রং (Colour) আমাদের চারপাশে নানা ধরনের রঙের ব্যবহার দেখা যায়। রং দেখার জন্য আলোর প্রয়োজন হয়। রংকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা হয়।
১. প্রাথমিক রং (Primary Colour)- যে রং অন্য কোনো কোনো রং থেকে তৈরি করা যায় না, সেগুলোই প্রাথমিক রং। লাল, নীল, হলুদ হলো প্রাথমিক রং। | ![]() |
২. মাধ্যমিক রং (Secondary Colour)- একই পরিমাণ দুটি প্রাথমিক রং মেশানো হলে যে রঙের সৃষ্টি তাই মাধ্যমিক রং। মাধ্যমিক রংগুলো হলো- ⅰ) লাল + হলুদ = কমলা ii) হলুদ নীল সবুজ iii) নীল + লাল = বেগুনি | ![]() |
৩. সংমিশ্রিত রং (Tertiary Colour)- সমান পরিমাণ একটি প্রাথমিক রং এবং একটি মাধ্যমিক ,রঙের মিশ্রণে সংমিশ্রিত রং তৈরি করা যায়।
i) লাল+কমলা = লালচে কমলা
ii) কমলা হলুদ হলদে কমলা
iii) হলুদ + সবুজ হলদে সবুজ
iv) সবুজ + নীল = নীলচে সবুজ
v) নীল + বেগুনি = নীলচে বেগুনি
vi) বেগুনি + লাল লালচে বেগুনি
বর্ণচক্র ১২টি রং চক্রাকারে সাজিয়ে বর্ণচক্র তৈরি করা হয়। বর্ণচক্র দিয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, সংমিশ্রিত রঙের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট বোঝা যায়। এ থেকে খুব সহজেই গৃহের আসবাবপত্রের রং, গৃহসজ্জার অন্যান্য উপকরণর রং নির্বাচন করা যায়।
রঙের বিভিন্ন প্রভাব- একেক ধরনের রং আমাদের মনে একেক ধরনের অনুভূতি জাগায়।
উষ্ণ রং - বর্ণচক্রের উজ্জ্বল রংগুলোকে গরম বা উষ্ণ রং বলা হয়। যেমন-লাল, হলুদ, কমলা।
শীতল রং- বর্ণচক্রের হালকা রংগুলোকে ঠান্ডা বা শীতল রং বলা হয়। যেমন- নীল, নীলচে সবুজ, সবুজ।
গৃহসজ্জাকে আকর্ষণীয় করতে খুব সতর্কতা ও যত্নের সাথে রং নির্বাচনের প্রয়োজন হয়।
কাজ ১- তোমরা হাতেকলমে রং মিশিয়ে বর্ণচক্রের জন্য রং তৈরি করো এবং বর্ণচক্র আঁকো। |
রেখা, আকার ও জমিন
রেখা (Line)
রেখা একটি অন্যতম শিল্প উপাদান। কোনো গতিশীল বিন্দুকে রেখা বলা হয়। রেখা সরু ও মোটা হতে পারে, আবার যেকোনো দৈর্ঘ্যের হতে পারে।
উপরের ছবিগুলোতে বিভিন্ন রকম রেখা দিয়ে নকশা তৈরি করা হয়েছে। এই নকশাগুলো কি তোমার কাছে একইরকম আবেদন সৃষ্টি করছে? এই নকশাগুলো প্রতিটিই পৃথক পৃথক ভাব উপস্থাপন করছে। আঁকাবাঁকা রেখা দিয়ে নকশাটিতে নতুনত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। লম্ব রেখা আপাত দৃষ্টিতে উচ্চতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আড়াআড়ি রেখা দিয়ে জায়গাটিকে আরও প্রশস্ত বা মোটা মনে হচ্ছে। কৌণিক রেখায় নকশাটির অতিরিক্ত সৌন্দর্য ও নতুনত্ব ফুটে উঠেছে। জিগজ্যাগ রেখা অন্যান্য রেখার চেয়ে বেশি গতিশীল ও বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম। গৃহকে আকর্ষণীয় করে সাজাতে রেখার এসব বৈশিষ্ট্য জানা অত্যন্ত জরুরি।
আকার (Form)
কোনো কিছুর সামগ্রিক গঠনকে আকার বলে। আকার যদি ঠিক না থাকে তবে পুরো শিল্পটিই দেখতে অসুন্দর হয়ে যায়। দুই ধরনের আকার আছে। যথা:
১) মুক্ত আকার- জ্যামিতিক আকার ছাড়া সব ধরনের আকার মুক্ত আকার। যেমন- গাছের আকার, ফুলের আকার।
২) জ্যামিতিক আকার- বৃত্ত, চর্তুভুজ, ত্রিভুজ, আয়তক্ষেত্র ইত্যাদি।
কোনো বস্তুকে কাজের উপযোগী করে তোলার জন্য আকার তৈরির প্রয়োজন হয়। যেমন-কাঠকে কেটে জোড়া দিয়ে বসার জন্য চেয়ারের আকার ও কাঠামো তৈরি হয়। বস্তু যদি সঠিক আকারের হয়, তবে তা দিয়ে কাজ করা সহজ হয়। যেমন-চেয়ারের আকার ঠিক না হলে বসে আরাম পাওয়া যায় না। বিভিন্ন আকার ব্যবহার করে নকশায় বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা যায়। যেমন- খাবার টেবিলের আকার কখনো চারকোনা, কখনো গোল, আবার কখনো ডিম্বাকৃতি হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জায় পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন ও রুচি অনুযায়ী বিভিন্ন নকশার আকার নির্বাচন করা হয়।
কাজ ১- বিভিন্ন ধরনের রেখা ব্যবহার করে পাঁচটি নকশা আঁকো। কাজ ২- জ্যামিতিক আকার ও মুক্ত আকার দিয়ে দুটি নকশা আঁকো। |
জমিন (Texture)
সকল বস্তুর উপরিভাগের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন- মাটির দেয়াল, টাইলস-এর মেঝে, আসবাবপত্র ও কার্পেটের উপরিভাগ। এদের মধ্যে কোনোটি খসখসে, কোনোটি চকচকে মসৃণ, আবার কোনোটি উঁচু নিচু হয়ে থাকে। বস্তুর উপরিভাগের বৈশিষ্ট্যই জমিন। চোখে দেখে এবং স্পর্শ করে জমিনের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়। জমিন শিল্প সৃষ্টির অন্যতম একটি উপাদান। গরম ও ঠান্ডা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জমিন বড় ভূমিকা পালন করে। যেমন- ভারী ও মোটা জমিনের পর্দা ও কার্পেট শীতকালে ঘরকে গরম রাখে। আবার গ্রীষ্মে হালকা ও পাতলা জমিনের পর্দা ঘরে ঠান্ডার অনুভূতি দেয়। বিভিন্ন ঘরে খোদাই বা নকশা করা আসবাবপত্র বা উঁচু ও নিচু জমিনের গৃহসজ্জার উপকরণ গৃহকে যেমন- আকর্ষণীয় করতে পারে, আবার চকচকে মসৃণ জমিনের মেঝে, জানালার কাচ, পর্দার কাপড় দিয়েও গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জার সৌন্দর্যকে অনেকগুণ বাড়ানো যায়।
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জমিন
কাজ ৩- পাঁচ ধরনের উপকরণের নাম লেখো যাদের জমিন আলাদা। |