প্রায় প্রত্যেকের বাসা-বাড়িতেই কোনো না কোনো ঘূর্ণায়মান যন্ত্রপাতি থাকে। যেমন- সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, প্যাডেস্টাল ফ্যান, পানির পাম্প, বৈদ্যুতিক মটর, বাই সাইকেল, ব্রান্ডার ইত্যাদি। এছাড়া বাজারে বা আশে পাশে ধান, গম, ভুট্টা, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি ভাঙ্গানোর মেশিন দেখা যায়। এগুলোর প্রত্যকটিতেই চালক ও চালিত অংশ থাকে। যেমন- টেবিল ফ্যানের মটরের সাথে ফ্যান বা পাখা, পানির পাম্পের সাথে ইলেকট্রিক মটর। এ অধ্যায়ে আমরা এসকল অংশসমূহের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন পূর্বক কার্যক্ষম করার জন্য কী, কাপলিং ও বিয়ারিং সংশ্লিষ্ট যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকে তা শিখব।
কোনো যন্ত্রাংশ যেমন- ফ্যান রেড, পীয়ার, পাম্প ইস্পেন্সার, ব্রাহ্মার ব্রেড, বিয়ারিং (Bearings), হাব (Hub), ক্যাম ইত্যাদি শ্যাফটের সাথে একই দিকে ও সমগতিতে ঘোরানোর জন্য এদের সংযোগস্থলে অক্ষের সমান্তরালে কী-গুয়ে বা বাঁজকাটা অংশে স্টিলের তৈরি যে ধাতুব বকে প্রবেশ করে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করা হয় তা-ই কী বা চাৰি। চাৰি ঘূর্ণায়মান মেশিন শ্যাফটের সাথে কোনো যন্ত্রাংশ সংযুক্ত করতেই ব্যবহৃত হয়।। এ ধরনের চাবি দুই পার্শ্ব সমান্তরাল এবং মাথাযুক্ত মাথাবিহীন উভয় প্রকার হয়ে থাকে। কী সঠিকভাবে কাজ করার জন্য, শ্যাষ্ট এবং ঘূর্ণামান অংশ (বিষার, পুলি এবং কাপলিং) উভয়েরই কী-গুবে ও কী সিট থাকে।
কাপলিং এমন এক ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থ যা দু'টি শ্যাষ্টকে অর্থাৎ চালক শ্যাফট থেকে চালিত শ্যাফটে সঠিকভাবে শক্তি সরবরাহ করতে একসাথে সংযুক্ত করার জন্য ব্যবহার হয়। কাপলিং এমন ধরনের ডিভাইস যা শক্তি প্রেরণের জন্য দুটি শ্যাফট এর প্রান্ত একত্রে সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। কাপলিং এর মুল উদ্দেশ্য হল ঘূর্ণায়ান সরঞ্জামসমূহ সংযুক্ত করা। শ্যাফট সাধারণত ৬ মিটার হতে ১০ মিটার এর মধ্যে সহজে শক্তি স্থানান্তরিত করতে ব্যবহৃত হয়। দৈর্ঘ্য বড় করার জন্য কাপলিং করার প্রয়োচ্ছন হয়। ফলে উক্ত রেঞ্জের মধ্যে রেখে কাপলিং করে শ্যাফটের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে টর্ক ও শক্তি প্রেরণ করা যায়।
আকৃতি ও কী স্থাপন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে নিম্নরূপভাগে ভাগ করা যায়-
যখন একটি চাবি শ্যাফটের অর্ধেক অংশ এবং হাবের অর্ধেক অংশের সাথে স্থাপন করা হয়, তখন এধরনের কী সাঙ্ক কী নামে পরিচিত। অনেক ধরনের সাঙ্ক কী রয়েছে। যেমন-
আয়তাকার কীগুলোর উচ্চতার চেয়ে প্রশস্ত বড় হয়। কখনও কখনও আয়তাকার সাঙ্ক কী-কে সমতল কী বলা হয়ে থাকে। এগুলো প্রায় ৫০০ মিমি ব্যাস পর্যন্ত শ্যাফটে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের কী এর গভীরতা না বাড়িয়ে অতিরিক্ত কী প্রস্থ ব্যবহার করে বৃহত্তর টর্ক প্রেরণ করা যায়।
সাধারণত ২৫ যিনি পর্যন্ত শ্যাফটের জন্য এগুলি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের কী আয়তাকার কী এর তুলনায় গভীর তাই এগুলি বড় শ্যাকটের জন্য ব্যবহার করা হয়।
টেপার ছাড়াই সমান্তরাল সাক্ষ কীগুলো আয়তাকার বা বর্গাকার হতে পারে। এই কীগুলো সভা এবং হওয়ায় ইনস্টল করা সবচেয়ে সহজ। কারণ কম্পন বা ঘূর্ণন ফলে কীটিকে বাইরের দিকে ঠেলে দেয়া এই কীগুলো সাধারণত শ্যাষ্ট কাওয়ের নীচে এবং কী জয়েন্টের পাশে শক্তভাবে লাগানো হয় এবং যাব কী-গুয়ের শীর্ষে রাখা হয়।
গিৰ হেডেড সাঙ্ক কীগুলো খোলা সহজ ভাই ব্যবহার অনেক সুবিধা। এগুলো সাধারণত আয়তাকার বা বর্গাকার হয়ে থাকে। কীগুলোর উপরের পৃষ্ঠে টেপার করা থাকে যাতে সহজে ও ভালভাবে ফিট করা যায় ।
পালক সাঙ্ক কী দেখতে প্যারামান কী এর মতো কিন্তু এর দুই প্রাপ্ত অর্থ-ব্যাস করা থাকে। এগুলো গুলির শ্যাফটের মধ্যস্থলে ক্ষু সেট দিয়ে আটকানো হয় এবং অক্ষ বরাবরে স্থাপনের জন্য পালক কী এর খাস বা হাবের সাথে সংযুক্ত থাকে। এ ধরনের কী শ্যাফট ও হাবের মধ্যে এর সমান্তরাল ও বিপরীত মুখ বরাবরে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম এবং একই সাথে এটিকে স্লাইড করা যায়।
এ ধরনের কীপুলো খুবই কম ব্যবহার করা হয়। কারণ এগুলো উচ্চ টর্ক প্রেরণ করতে পারে না এবং স্যাডলে থানের ব্যবস্থা থাকে না বরং এটি ঘর্ষণ দ্বারা খাদটিকে ধরে রাখে। স্যাডল কী দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
এ ধরনের কী এর উপরের দিকে টেপার করা থাকে। চাবি ও শ্যাফটের সমতল মুখের দিক নিচের দিকে টেম্পারড হাৰ কী-ওয়েতে ফিট করা হয়।
এ ধরনের কী এর উপরের দিকে টেপার করা থাকে এবং নীচের দিকে হালকা বৃত্তাকার হয়। এগুলো টেম্পারড হাব কী ওয়েতে ফিট করা হয় এবং শ্যাফটের বৃত্তকার পরিধির পৃষ্ঠের নীচে চাপ দিয়ে লাগোনি হয়।
এ ধরনের কী ভারী যন্ত্রপাতির জন্য ব্যবহৃত হয়। স্পর্শক কী জোড়া করার ক্ষেত্রে একে অপরের সাথে সমকোণে এবং শ্যাফটের পৃষ্ঠের স্পর্শক হিসাবে অবস্থান করে। এগুলো শুধুমাত্র এক দিকে টর্শন সহ্য করতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
এ ধরনের কী বৃত্তাকার গর্ভবিশিষ্ট স্থানে ফিট করা হয়। বৃত্তাকার কীগুলো শ্যাফটের অর্ধেক অংশের ছিদ্রে এবং বাকি অর্ধেক অংশ হাবের মধ্যে স্থাপন করা হয়। এই ধরনের কীগুলো সাধারণত কম শক্তির ড্রাইভের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে।
যখন কোনো কী খাদ বা হাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয় তখন এ ধরনের কীসমূহকে প্লাইন্স কী ৰা স্মাইল শ্যাফট কী বলা হয়। এগুলো বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হয় যেমন- কোনো শ্যাফটের আকারের চেয়ে বড় অংশে টর্ক প্রেরণ করতে। সাধারণত অটোমোবাইল ট্রান্সমিশনে, স্লাইডিং গিয়ার ট্রান্সমিশনে স্মাইল কী ব্যবহার করতে দেখা যায়।
জেনারেল মেকানিক্স কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশসমূহে কাপলিং করতে বিভিন্ন ধরনের কাপলিং ব্যবহৃত হয়ে থাকে । যেমন-
বীম কাপলিং-কে হেলিক্যাল ( Helical) কাপলিং বলা হয়। এটি ফ্লেক্সিবল (Flexible) কাপলিং ব্যবস্থা যেখানে দুটি শ্যাফটের মধ্যে শক্তি বা টর্ক সরবরাহের জন্য একটি শ্যাফটের সাথে অন্য কোনো শ্যাফটের কৌণিক মিসলাইনমেন্ট (Misalignment) বা সমান্তরাল অফসেট (Parallel Offset) থাকলেও সমস্যা হয় না এবং অক্ষীয় গতি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এ ধরনের কাপলিং-কে বক্স কাপলিংও বলা হয়। এটি স্লিভ বা ফাঁপা সিলিন্ডার দিয়ে তৈরি করা হয় যা শ্যাফটের ইনপুট ও আউটপুট প্রান্তে অদৃশ্যমান চাবির সাহায্যে লাগানো থাকে। কাপলিং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে বোরে একটি কী-ওয়ে তৈরি করা হয় যাতে চাবির মাধ্যমে টর্ক প্রেরণ করা যায়।
স্প্রিট মাফ কাপলিংকে কম্প্রেশন কাপলিং বা ক্ল্যাম্প কাপলিংও বলা হয়। এটি খুবই দৃঢ় (Rigid) কাপলিং দু'টি হাব দিয়ে এই কাপলিং এর স্লিভ তৈরি করা হয়। সাধারণত এ কাপলিং এর হাবসমূহ ঢালাই লোহা দিয়ে তৈরি করা থাকে। মাফের অর্ধেকাংশ নিচের দিক থেকে এবং অন্য অর্ধাংশ উপর দিক থেকে একসাথে আটকানো হয়।
ফ্ল্যাঞ্জ কাপলিং হল ঘূর্ণায়মান শ্যাফটের মধ্যে একটি ড্রাইভিং কাপলিং যা দু'টি ফ্ল্যাঞ্জনিয়ে গঠিত। এ কাপলিং এর প্রতিটি শ্যাফটের শেষে স্থাপিত ফ্ল্যাঞ্জসমূহ একসাথে কয়েকটি বোল্টের মাধ্যমে আটকানো হয়।
ডিস্ক কাপলিং হলো দু'টি ল্যাফটের যান্ত্রিক সংযোজন ব্যবস্থা। যেখানে চালক অংশের শক্তি চালিত অংশে যথাযথভাবে পরিবর্তন হয়। এ পদ্ধতিতে কয়েকটি পাতলা স্টেইনলেস স্টিলের ডিস্ক একত্রিত করার মাধ্যমে বোস্টের সাহায্যে টর্ক প্রেরণ করা হয়।
বুশ পিন-টাইপ কালন্সিং মূলত ফ্ল্যাজ কাপলিং এর উন্নতরূপ। এ ধরনের কাপলিং ব্যবস্থায় বোল্টের পরিবর্তে রাবার বুশিং এর সাথে পিন ব্যবহৃত হয়। রাবার বুশিং কাপলিং সিস্টেম সহজতর করে এবং শক ও কম্পন শোষণ করতেও সাহায্য করে।
ডায়াফ্রাম কাপলিংয়ে এক বা একাধিক ধাতব ঝিল্লি থাকে যা একটি ড্রাইভ ফ্ল্যাজের বাইরের ব্যাসে সংযুক্ত থাকে এবং ডায়াফ্রামের মাধ্যমে একটি ইনসাইড ডায়ামিটার অ্যাটাচমেন্টের সাহায্যে রেডিয়ালি টর্ক স্থানান্তর করে থাকে।
গ্রিড কাপলিং হল মাল্টি-পিস মেকানিক্যাল শ্যাফট কাপলিং যা যান্ত্রিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন অ্যাসেম্বলিতে শ্যাফটের মধ্যে টর্ক এবং ঘূর্ণন ট্রান্সমিট করতে ব্যবহৃত হয়।। এক্ষেত্রে পরস্পর সংযুক্ত শ্যাফটসমূহের মধ্যে সংঘটিত প্রান্তিককরণ ও সামান্য তারতম্যের কারণে সৃষ্ঠ হালকা শক শোষণ করতে পারে।
রোলার চেইন কাপলিং এমন এক যান গঠিত পরিবর্তিত স্প্রোকেটের সমন্বয়ে টিস্ট্র্যান্ড রোলার চেইন এবং দু- হয়ে থাকে। ছোট আকার থাকা সত্ত্বেও নকশাটি সহজ এবং অত্যন্ত কার্যকরী, এবং এটি একটি শক্তিশালী চেইন এবং বিশেষভাবে কাটা, শক্ত দাঁতের স্প্রোকেট দ্বারা গঠিত যা উচ্চ পরিমাণে টর্ক প্রেরণ করতে দেয়।
দুটি শ্যাফটের মধ্যে টর্ক প্রেরণ করার জন্য গিয়ার কাপলিং ডিজাইন করা হয় যা সমরেখায় থাকে না। এগুলোতে সাধারণত দুটি ফ্লেক্সিবল জয়েন্ট থাকে যা প্রতিটি শ্যাফট স্থির থাকে এবং তৃতীয় শ্যাফট দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
টায়ার কাপলিং হলো টরশোনালী নরম (Torsionally Soft) ও ফ্লেক্সিবল বডিসহ এক ধরনের শ্যাফট কাপলিং যা মিসএলাইনমেন্ট এর কারনে উদ্ভূত ত্রুটিসমূহ দূর করে ট্রান্সমিশন সিস্টেমের অন্যান্য অংশকে রক্ষা করে। টায়ার কাপলিংগুলো অত্যন্ত নমনীয় এবং টরসিয়াল ব্যাকল্যাশ মুক্ত। এর টরসিয়াল দৃঢ়তার কারণে বিশেষ কাপলিং ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত হয়।
'জ' কাপলিং (Jaw Couplings ) : ‘জ' কাপলিং হলো সাধারণ কাজে ব্যবহৃত এক ধরণের পাওয়ার ট্রান্সমিশন কাপলিং যা গতি নিয়ন্ত্রণ (সার্ভো) অ্যাপ্লিকেশনগুলিতেও ব্যবহার করা হয়। এটি ড্যাম্পিং সিস্টেম (Damping System) এবং মিস্যালাইনমেন্টকে সমন্বয় করে শ্যাফটে টর্ক প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর জো জোড়া তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত: দুটি ধাতব হাব এবং একটি ইলাস্টোমার, যাকে মাকড়সাও বলা হয়।
ওল্ডহেম কাপপ্লিং (Oldham Coupling):
ওল্ডহ্যাম কাপলিং হলো একটি তিনপিস অ্যাসেম্বলি যা দু'টি হালকা ওজনের অ্যালুমিনিয়াম বা ক্ষয় প্রতিরোধী স্টেইনলেস স্টীলের হাব এবং সেন্টার ডিস্ক নিয়ে গঠিত। যেখানে শ্যাফটদ্বয় একই অক্ষে অবস্থান করে না সেখানে ওল্ডহ্যাম কাপলিং ব্যবহৃত হয়। হাবের টেননগুলো ডিস্কের স্লটের সাথে সামান্য প্রেসার ফিট করে, যা কাপলিংকে শূন্য ব্যাকল্যাশের সাথে কাজ করতে দেয়। ওল্ডহ্যাম কাপলিংগুলো সাধারণত সার্ভো চালিত সিস্টেমে ব্যবহৃত হয় যার জন্য সুনির্দিষ্ট গতি নিয়ন্ত্রণ এবং কম জড়তা সুষম নকশা প্রয়োজন।
ইউনিভার্সেল কাপলিং (Universal Coupling) :
সর্বজনীন বা ছক কাপলিং দু'টি শ্যাফটকে সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয় যার অক্ষগুলো একটি ছোট কোণে ছেদ করে। দুটি শ্যাফটের বাঁক ধ্রুবক হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত অনুশীলনে, যখন ভরবেগ এক শ্যাফট থেকে অন্য খাদে স্থানান্তরিত হয় তখন এটি পরিবর্তিত হয়।
বেলোজ কাপলিং (Bellows Coupling) :
বেলোস কাপলিং একটি বিশেষ ধরনের কাপলিং ব্যবস্থা এর কারণ এতে ব্যতিক্রমী টর্সনাল দৃঢ়তার মাধ্যমে কৌণিক অবস্থান, সঠিক বেগ এবং টর্ক স্থানান্তর করে থাকে।
ফ্লুইড কাপলিং (Fluid Coupling) :
ফ্লুইড কাপলিংকে হাইড্রোলিক কাপলিংও বলা হয়। এটি একটি তরল-গতিয় ডিভাইস যা তরল প্রবাহীর ত্বরণ ও মন্দপ এর মাধ্যমে ঘূর্ণন যান্ত্রিক শক্তি সরবরাহ করে। এর চালক শ্যাফট ইম্পেলার এবং চালিত শ্যাফট রানার হিসেবে গঠিত। ইম্পেলার অংশটি পাম্প হিসেবে এবং রানার অংশটি টারবাইন হিসেবে কাজ করে। ইম্পেলার অক্ষের নিকটে স্পর্শক অংশের ভরলের গতি কম এবং ইম্পেলার অক্ষ থেকে পরিধির দিকে তরলের গতি সর্বাধিক থাকে। ইম্পেলার কর্তৃক এই বৃদ্ধি প্রাপ্ত গতিশক্তি রানার রেডকে আঘাত করে শক্তি সরবরাহ করে। রানার থেকে প্রবাহী বের হওয়ার সময় গতি কমে যায় ।
মেশিনিং এর ক্ষেত্রে কাটিং টুল শক্ত মেটালের তৈরি করা হয়, ফলে সহজেই এর দ্বারা কার্যবস্তুর ধাতু কর্তন এবং আকারের পরিবর্তন করা যায়। কার্যবস্তু ধাতু উপর নির্ভর করে কাটিং টুলের ধাতু নির্বাচন করা হয়। অন্যদিকে মেশিনিং প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে কাটিং টুল নির্বাচন করা হয়। সাধারণত কার্যবস্তু কাজের ধরণ ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ধাতু নির্বাচন করা হয়ে থাকে। কাটিং প্রক্রিয়ার টুল-চিল এবং টুল-ওয়ার্কশিস এই দুয়ের সংযোগ পৃষ্ঠ তলে সরাসরি কার্য সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ সংযোগ স্থলে প্রক্রিয়াকে ট্রাইবালজী প্রক্রিয়া বলা হয়। সাধরণত মেশিনিং ক্ষেত্রে কার্যবস্তুর জন্য ফেরাস এবং নন-ফেরাস মেটাল ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেকটি ধাতুর বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। মেশিনিং প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে তিন ধরণের মেটাল বা ধাতু ব্যবহার করা হয়। ক) ধাতু খ) প্লাস্টিক গ) কম্পোজিট মেটাল।
কী সাধারণত মাইন্ড স্টীলের টুকরা যা শ্যাফট ও হাবের মাঝে স্থাপন করা হয়। কী সবসময় শাফিটের অক্ষের সমান্তরালে বসানো থাকে। একটি আয়তাকার সাঙ্ক কী লে-আউট ও পরিমাপ পদ্ধতি দেওয়া হলো। কী এর গ্রন্থ, w = d/4 চাবির পুরুত্ব, t2w/3 = d/6, এখানে d = শ্যাফট বা হাব এর গর্ভের ব্যাস।
গিব হেড সাঙ্ক কী- এটা একটি আয়তাকার সাঙ্ক কী যার এক প্রান্তে হেড অবস্থিত। এই হেডের কারণে শ্যাফট হতে কী বিচ্ছিন্ন করা সহজ হয়। একটি গিব হেড কী লে-আউট ও পরিমাপ পদ্ধতি দেওয়া হলো। কী এর প্রস্থ, w = d/4 বড় প্রান্তের পুরুত্ব, T=2w/3 = d/6, এখানে d = শ্যাফট বা হাব এর গর্তের ব্যাস
প্রতিটি যান্ত্রিক সিস্টেমে বিভিন্ন মেশিন উপাদানের মধ্যে আপেক্ষিক গতি অন্তভুক্ত। ধর্ষণে শক্তি অপচয় ও স্পর্শক তলে ক্ষয়ের অবনতির কারণে আপেক্ষিক গতি বৃদ্ধি পায়। বিয়ারিং হল এমন ধরনের যন্ত্রাংশ যা এক যন্ত্রাংশ থেকে অন্য যন্ত্রাংশে লোড স্থানান্তরে ঘর্ষণ কমায় ফলে আপেক্ষিক গতি বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ট্রান্সমিশন শ্যাফট ও হাউজিং এর মধ্যে আপেক্ষিক থাকে, যেখানে বিয়ারিংসমূহ শ্যাফটের সাপোর্ট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। শ্যাফট ও হাউজিংএ লোড স্থানান্তরের সময় এদের মধ্যে ধর্ষণের কারণে বিদ্যুতের অপচয় কমাতে সাহায্য করে।
রোলিং এলিমেন্ট হিসাবে বিয়ারিং-কে প্রধানত দুটিভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
• বল বিয়ারিং ও
• রোলার বিয়ারিং
বল বিয়ারিং সর্বধিক ব্যবহৃত সাধারণ বিয়ারিং যা দুটি ধাতব রিং এর মধ্যে বল আকারে অবস্থিত। আর এ ধাতব রিং-কে রেস বলে, একটি বাইরের রেস অন্যটি ভিতরের রেস। বলগুলোকে নির্দিষ্ট অবস্থানে রাখতে যে ধাতব রিং বা আচ্ছাদন ব্যবহার করা হয় তাকে কেস বলে। বিয়ারিং ব্যবহারে শক্তির অপচয় কম হয়। ভিতরের রেসটি মুক্ত অবস্থায় ঘুড়ে এবং বাইরের রেসটি স্থির অবস্থায় থাকে। ভিতরের রেসটি শ্যাফট এর সঙ্গে লাগনো হয় এবং বাইরের রেসটি মটরের সাথে লাগানো থাকে। বল বিয়ারিং কম বাধা প্রদানে, সহজে পরিবর্তনযোগ্য, কম দামে, অধিক লোড বহনে, দির্ঘায়ু ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করে থাকে। এটি ঘূর্ণনে কম শব্দ হয়। ব্যবহারের দিক বিবেচনায় বল বিয়ারিং কে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায় :
ক) ডিপ-গ্রুভ বল বিয়ারিং
খ) সিঙ্গেল রো এঙ্গুলার কন্ট্যাক্ট বিয়ারিং
গ) সেলফ-এলাইনিং বিয়ারিং
২.৪.২ রোলার বিয়ারিং (Roller Bearing): রোলার বিয়ারিং বল বিয়ারিং এর মত কাজ করে থাকে তবে বল বিয়ারিং এর তুলনায় অধিক লোড বহন করতে পারে এবং অধিক আনুভূমিক মোডে অবস্থান করতে পারে। রোলার বিয়ারিং সিপিক্ষিক্যাল বা ট্যাপার টাইল হতে পারে।
রৈখিক বিয়ারিং এ দুটি রেসের মধ্যে বল বা ঘূর্ণায়মান উপাদান থাকে তবে এটি যেকোনো উপাদানকে রৈখিক গতি দিতে ব্যবহৃত হয়। লিনিয়ার বিয়ারিংয়ের সহজ উদাহরণ হল স্লাইডিং ডোর, আলমারির ড্রয়ার ইত্যাদি।
যেখানে ঘড়ি এবং মিটারের মতো খুব ছোট শ্যাফট থাকে সেখানে এটি ব্যবহার করা হয়। এটি আকারে খুব ছোট এবং অন্যান্য বিয়ারিংয়ের তুলনায় খুব সুক্ষ কাজ করে। এটি নির্দিষ্ট উপকরণ থেকে তৈরি করা হয়।
২.৪.৫ প্লেইন বিয়ারিং (Plain Bearing) : টি ভারবহনের সবচেয়ে সহজ প্রকার। এটি একটি ভারবহন পৃষ্ঠ নিয়ে গঠিত এবং এতে কোনো ঘূর্ণায়মান উপাদান থাকে না। শ্যাফটি বিয়ারিং হোলের ভিতরে ঘুরছে। এটি স্লাইডিং ঘর্ষণ প্রদান করে যা ঘূর্ণায়মান ঘর্ষণ থেকে বেশি। এর একটি উদাহরণ হল ভারবহন পৃষ্ঠের ভিতরে শ্যাফট ঘূর্ণায়মান।
২.৪.৬ ফ্লুইড বিয়ারিং (Fluid Bearing): এটি হল বিপ্লবী ধরণের বিয়ারিং যা ধাতব বিয়ারিংগুলো প্রতিস্থাপন হিসেবে কাজ করে। এখানে ভরলটি দুই- উপাদানের সংস্পর্শে আসে যা বর্ষপকে হ্রাস করে। তরল চালের কারণে, দুটি উপাদান সর্বদা আলাদা থাকে এবং সংস্পর্শে আসে না। এটি অন্য যেকোনো খাত বিয়ারিংয়ের তুলনায় খুব কম শব্দ এবং কম্পন প্রদান করে।
২.৪.৭ মেগনেটিক বিয়ারিং(Magnetic Bearing):
এটি একটি খুব জনপ্রিয় বিয়ারিং কারণ ঘূর্ণায়মান উপাদানের গভির কোন সীমা নেই। দুটি ধরণের চৌম্বকীয় বিয়ারিং পাওয়া যায় একটি হল সক্রিয় বা অ্যাক্টিভ এবং অন্যটি প্যাসিভ। অ্যাক্টিভ টাইপে যা অবস্থানের বাইরে চলে যাওয়ার সাথে সাথে স্ট্যান্টকে কেন্দ্রে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বৈদ্যুতিক চুম্বক ব্যবহার করে চালু করা হয়। প্যাসিভ টাইপে স্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করি যা ডিজাইন করা কঠিন।
নিম্নলিখিত কারণসমূহের জন্য বিয়ারিং এর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য;
ক) এটা ঘর্ষণজনিত বাধাকে কমাতে সাহায্য করে।
খ) এটা শ্যাফটকে একই অক্ষে নিয়ন্ত্রণ করে ঘুরতে সহায়তা করে।
গ) এটা শ্যাফটকে ধারন করে থাকে।
ঘ) এটা যে কোনো প্রকার ভার ও ঘর্ষণের ক্ষেত্রে উপযোগী হয়।
ঙ) এটা ব্যবহারে শ্যাফটের কোনোরূপ ক্ষতির আশংকা থাকে না।
বিয়ারিং-এ ব্যবহৃত লুব্রিক্যান্টসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হলো:
ক) তেল খ) গ্রিজ গ) এয়ার/ গ্যাস
ক) কাজ শেষে এটাতে প্রয়োজন মতো তেল জাতীয় পদার্থ দিয়ে রাখতে হয় যাতে মরিচা না পড়ে।
খ) বিয়ারিং-এর উপর বেশি চাপ না পড়ে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হাউজিং-এ বিয়ারিং ক্যাপ শক্তভাবে ফিট থাকতে হবে।
গ) যে সকল মেশিনে বিভিন্ন প্রকার রিয়ারিং ফিট করা থাকে, মেশিন চালনা করার পূর্বে বিয়ারিংগুলোতে গ্রীজ বা তেল জাতীয় দ্রব্য দিয়ে কাজ করতে হয়।
ঐ
ঘ) মেশিনে কাজ করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ঘর্ষণ বিয়ারিংগুলোর তাপমাত্রা ৬০ সেন্টিগ্রেড থেকে ৭০ সেন্টিগ্রেডের বেশি না হয়।
ঙ) বিয়ারিং ক্লিয়ারেন্স চেক করে দেখতে হবে।
চ) লুব অয়েলের প্রকৃত ভিসকোসিটি থাকা উচিত।
১. বিয়ারিং শনাক্ত করতে পারব;
২. বিয়ারিং এর টুল শনাক্ত করতে পারব;
৩. বিয়ারিং শ্যাফটের মধ্যে লাগাতে পারব;
৪. শ্যাফটে বিয়ারিং সংযোজন ও বিয়োজন করতে পারব;
৫. কাজের শেষে সকল মালামালসমূহ নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে পারব;
সুরক্ষা সরঞ্জামের নাম | সংক্ষিপ্ত বিবরণ | পরিমাণ |
---|---|---|
সেফটি স্যু | মানসম্মত | ১ জোড়া |
গগলস | মানসম্মত | ১টি |
হ্যান্ড গ্লাভস | মানসম্মত | ১ জোড়া |
অ্যাপ্রন | সাইজ অনুযায়ী | ১টি |
মাস্ক | সাইজ অনুযায়ী | ১টি |
যন্ত্রপাতির নাম | সংক্ষিপ্ত বিবরণ | পরিমাণ |
---|---|---|
ফ্লাট স্ক্রু ড্রাইভার | ৬ ইঞ্চি | ১টি |
ফিলিপস স্ক্রু ড্রাইভার | ৬ ইঞ্চি | ১টি |
বল পিন হ্যামার | ৮ ইঞ্চি | ১টি |
রাবারের হ্যামার | ৮ ইঞ্চি | ১টি |
মালামালের নাম | সংক্ষিপ্ত বিবরণ | পরিমাণ |
---|---|---|
ডাস্টার ক্লথ | সুতি কাপড়ের | পরিমানমত |
বিয়ারিং | মানসম্মত | ১ সেট |
লুব ওয়েল | এস এই ৩০ | অর্ধ লিটার |
WD40 (মরিচা প্রতিরোধক) স্প্রে | স্প্রে কন্টেইনার | ১টি |
কিছু বলসহ বোতল | পরিবর্তন যোগ্য বল | ১২টি বলসহ বোতল |
তরল ফ্লোর পরিষ্কারক পদার্থ | পরিষ্কারক পদার্থ | ১টি |
সাবান যুক্ত গরম পানি | গরম পানি এবং সাবান | পরিমানমত |
১. মালামালের তালিকা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি, ইকুইপমেন্ট ও মালামাল সংগ্রহ করি।
২. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম সংগ্রহ ও পরিধান করি।
৩. প্রথমে হুইল বা শ্যাফট হতে সকল বিয়ারিং খুলতে হবে।
৪. বিয়ারিং এর উপরে অংশে বসানো প্লাস্টিক কভারটি খুলতে হবে।
৫. বিয়ারিং খুলার সময়ে বল বিয়ারিং এবং কেস এর মধ্যে ছোট স্ক্রু ড্রাইভার প্রবেশ করে হালকা ভাবে উপরের দিকে চাপ দিয়ে খুলতে হবে।
৬. তারপর রাবার সিল খুব সহজে ত্রু ড্রাইভার দিয়ে বের করে আনতে হবে।
৭ ইনার সার্কেল হতে বল বের করে ফ্লোর পরিষ্কারক পদার্থের বোতলে বলগুলো রাখতে হবে।
৮. তারপর বোতলের মুখ লাগিয়ে ঝাকি দিতে হবে এবং বলগুলো দেখতে হবে বলের পৃষ্ঠদেশে কোন
দাগ পড়েছে কিনা। যদি দাগ থাকে তবে পরিবর্তন করতে হবে। ৯. সিলগুলো সাবান যুক্ত গরম পানিতে পরিষ্কার করতে হবে।
১০. তারপর সিল এবং বলগুলোকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে শুস্ক করতে হবে।
১১. পরবর্তীতে উক্ত সিল এবং বলগুলোকে WD40 স্প্রে দিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে যাতে মরিচা না ধরে।
১২. এরপর ছবি অনুযায়ী পিছন দিক হতে এক এক করে পার্টস সংযোজন করতে হবে।
• কাজ করার সময় অব্যশই পিপিই পরিধান করতে হবে।
• সঠিকভাবে টুলসের ব্যবহার নিশ্চিত হতে হবে।
• কাজের সময় অমনোযোগী হওয়া যাবে না।
• যদি বোঝতে সমস্যা হয় তবে শিক্ষক এর সহায়তা নিতে হবে।
• শিক্ষক এর অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা যাবে না।
বল বিয়ারিং খুলতে এবং সংযোজন করতে পারবে।
এজাতীয় কাজ ও অন্যান্য বল বিয়ারিং খোলা এবং সংযোজন করতে পারবে।
১. কাপলিং বলতে কী বোঝায়?
২. হাব বলতে কী বোঝায়?
৩. পুলির তুলনায় গিয়ারে অধিকতর শক্তি সরবরাহে হয় কেন?
৪. কী (Key) বা চাবি বলতে কী বোঝায়?
৫. বিয়ারিং কত প্রকার ও কি কি?
১. কী বা চাবি ব্যবহারের উদ্দেশ্য লেখ।
২. বিভিন্ন প্রকার সাঙ্ক চিত্রসহ ব্যবহার লিখ।
৩. বিয়ারিং ব্যবহারের সুবিধা কী?
১. চাবি কত প্রকার ও কি কি? প্রত্যেক প্রকারের বর্ণনা দাও।
২. বিভিন্ন প্রকার কাপলিং এর চিত্রসহ বর্ণনা করো।
আরও দেখুন...