্যারিসে
জার্মানির বার্লিনে
ইংল্যান্ডের ডাবলিনে
ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে
দূরে বসেও তিনি এর কলকল ধ্বনি শুনতে পান
শৈশবের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা
এই নদ যেন মায়ের স্নেহডোরে তাঁকে বেঁধেছে
এই নদের তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে তিনি বড় হয়েছেন
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
অমিত্রাক্ষর ছন্দ
সনেট
অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও সনেট
ভ্রান্তির ছলনা
নিশার স্বপ্ন
বঙ্গের সংগীত
মায়া মন্ত্রধ্বনি
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
শোনে মায়া-মন্ত্রধ্বনি তব কলকলে
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে
হিন্দু কলেজে
প্রেসিডেন্সি কলেজে
সেন্ট পল কলেজে
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে
প্রেসিডেন্সি কলেজে
কারমাইকেল কলেজে
সাগরদাঁড়ি স্কুলে
হিন্দু কলেজে
পাশ্চাত্য জীবনযাপনের প্রতি প্রবল ইচ্ছা
ইংরেজি ভাষার মোহ
বিদেশপ্রীতি
স্বদেশী ভাষার প্রতি অবজ্ঞা
নবীনচন্দ্র সেন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বিহারীলাল চক্রবর্তী
জামাই বারিক
সধবার একাদশী
এর উপায় কি
বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে
আর কি হে হবে দেখা?
ভুলের ছলনায়
আশার ছলনায়
পাওয়ার ছলনায়
হারানোর ভয়
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে
তব কলকলে জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ফলনে
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে
বাল্যজীবনের দুরন্তপনা মনে করে
শৈশবের বর্ণিল দিনের কথা মনে করে
কলকাতার বন্ধুদের কথা মনে করে
নিজ গ্রামের কপোতাক্ষ নদের কথা মনে করে
প্রথম ছয় চরণের স্তবক
মাঝের হয় চরণের স্তবক
শেষের ছয় চরণের স্তবক
চৌদ্দ চরণের পরবর্তী ছয় চরণের স্তবক
আর্ট চরণ, চৌদ্দ মাত্রা
আট চরণ, আট মাত্রা
চৌদ্দ চরণ, চৌদ্দ মাত্রা
ছয় চরণ, ছয় মাত্রা
চতুর্দশপদী কবিতার পরবর্তী আর্ট চরণের স্তবককে
চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম ছয় চরণের স্তবককে
চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আর্ট চরণের স্তবককে
চতুর্দশপদী কবিতার পরবর্তী ছয় চরণের স্তবককে
শেষ ছয় চরণের
প্রথম আট চরণের
মধ্য চরণের
সমস্ত কবিতার শেষ চরণের
নিসর্গপ্রীতির
নদীপ্রেমের
প্রকৃতির প্রতি মমত্ববোধের
স্মৃতিকাতরতা
ভাবান্তরে স্বদেশে ফিরে আসতে চাইলে
ভাবান্তরে প্রবাসী জীবন একঘেয়ে মনে হলে
ভাবান্তরে জন্মভূমির স্মৃতি উদ্দীপ্ত হলে
ভাবান্তরে জন্মভূমিতে ফিরে এসে মরতে চাইলে
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম, 

অতিভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধূম।

সেইদিন এই মাঠ
কপোতাক্ষ নদ
আমি কোনো আগন্তুক নই
পল্লিজননী
ছেলেরে তাহার ভালো করে দাও কাঁদে জননীর প্রাণ
পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল
আমি স্বাপ্নিক নিয়মে এখানেই থাকি
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

পৌষের কাছাকাছি
রোদমাখা সেই দিন
ফিরে আর আসবে কি কখনো?

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে
আর কি হে হবে দেখা? যতদিন যাবে।
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নের উত্তর দাও

‘পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায় ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সেই কি ভোলা যায়?”

কবি পরিচিতি

মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনের শেষে তিনি কলকাতার হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজে অধ্যয়নকালে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তাঁর তীব্র অনুরাগ জন্মে। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন। তখন তাঁর নামের প্রথমে যোগ হয় 'মাইকেল'। পাশ্চাত্য জীবনযাপনের প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তীব্র আবেগ তাঁকে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যরচনায় উদ্বুদ্ধ করে। পরবর্তীকালে জীবনের বিচিত্র কষ্টকর অভিজ্ঞতায় তাঁর এই ভুল ভেঙেছিল । বাংলা ভাষায় কাব্যরচনার মধ্য দিয়ে তাঁর কবিপ্রতিভার যথার্থ স্ফূর্তি ঘটে। তাঁর অমর কীর্তি 'মেঘনাদ বধ কাব্য'। তাঁর অন্যান্য কাব্য : তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য ও চতুর্দশপদী কবিতাবলী। তাঁর নাটক : কৃষ্ণকুমারী, শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী; এবং প্রহসন : একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ এবং সনেট প্রবর্তন করে তিনি যোগ করেছেন নতুন মাত্রা । ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে জুন কবি পরলোকগমন করেন । 

Content added By

শব্দার্থ ও টিকা

 সতত-সর্বদা। বিরলে-একান্ত নিরিবিলিতে। নিশা-রাত্রি। ভ্রান্তি-ভুল। বারি-রূপকর- প্রজা যেমন রাজাকে কর বা রাজস্ব দেয়, তেমনি কপোতাক্ষ নদও সাগরকে জলরূপ কর বা রাজস্ব দিচ্ছে। চতুর্দশপদী কবিতা- ইংরেজিতে Sonnet, বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতা। চৌদ্দ-চরণ- সমন্বিত ভাবসংহত সুনির্দিষ্ট। চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণের স্তবককে অষ্টক (Octave) এবং পরবর্তী ছয় চরণের স্তবককে ষষ্টক (Sestet) বলে। অষ্টকে মূলত ভাবের প্রবর্তনা এবং ষটক ভাবের পরিণতি থাকে । চতুর্দশপদী কবিতায় কয়েক প্রকার অন্ত্যমিল প্রচলিত আছে। যেমন, প্রথম আট চরণ : কখখক কখখক। শেষ ছয় চরণ : ঘঙচ ঘঙচ । অথবা প্রথম আট চরণ : কখখগ কখখগ, শেষ ছয় চরণ : ঘঙঘঙ চচ। ‘কপোতাক্ষ নদ' একটি চতুর্দশপদী কবিতা। এখানে মিলবিন্যাস : কখকখ কখখক গখগ ঘগঘ ৷

Content added By

পাঠ পরিচিতি

 ‘কপোতাক্ষ নদ' কবিতাটি কবির চতুর্দশপদী কবিতাবলী থেকে গৃহীত হয়েছে। এই কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। কবি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মধুসূদন এই নদের তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। যখন তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন, তখন জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা। দূরে বসেও তিনি যেন কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পান। কত দেশে কত নদ-নদী তিনি দেখেছেন, কিন্তু জন্মভূমির এই নদ যেন মায়ের স্নেহডোরে তাঁকে বেঁধেছে, কিছুতেই তিনি তাকে ভুলতে পারেন না। কবির মনে সন্দেহ জাগে, আর কি তিনি এই নদের দেখা পাবেন ! কপোতাক্ষ নদের কাছে তাঁর সবিনয় মিনতি-বন্ধুভাবে তাকে তিনি স্নেহাদরে যেমন স্মরণ করেন, কপোতাক্ষও যেন একই প্রেমভাবে তাঁকে সস্নেহে স্মরণ করে । কপোতাক্ষ নদ যেন তার স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীদের নিকট ব্যক্ত করে । দেশমাতৃকার প্রতি অকুণ্ঠ প্রেম যে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি কবিতায় তাই ধরা পড়েছে।

Content added By
Promotion