এই অধ্যায় পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ব্যাংকের গঠন, কর্মপরিধি, উদ্দেশ্য এবং তার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। এখানে ব্যাংকিং ব্যবসার শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবসায় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভের ক্ষেত্রে এই অধ্যায়টি খুবই কার্যকর হবে।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
কবির রাজশাহীর একটি বিশেষ ব্যাংক থেকে তার কৃষি খামারের জন্য ঋণ গ্রহণ করেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে যথেষ্ট উপকৃত হন। ওই অঞ্চলে এ ব্যাংকটি সেখানকার সকল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। স্থানীয়ভাবে এ ব্যাংক সকলকে সহযোগিতা করে।
যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যাংক ব্যবসার আকার, আকৃতি, উদ্দেশ্য ও গঠনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যুগের সাথে সাথে সনাতন, আধুনিক এবং বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং এই ব্যবসার আধুনিকতার ছোঁয়া এনে দিয়েছে। তাছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নতুন নতুন ব্যাংকিং পণ্যের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবাকে যুগোপযোগী এবং ক্রেতার প্রয়োজন অনুসারে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোত্রের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন। আমরা এখানে ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট তিনটি গোত্রের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্য আলোচনা করব।
ক) ব্যাংকের মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি
খ) সরকার এবং রাষ্ট্রীয় পক্ষের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি
গ) ব্যাংক গ্রাহকদের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের উদ্দেশ্যাবলি
(১) তহবিলের বিনিয়োগ ও মুনাফা অর্জন : ব্যাংকের মালিক, অংশীদার ও শেয়ার হোল্ডারদের সঞ্চিত অর্থের সঠিক বিনিয়োগ করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য যথাযথ পালন করতে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের কাঙ্ক্ষিত হারে মুনাফা অর্জন করা প্রয়োজন। প্রতিটি বিনিয়োগের একটি সুযোগ ব্যয় আছে, অন্তত সেই হারে মুনাফা অর্জন না করতে পারলে এই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
২) সুনাম অর্জন : যথাযথ ব্যাংকিং করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করতে পারলে তাতে করে মালিকপক্ষের সুনাম বৃদ্ধি পায়।
৩) উন্নয়নে অংশগ্রহণ : ব্যাংক বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে দেশে উৎপাদন এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়। এতে মালিকপক্ষের বিনিয়োগ সার্থক হয়। গ্রাহককে বিভিন্ন রকম সেবা দান করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।
৪) সামাজিক অবদান : বিভিন্ন রকম সামাজিক কার্মকাণ্ডের মাধ্যমে এবং অর্জিত মুনাফার একটি অংশ সামাজিক উন্নয়নে ও সমাজ গঠনমূলক কাজে ব্যয় করা তাদের একটি উদ্দেশ্য।
১) নোট ও মুদ্রার প্রচলন : নোট ও মুদ্রা প্রচলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা প্রচলন করে। ব্যাংক চেক কখনো বিনিময়ের মাধ্যমে হিসেবে এবং মুদ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে সরকারের মুদ্রা প্রচলনের কাজটি সহজ করে দেয়।
২) মূলধন গঠন : সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে ব্যাংক আমানতের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের জন্য ঋণ দেয়। দেশে মূলধন গঠনে সাহায্য করা এবং সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা ব্যাংকের একটি প্রধান উদ্দেশ্য।
৩) বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন : ব্যাংক যেকোনো কারবারে ঋণ দেবার আগে ওই কারবারের খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে। সরকার নিয়মিতভাবে তার অগ্রাধিকারের খাতগুলো দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরে। ব্যাংক সেই অগ্রাধিকারযুক্ত খাতে অর্থায়ন করে সরকারের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে ।
৪) মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ : সরকার তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের দ্রব্যমূল্য বা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বদা মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এই কাজটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচ্ছিন্নভাবে একা একা সাফল্যের সাথে সম্পাদন করতে পারে না। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক এক্ষেত্রে মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সাহায্য করে।
৫) কর্মসংস্থান : দেশের বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য সরকারকে সাহায্য করা ব্যাংক ব্যবস্থার একটি কাজ। ব্যাংকগুলো সেসব কারবারকে অর্থায়ন করতে পারে, যেগুলো অধিকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। যেমন: মূলধননির্ভর প্রযুক্তির বদলে শ্রমনির্ভর প্রযুক্তিতে অর্থায়ন করে ব্যাংক অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সরকারকে সাহায্য করে।
১) আমানত : গ্রাহকদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের আমানত সৃষ্টি করে। চলতি আমানতে সুদ নেই, কিন্তু অনেক ধরনের সেবা পাওয়া যায়। সঞ্চয়ী আমানতে প্রায় ৫% থেকে ৭% হারে সুদ পাওয়া যায় আবার যখন প্রয়োজন টাকা তুলে ফেলা যায়। মেয়াদি আমানতের সুদের হার প্রায় ১২% থেকে ১৩% তবে সাধারণত মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে টাকা তোলা তেমন লাভজনক হয় না। মেয়াদি আমানত নিম্নে ১ মাস এবং ঊর্ধ্বে যেকোনো সময়ব্যাপী হতে পারে। আমানতকারীকে তার সুবিধামতো আমানত সৃষ্টিতে সাহায্য করা ব্যাংকের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য।
২) নিরাপত্তা : গ্রাহকের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর নিরাপত্তা প্রদান করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। আমাদের সমাজে নিজের কাছে বা বাসায় অনেক অর্থ, সোনা-গহনা বা অন্যান্য মূলবান সামগ্রী রাখা নিরাপদ নয়। এসব সামগ্রী নিরাপদে গচ্ছিত রাখা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।
৩) উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা : ব্যাংক যখন কোনো প্রকল্পে অর্থ লগ্নি করে, তখন প্রকল্পের লাভজনকতা মূল্যায়ন করে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলেই অর্থায়নে জড়িত হয়। প্রকল্পটির লাভজনকতা ঋণের আবেদনকারীর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাংকের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের পেশাগত দক্ষতা প্রকল্পের লাভজনকতার ব্যাপারে আবেদনকারীর ধারণাকে শক্তিশালী করে। প্রকল্পটি যদি পরিবর্ধন পরিমার্জন করতে হয়, ব্যাংক সে পরামর্শ প্রদান করে। আরও বিভিন্ন রকম আর্থিক এবং অর্থসংক্রান্ত পরামর্শ ব্যাংক গ্রাহককে দিয়ে থাকে।
৪) প্রতিনিধি ও অছি : সেবার মূল্য গ্রহণের বিনিময়ে মক্কেলের পক্ষে প্রতিনিধি/অছি হিসাবে কাজ করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষে ব্যবসায়িক চুক্তিতে অংশগ্রহণ করে, বিনিময় বিলে সই করে, বাসা ভাড়া সংগ্রহ করে।
৫) অর্থ স্থানান্তর : ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রাহকের নির্দেশ মোতাবেক অর্থ দেশ ও বিদেশে স্থানান্তর করে থাকে।
৬) জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সহজীকরণ : গ্রাহকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নকল্পে ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সেবা ও পণ্য সৃষ্টি করে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্রাহক নগদ টাকা ছাড়াই পণ্য ক্রয় করতে পারে। এটিএম মেশিন থেকে নগদ টাকা তোলা যায়।বর্তমানে দেশের সব বড় শহরের বিভিন্ন এলাকায় ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা ব্যবস্থা চালু আছে। তাছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা সহজ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইন অনুযায়ী বর্তমানে সর্বনিম্ন ২ জন ও সবোর্চ্চ ১৩ জন পরিচালকের সমন্বয়ে প্রাইভেট ব্যাংক স্থাপন করা যায়। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মালিকানায় ব্যাংকের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৭ জন এবং সর্বোচ্চ সীমাহীন পরিচালকের সমন্বয়ে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যায়। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনহীন ব্যাংকগুলো সমবায় বা অন্য যেকোনো নামে পরিচালিত হলেও তা বেআইনি ব্যাংকিং ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ব্যাংকিং একটি ঝুঁকিবহুল ব্যবসা। ঝুঁকি মোকাবেলার শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা না গড়লে ঝুঁকি এড়ানো কঠিন। অন্যের অর্থ নিয়ে ব্যবসা করার কারণে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বেশকিছু মৌলিক নীতি মেনে চলতে হয় যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১) নিরাপত্তার নীতি : ব্যাংক ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি গ্রাহকের অর্থ ও ঋণ হিসাবে প্রদত্ত অর্থের নিরাপত্তা বিধান। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংককে ঋণপ্রদানের সময় ঋণগ্রহীতার আর্থিক সচ্ছলতা ও সততা বিচার করা এবং পর্যাপ্ত জামানত গ্রহণ করা উচিত।
২) মুনাফার নীতি : সুষ্ঠু মুনাফা অর্জন করা ব্যাংকের আরেকটি অপরিহার্য নীতি। আমানতকারীগণকে প্রদত্ত সুদ ও ঋণগ্রহীতার নিকট হতে প্রাপ্ত সুদের পার্থক্যই ব্যাংকের মুনাফার প্রধান অংশ ।
৩) তারল্যনীতি : আমানতকারী যখন টাকা তুলতে চায়, তখন তাদের নগদ টাকা দিতে হবে। আবার এটা বিবেচনায় রেখে যদি আমানতের সব টাকা ব্যাংক তরল অবস্থায় রেখে দেয়, তবে ব্যাংকের কোনো বিনিয়োগ হবে না এবং ব্যাংকটির কোনো মুনাফাও হবে না। সুতরাং সার্থক ব্যাংক ব্যবসা মানে হলো সঠিক তারল্যনীতি যেখানে অতিরিক্ত তারল্যও থাকবে না আবার তারল্য সংকটও হবে না। তারল্যনীতি ব্যাংক ব্যবসায় অন্যতম মূলনীতি।
৪) প্রাচুর্য বা সচ্ছলতার নীতি : ব্যাংকিং কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আর্থিক সচ্ছলতা প্রয়োজন । আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে ব্যাংক দেউলিয়া হতে পারে। তাই আর্থিক সচ্ছলতা বা প্রাচুর্য ব্যাংকের একটি অন্যতম নীতি ।
৫) দক্ষতার নীতি : ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় বোর্ড, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতায় ব্যাংকের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সাফল্য অর্জনের জন্য তাই দক্ষতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন ।
৬) সেবার নীতি : ব্যাংকের গ্রাহকদের বহুবিধ সেবা প্রদান করা ব্যাংকের একটি অন্যতম দায়িত্ব। গ্রাহকদের পর্যাপ্ত বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকের উন্নতি সম্ভব।
৭) প্রচারনীতি : উপযুক্ত, বোধগম্য ও আকর্ষণীয় প্রচারের মাধ্যমে ব্যাংকের প্রসার সম্ভব। ব্যাংক তার কর্মদক্ষতা, বিশ্বস্ততা ও সেবামূলক কার্যাদি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তুলে ধরে আস্থা ও মুনাফা অর্জন করতে পারে।
৮) গোপনীয়তার নীতি : ব্যাংকের মক্কেলের আস্থা অর্জনের একটি উপায় তাদের হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা করা। তাই গোপনীয়তা রক্ষা করা ব্যাংকের একটি অন্যতম নীতি।
৯) সুনামের নীতি : উন্নত ব্যবস্থাপনা, দক্ষ পরিচালনা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং সেবামূলক কাজের মাধ্যমে বাজারে সুনাম সৃষ্টি করা ব্যাংকের অন্যতম মূলনীতি।
১০) বিনিয়োগ নীতি : বিনিয়োগের শর্তসমূহে (বিনিয়োগের আকার, মেয়াদ, সুদের হার ইত্যাদি) যে নীতি অনুসরণ করা হয়, তাই বিনিয়োগের নীতি। সুষ্ঠু বিনিয়োগ নীতির উপর ব্যাংকের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে।
১১) উন্নয়নের নীতি : মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্যে-সহযোগিতা করাও ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি।
১২) উদ্দেশ্যের নীতি : ঋণ প্রদানের পূর্বে ব্যাংক প্রস্তাবিত প্রকল্পের উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা বিবেচনা করে। এ ব্যাপারে অনুৎপাদনশীল এবং অনিশ্চিত ক্ষেত্রে ঋণ প্রত্যাখ্যান করা ব্যাংকের একটি উল্লেখযোগ্য নীতি।
১৩) মিতব্যয়িতার নীতি : 'স্বল্পব্যয়ে অধিক মুনাফা' ব্যাংকের অন্যতম নীতি। ব্যয় সংকোচন নীতির মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব।
১৪) সততা ও বিশ্বস্ততার নীতি : দক্ষ ব্যাংক ব্যবসার পূর্বশর্ত হলো ব্যাংকের উপর গ্রাহকদের আস্থা। এই আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংক বিভিন্ন প্রকার সততা ও বিশ্বস্ততার নীতি অবলম্বন করে থাকে। এই আস্থার বলেই গ্রাহক তাদের অর্থ ও মূল্যবান সম্পদ (লকার সেবা) ব্যাংকের কাছে জমা রাখে।
১৫) সাবধানতার নীতি : অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকের সাবধানতার নীতি মেনে চলা বাঞ্ছনীয়।
১৬) বিশেষায়নের নীতি : বৈদেশিক বাণিজ্য, ঋণ দান, নোট ইস্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাংক বিশেষায়নের নীতি অনুসরণ করে থাকে। ফলে কার্যের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
কাঠামো, মালিকানা, গঠন, নিবন্ধন, অঞ্চল ও নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে ব্যাংকিং ব্যবসাকে নিম্নলিখিত ৯.২ নং ছক অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করা যায়:
ক) কাঠামোভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ ১. একক ব্যাংক ২. শাখা ব্যাংক ৩. চেইন ব্যাংক ৪. গ্রুপ ব্যাংক খ) কার্যভিত্তিক শ্রেণিকরণ ১. কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২. বাণিজ্যিক ব্যাংক ৩. কৃষি ব্যাংক ৪. শিল্প ব্যাংক ৫. সমবায় ব্যাংক ৬. বিনিয়োগ ব্যাংক ৭. সঞ্চয়ী ব্যাংক ৮. বন্ধকি ব্যাংক ৯. পরিবহন ব্যাংক ১০. ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ১১. আমদানি-রপ্তানি ব্যাংক গ) ব্যবসায় সংগঠনভিত্তিক শ্রেণিকরণ ১. একমালিকানা ব্যাংক ২. অংশীদারি ব্যাংক ৩. যৌথ মালিকানা ব্যাংক ৪. সমবায় ব্যাংক ৫. রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ঘ) মালিকানাভিত্তিক শ্রেণিকরণ ১. সরকারি ব্যাংক ২. বেসরকারি ব্যাংক ৩. এনজিও ব্যাংক ৪. স্বায়ত্তশায়িত ব্যাংক ৫. আংশিক ব্যাংক ৬. বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংক ঙ) অঞ্চলভিত্তিক শ্রেণিকরণ ১. আঞ্চলিক ব্যাংক ২. জাতীয় ব্যাংক ৩. আন্তর্জাতিক ব্যাংক চ) নিবন্ধনভিত্তিক শ্রেণিকরণ ১. দেশি ব্যাংক (Domestic Bank ) ২. বিদেশি ব্যাংক (Foreign Bank ) ছ) বিশেষ মক্কেলভিত্তিক শ্রেণিকরণ ১. শ্রমিক ব্যাংক ২. মহিলা ব্যাংক ৩. স্কুল ব্যাংক ৪. ভোক্তাদের ব্যাংক জ) নিয়ন্ত্রণভিত্তিক শ্রেণিকরণ ১. পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক ২. আংশিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক ৩. বাজার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক ঝ) ধর্মীয় দৃষ্টিকোণভিত্তিক ব্যাংক |
ছক নং ৯.২: ব্যাংকের শ্রেণিবিন্যাস
১) একক ব্যাংক : শুধু একটি নির্দিষ্ট স্থানে যখন একটি ব্যাংকের কার্যাবলি সম্পাদিত হয়, তাকে একক ব্যাংক (Unit Bank) বলে। একক ব্যাংকের কোনো শাখা অফিস থাকে না এবং এ ব্যাংকের কার্যাবলি শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশে একক ব্যাংকব্যবস্থার প্রচলন নেই।
২) শাখা ব্যাংকিং : এক বা একাধিক শাখার মাধ্যমে একটি প্রধান কার্যালয়ের অধীনে, অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে শাখা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যাবলি সম্পাদন করে তাকে শাখা ব্যাংকিং (Branch Banking) বলে। শাখা ব্যাংকের কোনো আলাদা সত্ত্বা থাকে না। প্রধান অফিসের প্রতিনিধি হিসেবে শাখা ব্যাংকগুলো তাদের কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে, যেমন: জনতা ব্যাংক লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ইত্যাদি।
৩) চেইন ব্যাংকিং : যৌথ মালিকানায় গঠিত হয়েও নিজ নিজ সত্ত্বা অক্ষণ রেখে যখন সহজভাবে ব্যাংকিং কার্যাবলি সম্পাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তখন এরূপ ব্যবস্থাকে চেইন ব্যাংকিং (Chain Banking) ব্যবসা বলে। চেইন ব্যাংকের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে পরস্পরিক উন্নতিসাধন।
৪) গ্রুপ ব্যাংকিং : যখন দুই বা ততোধিক ব্যাংক একটি হোল্ডিং কোম্পানির অধীনে একত্রিত হয়ে উক্ত কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে ব্যাংকিং কার্যাবলি সম্পাদন করে, তখন তাকে গ্রুপ ব্যাংকিং (Group Banking) বলে। একটি বৃহৎ ব্যাংক অন্য একটি বা কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ার ক্রয় করে। ফলে দুর্বল ব্যাংকটি বৃহৎ ব্যাংকের অধীনস্থ বা Subsidiary Bank হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১) কেন্দ্রীয় ব্যাংক : কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকের মুরব্বি, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank) মুদ্রাবাজারকে সুসংগঠিত আকারে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যেই গঠিত। সাধারণত মুদ্রা প্রচলন, অর্থ সরবরাহ তথা ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতা ও দায়িত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োজিত। বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক, ইংল্যান্ডে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, জাপানে ব্যাংক অব জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কার্যরত রয়েছে।
২) বাণিজ্যিক ব্যাংক : মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য জনগণের সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসাবে গ্রহণ এবং সে আমানত হতে ঋণ প্রদান কাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক (Commercial Bank) বলা হয়। যেমন: ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।
৩) কৃষি ব্যাংক : কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষকগণকে বিভিন্ন মেয়াদের ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে যে ব্যাংক কাজ করে তাকে কৃষি ব্যাংক বলে। এটি একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। আমাদের কৃষি উন্নয়ন অনেকখানি নির্ভর করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের দক্ষতার উপর ।
৪) শিল্প ব্যাংক : দেশের শিল্প খাত উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে শিল্প ব্যাংক বলে। যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ভূমি ক্রয়, কারখানা নির্মাণ ইত্যাদির জন্য শিল্প ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে। বিডিবিএল (Bangladesh Development Bank Limited) বাংলাদেশে এই ধরনের একটি ব্যাংক।
৫) বিনিময় ব্যাংক : বৈদেশিক লেনদেন নিষ্পত্তি ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে বিনিময় ব্যাংক বলে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, রপ্তানি ইত্যাদি এ ব্যাংকের কাজ।
৬) বিনিয়োগ ব্যাংক : বিনিয়োগ ব্যাংক নবগঠিত শেয়ারের অবলেখক বা underwriting শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান, ব্রিজ ফিন্যান্স, ডিবেঞ্চার ফিন্যান্সসহ বিভিন্ন পরামর্শমূলক কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে।
৭) সঞ্চয়ী ব্যাংক : জনগণের অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় হিসাবে গ্রহণ ও মুনাফা বা সুদ প্রদানের মাধ্যমে জনগণকে অধিক সঞ্চয়ে উৎসাহিত করে তোলাই এ ধরনের ব্যাংকের উদ্দেশ্য। যেকোনো সময় এ ধরনের ব্যাংকে টাকা জমা এবং অর্থ উত্তোলনের সুযোগ বা অন্যান্য নিয়মে এই ব্যাংকের সঞ্চয় পরিচালিত হয়।
৮) বন্ধকি ব্যাংক : ভূমি বন্ধক রেখে কৃষি বা শিল্পের প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদে যে ব্যাংক ঋণ প্রদান করে, তাকে বন্ধকি ব্যাংক বলে।
৯) পরিবহন ব্যাংক : পরিবহন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে পরিবহন ব্যাংক বলা হয়। এ ব্যাংক যানবাহন নির্মাণ, যন্ত্রাংশ আমদানি, আধুনিকীকরণ, খুচরা যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
১০) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক : ক্ষুদ্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে ।
১১) আমদানি-রপ্তানি ব্যাংক : আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে আমদানি-রপ্তানি ব্যাংক বলা হয়। মূলত আমদানির জন্য ঋণ সরবরাহ, প্রত্যয় পত্র (L/C) সুবিধা, আমদানি তদারকিসহ বিভিন্ন উপদেশমূলক কাজ করে থাকে।
১) একমালিকানা ব্যাংক : একক উদ্যোগে ও পুঁজিতে এবং একক ব্যক্তি বা মালিক দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাংককে একমালিকানা ব্যাংক বলা হয় ।
২) অংশীদারি ব্যাংক : অংশীদারি ব্যবসার মতো অংশীদারি আইনের ভিত্তিতে যে ব্যাংক গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে অংশীদারি ব্যাংক বলে।
৩) যৌথ মূলধনি কোম্পানি ব্যাংক : কোম্পানির আইনের আওতায় যে ব্যাংকের মূলধন গঠিত হয় এবং পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে যৌথ মূলধনি কোম্পানির ব্যাংক (Joint Stock Company Bank) বলা হয়।
৪) সমবায় ব্যাংক : সমবায়ের নীতি ও আইন অনুযায়ী গঠিত ও পরিচালিত ব্যাংককে সমবায় ব্যাংক বলা হয়।
৫) রাষ্ট্রীয় মালিকানা : সম্পূর্ণভাবে সরকারি মালিকানায় ও পরিচালনায় যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ব্যাংক বলা হয়। যেমন: সোনালী ব্যাংক লিঃ, জনতা ব্যাংক লিঃ
১) সরকারি ব্যাংক : সরকারি উদ্যোগে গঠিত ও সরকারি অর্থে পুঁজি সংগৃহীত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকেই এককথায় সরকারি ব্যাংক বলে। যেমন: অগ্রণী ব্যাংক লিঃ।
২) বেসরকারি ব্যাংক : ব্যক্তি মালিকানায়, যৌথ মালিকানায় বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাংককেই এককথায় বেসরকারি ব্যাংক (Private Bank) বলে। যেমন: যমুনা ব্যাংক লিঃ
৩) বিশেষায়িত ব্যাংক : গ্রামীণ ব্যাংক এই ধরনের একটি ব্যাংক। গতানুগতিক ব্যাংক জামানত ব্যতীত ঋণ দিতে পারত না বলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগণ ব্যাংক সেবা বা ঋণ পেতে পারত না। গ্রামীণ ব্যাংক মাইক্রো ক্রেডিট বা জামানতবিহীন ঋণ সৃষ্টি করে তাদেরকে ব্যাংক কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসে।
৪) যৌথ মালিকানায় ব্যাংক : সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতযুক্ত মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ব্যাংককে যৌথ মালিকানা ব্যাংক বলা হয়। আমাদের দেশে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিঃ একটি যৌথ মালিকানা ব্যাংকের উদাহরণ।
৫) স্বশাসিত ব্যাংক : এ ধরনের ব্যাংকের মালিক সরকার। তবে সরকারি ব্যাংকের সাথে পার্থক্য হলো, এটি স্বশাসিত এবং স্বনিয়ন্ত্রিত। সরকার মুখ্য পদে বা পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিনিধি প্রেরণ করে থাকেন। কিন্তু সাধারণ কার্যক্রমে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করে না ।
৬) বিদেশি ব্যাংক : এক দেশের ব্যাংক যখন অন্য দেশে এসে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে, ঐ দেশের জন্য তারা বিদেশি ব্যাংক হিসাবে আখ্যায়িত হয়। অর্থাৎ বিদেশি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ব্যাংককে বিদেশি ব্যাংক বলে। যেমন- স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক।
১) আঞ্চলিক ব্যাংক: কোনো অঞ্চল বিশেষের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে আঞ্চলিক ব্যাংক (Regional Bank) বলা হয়। যেমন- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ।
২) জাতীয় ব্যাংক : একটি দেশের সীমানায় থেকে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করলে তাকে জাতীয় ব্যাংক (National Bank) বলে।
৩) আন্তর্জাতিক ব্যাংক : একটি দেশের জাতীয় সীমানার গণ্ডি ভেদ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে যে ব্যাংকের শাখা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত, তাকে আন্তর্জাতিক ব্যাংক (International Bank) বলে।
১) দেশি ব্যাংক : দেশের ব্যাংকিং আইনের আওতায় যে ব্যাংক গঠিত ও পরিচালিত, তাকে দেশি ব্যাংক (Domestic Bank) বলে ।
২) বিদেশি ব্যাংক : এক দেশে নিবন্ধিত কিন্তু ব্যাংক ব্যবসায় অন্য দেশে পরিচালিত করলে তাকে বিদেশি ব্যাংক (Foreign Bank) বলে।
১) শ্রমিক ব্যাংক : শ্রমিকদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা সৃষ্টি করে জীবনধারণের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রমিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমাদের দেশে স্বতন্ত্রভাবে শ্রমিক ব্যাংক নেই, তবে শিল্প-কারখানা এলাকার শাখা খুলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ উদ্দেশ্য সাধন করে।
২) মহিলা ব্যাংক : মহিলাদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার জন্য, তাঁদেরকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে পরিচিত করার জন্য এবং সর্বোপরি মহিলাদেরও বিশেষভাবে ব্যাংকিং-সুবিধা প্রদান করার জন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যাংককে মহিলা ব্যাংক বলে।
৩) স্কুল ব্যাংক : উন্নত দেশগুলোতে স্কুল ব্যাংক ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে অবশ্য এ ধরনের ব্যাংক ১৯৬০ সালের দিকে একবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের জন্য সঞ্চয় বাক্স বা ব্যাগ সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার্থীরা এতে টাকা-পয়সা জমা করে থাকে। স্কুল থেকেই সঞ্চয়ে উৎসাহ দেওয়া এ ব্যাংকের উদ্দেশ্য।
৪) ভোক্তাদের ব্যাংক : ভোক্তাদের বাকিতে পণ্য ক্রয়ের সুবিধা প্রদানের জন্যই এ ব্যাংক গঠিত ও পরিচালিত হয়। ব্যাংক তার মক্কেলকে একটি কার্ড সরবরাহ করে, যার নাম Credit Card এবং এর দ্বারা ভোক্তা বাকিতে বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারে।
১) পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক : যে ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পূর্ণ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক বলে।
২) আংশিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক : যে ব্যাংকের কার্যক্রম আংশিকভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং আংশিক ব্যাংকের নিজস্ব নীতির অধীনে, তাকে আংশিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক বলে।
৩) বাজার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক : এ ধরনের ব্যাংকের উপর সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার অর্থনীতিতে (Market Economy) সাধারণত এ ধরনের ব্যাংক গড়ে ওঠে। বাজার অর্থনীতি বলতে ৪টি প্রশ্নের উত্তর বাজার থেকে নিতে হয়। ১) কে উৎপাদন করবে? ২) কার জন্য উৎপাদন করবে? ৩) কত মূল্যে বিক্রি হবে? ৪) কি পদ্ধতিতে উৎপাদন হবে? এই ৪টি প্রশ্নের কোনো উত্তর সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিলে সেটা বাজার অর্থনীতিকে ব্যাহত করবে। বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধর্ম তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মীয় অনুশাসন প্রয়োগকল্পে যে ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়, তাদের ধর্মীয় ব্যাংক বলে।
ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সেবা দানের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে সেবা প্রধানের সামঞ্জস্য থাকলেও ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের নিম্নলিখিত পণ্য ও সেবা দেখতে পাওয়া যায়।
১) মুদারাবা : গ্রাহককে ব্যবসার মূলধন যোগান দেওয়া এবং ব্যবসায়ের শরিক হিসেবে তার মূলধন ব্যবস্থাপনা করা এই সেবার অংশ।
২) মুসারাকা : ব্যাংক এবং গ্রাহকের যৌথ উদ্যেগে ব্যবসায় পরিচালনার মাধ্যমে লাভ ও লোকসান সমবণ্টনের মাধ্যমে এই ধরনের কারবার পরিচালনা করা হয়।
৩) মুরাবাহা : ঋণগ্রহীতাকে কোনো কিছু (গাড়ি, যন্ত্রপাতি) ক্রয়ের জন্য যখন অর্থায়ন করা হয়, তখন তাকে মুরাবাহা সেবা বলা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক কিছু লাভসহ ঋণের অর্থ ফেরত পেয়ে থাকে।
৪) ইজারা : ব্যাংক কখনো কখনো ক্রেতার পক্ষ হয়ে গ্রাহকের অনুরোধে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রেতার ব্যবহারের জন্য তার কাছে হস্তান্তর করে। নির্দিষ্ট সময় শেষে গ্রাহক ব্যাংকের পণ্য ব্যাংকের নিকট ফেরত দেয় এবং ব্যবহারের সময়টুকুর জন্য ব্যাংককে নির্দিষ্ট পরিমাণে ভাড়া প্রদান করে।
এছাড়া ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কার্ল-এ-হাসান, বাই-মুয়াজ্জেল, বাই- সালামসহ অন্যান্য পণ্য বিভিন্ন ব্যাংকে দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত ইসলামি ব্যাংকসমূহ হচ্ছে :
১) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
২) আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
৩) সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
৪) এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড
৫) শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
৬) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
৭) আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
Read more