হযরত আদম (আ)-এর ইন্তিকালের পর কেটে গেল অনেক বছর। বেড়ে গেল অনেক মানুষ। আস্তে আস্তে মানুষ ভুলে গেল আল্লাহকে। লিপ্ত হলো তারা মূর্তি পূজায় । পৃথিবীতে অন্যায়-অত্যাচার বেড়ে গেল। বৃদ্ধি পেল ঝগড়া-মারামারি। অশান্তি আর অশান্তি। তখন আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য এক নবি পাঠালেন ৷ এই নবির নাম হযরত নূহ (আ) ৷
হযরত নূহ (আ) আল্লাহর আদেশে দীর্ঘ সাড়ে নয়শ বছর পৃথিবীতে আল্লাহর দীনের দাওয়াত দেন। তিনি মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকলেন। ভালো কাজ করতে বললেন। মন্দ ও খারাপ কাজ বর্জন করার উপদেশ দিলেন।
তিনি মানুষকে বললেন: “তোমরা আল্লাহর প্রতি ইমান আন। এক আল্লাহর ইবাদত কর, মূর্তিপূজা ত্যাগ কর। ভালো কাজ কর। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাক। আখিরাতের জীবনের ওপর বিশ্বাস রাখ।” তাঁর এই দাওয়াতে মাত্র আশি জন নারী-পুরুষ সায় দিল। ইমান আনল। বাকি লোকজন তাঁর কথার গুরুত্ব দিল না। তাঁকে পাগল বলে উপহাস করল। কষ্ট দিতে লাগল। তারা কাফেরই থেকে গেল ।
হযরত নূহ (আ) দীর্ঘদিন তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হলেন। অবশেষে হতাশ ও বিরক্ত হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, 'হে আল্লাহ! আমি তাদেরকে তোমার দীনের পথে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা আমার কথায় সাড়া দেয় নি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আপনি তাদের ধ্বংস করে দিন।’
আল্লাহ তায়ালা হযরত নূহ (আ)-এর দোয়া কবুল করলেন। আল্লাহ তাঁকে জানিয়ে দিলেন “কিছুদিনের মধ্যে তাদের ওপর আমার গজব নাজিল হবে। মহাপ্লাবন হবে। আল্লাহ তাঁকে একটি নৌকা তৈরি করতে বললেন। বলে দিলেন, গজবের আভাস দেখা দিলেই ইমানদার লোকজনদের নিয়ে নৌকায় উঠে যাবে। সাথে দরকারি আসবাবপত্রও নেবে।
হযরত নূহ (আ) আল্লাহর নির্দেশে এক বিরাট নৌকা তৈরি করলেন। আর সবাইকে শোনালেন: আল্লাহর কথা না মানার কারণে ভীষণ আজাব আসবে। সবাইকে হুঁশিয়ার করলেন। কিন্তু লোকজন তাঁর কথা শুনল না। সৎপথে এলো না। তারা হযরত নূহ (আ) কে আরও বেশি বেশি ঠাট্টা উপহাস করতে লাগল। তারা বলতে থাকল: “এ মরুভূমিতে কীভাবে নৌকা ভাসবে ?”
অবশেষে সত্যি সত্যি তুফানের আলামত দেখা দিল। মাটি ফুঁড়ে পানি বের হলো। শুরু হলো প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি। বন্যা আসল। হযরত নূহ (আ) তাঁর ইমানদার লোকজনসহ নৌকায় আরোহণ করলেন। আরও নিলেন প্রতিটি জীবজন্তুর এক এক জোড়া এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। তিনি নৌকা ছাড়ার আগে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়লেন :
অর্থ : আল্লাহর নামে এটি চলবে এবং আল্লাহর নামে এটি থামবে। আমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
পানি বেড়েই চলল,আরও প্রবল হলো ঝড় ও বৃষ্টি। নৌকা সবকিছু নিয়ে পাহাড়ের মতো ঢেউয়ের মধ্যেও চলতে লাগল। চল্লিশ দিন পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হলো। মাটি থেকেও প্রবল বেগে পানি উঠল। সবকিছু পানিতে ডুবে গেল। কাফেররা পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে পাহাড়ের ওপর আরোহণ করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকল পাহাড় ডুবে গেল। তখন কাফেররা আর যাবে কোথায়? সকলে পানিতে ডুবে মারা গেল। কাফেররা ধ্বংস হলো। এমনকি হযরত নূহ (আ)-এর ছেলে কেনান আল্লাহ ও নবির কথা অমান্য করায় পানিতে ডুবে মারা গেল। কেউ বাঁচতে পারল না।
এদিকে হযরত নূহ (আ) তাঁর দলবলসহ আল্লাহর রহমতে পানির ওপরে নৌকাতে ভাসতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর আদেশে পানি আস্তে আস্তে কমে গেল। নৌকা জুদি পাহাড়ে এসে থামল। হযরত নূহ (আ) লোকজন, জীবজন্তু ও অন্যান্য সবকিছু নিয়ে নৌকা থেকে নেমে আসলেন। পৃথিবী আগের মতো আবার সবুজ শ্যামল হয়ে উঠল। তাঁরা পৃথিবীতে আবার নতুন জীবন শুরু করলেন।
হযরত নূহ (আ) ছিলেন সত্য ও ন্যায় প্রচারে আপোষহীন। প্রচুর বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি সত্য প্রচার থেকে একটুও পিছু হটেননি। আল্লাহর দীন প্রচারের জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন।
আমরা তাঁর জীবনাদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ করব। আল্লাহর দীন প্রচারের জন্য আমরা সারাজীবন পরিশ্রম করব। আল্লাহর দীন প্রচারের জন্য শত বাধাবিপত্তি আসলেও আমরা পিছু হটব না। আমরা আল্লাহর ইবাদত করব। আর সকলকে আল্লাহর দীন মানার জন্য উৎসাহিত করব। যদি আমরা আল্লাহর আদেশ অমান্য করি তাহলে ধ্বংস হয়ে যাব । আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হব।
পরিকল্পিত কাজ:
হযরত নূহ (আ)-এর জীবনাদর্শ শিক্ষার্থীরা খাতায় সুন্দর করে লিখবে।
আরও দেখুন...