চিংড়ি আহরণ সরঞ্জাম

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

ৰাপদা চিংড়ি সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই আহরণের উপযুক্ত হয়ে থাকে। জলাশয়ের অবকাঠামোগত বৈচিত্রতা ও আহরণ উপকরণের কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে চিংড়ি ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাহন ও উপকরণ ব্যবহৃত হরে থাকে। চিংড়ি আহরণ বলতে প্রধানত বাজারজাতকরণের উপযোগী চিংড়ি ধরাকে বোঝানো হয় এবং চিংড়ি ধরার জন্য যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাকে আহরণ উপকরণ বলা হয়। চিংড়ি আহরণ উপকরণসমূহকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন- চিংড়ি আহরণ ৰাহন বা ক্রাফট (craft) এবং চিংড়ি আহরণ উপকরণ বা গিয়ার (gear)। চিংড়ি আহরণ উপকরণসমূহকে এক কথায় ক্রাফট ও গিয়ার বলা হয়। মূলত একটি অপরটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। চিংড়ি আহরণ পদ্ধতি সাধারণত জলাশয়ের প্রকৃতি ও ধরনের ওপর নির্ভর করে। জলাশয়ের ধরন, প্রকৃতি ও কারিগরি বৈশিষ্ট্য ও উপযোগিতা অনুসারে চিংড়ি আহরণ বাহন ও উপকরণ উভয়েরই প্রয়োজন হয়। কখনো কখনো বাহনের প্রয়োজন হয় না । বাণিজ্যিকভাবে মুক্ত জলাশয় ও বৃহৎ চিংড়ি ঘের থেকে চিংড়ি আহরণের ক্ষেত্রে বাহন ও উপকরণ উভয়েরই প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই চিংড়ি ধরার বা আহরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ, জাল ও বড়শি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কৌশলগত দিক থেকে এসব আহরণ উপকরণসমূহের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তবে আমাদের দেশে বাগদা চিংড়ি আহরণে সাধারণত ৪টি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো হলো-

আটলকীন পদ্ধতি: অটল বাঁশের তৈরি এক ধরনের ফাঁদ বা ব্যবহার করে চিংড়ি ধরা যায়। এই সমস্ত আটল বিভিন্ন জাকারের হয়ে থাকে (২ থেকে ৩ ফুট)। আটল ঘেরের বিভিন্ন স্থানে এবং একটি থেকে আরেকটির দুরত্ব প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট হয়ে থাকে। আটল সাধারণত জোয়ারের সময় যেস্থান দিয়ে পানি প্রবেশ ও নির্গমন হয় সেখানে বা ঘেরের গভীরতম স্থানে স্থাপন করা হয়। ইহা একটি সহজ ও ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবস্থা। পাটা বা নেটের পার্শ্বে স্থাপন করা হয়। এই ছাল গোনের সময় ঘেরের গতীর স্থানে এবং গেঁই (বেরের যে স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ও বাহির হয়) এর ধারে স্থাপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে চিংড়ি আহরণ অনেক সহজ এবং কম লোকবল দরকার হয়। কাঙ্ক্ষিত আকারের মেস সাইজ ব্যবহার করলে ছোট মাছ ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

চিত্র-৪.২: আটল ব্যবহার করে চিংড়ি আহরণ

ঝাঁকি জাল পদ্ধতি: গোঁই বা ফাঁদে ধৃত চিংড়ির পরিমাণ কমে গেলে তখন ঝাঁকি জাল ব্যবহার করে চিংড়ি আহরণ করা যায়। এ পদ্ধতিতে ছোট চিংড়ি বার বার আসার সুযোগ থাকে। তাছাড়া শ্রমিকও বেশি লাগে। তবে এ পদ্ধতিতে চিংড়ি ধরার ১০-১৫ মিনিট পূর্বে খাদ্য নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে প্রয়োগ করে চিংড়ি ধরা যায়।

বেড় জাল পদ্ধতি: যদি ঘের আয়তনে বড় হয় এবং বেশি পরিমাণ চিংড়ি ধরার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে বেড় জাল ব্যবহার করা উত্তম। কারণ জালের দৈর্ঘ্য বেশি হলে একদিকে যেমন জাল টানা সহজ হয়, তেমনি বেশিরভাগ চিংড়ি জালে ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একই ঘেরে একদিনে দুই বারের বেশি বেড় জাল টানা উচিত নয়।

পানি নিষ্কাশন পদ্ধতি: আবদ্ধ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে চিংড়ি আহরণের জন্য সবশেষে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ঘের শুকিয়ে অবশিষ্ট চিংড়ি ধরা হয়। এ পদ্ধতিতে ভোর বেলায় চিংড়ি আহরণ করা বাঞ্ছনীয়।

বাংলাদেশে ব্যবহৃত কতিপয় চিংড়ি আহরণ উপকরণের নাম ও তার বর্ণনা দেয়া হলো-

Content added By

চিংড়িকে জীবন্ত অবস্থায় ফাঁদের অভ্যন্তরে আটকে রেখে পানির উপরিভাগে তুলে চিংড়ি আহরণ করা হয়। সাধারণত অগভীর জলাশয়ে বা জোয়ার-ভাটার অঞ্চল বা জলাশয়ে পানি প্রবেশের মুখে ফাঁদ পেতে মাছ বা চিংড়ির পরিভ্রমণ পথে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়। ফাঁদ তৈরির মৌলিক দিক হিসেবে ফাঁদের মধ্যে চিংড়ি পানির গতির মাধ্যমে সহজেই ফাঁদের মুখ দিয়ে ফাঁদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু চিংড়ি পুনরায় উক্ত প্রবেশ পথ দিয়ে বের হতে পারে না। উল্লেখ্য, ফাঁদের পশ্চাৎভাগ বন্ধ থাকে এবং চিংড়ি সংগ্রহের সময় ফাঁদের পিছন দিক খুলে বা নির্দিষ্ট পথে চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়। ফাঁদের মাধ্যমে সাধারণত স্বল্প পরিমাণে বা পারিবারিক চাহিদা মিটানোর জন্য চিংড়ি আহরণ করা হয়। চিংড়ির প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে কখনো কখনো তা সংশ্লিষ্ট আহরণকারীর পেশা হিসেবেও গণ্য হয়।

বাংলাদেশে ব্যবহৃত অধিকাংশ ফাঁদই বাঁশের তৈরি। তবে অনেক দেশেই বর্তমানে প্লান্টিক নির্মিত সরু দন্ডের মাধ্যমে ফাঁদ নির্মাণ করা হয়। এলাকা বা অঞ্চলভেদে এবং চিংড়ির আহরণ উৎসের ধরন অনুসারে ফাঁদের আকৃতি ও প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চিংড়ি ধরার জন্য প্যারন, ডারকি, বেনকি, ইচা চাই, আহকা প্রভৃতি ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিচে চিংড়ি ও অন্যান্য ছোট আকৃতির মাছ আহরণের ফাঁদের বিবরণ দেয়া হলো:

ক. অ্যান্টা (Anta)

গঠন প্রকৃতি: আকৃতিতে আয়তাকার এবং সাধারণত উচ্চতা প্রস্থের কিছুটা বেশি। মুলত বাঁশ দিয়ে অ্যান্টা তৈরি করা হয়। ফাঁদের উচ্চতা অংশের একদিকে চিংড়ি ও অন্যান্য জলজ প্রাণী প্রবেশের জন্য এমনভাবে প্রবেশ পথ তৈরি করা হয়, যাতে অতি সহজেই পানির গতির মাধ্যমে চিংড়ি ফাঁদের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু সহজে বের হতে পারে না। প্রবেশ পথ লম্বায় প্রায় অ্যান্টার মোট দৈর্ঘ্যের সমান হয়ে থাকে। ফাঁদের একাংশে চিংড়ি আহরণের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখা হয়। নির্দিষ্ট স্থান বন্ধ ও খোলার জন্য সহজ ব্যবস্থা রাখা হয়।

ব্যবহার পদ্ধতি: সাধারণত এ ধরনের ফাঁদের মাধ্যমে ছোট মাছ ও চিংড়ি ধরা হয়। গতিশীল পানিতে চিংড়ি ধরার জন্য এ ধরনের ফাঁদ জলাশয়ে পানি প্রবেশের মুখে বা মোহনাঞ্চলের নদী-নালা বা মুক্ত জলাশয়ে পানির গতির বিপরীত দিকে মুখ করে প্রতিস্থাপন করা হয়। নির্দিষ্ট সময় পরে ফাঁদ পানির উপরে তুলে চিংড়ি আহরণ করা হয়। মুক্ত জলাশয়ে ফাঁদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাঁশের খুঁটির মাধ্যমে নির্দিষ্ট গভীরতায় স্থাপন করা হয়। কোথাও কোথাও চিংড়ির গতি নির্দিষ্ট পথে পরিচালনার জন্য ফাঁদের দু'পাশে ১২০ ডিগ্রি কোণ করে বানার ব্যবস্থা করা হয়। এ ক্ষেত্রে একই সাথে অনেকগুলো ফাঁদ বিভিন্ন গভীরতায় স্থাপন করা হয়।

বিস্তৃতি: বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে এ ধরনের ফাঁদের প্রচলন রয়েছে।

 

খ. বেনকি (Benki)

গঠন প্রকৃতি: আকৃতিতে আয়তকার, নিচের অংশ বেশ চ্যাপ্টা, তবে উপরের অংশ সরু হয়ে থাকে। অগ্রবর্তী ও পশ্চাৎবর্তী অংশ কিছুটা লম্বা এবং চিংড়ি প্রবেশের জন্য এক বা একাধিক প্রবেশ পথ থাকে। ফাঁদের উপরের অংশ কিছুটা লম্বা এবং চিংড়ি প্রবেশের অংশে চিংড়ি আহরণ পথ এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে পথের ঢাকনা সহজেই খোলা এবং বন্ধ করা যায়।

ব্যবহার পদ্ধতি: বেনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহজপ্রাপ্য বাঁশের ফালি দিয়ে বিভিন্ন আকারের তৈরি করা হয়। ফাঁদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জলাশয়ের ধরন ও প্রকৃতি অ্যান্টা ফাঁদের অনুরুপ। তবে এ ধরনের ফাঁদ এককভাবে বা একাধিক ফাঁদ কৌণিকভাবে সংযোগ করে একত্রে মাছ আহরণের জন্য স্থাপন করা হয়। সাধারণত এ ফাঁদের মাধ্যমে চিংড়ি ও ছোট প্রজাতির মাছ ধরা হয়।

বিস্তৃতি: বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বেনকি ফাঁদের বিভিন্ন নাম লক্ষ্য করা যায়, যেমন- বেঞ্চি (benchi), দেউর ( dheur), ধাইর (dhiar) ইত্যাদি।

 

গ. ডারকি (Darki)

গঠন প্রকৃতিঃ আকৃতিগত দিক থেকে এটি আয়তাকার হয়ে থাকে এবং এলাকাভেদে বিভিন্ন আকারের ডারকি প্রধানত বাঁশের চঞ্চুর সাহায্যে তৈরি করা হয়। ফাঁদের দরজা এর বক্ষ পাশের (উভয়দিকে) তলদেশে অবস্থিত। ফলে উভয়দিক থেকেই অর্থাৎ পানির গতিপথ পরিবর্তীত হলেও এ ফাঁদ লম্বালম্বিভাবে তলদেশ থেকে উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। পার্শ্বভাগে মাছ আহরণের দরজা বিদ্যমান।

ব্যবহার পদ্ধিতি: হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা, খাল-বিল প্রভৃতি জলাশয়ে পানি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে এই ফাঁদ পেতে চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়। প্রবাহমান পানিতে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ ধরার ক্ষেত্রে এ ফাঁদের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়।

বিস্তৃতি: বাংলাদেশের সকল জেলায় এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ প্রভৃতি জেলাসমূহে এ ফাঁদের প্রচলন বেশি দেখা যায়।

 

ঘ. দোয়ার (Doir).

গঠন প্রকৃতি: দেখতে অনেকটা আয়তাকার, তলদেশ প্রশস্ত ও শীর্ষদেশ সরু এবং পাশের দুই প্রাপ্ত একই রেখা বরাবরে অবস্থান করে। এ ধরনের ফাঁদে দু'টি ফাঁদ দরজা থাকে। ফাঁদ দরজা দু'টি একই পাশে বা উভয় পাশে হতে পারে। ফাঁদ দরজা ফাঁদের তলদেশ থেকে শীর্ষদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ফাঁদের উপরিভাগে মাছ আহরণের একটি ছিদ্র থাকে, যা অতি সহজেই খোলা ও বন্ধ করা যায়।

ব্যবহার পদ্ধতি: সাধারণত প্রবাহমান পানি এবং প্লাবনভূমি থেকে চিংড়ি আহরণের ক্ষেত্রে দোয়ার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফাঁদ নালা বা জলাশয়ে পানি উঠা-নামার স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়। ফাঁদের সম্মুখভাগের দিকে গাছের ডাল-পালা বা বানা দিয়ে এমনভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়, যাতে মাছ ও চিংড়ি প্রবাহমান পানির গভির মাধ্যমে ফাঁদে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। গ্রাম্যঞ্চলে বানার পরিবর্তে খেজুর গাছের শাখা-প্রশাখাও ব্যবহার করা হয়।

বিস্তৃতি: বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে এ ধরনের ফাঁদের সাহায্যে প্লাবনভূমির মাছ ও চিংড়ি আহরণ করা হয়।

 

ঙ. ইচা- চাই (Icha Chai )

গঠন প্রকৃতি; ইচা চাই অনেকটা ড্রাম আকৃতির এবং স্থানীয়ভাবে এটি বাঁশের চক্ষু দিয়ে তৈরি করা হয়। পশ্চাৎভাগ অগ্রভাগের চেয়ে কিছুটা সরু। এ ফাঁদে পর পর দু'টি ফাঁদ দরজা থাকে। ফাঁদের পশ্চাৎ দিকে মাছ আহরণের দরজা থাকে। 

চিত্ৰ ৪.৩ ইচা- চাই

ব্যবহার পদ্ধতি: সাধারণত প্রবাহমান পানি ও প্লাবনভূমি থেকে চিংড়ি আহরণ করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। নালা ও জলাশয়ের পানি উঠানামার স্থানে এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার হয়। ফাঁদের সম্মুখভাগের দিকে গাছের ডালপালা বা বানা দিয়ে এমনভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয় যাতে চিংড়ি ও অন্যান্য প্রাণী প্রবাহমান পানির পতির মাধ্যমে ফাঁদে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়।

বিস্তৃপ্তি: বাংলাদেশের সকল জেলায় এ ফাঁদের ব্যবহার দেখা যায়। তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এ চাইয়ের প্রচলন বেশি। সাধারণত এ চাইয়ের মাধ্যমে ইচা ও অন্যান্য ছোট মাছ ধরা হয়।

 

চ. আকা (Ahuka)

স্থানীয় নাম: বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর এবং কুষ্টিয়া, অঞ্চলে হোনচা (honcha), ময়মনসিংহ অঞ্চলে উচা (ucha), নোয়াখালী এবং রংপুর অঞ্চলে ঝাওই (jhari) নামে পরিচিত।

গঠন প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে ত্রিকোণাকৃতির এবং বাঁশের মাদুরের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত লম্বায় ১.২ থেকে ৩.০ মিটার এবং গ্রন্থে ০.৮ থেকে ১.২ মিটার হয়ে থাকে। মূল ফাঁদের পশ্চাৎভাগ বন্ধ থাকে। ফাঁদ হাতের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য এক খন্ড বাঁশ মূল ফাঁদের সম্মুখভাগের মধ্যবর্তী অংশে এবং পশ্চাৎভাগের সাথে সংযুক্ত থাকে। বাঁশ খণ্ডের পিছনের অংশ ফাঁদের হাতল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফাঁদের হাতা ফাঁদের মোট দৈর্ঘ্যের প্রায় অর্ধেকের সমান।

ব্যবহার পদ্ধতি: স্বল্প গভীর জলাশয়ে চিংড়ি ধরার ক্ষেত্রে এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ফাঁদের মাধ্যমে চিংড়ি ধরার ক্ষেত্রে প্রধানত হাতের মাধ্যমে ফাঁদ পরিচালনা করা হয়। ফাঁদের অগ্রভাগ মাটির সাথে বা পানির তলদেশে পানির কাছাকাছি স্থাপন করে দ্রুত গতিতে সম্মুখের দিকে টানা হয় এবং কিছু সময় পর পর ফাঁদের মাথা পানির উপরিভাগে তুলে ফাঁদে চিংড়ি বা মাছ পড়েছে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। সাধারণত ছোট আকৃতির চিংড়ি ধরার জন্য এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। পারিবারিক পর্যায়ে চিংড়ি বা মাছ আহরণের ক্ষেত্রে এ ধরনের ফাঁদ ছোট-বড় সকলেই ব্যবহার করতে সক্ষম।

বিস্তৃত: বরিশাল, পটুয়াখালী, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী এবং রংপুর অঞ্চলে এটি পাওয়া যায় ।

Content added By

চিংড়ি আহরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চিংড়ি ও মাছ ধরার জন্য সাধারণত যে সমস্ত জাল ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার বিবরণ নিয়ে দেয়া হলো:

ক. বেহুন্দি জাল

স্থানীয় নাম: বেহুন্দি জাল, বিউটি জাল, খোর জাল ইত্যাদি ।
ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী এবং বরিশাল অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় এর সর্বাধিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মূলত এ জালের সাহায্যে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চিংড়ি ও চিংড়ির পোনা ধরা হয়।

জাল তৈরির উপকরণ: সাধারণত নাইলন সুতা দ্বারা বেহুন্দি জাল তৈরি করা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এ ধরনের জাল মোচাকৃতি বা নলাকৃতির। লম্বায় বা দৈর্ঘ্যে ১৫ থেকে ৬০ মিটার এবং প্রস্থে ১০ থেকে ৪৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ জালের ফাঁসের আকার ১.২৫ থেকে ২.৫ সেমি. হয়ে থাকে। অন্যান্য থলে জালের মতো এ জালের মুখের অগ্রভাগে পাখনা বা ডানা বিদ্যমান এবং ডানার দৈর্ঘ্য ৯ মিটার হয়ে থাকে। জালের থলের দৈর্ঘ্য ২০ মিটারের অধিক এবং জালের মুখের দিকের ফাঁসের আকৃতি ৪ সেমি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাছ ও চিংড়ি আহরণের কৌশল হিসেবে এ ধরনের জাল উপকূলবর্তী অঞ্চলের জোয়ার-ভাটা প্রভাবিত নদ- নদীসমূহে স্রোতের বিপরীতে নৌকার মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। একটি বড় ধরনের জাল প্রতিস্থাপনে ২০ থেকে ৩০ জন জেলের প্রয়োজন হয়। অগভীর অঞ্চলে জাল প্রতিস্থাপনের জন্য দু'টি বাঁশ বা কাঠের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। জালের ডানা প্রতিস্থাপনের জন্য দৃঢ় কাঠের ফ্রেমের প্রয়োজন হয়। অপেক্ষাকৃত গভীর পানিতে এ ধরনের জাল প্রতিস্থাপনের জন্য নোঙর ব্যবহার করা হয়। জালের মুখ খোলা রাখার জন্য বাঁশের পুল বা খুঁটি ব্যবহার করা হয়।

আহরণকৃত চিংড়ি প্রজাতি: হন্নি চিংড়ি, রোয়াই চিংড়ি, ছটকা চিংড়ি, ঢাকা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি ইত্যাদি। ৩০ জন জেলের প্রয়োজন হয়। অগভীর অঞ্চলে জাল প্রতিস্থাপনের জন্য দু'টি বাঁশ বা কাঠের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। জালের ডানা প্রতিস্থাপনের জন্য দৃঢ় কাঠের ফ্রেমের প্রয়োজন হয়। অপেক্ষাকৃত গভীর পানিতে এ ধরনের জাল প্রতিস্থাপনের জন্য নোঙর ব্যবহার করা হয়। জালের মুখ খোলা রাখার জন্য বাঁশের পুল বা খুঁটি ব্যবহার করা হয়।

আহরণকৃত চিংড়ি প্রজাতি: হন্নি চিংড়ি, রোয়াই চিংড়ি, ছটকা চিংড়ি, ঢাকা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি ইত্যাদি।

চিত্র-৪.৫: বেহুন্দি জাল (behundi jal)

খ. বেহতি জাল

স্থানীয় নাম: বিউটি জাল।

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় এ ধরনের জালের মাধ্যমে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ আহরণ করা হয়। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ জালের প্রচলন অধিক পরিমাণে দেখা যায়।

জাল তৈরির উপকরণ: সুতা বা নাইলন তন্তু দিয়ে এ ধরনের জাল তৈরি করা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এটি নলাকৃতি বা মোচাকৃতির। এ জালের মুখের দু'পাশে মুখের ব্যাসের সমান প্রস্থ বিশিষ্ট পাখনা বা ডানা বিদ্যমান। ডানার দৈর্ঘ্য উভয়দিকে ৪ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ ধরনের জালের দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ১৫ মিটার এবং প্রস্থ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ জালের ফাঁসের আকার সম্মুখভাগে প্রায় ১.২৫ সেমি.। জাল পরিচালনা ও প্রতিস্থাপনের জন্য ৩ থেকে ৪ জন আহরণকারী প্রয়োজন হয় এবং বাঁশের খুঁটি ও কাঠের ফ্রেমের মাধ্যমে স্রোতের বিপরীতে প্রতিস্থাপন করা হয়।

গ. টার জাল

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: সাধারণত মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ জালের সাহায্যে চিংড়ি ধরা হয়। চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলের উপকুলবর্তী এলাকায় এ ধরনের জাল দিয়ে চিংড়ি পোনা ধরা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক দিয়ে এ জাল আয়তাকার এবং নৌকার সাহায্যে পরিচালনা করা হয়। জালের লম্বা দিক বাঁশের খুঁটির সাহায্যে দৃঢ় করা হয় এবং জালের খর্বাকার দিক নৌকার সম্মুখভাগের সাথে সংযুক্ত থাকে। আয়তনগত দিক থেকে এ জালের দৈর্ঘ্য ৪.৫ থেকে ৫.৫ মিটার, প্রস্থ ৩.৫ থেকে ৪.৫ মিটার এবং জালের ফাঁসের আকার ০.৬ থেকে ১.২৫ সেমি হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে মশারির নেট দিয়ে এ জাল তৈরি করা হয়।

জাল পরিচালনা পদ্ধতি: চিংড়ি ও অন্যান্য ছোট মাছ ধরার সময় জালের খুঁটি হাতের সাহায্যে জালের অগ্রভাগ পানির নিচে পেতে রাখা হয় এবং কিছু সময় পর পর মাছের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে পানির উপরিভাগে তোলা হয় এবং মাছ আহরণ করা হয়। প্রকৃতিগতভাবে এ ধরনের জাল ছাঁকি জালের (dip net) অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. চইন জাল

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: বরিশাল, পটুয়াখালী ও আন্যান্য উপকূলবর্তী অঞ্চলে এ ধরনের জাল দিয়ে অগভীর জলাশয়ের মাছ ও চিংড়ি এবং চিংড়ি পোনা ধরা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এ ধরনের জাল ইংরেজি অক্ষর V এর অনুরূপ। সাধারণত তিনটি বাঁশের খুটি সংযুক্ত করে এ জালের অবকাঠামো বা ফ্রেম তৈরি করা হয় এবং অবকাঠামোর সাথে ঘন ফাঁসের মশারী নেট বা নাইলনের সুতা দিয়ে জাল তৈরি করা হয়। আকৃতিগত দিক থেকে জালের মুখ ফ্রেমের আয়তন অনুসারে ত্রিকোণাকার হয়ে থাকে। জালের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১.০ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

জাল ব্যবহার পদ্ধতি: এ জাল সাধারণত জলজ ভাসমান উদ্ভিদের নীচে স্থাপন করে হঠাৎ করে উপরের দিকে তুলে জালের মধ্য থেকে জলজ উদ্ভিদসমূহ সরিয়ে ফেলে মাছ আহরণ করা হয়। চিংড়ির পোনা আহরণের জন্য খুলনা অঞ্চলে জালের আকৃতি ডিম্বাকার বা চামুচাকৃতি হয়ে থাকে।

 

ঙ. আটনা জাল

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিশেষ করে চট্টগাম অঞ্চলে এ ধরনের জালের প্রচলন অধিক দেখা যায়। সাধারণত এ জালের সাহায্যে ছোট আকৃতির মাছ ও চিংড়ি ধরা হয়।

চ. চরপাতা জাল 

ব্যবহারিক উপযোগিতা ও স্থান: খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এ জালের প্রচলন বেশি দেখা যায়। সাধারণত জোয়ার-ভাটা বাহিত অগভীর নদীসমূহে পানির গতিপথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এ জালের সাহায্যে মাছ ধরা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: এ ধরনের জাল দৈর্ঘ্যে ৬ থেকে ১২ মিটার এবং প্রস্থে ৩ থেকে ৪ মিটার হয়ে থাকে। জালের ফাঁসের আকার ১.২৫ থেকে ২.৫০ সেমি হয়ে থাকে। জালের উপরিভাগে ও পার্শ্বদেশে শক্ত দড়ি লাগানো থাকে, যাতে পানির অধিক গতিবেগের কারণে জাল ছিড়ে না যায়। ভাটার সময় এ জালের নিম্নপ্রান্ত জলাশয়ের তলদেশে খুঁটির সাহায্যে স্থাপন করা হয় এবং উপরের অংশ প্রান্তভূমির উপর ফেলে রাখা হয়। জোয়ারের সময় জালের উপরের প্রান্ত তুলে খুঁটির উপরের প্রান্তের সাথে বাঁধা হয়। পানি কমিয়ে হাতের সাহায্যে জালের মধ্য থেকে মাছ/ চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়।

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion