পুরাকালে চৈত্র বংশে সুরথ নামে এক রাজা ছিলেন। একবার তিনি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে রাজ্যচ্যুত হন। তখন রাজা সুরথ রাজ্য ছেড়ে বনে বনে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধা নামে এক মুনির আশ্রমে এলেন। তাঁর মনে জেগে রইল হারানো রাজ্যের জন্য দুঃখবোধ আর প্রজাদের জন্য মমতা। একই সময়ে সেই বনে এলেন সমাধি নামক এক বৈশ্য। ব্যবসা করে তিনি প্রচুর ধনসম্পদ করেছেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ও পুত্রগণ তা অসৎ পথে ব্যয় করতে চায়। তিনি বাধা দিয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী ও পুত্ররা তাঁকে অপমান করেছে। তিনি মনের দুঃখে বনে চলে এসেছেন। কিন্তু তাঁকে যারা অপমান করেছে, কষ্ট দিয়েছে, তিনি তাদের ভুলতে পারছেন না। সংসার ছেড়ে এসেও তাদের জন্য তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে। কেন এই কষ্ট, কেন এই অন্তরের টান?
রাজা সুরথ এবং সমাধি বৈশ্য দুজনে দুজনের মনের কথা জানলেন। দুজনেই সমব্যথী। দুজনে একসাথে গেলেন মেধা মুনির কাছে। জিজ্ঞেস করলেন, কেন এমন হয়? তখন মুনি বললেন, এটা জগতেরই নিয়ম। এর নাম মায়া। আর এই মায়া মহামায়ার প্রভাব। তবে প্রসন্ন হলে মহামায়া মানুষের মঙ্গল করেন এবং মুক্তিও প্রদান করেন।

রাজা সুরথ তখন মহর্ষি মেধার কাছে জানতে চান, কে এই মহামায়া, কী তাঁর স্বরূপ? মেধা বলতে লাগলেন, এই জগৎ মহামায়ার মূর্তি হলেও তিনি নিত্য, তিনি চিরন্তন। তাঁর ধ্বংস নেই। তিনি আমাদের সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেন। মেধা মুনি আরও বলেন যে, একই দেবী মহামায়া, দুর্গা, অম্বিকা ও কালিকা রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। অসুর বা দৈত্যদের বিনাশ করে শান্তি স্থাপন করেছেন। দেবতারা তাঁকে স্তুতি করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য মেধা মুনির কাছে থেকে দেবীর এ মাহাত্ম্য ও দেবীর পূজাপদ্ধতি শিখে নেন। এরপর তারা দুজনে মিলে দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করতে থাকেন। দেবী প্রসন্ন হন। দেবীর কৃপায় রাজা সুরথ তার রাজ্য ফিরে পান। আর সমাধি বৈশ্য দেবীর কাছে কিছুই চান না। ধনসম্পদের মোহ তাঁর দূর হয়ে গেছে। তিনি চান দুঃখ থেকে মুক্তি, চান অন্তরের শক্তি। দেবীর কৃপায় সমাধি বৈশ্য শান্তি ও মুক্তি লাভ করেন।
যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।। (চণ্ডী ৫। ৩২,৩৩,ও ৩৪)
অর্থাৎ যে দেবী সকল জীবে শক্তি রূপে অধিষ্ঠিতা, তাঁকে নমস্কার, নমস্কার, নমস্কার।
| একক কাজ: রাজা সুরথ এবং সমাধি বৈশ্য যে কারণে ঘর ছেড়েছেন সে কারণগুলো চিহ্নিত কর। |
নতুন শব্দ: প্রসন্ন, মায়া, চিরন্তনী।