মূলার জাত আগামজাত-
মিনো আর্লি, স্নো হোয়াইট, রেড বোম্বাই, খাসি কাটা লাল, বারি মূলা-৩ (দ্রুতি) ইত্যাদি। মাধ্যমজাত- তাসাকি সান, মিনো আর্লি, বারি মূলা-২, পিংকি ইত্যাদি।
নাবিজাত-মিনো আর্লি ইত্যাদি।
জমি তৈরিকরণ ও সার প্রয়োগ
মূলার জমি খালোমেলা ও আলোকিত পরিবেশের হতে হবে। গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি মোলায়েম করে তৈরি করতে হয়। জমি মোলায়েম করার জন্য প্রয়োজনবোধে ৭-৮টি চাষ দিতে হয়। মূলার জমির মাটি যত মিহি হবে তত মূলার উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। জমি সমতল হতে হবে। জমির চারদিক দিয়ে জুলি রাখা যেতে পারে। আবার বেড করে চাষ করা যায় ।
মূলা বাড়ন্ত অবস্থায় প্রথম বয়সে বেশি পরিমাণে নাইট্রোজেন এবং শেষ বয়সে বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম গ্রহণ করে। মূলা চাষের হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো।
সার প্রয়োগের নিয়ম- মূলা চাষে ছিটানো প্রথায় বীজ বপন করলে মৌল সার শেষ চাষের পূর্বে সম্পূর্ণ জমিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়।
সমতল জমিতে লাইন করে বীজ বপন করলে- ইউরিয়া এবং এমওপি সার উপরি প্রয়োগ হিসেবে মাটিতে প্রয়োগের সময় হাত লাঙ্গল দিয়ে দু'সারির মাঝখান দিয়ে লাইন টানতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে নালা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের শেকড় ছিড়ে না যায়। লাইন টেনে লাইনে সার দেয়ার পর মাটি সমান করে দিতে হবে ।
সারি বা নালা প্রথায় বীজ বপন করলে- জমিতে নালা কেটে নালার মধ্যে সার প্রয়োগ করতে হবে। নালা মাটি দিয়ে ভরাট করে তার উপর হালকা উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। বেডের মাঝখান দিয়ে লাইন টেনে বীজ রোপণ করতে হবে। এরপর সার উপরি প্রয়োগের সময় বেডের পার্শ্ববর্তী নালায় ছিটিয়ে দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে ।
মূলার বাড়— বাড়তি ভালো থাকলে এবং গাছ যথেষ্ট সতেজ থাকলে দ্বিতীয় কিন্তুি ইউরিয়া দেয়া উচিত নয় । জৈব সার মৌল হিসেবে পূর্বে (জমি তৈরির সময়) দেওয়া বাঞ্চনীয়। অন্যথায় মূলার গায়ে শেকড় গজানোর প্রবণতা বাড়ে এবং কাঁচা সারের সংস্পর্শে মূলার পচন ধরে।
বীজ বপন ও অন্তবর্তী পরিচর্যা
জমিতে ১ মিটার চওড়া বেড করে ৩ সারি করে ৪০ সেমি. দূরে দূরে সারি করে বীজ বুনতে হয়। জোড়া সারি প্রথায় বীজ বপন করলে বেডের উপরে ২৫-৩০ সেমি. দুরত্বে সারি করতে হয়। সারিতে ১০-১২ সেমি. পর পর ২-৩টি করে বীজ বুনতে হয়। চারা গজানোর ৭-১০ দিন পর প্রতি স্থানে ১টি করে সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকীগুলো তুলে ফেলতে হয়। অনেক সময় সারিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ না বুনে লাইনে এক নাগাড়ে বীজ বুনা যায়। চারা গজানোর ৭-১০ দিন পর নির্দিষ্ট দূরত্বে ১টি করে চারা রেখে বাকীগুলো তুলে ফেলতে হয়।
এছাড়া বীজ বপনের আগে সারি বরাবর ১৫ সেমি. গভীর নালাকেটে তার উপরে বেড তৈরি করা যায়। ঐ বেডে বীজ বুনলে মুলা ভালভাবে বড় হতে পারে ও ফলন বেশি হয়। ছিটিয়ে বপন করলে গাছের ঘনত্ব বেশি হলে মুলা বড় হতে পারে না এবং ফলন কমে যায়। ভাল ফসলের জন্য ছিটিয়ে বপন করা জমিতে ১০-১২ সেমি দূরে দূরে গাছ রাখতে হয়। জমিতে সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা উচিত। এজন্য জমির চার ধার দিয়ে সেচ নিকাশের জন্য ৩০ সেমি. চওড়া ও ২০ সেমি. গভীর নালা তৈরি করতে হয়। মুলার জমিতে ভাসানো সেচ দেওয়া উচিত নয়। সেচের পরে মাটির চটা ভেঙ্গে আগলা করে দিতে হয়। অনেক সময় মুলা তিতা ও বিবাদ হওয়ার কথা শোনা যায়। পোকার আক্রমণ এর প্রধান কারণ নয়। উষ্ণ জলবায়ুতে চাষ করা হলে বা নাইট্রোজেনের চরম ঘাটতিতে বা কিউকার বিটাসিনের উপস্থিতির জন্যও এরূপ হতে পারে।
মূলার জমি সর্বদা আগাছামুক্ত, ঝুরঝুরে ও পর্যায়ক্রমে দুর্বল ও নিস্তেজ গাছ তুলে পাতলা করে দিতে হয়।
মুলার বীজ উৎপাদন- মুলার বীজ উৎপাদনের জন্য ফুল বের হওয়ার ঠিক আগে মূলা তুলে নিতে হয়। এরপর মূলার শীশালো অংশ ৪-৫ সেমি. ও পাতার গোড়ার ৫ সেমি, পাতাসহ ভঁটা রেখে অন্যান্য অংশ কেটে দিতে হয়। ঐ কাটা মূলা ১ দিন ছায়ায় রেখে কাটাস্থান শুকিয়ে নিতে হয়। পরবর্তী দিন বেড় আকারের তৈরি জমিতে রোপণ করতে হয় ৷ এছাড়া অন্যভাবেও বীজ উৎপাদন করা যায়। যেমন- ফুল আসার সাথে সাথে মাটির উপরে মূলার সম্পূর্ণ অংশ (পাতার নিচে) দুপাশ থেকে মাটি তুলে ঢেকে দিতে হবে। বীজের জন্য দুলাইনের মাঝখান দিয়ে হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি ইউরিয়া ও ১০০ কেজি পটাশ সার ছিটিয়ে দিতে হয়। সার দেওয়ার পর মাটিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিয়ে প্রয়াজনমত সেচ দিতে হয়।
বীজের মান ঠিক রাখার জন্য ৫০০ মিটারের ভেতরে অন্যজাতের মূলা চাষ করা যাবে না। ভালোমত যত্ন নিলে হেক্টর প্রতি ২.৫ থেকে ৩.৫ টন বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
পোকামাকড় দমন- সমন্বিত বালাই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
জাব পোকা- এ পোকা পাতার কঁচি অংশের রস শুষে খেয়ে গাছের সমূহ ক্ষতি করে। এ পোকা পাতার নিচে, কাণ্ডে বসে রস খায়। দমনের জন্য ১.১২ সিটার ডাইমেথােেয়ট ঔষধ ৫৬০-৭০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে এক হেক্টর জমিতে স্প্রে করতে হবে। ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ঔষধ ৬০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে এক হেক্টর জমিতে স্প্রে করতে হবে।
বিছা পোকা- এ পোকার রং গোলাপী থেকে হালকা সবুজ হতে পারে। তবে কীড়ার গায়ে কালা েকালাডোরো দাগ দেখা যায়। কীড়াগুলো কাণ্ডের কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে। জাব পোকা দমন পদ্ধতির ন্যায় এ পোকা দমন করা যায়।
রোগবালাই- মূলার রোগবালাই তেমন হয় না। মূলার অন্তসার কালো এবং অন্তসার ফাঁপা রোগ- সাধারণত মূলার বৃদ্ধির সময় নাইট্রোজেন সারের আধিক্য এবং পটাশিয়ামের অভাবে এ রোগ হতে পারে। এটি রোগ হিসেবে গণ্য করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি দেহক্রিয়াগত সমস্যা ।
সেচ ও নিকাশ- মাটিতে রস কম থাকলে ৭-১০ দিনের মধ্যেই সেচ দিতে হয়। মূলার জমিতে পাবন সেচ দিলে জমিতে চটা পড়ে ও মাটি তাড়াতাড়ি শুকায়ে যায়। জমিতে পানি জমে থাকলে মূলার চারা নষ্ট হয়ে যায় । কোন সময় মূলার জমিতে যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য মাঝে মাঝে নালার ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ- বীজ বপনের তিন সপ্তাহ পর থেকে মূলাশাক উঠানো যায় ৷ কিন্তু মূলা উঠানোর উপযোগী হতে প্রায় ৬-৭ সপ্তাহ সময় লাগে । এ সময়ে প্রতিটি মূলার ওজন প্রায় ৮০০-৯০০ গ্রাম হয়ে থাকে। তাসাকী সান মূলা ৬০-৬৫ দিনের মধ্যেই না উঠালে ফাঁপা ও আঁশযুক্ত হলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। মূলার উদ্দেশে চাষ করা হলে ৬০-৮০ দিনে মূলা উঠাতে হয়। আর বীজ তৈরির উদ্দেশে মূলা চাষ করলে ১২০-১৫০ দিনে বীজ উঠানোর উপযোগী হয় ।
ফলন- জাতভেদে ও যত্নের ওপর নির্ভর করে হেক্টর প্রতি ৩০-৫০ টন হতে পারে।
লাল শাকের চাষ
লাল শাকের জাত- আলতা পেটি, বারি লালশাক-১, পিংকি কুইন, রক্তলাল ইত্যাদি ।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
প্রথমে ৫-৬টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে এবং আগাছা পরিষ্কার করে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। রবি মৌসুমে লালশাকের বীজ সরাসরি জমিতে বপন করা যেতে পারে। তবে খারিফ মৌসুমে লালশাকের বীজ অবশ্যই বেড করে বপন করা উচিত। এক মিটার প্রশস্ত বেডের পাশে ৩০ সেমি. প্রশস্ত এবং ১৫-২০ সেমি. গভীর করে নালা করতে হবে। এতে সেচ ও পানি বিকাশের সুবিধা হবে। বেড আকারে তৈরি করা না হলে জমিকে কয়েক খন্ডে বিভক্ত করে নিতে হবে। প্রতি খন্ডের পাশ দিয়ে লাঙ্গল দ্বারা হালকা নালা তৈরি করতে হবে। প্রত্যেকটি জুলি জমির চারিদিক দিয়ে পানি বের হওয়ার ড্রেনের সাথে সংযোগ করে দিতে হবে।
প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ টন গোবর সার এবং ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম (প্রয়োজনে) ও পঁচা খৈল যথাক্রমে ৬০, ৬০, ৬০, ৫০ ও ২৫০ কেজির প্রয়োজন হয়। অর্ধেক ইউরিয়া ও অন্যসবগুলো সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মিশানোর পর জমির উপরিভাগ সমান করে দিতে হয়। বাকী অর্ধেক ইউরিয়া সার বীজ গজানোর ১০-১৫ দিন পর ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সারের উপরি প্রয়োগের পর মাটিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে ।
খৈল প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন- খৈল গুড়া করে হালকাভাবে ভিজিয়ে প্রায় ২-৩ সপ্তাহ জাগ দিয়ে রাখতে হবে। এরপর খৈল পঁচে দুর্গন্ধমুক্ত হলে একমাত্র তখনই জমিতে প্রয়োগ করা যাবে। অন্যথায় শাকের অনেক ক্ষতি করতে পারে। পঁচা খৈল ছিটানোর সুবিধার্থে ছাই বা দোঁ-আশ মাটি মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে নেয়া যেতে পারে।
বীজ বপন ও অন্তবর্তী পরিচর্যা- রবি মৌসুমে-আশ্বিন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় ।
কার্তিকের শেষে (নভেম্বরের প্রথমে)- এ সময় বপন করলে লাল শাকের সবচেয়ে বেশি ফলন হয়, তবে লাল শাকের উৎপাদন আমাদের দেশের জলবায়ুতে বছরের যেকোন সময় হয়ে থাকে। লাল শাক উৎপাদনে প্রতি হেক্টর জমিতে বীজের পরিমাণ নিচে দেয়া হল। যথা-
(ক) ছিটিয়ে বপন করলে-৪ থেকে ৫ কেজি এবং (খ) সারিতে বপন করলে ২ থেকে ২.৫ কেজি।
সাধারণত সম্পূর্ণ জমিকে কয়েক খন্ডে ভাগ করে নেয়া উচিত। তারপর সমস্ত জমিতে একবারে বীজ না বুনে ২-৩ সপ্তাহ পর পর বিভিন্ন খণ্ডে বীজ বপন করলে সব সময় শাক উঠানোর সুযোগ হয়। রসের ঘাটতি থাকলে বীজ বপনের পূর্বে সেচ দিয়ে জো আসার পর বীজ বপন করা উচিত। বীজ বপনের পর সেচ দিলে বীজ মাটির গভীরে চলে যায়। এতে বীজ গজানোর হার হ্রাস পায় ।
জমিতে সমানভাবে বীজ বপনের সুবিধার জন্য একভাগ বীজ এবং নয় ভাগ বালি বা ছাই এক সাথে মিশিয়ে নিতে হয়। এরপর বালি মিশ্রিত বীজ সমভাবে ছিটিয়ে হালকাভাবে কুপিয়ে বা আঁচড়া দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। আঁচড়া দেওয়ার পর হালকাভাবে মই দিয়ে জমি সমান করে দিতে হয়।
পরিচর্যা- বীজ গজানোর ১ সপ্তাহ পরেই ঘন জায়গা হতে অতিরিক্ত চারাসহ দূর্বল চারাগুলো তুলে ফেলতে হয়। সারিতে বপন করা হলে সারিতে ৩-৪ সেমি. দূরে দূরে ১টি করে গাছ রেখে বাকীগুলো তুলে ফেলতে হয়। ছিটিয়ে বপন করা জমিতে প্রতি বমি. এ ১০০-১৪০টি গাছ রাখতে হবে। নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত ও মাটি আগলা রাখতে হবে। পানি সেচ ও নিকাশের সুবিধার্থে ৭-১৫ মিটার দূরে দূরে আড়াআড়িভাবে নালা করে দিতে হয়। সেচ দেয়ার বা বৃষ্টি হওয়ার পর পরই 'জো' আসার সাথে সাথে মাটি আগলা করে ঝুরঝুরে করে দিতে হয়। এর ফলে মাটি শক্ত হয় না, রস থাকে এবং আগাছা হতে পারে না।
পোকামাকড়- শুয়া পোকা ও শাকের পাতা খেয়ে ঝাঁঝরা করে ফেলে। ফেনিট্রোথিয়ন ১-২ মিলি, প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে দমন করা যায়।
রোগবালাই- মরিচা রোগ- গাছের শিকড় ছাড়া সকল অংশেই মরিচা রোগ আক্রমণ করে। এর আক্রমণে নিচে সাদা অথবা হালকা হলুদ দাগ দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারণ করে এবং পাতা মরে যায়। এ রোগ দমনের জন্য ১০০০ লিটার পানিতে ১৫০০ গ্রাম ডায়াথেন এম-৪৫ বা কপারঘটিত বালাইনাশক মিশিয়ে স্প্রে করা যায়।
সেচ ও নিকাশ- লালশাকের জমিতে রস বা জো থাকলে শাক নরম ও রসালো থাকে। লালশাক যেহেতু অল্প দিনের ফসল, তাই বিশেষ প্রয়োজন হলে ১ বার সেচ দিলেই যথেষ্ট। সেচের পানি কোথাও জমে থাকলে সেখানকার শাক ফ্যাকাশে লালচে হয়ে শক্ত হয়ে যায় এবং বাড়ন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তাই সেচের বা বৃষ্টির পানি যাতে সহজে নিকাশ হতে পারে সেজন্য চারিদিক দিয়ে নালা করে রাখতে হয়। এছাড়া বেড় করে চাষ করলে জমিতল অপেক্ষা ৫-৭ সেমি. উঁচু করলে আর পানি বন্ধ হয়ে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ- ছায়ার সময় বা বিকালে শাক উঠিয়ে ২৫০ গ্রাম হতে ৫০০ গ্রাম করে মুঠি বেধে হালকা পানি ছিটিয়ে দিতে হয়। বাজারে পাঠাতে বিলম্ব হলে রাতে বাঁধন খুলে শিশিরে রাখতে হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ১০-১৫ টন।
ডাটা শাকের চাষ
ডাটা বাংলাদেশের একটি প্রধান পাতা ও কাষ্ঠজাতীয় সবজি। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। সারা বছরই বিশেষ করে বর্ষাকালে সবজির চাহিদা মেটাতে এর অবদান যথেষ্ট। এর কাণ্ড শাখা-প্রশাখা ও পাতা সবজিরূপে ব্যবহৃত হয় । উঁটায় ক্যারোটিন, ভিটামিন 'সি' আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে।
ডাঁটার জাত ঃ ভঁটার জাতসমূহের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো।
(১) প্রেয়সী (২) বাসপাতা (৩) কাটুয়া (৪) আমনী (৫) সুরেশ্বরী (৬) ছত্রভাগে (৭) রূপসী
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগঃ বেলে দোঁআশ থেকে এঁটেল দোঁআশ মাটি ডাঁটা চাষের জন্য উপযাগী। ডাঁটা চাষে আইলের আকার ঃ দৈর্ঘ্য ২২ মিটার এবং প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটার। তবে দৈর্ঘ্য প্রয়াজনে বেশি হতে পারে। আইল নির্বাচন ও মধ্যম চওড়া ধরনের উঁচু আইল বেশি উপযোগী ।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগঃ বেলে দোঁআশ থেকে এঁটেল দোঁআশ মাটি ডাঁটা চাষের জন্য উপযাগী। ডাঁটা চাষে আইলের আকার ঃ দৈর্ঘ্য ২২ মিটার এবং প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটার। তবে দৈর্ঘ্য প্রয়াজনে বেশি হতে পারে। আইল নির্বাচন ও মধ্যম চওড়া ধরনের উঁচু আইল বেশি উপযোগী ।
আইল তৈরি ও আইল কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি নরম করে তৈরি করতে হয়। আইলে কোনো ঢেলা রাখা যাবে না। কারণ বীজ ক্ষুদ্র বিধায় ঢেলার নিচে পড়লে বীজ গজাতে পারবে না।
সারের পরিমাণঃ আইল বা হেক্টর প্রতি নিচে উল্লেখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
সার ব্যবহারের নিয়ম- আইল তৈরির সময় সব গোবর, টিএসপি, এমওপি সার জিপসাম ও দস্তা সার আইলের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া সার বীজ বপনের ১০-১৫ দিন পর পর দুই কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের পর মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয় এবং পানি সেচ দিতে হয়।
বীজ বপন হারঃ প্রতি আইলে ৫ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়। ২০ × ২২ ফিট (১ শতক) জমিতে ১ তোলা বীজ লাগে ।
বীজ বপন সময়ঃ সারা বছরই ডাঁটাশাক চাষ করা যায়। তবে বর্ষাকালে ভালো জন্মে। বীজ একবারে না বুনে ৩ ৪ সপ্তাহ পর পর আইলে কয়েক দফায় বুনলে সব সময় ডাঁটা শাক উৎপাদনের সুযোগ থাকে ।
বীজ বপন ও অন্তবর্তী পরিচর্যা- আইলের মাটির উপরিভাগে ছিটিয়ে বপনের পর হালকা করে মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হয়। ডাঁটাশাকের বীজ আকারে ছোট ও পিচ্ছিল বলে বপনের পূর্বে বীজের সাথে শুকনো গুঁড়া মাটি ১৪৯ অনুপাতে মিশিয়ে নিতে হয়। বীজ বপনের পর হালকাভাবে আঁচড়া টেনে দিলেও বীজ মাটিতে মিশে যায় ।
অঙ্কুরোদগমের সময়ঃ ৪-৫ দিন।
বীজ বপনের গভীরতাঃ বীজ বপনের গভীরতা ১-২ সেন্টিমিটার।
আগাছা দমনঃ লালশাকের বীজ গজাননার সাথে সাথে আগাছাও জন্মে। তাই শাকের ২-৩টি পাতা গজানোর পর হাত দিয়ে ছোট ছোট আগাছা তুলে ফেলতে হয়।
সেচ – আইলের মাটি জো' ধরে রাখার জন্য পানি সেচ দিতে হয়। বীজ গজানোর সময় পর্যন্ত মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হয়।
মাটি আগলাকরণঃ সেচ প্রয়োগর ফলে বা বৃষ্টির কারণে মাটির উপরিভাগে শক্ত করে চটা বাঁধতে পারে। এতে শাকের গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য মাঝে মাঝে চটা ভেঙে দিয়ে মাটি আগলা করে দিতে হয়।
গাছ পাতলাকরণঃ অতিরিক্ত ঘন হয়ে চারা গজালে ২-৪টি পাতা গজাননা অবস্থাতেই কিছু চারা উঠিয়ে ফেলতে হয়। এরপর চারা যত বড় হতে থাকে শাক হিসেবে মাঝে মাঝে তা উঠিয়ে পাতলা করে দিতে হয়।
মরিচা রোগঃ এ রোগ ডাঁটা গাছের শেকড় ব্যতিত আর সকল অংশেই আক্রমণ করে। এ রোগের আক্রমণের ফলে পাতার নিচে সাদা অথবা হলুদ দাগ দেখা যায়। পরে ডাটা লালচে বা মরিচা রঙ ধারণ করে ও পাতা মরে যায়। গাছ পত্রহীন হয় ও ঝাড়ুর ন্যায় হয়ে যায়।
গোড়া পচা ও সেঁকড় পচা রোগঃ এ রোগের আক্রমণে ডাঁটা গাছের মাটির সংলগ্ন কাণ্ড ও শেকড় পঁচে যায়। ফলে গাছ মরে যায়।
সেচ ও নিকাশঃ লালশাকের ন্যায় ডাঁটা বপনের পর বৃষ্টিতে জমির উপর চটা হলে দ্রুত তা ভেঙ্গে দিতে হবে। অন্যথা চটার নিচে বীজ গজায়ে মারা যাবে। বৃষ্টির পানি ২/১ দিন বেঁধে থাকলে গজাননা বীজ হালকা হলুদাভ হয়ে মারা যাবে। এমনকি মারা না গেলেও ছোট হয়ে থাকে এবং শক্ত হয়ে যায়। তাই ডাঁটা বীজ বপনের আগেই জমির চারদিক দিয়ে লাঙ্গল দিয়ে নালার ন্যায় জুলি টেনে দেয়া দরকার। এতে পানি সহজেই জমি থেকে বের হয়ে যেতে পারবে।
ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণঃ বীজ বানোর ২০-২৫ দিন পর শাক খাওয়া যায়। তবে শাক হিসেবে এক থেকে দেড়মাস পর খাওয়া যায়। গাছে ফুল বা আঁশ হওয়ার আগেই ডাঁটা সংগ্রহ করা দরকার। কাটুয়া উটি বা বাঁশপাতা ডাঁটার ফুল হলেও চটচটি হিসেবে তরকারিতে ব্যবহার করা যায়। বয়ক ডাঁটা উঠায়ে ১-২ দিন পর্যন্ত ছায়ায় রেখে বাজারজাত করা যায়। হেক্টর প্রতি ২০-৪০ টন পর্যন্ত ফলন হয়।
পালং শাকের জাত
সাধারণত মিষ্টি পালং ও টক পালং দেখা যায়। শীত প্রধান দেশের শীনাহ ও সুইস চার্ড জাতের মিষ্টি পালং উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত গুণাগুণসম্পন্ন। এ জাতের পালং এ এদেশে বীজ উৎপন্ন হয় না। যার ফলে এখনো চালু হয় নাই। তবে সর্বত্র চাষকৃত কফি পালং, মিষ্টি পালং, পুষা জয়তী, গ্রিন, সবুজ বাংলাজাত চাষ হচ্ছে।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
পালংশাক উর্বর জমিতে চাষ করা উচিত। জমি ৫-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটির ঢেলা গুড়া ও ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হয়। পালং শাকের জমি সমতল হতে হয়। অন্যথা কোথাও পানি জমে থাকলে সেখানের পালং-এর বৃদ্ধি দারুণভাবে ব্যাহত হয়।
হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিচে দেয়া হলো-
পচা গোবর-৫ টন | টিএসপি ৭৫ কেজি |
ইউরিয়া- ২০০ কেজি | এমএপি-৬০ কেজি। |
অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক পটাশ বাদে অন্যান্য সার শেষ চাষের আগে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও পটাশ সার সমান ২ থেকে ৩ কিভিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। উপরি প্রয়োপর সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০ দিন পর পর ২-৩ কিরিতে দেওয়া যেতে পারে। চারা গজানোর ৪০-৫০ দিন পর শাক সংগ্রহের উপযোগী হয়। বেশিদিন ধরে শাক পেতে হলে প্রতি ৩ সপ্তাহে একবার শাক মাটির সমতল হতে ৩-৫ সেমি. উপরে কর্তন করতে হয়। শাক কাটার পর অবশিষ্ট সারের উপরি প্রয়োগ করা হলে শাঁক দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে সার উপরি প্রয়াগের পর সেচ দিয়ে মাটি আপনা করে দিতে হয় ।
বীজ বপন ও অন্তবর্তী পরিচর্যা- পালংশাকের বীজের বহিরাবরণ শক্ত ও খসখসে। তাই তাড়াতাড়ি গজানোর জন্য ভিজিয়ে নিতে হয়। পালং বীজ সারিতে বা ছিটিয়ে বপন করা যায়। বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে সহজে গজায়। শীতকালীন সবজির জন্য সরাসরি জমিতে ১ মিটার বেড তৈরি করে ৭.৫৮ ২০ সে.মি, দুরুত্বে সারি ও লাইন করে বীজ বপন করা যায়। সারিতে ছিটিয়ে বপন করলে চারা গজানোর পর খাপে ধাপে পাতলা করে দিতে হয়। বহুসারি পদ্ধতিতে ১৫ সেমি. পর পর সারি করে বীজ বপন করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে প্রতি ৫ সারি পর পর ৫০ সেমি. ফাঁকা রাখতে হয়। এতে পরিচর্যার কাজ সহজে করা যায় ।
পানি নিকাশের ব্যবস্থা থাকলে গ্রীষ্মকালে পালংশাক চাষ করা যায়। কিন্তু ফলন ভালো হয় না। এ সময় ১ মিটার বেড তৈরি করে ভিন্ন ভিন্ন বেড়ে ১৫ থেকে ২০ সেমি. দূরে দূরে সারিতে বীজ বপন করতে হয়।
বীজের পরিমাণ- প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ কেজি বীজ লাগে। বীজ সারিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বা সারিতে ছিটিয়ে বপন করা যায়। তবে বহুসারি পদ্ধতিতে বপন করলে হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি বীজ লাগে। সারিতে প্রতি গর্তে ২/৩টি করে বীজ দিতে হয়। পরিমিত সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হয়। মাটি সব সময় আগলা রাখতে হয়। সারের উপরি প্রয়োগ দেওয়ার সময় জমি আগাছামুক্ত করতে হয়। তাতে পাক তাড়াতাড়ি বাড়ে ও সতেজ থাকে।
রোগ ও পোকামাকড়- মাঝে মাঝে পিপড়া, উরঙ্গা, উইপোকা এবং পাতা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হয়। পালং শাকে তেমন কোন মারাত্মক রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না। তবে গোড়া পচা, পাতায় দাগ ও পাতা ফালা রোপ মাঝে মাঝে দেখা যায়। রোগ ও পোকা দমন সম্পর্কে অন্যান্য সবজিতে উল্লেখ আছে।
সেচ ও নিকাশ- এ শাকে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। বীজ গজানোর পর মাটি শুকনাভোব থাকলে হালকা সেচ দিতে হয়। পানিবদ্ধ হলে চারা নষ্ট হয়ে যায়। তাই পালংশাকের জমি হতে দ্রুত পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ফসল সগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ- চারা গজানোর ৪০-৪৫ দিন পর হতে শাক সংগ্রহ করা যায়। চারার গোড়া হতে ৩-৫ সেমি. উপরে কাটলে কুঁশি গজায় এবং একবার রোপণ করে একই জমি হতে ৩-৪ বার ফসল পাওয়া যায়। এর পাতা খুব রসালো ও নরম তাই উঠানোর পর আলতোভাবে রেখে দ্রুত বাজারে পাঠাতে হবে। গাদা করে গরম স্থানে রাখলে দ্রুত পচন শুরু হয়।
ফলন- প্রতি হেক্টরে ১৫-২০ টন শাক ও ৫০০-৭০০ কেজি বীজ জনে।
এক কথায় উত্তর
১. তাসাকিসান কী সবজির জাত ?
২. মূলা চাষে কোন সার মৌল হিসেবে না দিলে মূলার গায়ে শেকড় বেশি হয় ?
৩. মূলার বীজের মান ঠিক রাখার জন্য কত মিটারের মধ্যে অন্য জাত চাষ করা উচিত নয়?
৪. কোন জাতের মূলা ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে না উঠালে ভেতরে ফাঁপা হয়ে যায় ?
৫. পিংকি কুইন কোন শাকের জাত ?
৬. লালশাক ছিটিয়ে বপন করলে ১ হেক্টরে কত কেজি বীজ লাগে?
৭. ডাঁটাশাকের একটা জাতের নাম লেখ।
৮. ডাঁটাশাকের বীজ গজাতে কতদিন সময় লাগে ?
৯. পালংশাক কয় জাতের পাওয়া যায়?
১০. গ্রীষ্মকালে পালংশাক চাষের কী সুবিধা থাকা প্রয়োজন ?
সংক্ষিত প্রশ্ন
১. মূলা চাষের জমি তৈরি সম্পর্কে লেখ।
২. মূলার বীজ উৎপাদনের কৌশল সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
৩. মূলার জাব ও বিছা পোকার দমন ব্যবস্থা বর্ণনা কর ।
৪. লালশাক চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি সারের পরিমাণ উল্লেখ কর ।
৫. ডাঁটাশাকের কয়েকটি জাতের নামসহ বীজ বপন ও রোপণ সময় সম্পর্কে বর্ণনা কর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. মূলার চাষ পদ্ধতি আলোচনা কর ।
২. লালশাকের জাতসহ জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
৩. ডাঁটা শাকের বীজ বপন, পরিচর্যাসহ রোগ ও পোকামাকড় দমন সম্পর্কে বর্ণনা কর।