আবাসিক ইমারতের রান্নাঘর ও টয়লেট/বাথরুম

এসএসসি(ভোকেশনাল) - আর্কিটেকচার ড্রাফট উইথ ক্যাড-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
Please, contribute by adding content to আবাসিক ইমারতের রান্নাঘর ও টয়লেট/বাথরুম.
Content

আবাসিক ইমারতের রান্নাঘর

বাড়ির বাসিন্দাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্যের। আর খাদ্য প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ ও পর্যাপ্ত স্পেস বা পরিসরের রান্নার স্থান বা রান্নাঘরের। রান্নাঘরের কাজগুলোকে যদি ধারাবাহিকভাবে বলা যায় যে কোনো খাদ্য প্রস্তুতের জন্য হাঁড়ি বা পাত্র নিয়ে ধুয়ে এবং খাবার তৈরির উপকরণগুলোকে প্রয়োজনে কেটে-ধুয়ে-মিশ্রিত করে নিতে হয়। এরপর আগুনে বা চুলায় রান্না করা হয়। দেখা যায় পুরো কাজটিতে প্রধান তিনটি অংশ রয়েছে যেমন—

প্রথমত: পূর্বে সংগৃহীত হাঁড়ি বা উপকরণ সংরক্ষিত স্থান [ স্টোরেজ ও মিক্সিং এরিয়া (Storage & Mixing Area)] থেকে বের করা,

দ্বিতীয়ত: খাবার তৈরির উপকরণগুলোকে প্রয়োজনে কেটে-ধুয়ে-মিশ্রিত করা প্রস্তুতি ও পরিষ্কার করার এরিয়া (Preperation & Cleaning Area)]

তৃতীয়ত: চুলায় রান্না করা কুকিং এরিয়া (Cooking Area)] এবং খাওয়ার আগ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা।

রান্নাঘরের এই কাজসমূহকে বিশেষণ করলে দেখা যায় কিচেন বা রান্নাঘরের বেসিক এরিয়া তিনটি—

  • স্টোরেজ ও মিক্সিং এরিয়া ( Storage & Mixing Area) 
  • প্রস্তুতি ও পরিষ্কার করার এরিয়া (Preperation & Cleaning Area) 
  • কুকিং এরিয়া (Cooking Area)

এই তিনটি বেসিক এরিয়াকে নিচের ফ্লো ডায়াগ্রামের (Flow Diagram) মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় ।

Content added By

রান্নাঘরের ওয়ার্কিং ট্রায়েঙ্গেল

রান্না ঘরের তিনটি বেসিক এরিয়ার কেন্দ্র বা প্রধান তিনটি ফিকচার-এর মধ্যে সংক্ষিপ্ত দূরত্বকে লাইন যোগ করলে একটি ত্রিভুজ এর সৃষ্টি হয়, এই ত্রিভুজকেই ওয়ার্কিং ট্রায়েঙ্গেল বলে।

তিনটি এরিয়ার অবস্থান এমন হবে যেন খুব বেশি হাঁটাহাঁটি করতে না হয় আবার এত কাছাকাছি হবে না যে মোড় ঘোরার জায়গা পাওয়া যায় না। এ কারণে এটির একটি নির্দিষ্ট পরিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া আছে।

ওয়ার্কিং ট্রায়েঙ্গেলের পরিসীমা ১২ - ০ থেকে ২২ -০ এর মধ্যে থাকলে কাজ করতে ঘুরতে সমস্যা বা ক্লান্ত হতে হবে না।

চিত্রে (চিত্র-৬.২.১) বেসিক এরিয়ার প্রধান তিনটি ফিচার যেমন— রেফ্রিজারেটর, সিল্ক, রেঞ্জ বা চুলা। যোগ করে ওয়ার্কিং ট্রায়োঙ্গল দেখানো হয়েছে।

চিত্র-৬.২.১: ওয়ার্কিং ট্রায়েঙ্গেল ও তার পরিসীমা

চিত্র-৬.২.৪: বিভিন্ন প্রকার ফ্যামিলি কিচেনের ওয়ার্কিং ট্রায়েঙ্গেল

Content added By

রান্নাঘরে ব্যবহৃত প্রধান প্রধান ফিকচার

রান্নাঘর বা কিচেনের বেসিক এরিয়াতে কাজ করার জন্য কিছু কিছু সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয় যাদেরকে ফিকচার বলে, যেমন- - সিংক, চুলা ইত্যাদি। এই ফিচারসমূহকে কার্যোপযোগী করার জন্য বা লাগানোর জন্য যে আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশ বা Accessory ব্যবহার করা হয় তাকে ফিটিংস বলে, যেমন – ট্রাপ, পানির কল বা বিবৃ কক, ওয়াসার ইত্যাদি। রান্নাঘরের বেসিক এরিয়ার প্রধান ফিচার তিনটি হচ্ছে—

সিংক: ধোরার জন্য ব্যবহৃত হয়, এটি সিঙ্গেল, ডাবল বা ট্রিপল হতে পারে, এমনকি ধোরার জন্য শুধু প্রয়াশ বোলটিও পাওয়া যায়। কিচেনের আকার অনুযায়ী যে কোনো ধরনের সিংক নির্বাচন করা যায়। 

রেঞ্জ বা বার্নার বা চুলা: রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়, এটিও সিঙ্গেল বা ডাবল হতে পারে। বৈদ্যুতিক বা গ্যাস রেঞ্জসমূহ সাধারণত চারটি বার্নারসই বেশি ব্যবহৃত হলেও আরও অনেক রকমের হয়ে থাকে। 

ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর: তৈরি খাদ্য বা উপকরণ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়, এটির অসংখ্য রকমভেদ রয়েছে, রেফ্রিজারেটর যদিও কিচেনের ফিচার তথাপি আমাদের দেশে এটি ডাইনিং রুমেই বেশি ব্যবহার করা হয়।

নিচে রান্নাঘরের প্রধান ফিচারসমূহের নাম ও চিত্র, স্থানীয় মাপ অনুযায়ী দেয়া হল ।

চিত্র-৬.৩.১: স্থানীয় মাপ অনুযায়ী প্রধান ফিচারসমূহের নাম ও চিত্র

চিত্র-৬.৩.২: রান্নাঘরের আনুষাঙ্গিক ফিচারসমূহের মাপসহ নাম ও চিত্র

Content added By

রান্নাঘরের ফিকচার সজ্জানুযায়ী শ্রেণীবিভাগ

কিচেন বা রান্নাঘর মূলত ফিচারের সজ্জানুযায়ী শ্রেণিবিভাগ করা হয়ে থাকে। কিচেনের ফিচার সজ্জানুযায়ী নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়-

১. ইউ-আকৃতির কিচেন (U-Shaped Kitchen): যখন ফিচারসমূহ ইংরেজি ইউ আকৃতিতে সাজানো হয় তাকেই আকৃতির কিচেন (U-Shaped Kitchen) বলে। অর্থাৎ তিন দিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা এবং তিন দেয়ালে তিনটি ফিকচার সাজানো থাকে।

 

২. পেনিনসুলা কিচেন (Peninsula Kitcheni): এটি এক ধরনের ইউ-আকৃতির কিচেন। কিন্তু ইউ এর একটি দিকে কোনো দেয়াল দিয়ে আবদ্ধ থাকে না অর্থাৎ ইউ এর দুই দিকে দেয়াল থাকে তাকে পেনিনসলা কিচেন বলে।

 

৩. এল-আকৃতির কিচেন (L-Shaped Kitchen): যখন ফিচারসমূহ ইংরেজি এল-আকৃতিতে সাজान জয় তাকে এল-আকৃতির কিচেন (L-Shaped Kitchen) বলে। এই ধরনের কিচেন সর্বাধিক প্রচলিত।

 

৪. করিডোরে কিচেন (Corridor Kitchen): যখন ফিকচারসমূহ বিপরীত দিকের দেয়ালে সাজানো হয় এবং মাঝে করিডোরের মত স্পেস বা প্যাসেজ তাকে করিডোর কিচেন (Corridor Kitchen) বলে।

 

৫. এক দেয়ালের কিচেন (One wall Kitchen ): যখন ফিচারসমুহ এক দিকের বা একটি দেয়ালে পর পর সাজানো হয় তাকে এক দেয়ালের কিচে (One Wall Kitchen) বলে। সাধারণত জায়গা কম থাকলে এবং খুব ছোট বাড়িতে এই ধরনের কিচেন বেশি ব্যবহার করা হয়।

 

৬. আইল্যান্ড কিচেন ( Island Kitchen) : যখন কিচেনের মাঝে একটি Island থাকে বা কিচেনের বিভিন্ন অংশকে একে অন্যের থেকে পৃথক করে রাখে বা আইল্যান্ডটি বিভিন্ন অংশের মধ্যে সেপারে- টর হিসাবে কাজ করে তাকে আইল্যান্ড কিচেন ( Island Kitchen) বলে। সাধারণত আইল্যান্ডটিতে (Island) চুলা বা সিংক বা ডীপ ফ্রিজ এর যে কোনো একটি ফিচার বসানো হয় ।

 

৭. ফ্যামিলি কিচেন (Family Kitchen): এটি এক ধরনের সমন্বিত কিচেন ।। এই ধরনের কিচেন ওপেন প্ল্যানে। থাকে যা রান্না ও পারিবারিক মিটিং স্পেস (Meeting Place) হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এতে দুটি অংশ থাকে। একটি রান্না করার বা খাদ্য তৈরির অংশ অন্যটি খাবার খাওয়া ও পারিবারিক বা ফ্যামিলি কক্ষ। (চিত্র ৬.২.৪। বিভিন্ন আকৃতির কিচেনে ফ্যামিলি অংশ সংযুক্ত হয়ে ফ্যামিলি কিচেন তৈরি হয়েছে)

Content added By

রান্নাঘরে ফিকচার সজ্জার বিবেচ্য বিষয়

কিচেন বা রান্নাঘর ডিজাইনের সময় ফিচার সজ্জা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর উপর নির্ভর করে কিচেনের মূল কার্যক্রম বা খাদ্য প্রস্তুত। রান্নাঘরের ফিচার সজ্জার বিবেচ্য বিষয় এবং প্রয়োজনীয় মাপ ও উচ্চতা নিচে আলোচনা করা হল-

  • সাধারণত প্রবেশের পর ওয়ার্ক ফ্লো অনুযায়ী ফিচার বিন্যাস করা উচিত।
  • চুলার অবস্থান এমন স্থানে হওয়া উচিত যেন পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায়। এজন্য জানালার পাশে কিন্তু বরাবর না হয় এমনভাবে দেয়া উচিত। সম্ভব হলে চুলার পিছনে ফিক্সড গ্লাস বা উইডো রাখা যায়।
  • সিংক, রেফ্রিজারেটর বা চুলা প্রতিটি ফিচারের দুই পাশে সম্ভব হলে কেবিনেট এর সমান চওড়া। বা ২০" - ২২" স্থান ফাঁকা রাখতে হবে।

 

 

  • দেয়াল ওভেন বা ডিস ওয়াশার থাকলে তার সামনে পাল্লা খোলার জন্য কমপক্ষে ৩৬" জায়গা রাখতে হবে।
  • বিপরীত দিকের দেয়ালে দুটি ফিচার কাজ করার জন্য কমপক্ষে ৪'-০" স্থান ফাঁকা রাখতে হবে।
  • ফিকচার বিন্যাস এমন হবে যেন যাতায়াত সহজ ও কম দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়।
  • ওয়ার্কিং ট্রায়েঙ্গেলের মাণ বা পরিসীমা 12'-0" থেকে 22-0" এর মধ্যে রাখতে হবে।
  • পাশাপাশি দুটি বৈদ্যুতিক ফিচার যেমন ইলেকট্রিক রেঞ্জ ও রেফ্রিজারেটর পর পর দেয়া উচিত নয় এরকম দুটি ইলেকট্রিক ফিকচার-এর মধ্যে কমপক্ষে 20" - 22" স্থান ফাঁকা রাখতে হবে।
  • ফিকচার এর উপর যেন ছায়া না পড়ে বা যে লাইটে শ্যাডো বা ছায়া পরে না এরুপ লাইটের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • কর্ণারে কোনো ফিকচার সিংক বসাতে হলে কর্ণার থেকে 6" এবং চুলা বসালে কমপক্ষে 9" জায়গা ছেড়ে বসাতে হবে।
  • ফিকচার বসানোর জন্য কেবিনেট বা কাউন্টার টপ এর চওড়া 20"-25" এর মধ্যে রাখতে হবে।
  • নিচে কোনো ফিচার না থাকলে নিচের কাউন্টার টপ এবং উপরের কেবিনেটের মধ্যে 15"-18" স্থান ফাঁকা রাখতে হবে।
  • পা রাখার জন্য কেবিনেটের নিচে 4" উঁচু এবং পাশে 3" জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে।
  • উপরের কেবিনেট এমন হবে যেন কাজ করার সময় মাথায় না লাগে এজন্য উপরের কেবিনেটের চওড়া দেয়াল থেকে সর্বোচ্চ 12" এর মধ্যে রাখতে হবে।
  • দেখে কোনো কিছু নামানোর জন্য উপরের তাকের। সর্বোচ্চ উচ্চতা 61" আর না দেখে নামানো যাবে এমন তাকের উচচতা 68" - 72" পর্যন্ত রাখা যাবে।
  • যেহেতু সিংকের বোলের অংশ একটু গর্ত থাকে তাই সিংকের সর্বোচ্চ উচ্চতা 36" এবং বোলের নিচের উচ্চতা 32" হলে ভালো হয়
  • আমাদের দেশের খাদ্যাভ্যাস, সাধারণ যারা কিচেনে কাজ করে বা মেয়েদের উচ্চতা, চুলা ও হাঁড়ি ইত্যাদি বিবেচনা করে চুলার হাইট 24" - 27" হলে ভালো হয়।  
  • সিংকের উপরে কেবিনেট পর্যন্ত কমপক্ষে 24" জায়গা থাকলে ভালো হয়।
  • চেয়ারে বসে কোনো খাবার বানাতে হলে ল্যাপ টেবিলের উচ্চতা হবে 24" -26"।

চিত্র-৬.৫.৪: একটি বড় আকারের কিচেনের ফিচার সজ্জা ও কেবিনেটের বিভিন্ন এলিডেশন

Content added By

টয়লেট ও বাথরুম ফিকচার এর নাম ও মাপ

ওয়াশ বেসিন বা লেভেটরি (Wash Basin or Lavatory): সাধারণ যে কোনো রুমে / টয়লেটে বিশেষ করে ছোট টয়লেটে বেশি। ব্যবহার করা হয়। ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায় (চিত্র-৬.৬.১)। হাত-মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

গোলাকার বা বৃত্তাকার ওয়াশ বেসিন বা গেভেটরি (Round or Circular Basin or Lavatory): একটু বড় বাথরুমে টয়লেটে বিশেষ করে এটাচ্‌ড টয়লেটে বেশি ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায় (চিত্র ৬.৬.২)। হাত-মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও খুব ছোট জায়গার জন্য কর্ণার বেসিনও পাওয়া যায়। কর্ণার থেকে 12"-14" পর্যন্ত হয়ে থাকে।

কেবিনেট বেসিন বা লেভেটরি (Cabinet Basin or Lavatory): একটু বড় বাধরুমে/টয়লেটে বিশেষ করে এটাচড টয়লেটে এবং হ্যান্ড ওয়ান এর জন্য ডাইনিং স্পেসে বেশি ব্যবহার করা হয়। গোল বা ডিম্বাকৃতির হয়, বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায় (চিত্র ৬.৬.৩)। হাত-মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

ওয়াটার ক্লজেট বা কমোড (Water Closet [W.C] or commode): তুলনামূলক কম স্পেস লাগে এবং স্বাস্থ্যসম্মত বলে বর্তমানে যে কোনো টয়লেটে ব্যবহার করা হয়। তবে অনভ্যস্ততার কারণে আমাদের দেশে অনেকেই পছন্দ করে না। মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায় (চিত্র-৬.৬.৪.১- চিত্র-৬.৬.৪.২)।

লং প্যান(Long Pan): যে কোনো টয়লেটে ব্যবহার করা হয়। সবসময় ভিজা বা স্যাঁতস্যাতে থাকার কারণে আজকাল অনেকেই পছন্দ করে না। আমাদের দেশে অনেকেই কমোড ব্যবহারে অভ্যন্ত নয় বলে কমন টয়লেটে বেশি ব্যবহার করা হয়। মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায় (চিত্র-৬.৬.৫)।

বাথ টাব (Bath Tub): বড় ও অ্যাটাচড টয়লেটে ব্যবহার করা হয়। বিলাসবহুল বাড়িতে বেশি ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বাড়িতে এর ব্যবহার খুবই কম। গোসল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। গোলাকার, ডিম্বাকৃতি, আয়তকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায়। (চিত্র-৬.৬.৬.১- চিত্র-৬.৬.৬.২)।

শাওয়ার ট্রে ( Shower Tray): যে কোনো ধরনের টয়লেটে ব্যবহার করা হয়। বড় ও এটাচড টয়লেটে এবং বিলাসবহুল বাড়িতে এনক্লোজারসহ শাওরার ট্রে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বাড়িতেও আজকাল অনেক ব্যবহার করা হচ্ছে। গোসল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায় (চিত্র ৬.৬.৭.১- চিত্র-৬.৬.৭.২)।

শাওয়ার ট্রে না ব্যবহার করে যে রকম জায়গা আছে সে অনুযারী তৈরি করে নেয়া যায়। নিচু করে ৯"-১২" দেয়ালের মত রেলিং তৈরি করে শাওয়ার কার্টেন বা পর্দা দিয়ে দিলে শাওয়ার ট্রে এর মত কাজ করে আর গোসল করার সময় পানি চারদিকে ছড়ায় না

বিডেট (Bidet): মলমূত্র ত্যাগ করার পর স্বয়ংক্রি ভাবে ধোয়ার বা শৌচকর্মের জন্য ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্যসম্মত, ভিজা বা স্যাতস্যাতে হওয়ার ভয় থাকে। তবে অনভ্যস্ততার কারণে আমাদের দেশে ব্যবহার হয় না বললেই চলে। বর্তমানে এই ব্যবস্থা পৃথক বিভেটে না করে কমোডের সাথেই পুশ বাটন থাকে। যা চাপ দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি এসে ধোয়া হয়। বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায় (চিত্র-৬.৬.৮)।

ইউরিনাল (Urinal): তুলনামূলক কম স্পেস লাগে এবং যে, কোনো পুরুষ কমন টয়লেটে ব্যবহার করা হয়। মুত্র ত্যাগ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। দাঁড়িয়ে বা বসা উভয় রকমের এবং বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের পাওয়া যায় (চিত্র ৬.৬.১)।

Content added By

টয়লেটে ও বাথরুমে ফিকচার সজ্জার বিবেচ্য বিষয়

কথিত আছে কোনো বাড়ির টয়লেট/বাখরুম দেখে বাসিন্দাদের রুচি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আবার পরিচ্ছন্ন বাথরুম শুধু সুরুচির প্রকাশই ঘটায় না সুস্বাস্থ্যেরও পরিচায়ক। আর বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রয়োজন ফিচারের সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে বিন্যাস (Arrangement)। সাধারণ বাড়িতে তিনটি ফিচারের (বেসিন, প্ল্যান/কমোড, শাওয়ার ট্রে/কাটাব) বাথরুমই বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টয়লেটের/বাথরুমের ফিচার। ব্যবহারের পরিমাণ অনুযায়ী অর্থাৎ যে ফিকচারটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় সেই ফিচারটি সামনে যেটি সবচেয়ে কম ব্যবহৃত হয় সেটি পিছনে এভাবে সাজালে বসালে কাজের বা ব্যবহারের সুবিধা হয়। নিচে টয়লেটে ও বাথরুমে ফিচার সজ্জার বিবেচ্য বিষয়সমূহ আলোচিত হল-

  • যে ফিচারটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় সেই ফিচারটি সামনে বিন্যাস বা অ্যারেঞ্জ করতে হবে, যেমন- বেসিন বা লেভেটরি।
  • বেসিনের আয়নার (Mirror/ Looking Glass) অবস্থান জানালার বিপরীতে বসানো যাবে না। এতে আয়নায় আলোর প্রতিফলনের জন্য মুখ অন্ধকার দেখায়।
  • বেসিন জানালার পাশে বসালে ভালো হয় এবং কর্নার দেয়াল ঘেঁষে বসালে পাশের দেয়াল থেকে ভিতর দিকে কমপক্ষে 4" -6" জায়গা ছেড়ে দিয়ে বসাতে হবে।
  • বেসিন 30" -33" উঁচুতে বসাতে হবে। তবে সাধারণ উচ্চতার মানুষের জন্য 33" উঁচুতে বসানো ভালো।
  • বেসিনের পরে কমোড বা W.C. এর অবস্থান হওরা ভালো। তবে লং প্ল্যান হলে স্বাস্থ্যগত কারণে পিছনে দেয়াল এর সাথে বসানো ভাল।
  • কমোড বা বেসিন এরূপ উঁচু দুটি ফিচার পাশাপাশি হলে এদের মধ্যে কমপক্ষে 14" -16" ফাঁকা রাখতে হবে।
  • গোসলের জন্য শাওয়ার ট্রে বা বাথটাব দিতে হবে, সম্ভব না হলে গোসল করার স্থানটিকে নিচু করে 9"-12" দেয়ালের মত রেলিং তৈরি করে শাওয়ার কার্টেন পর্দা দিয়ে দিলে পানি চারদিকে ছড়ায় না ।
  • লং প্যানসহ বার্থরুম হলে গোসলের জারগা পিছনে সেরা না গেলে প্যানের স্থানটিকে দরজার মত অংশ রেখে বাকি অংশে 15" -30" দেয়ালের মত রেলিং তৈরি করে দিয়েও গোসলের জায়গাটি আলাদা করে দেয়া যায়।
  • লম্বা বাথরুম/টয়লেটের মধ্যে দরজা দিয়ে একদিকে কমোড, অন্যদিকে রেইল (Rail) দিয়ে শাওয়ার, মধ্যে বেসিনের বিন্যাস করলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে বাথরুমটি সারাক্ষণ ভিজা বা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে না এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয়।
  • ফিচারসমূহ এক বরাবর হলে পাইপ বসানো এবং নিষ্কাশনে সুবিধা হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ট্রাফিক বা চলাচলের জন্য স্পেসটি বরাবর সোজা জায়গার অপচয় কম হয় এবং বাথরুম বা ফিচার ব্যবহার করার সময় সুবিধা পাওয়া যায় ।
  • টাওয়েল রেইল, সোপ কেস বা সাবান দানি গোসলের জায়গা থেকে দূরে রাখতে হবে, যেন পানি ছিটে কাপড় বা টাওয়েল বা সাবান ভিজে না যায় ।
  • টয়লেট বা বাথরুমে গীজার (Geezer) / ওয়াটার হিটার (Water Heater)/ ইলেকট্রিক শেভার (Electric Shaver) ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও এসব ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত সুইচ বা এ জাতীয় ফিটিংস-এর অবস্থান পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। 
Content added || updated By

কিচেন, টয়লেটে ও বাথরুমের ভেন্টিলেশন

আমাদের দেশে অনেকেই কিচেন ও টয়লেট/বাথরুম নির্মানে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায় না। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে, “কিচেন বা রান্নাঘর হচ্ছে কোনো বাড়ির বাসিন্দাদের খাদ্য যোগানের এলাকা আর টয়লেট বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষাকারী এলাকা। সঠিক ডিজাইন, রক্ষণাবেক্ষণের ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে কিচেন বা রান্নাঘর হয়ে উঠে তাপ উৎপাদনকারী এলাকা আর টয়লেট/বাথরুম রোগ-জীবাণু উৎপাদনকারী এলাকা” । সঠিক ডিজাইন ও পরিচ্ছন্নতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে ভেন্টিলেশন।

ভেন্টিলেশন বলতে সহজ ভাষায় কোনো কক্ষেরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকাকে বোঝায়। বাইরের প্রাকৃতিক নির্মল বাতাস দিয়ে রুমের ভিতরের ব্যবহৃত (দূষিত, জীবাণুযুক্ত, গ্যাস মিশ্রিত, ঘাম বা দুর্গন্ধ যুক্ত বাতাসকে অপসারণ করার প্রক্রিয়াকে ভেন্টিলেশন বলে। প্রত্যেক রুমেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও কিচেন ও টয়লেটে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কিচেন ও টয়লেটে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নিচে আলোচনা করা হল-

  • কিচেনের গ্যাস, ঝাঁঝালো গন্ধ ইত্যাদি অপসারণের জন্য কিচেন হুড বা চিমনি (বর্তমানে ততটা ব্যবহার হয় না) বা এগজস্ট ফ্যান (Exhaust Fan) ব্যবহার করতে হবে।
  • যতদূর সম্ভব বড় জানালা (কেবিনেট তৈরির সুবিধার্থে ৩৬" উচ্চতায়) তৈরি করতে হবে।
  • কিচেন হুড ব্যবহার করা হলে ডাইনিং বরাবর একটি পাঞ্চ বা ফোঁকর রাখা যেতে পারে, যাতে তৈরি খাবার পরিবেশন (Serve) করা যায় আবার বাতাসও চলাচল করতে পারে।
  • কিচেন ও টয়লেট উভয় ক্ষেত্রে তাপ শোষণকারী রং ও ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা যেতে পারে । তাপ শোষণের জন্য জানালার সিলে টবে গাছও রাখা যায়, এতে দুর্গন্ধ বা ঝাঁঝালো গন্ধ যুক্ত গ্যাসও অপসারিত হয় ।
  • সঠিক ভেন্টিলেশনের জন্য কিচেনের মেঝের আয়তনের কমপক্ষে ১৫% অংশ জানালা রাখতে হবে।
  • টয়লেট ছোট হলেও বাইরের দেয়ালে (Main / Exterior Wall) একটি জানালার ব্যবস্থা করতে পারে ।
  • গ্যাস, দুর্গন্ধ বা ঝাঁঝালো গন্ধ ইত্যাদি অপসারণের জন্য এগজস্ট ফ্যান (Exhaust Fan) ব্যবহার করতে হবে।
  • পাইপের গ্যাস, দুর্গন্ধ বা ঝাঁঝালো গন্ধ ইত্যাদি যেন রুমের মধ্যে না আসে সেজন্য পাইপের সাথে অবশ্যই ভেন্ট পাইপ ব্যবহার করতে হবে ।
  • টয়লেটে বড় জানালা দিলে ভালো হয় তবে প্রাইভেসির জন্য জানালায় কৌণিক সুতার বা কার্টেন ঠিক ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। কিংবা বাইরের দিকে জালী ইট ব্যবহার করেও প্রাইভেসি রক্ষা করা যায় ।
  • আজকাল টয়লেট ও কিচেনে সিলিং ফ্যান-এর ব্যবস্থা করা হয়, এতে প্রাকৃতিকভাবে ভেন্টিলেশনের পাশাপাশি কৃত্রিমভাবেও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হয় ।

চিত্র-৫.৮.১: ড্রেসিং রুমসহ একটি তিন ফিচার বিশিষ্ট অ্যাটাচ্‌ড টয়লেট-এর প্ল্যান

চিত্র-৬.৮.২: ড্রেসিং রুমসহ একটি তিন ফিচার বিশিষ্ট অ্যাটাচড টয়লেটটির সেকশন

চিত্র-৬.৮.৩: একটি তিন ফিচার বিশিষ্ট ছোটো কমন টয়লেট-এর প্ল্যান

চিত্র-৬.৮.৪: একটি তিন ফিচার বিশিষ্ট কমন টয়লেটের সেকশন

Content added By

প্রশ্নমালা

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. ইমারতের রান্নাঘরের বেসিক এরিয়াসমূহের নাম লিখ । 

২. কিচেনের ওয়ার্কিং ট্রারেঙ্গেল এর পরিসীমার মাপ কত ? 

৩. কিচেনের বেসিক এরিয়াকে ফ্লো ডায়াগ্রামের মাধ্যমে প্রকাশ কর। 

৪. টয়লেটের প্রধান ফিচারসমূহের নাম লেখ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. রান্নাঘরের ওয়ার্কিং ট্রারেঙ্গেল চিত্রসহ ব্যাখ্যা কর। 

২. রান্নঘরের প্রধান ফিক্চা‌রসমূহের নাম ও স্থানীয় মাপ চিত্র একে দেখাও। 

৩. টয়লেটের প্রধান তিনটি ফিক্চা‌র-এর নাম ও স্থানীয় মান চিত্র একে দেখাও। 

৪. টয়লেটে ব্যবহৃত ফিক্চা‌রসমূহের নাম ও ব্যবহার লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন

১. রান্নাঘরের ফিক্চা‌র সত্ত্বানুযায়ী শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর। 

২. রান্নাঘরে ফিক্চা‌র সজ্জার বিবেচ্য বিষয় বর্ণনা কর। 

৩. কিচেন, টয়লেটে ও বাথরুমের ভেন্টিলেশন বর্ণনা কর । 

৪. টয়লেটে ও বাথরুমে ফিক্চা‌র সজ্জার বিবেচ্য বিষয়সমূহ বর্ণনা কর।

Content added By
Promotion