একদিনে পৃথিবীর ইতিহাস

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বিজ্ঞান অনুশীলন বই - NCTB BOOK

একদিনে পৃথিবীর ইতিহাস

বিশ্বজগতের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে এই সকল ঘটনাকে আমরা যদি একসঙ্গে দেখতে পারতাম কেমন হতো? ধরো, এক বছরের মধ্যে যদি এই সকল ঘটনা ঘটত, বা একদিনে, তাহলে কখন কী ঘটত? এই অভিজ্ঞতায় এই ঘটনাপ্রবাহকে একটু দ্রুতগতিতে দেখে নিই।

প্রথম সেশন
  • তোমাদের জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত কী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে যেগুলো তোমরা জানো বা মনে করতে পারো? অনেক ঘটনার কথাই এক্ষেত্রে বলতে পারো; যেমন: জন্ম, প্রথম দাঁত পড়া, প্রথম স্কুলে ভর্তি, প্রথম অন্য শহরে আসা, ছোট ভাই বা বোনের জন্ম, ইত্যাদি।
  • এবার নিচের ছকে নিজের জীবনের ঘটনাগুলো লিখে কোন বয়সে কোন ঘটনা ঘটেছে তা উল্লেখ করো।
  • এবার সবার কাজ হবে জীবনের সবগুলো ঘটনাকে ২৪ ঘণ্টার একটা টাইমলাইনে সাজানো। অর্থাৎ, তোমার বয়স যদি ১৫ হয়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার একদম শুরুর মুহূর্ত হবে তোমার জন্মের ক্ষণ। আর আজকের দিনটি হবে ২৪ ঘণ্টার শেষ প্রহর। তার মানে ৬ বছর বয়সে যদি তুমি স্কুলে ভর্তি হও, তবে ২৪ ঘণ্টার ঘড়িতে তোমার স্কুলে ভর্তি হবার ঘটনাটা দেখাতে হবে ৯ টা বেজে ৩৬ মিনিটে।
  • নিচের ঘড়িতে তোমার বিভিন্ন বয়সের ঘটনাগুলো একইভাবে দেখাও। উদাহরণ হিসেবে তোমার জন্মের ঘটনাটি ছবিতে দেখানো আছে।
  •  তোমার নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে তো আলোচনা হল। মহাবিশ্বের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো কী কী? তোমরা অনেকে হয়ত বিগ ব্যাঙ, পৃথিবীর সৃষ্টি, চাঁদের সৃষ্টি, ইত্যাদি ঘটনার কথা আগেই শুনেছ। অন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও শোনো। বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে যে ঘটনাগুলো আসবে সেগুলো নোট করে জোড়ায় আলোচনা করে ধারাবাহিকভাবে সাজাও।
  • তোমাদের ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহ অন্যদের শোনাও, অন্যদের ঘটনাপ্রবাহ শুনে মতামত দাও।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেশন
  • আগের সেশনের ধারাবাহিকতায় এই সেশনে মহাবিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর প্রসঙ্গে আলচনা করা যাক।
  • আচ্ছা, আমরা যেভাবে বছর, মাস, দিন, সপ্তাহ দিয়ে হিসেব করি; মহাবিশ্বের সুবৃহৎ সময়সীমা হিসাব করা হয় কীভাবে? মানুষের জীবনকে যেমন শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য এরকম কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়; একইভাবে মহাবিশ্বের গোটা সময়সীমাকে কয়েকটি এককে ভাগ করা যায় কি?
  • অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের 'পৃথিবী ও মহাবিশ্ব' অধ্যায় থেকে মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবীর বয়স, ভূতাত্ত্বিক সময় সীমা, ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার একক ইত্যাদি বিষয়গুলো ছোট দলে ভাগ হয়ে পড়ে নাও।
  • পড়া হয়ে গেলে আলোচনা করে দেখো। ভেবে দেখো, সব মহাযুগ কি সমান? কীসের উপর ভিত্তি করে এই বিভিন্ন মহাযুগ, উপযুগ ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়?
  • ১২ ঘণ্টা সময়সীমায় কীভাবে এই সবগুলো যুগকে আনুপাতিক হারে সাজানো হয়েছে তা অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে দেখে নাও এবং আলোচনা করো। বিভিন্ন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো লক্ষ করো। মানুষের উদ্ভব কত সাম্প্রতিক ঘটনা তা কি লক্ষ করেছ?
  • তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এত আগের ঘটনা মানুষ জানল কী করে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একই অধ্যায় থেকে ভূতাত্ত্বিক সময়সীমার গঠন ও পরিবর্তন সম্পর্কে পড়ে আগের মতোই আলোচনা করে দেখো।
  • গুরুত্বপূর্ণ ঘটোনাগুলোর মধ্যে নিশ্চয়ই জীবের উৎপত্তির বিষয়টা এসেছে। সময়ের সাথে জীবের যেমন উৎপত্তি ঘটেছে, একইভাবে গণবিলুপ্তি হয়ে লক্ষ লক্ষ জীব এক লহমায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন ইতিহাসও আছে। গণবিলুপ্তির ঘটনা বলতে ডাইনোসরের বিলুপ্তির কথা হয়ত তোমরা জেনে থাকবে, কিন্তু পৃথিবীতে যে এরকম আরও গণবিলুপ্তি ঘটেছে; আরেকটু বিস্তারিত ভাবে তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে দেয়া আছে; পড়ে নাও।
  • প্রশ্ন আসতে পারে, কোন সময়ে কোন ধরনের জীব পৃথিবীতে ছিল তা কীভাবে জানা গেলো? এই বিষয়ে তোমার ধারণা নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখো।
  • এই প্রসঙ্গে জীবাশ্ম বা ফসিলের বিষয়ে আলোচনা করা যাক। জীবাশ্ম কত ধরনের হয়, এদের বয়স কিভাবে জানা যায় এই বিষয়গুলো তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে পড়ে নাও।
চতুর্থ সেশন
  • পৃথিবীর জন্মের পর থেকে যে পরিবর্তনসমূহ ঘটেছে সেগুলোর মধ্যে কোনগুলোকে তোমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়? অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন সম্পর্কে পড়ে নিজেরা আলোচনা করো।
  • এই দুই ধরনের পরিবর্তন ছাড়াও আরেকটা বড় পরিবর্তন পৃথিবীতে ঘটেছে। তৃতীয় এই পরিবর্তন হলো জীব জগতের পরিবর্তন। এখন এই জীব জগতের পরিবর্তন কি আগের দুই ধরনের পরিবর্তনের ওপর কোনোভাবে নির্ভরশীল? একটু ভেবে নিয়ে তোমার দলের সদস্যদের সাথে আলোচনা করো। আলোচনা শেষে তোমার উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • ইতোমধ্যে তোমরা জানো, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তোমরা এখন যেমন দেখছ, শুরু থেকে তেমন ছিল না। অক্সিজেন না থাকায় বাতাসে কোনো প্রাণীর পক্ষে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানো সম্ভব ছিল না। এমনকি বায়ুমণ্ডল তৈরির পর যখন প্রথম আদি অণুজীব সমুদ্রে জন্ম নিলো তখনও বাতাসে অক্সিজেন ছিল না, অর্থাৎ উদ্ভিদ প্রাণীর শ্বাস নেয়ার উপায় ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে, বাতাসে কী করে অক্সিজেন উৎপন্ন হল?
  • তোমরা সকলেই জানো, উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বাতাসে অক্সিজেন নির্গমন করে। ওই সময়ে আমাদের চেনাজানা উদ্ভিদ না থাকলেও ছিল ব্যাকটেরিয়ার মতো অণুজীব। আর বিবর্তনের মাধ্যমে একটা সময় আবির্ভাব হলো ক্লোরোফিলযুক্ত সায়ানোব্যাকটেরিয়া (ছবিতে সায়ানোব্যাকটেরিয়া)। ক্লোরোফিল থাকার কারণে উদ্ভিদের মত এরাও সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। সায়ানোব্যাক্টেরিয়াই প্রথম সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন অবমুক্ত করেছে। পৃথিবীকে সবুজ করে তুলবার প্রথম কৃতিত্ব তাই এদের। এর ফলেই এক সময়ে প্রথমে পানিতে প্রাণীর উদ্ভব ঘটে। পরবর্তীতে অক্সিজেনের পরমাণু যুক্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের স্তর তৈরি হয়, এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে; আর এর ফলেই পানির পাশাপাশি ডাঙাতেও বেঁচে থাকার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর ফলস্বরূপ ক্রমান্বয়ে স্থলচর প্রাণীর বিকাশ হয়েছে।
  • এখন জেনে নেয়া দরকার, সালোকসংশ্লেষণের এই প্রক্রিয়া কীভাবে ঘটে? পরের কয়েকটি সেশনে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সেশন
  • অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের সালোকসংশ্লেষণ অধ্যায় থেকে এই প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে তা বিস্তারিত পড়ে নাও ও দলে আলোচনা করো। বুঝতে অসুবিধা হলে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
  • এবার সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি কীভাবে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয় তা পড়ে আলোচনা করো।
  • আলোকনির্ভর ও আলোকনিরপেক্ষ দুই পর্যায়ে শক্তির রূপান্তর ও স্থানান্তর কোন কোন ক্ষেত্রে ঘটে, দলে আলোচনার মাধ্যমে তা চিহ্নিত করো।
  • সালোকসংশ্লেষণে শক্তির স্থানান্তর ও রূপান্তর কীভাবে ঘটে তা কি বুঝতে পেরেছ? নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো।
  • স্থানান্তর ও রূপান্তরের ঘটনায় শক্তির মোট পরিমাণ যে একই থাকে সালোকসংশ্লেষণের প্রক্রিয়া থেকে তা ব্যাখ্যা করো। শক্তির নিত্যতা সূত্র কি এখানে কাজ করছে?
  • এবার সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া উদ্ভিদের কোন অংশে ঘটে তা লক্ষ করো। এদের দেহের কোন অংশে সালোকসংশ্লেষণের কোন ধাপ ঘটে তা ব্যাখ্যা করতে পারবে?
  • নিচের ফাঁকা অংশে এঁকে দেখাও। অন্য দলের সদস্যদের কাছে পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।
  • এদের দেহের কোন অংশে সালোকসংশ্লেষণের কোন ধাপ ঘটে তা ব্যাখ্যা করতে বলুন। কোন কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে সবুজ উদ্ভিদ বা অণুজীব সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সফলভাবে খাবার তৈরি করতে পারে বলতে পারো? একটু ভেবে নিয়ে তোমার উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • দলে বসে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব আলোচনা কর।
নবম ও দশম সেশন
  • অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে দেয়া 'পৃথিবীতে প্রাণের উন্মেষ ও বিকাশ' ছবিটি ভালো করে লক্ষ করো। ছবিতে কী কী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দেখা যাচ্ছে? কোন সময়ে কোন ঘটনাটি ঘটেছে? দলে আলোচনা করে নিচে প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো।
  • ছবিতে কী কী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দেখা যাচ্ছে
  • কোন সময়ে কোন ঘটনাটি ঘটেছে?
  • এবার একটা কাজ করা যাক। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে এখন পর্যন্ত পুরো সময়টাকে তুমি কি ২৪ ঘণ্টার ঘড়িতে দেখাতে পারবে? আগের মতোই ২৪ ঘণ্টার ঘড়িতে দেখাতে হবে। তোমরা চাইলে বড় কাগজে এঁকে দেখাতে পারো। একে বলে জিওলজিক্যাল টাইমলাইন।
  • দলের বন্ধুদের সাথে মিলে কাজ করো। কাজ শেষ হলে শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন দেয়ালে তোমাদের বিভিন্ন দলের করা ২৪ ঘণ্টার ঘড়ি সেঁটে দাও। সব দলের কাজ ঘুরে ঘুরে দেখো ও মতামত দাও।
একাদশ সেশন
  • নিচের প্রাণীটির নাম বলতে পারো? কখনও দেখেছ এই প্রাণীকে? নিশ্চয়ই না?
  • দেখার কথাও না। কারণ, বেশ অনেক বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে এই প্রাণী। অস্ট্রেলিয়ার বহু বিচিত্র প্রাণীকূলের মধ্যে এই 'মারসুপিয়াল' (ক্যাঙারুর মত থলি ছিল যেসব প্রাণীর) যার নাম তাসমানিয়ান বাঘ। না, কোনো গণবিলুপ্তির কারণে নয়, মানুষের অবাধ শিকার, এবং দায়িত্বহীন কার্যকলাপের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয় এই অসাধারণ বুদ্ধিমান প্রাণীটি সহ অস্ট্রেলিয়া এবং তাসমানিয়ার বিশাল প্রাণীবৈচিত্র্যকে ঠেলে দিয়েছে প্রান্তিকে। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, মানুষের আবির্ভাবের মাত্র অল্প কিছু বছর পরেই গোটা পৃথিবীর প্রাণীকূলের একটা বড় অংশ হারিয়ে গেছে।
  • যেসব জীব চিরতরে হারিয়ে গেছে তাদের তো আর ফেরত আনা যাবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে পৃথিবীতে যে জীববৈচিত্র্য, সেখানে মানুষের অবস্থান কী? মানুষের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিৎ?
  • বিশ্বপ্রকৃতির নানা উপাদানের মধ্যে মানুষ একটি। প্রকৃতির অংশ হিসেবে মানুষের দায়িত্ব কী হতে পারে? আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও। দলে উপস্থাপনা কর, অন্যদের মতামত নাও। এই বিষয়ে তোমার নিজের অনুভূতি ও চিন্তা নিচে লিখে রাখো।
Content added By
Promotion