দীর্ঘকাল যাবৎ কৃষক তার ধানের বিনিময়ে তাঁতির কাছ থেকে কাপড় এবং জেলে তার মাছের বিনিময়ে কুমারের কাছ থেকে হাঁড়ি-পাতিল সংগ্রহ করত । এভাবে মানুষ এক দ্রব্যের পরিবর্তে অন্য দ্রব্য বিনিময় করে অভাব পূরণ করার ব্যবস্থাকে সরাসরি পণ্য বিনিময় প্রথা (Barter System) বলে । আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে কোনো কোনো এলাকায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো এ প্রথার প্রচলন দেখা যায় । তবে এ প্রথায় লেনদেন করতে গিয়ে মানুষকে নানা অসুবিধায় পড়তে হতো (যেমন- দ্রব্য বিভাজনে অসুবিধা ও পাবস্পরিক অভাবের অমিল ইত্যাদি) । এসব অসুবিধা দূর করতে অর্থের আবির্ভাব ঘটে । আধুনিক অর্থনীতিতে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে অর্থ সর্বজনস্বীকৃত ও গৃহীত । অর্থ বিনিময়ের মাধ্যম, দ্রব্য ও সেবার মূল্যের পরিমাপক এবং সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে ।
সুতরাং, সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত যে বস্তু মূল্যের পরিমাপক, দেনা-পাওনা মেটানোর উপায় হিসেবে সর্বত্র গ্রহণযোগ্য, সঞ্চয়ের বাহন ও ঋণের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত, তাকে অর্থ বলে । বিভিন্ন দেশে অর্থ বিভিন্ন নামে পরিচিত । যেমন- বাংলাদেশে টাকা, ভারতে রুপি, আমেরিকায় ডলার এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশে ইউরো ।
অর্থের প্রকারভেদ-
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থের শ্রেণিবিভাগ করা যায় । নিচে তা আলোচনা করা হলো :
তৈরির উপকরণের দিক থেকে অর্থকে দুভাগে ভাগ করা যায় । যথা-
১) ধাতব মুদ্রা ও
২) কাগজি নোট
ধাতব মুদ্ৰা
ধাতব খণ্ড দ্বারা তৈরি যে মুদ্রার মাধ্যমে মানুষ প্রাত্যহিক জীবনের লেনদেন করে, তাকে ধাতব মুদ্রা বলে । বাংলাদেশে ৫ টাকা, ২ টাকা, ১ টাকা, ৫০ পয়সা ইত্যাদি ধাতব মুদ্রা আছে ।ধাতব মুদ্রাকে বস্তুগত মূল্যমানের দিক থেকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায় । যথা : (ক) প্ৰামাণিক মুদ্ৰা (খ) প্রতীক মুদ্রা । প্রামাণিক মুদ্রা বলতে বোঝায় যে মুদ্রা গলানোর মাধ্যমে ধাতু হিসেবে বিক্রি করলে দৃশ্যমান মূল্যের সমপরিমাণ মূল্য পাওয়া যায় । আর প্রতীক মুদ্রা বলতে বোঝায়, যে মুদ্রার ধাতব মূল্য তার দৃশ্যমান মূল্যের চেয়ে কম থাকে । সাধারণত ধাতব মুদ্রা সরকার কর্তৃক প্রচলিত হয় ।
কাগজি নোট
যেসব মুদ্রা কাগজ দ্বারা তৈরি করা হয়, তাকে কাগজি মুদ্রা বা নোট বলে । নোটের উপর লিখিত মূল্যই তার মূল্যের নির্দেশক,যা সাধারণত নোটের কাগজটির মূল্য অপেক্ষা অধিক হয় । প্রায় সকল দেশেই কাগজি মুদ্রা বা নোট সরকারি নির্দেশে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত হয় । বাংলাদেশের কাগজি মুদ্রা হলো ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট ।
কাগজি মুদ্রাকে দুভাগে ভাগ করা যায় । যথা- (ক) রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা (খ) রূপান্তর অযোগ্য মুদ্ৰা ।
রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা বলতে বুঝায় যে কাগজি নোটের পরিবর্তে চাওয়ামাত্র সরকার সমমূল্যের দেশীয় মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকে । বাংলাদেশে রূপান্তরযোগ্য নোট হলো- ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট। আর রূপান্তর অযোগ্য মুদ্রা বলতে বোঝায় যে কাগজি নোটের পরিবর্তে সরকারের কাছ থেকে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা, রুপা পাওয়া যায় না । বাংলাদেশে রূপান্তর অযোগ্য কাগজি নোট হলো ১ টাকা ও ২ টাকার নোট । গ্রহণের বাধ্যবাধকতার দিক থেকে অর্থকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায় । যথা : ১) বিহিত অর্থ ২) ব্যাংক হিসাব বা ব্যাংক সৃষ্ট অর্থ।
বিহিত অর্থ
যে অর্থ সরকারি আইন দ্বারা প্রচলিত, তাকে বিহিত অর্থ বলে । আমাদের দেশের বিহিত অর্থ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত ধাতব মুদ্রা ও কাগজি নোট নিয়ে গঠিত । বিহিত অর্থকে দুভাগে ভাগ করা যায়- ক) অসীম বিহিত অর্থ খ) সসীম বিহিত অর্থ । অসীম বিহিত অর্থ বলতে বোঝায়, যে বিহিত অর্থ দ্বারা আইনগত যেকোনো পরিমাণ লেনদেন করা যায় এবং দেনা-পাওনা পরিশোধ করলে পাওনাদার তা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে । আমাদের দেশের অসীম বিহিত অর্থ হলো- ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট । সসীম বিহিত অর্থ বলতে বোঝায়, যে বিহিত অর্থ দ্বারা একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত লেনদেন করা যায়, আইনগতভাবে জনগণকে অধিক গ্রহণে বাধ্য করা যায় না এবং জনগণ তার ইচ্ছা অনুযায়ী তা গ্রহণ করতে পারে । আমাদের দেশের সসীম বিহিত অর্থ হলো- ৫০ পয়সা, ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকার ধাতব মুদ্ৰা ।
ব্যাংকসৃষ্ট অর্থ
বর্তমানে ব্যবসায়িক লেনদেন ও দেনা-পাওনা পরিশোধ করতে ব্যাংক হিসাব বা ব্যাংক সৃষ্ট অর্থ বিনিময় মাধ্যম হিসেবে মানুষ গ্রহণ করে । তবে তা গ্রহণ করতে কাউকে বাধ্য করা যায় না । বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানত সৃষ্টি করে বা ঋণ প্রদান করে অর্থ সৃষ্টি
করতে পারে।
VISA
direct H
VISA
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড
ব্যাংকসৃষ্ট আমানত বা ওভার ড্রাফটের বিপরীতে চেক কেটে লেনদেন করা যায়। ব্যাংকসৃষ্ট আমানত বা হিসাবকে অর্থ হিসেবে গণ্য করা চলে। আমাদের দেশে ব্যাংকসৃষ্ট অর্থ হলো- চলতি হিসাবে আমানত এবং সঞ্চয়ী হিসাবে আমানত, যা চেকের দ্বারা তোলা যায়। এ ছাড়া ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে।