গত সেশনে আমরা নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। আজকে আমরা নেটওয়ার্কের বিভিন্ন লেয়ার এবং সেগুলোর কাজ সম্পর্কে জানব। নেটওয়ার্কের এই লেয়ারগুলো সম্পর্কে জানলে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানের পদ্ধতিটি আমরা আরো ভালভাবে বুঝতে পারব।
এই সেশনের শুরুতেই আমরা নেটওয়ার্ক লেয়ারের ধারণাকে ভিত্তি করে নির্দিষ্ট করা OSI ফ্রেমওয়ার্ক এবং TCP/IP প্রোটোকল সম্পর্কে জেনে নিব।
OSI ফ্রেমওয়ার্ক: Open Systems Interconnection বা OSI মূলত নেটওয়ার্ক সিস্টেমের কাজকে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি ধারনাগত কাঠামো (Conceptual Framework)। এটি International Stan- dards Organization (ISO) কর্তৃক প্রণীত এবং ৭টি লেয়ারে বিভক্ত। এই লেয়ারগুলো হল- ফিজিক্যাল, ডেটা লিংক, নেটওয়ার্ক, ট্রান্সপোর্ট, সেশন, প্রেজেন্টেশন এবং অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার। |
TCP/IP প্রোটোকল: Transmission Control Protocol/Internet Protocol বা TCP/IP মূলত একগুচ্ছ প্রোটোকল সমগ্র যা বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইসকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করতে বাস্তবে ব্যবহৃত হয়। TCP/IP ৪টি লেয়ারে বিভক্ত। এই লেয়ারগুলো হল নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস, নেটওয়ার্ক, ট্রান্সপোর্ট এবং অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার। |
OSI ফ্রেমওয়ার্কের লেয়ারগুলোর কাজকে যদি আমরা ডাক বিভাগের কাজের সাথে তুলনা করি, তাহলে সহজেই প্রতিটি লেয়ারের কাজ সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাব।
গত সেশনের বন্ধুর কাছে ডাকযোগে বই পাঠানোর উদাহরণটিতে ফিরে যাই-
আমি আমার বন্ধুর কাছে চিঠি পাঠানোর জন্য চিঠিটি খামে ভরে, খামের উপর বন্ধুর ঠিকানা লিখে, ডাকটিকিট লাগিয়ে ডাকবাক্সে ফেলে আসব। ডাকপিয়ন সেই চিঠিটি ডাকবাক্স থেকে ডাকঘরে নিয়ে যাবে। সেখানে সে খামের উপর লেখা ঠিকানাটি দেখবে এবং নির্ধারন করবে যে কীভাবে, কোন পরিবহনের মাধ্যমে সেই ঠিকানায় চিঠিটি পাঠাতে হবে। চিঠি পাঠানোর পর তা প্রাপকের ঠিকানা অনুসারে ডাকঘরে পৌঁছানোর পর কাজগুলো এবার আবার উল্টোভাবে শুরু হবে। চিঠিটি পরিবহন থেকে নামানো হবে, চিঠিতে লেখা ঠিকানা দেখা হবে এবং নির্ধারন করা হবে যে কোন ডাকপিয়নের কাছে চিঠিটি দেয়া হবে। এরপর ডাকপিয়ন চিঠিটি আমার বন্ধুর ঠিকানায় নিয়ে যাবে, আমার বন্ধু চিঠিটি হাতে পাবে এবং খাম খুলে চিঠিটি পড়বে। |
এই উদাহরণের বিভিন্ন কাজের সাথে OSI ফ্রেমওয়ার্কের এক একটি লেয়ার বা লেয়ারের কাজের তুলনা করা যায়। ছক ৫.৫ থেকে আমরা লেয়ারগুলোর কাজ সম্পর্কে একটি ধারণা পাব।
ছক ৫.৫: OSI ফ্রেমওয়ার্কের বিভিন্ন লেয়ারের কাজের সাথে ডাকঘরের মাধ্যমে চিঠি পাঠানোর তুলনা
OSI লেয়ার | কাজ | ডাকঘরের সাথে তুলনা |
অ্যাপ্লিকেশন | অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে (যেমন, মেসেঞ্জার, ব্রাউজার, ইত্যাদি) নেটওয়ার্ক ব্যবহারে সহায়তা প্রদান | চিঠি লেখার কাগজ, কলম ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি |
প্রেজেন্টেশন | ডেটার বাইনারিতে রূপান্তর, ডেটা সংকোচন (compression), এনক্রিপশন ইত্যাদি | প্রয়োজন অনুযায়ী লিখিত চিঠির বিভিন্ন পরিবর্তন। যেমন: অন্য কেউ চিঠি পড়ে ফেলার আশংকা থাকলে মূল শব্দের রূপান্তর করে সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করা |
সেশন | দুটি ডিভাইসের মধ্যে একটি নির্ধারিত সময়ব্যাপী ক্রমাগত ডেটার আদান-প্রদান ব্যবস্থাপনা | ডাকঘরের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে সাধারণতঃ এ ধরণের ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয় না |
ট্রান্সপোর্ট | প্রসেস (ডিভাইসে চলমান অ্যাপ্লিকেশন) থেকে প্রসেসে ডেটা আদান-প্রদান, Error Control, Flow Control, ডেটা সেগমেন্টে ভেঙ্গে ফেলা ইত্যাদি | চিঠি আমার কাছ থেকে বন্ধুর ঠিকানায় পৌঁছানোর পর বন্ধুর হাতে পৌঁছানো |
নেটওয়ার্ক | প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যকার উপযুক্ত পথ নির্ধারন করে ডেটা আদান প্রদান | চিঠি আমার ঠিকানা থেকে উপযুক্ত পথে বন্ধুর ঠিকানায় পৌঁছানো |
ডেটা লিংক | লোকাল নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত একটি ডিভাইস থেকে অপর ডিভাইসের মধ্যে ডেটা আদান প্রদান, Error Control, Flow Control ইত্যাদি | যাত্রাপথে স্থানীয় যোগাযোগ, যেমন: প্রেরকের ঠিকানা থেকে প্রথম ডাকঘর, অথবা এক ডাকঘর থেকে ঠিক পরবর্তী ডাকঘর, অথবা সর্বশেষ ডাকঘর থেকে প্রাপকের ঠিকানায় যাওয়া |
ফিজিক্যাল | ডিভাইসগুলোর সাথে ফিজিক্যাল মাধ্যমের (তার, অপটিক্যাল ফাইবার ইত্যাদি) সংযোগ স্থাপন এবং ডেটা আদান-প্রদান, নেটওয়ার্ক টপোলজিগুলোর বাস্তবায়ন ইত্যাদি | চিঠির যাতায়াতের পথ (আকাশপথ/ নদীপথ/সড়কপথ ইত্যাদি) ও মাধ্যম (উড়োজাহাজ, রেলগাড়ি ইত্যাদি) |
এবার এসো, OSI ফ্রেমওয়ার্কের লেয়ারগুলোর মাধ্যমে একটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে তথ্য বা ডেটা কোন পথে কীভাবে যায় তা একটি চিত্রের মাধ্যমে দেখে নেই।
চিত্রটি দেখে আমরা কী বুঝতে পারছি? এখানে কোন লেয়ারে কী কাজ হচ্ছে? জোড়ায় আলোচনা করে আমরা যা বুঝতে পারলাম তা ছক ৫.৬ এ লিখি-
ছক ৫.৬: লেয়ারের মাধ্যমে প্রেরক থেকে প্রাপক ডিভাইসে তথ্য আদান-প্রদান
লেয়ার | প্রেরক ডিভাইস | প্রাপক ডিভাইস |
অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার |
|
|
প্রেজেন্টেশন লেয়ার |
|
|
সেশন লেয়ার |
|
|
ট্রান্সপোর্ট লেয়ার |
|
|
নেটওয়ার্ক লেয়ার |
|
|
ডেটা লিংক লেয়ার |
|
|
ফিজিক্যাল লেয়ার |
|
|
এবার এসো জেনে নিই আসলে OSI লেয়ারে কীভাবে কাজ হচ্ছে।
প্রেরকের পাঠানো মূল ডেটা OSI লেয়ারের উপর থেকে নিচে যাওয়ার পথে বিভিন্ন হেডার বা ট্রেইলার যুক্ত হতে থাকে। বিভিন্ন লেয়ারের প্রোটোকলগুলোর কার্যকারিতার জন্য এই হেডার বা ট্রেইলারগুলো প্রয়োজন। একই ধরণের কাজ ডাকঘরেও করা হয়। প্রেরক মূল চিঠি বা প্যাকেটের উপর হেডার হিসেবে নাম-ঠিকানা লিখে দেয়। ডাকঘর বা পরিবহন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সেটির উপর আবার বিভিন্ন তথ্যসমৃদ্ধ সিল মেরে দেয় বা ট্র্যাকিং নাম্বার দিয়ে দেয়। এভাবে ডেটা সর্বনিম্ন লেয়ার অর্থাৎ ফিজিক্যাল লেয়ারে পৌঁছায়।
ফিজিক্যাল লেয়ারে বাইনারি বিটগুলো সংযোগ মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে অ্যানালগ, অপটিক্যাল, ইত্যাদি সিগন্যালে রূপান্তরিত হয়। এই সিগন্যাল যখন গন্তব্য ডিভাইসে পৌঁছায় তখন ঠিক বিপরীত প্রক্রিয়া ঘটে। গন্তব্য ডিভাইসের ফিজিক্যাল লেয়ার গৃহীত সিগন্যালকে আবার বাইনারি বিটে রূপান্তরিত করে। তারপর এই বিটসমূহ ক্রমান্বয়ে উপরের লেয়ারগুলোতে প্রবাহিত হতে হতে প্রাপকের নিকট পৌঁছায়।
তাহলে, আমরা OSI মডেলের লেয়ারগুলোর কাজ সম্পর্কে একটি ধারণা পেলাম। TCP/IP এর ৪টি লেয়ার OSI মডেলের ৭টি লেয়ারের সমতুল্য। TCP/IP এবং OSI মডেলের লেয়ারগুলো সম্পর্ক চিত্র ৫.২ থেকে সহজেই বোঝা যায়।
পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে আমরা OSI এবং TCP/IP এর লেয়ারগুলোর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাব।
আরও দেখুন...