চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো চিংড়ির নার্সারি ব্যবস্থাপনা। নার্সারি পুকুর অস্থায়ী নিয়ন্ত্রিত জলাধার হিসেবে কাজ করে। যেখানে চিংড়িগুলোকে খামারের অবস্থার সাথে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নেয়া হয়। এজন্য সংগৃহীত পোস্ট লার্ভা নার্সারিতে ১৫-২০ দিন লালন পালন করে ঘেরে ছাড়া হয় ফলে পোস্ট লার্ভার মৃত্যুহার কমে যায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ পদ্ধতিতে চিংড়ির সম্ভাব্য রোগ ও চাপের কারণ এবং স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা সহজেই প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা যায়। নার্সারি সঠিকভাবে পরিচালনা করা না হলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: পানির গুণগতমান নষ্ট হওয়া, চিংড়ির স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এবং উৎপাদন হ্রাস ইত্যাদি। সুষ্ঠু নার্সারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিংড়ির ভালোভাবে বেঁচে থাকা, রোগের ঝুঁকি কমানো এবং চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়। বাগদা চিংড়ি শিল্পের সাফল্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হলো নার্সারির সঠিক ব্যবস্থাপনা।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
বাগদা চিংড়ির নার্সারি বলতে বোঝায় যেরের এমন একটি স্থান যেখানে চিংড়ির পোনাকে ১৫-২০ দিন য সহকারে লালন পালন করে মূল ঘেরে ছাড়ার উপযোগী করে তৈরি করা হয়। নার্সারি পুকুর সাধারণত মংস্যকুক বা অবাঞ্ছিত প্রাণিমুক্ত, প্রাকৃতিক খাবার সমৃদ্ধ, দূষণ ও রোগজীবাণু মুক্ত, কম গভীরতা সম্পন্ন ছোট আকারের হয়ে থাকে। নার্সারি পুকুরের আয়তন সাধারণত উৎপাদন পুকুরের দশ ভাগের এক ভাগ হয়ে থাকে। চিংড়ির পোনার আকার তুলনামূলকভাবে ছোট হওয়ার সরাসরি পুকুরে মজুদ করলে গভীরতাজনিত কারণে গোনা যারা যেতে পারে। এছাড়া পরিবেশের তারতম্য, পোস্ট লার্ভার পীড়ন, পরিবহণজনিত ধকল, ঠিক খাপ না খাওয়ানোর কারণেও পোনা মারা যেতে পারে। তাই চিংড়ি পোনার বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধির নার্সারি ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘেরে অল্পদিনের জন্য নার্সারি পুকুর তৈরি করে পোনা লালন পালন করলে পোনার বেঁচে থাকার হার অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
চিত্র-৩.১ বাগদা চিংড়ির নার্সারি পুকুর
দেশের চিংড়ি চাষিরা হ্যাচারি ও প্রাকৃতিক উভয় উৎস থেকেই বাগদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করে থাকে। পোনাগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ, পরিবহণ ও রক্ষণাবেক্ষণ না করলে মজুদকালীন অথবা মজুদ পরবর্তী সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পোনা মারা যেতে পারে। তাই চিংড়ি হ্যাচারি থেকে সংগৃহীত ছোট আকারের পোনা মজুদ পুকুরে ছাড়ার পূর্বে পোনাকে বড় ও সবল করে তোলার জন্য নার্সারি পুকুরে যত্ন সহকারে পরিচর্যা করতে হয়। একাজ করার উত্তম উপার হলো মার্সারি পুকুরে পোনার বর নেওরা। নার্সারি পুকুরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উল্লেখ করা হলো-
ক) বাগদা চিংড়ির পোনার যত্ন ও পরিচর্যা ভালোভাবে নেওয়া যায়
খ) ঘেরের পরিবেশের সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
গ) সহজ উপায়ে পোনাকে খাবার প্রদান করা যায়।
ঘ) প্রয়োগকৃত খাবার পোনা সহজে খুঁজে পায়। উৎপাদন পুকুরে সরাসরি পোস্ট লার্ভা মজুদ করার চেয়ে নার্সারি পুকুরে অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করলে খাদ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
ঙ) পোনা সুস্থ স্বাভাবিক ও শক্তিসম্পন্ন হয়।
চ) সরাসরি মজুদ পুকুরে পোনা মজুদের চেয়ে নার্সারি পুকুরে লালন করলে পোনার মৃত্যুহার কম হয়।
ছ) চিংড়ির পোনার বেঁচে থাকার হার সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।
জ) নার্সারি পুকুরে পোনার সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ ভালো হয়।
ঝ) উৎপাদন পুকুরে অতিরিক্ত মজুদ ঘনত্ব এড়ানো সম্ভব হয়।
ঞ) চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মাপের পোনা সময়মত পাওয়া যায়।
ট) পালন পুকুরে চিংড়ি পোনার মজুদ ঘনত্ব স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা যায়।
ঠ) অবাঞ্ছিত বা রাক্ষুসে প্রাণির হাত থেকে চিংড়ি পোনাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
ড) নার্সারি পুকুরে প্রতিপালনের ফলে চিংড়ি চাষির আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে, এবং
ঢ) নার্সারি ব্যবস্থাপনা ভালো হওয়ায় চিংড়ির রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
নার্সারি পুকুরের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন-
ক) মাটির পানি ধারণ ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে দোঁআশ, এটেল বা বেলে দোঁআশ মাটি নার্সারি পুকুর তৈরি করার জন্য উপযুক্ত।
খ) যে জায়গার মাটি মোটামুটি ভালো গুণসম্পন্ন এবং পাড়ের কাছাকাছি জায়গায় নার্সারি পুকুর তৈরি করা উচিত।
গ) ঘেরের যে অংশটি তুলনামূলকভাবে গভীর ও পাহারা দেওয়ার জন্য সুবিধাজনক সে জায়গায় নার্সারি স্থাপন করা ভালো।
(ঘ) মাটির পিএইচ ৫-৬ এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে মাটি অম্লীয় হলে চুন প্রয়োগের মাধ্যমে তা উপযুক্ত করে নিতে হবে
নার্সারি পুকুর ভালোভাবে তৈরি করা হলে পোনার মজুদকালীন মৃত্যুহার কমে যায় এবং পোনার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয় -
ক) নার্সারি পুকুরে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি থাকা প্রয়োজন।
খ) ঘন জাল দিয়ে নার্সারি তৈরি করতে হবে।
গ) নার্সারির জাল তলার মাটিতে কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি পরিমাণ গভীরে পুঁতে দিতে হবে এবং পানির উপরে ১ হাত পরিমাণ বেশি রাখতে হবে। জাল যেন বাতাসে পড়ে না যায় সেজন্য বাঁশের খুঁটির সাথে শক্ত করে বেধে দিতে হবে।
ঘ) নার্সারির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শুকনো লতা-পাতা, গাছের ডাল দিয়ে চিংড়ির আশ্রয়স্থল তৈরি করে দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন পোনার আশ্রয়স্থল হবে অন্যদিকে জন্মানো পেরিফাইটন পোনার প্রাথমিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
ঙ) নার্সারির মাটি বা তলদেশ সমতল হওয়া ভালো।
চ) ঘেরের যে কোনো একপাশে বাঁশ বা বাঁশের চট ও নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে ঘেরের মোট আয়তনের ৫-৭ ভাগ আকারের নার্সারি তৈরি করতে হবে।
নার্সারি পুকুরের আয়তন সাধারণত উৎপাদন খামারের দশ ভাগের এক ভাগ হওয়া উচিত। তবে একটি নার্সারি পুকুরের আয়তন ৫০০ বর্গমিটার হলে ভালো। নার্সারির আকার বা আয়তন নির্ভর করে মূলত নার্সারির ধরন, পোনা মজুদের পরিমাণ, পালন ঘেরের আয়তন, নার্সারিতে পোনা কত দিন রাখা হবে ইত্যাদির ওপর। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত-
ক) যদি পালন ঘের এক বিঘা বা ৩৩ শতাংশ হয় তাহলে নার্সারি পুকুরের আয়তন হবে ৩-৫ শতক।
খ) নার্সারি পুকুরের আয়তন এক বিঘার বেশি হওয়া উচিত নয়। যদি দরকার হয় তাহলে বড় ঘেরের ক্ষেত্রে কয়েকটি নার্সারি পুকুর তৈরি করা যেতে পারে।
চিংড়ির পোস্ট লার্ভার লালন পালন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো যথাযথভাবে নার্সারি পুকুর প্রস্তুত করা। নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন-
ঘের ও নার্সারি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রথমে ৫-৬ টি স্থানের মাটির পিএইচ মেপে দেখতে হবে। পরবর্তীতে পরিমাপকৃত মাটির পিএইচের ওপর ভিত্তি করে নার্সারি ও ঘেরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চুন দিতে হবে।
ক) বাগদা চিংড়ির ঘের ও নার্সারি তৈরির সময় তলার দিকে এবং পাড়ের উপরের অংশে প্রতি শতকে ১ কেজি হারে পোড়া চুন প্রয়োগ করতে হবে।
খ) এছাড়া পোড়া চুন ও পাথুরে চুন ১:১ অনুপাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গ) ঘের ও নার্সারি প্রস্তুতকালীন সময় তলদেশ ও পাড়ের উপর অংশ পর্যন্ত প্রতি হেক্টরে ২০০-২৫০ কেজি পরিমাণ ডলোমাইট ও পোড়া চুন এর মিশ্রণ দেয়া যেতে পারে।
ঘ) চুন প্রয়োগের ৩-৭ দিন পরে স্ক্রীনিং করে ঘের ও নার্সারিতে ৫০-৬০ সেমি জোয়ারের পানি ঢুকাতে হবে যাতে অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী ঘেরে প্রবেশ করতে না পারে।
ঙ) পানি উত্তোলনের পর ২৫ পিপিএম হারে ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে অবাঞ্ছিত ও অন্যান্য মৎস্যভূক প্রাণী মারা যাবে।
চিত্র-৩.২ বাগদা চিংড়ির ঘের প্রস্তুতি
প্রধানত জোয়ারের সময় ঘের বা নার্সারির জন্য পানি উঠানো হয়। অন্য কোনো ঘের থেকে পানি না নিয়ে যদি খাল বা ক্যানেলের পানি নেয়া হয় তাহলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত-
ক) পুকুরে চুন ও সার প্রয়োগের পর ৬-১০ ইঞ্চি পরিমাণ পানি প্রবেশ করাতে হবে। পানি প্রবেশ করানোর সময় প্রবেশ পথে ৪-৬ ধাপে চিকন ম্যাশ সাইজের জাল ব্যবহার করা জরুরি। পানি ঘন জাল দিয়ে ছেকে নিলে অবাঞ্ছিত প্রাণী বা প্রাণীর ডিম ঘের বা নার্সারিতে প্রবেশ করতে পারবে না।
খ) ঘের বা নার্সারির পাড় সর্বোচ্চ যে পরিমাণ পানি সহ্য করতে পারবে প্রথমেই সে পরিমাণ পানি উঠাতে হবে। দরকার হলে ২-৩ দিনে পানি উত্তোলন সম্পন্ন করতে হবে। ফলে কোনো পুকুর নতুন হলে পাড় ও নীচের মাটি যথেষ্ট পরিমাণ পানি শোষণ করতে পারবে।
অনেকসময় স্ক্রীনিং করার পরেও জোয়ারের পানির সাথে অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী ঘেরে প্রবেশ করতে পারে। এগুলো নির্মূল করার ক্ষেত্রে যেসকল রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় সেগুলো ক্রয় করার সময় অবশ্যই তার মেয়াদ, দাম কেমন ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে বিবেচনা করা দরকার। অবাঞ্ছিত প্রাণী দমন করার জন্য রোটেনন, ব্লিচিং পাউডার, ফসটক্সিন, চা বীজের খৈল, মহুয়া বীজের খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। ঘেরে পানি উত্তোলনের তিন থেকে চার দিন পর যদি অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভুক প্রাণী দমন করা হয় তাহলে ভালো ফলাফল আশা করা যায়। অবাঞ্চিত ও মৎস্যভূক প্রাণী দমন করার অনেকগুলো পদ্ধতির মধ্যে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও উপযুক্ত কয়েকটি পদ্ধতির বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো:
ক. রোটেনন
রোটেনন হলো ডেরিস নামক পুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ থেকে তৈরি বাদামি রংয়ের পাউডার জাতীয় কীটনাশক যা অবাঞ্ছিত মাছ, পোকা-মাকড় ইত্যাদি দমনে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি জটিল জৈব যৌগ (C23H22O6 ) । এটি Derris ellipticas Lonchocarpus sp জাতীয় গাছের শিকড় গুড়া করে তা পাউডার আকারে রোটেনন হিসেবে বাজারে বিক্রয় করা হয়। রোটেননের শক্তি মাত্রা এর মধ্যে বিদ্যমান মূল কার্যকর উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। এতে ৯.১% সক্রিয় রোটেনন থাকে। আরেক শক্তিমাত্রার (৭%) রোটেনন পাওয়া গেলেও ৯.১% শক্তি সম্পন্ন রোটেনন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। রোটেনন প্রয়োগের মাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল। তাই অবাঞ্ছিত মাছ, পোকা-মাকড় ইত্যাদি দমনে গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে অধিক মাত্রায় রোটেনন প্রয়োগ করতে হয়। তবে রোটেনন প্রয়োগের সুবিধা হলো এ পদ্ধতিতে মারা যাওয়া মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।।
প্রয়োপমাত্রা
মাছের প্রজাতি, পরিবেশের তাপমাত্রা, রোটেননের শক্তিমাত্রা ইত্যাদির ওপর রোটেননের প্রয়োগমাত্রা অনেকাংশে নির্ভর করে। আমাদের দেশে সাধারণত ৯.১% শক্তিমাত্রার রোটেনন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। নিম্নে ছকে রোটেননের প্রয়োগমাত্রা উল্লেখ করা হলোঃ
শক্তিমাত্রা | প্রয়োগমাত্রা (প্রতি শতক/ফুট পানি) |
---|---|
৭% | ১৮-২৫ গ্রাম |
৯.১% | ১৬-১৮ গ্রাম |
প্রয়োগ পদ্ধতি
অবাঞ্ছিত মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী দমনের জন্য ভোর বেলায় রোটেনন প্রয়োগ করা ভালো। রোটেনন প্রয়োগের পূর্বে জলাশয়ের পানির আয়তন অনুযায়ী রোটেনন পাউডার মেপে নিতে হবে। অতঃপর একটি পাত্রে রোটেনন পাউডার এর সাথে পরিমাণমতো পানি যোগ করে কাই তৈরি করতে হবে। উক্ত কাইকে সমান তিনভাগে ভাগ করে, এক ভাগ দ্বারা ছোট বল তৈরি করে পানিতে প্রয়োগ করতে হবে। ফলে কাদার নিচের ও উপরিভাগের প্রাণিসমূহ মারা যাবে। অন্য দুই ভাগ পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা হয়। ফলে পানিতে ভাসমান মাছ ও অন্যান্য পোকামাকড় মারা যাবে। তাছাড়া রোটেনন প্রয়োগের পর জাল টেনে পানি উলট- পালট করে দিলে রোটেননের কার্যকারীতা বৃদ্ধি পাবে। ১৫-২০ মিনিট পর মাছ ভাসতে শুরু করলে খুব দ্রুত জাল টেনে মাছ ধরে ফেলতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃত মাছ ধরে ফেলা প্রয়োজন নতুবা এগুলো পুকুরের তলদেশে চলে যাবে। রোটেনন এর কার্যকারীতা ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে পানিতে বিদ্যমান থাকে। তবে রোটেনন প্রয়োগের মাধ্যমে চিংড়ি ও কাঁকড়া অপসারণ করা সম্ভব হয় না।
উদাহরণ: ৩ ফুট গভীরতা সম্পন্ন ১০ শতকের একটি পুকুরে ৯.১% শক্তিমাত্রার রোটেনন প্রয়োগ করতে কী পরিমাণ রোটেনন লাগবে তা নিম্নের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়- রোটেননের পরিমাণ = পুকুরের আয়তন (শতক) x গভীরতা x প্রয়োগ মাত্রা = ১০ × ৩ × ১৮ = ৫৪০ গ্রাম
রোটেনন প্রয়োগের ফলে মাছ পানি থেকে যথেষ্ট পরিমাণে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না, কারণ এটি পানিতে থাকা দ্রবীভূত অক্সিজেন নষ্ট করে ফেলে। পানি হতে মাছ যখন দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য নিঃশ্বাস নেয় তখন পানিতে দ্রবীভূত রোটেনন এর বিষক্রিয়ার ফলে মাছের ফুলকার ল্যামেলি ফেটে যায়। ফলে দ্রবীভূত অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন রূপে মাছের দেহে পরিবহণ সম্ভব হয় না। ফলে মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করতে না পারার কারণে মারা যায়। রোটেনন প্রয়োগের ফলে নিম্নলিখিত বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়
O2 + Hb = HbO2 (অক্সিজেন + হিমোগ্লোবিন - অক্সিহিমোগ্লোবিন)
রোটেনন রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বা উচ্চ তাপমাত্রায় অধিক কার্যকর। এছাড়া অম্লীয় ভাবাপন্ন ও নিরপেক্ষ অর্থাৎ পিএইচ ৭ বা তার কম আছে এরূপ পানিতে রোটেনন দ্রুত কাজ করে।
খ. ফসটক্সিন/কুইকফস/ সেলফস
ফসটক্সিন ট্যাবলেট খুবই বিষাক্ত। গুদামে পোকামাকড় মারার কাজে এ ট্যাবলেটের ব্যবহার অত্যধিক। কিন্তু ইদানিং পুকুরে অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী দমনের জন্য ফসটক্সিন ব্যাপকহারে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফসটক্সিন প্রয়োগের ফলে পুকুরে থাকা সব ধরনের প্রাণীই মারা যায়। তাছাড়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় সতর্কতার সাথে ফসটক্সিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নিচের প্রয়োগমাত্রা অনুসরণ করা যায়-
সারণি: নার্সারি পুকুরে ফসটক্সিনের প্রয়োগের মাত্রা
প্রয়োগ পদ্ধতি
ফসটক্সিন ট্যাবলেট পুকুরের পানিতে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। অগভীর জলাশয়ে এর কার্যকারিতা বেশি হওয়ায় ফসটক্সিন প্রয়োগের পূর্বে পুকুরের পানি সেচযন্ত্রের সাহায্যে কমিয়ে নেয়া উচিত। ফসটক্সিন প্রয়োগের পর জাল টেনে পুকুরের পানি উলট-পালট করে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ট্যাবলেট প্রয়োগের ১-২ ঘণ্টা পর মাছ ভাসতে শুরু করলে জাল দিয়ে সব মরা মাছ উঠিয়ে নিতে হবে।
বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ ৮-১০ দিন (প্রায়)
উদাহরণ: ৪ ফুট গভীরতা সম্পন্ন ২০ শতকের একটি পুকুরে কী পরিমাণ ফসটক্সিন ট্যাবলেট লাগবে তা নিম্নের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়-
ফসটক্সিনের পরিমাণ = পুকুরের আয়তন (শতক) × পভীরতা x প্রয়োগ মাত্রা = ২০ × ৪ × ১ = ৮০ টি
গ. ব্লিচিং পাউডার
সাদা রং এর ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট [Ca(CIO)2] পাউডারই মূলত ব্লিচিং পাউডার নামে পরিচিত। পানি বিশোধনের পাশাপাশি এটি দ্বারা অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভুক প্রাণী দমন করা যায়। ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের ফলে পুকুরে আর চুন প্রয়োগের দরকার হয় না কারণ এটি চুনের কাজও করে থাকে। এটি ব্যবহারে পুকুরের মাছ, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, অন্যান্য রোগজীবাণু ইত্যাদি মারা যায়। নিম্নরূপ প্রয়োগমাত্রা অনুযায়ী ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যায়-
সারণি: পুকুরে ব্লিচিং পাউডারের প্রয়োগমাত্রা
প্রয়োগ পদ্ধতি
পরিমাণ অনুযায়ী পাউডার নিয়ে একটি পাত্রে পানি দিয়ে গুলে দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে। এরপর দ্রবণটি পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সকালবেলা ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। পুকুরে পাউডার প্রয়োগের আধা ঘন্টার মধ্যে মাছ মরে ভেসে উঠা শুরু করলে দ্রুত জাল টেনে মৃত মাছ তুলে ফেলা প্রয়োজন। বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ ৮-১০ দিন (প্রায়)
উদাহরণ: ৫ ফুট গভীরতার ২০ শতক পুকুরে কী পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার লাগবে তা নিম্নের সূত্রের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়-
ব্লিচিং পাউডারের পরিমাণ: পুকুরের আয়তন (শতক) x গভীরতা x প্রয়োগ মাত্ৰা = ২০ × ৫ × ১ = ১০০ কেজি
ঘ. চা বীজের খৈল
যে সমস্ত পুকুরের পানি নিষ্কাশনের বা শুকানোর সুযোগ নেই সে সমস্ত পুকুরের মৎস্যভূক প্রাণী, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি মেরে ফেলার জন্য চা বীজের খৈল অত্যন্ত কার্যকর, যা চা বীজের গুড়া থেকে তৈরি করা হয়। চা বীজের খৈলের মধ্যে স্যাপোনিন নামক পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাছের লোহিত রক্ত কণিকাকে জমাট বেধে ফেলে ফলে মাছ মারা যায়। চা বীজের খৈলের বিষাক্ততার মেয়াদকাল ৩ দিন। এটি দ্বারা মারা যাওয়া মাছ নিশ্চিন্তে খাওয়া যায় এবং এটি পুকুরে জৈব সার হিসেবে কাজ করে। যা প্লাংকটনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। এটি প্রয়োগের ৩-৫ ঘন্টার মাঝে মাছ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মারা যায় এবং পানিতে ভাসতে শুরু করে। তবে পানির তাপমাত্রা অধিক হলে এর কার্যকারীতা অনেক বেশি হয় এবং পানির তাপমাত্রা কম হলে এটি ধীরে কাজ করে। এটা প্রয়োগে অবাঞ্ছিত মাছ এর পাশাপাশি ব্যাঙাচি, জোক, শামুক, কিছু কিছু পোকামাকড় ইত্যাদি মারা যায়। তবে পরিমিত মাত্রায় চা বীজের খৈল ব্যবহারের ফলে পুকুরের পানিতে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার যেমন- রটিফার, কপিপোড ইত্যাদির কোনো ক্ষতি হয় না। নিচের ছকে চা বীজ খৈলের প্রয়োগমাত্রা উল্লেখ করা হলো-
সারণি: পুকুরে চা বীজ খৈলের প্রয়োগ মাত্রা
প্রয়োগ পদ্ধতি
প্রয়োজনীয় পরিমাণ চা বীজের খৈল পানিতে গুলে নিয়ে পাতলা দ্রবণ তৈরি করতে হবে ও সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োগকালীন পুকুরের পানির গভীরতা যত কম হবে ফলাফল তত ভালো পাওয়া যাবে। খৈল প্রয়োগ করার ২০-৩০ মিনিট পর মাছ মারা যেতে শুরু করবে। পরবর্তীতে জাল দিয়ে মৃত মাছ দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ ২-৩ দিন (প্রায়)।
ঙ. মহুয়া বীজের খৈল
ল্যাটিফোলিয়া প্রজাতির মহুয়া বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। দিনাজপুর ও মধুপুর অঞ্চলে এই গাছ অধিক পরিমাণে জন্মে। বীজ হতে তেল নিষ্কাশনের পর যে খৈল অবশিষ্ট থাকে, তাতে স্যাপোনিন নামক বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির কারণে এটি বিষ হিসেবে কাজ করে। মহুয়া বীজের খৈল ব্যবহারের ফলে প্রথমে এটি বিষ হিসেবে কাজ করে এবং পরবর্তীতে সার হিসেবে পুকুরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারের ২ ঘন্টার মাঝেই এর বিষক্রিয়া শুরু হয় এবং মাছ মারা যায়। এ খৈলের ব্যবহার মাত্রা নিম্নে দেওয়া হলো-
সারণি: পুকুরে মহুয়া বীজ খৈলের ব্যবহার মাত্রা
প্রয়োগ পদ্ধতি
সামান্য পরিমাণ পানিতে পরিমাণমতো মহুয়া বীজের খৈল প্রথমে গুলে নিতে হবে। পরে অতিরিক্ত পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। প্রখর সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সমস্ত পুকুরে যথাযথভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। এটি ব্যবহারের ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে মাছ মারা যেতে শুরু করবে। পরবর্তীতে দ্রুততার সাথে জাল নে মৃত মাছ ধরে ফেলতে হবে যাতে করে পুকুরের পানির গুণগতমান নষ্ট না হয়। বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ ৩-৪ দিন (প্রায়)।
সাবধানতা
মাছ বা চিংড়ি চাষের নার্সারি পুকুরে প্রায়শই চুন প্রয়োগ করা হয়। মাছ চাষে জলজ পরিবেশের মাটি ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য চুন প্রয়োগ করা হয়। নার্সারি পুকুরে পরিমিত পরিমাণে চুন প্রয়োগের নানাবিধ উপকার রয়েছে। চুন প্রয়োগের উপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. চুন মাটি ও পানির অম্লীয় ভাব কমিয়ে ক্ষারত্ব ভাব বাড়িয়ে দেয়। মাটি ও পানির খরতা (কার্বনেট ও বাইকার্বনেট) বাড়িয়ে দেয়।
২. চিংড়ি চাষে পানির সঠিক পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. পানির ঘোলাত্ব কমিয়ে পানির স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনে।
৪. চিংড়ির দেহ পরিষ্কার রাখে ফলে রোগজীবাণু সহজে আক্রমণ করতে পারে না।
৫. মাটি ও পানিতে বসবাসকারী জীবাণু, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পরজীবিকে ধ্বংস করে।
৬. চুন সার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং অন্যান্য সারের কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে।
৭. চুন থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম চিংড়ির খোলস তৈরির মাধ্যমে দৈহিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৮. মাটি ও পানির দূষিত পদার্থ শোধন করে।
৯. প্রয়োগকৃত খাদ্যের অবশিষ্টাংশ পঁচতে সাহায্য করে।
১০. চুন অ্যামোনিয়া, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাসিয়াম-এর বিষক্রিয়া দূর করে এবং পানিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
১১. পানির অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড কে ব্যবহার করে চুন সালোকসংশ্লেষণের মাত্রা বাড়ায় ফলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
১২. চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরের মাটি থেকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকারক মনি সমূহ সহজেই পানিতে মিশে উৎপাদনশীল করে।
১৩. ফুল প্রলেপের ফলে মাটির জৈব পদার্থসমূহ থেকে পানির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।
১৪. চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পানিতে রুময় শেওলার বৃদ্ধি রোধ করা যায়।
১৫. চুল কামার ফসফরাসকে মুক্ত করে প্লাংকটনের বৃষ্টিতে সহায়তা করুন।
চিত্র-৩.৪ নার্সারি পুকুরে চুন প্রয়োগ।
চুনের প্রকারভেদ
ৰাজারে প্রচলিত বিভিন্ন রকমের তুনের মধ্যে রয়েছে- পোড়া ফুল, পরে ফুল কপি, সাই ইত্যাদি। এছাড়া শামুক ও ঝিনুকের খোলস পুড়িয়েও চুন তৈরি করা যায়। কিন্তু এসকল পোৱা চুন ব্যবহার কলে নাগীরি পুকুরে কালি ফলাফল পাওয়া যায় না। সাধারণত বাজারে পাওয়া যায় এমন চুলগুলো হচ্ছে-
ক. পাথুরে চুন
খ. পোড়া চুন
গ. কলি চুন
ঘ. ভলোবাইট
ঙ. জিপসাম
প্রয়োগ মাত্রা
পানি ও মাটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন- মাটির ধরন (যেমন- বেলে দোআঁশ, এঁটেল), পানির পিএইচ, নতুন/পুরোনো পুকুর, চুনের প্রকারভেদ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে নার্সারি পুকুরে চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। পানির পিএইচ ৭.৫ এর নীচে নেমে গেলে কিংবা সকাল ও বিকালের পিএইচ এর মাত্রার পার্থক্য ০.৫ এর বেশি হলে অবশ্যই চুন প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত কাদামাটি, এঁটেল মাটি ও লাল মাটির ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিমাণ চুন প্রয়োগ করা দরকার। আবার পুকুরে অনেক দিনের আবর্জনা, ময়লা ইত্যাদি বেশি থাকলে অধিক পরিমাণে চুন দরকার হয়। পোড়া চুন পাথুরে চুনের থেকে দ্বিগুণ কার্যকর। আবার কলিচুন থেকে পাথুরে চুন প্রায় দেড় গুণ কার্যকর। প্রতি শতাংশ পুকুরে সাধারণত এক কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা হয়।
সারণি: মাটির পিএইচ-এর ওপর ভিত্তি করে চুনের প্রয়োগ মাত্রা
ব্যবহার পদ্ধতি
মাটির পিএইচ অনুযায়ী পরিমাণমত চুন মাটির চাড়ি বা ড্রামে কমপক্ষে ১২-২৪ ঘন্টা আগে গুলে নিতে হবে। সকালবেলা প্রয়োজনমত চুন নার্সারি পুকুরের পাড়সহ সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। চাষ দেয়ার ২-৩ দিন পর অথবা বিষ প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর পুকুরে চুন প্রয়োগ করা উচিত।
সাবধানতা
১। ফুল প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি ৫০ গ্রাম পটাশ এবং ১২ গ্রাম চিটাগুড় ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া উপরোক্ত সারের সাথে ১৫০-২০০ গ্রাম সরিষার খৈল প্রয়োগ করা যেতে পারে।
২। নার্সারি পুকুরে সার প্রয়োগের পর পানি পরিবর্তন করা যাবে না।
৩। যদি পানির রং অনুজ বা বাদামী হয় তবে ধরে নিতে হবে পানিতে প্লাংকটন উৎপন্ন হয়েছে এবং পুকুর
গোনা থাকার জন্য প্র হয়েছে।
৪। সার প্রয়োগ - দিন পত্রেও যদি পানি অন্য জলাশয় থেকে প্লাং পুকুরে দিতে হবে। অথবা একর প্রতি ৮ কেজি ইউরিয়া এবং ২০ কেজি টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। পানির রং সবুজ বা হালকা বাদামী হলে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য বিদ্যমান রয়েছে বুঝতে হবে এবং এ পর্যায়ে পোনা সম্মুখ করা যাবে।
চিত্র-৩.৫ নার্সারি পুকুরে সার প্রয়োগ
নার্সারি পুকুরে মজুদ করতে হবে। নার্সারি পুকুরের আয়তন, পানির গভীরতা ও চাষ পদ্ধতির ওপর পোনা মজুদের হার নির্ভর করে।
সারণি: জারকন, পানির গভীরতা ও চাষ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে নার্সারি পুকুরে পোনা মজুদের পরিমাণ
নার্সারি পুকুরে পোনা মজুদকরণের পূর্বে পোনাকে খাপ খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে-
সুস্থ্য সবল ও ভালো মানের পোনার বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
সারণি: চিংড়িকে পিলেট বা বাণিজ্যিক খাবার প্রদানের তালিকা
চিত্র-০.৬ নার্সারি পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ
চিংড়ির গুণগত মান পুকুরের পানির গুণগতমানের ওপর নির্ভরশীল। পানি দুষিত হলে চিংড়ি দুর্বল হয়, খাবার খায় না ফলে সহজে রোগাক্রান্ত হয়। পরিশেষে আংশিক অথবা নার্সারির সম্পূর্ণ চিংড়ি মারা থেকে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে উন্নত প্রচলিত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু হয়েছে ফলে খুব কম পরিমাণ খাদ্য ঘেরে প্রয়োগ করা হয়। কারণ এ পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর চিংড়ির উৎপাদন নির্ভর করে। এজন্য ঘেরে পানি ব্যবস্থাপনার ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
ক) চিংড়ির অবাধ চলাচলের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা
নার্সারি পুকুরের তলদেশ অগভীর ও স্বচ্ছ হওয়ায় সূর্যের আলো তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছায় ফলে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ যেমন: নাজাস, কারা (উচ্চতর জলজ উদ্ভিদ) জন্মায় যা চিংড়ির চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। আবার উপকূল অঞ্চলের ঘেরের তলা সমতল না হওয়ায় পানি ঘেরের সর্বত্র সমানভাবে থাকে না। এমনকি কোনো কোনো ঘেরে প্রায় ৩০-৪০ ভাগ এলাকায় কোনো পানিই থাকে না। ফলে ঘেরের অধিকাংশ এলাকা চাষের আওতার বাইরে থাকে এবং আয়তন অনুপাতে চিংড়ির উৎপাদন হ্রাস পায়। তাই পানি প্রবেশের মাধ্যমে ঘেরের সম্পূর্ণ এলাকাকে চাষের আওতায় এনে চিংড়ির অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা যায় ।
খ) চিংড়ির শ্বাস গ্রহণের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা
বাগদা চিংড়ির স্বাভাবিক শ্বাস গ্রহণের জন্য পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ৪-৮ পিপিএম থাকতে হয়। অক্সিজেনের সাথে পানিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি দ্রবীভূত থাকে। পানিতে দ্রবীভূত সকল গ্যাসের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। যেমন- আমোনিয়া 0.১ পিপিএম, হাইড্রোজেন সালফাইড ০.০৩ পিপিএম। পানিতে এই গ্যাসগুলোর পরিমাণ বেড়ে গেলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে ঘেরের চিংড়ি মারা যেতে পারে।
গ) প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পানি ব্যবস্থাপনা
পানিতে ফাইটোপ্লাংকটনের উৎপাদনের হারকে প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বলে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফাইটোপ্লাংকটন ঘেরের পানিতে প্রাথমিক খাদ্যের যোগান দেয় এবং চিংড়ির শ্বাস গ্রহণ ও অন্যান্য কাজের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক থাকে এবং অন্যান্য গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। ফাইটোপ্লাংকটন পানিতে দ্রবীভূত নাইট্রোজেন ও ফসফরাসকে নিজের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে ফলে পানিতে বিষাক্ত গ্যাস উৎপাদন হয় না এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইটোপ্লাংকটন থাকায় আগাছা ও ক্ষতিকর উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। চিংড়ির অধিক উৎপাদনের জন্য পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাকৃতিক খাদ্য থাকা প্রয়োজন। এজন্য পানিতে নির্দিষ্ট মাত্রায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান উপস্থিত থাকতে হবে।
ঘ) চিংড়ির রোগ প্রতিরোধের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা
পানিতে প্রচুর পরিমাণে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু বিদ্যমান থাকে। সুস্থ সবল চিংড়িকে জীবাণু আক্রমণ করতে পারে না। কিন্তু চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে রোগ জীবাণু চিংড়িকে সহজেই আক্রমণ করার উপযুক্ত পরিবেশ পায়। বসবাসের পরিবেশ উপযুক্ত না থাকলে সেখানে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং চিংড়িকে আক্রান্ত করে। চিংড়ির মাঝে যে কোনো রকম অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই প্রথমে পানির গুণাগুণ যেমন- পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, ক্ষারত্ব পরীক্ষা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুন পানি প্রবেশ করাতে হবে। নতুন পানি প্রবেশ করানোর সময় জীবাণুমুক্ত ও যথেষ্ট গুণাগুণসম্পন্ন পানি প্রবেশ করাতে হবে। সম্ভব হলে পরিশোধিত পানি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া পানি পরিশোধনের জন্য ব্লিচিং পাউডার ট্রিটমেন্ট (২০- ২৫ পিপিএম হারে) করা যেতে পারে।
চিংড়ি চাষের সময় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পোনা বড় হলে তা নার্সারি পুকুর থেকে পালন পুকুরে স্থানান্তরিত করতে হবে। নার্সারি পুকুর থেকে পোনা বেরিয়ে পালন পুকুরে যাওয়ার মত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ-
চিংড়ির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে পালন ঘের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ-
সুস্থ্য সবল চিংড়ি উৎপাদনের জন্য পরিশোধিত পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য পানি পুনঃউত্তোলন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। এখানে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত-
অধিক উৎপাদনের জন্য চিংড়িকে চাপমুক্ত রাখা উচিত। কিন্তু শেওলা পরিষ্কার, জাল টানা, ঘের মেরামত প্রভৃতি কাজের জন্য চিংড়ি পীড়নের শিকার হয় ফলে চিংড়ির মৃত্যু হার বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো-
চিংড়ির প্রত্যাশিত উৎপাদন পাওয়ার জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি ঘেরে সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ করা উচিত। ঘেরে উপস্থিত মোট চিংড়ির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সম্পূরক খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ-
যেকোনো ধরনের জলজ আগাছা আধা নিবিড় চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। কারণ জলজ আগাছা জন্মালে ঘেরের পানির গুণগতমান সহনীয় পর্যায়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই ২-৩ দিন সময় নিয়ে ঘেরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ঘেরে শতকরা ৩০-৪০ ভাগ আগাছা থাকলে তা গ্রহণযোগ্য তবে এর বেশি থাকলে তা ক্ষতিকর।
চিংড়ি চাষে নমুনায়ন ও পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতি ১৫ দিনে একবার অথবা মাসে ২ বার চিংড়ির নমুনায়ন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। রোগ অথবা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। চিংড়ির নমুনায়নের সময় করণীয় বিষয়গুলো নিম্নের সারণিতে দেয়া হলো-
সারণি: চিংড়ির নমুনায়নের সময় পর্যবেক্ষণের বিষয় ও করণীয়
পর্যবেক্ষণ বিষয় | করণীয় |
---|---|
১. ওজন স্বাভাবিক আছে কিনা ২. পাকস্থলিতে পর্যাপ্ত খাবার আছে কিনা ৩. চিংড়ির দেহে রোগের চিহ্ন আছে কিনা অথবা খোলসে সাদা চাকা দাগ আছে কিনা ৪. অস্বাভাবিক চলাচল ৫. ফুলকা কালো হয়ে গেছে কিনা ৬. লেজ ফোলা বা পানি জমে থাকা ৭. মাংস এবং খোলসের মাঝে ফাঁকা আছে কিনা ৮. খোলস নরম/শক্ত কিনা | ১. মাসে কমপক্ষে ২ বার নমুনায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২. পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকলে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে অথবা খাবার না খাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। ৩. ভাইরাসের কারণে মুলত এরকম হতে পারে। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে হবে ৪. চিংড়ি পাড়ের নিকট স্থির হয়ে থাকলে বুঝতে হবে কোনো অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ করে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. স্বল্পমাত্রায় চুন প্রয়োগ করতে হবে। ঘেরে হররা/পালা টেনে নিতে হবে। ৬. চিংড়ি আক্রান্তের পরিমাণ বেশি হলে প্রতি বিঘায় ১.৫ কেজি পটাশ পানিতে গুলিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। ৭. খাবার প্রদানের হার বৃদ্ধি করতে হবে ৮. নরম খোলসবিশিষ্ট চিংড়ি সংখ্যায় বেশি হলে ঘেরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। |
তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোনো বাগদা চিংড়ির নার্সারি পুকুর পরিদর্শন করে নিম্নোক্ত ছক পূরণ কর।
পরিদর্শনকৃত চিংড়ি নার্সারির নাম | |
ঠিকানা | |
নার্সারিতে কর্মরত কর্মীগণ কর্তৃক ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামসমূহের নাম লিখ | ১. ২. |
পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে পুকুরের তলা পর্যাপ্ত রোদে শুকানোর ব্যবস্থা করা | ১. ২. |
পুকুরের তলার মাটি অপসারণ করা | ১. ২. |
পুকুরের পাড় মেরামত/সংস্কার করা | ১. ২. |
অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী দমনে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের নাম | ১. ২. |
নার্সারি পুকুরের আয়তন অনুসারে প্রয়োগকৃত চুন ও সারের পরিমাণ | ১. ২. |
নার্সারি পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ | ১. ২. |
নার্সারি পুকুরে হাঁসপোকা ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকা দমনের পদ্ধতিসমূহ লিখ | ১. ২. |
নাম | |
শ্রেনী | |
রোল নং | |
প্রতিষ্ঠানের নাম | |
শ্রেণি শিক্ষকের নাম | |
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখ | শ্রেণি শিক্ষকের স্বাক্ষর |
তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোনো বাগদা চিংড়ির নার্সারি পুকুর পরিদর্শন করে মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিম্নোক্ত ছক পূরণ কর।
পরিদর্শনকৃত বাগদা চিংড়ির নার্সারির নাম | |
ঠিকানা | |
নার্সারি পুকুরে গোস্ট লার্ভা অবমুক্ত করার পর লার্ভার গতিবিধি | ১. ২. |
পিলেট খাদ্য নাকি হাতে তৈরি খাদ্য ব্যবহার করা হয় | ১. ২. |
খাদ্য প্রয়োগের পদ্ধতি | ১. ২. |
চিংড়ির পোস্ট লার্ভাকে প্রদেয় খাদ্যের পরিমাণ | ১. ২. |
নার্সারির পানি ব্যবস্থাপনা | ১. ২. |
পোস্ট লার্ভার নমুনায়ন পদ্ধতি | ১. ২. |
পোস্ট লার্ভার আহরণ ও পরিবহণ পদ্ধতি | ১. ২. |
নাম | |
শ্রেনী | |
রোল নং | |
প্রতিষ্ঠানের নাম। | |
শ্রেণি শিক্ষকের নাম | |
প্রতিবেদন জমাদানের তারিখ | শ্রেণি শিক্ষকের স্বাক্ষর |
পারদর্শিতার মানদন্ড
(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম
ক্রম | নাম | স্পেসিফিকেশন | সংখ্যা |
---|---|---|---|
০১ | এ্যাপ্রোন | শিক্ষার্থীর মাপ মতো | ১ টি |
০২ | হ্যান্ড গ্লোভস | মাঝারি মাপের | ১ জোড়া |
০৩ | মাস্ক | তিন স্তর বিশিষ্ট | ১ টি |
(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ
১. প্লাস্টিকের বালতি
২ স্কুপনেট
৩. গামছা
৪. প্লাস্টিকের গামলা
৫. পাতিল
৬. থার্মোমিটার
৭. টিস্যু পেপার
৮. খাতা, পেন্সিল
৯. বাগদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা
(গ) কাজের ধারা
১। প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতিলে করে আনা বাগদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা ছায়াযুক্ত শীতল স্থানে রাখ।
২। প্লাস্টিক ব্যাগের বা পাতিলের পানির তাপমাত্রা ও নার্সারি পুকুরের পানির তাপমাত্রা থার্মোমিটার দিয়ে মেপে নাও।
৩। প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতিলের ও পুকুরের পানির তাপমাত্রার ব্যবধান ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে আস্তে আস্তে পুকুরের পানি নিয়ে পাতিলের পানিতে মিশাও এবং ১৫ থেকে ২০ মিনি অপেক্ষা করো।
৪। এরপর পাতিল থেকে ২০% পানি ফেলে দিয়ে নার্সারি পুকুরের পানি নিয়ে পাতিল ভর্তি করো এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করো।
৫। প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতিলের পানির তাপমাত্রা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সমান হলে প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতিলের মুখ নার্সারি পুকুরের পানিতে কাত করে ব্যাগের বা পাতিলের ভিতর হাত দিয়ে পানির স্রোত সৃষ্টি করো।
৬। বাগদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভাগুলো প্লাস্টিকের ব্যাগ বা পাতিল থেকে স্রোতের বিপরীতে লার্ভাগুলো বেরিয়ে যেতে দাও।
৭। এরপর পাতিল দিয়ে পুকুরের পানিতে ঢেউ সৃষ্টি করতে হবে যেন পোস্ট লার্ভাগুলো পুরো পুকুরে ছড়িয়ে যেতে পারে।
৮। পোস্ট লার্ভার সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য নমুনা হিসেবে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ বা পাতিলের পোস্ট লার্ভা গণনা করা যেতে পারে।
৯। সম্পূর্ণ অনুশীলনটি ধৈর্য সহকারে করো এবং ব্যবহারিক খাতায় লেখ।
সতর্কতা
১। পাতিলের পানির তাপমাত্রা ও নার্সারি পুকুরের পানির তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান অনেক থাকলে পোস্ট লার্ভার মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
২। মেঘলা দিনে অথবা রৌদ্রোজ্জ্বল সময়ে পুকুরে চিংড়ির পোস্ট লার্ভা ছাড়া যাবে না।
৩। সকাল বেলা বা বিকাল বেলা পোস্ট লার্ভা পুকুরে ছাড়ার জন্য উত্তম।
৪। চিংড়ির পোস্ট লার্ভা মজুদ করার সময় লার্ভার চাপমুক্ত অবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আত্মপ্রতিফলন
নার্সারি পুকুরে বাগদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা মজুদ করার বিষয়ে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন :
১। নার্সারি পুকুর কী?
২। নার্সারি পুকুরের মাটির পিএইচ কত থাকা উচিত?
৩। নার্সারি পুকুরের আয়তন কেমন হওয়া উচিত?
৪। রোটেনন এর রাসায়নিক সংকেত লেখ।
৫। প্রতি শতাংশ নার্সারি পুকুরে কতটি পোনা মজুদ করা হয়?
৬। ব্লিচিং পাউডার এর প্রয়োগ মাত্রা কত?
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:
১। কোন ধরনের মাটি নার্সারি পুকুরের জন্য উপযুক্ত?
২। রোটেনন এর শক্তিমাত্রা ও প্রয়োগ মাত্রা উল্লেখ করো।
৩। মৎস্যভুক প্রাণী দমনে ব্যবহৃত রাসায়নিক কীটনাশকগুলোর নাম লেখ?
৪। চুন কত প্রকার ও কী কী?
৫। সুস্থ্য ও ভালো মানের পোনার বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।
রচনামূলক প্রশ্ন:
১। নার্সারি পুকুরের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করো।
২। নার্সারি পুকুর তৈরির সময় কী কী বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত?
৩। ঘেরে পানি উত্তোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।
৪। অবাঞ্ছিত ও মৎস্যভূক প্রাণী অপসারণের প্রক্রিয়া বর্ণনা করো।
৫। মহুয়া বীজের খৈল প্রয়োগের সময় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?
৬। নার্সারিতে চুন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং প্রয়োগ পদ্ধতি বর্ণনা করো।
৭। চুন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?
৮। পুকুরের আয়তন ও গভীরতার ওপর ভিত্তি করে পোনা মজুদের পরিমাণ ও মজুদ পদ্ধতি বর্ণনা করো।
৯। নার্সারি পুকুরে বাগদা চিংড়ির খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা করো।
১০। চিংড়ির পোনা আহরণ ও স্থানান্তর প্রক্রিয়া বর্ণনা করো।
১১। চিংড়ির পীড়ন নিয়ন্ত্রণের উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করো।
১২। চিংড়ির নমুনায়নের সময় কী কী বিষয় পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং করণীয় সম্পর্কে লেখ।
আরও দেখুন...