হাঁসের রোগ-ব্যাধি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
3

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, "Prevention is better than cure" অর্থাৎ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই রোগের চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা না করে রোগ যাতে খামারে প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। জীবদেহ রোগ-ব্যধি তৈরির কারখানা এবং জীব মাত্রই রোগাক্রান্ত হয়। অন্যান্য প্রাণীদের মত হাঁসেরও রোগ হয়। একজন হাঁস খামারির কাছে রোগ একটা বিরাট সমস্যা। তবে সতর্ক দৃষ্টি ও ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো যায়। কঠিন রোগের পর হাঁস ভালো হয়ে গেলেও আগের মত স্বাভাবিক স্বাস্থ্য এবং উৎপাদন কোনো দিনই ফিরে আসে না।

এই অধ্যায় শেষে আমরা-

  • হাঁসের ভাইরাসজনিত রোগ সম্পর্কে বলতে পারব 
  • হাঁসের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ সম্পর্কে বলতে পারব 
  • হাঁসের অপুষ্টিজনিত রোগ সম্পর্কে বলতে পারব 
  • হাঁসের প্লেগ রোগের টিকা প্রদান করতে পারব 
  • হাঁসের কলেরা রোগের টিকা প্রদান করতে পারব 
  • হাঁসের খামারের জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারব

 

একটি সুস্থ হাঁসের বৈশিষ্ট -

  • চঞ্চলতা ও চটপটে স্বভাব। 
  • চোখ উজ্জ্বল।
  • পালক সূচারুরূপে পরিপাটি থাকে। 
  • সুন্দরভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেলা করে। 
  • পরিমাণমত খাদ্য ও পানি গ্রহণ করবে।
  • চরিপার্শ্ব সম্পর্কে খুব সতর্ক থাকে। 
  • পায়খানা/ বিষ্ঠার প্রকৃতি, পরিমাণ ও রং স্বাভাবিক থাকে । 
  • উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে।

 

একটি অসুস্থ হাঁসের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

  • হাঁস খাওয়া বন্ধ করে দেয় অথবা কম খায়। 
  • চুপচাপ বসে থাকে অথবা চলতে অনিহা ভাব দেখা যায়। 
  • দল ছেড়ে একা একা থাকতে পছন্দ করে।
  • চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখে পূজ হয়, চোখ বন্ধ করে রাখে। 
  • নাক মুখ থেকে লালা পড়ে। 
  • মাথা ফুলে যায় ।
  • মাথা মাটিতে ফেলে বা একদিকে কাত করে রাখে। 
  • পা খুঁড়ে খুঁড়ে হাঁটে এবং পায়ের গিরা ফুলে যায় । 
  • শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়।
  • পাতলা সাদা/সবুজ পায়খানা করে। 
  • পালক অগোছালো বা ময়লাযুক্ত থাকে। 
  • ডিম পাড়া হাঁসি ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়।

 

হাঁসকে রোগমুক্ত রাখার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে-

  • স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। 
  • স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনা । 
  • সুষম ও সুস্বাদু খাদ্য ।
  • বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে খাদ্য পরিবেশন। 
  • পরিমাণমত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ। 
  • জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাসস্থান নির্মাণ করা। 
  • মৃত হাঁস বা খামার বর্জ্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অপসারণ করা।

 

 

 

Content added By

হাঁসের রোগের সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ

3

৩.১ হাঁসের রোগের সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগঃ

রোগের সংজ্ঞা, পর্যাপ্ত খাদ্য ও উপযুক্ত পরিবেশ দেয়ার পরও যদি শরীরে অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয় তবে তাকে রোগ বলে।

হাঁসের রোগ প্রধানত ২ (দুই) ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: 

১. সংক্রামক রোগ 

২. অসংক্রামক রোগ

১. সংক্রামক রোগ 

যে রোগ জীবাণু বা জীবিত বস্তধারা সংঘটিত হয় তাকে সংক্রামক রোগ বলে। যেমন : হাঁসের কলেরা, ডাকপ্লেগ ইত্যাদি।

সংক্রামক রোগ দুই প্রকারের। যথা: ছোঁয়াছে ও অছোঁয়াছে রোগ ।

যে রোগ আক্রান্ত হাঁসের সংস্পর্শে আসলেই সুস্থ হাঁসটি অসুস্থ হাঁসটির রোগে আক্রান্ত হয় তাকে ছোঁয়াছে রোগ বলে। 

যে রোগ আক্রান্ত হাঁসের সংস্পর্শে আসলেও সুস্থ হাঁসটি অসুস্থ হাঁসটির রোগে আক্রান্ত হয় না তাকে অছোঁয়াছে রোগ বলে।

 

২. অসংক্রামক রোগ: 

জীবাণু ছাড়া যে রোগ সংগঠিত হয় তাকে অসংক্রামক রোগ বলে । অসংক্রামক রোগ তিন প্রকার। যথা : 

১. আঘাতজনিত রোগ 

২. অপুষ্টিজনিত রোগ 

৩. বিষক্রিয়াজনিত রোগ ।

অন্যভাবে হাঁসের রোগকে সাধরণত ৫ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : 

১. ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : যেমন- হাঁসের কলেরা। 

২. ভাইরাসজনিত রোগ : যেমন-ডাক প্লেগ ও হেপাটাইটিস । 

৩. ছত্রাকজনিত রোগ : যেমন- এসপারজিলোসিস। 

৪. অপুষ্টিজনিত রোগ : যেমন- প্যারালাইসিস, রিকেট, রাতকানা ইত্যাদি । 

৫. পরজীবজনিত রোগ : যেমন- কৃমি, আঠাঁলি ইত্যাদি।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • রোগ কাকে বলে? 
  • হাঁসের রোগের শ্রেণিবিন্যাস লেখ। 
  • একটি সুস্থ হাঁসের ৫টি লক্ষণ লেখ। 
  • কীভাবে তুমি একটি অসুস্থ হাঁস চিহ্নিত করবে?

 

 

 

Content added By

হাঁসের সধারণ রোগসমূহের নাম, লক্ষণ ও চিকিৎসা

39

৩.২ হাঁসের সাধারণ রোগসমূহের নাম, লক্ষণ ও চিকিৎসা :

আমাদের দেশে হাঁসের সচরাচার যেসমস্ত রোগ হয়ে থাকে সেগুলোর নাম, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

সাধারণ রোগসমূহের নাম : 

১. কলিবেসিলোসিস 

২. ডাক কলেরা 

৩. বটুলিজম রোগ 

৪. ডাক ভাইরাস হেপাটাইটিস 

৫. ডাক প্লেগ 

৬. এসপারজিলোসিস

 

হাঁসের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত রোগ: 

হাঁসের কলিবেসিলোসিস:

কলিবেসিলোসিস রোগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে। কতকগুলো রোগের সমষ্টিকে কলিবেসিলোসিস রোগ বলা হয়। যথা- 

(ক) কলি ফরম সংক্রমণ 

(খ) কলি সেপ্টিসেমিয়া 

(গ) পুরনো শ্বাসকষ্ট রোগ 

(ঘ) বায়ু থলে সংক্রামক রোগ

(ঙ) কুসুম থলে সংক্রামক রোগ 

(চ) নাভি সংক্রামক রোগ 

(ছ) প্যারিটুনিয়ামের প্রদাহ রোগ ।

এসকারিশিয়া কলাই (ই-কলাই) নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীবাণু এসব রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এটি গ্রাম নেগেটিভ নন স্পোর সৃষ্টিকারী ছোট দন্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়া। এসকারিশিয়া কলাই নামক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার অনেক ধরনের স্ট্রেইন রয়েছে এবং প্রায় সব প্রাণীতে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু হাঁসে রোগ সৃষ্টিকারী ই-কলাই মানুষসহ অন্য কোনো পশুতে রোগ সৃষ্টি করতে পারে না। ই-কলাই ব্যাকটেরিয়া/অণুজীবাণু সাধারণত সব প্রাণীর পরিপাক নালিতে এবং খামার পরিবেশে বিদ্যমান থাকে কিন্তু সব সময় রোগ সৃষ্টি করতে পারে না। মাত্র ১০ থেকে ১৫ ভাগ অণুজীবাণু এ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ই-কলাই একটি সুযোগ সন্ধানী ব্যাকটেরিয়া। বিশেষ বিশেষ অবস্থায় বা অন্যান্য রোগের উপস্থিতিতে এটি মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে থাকে। যেমন-

  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। 
  • অল্প জায়গায় বেশি হাঁস রাখা হলে । 
  • ব্যবহৃত লিটার যদি খারাপ হয়ে থাকে । 
  • অপুষ্টিজনিত কারণে ।
  • এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সময়। 
  • হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে। 
  • অন্যান্য রোগের উপস্থিতিতে। 
  • যথা- ডাক প্লেগ রোগ ।

অত্যধিক শীত বা গরমে এ রোগ অণুজীবাণু বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না। সাধারণ জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে এ রোগের অনুজীবাণু মারা যায়। পরিবেশের আর্দ্রতা যখন কম থাকে এবং পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা স্বভাবিক থাকে তখন ধুলোবালি ও বিছানায় এ রোগ অণুজীবাণু অনেকদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। পরিবেশে বাতাসের আর্দ্রতা যদি বেড়ে যায় তখন ই-কলাই বেশিদিন বাঁচতে পারে না, ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ অণুজীব মারা যায় ।

মাংস উৎপাদনের জন্যে পালিত হাঁসের খামারে উন্নত ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা সত্ত্বেও ২/৪টি হাঁস মারা যেতে পারে। কিন্তু অনুন্নত ব্যবস্থাপনা, যেমন- অল্প জায়গায় বেশি বাচ্চা রাখা হলে অথবা যদি খারাপ বিছানা ব্যবহার করা হয় তা হলে মড়ক মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে সাধারণত ব্রহ্মপার হাঁসের বয়স যখন ৪-৬ সপ্তাহ হয়ে থাকে তখন এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়ে থাকে এবং জবেহ করার বয়স পর্যন্ত অনেক হাঁস মারা যেতে পারে।

 

রোগ বিস্তার:

  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ডিম পাড়লে। 
  • ডিম্বাশয় যদি এ রোগ অণুজীব দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে তা হলে ডিম তা দিয়ে বাচ্চা ফোটালে তাতে এ রোগ ছড়াতে পারে। 
  • অন্ত্রে বিদ্যমান বিষ্ঠার সাথে বের হয়ে আসে এবং সে অবস্থায় যদি ডিম পারে তা অবসারণীতে থাকা বিষ্ঠার দ্বারা কলুষিত হলে, ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হলে বাচ্চাতে এ রোগ হতে পারে।
  • এ রোগের জীবাণু শ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করতে পারে। 
  • সংক্রমিত হাঁসের বিষ্ঠা দ্বারা খাদ্য ও পানি কলুষিত হলে এ রোগ হতে পারে ।

হাঁসের বৃহদান্তে সাধারণত এ রোগ অনুজীব বসবাসের জন্যে উপযুক্ত স্থান। অস্ত্রের অন্য কোনো অংশ বসবাসের জন্যে তেমন উপযুক্ত নয়। তাই বৃহদান্ত্রে এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

এ রোগ অণুজীব দ্বারা কলুষিত খাদ্য ও পানি গ্রহণ করার পর অস্ত্রের উপরিভাগে এগুলো বংশবৃদ্ধি করে। কারণ এ অংশে কোনো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না । ফলে অন্ত্রের এ অংশে প্রদাহ দেখা দেয় যা পাতলা পায়খানার অন্যতম কারণ। কোনো কোনো সময় এ রোগ অণুজীবীর দ্বারা তৈরি টক্সিন অন্ত্র থেকে রক্তের মাধ্যমে যকৃত, প্লীহা ও বৃক্কে পৌছে এবং এগুলোর মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। বাচ্চা হাঁসের শ্বাসকষ্ট সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। কারণ শ্বসনতন্ত্রের উপরিভাগ অংশে সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। এ সংক্রমণ যদি বায়ু থলেতে পৌছে তা হলে শ্বাসনালী ও ফুসফুসে ক্ষতের সৃষ্টি করে।

 

রোগের লক্ষণ: 

দেহের কোনো অংশ এ রোগ অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হয় এর উপরই কলিসেপ্টিসেমিয়া রোগের লক্ষণ নির্ভর করে।

  • হঠাৎ করে হাঁস অসুস্থ হয়ে পড়ে। 
  • নির্জীব দেখায়, চুপ করে বসে থাকে, হঠাৎ করে মারা যায় । 
  • শ্বাসকষ্ট, নাকের শ্লেষ্মা দূর করার জন্যে মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে থাকে, গড় গড় শব্দ হয় বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে বেশি শোনা যায় ।
  • হাঁসগুলো অশান্ত দেখায় । 
  • খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেয় । 
  • মৃত্যুর হার দ্বিগুণ/তিনগুণ বেড়ে যায় । 
  • আক্রান্ত বাচ্চা হাঁসের দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। 
  • অসম দেহ বৃদ্ধির জন্যে ব্রয়লার হাঁসের মাংস কম মূল্যে বিক্রয় করতে হয় যা আর্থিক লোকসানের কারণ। গিরা প্রদাহ এবং হাড়ের প্রদাহ এ রোগ অণুজীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে। বাড়ন্ত হাঁসে গিরা প্রদাহের ফলে গোড়ালি ফুলে যায়, আক্রান্ত হাঁস খোড়াতে থাকে, এমনকি ঠিকভাবে চলতে পারে না।

 

ডিম্বাশয়ের প্রদাহ :

হাঁসের পেটে পিন্ডের ন্যায় দেখা যায়। ফলে এ রোগে আক্রান্ত হাঁসের পেট বড় দেখায়। কোনো কোনো হাঁস ই-কলাই নামক রোগ অণুজীবী দ্বারা ডিম্বাশয় ও ডিম্ববাহি নালি সংক্রমিত হওয়ার ফলে এগুলো সঠিকভাবে কার্যকর থাকে না, ফলে ডিম্বাশয় ও প্যারিটনিয়ামের প্রদাহের জন্যে আক্রান্ত হাঁসটি মারা যায়। এসব অংশ থেকে সংক্রমণ নিম্নগামী যোনি ও অবসারনিকে সংক্রমিত করে এবং সেখানে চুলকানির ফলে অবসারনিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ডিম্বাশয় থেকে বিকৃত ডিম ডিম্ববাহি নালীতে জমা হতে থাকে এবং কুসুমগুলো জমে পুঁজের মত হলেও কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এ জাতীয় হাঁসের ডিম তা দিলে ডিমের ভেতরে ভ্রুণের মৃত্যু হতে পারে অথবা বাচ্চা ফোটার পর পরই মারা যেতে পারে।

 

কুসুম থলে সংক্রমণ রোগ:

ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর প্রথম ৩ থেকে ৪ দিন বয়সে কুসুম থলে সংক্রমণের জন্যে মারা যায়। এ অবস্থাকে ব্যাখ্যা করার জন্যে নাভীর সংক্রমণ অথবা ওফালাইটিস উপসর্গ নামে অবহিত করা হয়ে থাকে। একে অনেকে “মাসি চিক ডিজিজ” বলা হয়ে থাকে। হাঁসের ডিম তা দিলে ডিমের ভেতরে ভ্রুণের মৃত্যু হতে পারে অথবা বাচ্চা ফোটার পর পরই মারা যেতে পারে।

ওফালাইটিস

ওফালাইটিস বা নাড়ির প্রদাহ, কুসুম থলের সংক্রমণ, মাসি চিক ডিজিজ এসব রোগের কারণে হাঁসের বাচ্চা ৩-৪ দিন বয়সে মারা যেতে পারে। কুসুম থলের সংক্রমণ রোগ অণুজীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে তবে এ জাতীয় সংক্রমণ থেকে বোঝা যায় যে, 

ক) প্রজনন খামারটির ব্যবস্থাপনা ছিল নিম্নমানের এবং 

খ) হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা ত্রুটিপূর্ণ ছিল।

রোগের কারণ : 

খামার পরিবেশে এবং হাঁসের অস্ত্রে অনেক ধরনের রোগ অণুজীবি অবস্থান করে সেগুলো ও কুসুম থলে সংক্রমণসহ এ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ই-কলাই ছাড়া অন্যান্য যে সব রোগ অনুজীবাণু উপস্থিত থাকে যথা ব্যাসিলাস অরিয়াস, স্টেফাইলোকোকাই, সিউডোমোনাস, রুক্মিডিয়া এবং প্রোটিয়াস । ওফালাইটিস রোগের মহামারি ডিমের খোসার সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে। বিষ্ঠার মধ্যে বিদ্যমান এসব ব্যাকটেরিয়া ডিমের খোসার ছিল পথে ভেতরে প্রবেশ করে ডিমকে সংক্রমিত / কলুষিত করে থাকে।

হ্যাচারিতে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ না করলে অনেক রোগ অণুজীব তা বসানো ভিষকে সংক্রমিত করে, ফলে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটা বিলম্ব ঘটে এবং অধিকাংশ বাচ্চার নাভির ক্ষত শুকাতে দেরি হয়ে যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই এ ক্ষতের মাধ্যমে পরিবেশে বিদ্যমান রোগ অণুজীবাণু বাচ্চার পেটের মধ্যে অবস্থিত ডিমের কুসুমকে সংক্রমিত করে থাকে। সংক্রমিত নাড়িভূড়ি নাভির ক্ষতের মাধ্যমে অনেক সময় বের হয়ে আসে এবং নাভির ক্ষতকে মারাত্মকভাবে সংক্রমিত করতে পারে। কুসুম বলে সংক্রমণের ৩-১০% হাঁসের বাচ্চা জীবনের প্রথম করেক দিনের মধ্যেই মারা বার এবং মৃত্যুর হার বাড়তে পারে।

 

রোগ বিস্তার:

ডিমের কুসুম রোগ অণুজীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ফলে কুসুমে পচন ধরে এর ফলে বাচ্চাটি ডিমের কুসুম থেকে যে পুষ্টি পাওয়ার কথা ছিল তা থেকে বঞ্চিত হয়। তথায় উপস্থিত কোনো কোনো রোগজীবাণু টক্সিন তৈরি করে। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত অবস্থায় এ টক্সিনের জন্যে টক্সিমিয়া সৃষ্টি হয় (রক্তের সাথে টক্সিন মিশে যায়) এবং ই- কলাই সংক্রমণ সেখানে প্রাধান্য থাকে।

স্টেফাইলোকক্কাস ও সিউডোমোনাস-এর উপস্থিতিতে আক্রান্ত বাচ্চার গোড়ালির শিরায় প্রদাহের সৃষ্টি হয়। গিড়া ফুলে যায়, বাচ্চা খোড়াতে থাকে। 

রোগের লক্ষণসমূহঃ

  • এ রোগে আক্রান্ত বাচ্চা হ্যাচারি থেকে আনার সময় বাক্সেই মারা যেতে পারে। 
  • এ রোগে মৃত বাচ্চাটির পেট ভেজা থাকে, দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত থাকে । 
  • নাভি থেকে দুর্গন্ধযুক্ত তরল পদার্থ বের হতে থাকে । 
  • এ রোগে মৃত অনেক বাচ্চা বিবর্ণ/নীল বর্ণের হয়ে যায় । 
  • পেটে কুসুমের থলে পচে যাওয়ার ফলে অনেক সময় তা বড় হয়ে যায় এবং এ জাতীয় বাচ্চার পেট বড় দেখায়। 
  • নাভির চারদিকে চামড়া ভেজা থাকে, ফোলা থাকে এবং লালচে দেখায়। 
  • ডিম ফোটানো যন্ত্রে যদি আর্দ্রতা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তা হলে নাভির ক্ষত শুকাতে বেশি সময় লাগে । 
  • নাভির এ ক্ষতের মাধ্যমে পেটের বিভিন্ন অঙ্গ বের হয়ে আসতে পারে।

 

রোগের চিকিৎসা:

রোগের আক্রান্ত বাচ্চাকে ১ দিন বয়স থেকে চিকিৎসা করলে সুফল পাওয়া যায় তবে পেরিটুনাইটিস এবং হৃৎপিন্ডের প্রদাহ হয়ে গেলে চিকিৎসায় কোনো ফল পাওয়া যায় না। একদিন বয়স থেকেই আক্রান্ত বাচ্চার ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে এবং সাথে সুষম খাদ্য ও পানির সাথে খাওয়াতে হবে।

রোগ দমন:

  • স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পালিত ও পারিচালিত তেমন খামার থেকে বাচ্চা হাঁস সংগ্রহ করতে হবে। 
  • বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ডিম সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে হবে। 
  • ইনকিউবেটরের মধ্যে বাচ্চা যাতে এ রোগ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 
  • এ রোগ অণুজীবাণু খামারের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কলুষিত করতে না পারে সে দিকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • অস্বাভাবিক অবস্থা ও পরিবেশ থেকে হাঁসকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যেমন-ঠান্ডা লাগা অথবা খামারে যাতে অধিক অ্যামোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • যে সব রোগ হলে এ রোগ অণুজীবাণু ক্ষতি করার সুযোগ পায় সেসব রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে । 
  • আক্রান্ত ঝাঁকের হাঁসকে প্রয়োজনীয় তাপে বা গরমে রাখতে হবে এবং পরিমিত আমিষ ও খাদ্যপ্রাণ সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। 
  • ধুলোবালির সাথে ই- কলাই রোগ অণুজীবাণু খামারে প্রবেশ করে। তাই ধুলোবালি যাতে খামারে প্রবেশ করতে না পারে এবং প্রচুর আলো বাতাস চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ইঁদুর/চিকা এ জাতীয় প্রাণির বিষ্ঠা হাঁসের খাবার ও পানিকে এ রোগের অণুজীবাণু দ্বারা কলুষিত করে। তাই এ জাতীয় প্রাণী যাতে হাঁসের খাদ্য গুদামে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • ইনকিউবেটরের মধ্যে যদি ডিম ভেঙে যায় তা হলে জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে তা রোগ জীবাণু মুক্ত করতে হবে। 
  • প্রতিবার নতুন ঝাঁক খামারে তোলার আগে খামারকে অবাঞ্চিত পদার্থমুক্ত ও রোগ জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 
  • সঠিক টিকাদান কর্মসূচি অনুসরণ করতে হবে। 
  • প্রতিদিন সকাল বিকাল হাঁসের সুস্থতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে। অসুস্থ হাঁস দেখা গেলে সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • কলিবেসিলোসিস রোগ বলতে কী বোঝায়? 
  • ওফালাইটিস রোগে রোগাক্রান্ত হাঁসের বাচ্চা তুমি কীভাবে চিহ্নিত করবে? 
  • ই-কলাই ব্যাকটেরিয়া কোন পরিবেশে বংশবিস্তার করে? 
  • কলিবেসিলোসিস রোগ দমনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

 

ডাক কলেরা (Duck Cholera )

হাঁসের কলেরা একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমক রোগ। উচ্চ আক্রান্ত ও উচ্চ মৃত্যু হার এবং ডায়রিয়া এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট। সব বয়সের হাঁস এতে আক্রান্ত হতে পারে। হাঁসের ঘর স্বাস্থ্যসম্মত না হলে এবং ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকলে এ রোগ মড়ক আকারে দেখা দেয়। সঠিকভাবে রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসা করতে না পারলে মৃত্যু হার অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া এ রোগ একবার দেখা দিলে দমন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

হাঁসের কলেরা রোগের কারণ: 

পাশ্চুরেলা মান্টুসিডা নামক এক প্রকার গ্রাম নেগেটিভ ক্ষুদ্র দন্ডাকৃতির বাইপোলার ব্যাকটেরিয়া এ রোগের একমাত্র কারণ। 

হাঁসের কলেরা রোগের সংক্রমণ: 

হাঁসের কলেরা রোগ নিম্নলিখিতভাবে সংক্রমিত হয়-

* সংবেদনশীল হাঁসের ঘরে কোন বাহক হাঁস থাকলে বা প্রবেশ করলে। 

* বন্য পাখি বা অন্যান্য বাহক প্রাণির সংস্পর্শে সংবেদনশীল হাঁস আসলে । 

* একই ঘরের বা খামারের এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ সংক্রমিত হয়।

  • আক্রান্ত হাঁসের নাকের ছিদ্রের মাধ্যমে। 
  • এ রোগে মৃত হাঁসকে ঠোকর দিলে। 
  • কলুষিত পানির মাধ্যমে।
  • মানুষের জামা, জুতো, ঘরের ব্যবহৃত সরজ্ঞামাদি, টিকা প্রদানের যন্ত্রপাতি ইত্যাদির মাধ্যমে । 
  • কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে আক্রান্ত হাঁস থেকে সুস্থ হাসে।

 

রোগের লক্ষণঃ

  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় । 
  • দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকবে। 
  • হাঁস পানি পিপাসা বোধ করবে এবং হঠাৎ মারা যাবে। 
  • সবুজ ও পাতলা পায়খানা করবে। 
  • মুখ থেকে লালা পড়তে থাকে। 
  • পাখা নিচে নেমে যায় । 
  • ডিম উৎপাদন কমে যায় ৷

রোগ নির্নয় : 

নিম্নলিখিতভাবে হাঁসের কলেরা রোগ নির্ণয় করা যায়।

  • রোগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে ৷ 
  • ময়না তদন্তে বিভিন্ন অঙ্গের প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে।
  • অন্ত্রের রক্তক্ষরণ দেখে। 
  • যকৃতে ছোট ছোট সাদা দাগ । 
  • হৃৎপিন্ডের বাহিরের সাদা অংশে রক্তের ফোঁটা। 
  • মৃত হাঁসের সমস্ত অঙ্গে রক্তক্ষরণ ও রক্তাধিক্য। 
  • গবেষণাগারে জীবাণু কালচার করে ।

চিকিৎসা

কলেরা রোগের জন্য এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে এ রোগের চিকিৎসা করা । 

১. ক্লুমেকুইন ১০% পাউডার ১ গ্রাম ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন আক্রান্ত হাঁসকে পান করাতে হবে।

২. ক্লুমেকুইন ২০% সলুশন ১ মিমি/ ৪ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩-৫ দিন আক্রান্ত হাঁসকে পান করাতে হবে।

 

হাঁসের বটুলিজম রোগ 

হাসের বটুলিজম রোগ একটি রোগ। এ রোগ অণুজীবাণু নানার যোগ সৃষ্টি করে না। এটি মৃত পঁচা গাছ, লতাপাতা কাদামাটিতে বাস করে এবং যেসব স্থানে রাখাল চলাচল করে না অথচ পঁচা জৈব পদার্থ সেখানে এ রোগ জীবাণু বংশবৃদ্ধি ও টক্সিন তৈরি করতে পারে। মৃতদেহে অ্যাশো পোকা, মাছির শুককীট প্রভৃতি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। হাঁসে এ রোগ অনুজীবের যে টক্সিনটি রোগ সৃষ্টি করে তা মানুষের মাঝে রোগ সৃষ্টি করে থাকে।

রোগের কারণ : ক্রোস্টেডিয়াম বটুলিয়াম নামক রোগ অনুজীবের টক্সিন টাইপ সি এ রোগের জন্য দায়ী । 

খামারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে হাঁস পালন করা হলে এ রোগ হতে পারে না। হাঁস যেভাবে আক্রান্ত হতে পারে সেগুলো হচ্ছে:

  • এ রোগের টক্সিন দ্বারা কলুষিত খাদ্য। 
  • এ রোগের টক্সিন দ্বারা কলুষিত পানি। 
  • মতদেহ খেলে। 
  • মৃতদেহে জন্মানো পোকা বা পোকার শুককীট খেলে।

হাঁসের বটুলিজম রোগের সংক্রমণ: 

হাঁসের খাদ্য বা পানির সাথে এ টক্সিন দেহে প্রবেশ করে স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ফলে অবসাদজনিত উপসর্গ দেখা যায়। শ্বসনযন্ত্রের অবশতার জন্য আক্রান্ত হাঁস মারা যায়। কাদাযুক্ত পানিতে হাঁস ছাড়া হলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ রোগের টক্সিন দ্বারা আক্রান্ত হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন কি কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ না করেই ঝাঁকের অনেক হাঁস মারা যেতে পারে ।

হাঁসের বটুলিজম রোগের লক্ষণ

  • এ রোগের টক্সিন খাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। অবশ্য এটি নির্ভর করে কি পরিমাণ টক্সিন আক্রান্ত হাঁসটি খেয়েছে তার উপর।
  • ঝিমায়, দূর্বল হয়ে পড়ে, হাঁটতে পারে না। হাঁটতে গেলে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যায় । 
  • পাখা, পা, গলা অবশ হয়ে যায়, তখন পাখা ছড়িয়ে গলা সোজা করে লম্বা হয়ে মেঝেতে শুয়ে থাকে এ অবস্থায় অনেক সময় পালক টানলে সহজেই উঠে আসে। এ লক্ষণগুলো হাঁস পানিতে থাকাকালীন দেখা দিলে হাঁস ডুবে মারা যায়।
  • অল্প পরিমাণে টক্সিন খেলে হাঁস ঠিকমত হাঁটতে পারে না এবং আর টক্সিন খাবার সুযোগ না থাকলে তা হলে কয়েকদিন যাবার পর আরোগ্য লাভ করে।

ময়না তদন্তে প্রাপ্ত ফলাফলঃ 

এ রোগে মৃত হাঁসের ময়না তদন্তে তেমন মারাত্মক কোনো ক্ষতচিহ্ন দেখা যায় না তবে যে সব অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে সুোলো হচ্ছে-

  • খাদ্যনালি ও পাকস্থলিতে কোনো খাদ্য থাকে না। 
  • যকৃত ও বৃদ্ধ বড় হতে পারে এবং কালচে বর্ণের দেখায়।

রোগ নির্ণয়ঃ

  • রোগের ইতিহাস দেখে 
  • রোগের লক্ষণ দেখে
  • ময়না তদন্তের উপর ভিত্তি করে 
  • গবেষণাগারে এ রোগের টক্সিন নির্ণয় করে
  • সিকাম ও স্বকৃত থেকে এর রোগজীবাণু পৃথক ও শনাক্তকরনের মাধ্যমে।

রোগ দমন

  • মৃত হাঁস ঘর থেকে তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলতে হবে। 
  • প্রচুর পরিষ্কার পানি খেতে দিতে হবে। 
  • হাঁসকে কাদা বা ময়লা পানিতে সাঁতার কাটা বন্ধ করতে হবে। 
  • বিছানায় যাতে পোকা জন্মাতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  • খামার এলাকায় যেন কোনো পচা জৈব পদার্থ না থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  • যে সব নদীনালা, পুকুর, হাওর-বাওড়ে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেখানে হাঁস চরানো যাবে না। 
  • শুঁটকি ও প্রাণিজ আমিষ খাদ্য ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • হাঁসের ব্যাকটেরিয়াজনিত দু'টি রোগের নাম লেখ । 
  • হাঁসের কলেরা রোগের লক্ষণ লেখ। 
  • কীভাবে হাঁসের বটুলিজম রোগ সনাক্ত করবে? 
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো লেখ ৷

 

হাঁসের ভাইরাসজনিত রোগসমূহ

ডাক ভাইরাস হেপাটাইটিস

এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। হাঁসের বাচ্চার ক্ষেত্রে একটি তীব্র ছোঁয়াছে রোগ। একে যকৃত প্রদাহ রোগ বলা হয়ে থাকে । চার সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চার ক্ষেত্রে এ রোগ দেখা দেয় ৷

রোগের কারণ:

পিরোরনা নামক এক প্রকার ভাইরাস এ রোগের কারণ। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এ ভাইরাস ৭ থেকে ২৯ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

রোগ ছড়ানোর মাধ্যম: 

আক্রান্ত খামারের বা ঝাঁকের সব বাচ্চা আক্রান্ত হতে পারে। এ কারণে রোগের সুপ্তিকাল কয়েকঘন্টা মাত্র। যে সব মাধ্যমে বাচ্চা আক্রান্ত হতে পারে সেগুলো হচ্ছে :

  • খাদ্য ও পানির মাধ্যমে। 
  • এ রোগের ভাইরাস দ্বারা কলুষিত দ্রব্যের মাধ্যমে। 
  • আক্রান্ত হাঁসের সংস্পর্শে আসলে। 
  • আক্রান্ত হাঁসের মলের মাধ্যমে।

রোগের লক্ষণঃ

  • আক্রান্ত হাঁসের বাচ্চাগুলো খাওয়া বন্ধ করে দেয় । 
  • বাচ্চাগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করে না। আস্তে আস্তে চলাফেরা করে। চোখ বন্ধ করে রাখে । 
  • স্বাভাবিকভাবে চলতে না পেরে একদিকে কাত হয়ে পড়ে যায়। 
  • লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ১ (এক) ঘন্টার মধ্যেই মারা যেতে পারে । 
  • রোগে মৃত হাঁসের বাচ্চাকে ময়নাতদন্ত করে যকৃতের নানা বর্ণের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। যকৃত বড় হয় এবং ফ্যাকাসে দেখা যায় । 
  • এ রোগে মৃত্যুর হার ৫-৯৫% হতে পারে ।

চিকিৎসাঃ 

রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ডাক হেপাটাইটিস এন্টিসিরাম ০.৫ সি.সি. পরিমাণ প্রতি হাঁসের ছানার মাংসপেশিতে ইনজেকশন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

রোগ লক্ষণ:

  • ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী হাঁসের বাচ্চাকে টিকা দিতে হবে। 
  • বরং হাঁসের সাথে বাচ্চা হাঁস রাখা উচিত নয়।
  • ইঁদুর ও বন্য হাঁস এ রোগের ভাইরাস ছড়াতে পারে, তাই এগুলো যাতে খামারে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ বায়োসিকিউরিটি সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে।

 

ডাক প্লেগ

এ রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াছে রোগ। এ রোগকে অন্ত্রের প্রদাহ রোগ বলা হয়ে থাকে। হাঁস, বাচ্চা হাঁস ও অন্যান্য বন্য হাঁস এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত বক্ষ হাঁস এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকে।

ডাক প্লেগ রোগের কারণ:

হারপেস গোত্রভুক্ত ডাক হারপেল ভাইরাস - ১, অ্যানাটিড হারপেস ভাইরাস -১, এ রোগের কারণ। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এ ভাইরাস সাধারণত ৩০ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

রোগ ছড়ানোর মাধ্যমঃ

  • আক্রান্ত হাঁসের খাদ্য ও পানির মাধ্যমে।
  • আক্রান্ত হাঁসের সংস্পর্শে আসলে ।
  • আক্রান্ত অন্য হাঁসের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।

লক্ষণঃ

  • পিপাসা বেড়ে যায় এবং বার বার পানি খেতে দেখা যায় ।
  • চোখ ও নাক দিয়ে তরল পানি নিঃসৃত হবে। 
  • ডিম পাড়া হাঁসির ডিম পাড়া কমে যায়।
  • পুরুষ হাঁসের ক্ষেতে লিঙ্গ বের হয়ে যায়।
  • ঠোঁট নীল বর্ণ ধারণ করে।
  • ঘাড় বাকা করে উপর দিকে চেয়ে থাকে।

রোগ দমনঃ

  • আক্রান্ত হাঁসের কোনো চিকিৎসা নেই। 
  • খামারে যাতে এ রোগ ঢুকতে না পারে সে দিকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • আক্রান্ত হাঁস আলাদা করতে হবে। 
  • হাঁসের ঘরের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও লিটারগুলো জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
  • হাঁসকে নিয়মিত ডাক প্লেপ টিকা প্রয়োগ করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় । 
  • খামারের জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • হাঁসের ভাইরাসজনিত দু'টি রোগের নাম লেখ। 
  • হাঁসের প্লেগ রোগের লক্ষণ লেখ। 
  • কীভাবে হাঁসের হেপাটাইটিস রোগ সনাক্ষ করবে? 
  • ভাইরাসজনিত রোগ দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো লেখ।

 

হাঁসের ছত্রাক রোগ

আক্রান্ত অঙ্গের উপর ভিত্তি করে হাঁসের ছত্রাক রোগকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : 

ক) আন্ত্রিক অঙ্গের সংক্রমণ, যথা- ব্রুডার নিউমোনিয়া 

খ) চর্ম অঙ্গের সংক্রমণ - ফেভাস 

গ) পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ- ক্যানডিডিয়াস

অ্যাসপারজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া

এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগকে ব্রুডার নিউমোনিয়াও বলা হয়ে থাকে। ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। আন্ত্রিক অঙ্গের সংক্রমণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যাসপারজিলোসিস রোগ। ব্রুডার নিউমোনিয়া বলতে ফুসফুস ও বাতাসের থলে সংক্রমণকে বুঝায়। এ রোগ সাধারণত শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে, তবে মাঝে মাঝে যকৃত, চোখ, মস্তিষ্ক এমন কি অন্যান্য অঙ্গকেও আক্রান্ত করতে পারে।

যে সব প্রাণী এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে যেগুলো হচ্ছে হাঁস, মুরগি, টার্কি ও অন্যান্য পোষা পাখি। মানুষের মাঝেও এ রোগ ছাড়াতে পারে। অল্প বয়স্ক হাঁস, মুরগি এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। বাড়ন্ত বা বয়স্ক হাঁস মুরগি আক্রান্ত হতে পারে তবে এদের মৃত্যুর হার কম । যেসব ছত্রাক এ রোগের জন্য দায়ি সেগুলো হচ্ছে:

  • অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস 
  • অ্যাসপারজিলাস গ্লেকাস 
  • অ্যাসপারজিলাস নাইগার  
  • অ্যাসপারজিলাস ফ্লেভাস

রোগের কারণ: 

অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস নামক ছত্রাক হাঁসের ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে এ রোগের কারণ ।

যে সব অবস্থা এ রোগ সৃষ্টি করে বা সুযোগ করে দেয় সেগুলো হচ্ছে :

  • ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ 'এ' এর অভাব 
  • স্বাস্থ্যহীনতা 
  • স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া 
  • গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া 
  • অপ্রতুল বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা 
  • ছত্রাক কলুষিত কক্ষে আবদ্ধ করে রাখা 
  • স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ 
  • ভেজা বিছানা (লিটার) 
  • পরিত্যক্ত খাদ্য উপাদান ছত্রাকের বংশবৃদ্ধির বাহক হিসেবে কাজ করে 
  • পুলোরাম রোগ

 

অ্যাসপারজিলোসিস রোগের সংক্রমণঃ

  • খামারে বা ঝাঁকে বিদ্যমান উপরোক্ত ছত্রাকের স্পোরগুলো শ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করে । 
  • এসব স্পোর চোখের ঝিল্লিকে আক্রান্ত করতে পারে। 
  • ডিম ফোটানোর যন্ত্র এসব ছত্রাকে কলুষিত থাকলে বাচ্চাতে এ রোগ ছড়াতে পারে।
  • যে বাক্স দিয়ে বাচ্চা বহন করা হয় তা যদি এসব ছত্রাক দ্বারা কলুষিত থাকে তা হলে এ সব বাচ্চাকে আক্রান্ত করতে পারে ।
  • ডিমের খোসা ভেদ করে এসব ছত্রাক খোসার ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং তাতে ভ্রুণের মৃত্যু হতে পারে অথবা বাচ্চাতে এ রোগ ছড়াতে পারে । 
  • এ সব ছত্রাকের স্পোর খাদ্য বা পানির সাথে দেহে প্রবেশ করতে পারে।

অ্যাসপারজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণসমূহ:

এ রোগে সাধারণত অল্প বয়স্ক হাঁসের বাচ্চা আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডিম ফোটানোর যন্ত্র থেকে যদি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তা হলে ২-৩ দিন বয়সে এবং ব্রুডার থেকে আক্রান্ত হলে ৫-৬ দিন বয়সে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় । আক্রান্ত ঝাঁকের শতকরা ৫০ ভাগ বাচ্চা মারা যেতে পারে।

  • শ্বাসকষ্ট, হাঁ করে শ্বাস নেয়া, এসব লক্ষণ সংক্রামক ব্রংকাইটিস বা লেরিংগো ট্রাকিয়াইটিস রোগ দেখা যেতে পারে, তবে এ রোগে শ্বাস নেয়ার সময় গড় গড় শব্দ হয় না যা অন্য রোগদ্বয়ে হয়ে থাকে।
  • আক্রান্ত হাঁস ঝিমায়। 
  • খাওয়া বন্ধ করে দেয়। 
  • পিপাসা বেড়ে যায় । 
  • দুর্বল হয়ে যায়। 
  • দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে পারে না অর্থাৎ স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দেয় । 
  • কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা হতে পারে। 
  • লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।

বয়স্ক হাঁস আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্টে ভোগে। মনে হয় গলায় কিছু আটকে গিয়েছে। দ্রুত স্বাস্থ্যহানি ঘটে। হাঁটতে গেলে দুর্বল মনে হয় এবং পড়ে যায়। পাতলা পায়খানা হতে পারে। শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায় ।

এ রোগের কারণে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায়। ভ্রুণ অবস্থায় অত্যধিক মারা যায়। এ সব ডিমের ভেতরের বাতাসের থলেতে সবুজ বর্ণের ছত্রাকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ৷

চোখ আক্রান্ত হলে যে সব লক্ষণ প্রকাশ পায় সেগুলো হচ্ছেঃ

  • চোখে প্রদাহ দেখা দেয়। 
  • চোখ ফুলে যায় । 
  • চোখ দিয়ে সব সময় পানি পড়ে এবং চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যায় । 
  • চোখের ভিতর সাদা পূঁজ জাতীয় পদার্থ থাকে । 
  • চোখ চুলকাতে থাকে ৷ 
  • চোখের কর্ণিয়াতে ঘা হতে পারে 
  • চোখ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

 

চামড়া আক্রান্ত হলে- 

মরা চামড়া বা খুসকিযুক্ত হলুদ বর্ণের ক্ষত দেখা যায় ।

মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে- 

সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। স্নায়ুবিক লক্ষণাদি প্রকাশ পেয়ে অবশ হয়ে যেতে পারে ।

এ সব ছত্রাক যে সব টক্সিন তৈরি করে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে-

  • আফলাটক্সিন- যকৃতকে নষ্ট করে । 
  • হিমোটক্সিন- রক্তকণিকাকে নষ্ট করে। 
  • নিউরোটক্সিন-স্নায়ুতন্ত্রকে নষ্ট করে।

ময়না তদন্তের ক্ষত চিহ্ন

  • কণ্ঠ ও শ্বাসনালীতে এবং ফুসফুসে ক্ষত দেখা যায় ।
  • ফুসফুসের বায়ু থলেতে বিভিন্ন আকারে হলুদ বর্ণের গুটি থাকতে পারে। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত ফুসফুস এ সব গুটির জন্য শক্ত হয়ে যায়। গুটিগুলো অনেকটা কাউনের দানার মতো।
  • ফুসফুসে বা বায়ু থলেতে বাতাসের আকৃতির নরম তুলোর মতো সবুজ বর্ণের ক্ষত চিহ্ন দেখা যেতে পারে।
  • পেটের ভেতরে অন্যান্য ঝিল্লিতেও এ জাতীয় ক্ষত চিহ্ন দেখা যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়ঃ

  • রোগের লক্ষণাদি দেখে।
  • ময়না তদন্তের মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্ষত চিহ্ন দেখে।
  • অ্যাসপারজিলোসিস ছত্রাক পৃথক ও শনাক্তকরণের মাধ্যমে।

রোগ দমনঃ 

  • এ রোগে যাতে আক্রান্ত হতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে কারণ এ রোগের ভালো চিকিৎসা নেই । 
  • ডিম ফোটানোর স্বপ্ন, বাচ্চা বহণ করার বাক্স, ব্রুডার প্রভৃতি ছত্রাকযুক্ত রাখতে হবে।
  • ডিম ফোটানোর যন্ত্র, ব্রুডার, চিকপার্ড এসব ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিলে এ ছত্রাকের স্পোর থাকে না। এরপর ৯৯ ভাগ পানির সাথে এক ভাগ তুঁতে মিশিয়ে যে দ্রবণ তৈরি হয় তা দিয়ে ছত্রাক মারা যায় ।
  • হাঁসের ঘরে ব্যবহৃত বিছানা/লিটার যথা কাঠের গুড়ো, ধানের তুষ, খড়ের কুচি প্রভৃতি ধুলা বালিযুক্ত যতে হবে। চালুনি দিয়ে চেলে ধুলা বালি বাদ দেয়া যেতে পারে।
  • বিছানা যাতে পানিতে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে না হারে যার সে দিকে সব সমর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিছানা দেয়ার উদ্দেশ্যই হলো হাঁসের বিষ্ঠার সাথে বের হয়ে আসা পানিকে তবে নিয়ে শুল্ক অব‍ নিশ্চিত করা। কারণ আমাদের দেশের আবহাওয়াতে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা ছত্রাকের বংশ বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত স্থান। 

চিকিৎসা:

  • খাদ্যের সাথে সোডিয়াম প্রোপায়নেট বা জেনসেন ভায়লেট মিলিয়ে দিলে ছত্রাক বংশবৃদ্ধি করতে পারে না । 
  • মাইকোস্টেটিন ২০০ গ্রাম/প্রতিটন খাদ্যের সাথে মিশিয়ে ৭-১০ দিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায় ৷ ৫০ গ্রাম প্রতিটন খাদ্যের সাথে সব সময় খাওয়ালে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। টক্সিন বাইন্ডার ২ কেজি প্রতি টন খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে ৭(সাত) দিন। তুঁতে এক গ্রাম দুই লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১ দিন পর পর ৭ দিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায় ৷  
  • ক্রিস্টাল ভায়লেট ব্রিলিয়েন্ট, গ্রিন প্রভৃতির ব্যবহার মাঝে মাঝে সুফল দিয়ে থাকে ।

হাঁসের মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ

মাইকোপ্লাজমা এনাটিস নামক এক প্রকার মাইকোপ্লাজমা হাঁসে এ রোগ সৃষ্টি করে থাকে। আক্রান্ত হাঁসে এ রোগজীবাণু কয়েক সপ্তাহ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত বাঁচতে পারে। হাঁসের দেহের বাইরে, খামার পরিবেশে এ রোগজীবাণু মাত্র কয়েক দিন বাঁচতে পারে। পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকস এ রোগজীবাণু ধ্বংস করতে পারে না। আক্রান্ত হাঁসের বিষ্ঠায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ রোগজীবাণু তিনদিন এবং ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৮ সপ্তাহ এবং ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

মাইকোপ্লাজমোসিস রোগের বিস্তার:

  • আক্রান্ত হাঁসের ডিম্বাশয় থেকে ডিমে, ডিম থেকে বাচ্চায় । 
  • আক্রান্ত হাঁসের শুক্রকীট থেকে ডিমে, ডিম থেকে বাচ্চায় । 
  • আক্রান্ত হাঁসের লালা/ শ্লেষ্মার সাথে মিশে সুস্থ হাঁসের শ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করে। 
  • আক্রান্ত হাঁসের সাথে সুস্থ হাঁস রাখা হলে কিন্তু আক্রান্ত হাঁসের ব্যবহৃত দ্রব্যাদির মাধ্যমে সাধারণত এ রোগ ছড়ায় না, তবে আক্রান্ত হাঁসের সংস্পর্শে এসে অবাঞ্ছিত পশু পাখি যেমন ইঁদুর, তেলাপোকা, চড়ুই পাখি, কাক, বাজপাখি, মাছি এ রোগজীবাণু ছড়াতে পারে।

যেসব অবস্থা বা পরিবেশে রোগজীবাণুর ক্ষতিকর ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় সেগুলো হচ্ছে-

  • অন্যান্য কারণে সৃষ্ট শ্বসনতন্ত্রের উপসর্গসমূহ। 
  • ভাইরাস রোগের টিকার ব্যবহার। 
  • ঠান্ডা অবস্থা, খামারে অ্যামোনিয়া গ্যাসের উপস্থিতি। 
  • বিশুদ্ধ বাতাস চলাচলের অভাব। এ রোগের সুপ্তিকাল ৫-৬ দিন ।

রোগের লক্ষণ:

  • যে কোনো বয়সের হাঁস এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে বাচ্চা হাঁসে এ রোগ বেশি দেখা যায় ৷ 
  • বয়স্ক হাঁসের নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে ।
  • চোখে পুঁজের মতো পদার্থ জমা হয় ৷ 
  • চোখ বন্ধ করে রাখে। 
  • গলায় গড় গড় শব্দ হয়। 
  • ডিম পাড়া হাঁসের ডিম উৎপাদনের হার কমে যায় । 
  • খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। * হালকা হয়ে যায় অথাৎ ওজন কমে যায় । 
  • সাধারণত বাচ্চা হাঁস ৪-৮ সপ্তাহ বয়সে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে । 
  • এ রোগে আক্রান্ত হাঁসের শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত মারা যেতে পারে । 
  • এ রোগে আক্রান্ত হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটালে অধিকাংশ ডিমের মধ্যে ভ্রুণ অবস্থায় বাচ্চা মারা যায়। ডিম ফোটার পর বাচ্চাতে এ রোগে সংক্রমিত হতে পারে। 
  • এ রোগে আক্রান্ত হাঁস খামারে পালন করা বিপদজনক ।

এ রোগে মৃত হাঁসের ময়না তদন্তের ক্ষতচিহ্ন:

  • নাকের ছিদ্র পথে, শ্বাসনালীতে প্রদাহ, কফ বা আঠালো পদার্থ থাকতে পারে। 
  • বায়ুথলেতে দুধের ছানার মতো হলুদ বর্ণের পদার্থ থাকতে পারে ।
  • বায়ুথলের আবরণটি পুরু হয়ে যেতে পারে । 
  • হৃৎপিন্ড ও যকৃতের উপরিভাগে পাতলা নরম আবরণ দেখা যায়। 
  • ডিম্বাশয় লাল বর্ণের হয়ে থাকে।

রোগ নির্ণয় :

  • আক্রান্ত হাঁসের বা ময়না তদন্তের ক্ষতচিহ্ন এ রোগ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। 
  • আক্রান্ত ঝাঁকের হাঁসের রক্তের সিরাম পরীক্ষার মাধ্যমে অথবা মৃত হাঁস বা ডিমের ভেতর মৃত ভ্রুণ থেকে এ রোগজীবাণু পৃথক ও শনাক্তকরণের মাধ্যমে এ রোগ সম্বন্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। 
  • বাচ্চা হাঁসের রক্তের সিরাম পরীক্ষা না করে এ রোগ সম্বন্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে ভুল হবে। 
  • গবেষণাগারের ফলাফলের সাহায্যে রোগ নির্ণয় চূড়ান্তভাবে করা সম্ভব । 
  • শ্বাসনালী, বায়ুথলে, ফুসফুস, ডিমের ভেতরে মৃত ভ্রুণ প্রভৃতি নমুনা থেকে এ রোগের জীবাণু পৃথক করা যায়।

চিকিৎসা

রোগ দমন:

  • আক্রান্ত ঝাঁকের হাঁসগুলোকে চিকিৎসা করতে হবে। 
  • ভাইরাস রোগের টিকা মাইকোপ্লাজমামুক্ত এ নিশ্চয়তা কোম্পানি কর্তৃক দিতে হবে। 
  • যেসব টিকা হাঁসের ডিমের মাধ্যমে তৈরি হয় সেগুলো মাইকোপ্লাজমামুক্ত হাঁসের ডিম । 
  • আক্রান্ত ঝাঁকে হাঁসের রক্তের সিরাম পরীক্ষা করে রোগাক্রান্ত হাঁসগুলোকে প্রজনন খামার থেকে আলাদা করতে হবে। 
  • ডিম তা দেয়া কালে অধিক হারে ভ্রুণের মৃত্যু হলে, মৃত ভ্রুণ থেকে এ রোগ জীবাণু পৃথক করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • হাঁসের ছত্রাকজনিত দু'টি রোগের নাম লেখ । 
  • হাঁসের এসপারজিলোসিস রোগের লক্ষণ লেখ । 
  • মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো লেখ ।

 

 

 

Content added || updated By

হাঁসের পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

8

৩.৩ হাঁসের পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত রোগের নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

অপুষ্টিজনিত রোগ : 

খাদ্যের যে কোনো এক বা একাধিক খাদ্য উপাদানের ঘাটতির কারণে হাঁসের বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। হাঁসের ভিটামিন সমূহের অভাবজনিত রোগ, চিকিৎসা ও প্রতিকারের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

ক) ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ :

ভিটামিন- এ 

কতদিন পর্যন্ত হাঁসগুলো এই ভিটামিনের অভাবে ভুগছে তার উপর ভিত্তি করে ভিটামিন-‘এ' এর অভাবে সৃষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়। বয়স্ক হাঁসে লক্ষণ দেখা দিতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। কিন্তু বাচ্চা হাঁসে ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভিটামিন-'এ' এর অভাবজনিত লক্ষণগুলো অবস্থা ও বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • চোখের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়, চোখের পাতা ফুলে যায় ৷ 
  • নাক ও চোখ দিয়ে আঠার মতো জলীয় পদার্থ বের হয় এবং রাতকানা রোগ হয়। 
  • হাঁটু ও চামড়ার রং হলুদ ফ্যাকাশে হয়ে যেতে থাকে । 
  • খাবার গ্রহনে আগ্রহ কমে যায় ও পালকের চাকচিক্য কমে যেতে পারে। 
  • মাথার ঝুঁটি, গলার ফুল নীলাভ ও শুষ্ক হয়। 
  • ঝুঁটি শুষ্ক ও ফ্যাঁকাশে হয়ে যায় । 
  • বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায় ৷

অভাব নিরূপণ :

  • খাদ্যে ভিটামিন এর পরিমাণ সঠিক আছে কি না তার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা। 
  • রক্তের সিরামে ভিটামিন এর পরিমাণ নির্ণয় করা ৷
  • চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় কি না তা লক্ষ্য করার মাধ্যমে এই ভিটামিনের অভাবজনিত অবস্থা নিরূপণ করা যায়।

প্রতিকার ও চিকিৎসা :

খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন। শাকসবজি, ভুট্টা, গম, ছোট মাছ, ফলমূল, ফলমূলের খোসা, হাঙ্গর মাছের তৈল খাওয়ালে ভিটামিন-এ এর অভাব দরূ হয়। লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিদিন বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন এ.ডি.ই. দ্রবণ প্রস্তুতকারকের নির্দেশমত খাদ্য বা পানির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ করতে হবে।

ভিটামিন ডি 

শরীরের হাড় এবং ডিমের খোসার গঠনের জন্য অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর কার্যকারিতার জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত জরুরি। সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে বা খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে ভিটামিন- ডি নষ্ট হয়ে যায় ফলে হাঁস খাবার হতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন-ডি পায় না।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • পায়ের অস্থি নরম, মোটা ও বাঁকা হয়ে যায়, ফলে হাঁস ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। একে “রিকেট/অস্টিওম্যালেসিয়া” রোগ বলা হয়। 
  • ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে হাড় বাঁকা হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় । 
  • ঠোঁট, হাড় ও পায়ের নখ নরম হয়ে যায়, ফলে হাঁস হাঁটুর উপর ভর দিয়ে চলে । 
  • দৈহিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে ও পাঁজর ফুলে যায় ৷

রোগ নিরূপণ :

  • লক্ষণ দেখে রোগ নিরূপণ তথা ভিটামিন-ডি এর অভাব বোঝা যায় ৷ 
  • খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ পরিমাপ করে এবং
  • সন্দেহজনক হাঁসকে যদি ভিটামিন-ডি সরবরাহ করে ভালো ফল লাভ করা যায় তাহলে বুঝতে হবে হাঁসগুলো ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভুগছিল।

সতর্কতা : অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন-ডি খাদ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োগ করলে হাঁসের কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন কোম্পানির এ.ডি.ই. দ্রবণ নির্দেশমত খাওয়াতে হবে। 
  • যেহেতু ভিটামিন-ডি এর সাথে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত তাই একই সাথে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম এর প্রয়োজনীয় ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • খামারে ছোট বাচ্চাগুলোকে সম্ভব হলে দিনের কিছুটা সময় রোদ্রের সংস্পর্শে আসার সুযোগ দিলে এবং সকাল বেলা হাঁসের জন্য সূর্যালোকের ব্যবস্থা করলে ভিটামিন-ডি এর অভাবজনিত রোগের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।

 

ভিটামিন ই 

ভিটামিন -ই এর অভাবে হাঁসের এনসেফালোমেলাসিয়া, মাসকুলার ডিসট্রোফি, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি রোগ হতে পারে। খাদ্যে অপর্যাপ্ত সেলিনিয়ামের উপস্থিতি, বিভিন্ন উপকরণের সঠিক অনুপাতে মিশ্রণ না করা, তৈল জাতীয় খাদ্যের অক্সিডেশন ইত্যাদির কারণে ভিটামিন-ই এর অভাব হতে পারে। 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • আক্রান্ত হাঁস হাঁটতে পারে না, পা টান করে ছেড়ে দেয় । 
  • বাচ্চার মাথার বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও জায়গাগুলো নরম হয়। এ রোগকে “এনসেফালোমেলাসিয়া” বলে । 
  • বুক ও উরুর মাংস শুকিয়ে যায়, একে “মাসকুলার ডিস্ট্রফি” বলে । 
  • চামড়ার নিচে পানি জমার কারণে শরীর ফুলে যায়, একে “অ্যাকজুডেটিভ ডায়াথেসিস” বলে ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • চিকিৎসার জন্য বাজারে প্রাপ্ত এ.ডি.ই দ্রবণ প্রস্তুতকারকের নির্দেশমতো খাদ্য বা পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। 
  • রোগ প্রতিরোধের জন্য সর্বদা খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মাত্রা বজায় রাখতে হবে। 
  • খাদ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তৈল জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। 
  • সংরক্ষিত খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করতে হবে। 
  • প্রয়োজনীয় পরিমাণ খনিজ বিশেষত সেলেনিয়াম খাদ্যে মিশাতে হবে।

 

ভিটামিন 'কে' (এন্টিহিমোরেজিক ভিটামিন)

এই ভিটামিনটি শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এর অভাব হলে ঠোঁট কাটার সময় বা সামান্য আঘাতে অধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার আমাশয় আক্রান্ত হলে পায়খানায় প্রচুর রক্ত দেখা যায়। খাদ্য ও পানিতে যদি সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয় তবে এই ভিটামিনটির মেটাবলিজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে অন্ত্রের মধ্যে ভিটামিন-কে উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াসমূহ মরে যায়, ফলে দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে এ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্যদ্রব্য অনেক দিন সংরক্ষণ করলেও খাদ্যে উপস্থিত এ ভিটামিনটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • এ ভিটামিনের ঘাটতির কারণে শরীরে কোথাও কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে রক্ত পড়া বন্ধ হয় না। ফলে হাঁসের মৃত্যু ঘটে। 
  • ঠোঁট কাটার পর অধিক সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয় ফলে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়ে হাঁস মারা যেতে পারে। 
  • চামড়া ও মাংস পেশিতে রক্তপাত হয়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • ঠোঁট কাটার কয়েক দিন পূর্ব হতে খাদ্যে ভিটামিন-কে সরবরাহ করা প্রয়োজন ৷ 
  • রক্ত আমাশয় এর চিকিৎসা চলাকালেও অতিরিক্ত ভিটামিন-কে সরবরাহ করা প্রয়োজন । 
  • সবুজ ঘাস, মাছের গুঁড়া শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ালে ঘাটতি দূর হয় । 
  • চিকিৎসার জন্য খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে। 
  • অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দেয়ার সময় এবং তারপর কিছুদিন খাদ্যে ভিটামিন-কে সরবরাহ করতে হবে।

 

ভিটামিন ‘বি -১' (থায়ামিন) 

পানিতে দ্রবণীয় এ ভিটামিনটির অভাবে খুব তাড়াতাড়ি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। খাদ্যে অধিক পরিমাণে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন বি-১ বিদ্যমান না থাকলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় । 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • অরুচি এবং খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা যায় । 
  • দৈহিক ওজন হ্ৰাস পায় । 
  • পালক উসকো খুসকো হয়ে যায় । 
  • দুর্বলতা এবং হাঁটতে অনীহা দেখা যায়। 
  • ঝিমানো ভাব লক্ষ্য করা যায়। 
  • ঘাড় বাঁকানো বা ঘুরিয়ে উল্টোভাবে রাখা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায় ৷ 
  • কখনও কখনও হাঁস ঘাড় পিছনের দিকে বাঁকা করে উর্ধ্বমুখী হয়ে অবস্থান করে। একে “স্টার । গেজিং” বলে ।

রোগ নির্ণয় :

  • লক্ষণ অনুযায়ী ভিটামিন বি-১ এর অভাবে ভুগছে বুঝতে পারা । 
  • আক্রান্ত হাঁসের খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে আক্রান্ত হাঁসগুলো ভিটামিন বি-১ এর অভাবে ভুগছে কি না। 

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • পানি বা খাবারে ভিটামিন বি-১ সরবরাহ করা। প্রথম কয়েক দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থাৎ ১০- ১৫ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। 
  • খুব অসুস্থ হাঁসের জন্য আরও বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি-১ খাবারে সরবরাহ করা প্রয়োজন । 
  • এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিদিন খাবারের সাথে ভিটামিন বি-১ মিশিয়ে দিতে হবে।

 

ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লাভিন)

 সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং খাবার পানির পিএইচ (অম্লত্ব) ভিটামিন বি-২ কে নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই খাদ্যে এর অভাব দেখা দিতে পারে।

অভাবজনিত লক্ষণ : 

বাচ্চা অবস্থায় প্রথম কয়েক সপ্তাহে ভিটামিনটির অভাব হলে হাঁসের মধ্যে-

  • দৈহিক দুর্বলতা ও অপর্যাপ্ত বৃদ্ধি হয়। 
  • শুকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিকভাবে পালক গজায় না । 
  • পাতলা পায়খানা হয়। 
  • তীব্র আক্রান্ত হাঁসের পা অবশ হয়ে গিয়ে বুকের উপর ভর দিয়ে হাঁটে। 
  • প্রায় সময় এ ভিটামিনের অভাবে পায়ের অবশতাজনিত রোগ দেখা যায় যাকে “কার্ল-টো- প্যারালাইসিস” বলে। এক্ষেত্রে দুই পা দু' দিকে অর্থাৎ সামনের দিকে এক পা চলে পিছনের দিকে এক পা চলে যায় ফলে পাগুলো অচল হয়ে যায়। তাই তারা হাঁটতে পারে না এবং না খেয়ে মৃত্যুবরণ করে। 
  • ব্রিডার হাঁস হলে ডিম হতে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় এবং ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায়।

রোগ নিরূপণ : 

রোগের লক্ষণ দেখে ভিটামিন বি-২ সরবরাহ করলে যদি লক্ষণগুলো দ্রুত চলে যায় তবে বুঝতে হবে হাঁসগুলো এ ভিটামিনের অভাবে ভুগছিল ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  • খাদ্যের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি-২ থাকা দরকার । 
  • মাঝে মধ্যে পানিতে অন্যান্য ভিটামিনের সাথে বি-২ সরবরাহ করা প্রয়োজন যাতে এই ভিটামিনের অভাব না হয়। 
  • আক্রান্ত হাঁসগুলোকে আলাদাভাবে রেখে ভিটামিন বি-২ খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায় ।

 

ভিটামিন বি-৬ (পাইরিডক্সিন) 

খাবারের মধ্যে অধিক পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকলে এবং সে অনুযায়ী ভিটামিন বি-৬ এর স্বল্পতা থাকলে সাধারণত এ ভিটামিনটির অভাবজনিত সমস্যা দেখা যায় । কারণ এটি প্রোটিনের বিপাকে সাহায্য করে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা বা অরুচি, উসকো খুসকো পালক দেখা যায় ৷ 
  • দৈহিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ বা কম হওয়া। 
  • প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় । 
  • গুরুতর আক্রান্ত হাঁসগুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে ছুটাছুটি করতে থাকে এবং সবশেষে খিঁচুনি দেখা যায় এবং অবশেষে মৃত্যু হয় ।

রোগ নির্ণয় : 

খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ নির্ণয় করে ও রোগের লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণার ভিত্তিতে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে ঐ ঝাঁকের হাঁসগুলো ভিটামিন বি-৬ এর অভাবে ভুগছিল।

প্রতিকার ও চিকিৎসা :

  • লক্ষণ প্রকাশ পেলে খাবারের বা পানির সাথে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করে এ রোগের লক্ষণ প্রশমিত করা যায় ৷ 
  • নিয়মিত পরিমাণমত ভিটামিন বি-৬ খাবারের সাথে সরবরাহ করলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় না।

 

বায়োটিন 

অধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে বায়োটিন সৃষ্টিকারী জীবাণু মরে গিয়ে কিংবা খাদ্যের মধ্যে বায়োটিনের পরিমাণ কম হলে অথবা খাদ্যে বায়োটিন নষ্টকারী কোনো পদার্থের উপস্থিতি থাকলে হাঁসে এটার অভাবজনিত বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চা হাঁসের শরীরের অসাড়তার হাত থেকে রক্ষার জন্য এ ভিটামিনটির বিশেষ প্ৰয়োজন ৷ 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • পালক ভেঙে ঝুলে পড়ে ও পরে হাড় বাঁকা হয়ে যেতে পারে। 
  • অনেক সময় চোখের পাতা বুজে থাকে বা চোখ বন্ধ হয়ে যায় ।
  • বাচ্চা হাঁসের পায়ের নিচে, মুখের কোণায় এবং চোখের পাতায় কড়া পড়ে যেতে পারে। 
  • ডিমের ভিতরে বাচ্চা মরে যায়। 
  • ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় ।

রোগ নির্ণয় :

  • লক্ষণ দেখে বায়োটিন প্রয়োগের ফলে যদি চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে হাঁসের বায়োটিনের অভাবে ভুগছিল। 
  • খাদ্যস্থিত বায়োটিনের পরিমাণ এবং রোগের লক্ষণ দেখে সমন্বয় করেও রোগ নির্ণয় করা যায়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ বায়োটিন মিশাতে হবে। 
  • রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে পানিতে অতিরিক্ত বায়োটিন মিশাতে হবে। 
  • খাদ্য বা পানিতে অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার পরিহার করতে হবে। 
  • খাদ্যস্থিত বায়োটিনের পরিমাণ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যাতে বায়োটিনের অভাব না হয়।

 

কলিন : 

হাঁসের শরীরে বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপে কলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শারীরিক অসাড়তা দূর ও শরীরের বৃদ্ধির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের বিভিন্ন টিস্যু বা কলার গঠনে এবং স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাঁসের খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে কলিন সরবরাহ করা বাঞ্ছনীয় ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • পায়ের হাড় নরম ও বাঁকা হয়ে হাঁস অসাড় হয়ে যায়। 
  • দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। 
  • ব্রয়লার ব্রিডার হাঁসের কলিজায় অতিরিক্ত চর্বি ও রক্তক্ষরণজনিত লক্ষণ দেখা দেয় । 
  • ব্রয়লার ব্রিডার হাঁসের মৃত্যুর হার বেড়ে যায়, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায় ফলে ডিম পাড়াও কমে যায়।

রোগ নির্ণয় : 

লক্ষণ দেখে এবং পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এছাড়াও খাদ্যস্থিত কলিন বৃদ্ধি করে যদি ফল পাওয়া যায় তবে ধরতে হবে কলিনের অভাব ছিল।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ 

খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ সয়াবিন মিল, গম ভাঙা, ফিস মিল ইত্যাদি থাকায় হাঁসে কলিনের অভাব সাধারণত হয় না। কারণ সয়াবিন মিল ও ফিসমিলে প্রচুর পরিমাণে কলিন থাকে। আবার গম ভাঙার মধ্যে বিটেইন নামক এক প্রকার পদার্থ থাকে যা কলিনের মতো মিথাইল দানকারী হিসেবে কাজ করে কলিনের অভাব পূরণ করে। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, প্রায়ই দেখা যায় হাঁসে কলিনের অভাব হয়। তাই বাজারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যে কলিন বা কলিন ক্লোরাইড পাওয়া যায়, তা প্রয়োজন মত খাবারে মিশিয়ে দিতে হবে। তবেই কলিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব ।

বাজারে প্রাপ্ত কলিন প্রায় সময়ই কলিন ক্লোরাইড নামে বিভিন্ন শতাংশের (%) কোলিন ক্লোরাইড হিসেবে পাওয়া যায়। যেমন : ক্লোরাইড ৫০% বা কলিন ক্লোরাইড ৪০% ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, কোলিন ক্লোরাইডের মধ্যে প্রকৃত কলিনের পরিমাণ ৮৬.৭৯%। তাই উক্ত কলিন ক্লোরাইড খাবারে মিশানোর সময় প্রকৃত কলিনের পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ণয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী কলিন ক্লোরাইড মিশাতে হবে।

 

ভিটামিন বি-১২ (সায়ানো-কোবালামিন)

শরীরের কোষের নিউক্লিক এসিড তৈরিতে, শর্করা ও চর্বির বিপাকীয় প্রকিয়ায় ভিটামিন বি-১২ সাহায্য করে। তন্ত্রের বিভিন্ন জীবাণু এই ভিটামিনটি তৈরি করে বিধায় এই ভিটামিনটির অভাবজনিত রোগ খুব কম দেখা দেয় এবং খাদ্যে এর প্রয়োজন অত্যন্ত নগণ্য। পাখির বিষ্ঠার সাথে যে জীবাণু বের হয় এবং লিটারে পড়ে সেগুলোও এই ভিটামিনটি তৈরি করতে পারে। ফলে লিটারে পালিত মোরগ-মুরগির এই ভিটামিনের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা আরও কম। যদি হাঁসকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অত্যধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়, তবে এই ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দৈহিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় ৷ 
  • মৃত্যুর হার বেড়ে যায় এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় । 
  • ডিমের মধ্যে বাচ্চার মৃত্যুও ঘটতে পারে।

রোগ নির্ণয় : 

অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ইতিহাস, লক্ষণ ইত্যাদি দেখে ভিটামিন বি-১২ দিয়ে চিকিৎসা দিলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায়, তবে বুঝতে হবে হাঁসে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব ছিল ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • লক্ষণ দেখা দিলে পানি বা খাবারের সাথে ভিটামিন বি-১২ সরবরাহ করতে হবে। 
  • সুস্থ অবস্থায় মাঝে মাঝে পানির সাথে ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে।

 

ভিটামিন সি 

স্ট্রেস বা পীড়ন প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর উপাদান হিসেবে ভিটামিন-সি ব্যবহার হয়ে থাকে। হাঁসে ভিটামিন সি যথেষ্ট পরিমাণে নিজেরাই উৎপাদন করতে পারে। দৈহিক বৃদ্ধি, বীর্য উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন রকম বিষক্রিয়া বিশেষত কিছু খনিজ লবণের বিষক্রিয়ার হাত থেকে হাঁসকে রক্ষা করার ক্ষমতা ভিটামিন-সি এর রয়েছে। খাদ্যে ভিটামিন-সি এর অভাব থাকলে বা হাঁস অত্যধিক গরম আবহাওয়ায় থাকলে বা পীড়ণ (স্ট্রেস) সৃষ্টি হলে হাঁসের ভিটামিন-সি এর অভাব দেখা দিতে পারে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। 
  • দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায় ৷ 
  • খাদ্য হজম কম হয়। 
  • পীড়নের মধ্যে পড়লে সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে অর্থাৎ পীড়ণ সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায় । 
  • প্রজনন হাঁসার প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-সি মেশাতে হবে। 
  • হাঁসের ঘরের মধ্যে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • পীড়ন হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে পানির সাথে অতিরিক্ত ভিটামিন-সি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  • ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ও পরে কয়েকদিন ভিটামিন-সি সরবরাহ করতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • ভিটামিন-এ এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ কীভাবে বোঝা যায়?
  •  ভিটামিন-ডি এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ । 
  • ভিটামিন বি-১ এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ । 
  • ভিটামিন বি-৬ এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ ।

 

খ) খনিজ পদার্থের অভাবজনিত রোগ (ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস)

খনিজ পদার্থের কাজ 

* হাঁসের দৈহিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য রক্ষা ও প্রজননের জন্য খনিজ পদার্থ অত্যাবশ্যক । 

* হাঁসের দেহের অস্থি গঠন, ডিমের খোসা তৈরীতে খনিজ পদার্থ অত্যাবশ্যক । 

* দেহের অম্লত্ব-ক্ষারত্ব সমতা রক্ষা করে । 

* খনিজ শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্যে বিপাকে সাহায্যে করে।

 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • আক্রান্ত হাঁসের ঠোঁট নরম ও বাঁকা হয় । 
  • অস্থির গঠন ঠিকমতো হয় না ।
  • রক্ত জমাট বাঁধে না । 
  • রিকেট রোগ ও কেজ লেয়ার ফ্যাটিগ রোগ হয় । 
  • বাচ্চা ফোটার হার কমে যায়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • মাছের গুঁড়া, ঝিনুক, হাড়, দানা শস্য, পালং শাক ইত্যাদি হাঁসের খাদ্যে সরবরাহ করলে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় । 
  • হাঁসের খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে- বাচ্চা হাঁসে ২.২ : ১। 
  • হাঁসের খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে- বাড়ন্ত হাঁসে ২.৫ : ১। 
  • হাঁসের খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে-ডিমপাড়া হাঁসে ৯ : ১।

 

সোডিয়াম 

সোডিয়ামের কাজঃ

  • দেহের অম্ল-ক্ষারত্ব সমতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। 
  • অস্থি গঠন করে।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না। 
  • হাড় নরম হয় । 
  • রক্ত পাতলা হয়। 
  • ডি-হাইড্রেশন দেখা দেয় ও মৃত্যুও ঘটে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা : খাদ্যে সাধারণ লবণ সরবরাহ করে এর অভাব দূর করা যায়।

 

জিংক 

জিংকের কাজঃ

  • হাঁসের দৈহিক বৃদ্ধি, পালক গজানো ও ডিম উৎপাদনের জন্য জিংক প্ৰয়োজন ৷ 
  • অস্থির গঠনে জিংক প্ৰয়োজন ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না । 
  • পালক কম গজায় ও পায়ের চামড়া উঠে যায়। 
  • পায়ের হাড় খাটো ও মোটা হয়। 
  • হাঁস ঠোকরা ঠুকরি করে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা : হাঁসের খাদ্যে জিংকের বা জিংক সমৃদ্ধ উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে ।

 

সেলেনিয়াম 

সেলেনিয়ামের কাজঃ 

সেলেনিয়াম হচ্ছে গুটাথায়োন পারোক্সিডেজ ( Glutathion Peroxidase) নামক এনজাইমের অংশ যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • ফুটানোর ডিম বসানোর ৪র্থ দিনে ভ্রুণের মৃত্যু হয়। 
  • চামড়ার নিচে পানি জমে । 
  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না । 
  • রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা : ছোলা জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে বা খাদ্যে সেলেনিয়াম যুক্ত করলে এর অভাব দূর হয় ।

 

লৌহ ও কপার 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • রক্তশূণ্যতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হয় ।
  • লাল পালক এর রং ফ্যাকাশে হয় । 
  • স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ৷

প্রতিকার ও চিকিৎসা : শাকসবজি, ঘাস, মাছের গুঁড়া ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। খাদ্যে ফেরাস সালফেট ও কপার সালফেট সংযোজন করতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • হাঁসের শরীরে খনিজ পদার্থের কাজ লেখ।
  • ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ ।
  • সেলেনিয়াম এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ ।

 

 

Content added By

হাঁসের প্রতিরোধক টিকাদান কর্মসূচি

5

৩.৪ হাঁসের প্রতিরোধক টিকাদান কর্মসূচি

টিকাবীজ হচ্ছে রোগের প্রতিরোধক যা রোগের জীবাণু বা জীবাণুর অ্যান্টিজেনিক উপকরণ দ্বারা তৈরী করা হয়। হাঁসের দেহের ভেতর রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য টিকাবীজ প্রয়োগ করতে হয়। টিকাবীজ প্রয়োগের ফলে দেহের ভেতর রক্ত বা রক্তরসে এক প্রকার ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামক আমিষ পদার্থ তৈরী হয়। যাকে এন্টিবডি বলা হয়। এন্টিবডিই হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ পদার্থ। এজন্য কৃত্রিম উপায়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে টিকা প্রদানের যে সিডিউল তৈরী করা হয় তাই টিকাদান কর্মসূচী।

বি. দ্র. প্রতিষেধক টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানির নির্দেশ মোতাবেক প্রয়োগ করা উচিত ।

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • হাঁসের প্লেগ রোগের টিকাদান পদ্ধতি লেখ। 
  • হাঁসের কলেরা রোগের টিকাদান পদ্ধতি লেখ। 
  • হাঁসের টিকারী ভালো কোথায় পাওয়া যায়?

 

 

Content added By

জৈব নিরাপত্তা (বায়োসিকিউরিটি)

6

৩.৫. জৈব নিরাপত্তা (বাজোসিকিউরিটি)

খামারকে রোগমুক্ত রাখতে ও কাশিত উৎপাদন পেতে হলে বারোসিকিউরিটির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বারোসিকিউরিটি বজার রাখার কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

  • শুকনা ও খোলামেলা জায়গায় যা জলাশয়, বাজার ও বনজঙ্গল থেকে দূরে, স্বাস্থ্যসম্মত ঘর তৈরি করতে হবে যেন হাঁস পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়। সেডের নিকটে বড় গাছ বা ঝোঁপঝাড় রাখা যাবে না। 
  • খামারে নতুন বাচ্চা উঠানোর আগে খামার সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 
  • সংখ্যানুপাতে ঘরে খাদ্যের পাত্র ও পানি পাত্র দিতে হবে। 
  • সালমোনেলা ও মাইকোপ্লাজমা রোগ মুক্ত হ্যাচারি থেকে সুস্থ সবল বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। 
  • ভালো গুণগতমানসম্পন্ন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। 
  • পরিচর্যাকারী ছাড়া খামারে মানুষের অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিবার খামারে প্রবেশ করা ও খামার হতে বের হওয়ার সময় হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 
  • খামারে ব্যবহারের জন্য আলাদাভাবে পোশাক ও জুতার ব্যবস্থা করতে হবে । 
  • খামারে কোনো হাঁস অসুস্থ হলে দ্রুত পৃথক করতে হবে এবং মারা গেলে সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে ২ হাত গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। অসুস্থ হাঁস বাজারে বিক্রি করা যাবে না। 
  • খামারে যাতে বন্য পাখি, কুকুর, শিয়াল ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণি প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ এদের মাধ্যমে রাণীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা ও সালমোনেলা রোগ ছড়াতে পারে।
  • খামারের চারদিকে বেড়া দেয়া যাতে বন্য প্রাণি, কুকুর, বিড়াল, দেশি হাঁস বা মুরগি ঢকুতে না পারে। এছাড়া প্রবেশ পথে একটি “প্রবেশ নিষেধ” সাইনবোর্ড টানানো । 
  • খামারের নিজস্ব পরিবহন না থাকলে বাজারের পরিবহনকে খামারের বেড়ার মধ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। যানবাহানের চালক বা কর্মীকে খাদ্য বা অন্যান্য দ্রব্য নিয়ে খামারে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। খামারের কর্মী দ্বারা এই দ্রব্যগুলো নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানরত পরিবহন থেকে আনতে হবে। তবে প্রয়োজনে পরিবহনের গায়ে ভালোভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে করে ১০০ মিনিট রাখার পর ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে। 
  • সপ্তাহে একদিন খামারে মাচা, বেড়া ও আশপাশ জীবাণুনাশক দ্বারা স্প্রে করতে হবে।
  • খামারের যন্ত্রপাতি, ডিমের ট্রে ইত্যাদি ভালোভাবে গরম সাবান-পানি দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে তারপর জীবাণুনাশকে চুবিয়ে বা স্প্রে করে রোদে শুকিয়ে খামারে প্রবেশ করাতে হবে।
  • বাজার থেকে খামারি ফেরার পর জুতা ভালোভাবে সাবান দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। কাপড় ধুয়ে নিজে গোসল করতে হবে।
  • কখনই ডিম/হাঁস বহনকারিকে খামারে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না । 
  • অবিক্রিত হাঁস ও ডিম বাজার হতে খামারে ফিরিয়ে আনা যাবে না ।
  • বর্জ্য পদার্থ, বিষ্ঠা, লিটার নিয়মিত পরিষ্কারসহ হাঁস-মুরগির ঘরের ভেতরের পরিবেশ অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হবে।
  • প্রতি ব্যাচ সম্পন্ন করার কমপক্ষে ১৫ দিন পর বাচ্চা উঠানো যাবে। বাচ্চা উঠানোর পূর্বে মাচা, বেড়া, লিটার, খাদ্য পাত্র, পানি পাত্র, দেয়াল ও আশপাশ ভালোভাবে জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। পুরো ঘর ফিউমিগেশন করতে হবে । 
  • ব্যবহৃত খাদ্যপাত্র, পানি পাত্র ও লিটার ৩ দিন পরপর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • পুরাতন হাঁসের ফ্লকে নতুন হাঁস ঢোকানো যাবে না । 
  • খামারের বর্জ্য দূরে কোথাও মাটি চাপা দেয়া বা পঁচানো বা কম্পোস্ট তৈরি করা যেতে পারে বা পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে । 
  • বিভিন্ন প্রজাতির এবং বিভিন্ন বয়সের হাঁসকে আলাদাভাবে পালন করতে হবে। 
  • পারিবারিক খামারের পরিচর্যাকারিরা হাঁসের ঘর পরিষ্কার ও যত্ন নেয়ার পর হাত-পা, স্যান্ডেল-জুতা ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। * গৃহপালিত হাঁসকে মুরগি, কবুতর ও বন্য প্রাণির সাথে মিশতে দেয়া যাবে না । 
  • খামারে কাজ করার সময় নাকে মাস্ক পড়তে হবে। কারণ হাঁস বার্ড ফ্লু ভাইরাসের বাহক হিসাবে কাজ করে। 
  • পারিবারিক ছোট খামারের বিষ্ঠা ও অন্যান্য আবর্জনা প্রতিদিন পরিষ্কার করে ঢাকনাযুক্ত গর্তে ফেলতে হবে। 
  • বাড়ির শিশুদের অসুস্থ ও মৃত হাঁস হতে দূরে রাখতে হবে। 
  • খামার থেকে ডিম তোলা ও হাঁস ধরার পর শিশুদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে।
  • শিশুদের হাঁস ও পোষা পাখি থেকে দূরে রাখতে হবে এবং খেলতে দেয়া যাবে না ।
  • অসুস্থ হাঁস জবাই করে খাবারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। 
  • অসুস্থ হাঁস বাজার থেকে কেনা যাবে না । 
  • অতিথি পাখি বার্ড ফ্লু ভাইরাস বহন করে বিধায় যেখানে অতিথি পাখি চরে সেখানে পোষা হাঁস চরতে দেওয়া যাবে না । 
  • বন্য পাখি বা অতিথি পাখি শিকার করা বা কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

অনুসন্ধানমূলক কাজ 

তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন একটি হাঁসের খামার পরিদর্শন কর। খামারে হাঁসের যে সমস্ত রোগ | পরিলক্ষিত হলো তার লক্ষণসহ একটি তালিকা প্রস্তুত কর।

 

 

 

Content added By

জব ০৭ঃ ডাক প্লেগ রোগের টিকাদান পদ্ধতি

5

জব ০৭: ডাক প্লেগ রোগের টিকাদান পদ্ধতি

পারদর্শিতার মানদণ্ড: 

১) ডাক প্লেগ রোগের টিকা সনাক্ত করা 

২) সঠিক পদ্ধতিতে টিকাবীজ পাতিত পানির সঙ্গে মিশ্রিত করা 

৩) ডাক প্লেগ রোগের টিকা প্রদান করা 

৪) টিকা প্রদান করে খামার রোগমুক্ত করা

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

 

(গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)

 

কাজের ধারাঃ 

১. টিকা প্রদানের যন্ত্রপাতি জীবাণুযুক্ত করে নাও । 

২. বিশ্ব উৎস হতে টিকাবীজ সংগ্রহ কর এক্ষেত্রে ওয়ার্কশপের রেফ্রিজারেটরে রক্ষিত টিকাবীজ সংগ্রহ কর। 

৩. সূচী মোতাবেক সুস্থ হাঁসের শেডে যাও। 

৪. টিকা প্রদানের সময় হলে দিনের ঠান্ডা অংশে (সকাল বা সন্ধ্যা) হায়াযুক্ত স্থানে টিকাবীজ প্রস্তুতকারীর নির্দেশ মোতাবেক ডায়লুরেন্ট বা পাতিত পানির (এক্ষেত্রে তায়ালের টিকা বীজ ১০০ সিসি পানির সাথে মিশাও) সাথে মিশ্রিত কর।

ক)ভায়ালটি (ধূসর বর্ণের ট্যাবলেট আকারে ১০০ মাত্রার টিকা বীজ) সংগ্রহ কর। 

খ) ভাষালে রক্ষিত টিকাবীদ্ধ ১০০ সিসি পাতিত পানিতে মিশ্রিত কর। 

গ) ১ সিসি করে বুকের মাংসে পুশ কর। 

খ) ১মাস বয়সে প্রথমবার এবং প্রতি ৬ মাস অন্তর পরবর্তী ডোজ প্রদান কর।

৫. এরপর হাঁসকে সঠিকভাবে ধরে আয়ত্তে আন, নিম্নলিখিত ভাবে টিকা প্রদান কর।

৬. টিকাদানকৃত হাঁসকে পৃথক করে রাখ । 

৭. গরমকালে ১ঘন্টা ও শীতকালে ২ঘন্টার মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম শেষ কর। 

৮. অবশিষ্ট টিকা ও ভায়াল মাটিতে পুতে ফেল । 

৯. পুনঃ ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে সংরক্ষণ কর ।

বিঃ দ্রঃ বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক বাজারজাতকৃত টিকাবীজ তাদের সরবরাহকৃত ডায়লুয়েন্টের সাথে মিশিয়ে কোম্পানির নির্দেশ মোতাবেক প্রয়োগ করতে হয়।

 

সতর্কতাঃ

১) অসুস্থ হাঁসকে টিকা দেয়া যাবে না । 

২) টিকা প্রদান ও মিশ্রণের সময় অবশ্যই নির্ধারিত মাত্রা মেনে চলতে হবে। 

৩) অবশিষ্ট টিকা ও ভায়াল মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

 

 

Content added By

জব ০৮ঃ ডাক কলেরা রোগের টিকাদান পদ্ধতি

2

জব ০৮: ডাক কলেরা রোগের টিকাদান পদ্ধতি

পারদর্শিতার মানদণ্ড 

১) ডাক কলেরা রোগের টিকা সনাক্ত করা 

২)সঠিক পদ্ধতিতে টিকাবীজ পাতিত পানির সঙ্গে মিশ্রিত করা 

৩) ডাক কলেরা রোগের টিকা প্রদান করা 

৪) টিকা প্রদান করে খামার রোগমুক্ত করা

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

 

(গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)

কাজের ধারাঃ 

১. টিকা প্রদানের যন্ত্রপাতি জীবাণুযুক্ত কৰা । 

২. বিশ্ব উৎস হতে টিকাবীজ সংগ্রহ কর, এক্ষেত্রে আর্কশপের রেফিজারেটরে রক্ষিত টিকাবীজ সংগ্রহ কর। 

৩. সূচী মোতাবেক সুস্থ হাঁসের শেডে যাও। 

৪. টিকা প্রদানের সময় বলে দিনের ঠাণ্ডা অংশে (সকাল বা সন্ধ্যা) ছায়াযুক্ত স্থানে টিকাবীজ প্রস্তুতকারি নির্দেশ মোতাবেক ডায়লুয়েন্ট বা পাতিত পানির (এক্ষেত্রে তায়ালের টিকাবীজ ১০০ সিসি পানির সাথে মিশ্রিত কর।

ক) টিকাবীজ (কাঁচের বোতলে গুলানো অবস্থায় ১০০ মাত্রার টিকারীজ) সংগ্রহ কর। 

খ)এ ভ্যাকসিন সিরিঞ্জের সাহায্যে ১ সি সি করে চামড়ার নীচে ইনজেকশন আকারে প্রয়োগ কর । 

গ) ৪৫-৬০ দিন বয়সে প্রথমবার তারপর প্রতি ৬ মাস পর পর টিকা প্রয়োগ কর ।

৫. এরপর হাঁসকে সঠিক ভাবে ধরে আয়ত্বে আন এবং নিম্নলিখিতভাবে টিকা প্রদান কর।

৬. টিকাদানকৃত হাঁসকে পৃথক করে রাখ । 

৭. গরমকালে ১ঘন্টা ও শীতকালে ২ঘন্টার মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম শেষ কর। 

৮. অবশিষ্ট টিকা ও ভায়াল মাটিতে পুঁতে ফেল । 

৯. পুনঃ ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে সংরক্ষণ কর। 

বিঃ দ্রঃ বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক বাজারজাতকৃত টিকাবীজ তাদের সরবরাহকৃত ডায়লুয়েন্টের সাথে মিশিয়ে কোম্পানির নির্দেশ মোতাবেক প্রয়োগ করতে হয়।

 

সতর্কতাঃ

 ১) অসুস্থ হাঁসকে টিকা দেয়া যাবে না । 

২) টিকা প্রদান ও মিশ্রণের সময় অবশ্যই নির্ধারিত মাত্রা মেনে চলতে হবে। 

৩) অবশিষ্ট টিকা ও ভায়াল মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

 

 

Content added By

অনুশীলনী

2
Please, contribute by adding content to অনুশীলনী.
Content

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

2

১. রোগ কাকে বলে? 

২. সংক্রামক রোগ কাকে বলে? 

৩. হাঁসের ব্যাকটেরিয়াজনিত দু'টি রোগের নাম লেখ । 

৪. হাঁসের ভাইরাসজনিত রোগের নাম লেখ । 

৫. ডাক কলেরা রোগের জীবাণুর নাম লেখ ।

 

 

Content added By

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

2

১. একটি সুস্থ হাঁসের বৈশিষ্ট্য লেখ। 

২. হাঁসকে রোগমুক্ত রাখার উপায়গুলো লেখ। 

৩. ডাক প্লেগ রোগের লক্ষণসমূহ লেখ। 

৪. ওম্ফালাইটিস রোগের লক্ষণসমূহ লেখ। 

৫. ভিটামিন- এ এর অভাবজনিত লক্ষণ লেখ ৷

 

 

Content added By

রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন

3

১. ডাক প্লেগ রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার লেখ । 

২. ডাক কলেরা রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা লেখ । 

৩. টিকা ব্যবহারের সাধারণ নিয়মাবলি লেখ । 

৪. টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ লেখ। 

৫. ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরা রোগের টিকা প্রদানের পদ্ধতি বর্ণনা কর।

 

 

Content added || updated By
Promotion