নদী দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ (Create landforms by river)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক গঠন | | NCTB BOOK
13

নদী দুইভাবে ভূমিরূপের সৃষ্টি করে। একটি হলো এর ক্ষয়কার্য ও অপরটি হলো এর সঞ্চয়কার্য। নিম্নে নদীর ক্ষয়জাত ও সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ বর্ণনা করা হলো।

নদীর ক্ষয়জাত ভূমিরূপ (Landforms from river erosion)
'ভি' আকৃতির উপত্যকা ('V' Shaped Valley) : ঊর্ধ্বগতি অবস্থায় নদীর স্রোতের বো প্রবল হওয়ার কারণে নদী বড় বড় শিলাখণ্ডকে বহন করে নিচের দিকে অগ্রসর হয়। পর্বতগুলো কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত হলেও মাঝে মাঝে নরম শিলাও থাকে। নদীখাতে পার্শ্ব অপেক্ষা নিম্নদিকের শিলা বেশি কোমল বলে পার্শ্ব ক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষর বেশি হয়। এভাবে ক্রমশ ক্ষরের ফলে নদী উপত্যকা অনেকটা ইংরেজি 'V' আকৃতি হয় । তাই একে 'ভি' আকৃতির উপত্যকা বলে । 

গিরিখাত ও ক্যানিয়ন (Gorge and Canyon) : ঊর্ধ্বগতি অবস্থায় নদীর প্রবল স্রোত খাড়া পর্বতগাত্র বেয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। এতে ভূপৃষ্ঠ ক্ষয় হয় এবং ভূত্বক থেকে শিলাখণ্ড ভেঙে পড়ে। শিলাগুলো পরস্পরের সঙ্গে এবং নদীখাতের সঙ্গে সংঘর্ষে মসৃণ হরে অনেক দূর চলে যায়। এসব পাথরের সংঘর্ষে নদীর খাত গভীর ও সংকীর্ণ হতে থাকে। নদীর দুপাশের ভূমি ক্ষর কম হলে বা না হলে এসব খাত খুব গভীর ও সংকীর্ণ হতে থাকে। এক পর্যায়ে এসব খাত খুব গভীর হয়। তখন এরূপ খাতকে গিরিসংকট বা গিরিখাত বলে ।

সিন্ধু নদের গিরিখাতটি প্রায় ৫১৮ মিটার গভীর। এটি পৃথিবীর একটি অন্যতম বৃহৎ গিরিখাত । নদী যখন শুষ্ক অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং সেখানে যদি কোমল শিলার স্তর থাকে তাহলে গিরিখাতগুলো অত্যন্ত সংকীর্ণ ও গভীর হয়। এরূপ গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলে। উত্তর আমেরিকার কলোরাডো নদীর গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (Grand Canyon) পৃথিবী বিখ্যাত। এটি ১৩৭-১৫৭ মিটার বিস্তৃত, প্ৰায় ২.৪ কিলোমিটার গভীর ও ৪৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ ।

জলপ্রপাত (Waterfall) : ঊর্ধ্বগতি অবস্থায় নদীর পানি যদি পর্যায়ক্রমে কঠিন শিলা ও নরম শিলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাহলে কোমল শিলাস্তরটিকে বেশি পরিমাণে ক্ষয় করে ফেলে। এর ফলে নরম শিলাস্তরের তুলনায় কঠিন শিলান্তর অনেক উপরে অবস্থান করে এবং পানি খাড়াভাবে নিচের দিকে পড়তে থাকে। এরূপ পানির পতনকে জলপ্রপাত বলে  । উত্তর আমেরিকার সেন্ট লরেন্স নদীর বিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত এরূপে গঠিত হয়েছে ।

নদীর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ (Landforms from river deposition)
পলল কোণ ও পলল পাখা (Alluvial Cone and Alluvial Fan) : পাবর্ত্য কোনো অঞ্চল থেকে হঠাৎ করে কোনো নদী যখন সমভূমিতে পতিত হয়, তখন শিলাচূর্ণ, পলিমাটি প্রভৃতি পাহাড়ের পাদদেশে সমভূমিতে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণ ও হাতপাখার ন্যায় ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয়। এ কারণে এরূপ পললভূমিকে পলল কোণ বা পলল পাখা বলে ।

যেসব অঞ্চলে মাটি অধিক পানি শোষণ করতে পারে সেসব অঞ্চলে পানি শোষণের ফলে শিলাচূর্ণ অধিক দূরত্বে যেতে পারে না এবং সেসব অঞ্চলের সঞ্চয় প্রশস্ত না হয়ে কোণাকৃতি হয় । একে পলল কোণ বলে। পানি বেশি শোষণ করে না বলে শিলাচূর্ণ বিস্তৃত হয়ে হাতপাখার ন্যায় ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয়। এরূপ পললভূমিকে পলল পাখা বলে । হিমালয়ের পাদদেশে গঙ্গার বিভিন্ন উপনদীর গতিপথে এরূপ ভূখণ্ড দেখতে পাওয়া যায় । 

পাদদেশীয় পলল সমভূমি (Peidmont Alluvial Plain) : অনেক সময় পাহাড়িয়া নদী পাদদেশে পলি সঞ্চয় করতে করতে একটা সময় পাহাড়ের পাদদেশে নতুন বিশাল সমভূমি গড়ে তোলে। এ ধরনের সমভূমিকে পাদদেশীয় পলল সমভূমি বলে (চিত্র 8. 10 ) । বাংলাদেশের চিন্তা, আত্রাই, করতোরা সংলগ্ন রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ স্থানই পলল সমভূমি নামে হয়ে সহজেই পাহাড় থেকে পলল বহন করে এ অঞ্চলে সঞ্চয় করে পাদদেশীয় পললভূমি গঠন করেছে।
পরিচিত। এসব নদী উত্তরের হিমালয় থেকে উৎপন্ন ।.

প্লাবন সমভূমি (Flood Plain): বর্ষাকালে বিশেষ করে পানি বৃদ্ধির কারণে যখন নদীর উভয়কূল প্লাবিত হয় তখন তাকে প্লাবন বা বন্যা বলে। বন্যা শেষে নদীর দুপাশের ভূমিতে খুব পুরু স্তর কাদা, পলি দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে অনেকদিন পলি জমতে জমতে যে বিস্তৃত সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে । সমভূমি বলা হলেও এর কোথাও কোথাও সামান্য উঁচুনিচু দেখা যায় । কয়েকটি জেলা ব্যতীত মোটামুটি সমগ্র বাংলাদেশই পদ্মা, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি নদীবিধৌত প্লাবন সমভূমি । প্লাবন সমভূমির মধ্যে অনেক ধরনের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ দেখা যায়। এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো- (ক) অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ, (খ) বালুচর, (গ) প্রাকৃতিক বাঁধ।

-বীপ (Delta) : নদী যখন মোহনার কাছাকাছি আসে তখন তার স্রোতের বেগ একেবারেই কমে যায়। এতে বালি ও কাদা তলানিরূপে সঞ্চিত হয়। নদীর স্রোতটান যদি কোনো সাগরে এসে পতিত হয় তাহলে ঐ সমস্ত বালি, কাদা নদীর মুখে জমে নদীমুখ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে এর স্তর সাগরের পানির উচ্চতার উপরে উঠে যায়। তখন নদী বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে এই চরাভূমিকে বেষ্টন করে সাগরে পতিত হয়। ত্রিকোণাকার এই নতুন সমতলভূমিকে ব-দ্বীপ বলে (চিত্র ৪.১২)। এটি দেখতে মাত্রাহীন বাংলা এ এর মতো এবং গ্রিক শব্দ 'ডেল্টা'র মতো ভাই এর বাংলা নাম ব-দ্বীপ এবং ইংরেজি নাম 'Delta' হয়েছে। হুগলি নদী থেকে পূর্ব দিকে মেঘনার সীমানা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সমস্ত দক্ষিণাংশ গঙ্গা ও পদ্মা নদীর বিখ্যাত ব-দ্বীপ অঞ্চল।
 

Content updated By
Promotion