ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গণিত - সংখ্যার গল্প | NCTB BOOK

০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ এই মোট দশটা চিহ্ন দিয়ে সংখ্যা তৈরি করার যে পদ্ধতিটা ভারতীয় উপমহাদেশের
গণিতবিদ আর্যভট্ট বের করেছিলেন সেটিকে আমরা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলি।

চলো এবারে গল্পের মতো করেই শুনি কীভাবে আর্যভট্ট এই পদ্ধতির চিন্তা করেছিলেন।
আর্যভট্ট ভাবলেন, ‘আমি যদি সংখ্যাকে প্রকাশ করতে চাই তাহলে নিচের মতো করে প্রকাশ করব।’
এরপর উনি লিখলেন:

0

এখন উনি ভাবলেন, ‘আমার কাছে যতগুলো চিহ্ন ছিল সব একবার করে লেখা শেষ। এখন যদি একটু খেয়াল
করি তাহলে দেখব রোমান পদ্ধতির মতো প্রত্যেকটা সংখ্যা এক এক করে বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ১ এর সাথে ১
যোগ করলে ২ পাব আবার ২ এর সাথে ১ যোগ করলে ৩ পাব। এখন যদি আমি আবার লিখতে থাকি তাহলে
৯ এর পরে কী লিখব।

১ম বার লেখা শেষ:

0
০ ??         

 

‘কিন্তু আমি যে সবগুলোর চিহ্ন একবার ব্যবহার করেছি সেটা তো সংখ্যায় লিখতে হবে। সেটা আমি কোথায়
লিখব।’

0
১০         

সংখ্যাগুলো লিখা শেষ এটা বুঝাতে শুন্য লিখলাম এবং ১ লিখলাম প্রত্যেকটি সংখ্যার বাম পাশে কারণ
একবার করে লেখা শেষ হয়েছে। এরপর তিনি বললেন, ‘শুধু ১ এবং ১০ এ ০ এর বাম পাশের ১ কিন্তু একই
অর্থ প্রকাশ করে না। অর্থাৎ এদের মান কিন্তু এক নয়। কারণ ১০ এ ০ এর বাম পাশের ১ বলছে আমরা সবগুলো
সংখ্যা একবার লিখে ফেলেছি। এখন যদি আমি আবার একবারের পর এভাবে লিখতে থাকি তাহলে কী হবে?’

0
১০১১১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯

এখানে ২০ এর ২ আর ১২ এর ২ কিংবা শুধু ২ এর মান কিন্তু একই না। আমরা যখন রোমান সংখ্যায় XX
লিখি তাহলে ১০ আর ১০ যোগ করে ২০ বুঝাচ্ছি কিন্তু আমাদের এই নিয়মে ১০ লিখলে ১ আর ০ যোগ করে
কিন্তু ১ বুঝাচ্ছে না। তিনি কিন্তু তখনও এইসব সংখ্যার নাম দেননি। তিনি বুঝালেন যে আমি সবগুলো প্রতীক
কতবার লিখছি সেটা বুঝানোর জন্য সেই সংখ্যাটা বসাচ্ছি। এভাবে তিনি কত পর্যন্ত লিখতে পারবেন?

তাহলে যে ৯টি প্রতীক আছে সবগুলো দিয়ে দুইবার যদি নানাভাবে লিখি তাহলে আমরা ৯৯ পর্যন্ত লিখতে
পারবো। এরপর উনি আবার আটকে গেলেন যে এরপর কী করা যায়। এরপর তিনি চিন্তা করলেন এই পদ্ধতিতে
যে সংখ্যা পর্যন্ত লিখলাম তাকে আরেকবার লিখি। অর্থাৎ আরেকবার লিখতে হলে আমাদের আবার ০ থেকে
শুরু করতে হবে এবং সেটা আমাকে বলতে হবে। 

এরপর আমরা যদি খেয়াল করি উপরে লেখা বামের অঙ্কগুলোতে, তাহলে দেখব, সেখানেও আমরা একবার
করে ৯ বার সবগুলো প্রতীক লিখে ফেলেছি। অতএব আমাকে আরেকটা শুন্য বসাতে হবে।
এখন আর বাম পাশে যদি ১ লিখি তাহলে,

এই ১০০ এর বাম পাশের ১ কিন্তু দুই অঙ্কের সংখ্যার বামের সংখ্যাগুলো কয়বার লেখা হয়েছে তা প্রকাশ
করছে। কিন্তু দুই অঙ্কের সংখ্যার ডান পাশের সংখ্যাগুলো কী দিয়ে প্রকাশ করছে? এরপর একটি নাম দিলেন।
এরপর তিনি দুই অঙ্কের সংখ্যার বামের সংখ্যাটিকে দশক এবং তিন সংখ্যার বামের সংখ্যাটিকে শতক বলে
নাম দেন। অর্থাৎ আমরা যদি দেখি প্রথম ১ টার দশ গুণ হয়ে গেলো ১০ এবং ১০ এর দশ গুণ হয়ে গেলো ১০০।

এখান থেকে একটি চমৎকার জিনিস উনি খেয়াল করলেন যে, ‘আমি যদি সংখ্যাগুলোকে পাশাপাশি লিখতে
থাকি এবং আমি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আসি তবে সংখ্যাটা ১০ গুণ বাড়ে। এখন কিন্তু আমরা শিখে
ফেললাম এবং তিন সংখ্যায় আমি ৯৯৯ পর্যন্ত লিখতে পারবো এবং এর পর আরও আবার এক ঘর বামে
বাড়বে। এভাবে যতবার স্থানের পরিবর্তন হবে ততবার ১০ গুণ হয়ে বাড়তে থাকবে। এভাবে গণনার চিন্তা
থেকেই আসলে দশমিক পদ্ধতিটা আসলো। আমরা যদি এখন দেখি যে প্রত্যেক বার স্থান পরিবর্তনে ১০ গুণ
করে বেড়ে যাচ্ছে এবং সেইটাই সংখ্যা পদ্ধতি। আমাদের হাতের ১০টি আঙ্গুল দিয়ে ০ থেকে ৯ পযর্ন্ত এই
দশটা চিহ্ন বা প্রতীককে দেখানো বা প্রকাশ করা যায়।

তাহলে আমাদের সংখ্যা পদ্ধতিতে ১০ টা চিহ্ন বা প্রতীক রয়েছে যার বাংলায় একটা নাম দিলাম অঙ্ক আর ইংরেজিতে একটা নাম দিলাম ডিজিট (Digit)

 

আমরা এইযে ১ - ৯ পর্যন্ত সংখ্যা দেখছি ওরা নিজেরাই একটা কিছু প্রকাশ করে অর্থাৎ ওদের দাম আছে।
তবে এককভাবে ০ এর কোনো দাম বা মূল্য নেই,  তাই ০ কে অন্য কোনো সংখ্যার সঙ্গে থাকতে হয়। এজন্য
০ কে বলা হয় সহকারী বা ইংরেজিতে auxiliary ।  আর ১-৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোকে বলা হয় সার্থক অঙ্ক বা
ইংরেজিতে significant number । আমরা এই অধ্যায়ের প্রথমদিকে রোমান সংখ্যার(XX বা XC) কথা বলেছি। 
এভাবে পাশপাশি সংখ্যা লেখাকে বলা হয় সংখ্যা পাতন বা notation । কোনো সংখ্যা যদি আমরা লিখতে চাই
তাহলে আমরা ০-৯ এই চিহ্নগুলোকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে লিখবো; যে পদ্ধতিতে প্রতিবার যখন সংখ্যাটা
বাম দিকে আসবে তখন সেটা তার থেকে ১০ গুণ বেড়ে যাবে।

তাহলে এখন আমরা দেখি,
একটি সংখ্যা ১২৩
এখানে তিনটি অঙ্ক আছে এবং তিনি ডান থেকে একক, দশক, শতক এভাবে প্রতিটির একটি করে নাম
দিয়েছেন।

শতকদশকএকক

এটা পড়ার সময় আমাদের পড়তে হবে:  ১ শতক ২ দশক ৩ একক।
সংখ্যাটার সত্যিকারের মান হবে:
একটা শতক (১০০) + দুইটা দশক(২০) + তিনটা একক(৩) = একশত তেইশ (১২৩)।
এভাবে আমরা সংখ্যাগুলো লিখতে শুরু করলাম এবং লেখার ফলে কিন্তু আমরা দশমিক পদ্ধতি পেয়ে গেলাম।

কাগজের ভাঁজে লুকানো স্থানীয় মান

 

 

দেশীয় রীতি

কোটিলক্ষহাজারশতকদশকএকক
নিযুতলক্ষঅযুতহাজার
অষ্টমসপ্তমষষ্ঠপঞ্চমচতুর্থতৃতীয়দ্বিতীয়প্রথম

এক কোটি ত্রিশ লক্ষ বিরাশি হাজার পাঁচশত চব্বিশ

 

আন্তর্জাতিক রীতি

বিলিয়নমিলিয়ন হাজারশতকদশকএকক
দ্বাদশ
তম
একাদশ
তম
দশমনবমঅষ্টমসপ্তমষষ্ঠপঞ্চমচতুর্থতৃতীয়দ্বিতীয়প্রথম

দুইশত চুয়াল্লিশ বিলিয়ন দুইশত তেরো মিলিয়ন বিরাশি হাজার পাঁচশত চব্বিশ

 

দেশীয় ও আন্তর্জাতি ক রীতির তুলনা

   লক্ষ হাজারশতকদশকএকক
????কোটিনিযুতলক্ষঅযুতহাজার
দ্বাদশ
তম
একাদশ
তম
দশমনবমঅষ্টমসপ্তমষষ্ঠপঞ্চমচতুর্থতৃতীয়দ্বিতীয়প্রথম
বিলিয়নমিলিয়নহাজারশতকদশকএকক

 

উপরের সংখ্যাটিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় রীতিতে প্রকাশ করো।
দেশীয় রীতিতে কোটির উপরে আরও কিছু কি আছে?
খুঁজে বের করার দায়িত্ব তোমাদের। তোমাদের শিক্ষক, অভিভাবক, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু সবার সাথে আলোচনা করতে পার।

 

👭জোড়ায় কাজ

  • প্রতি জোড়ায় ০, ১, ২, ..., ৯ অঙ্কগুলি পুনরাবৃত্তিসহ লিখে মোট ১৬ টি কাগজের টুকরা তৈরি করো।
    নিচে একটি নমুনা দেওয়া হলো:
  • এবার প্রতি জোড়ায় তৈরি করা ১৬ টুকরা কাগজ থেকে লটারির মাধ্যমে জোড়ার প্রত্যেকে ৮টি করে কাগজের টুকরা নাও।
  • এরপর জোড়ার প্রত্যেক শিক্ষার্থী লটারিতে প্রাপ্ত ৮টি কাগজের টুকরায় সাজিয়ে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সংখ্যা তৈরি করে খাতায় লিখো।
  • এবার জোড়ার দুজনের সর্বোচ্চ সংখ্যা দুটির মধ্যে যার সংখ্যাটি বৃহত্তর হবে সে ১ পয়েন্ট পাবে অন্যজন ০ পয়েন্ট পাবে।
  • এবার জোড়ার দুজন শিক্ষার্থীর সর্বনিম্ন সংখ্যা দুটির মধ্যে যার সংখ্যাটি ক্ষুদ্রতর হবে সে ১ পয়েন্ট পাবে অন্যজন ০ পয়েন্ট পাবে।
  • যার মোট পয়েন্ট বেশি হবে সে বিজয়ী হবে, পয়েন্ট সমান হলে খেলা ড্র হবে।

 

📝 অনুশীলনী

১)    পুনরাবৃত্তি না করে নিচের অঙ্ক গুলো ব্যবহার করে চার অঙ্কের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা তৈরি করো।
        ক)  ২, ৮, ৭, ৪         খ) ৯, ৭, ৪, ১      গ) ৪, ৭, ৫, ০     ঘ) ১, ৭, ৬, ২     ঙ) ৫, ৪, ০, ২ 
        (সংকেত:  ০৭৫৪ কিন্তু তিন অঙ্কের একটি সংখ্যা)

২)   যে কোনো একটি অঙ্ক দুইবার ব্যবহার করে বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা তৈরি করো।
       ক) ৩, ৮, ৭     খ) ৯, ০, ৫      গ) ০, ৪, ৯       ঘ) ৮, ৫, ১
      (সংকেত: দুইবার ব্যবহার করা যায় এমন যতগুলো শর্ত আছে সেগুলো চিন্তা করো)

৩)   নিচের শর্তগুশর্ত লো পূরণ করে যে কোনো চারটি ভিন্ন অঙ্ক ব্যবহার করে বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা তৈরি করো। (প্রথমটি             সমাধান করে দেওয়া হলো)

         ক) ৭ অঙ্কটি এককের স্থানে থাকবে।

বৃহত্তম
ক্ষুদ্রতম

            (সংখ্যাটি ০ দিয়ে শুরু হতে পারবে না। কেন?)


           খ) ৪ অঙ্কটি সবসময় দশকের স্থানে থাকবে।

বৃহত্তম   
ক্ষুদ্রতম   

             

            গ) ৯ অঙ্কটি সবসময় শতকের স্থানে থাকবে।

বৃহত্তম   
ক্ষুদ্রতম   

   

            ঘ) ১ অঙ্কটি সবসময় হাজারের স্থানে থাকবে।

বৃহত্তম   
ক্ষুদ্রতম   

 

 🧩 পাজল

ছবির বাক্সে তোমার জন্মদিনের জন্য একটা উপহার রয়েছে। তবে সমস্যা হলো বাক্সটি একটা তালা দিয়ে বন্ধ করা আছে। তালার ঠিক নিচেই ০ থেকে ৯ পর্যন্ত অঙ্কগুলি লিখা আছে। তালা খুলতে প্রয়োজন তিনটি অঙ্ক দিয়ে তৈরি একটি গোপন সংখ্যা। নিচের কাগজে লিখা আছে সেই গোপন সংখ্যার নানা বৈশিষ্ট্য। এবার তাহলে খুঁজে বের করো সেই গোপন সংখ্যা আর জিতে নাও উপহার।

 

Content added || updated By