ই-কমার্স আধুনিক বিশ্বের ব্যবসায়ের নতুন ও চমকপ্রদ বিশেষ এক পদ্ধতি। ই-কমার্স হলো এক ধরনের ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক। এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পণ্যের কেনা-বেচা করা সম্ভব হচ্ছে, যা দুই দশক পূর্বেও বাংলাদেশের মানুষ চিন্তা করতে পারেনি।
পুরো বিশ্ব যখন করোনা মহামারীতে থমকে গেছে, ঠিক তখনই ব্যবসায় টিকিয়ে রাখা এবং ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আবির্ভূত হলো ই-কমার্সের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা। বর্তমানে বাংলাদেশের অসংখ্য নারী-পুরুষ এ ধরনের ই-কমার্সের সাথে সম্পৃক্ত। তারা ঘরে বসেই চালিয়ে যাচ্ছে ই- কমার্স কার্যক্রম। এমন অনেক মানুষ আছে যারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে ই-কমার্সকেই বেছে নিয়েছে। এ উপ-অধ্যায় থেকে আমরা ই-কমার্স-এর ইতিহাস, প্রকারভেদ, সুবিধা-অসুবিধা এবং বিভিন্ন মডেল সম্পর্কে জানতে পারব।
সাধারণ ভাষায় ই-কমার্স হলো এক ধরনের ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক। ই-কমার্স-এর পূর্ণরূপ হলো Electronic Commerce যাকে সংক্ষেপে E-commerce হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আরেকটু স্পষ্ট করে বলতে গেলে ই-কমার্স বলতে ইন্টারনেট অথবা অন্য কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পণ্য, সেবা বা ধারণার কেনা-বেচা, ফান্ড ট্রান্সফার ইত্যাদি কাজকে বোঝায়।
জেনে রাখো : ই-কমার্স সম্পর্কে নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো- According to Wasley Chai, “E-commerce (Electronic commerce) is the buying and selling of goods and services, or the transmitting funds or data over an electronic network, primarily the internet.” According to Wikipedia, "E-commerce (Electronic commerce) is the activity of electronically buying or selling of products on online services or over the internet."" |
---|
উল্লেখ্য যে, আধুনিক ই-কমার্স-এখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে (www) ব্যবহার করছে। উপরের আলোচনা থেকে ই-কমার্স সম্পর্কে যে সকল বৈশিষ্ট্য আমরা খুঁজে পাই তা নিচে উল্লেখ করা হলো :
• এটি একটি ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক;
• ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বেচা-কেনা; এর মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার, তথ্য প্রদান করা হয় । তাই বলা যায় যে, ই-কমার্স হলো আধুনিক ব্যবসায়ের এমন একটি ইলেকট্রনিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে পণ্য বা সেবার উৎপাদন, এগুলোর মার্কেটিং, কেনা-বেচা, মূল্য পরিশোধ ইত্যাদি অনলাইন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা যায়।
আধুনিক বিশ্বের ব্যবসায় জগতের বিস্ময়কর ব্যবসায়ের এক জনপ্রিয় পদ্ধতির নাম ই-কমার্স। পণ্য বা সেবা লেনেদেনের প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী ই-কমার্সকে প্রধানত সাতটি ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে ই-কমার্সের প্রকারভেদ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো—
ক. B 2 C (Business to Consumer ) : ই-বিজনেসের B 2 C মডেল হলো ই-রিটেইলিং বা খুচরা ব্যবসায়ের মতো ব্যবস্থা। এখানে ব্যবসায়ীরা সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে। এখানে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে মধ্যস্থব্যবসায়ী ছাড়াই ক্রেতারা সরাসরি পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারে। যেমন -amazon.com। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষ তার প্রয়োজনীয় সবকিছুই অনলাইন বিপণনের মাধ্যমে কিনতে পারছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯৭% নাগরিকই এই পদ্ধতিতে পণ্য কিনছে। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler & Gary Armstrong বলেন, "B 2 C online marketing is a business that sells goods and services online to final Consumers, " অর্থাৎ, ব্যবসায় টু ভোক্তা অনলাইন বাজারজাতকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে চূড়ান্ত ভোক্তাদের কাছে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা হয়।
খ. B2B (Business to Business ) : B2B মডেল বলতে বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে পণ্যের কেনা-বেচাকে বুঝায়। এখানে মধ্যস্থব্যবসায়ীর দরকার হয় না। এ মডেলে ব্যবসায়ের পণ্যের লেনদেন খরচ কমে যায়। যেমন- alibaba.com। বর্তমান কর্পোরেট ক্রেতাগণ অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে তথ্য জেনে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। পণ্য উৎপাদনকারী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট, ই-মেইল, অনলাইন পণ্য তালিকা, অনলাইন ব্যবসায় নেটওয়ার্ক ইত্যাদি ব্যবস্থার মাধ্যমে কর্পোরেট ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে। বেশির ভাগ কর্পোরেট ক্রয়-বিক্রয় এই পদ্ধতির মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯৮% কর্পোরেট ক্রয়-বিক্রয় এই পদ্ধতির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler & Gar Armstrong, "B 2 B online marketing is a business that uses online marketing to reach new business customers, serves current customers more effectively and obtain buying efficiencies and prices." অর্থাৎ, ব্যবসায় টু ব্যবসায় অনলাইন বাজারজাতকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সম্ভাব্য এবং বর্তমান কর্পোরেট ক্রেতাদের কাছে অধিকতর দক্ষতার সাথে ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য পণ্য বা সেবাসমূহ বিক্রয় করা হয়।
গ. C 2 C (Consumer to Consumer): এ মডেলের মাধ্যমে একজন ভোক্তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি অন্য ভোক্তার কাছে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। এক্ষেত্রে কোনো পক্ষের প্রয়োজন হয় না। যেমন- Bikroy.com-এ ভোক্তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার পণ্য সম্পর্কে তথ্য দিয়ে অন্য ভোক্তাদের সাথে বিনিময় সম্পর্ক গড়ে তুলে। ফলে আগ্রহী ভোক্তারা অতি সহজেই প্রয়োজনীয় পণ্য সম্পর্কে ধারণা পায় এবং এই তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে অন্য ভোক্তাদের অভিহিত করে। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler & Gary Armstrong বলেন, "C 2 C online marketing is a online system that provides an excellent means by which consumers can buy or exchange goods or information directly with one another. " অর্থাৎ, ভোক্তা টু ভোক্তা অনলাইন বাজারজাতকরণ হলো এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে ভোক্তারা সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বা তথ্য সম্পর্কে একে অপরকে পণ্য তথ্য সম্পর্কে অভিহিত করে এবং পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। ফলাবর্তন বা প্রতিক্রিয়া (Feedback) প্রদান করে।
ঘ. C 2 B (Consumer to Business) : অধিকাংশ কোম্পানি তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতা ও ভোক্তাদের কাছে তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে পরামর্শ ও প্রশ্ন চেয়ে আমন্ত্রণ জানায়। ভোক্তারা তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অফার সম্পর্কে জানে এবং প্রসঙ্গে Philip Kotler & Gary Armstrong বলেন, C 2 B is online exchanges in which consumers search out sellers, learn about their offers and initiate purchase, sometimes even driving transaction terms." অর্থাৎ, ভোক্তা টু ব্যবসায় অনলাইন বাজারজাতকরণ হলো এমন একটি ডোমেন যেখানে ক্রেতারা অফার সম্পর্কে জানে এবং কখনো কখনো লেনদেনের শর্তও ঠিক করে দেয়। যেমন আপওয়ার্ক কম ওয়েব সাইটে ফ্রিল্যান্সারগণ নিজেদের কর্মক্ষমতা, অভিজ্ঞতা, পারিশ্রমিক উল্লেখ করে প্রোফাইল তৈরি করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মী বা ফ্রিল্যান্সারদের কাজের জন্য ভাড়া করে থাকে। এক্ষেত্রে কর্মীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজে নিজেদের পরিশ্রম বিক্রি করে।
ঙ. G2G (Government to Government): এ ধরনের বিজনেসে এক দেশের সরকার অন্য দেশের সরকারের সাথে ব্যবসায় করে থাকে। যদি বাংলাদেশ সরকার কুয়েত সরকারের কাছ থেকে তেল কিনে তাহলে এই ট্রানজেকসনকে G2G বলা হয়।
চ. G2C (Government to Consumer): এ ধরনের বিজনেসে সরকার সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবসায় করে থাকে।
ছ. G2B (Government to Business) : এ ধরনের বিজনেসে সরকারের সাথে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে।
ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স বলতে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রি করাকে বোঝায় । তাই এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “E-commerce or electronic commerce is the buying and selling of products or services via the internet.”
ই-কমার্স শুভ সূচনা হয়েছিল মূলত ১৯৬০-এর দশকে। সে সময়ে ব্যবসায়ীরা আদিম কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক উপায়ে তাদের লেনদেন কার্যক্রম সম্পন্ন করত। ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ (Electronic data interchange - EDI) করে তারা তাদের ব্যবসায়িক বিভিন্ন দলিলপত্র বা ডকুমেন্টস অন্যান্য মেশিনের সাথে শেয়ার করতো।
পরবর্তীতে আমেরিকার তৎকালীন মিলিটারিরা এ.আর.পি নেট তৈরি করে নিউক্লিয়ার আক্রমণের যাবতীয় ঘটনা ও তথ্যসমূহ প্রচার করতে শুরু করল। আর এই আবিষ্কারই আজকের ই-কমার্স তৈরির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল। উৎপত্তিগতভাবে ই-কমার্স হচ্ছে বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ (Electronic data interchange-EDI) এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (Electronic fund transfer-EFT) প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়িক যাবতীয় কার্যক্রম বিশেষত লেনদেন সম্পন্ন করার একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। সাধারণত ইলেকট্রিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ হলো ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত বৈদ্যুতিক উপায়ে ব্যবসায়িক তথ্য লেনদেনের একটি প্রক্রিয়া।
▪️১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের ধারণা পাওয়া যায়। ঐ সময়ে একটি প্রতিরক্ষা বিভাগীয় সংস্থা কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং গবেষণায় সর্বোচ্চ আর্থিক সহযোগিতা করেছিল।
▪️১৯৯০ সালের দিকে www-এর কোনো প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই ইন্টারনেট যুগের সমাপ্তি ঘটতে পারত। এ সময়ে Www-এর প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করা যায়। কেননা এই ওয়েব বিভিন্ন মাধ্যম তথা রেডিও, টিভি, ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গতি বাড়িয়ে দেয়।
▪️ পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার মধ্যে তথ্য বিনিময়ের বিন্যাস সংজ্ঞায়িত করার জন্য মেটা মার্ক আপ ল্যাঙ্গুয়েজ (এক্স এম এল) খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা ওয়েব সেবা কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এক্স. এম. এল. অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আর এ সময়ে অনেকেই মনে করেছিলেন যে, এই এক্স. এম. এল. বা ওয়েব সেবা আগামীতে ই-কমার্স হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
▪️১৯৯২ সালে ওয়েব ব্রাউজারের উন্নয়ন ঘটে। এ সময়ে ডাউনলোডের বিষয়টি নজরে আসে। পরবর্তীতে ই-কমার্সের বাস্তব রূপ চিহ্নিত করতে ন্যাপস্টারের উন্নয়ন ঘটে। এই ন্যাপস্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিভিন্ন গানের ফাইল শেয়ার করা হতো। অর্থাৎ, বিনামূল্যে মানুষ তার পছন্দের গানগুলো ডাউনলোড করতে পারত।
▪️ ২০০০ সালে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এরই মধ্যে ই-কমার্সও ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে।
বর্তমান শতাব্দির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবসায় প্ল্যাটফর্ম হলো ই-কমার্স। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। B2C, B2B, C2C, C2B, G2B ই-কমার্স-এর যুগান্তকারী ব্যবসায়ের ধরন।
ইলেকট্রনিক কমার্সকে সংক্ষেপে ই-কমার্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার কেনা-বেচাকে ই-কমার্স বলে। এ প্রসঙ্গে Kalakota P. T. Joseph বলেন, "E-commerce comprises core business processes of buying and selling goods, services and information over the internet." নিচে ই-বিজনেস-এর বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো হলো-
১. সর্বব্যাপী (Ubiquitous) : ই-কমার্সের ব্যাপ্তি বা আওতা বিশ্বব্যাপী। ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোনো দেশের মার্কেটে প্রবেশ করে পণ্য ক্রয় করা যায়।
২. বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো (Global reach) : ই-বিজনেস এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে পণ্যের কেনা-বেচা করা যায়।
৩. সার্বজনীন মান ( Universal standard) : ই-বিজনেসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো সার্বজনীন এক্ষেত্রে একটা standard মান বজায় রাখার চেষ্টা করা যায়।
৪. আন্তঃযোগাযোগ (Interconnectivity) : ই-বিজনেস ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। এটি বর্তমান শতাব্দির ব্যবসায় সহজতর করার অন্যতম উপায়।
৫. তথ্যের পর্যাপ্ততা (Information availability) : সব বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের অসংখ্য তথ্য পাওয়া যায় ই-বিজনেস-এ।
৬. প্রযুক্তিভিত্তিক (Techonology based) : ই-বিজনেস কার্যক্রম পুরোটাই প্রযুক্তি নির্ভর। ফান্ড ট্রান্সফারসহ পণ্যের অর্ডার গ্রহণ, পণ্য পছন্দ করা ইত্যাদি সব কিছু প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়ে থাকে ।
৬. ভার্চুয়াল যোগাযোগ (Virtual communication) : এক্ষেত্রে অনলাইন তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে একজন আরেকজনের সাথে সরাসরি যোগ করে থাকে।
৭. অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় (Online purchase & selling) : ই-বিজনেস এ সব পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় অনলাইনে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
৮. সম্পর্কভিত্তিক মার্কেটিং (Relationship marketing) : ই-বিজনেসের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করা যায়। এর ফলে একে অপরের সাথে খুব আন্তরিকতার সাথে মিশে যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়।
কার্যাবলি : একটি প্রতিষ্ঠানকে ই-বিজনেস প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা কাজ করতে হয়। নিচে ই-বিজনেস- এর কার্যাবলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. অ্যাকাউন্টস ও বিলিং (Accounts and billing) : ই-বিজনেসে আর্থিক বিভিন্ন কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়। ইলেকট্রনিকভাবে অর্ডার গ্রহণ, বিল তৈরি, অর্থ আদান-প্রদান করা ই- বিজনেসের কাজ।
২. সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (Supply chain management) : চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করা ই-বিজনেসের অন্যতম কাজ। প্রতিষ্ঠানের উচিত চাহিদা ও সরবরাহের উভয় প্রান্তে তথ্যের অবাধ ও স্পষ্ট প্রবাহ নিশ্চিত করা।
৩. সংগ্রহ/ক্রয় (Procurment): এক্ষেত্রে দুই ধরনের সিস্টেম আছে। যথা— ই-প্রোকিউরমেন্ট (E- procurement) এবং আই-প্রোকিউরমেন্ট (I-procurement)। ই-প্রোকিউরমেন্ট হলো অভ্যন্তরীণ ক্রয়ের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক সিস্টেম। আর আই-প্রোকিউরমেন্ট হলো একটি ওয়েবভিত্তিক সিস্টেম, যা বিক্রেতাদের বাইরের সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থেকে ক্রয় এবং অর্থ প্রদান স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে।
৪. মানবসম্পদ (Human Resource ) : ইন্ট্রানেট ব্যবহার করে কর্মী তথ্যে অ্যাক্সেস করা যায়। কর্মীরা দরকার অনুযায়ী তথ্য ব্যবহার, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন বা রিপোর্ট তৈরি করতে পারে। এভাবে ই-বিজনেসে মানবসম্পদ সম্পর্কিত কার্যাবলি করা হয়।
৫. বিপণন (Marketing) : ই-বিজনেসে বিভিন্ন মেইল হাউজ, কল সেন্টার, ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পণ্যের বিপণন করা হয়। এতে ক্রেতাদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পণ্যের তথ্য চলে যায় এবং ক্রেতারা কিনতে আগ্রহী হয় ।
৬. ক্রেতা সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা (Customer relationship management) : ই-বিজনেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্যের সঠিক উপস্থাপন, দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, আসল পণ্য সরবরাহ প্রভৃতি কাজের মাধ্যমে ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক রাখা যায়।
ই-কমার্স মডেল যেকোনো ফার্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা এ মডেলের মাধ্যমে ফার্মের উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে ক্রেতাদের জন্য ভ্যালু সৃষ্টি করা হয়। এক্ষেত্রে একটি ফার্মকে অভ্যন্তরীণ পরিবেশের পাশাপাশি বাহ্যিক পরিবেশের ওপরও খেয়াল রাখতে হয়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্যও ফার্মকে ই-কমার্স মডেল উন্নয়ন করতে হয়। চিত্রের সাহায্যে ই-কমার্স মডেলের একটি ফ্রেমওয়ার্ক উপস্থাপন করা হলো-
ই-কমার্স বা ই-বিজনেসের এরূপ মডেল উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে নিচের তিনটি উপাদান বিবেচ্য। যথা—
১. ই-মার্কেট প্লেসের বৈশিষ্ট্য অনুধাবন;
২. ক্রেতাদের ভ্যালু প্রদান এবং কার্যক্রম মূল্যায়ন
৩. আর্থিক স্থায়িত্ব অর্জন।
ই-কমার্স বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। কেননা বর্তমানে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। আর এ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে আধুনিককালের ব্যবসায় জগতের নতুন আবিষ্কার ই-কমার্স। নিচে ই-কমার্স-এর সুবিধাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
ক. ই-কমার্স-এর ক্ষেত্রে ভোক্তার সুবিধা (Consumer's Advantages in E-commerce):
১. ক্রেতা সেবা ত্বরান্বিত করা (Expedites customer service): ক্রেতারাই প্রথম এ ধারণাকে গুরুত্ব দিয়ে ক্রেতাদের জন্য যেকোনো সেবা তরান্বিত করা হয় ই-কমার্স-এর মাধ্যমে। ক্রেতাদের যেকোনো সেবা দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেওয়াই ই-কমার্স-এর অন্যতম কাজ।
২. ক্রেতাবান্ধব পরিষেবা (Customer friendly service): ক্রেতারা কোন ধরনের পণ্য পেতে চায়, সে পণ্য কীভাবে পেতে পারে এবং পণ্যটি কখন কিনবে ইত্যাদি বিষয় জানা যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি। আর এ সব তথ্য জানার পরে খুব সহজে ই-কমার্স পদ্ধতিতে ক্রেতাদের পরিষেবা দেওয়া যায় ।
৩. ২৪/৭ ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা (Operating activities based on 24/7 ) : ই-কমার্স-এর অন্যতম সুবিধা হলো ক্রেতারা সপ্তাহের প্রতিদিন দিন-রাত ২৪ ঘন্টার যেকোনো সময় তারা তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারে। ক্রেতা তার সুবিধামতো সময়ে ই-কমার্স-এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবার কেনা-বেচা করতে পারে।
৪. ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে সহায়তা (Assist to increase brand awareness): ই-কমার্স-এর মাধ্যমে ক্রেতারা সহজেই বিভিন্ন নতুন নতুন পণ্যের পরিচিতি লাভ করতে পারে। এক্ষেত্রে পণ্যের ব্র্যান্ড নাম সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে ক্রেতারা সহজেই তাদের পছন্দের পণ্যটি কেনার অর্ডার করতে পারে।
৫. অত্যধিক তথ্য সরবরাহ (Providing more information): ই-কমার্স-এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ক্রেতারা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের পণ্য পছন্দের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করে থাকে। পণ্য বা সেবার ধরণ, বৈশিষ্ট্য, কার্যকারিতা, মেয়াদ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য তথ্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়।
৬. সহজ প্রবেশাধিকার (Easy entrance): যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ক্রেতারা কেনা- বেচাসহ লেনদেন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে। ই-কমার্স-এ ২৪/৭ দিনই গ্রাহকরা পণ্যের অর্ডার করতে পারে। এমনকি, সারা বছর জুড়ে একজন গ্রাহক তার ব্যালেন্স চেক ও অর্থ দেওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করতে পারে।
খ. ই-কমার্স-এর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানসমূহের সুবিধা (Organization's Advantages in E-commerce) :
১. বিশ্বময় বাজার (Worldwide market): বর্তমান যুগ আধুনিক ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগ। এ যুগে এক দেশে উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে নিমিষেই। কেননা ই-কমার্স ওয়েবভিত্তিক বা ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় ক্রেতারা যেকোনো স্থানে বসেই পণ্য অর্ডার করতে পারে। তাই এর বাজার বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত।
২. গণ কাস্টমাইজেশন (Public customization): ই-কমার্স প্রক্রিয়ায় খুব সহজেই গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পণ্য ও পরিষেবা তাৎক্ষণিকভাবে কাস্টমাইজ করা যায়। যেমন- ই-কমার্স চালু হবার আগে ক্রেতারা ফোর্ড-এর মোটরগাড়ি কিনতে চাইলে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট রঙের গাড়ি অর্ডার করতে পারত না। কিন্তু ই-কমার্স ওয়েবসাইটভিত্তিক হওয়ায় ক্রেতারা সহজেই এক মিনিটের মধ্যে তাদের পছন্দ অনুযায়ী গাড়ি কেনার অর্ডার করতে পারে।
৩. সময় এবং ব্যয় কমায় (Reducing time & cost) : ই-কমার্স আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে টেকসই পণ্য কেনা-বেচার ধরন। এ ধরনের পদ্ধতিতে তেমন কোনো অর্থ বা সময় ব্যয় করতে হয় না। কেননা কেউ সাহস করে উদ্যোগী হতে চাইলেই ই-কমার্স চালু করা সম্ভব।
৪. অনলাইন সংযোগ প্রতিষ্ঠা (Establishing online connectivity): যারা কোনো দিন অনলাইন সম্পর্কে তেমন কোনো ট্রেনিং প্রাপ্ত নন, তারাও বর্তমানে নিজ উদ্যোগে অনলাইন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। বিশ্বের সব দেশের অধিকাংশ মানুষ অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন সময়ে অনলাইন বা ই-কমার্স-এর মাত্রা ঈর্শান্বিতভাবে বেড়েছে।
৫. নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ (Attracting new customer): যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নতুন ক্রেতা আকর্ষণে সমর্থ না হলেও ই-কমার্সে ক্রেতা আকর্ষণ করা অত্যন্ত সহজ। কেননা অনলাইন বাজারে ঢুকলেই দেশি-বিদেশি অসংখ্য ক্রেতা উপস্থিতি দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে নতুন ক্রেতা আকর্ষণে সার্চ ইঞ্জিন এবং কনটেন্টের ওপর নির্ভর করতে হয়।
১. চাকরির সুযোগ সৃষ্টি (Creating job opportunity): ই-কমার্স মানুষকে ব্যবসায় স্থাপনে উদ্যোগী করে তুলতে ও সমাজের লোকদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করে। যেমন- ই-কমার্স যদি কেউ শুরু করে সেক্ষেত্রে তার কিছু মানবসম্পদের প্রয়োজন হয়। এমন কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আছে যারা তাদের কর্মচারীদের বাড়িতে বসেও কাজ করার অনুমতি দিয়ে থাকে।
২. সরকারি সেবা দেওয়ার মাধ্যম (Medium of providing government service): অনলাইন বা ই- কমার্স প্রক্রিয়ায় জনসাধারণকে বিভিন্নভাবে সরকারি সেবা দেওয়া যায়। যেমন— ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করা। এছাড়াও গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করাও ই-কমার্স বা অনলাইন বিজনেস-এর আওতাভুক্ত ।
৩. কার্যকর গ্রাহক সেবা (Effective customer service): গ্রাহকরা যখন-তখন অনলাইনে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে থাকে। কোনো গ্রাহকের কোনো প্রশ্ন থাকলেও তার উত্তর অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো যায়। ই-কমার্স-এর মাধ্যমে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করা সম্ভব হয়।
৪. ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা (Crossing geographical boundaries): ই-কমার্স মানেই হলো পুরো পৃথিবী একটি মাত্র গ্রাম (Village)। ই-কমার্স-এর প্রভাবে এক দেশের পণ্য বা সেবা ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বের যেকোনো দেশে পৌঁছে যাচ্ছে।
৫. সেবা নিশ্চিতকরণ- শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য (Ensuring service education and health): ই-কমার্স বা অনলাইন প্রক্রিয়ায় বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই গুগল ক্লাসরুমে অনলাইন ক্লাস কিংবা খান একাডেমির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারছে। এছাড়া ঘরে বসেই অনলাইনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ই-কমার্স বিশ্বব্যাপী এক অপার সম্ভাবনা তৈরি করেছে যার দ্বারা প্রতিষ্ঠান, ভোক্তা ও সমাজ উপকৃত হচ্ছে।
বিশ্বের উন্নত দেশের ন্যায় আমাদের প্রিয় বাংলাদেশও ই-কমার্স কার্যক্রমে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরও ই-কমার্স কার্যক্রমের প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে আরেকটু সময় লাগবে। কতিপয় আগ্রহী, সাহসী ও উদ্যোগী মানুষ এ ধরনের অনলাইন ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হলেও এখনও অনেক মানুষ সাহস ও ব্যবসায়িক পরিবেশের অভাবে ই-কমার্স থেকে দূরে আছে। যেকোনো নতুন ব্যবসায়ে সফল হতে একটু বেশি সময় লাগেই। ই-কমার্স ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসায় তাই ইন্টারনেটের গতি সন্তোষজনক না হলে এ ব্যবসায়ের প্রতি অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে না। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে সবার জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে। তারপরও ইন্টারনেট নিয়ে ব্যবহারকারীরা সন্তুষ্ট না। এছাড়া '5G' চালু হওয়ার পরেও অনেক গ্রাহকই এর ব্যবহার উপযোগিতা নিয়ে সন্তুষ্ট না। নিচে ই- কমার্স-এর অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো-
১. নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার অভাব (Lack of security & safety): ই-কমার্স-এ নিরাপত্তার ঘাটতি থাকায় অনেকেই এ ধরনের ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত হতে চায় না ।
২. ব্যক্তিগত স্পর্শ বা সম্পর্কের অভাব (Lack of personal touch and relationships): ই-কমার্স-এর অন্যতম প্রধান অসুবিধা হলো এখানে সরাসরি ও ব্যক্তিগতভাবে তেমন কোনো কার্যক্রম সম্পর্ক সৃষ্টি হয় না। এছাড়া পণ্যের স্পর্শ ছাড়া পণ্য সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণাও লাভ করা সম্ভব হয় না। যার ফলে পণ্যের প্রকৃত স্বাদ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ক্রেতারা তেমন কোনো ধারণা লাভ করতে পারে না।
৩. বিলম্বে পণ্য সরবরাহ (Delay in product delivery): ই-কমার্স প্রক্রিয়ায় সরাসরি বা সাথে সাথে পণ্য ডেলিভারি করা সম্ভব হয় না। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিলম্বের মাত্রা আরও বেশি।
৪. সুনির্দিষ্ট গ্রাহক চিহ্নিত করা (Identifying specific customer): ই-কমার্স প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট গ্রাহক বা ক্রেতা খুঁজে পাওয়া ততোটা সহজ ব্যাপার না। আবার সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে পেলেও সে প্রকৃত ক্রেতায় পরিণত হবে কি-না তাও বিচার-বিশ্লেষণের ব্যাপার।
৫. অনাগ্রহ (Disinterest): আমাদের দেশের কমার্স-এর আরেকটি বড় সমস্যা হলো ক্রেতাদের অনাগ্রহ। ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায় হওয়ায় অনেকেই ই-কমার্স থেকে দূরে থাকতে চায়। তবে ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
৬. নকল পণ্য সরবরাহ (Delivery of fake product): ই-কমার্স-এর একটি বড় অসুবিধা হলো আসল পণ্য সরবরাহ না করা। অনেক সময় ক্রেতারা যে পণ্য বা সেবা অর্ডার করে তাদেরকে সেটি দেওয়া হয় না। নকল বা অন্য একটি পণ্য সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে সরাসারি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় ক্রেতা অভিযোগ জানাতে পারে না। এভাবে ক্রেতা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় ।
সাধারণভাবে বলতে গেলে ই-কমার্স বিজনেস হলো একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিভাবে একটি সুনির্দিষ্ট বাজারে পণ্য বা সেবার বিনিময়ে অর্থ বা সম্পদ তৈরি করবে তার চূড়ান্ত পরিকল্পনা। আরেকটু স্পষ্ট করে বলতে গেলে ই-কমার্স বিজনেস হলো একটি পরিকল্পনা যার মাধ্যমে ইন্টারনেট বা অনলাইন প্রক্রিয়ায় প্রকৃত ক্রেতাদের ভ্যালু দেওয়ার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
ই-কমার্স বা ই-বিজনেস মডেল বলতে একটি ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান কীভাবে সংগঠন তৈরি করে, কীভাবে পণ্য সরবরাহ করে এবং কীভাবে ভ্যালু আয়ত্ব করে তার একটি গাইডলাইনকে বোঝায়।
ই-কমার্স বিজনেস মডেলকে এক কথায় ই-বিজনেসের আর্টও বলা যায়। নিচের চিত্রে একটি ই-কমার্স বিজনেস মডেলের নমুনা উপস্থাপন করা হলো—
উপরের আলোচনা থেকে সহজেই বলা যায় যে, ই-কমার্স বিজনেস মডেল হলো এমন এক ধরনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যার মাধ্যমে ক্রেতাদের ভ্যালু প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
Business Model) ই-কমার্স-এর প্রতি বাংলাদেশের মানুষও ইদানিং আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দারাজ, রকমারি, পিকাবো, অ্যামাজন ইত্যাদির সাথে বাংলাদেশের মানুষ আজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পর্যায়ক্রমে ই-কমার্স-এর সফলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্বজুড়েই।
যেকোনো ব্যবসায় পরিচালনায় একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো থাকা প্রয়োজন। আর ই-বিজনেস কাঠামো হলো একটি সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। নিচে ই-কমার্স বিজনেসের মডেলসমূহ উপস্থাপন করে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. ব্যবসায় থেকে ব্যবসায় (Business to business-B2B) : এটি এমন একটি মডেল যেখানে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অন্য আরেকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে। আলিবাবা এবং ইন্ডিয়া মার্টের মতো পাইকারি বিক্রেতাগুলো এরূপ B2B পদ্ধতিতে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে থাকে। নিচের চিত্রে B2B মডেলটি উপস্থাপন করা হলো-
২. ব্যবসায় থেকে ভোক্তা (Business to consumer B2C) : এটা এমন এক ধরনের ব্যবসায় মডেল যেখানে একটি প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা সেবাসমূহ সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। এ মডেলের সবচেয়ে ভালো দিক হলো— ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত বিভিন্ন পণ্যের সমাহার থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দের পণ্যটি বাছাই করতে পারে এবং অর্ডার দিতে পারে। ওয়েবসাইটটি অত্যন্ত সহজভাবে ক্রেতাদের অর্ডারের বিষয়টি ই- মেইলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয় । নিচে এ ধরনের B2C মডেলটির নমুনা চিত্রে তুলে ধরা হলো :
৩. ভোক্তা থেকে ভোক্তা (Consumer to consumer-C2C) : ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দু'জন ভোক্তার মধ্যে লেনদেন সহজতর করার জন্য C2C মডেলটি অত্যন্ত কার্যকর। সাধারণত অ্যাপার্টমেন্ট, গাড়ি, মোটরবাইক ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রে একজন ক্রেতা আরেকজন ক্রেতাকে সহযোগিতা করে। Bikroy.com এ ধরনের মডেল অনুসরণ করে। নিচের চিত্রে এরূপ C2C মডেলের একটি নমুনা তুলে ধরা হলো :
৪. ভোক্তা থেকে ব্যবসায় (Consumer to business-C2B) : ভোক্তারা কোনো ধরনের বিজনেস সাইট থেকে পণ্য কিনে না। বরং ভোক্তারা নিজেরাই অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে । এটিই হলো C2B মডেলের মূলকথা। নিচের চিত্রে এ ধরনের মডেলটি তুলে ধরা হলো :
৫. ব্যবসায় থেকে সরকার ( Business to government-B2G) : এ মডেলটি B2B মডেলের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এ ধরনের ওয়েবসাইটগুলো সরকার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় সংগঠনের সাথে তথ্য বাণিজ্য এবং বিনিময় করতে ব্যবহার করে। B2G মডেল সাধারণত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ব্যবসায় মডেল।
৬. সরকার থেকে ব্যবসায় ( Government to business - G2B) : একটি দেশের সরকার বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য এ ধরনের মডেল ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করে থাকে। এ জাতীয় ওয়েবসাইট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ তথা নিলাম, দরপত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৭. সরকার থেকে সিটিজেন বা নাগরিক (Government to citizen-G2C) : সরকার তার দেশের বিভিন্ন এলাকার নাগরিকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য G2C মডেল ব্যবহার করে।
৮. সরকার থেকে সরকার (Government to Government G2G) : সরকার অন্য একটি দেশের সরকারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য G2G মডেল ব্যবহার করে।
ই-বিজনেস মডেল হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তথ্য প্রযুক্তি বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদে নিজেকে টিকেয়ে রাখে। যার মধ্যে অংশীদার এবং গ্রাহকদের জন্য মূল্য প্রস্তাবের পাশাপাশি এর রাজস্ব স্ত্রীমও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কিছু উপাদানের সমন্বয়ে একটি ই-বিজনেস মডেল ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে ওঠে। নিচে উপাদানগুলো উল্লেখ করা হলো-
১. পণ্য বা সেবা ( Products and Service): ই-কমার্স বিজনেস মডেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। এক্ষেত্রে প্রথমেই একটি ই-কমার্স সাইট তৈরি করা হয়। সেখানে কি পণ্য বা সেবা বিক্রয় করবেন, সেটা এই অংশে লিপিবদ্ধ করতে হয়।
২. বাজার বিশ্লেষণ (Market Analysis): বাজার বিশ্লেষণ যেকোনো ব্যবসার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বিজনেসের ক্ষেত্রে তো বটেই। যে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা হবে তার চাহিদা, ভোক্তা ও তাদের অবস্থান, বাজারের আয়তন ইত্যাদি বিষয়গুলো বাজার বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে।
৩. অর্থায়ন (Funding): ই-বিজনেসের জন্য কী পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন, কতটুকু বিনিয়োগ করা হবে, সম্পূর্ণ অর্থ নিজের কাছে না থাকলে বাকিটুকু কীভাবে ম্যানেজ করা হবে, এই বিষয়গুলো আগেই হিসাব করতে হয়।
৪. ভারসাম্য বিন্দু বিশ্লেষণ (Break-even Analysis): অর্থনীতি আর ব্যবসা উভয় ক্ষেত্রেই ব্রেক-ইভেন বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে দুই ধরনের ব্যয় থাকে— একটি স্থায়ী খরচ, অপরটি পরিবর্তনশীল খরচ। পণ্য বা সেবার মূল্যের দ্বারা কতদিনে ও কী পরিমাণ মুনাফায় এই ব্যয় পূরণ করা সম্ভব এবং ব্যবসা লাভজনক করতে সাথে অন্যকোনো ব্যবস্থা থাকবে কিনা এই বিষয়গুলোই মূলত ব্রেক ইভেন বিশ্লেষণের মধ্যে পড়ে।
৫. বিপণন কৌশল (Marketing Strategy): ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একটি কথা আছে, সেটা হলো 'প্রচারেই প্রসার। আর এই জন্য বিপণনের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হতে হয়। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে Online Marketing বেশি ফলপ্রসূ।
৬. মূল্য নির্ধারণ (Pricing): সাধারণত একটি B2C ই-কমার্স ব্যবসার আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে পণ্য বিক্রয়। তাই যে পণ্য বা সেবা বিক্রয় করা হবে তার উৎপাদন ব্যয় + অন্যান্য ব্যয় + লাভ হিসাব করে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
৭. ব্যবস্থাপনা পর্ষদ (Management Team): একটি ব্যবসার স্থায়িত্ব ও মুনাফা অনেকটাই নির্ভর করে তার ব্যবস্থাপনার ওপর। সার্ভার ব্যবস্থাপনা, পোর্টাল ব্যবস্থাপনা, কাষ্টমার ব্যবস্থাপনা, পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে যোগ্য লোক বাছাই করতে হবে ।
৮. সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (Supply Chain Management): অনলাইন শপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা। ভোক্তাকে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও দ্রুত মাধ্যমটি বেছে নিতে হবে । এক্ষেত্রে কী পরিমাণ খরচ ও সময় লাগবে তা আগে থেকেই বের করতে হবে এবং পরবর্তীতে সেই সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে।
৯. পরিশোধ পদ্ধতি (Payment System) : লেনদেন পদ্ধতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থা, বাজারের আয়তন ও অবস্থান, লেনদেন পদ্ধতির উপযোগিতা ও প্রাপ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিচার বিশ্লেষণ করতে হয়। সবকিছু বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়ের জন্য এক বা একাধিক লেনদেন পদ্ধতি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
বর্তমান ব্যবসায় মানেই হলো ই-কমার্স। বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশেও ই-কমার্স-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তারপরও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা নিচে আলোচনা করা হলো :
১. নিরাপত্তা (Security) : ই-কমার্সে বিভিন্ন ধরনের অনিরাপত্তা বা ঝুঁকি বিদ্যমান আছে। যেমন— ক্লাইন্ট বা সার্ভার রিস্ক, ডাটা ট্রান্সফার ও লেনদেনের রিস্ক এবং ভাইরাস রিস্ক। ২. গোপনীয়তার অভাব (Lack of privacy) : ই-কমার্সে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ঠিকানা, ফোন
নাম্বার প্রভৃতি ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রেতাকে দিতে হয়। এক্ষেত্রে তথ্যের অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ৩. অনলাইন প্রতারণা ( Online fraud ) : এমন অনেকেই আছে যারা এ ব্যবসায় ঢুকে অনলাইনে প্রতারণার চেষ্টা করে।
৪. ব্যক্তিগত স্পর্শের অভাব (Lack of Personal touch) : ই-কমার্সে সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার সাক্ষাত হয় না। যার ফলে কেনার আগে ক্রেতা পণ্যটি স্পর্শ করারও সুযোগ পায় না। ফলে পণ্য পাওয়া নিয়ে ক্রেতার মনে ভয় কাজ করে।
৫. সরবরাহের সময় ( Supply time ) : ই-কমার্স এর আরেকটি সমস্যা হলো পণ্য সরবরাহে বিলম্ব। ক্রেতারা পণ্য অর্ডার করলেই সাথে সাথে তারা পণ্যটি পায় না। এজন্য কিছু সময় বা দিন বিলম্ব হয়।
৬. খরচ (Cost) : ই-কমার্স ব্যবসায়ে বিভিন্ন খরচ হয়ে থাকে। যেমন-ইন্টারনেট খরচ, কম্পিউটার খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্যাকেজিং খরচ ইত্যাদি। এ কারণে অনেকেই এ ব্যবসায়ে আগ্রহী হয় না।
৭. গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ হারানো (Loss of contact with customers ) : প্রায় সময় গ্রাহকরা মনে করে যে তাদের প্রতি বিক্রেতারা যথেষ্ট মনোযোগী নয়।
৮. সাংস্কৃতিক বাধা (Cultural obstacles) : একেক দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ক্রেতার মন-মানসিকতা একেক রকম হয়। এসব বিষয় ই-কমার্সে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সাংস্কৃতিক বাধা তৈরি করে।
৯. দক্ষ জনশক্তির অভাব (Lack of skilled personnel) : বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইন্টারনেটের ব্যবহার অনেকেই জানে না। আবার যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে তাদের অনেকেই ওয়েবসাইটে না ঢুকে কেবল ফেইজবুক, ম্যাসেঞ্জার এগুলোতে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে ই-কমার্স সম্পর্কে অনেকেরই আগ্রহ তৈরি হয় না। ই-কমার্স ব্যবসায় করতে চায় অথচ পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে অনেকেই তা করতে পারছে না।
১০. প্রশিক্ষণের অভাব ( Lack of training) : ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত এমন অনেকেই প্রশিক্ষণের অভাবে ই-কমার্স ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারছে না।
সাধারণ ভাষায় ইনফ্লুয়েন্সার বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যে বা যারা শিল্পে বা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে সম্মানিত। তারা অন্যদের বিশ্বাস বা মতামতকে বিশেষ ক্ষমতা বা ব্যক্তিক গুণাবলি দিয়ে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু ই-কমার্স-এর ক্ষেত্রে এমন প্রভাবক বা ইনফ্লুয়েন্সার রয়েছে যারা ই-কমার্স সাইটে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এরূপ ইনফ্লুয়েন্সাররা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়ে কিংবা টুইট দিয়ে কোনো ইভেন্টের নিশ্চিত করতে বা পণ্যের বিক্রি নিশ্চিত বাড়াতে সহায়তা করে।
ই-কমার্সের ইনফ্লুয়েন্সারগণ একজন সাধারণ ই-কমার্স ব্যবহারকারীর মতোও হতে পারে যাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচুর ফলোয়ার আছে। এরূপ প্রভাবক বা ইনফ্লুয়েন্সারগণ প্রকৃতপক্ষে অনলাইনে বেশি সময় দিয়ে থাকে।
ই-কমার্স প্রভাবক বা ইনফ্লুয়েন্সররা সাধারণত
• অনলাইনে বেশি সক্রিয় থাকে;
• বিভিন্ন পণ্য বা আইটেমের পোস্ট করে;
• বেশি শেয়ার করে;
• টুইট ও রিটুইট করে;
• লাইক ও কমেন্ট করে;
ই-কমার্স-এ -এর মার্কেটিংয়ে যেসব জনপ্রিয় প্রভাবক আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
• ই-কমার্স ব্যবসায় সোশ্যাল মিডিয়া
• ই-কমার্স ব্যবসায় প্রচারণায় ফেইজবুক;
• ই-কমার্স ব্যবসায় ইনস্ট্রাগ্রাম;
• ই-কমার্স ব্যবসায় টুইটার; ই-কমার্স ব্যবসায় লিংকডইন;
• ই-কমার্স ব্যবসায় গুগল অ্যাডস;
• ই-কমার্স ব্যবসায় ইউটিউব।
প্রচলিত বাণিজ্য হলো ব্যক্তিগতভাবে পণ্য ও পরিষেবা কেনা-বেচার একটি প্রথাগত পদ্ধতি যার মধ্যে মুখোমুখি লেনদেন জড়িত। অন্যদিকে ই-কমার্স হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ব্যবসায় পদ্ধতি যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বেচা-কেনা হয়ে থাকে। নিচে প্রচলিত বাণিজ্য ও ই-কমার্সের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো-
প্রচলিত বাণিজ্য | ই-কমার্স | |
---|---|---|
১ | এ ব্যবসায়ে প্রবেশ সময়সাপেক্ষ। | যেকোনো সময় এ ব্যবসায়ে প্রবেশ করা যায়। |
২ | নির্দিষ্ট এলাকায় এ ব্যবসায় পরিচালনা করা হয় | বিশ্বব্যাপী এ ব্যবসায় পরিচালনা করা যায়। |
৩ | ওয়ান ওয়ে। | ওয়ান-টু-ওয়ান |
৪ | লিনিয়ার (Linear) | ইন্ড টু ইন্ড (End-to-end ) |
৫ | নগদ, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। | ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, NEFT অথবা ক্যাশ অন ডেলিভারি। |
৬ | তাৎক্ষণিক। | পণ্য সরবরাহে বিলম্ব হয়ে থাকে। |
৭ | এক্ষেত্রে সময় সীমিত। | অফুরন্ত সময় (24x7x365)। |
৮ | নন-ইলেকট্রনিক ও ম্যানুয়াল । | ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল মোড। |
NEFT এর পূর্ণরূপ হলো National Electronic Funds Transfer। অনলাইন ফান্ড ট্রান্সফারের অন্যতম মাধ্যম হলো NEFT NEFT এর মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে টাকার কোনো সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা থাকে না। যেকোনো পরিমাণ টাকা আদান-প্রদান করা যায়। আবার যে দিন টাকা পাঠানো হয়, ঐদিনই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়ে যায়।