একটি চেয়ার তৈরি করার কথা চিন্তা করা যাক। চেয়ারের পায়ের উচ্চতা যদি ৪৬ সেন্টিমিটার হয় তবে হেলান দেওয়ার অংশ কতটুকু উঁচু হলে বসতে আরাম হবে ও দেখতে সুন্দর লাগবে? চেয়ারের হাতলের নকশার সাথে কি পায়ের নকশার মিল থাকবে? মধ্যবিন্দু থেকে দুই হাতলের দূরত্ব সমান হতে হবে। চেয়ারটিতে কি এমন নকশা দেওয়া যায় যে সবার দৃষ্টি প্রথমে সেখানে যাবে? একই রকমের ছয়টি চেয়ার ব্যবহারে খাবার ঘরের সৌন্দর্য কতটুকু বাড়বে?
এসব মাথায় রেখে যদি কোনো সামগ্রী তৈরি হয় তবে অবশ্যই তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে এবং নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাবে। চেয়ারটি তৈরি করতে যেসব বিষয় লক্ষ করার কথা ভাবা হয়েছে সেগুলো যেকোনো শিল্প সৃষ্টিতেই প্রয়োজন। তাই এভাবে বলা যায়, শিল্প সৃষ্টির জন্য যে নীতিগুলো অনুসরণ করার দরকার হয় সেগুলোই শিল্পনীতি।
শিল্পনীতিগুলো হলো- ক) সমানুপাত (Proportion) খ) ভারসাম্য (Balance) গ) মিল (Harmony) ঘ) ছন্দ (Rythm) ও ৬) প্রাধান্য (Emphasis)
ক) সমানুপাত-সৃষ্টিকে আকর্ষণীয় ও মজবুত করার জন্য এই নীতি অনুসরণ করা হয়। একটি অংশের সাথে আরেকটি অংশের আকার আকৃতি ও অনুপাতের সামঞ্জস্য থাকাই সমানুপাত। এটি অনুধাবনের ব্যাপার। তখন কোনো কিছু আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, যখন কোনো বৈশিষ্ট্যের আধিক্য থাকে না আবার স্বল্পতাও থাকে না, তখনই অনুপাত ঠিক আছে বলা হয়।
খ) ভারসাম্য-স্কুলে খেলার মাঠে বা পার্কে আমরা ঢেঁকিতে চড়ে খেলি। বসার পর ঢেঁকির দুদিকে যদি সমান ওজন না হয় তাহলে ঢেঁকি খেলা সম্ভব হয় না। আবার একদিকে বেশি ভারী হলে অন্যদিকে হাল্কা ওজনের দুজন বসেও খেলাটা চালিয়ে নেওয়া যায়। এটিই ভারসাম্যের নীতি। কোনো মধ্যবিন্দুর উভয় দিকে সমান দূরত্বে একই আকার আয়তনের বস্তু স্থাপন করে ভারসাম্য রাখা হয়।
গ) মিল-কোনো ঘরে প্রবেশ করলে যখন দেয়াল থেকে শুরু করে মেঝে, আসবাবপত্র, পর্দা, আলো ইত্যাদি সবকিছুর মধ্যে একটা সম্পর্ক ফুটে ওঠে, দেখতে কোনো রকম অসমন্বয় লাগে না, তখন বুঝতে হবে ঘর সাজানোতে মিল রাখা হয়েছে। এটা হতে পারে একটি জিনিসের বিভিন্ন অংশের মিল। আবার জিনিসটির সাথে অন্যান্য সকল উপকরণের মিল।
ঘ) ছন্দ-এটি একটি আকর্ষণীয় গতিশীল অবস্থা। কোনো শিল্প দেখার সময় চোখ কোনো কিছুতে যেন বাধাপ্রাপ্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। কোনো কিছু পুনরাবৃত্তি করার মাধ্যমে ছন্দের সৃষ্টি হয়। শিল্পকে প্রাণবন্ত ও চলমান করতে ছন্দের দরকার হয়।
ঙ) প্রাধান্য-শিল্প তৈরির সময় কোনো একটি অংশকে অন্য অংশের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটা এমনভাবে তৈরি হয় যেন একটি বিশেষ অংশের উপর আগে দৃষ্টি পড়ে। যেমন ঘরে ঢুকলে কোথাও ফুল সাজানো থাকলে সেটা আগে চোখে পড়ে। আবার ফুল সাজানোর সময় ছোট ছোট ফুলের সাথে বড় একটি গাঢ় রঙের ফুল দিয়েও প্রাধান্য সৃষ্টি করা যায়।
সৃজনশীল চিন্তাধারার কলাকৌশলপূর্ণ প্রকাশ হলো শিল্প। শিল্প মানুষকে আনন্দ দেয়, আকর্ষণ করে। শিল্প সৃষ্টির দক্ষতা একটি বিরাট সম্পদ যা আমাদের প্রত্যেকের মাঝে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সঠিক উপায় না জানার কারণে অনেক সময় তা কাজে লাগানো যায় না। সঠিক উপায় জেনে, মনের সৃজনশীল চিন্তাধারা কাজে লাগিয়ে যে কেউ কোনো কাজকে সুন্দর ও আনন্দদায়ক করতে পারে। তবেই শিল্প সৃষ্টির উদ্দেশ্য সার্থকতা লাভ করে।
কাজ ১- পাঁচটি শিল্প অনুসরণ করে পাঁচ ধরনের ছবি আঁকো। শিল্পনীতি অনুসারে ছবিগুলোর ক্যাপশন লেখো। |