সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা - বুঝে পড়ি লিখতে শিখি | NCTB BOOK

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখক। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালে। তিনি কিশোর উপযোগী প্রচুর সংখ্যক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন, যেমন: ‘দীপু নাম্বার টু’ ‘আমার বন্ধু রাশেদ' ইত্যাদি। তাঁর লেখা বইয়ের একটা বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি; যেমন: ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ’, ‘ত্রিনিটি রাশিমালা’, ‘প্রজেক্ট নেবুলা’ ইত্যাদি। নিচে তাঁর লেখা একটি গল্প দেওয়া হলো।

আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা

       মুহম্মদ জাফর ইকবাল

ব্যাপারটা শুরু হয়েছে সেই ছেলেবেলা থেকে। রঞ্জুর বয়স তখন চার, তার আব্বা-আম্মা ভাবলেন সে এখন বড়ো হয়ে গেছে, তার আলাদা ঘরে ঘুমানো উচিত। বড়ো বোন শিউলির ঘরে তার জন্যে ছোটো খাট দেওয়া হলো, সেখানে রইল রংচঙে চাদর আর ঝালর দেওয়া বালিশ। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে যেন একা একা না লাগে সেজন্যে মাথার কাছে রইল তার প্রিয় খেলনা ভালুক। গভীর রাতে আম্মা দেখেন রঞ্জু ঘুম থেকে উঠে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে এসেছে। আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো? ঘুম থেকে উঠে এলি যে?

রঞ্জু তার আব্বা আর আম্মার মাঝখানে শুতে শুতে বলল, ভালুকটা ঘুমাতে দেয় না।

আম্মা চোখ কপালে তুলে বললেন, খেলনা ভালুক তোকে ঘুমাতে দেয় না?

না। যখনই ঘুমাতে যাই খামচি দেয়। রঞ্জু শার্টের হাতা গুটিয়ে দেখাল, এই দেখো।

আম্মা দেখলেন আঁচড়ের দাগ। বিকেলবেলা পাশের বাসার ছোটো মেয়েটির পুতুল কেড়ে নিতে গিয়ে খামচি খেয়েছিল, নিজের চোখে দেখেছেন। মাঝরাতে সেটা নিয়ে রঞ্জুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন না।

পরদিন তার বিছানায় খেলনা ভালুকটা সরিয়ে সেখানে ছোটো একটা কোলবালিশ দেওয়া হলো। কিন্তু আবার মধ্যরাতে দেখা গেল রঞ্জু গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে এসেছে। আম্মাকে ডেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিজের জন্যে জায়গা করতে করতে বলল, খুব দুষ্টুমি করছে।

কে?

ময়ূরটা।

কোন ময়ূর?

ওই যে দেয়ালে।

আম্মার মনে পড়ল সেই ঘরের দেয়ালে শিউলি একটা ময়ূরের ছবির পোস্টার লাগিয়ে রেখেছে, বললেন, সেটা তো ছবি।

রঞ্জু মাথা নাড়ল, ছবি ছিল। রাত্রিবেলা ছবি থেকে বের হয়ে এসে পায়ে ঠোকর দেয়। এই দেখো আমার বুড়ো আঙুলে ঠোকর দিয়েছে।

অন্ধকারে আম্মা রঞ্জুর পায়ের নখ বা ময়ূরের কাজকর্ম দেখার উৎসাহ অনুভব করলেন না। রঞ্জুকে পাশে শোয়ার জায়গা করে দিলেন।

ব্যাপারটা এইভাবে শুরু হয়েছে-প্রয়োজনে রঞ্জু চমৎকার গল্প ফেঁদে বসে। আব্বা বললেন, ছোটো মানুষ সত্যি- মিথ্যে গুলিয়ে ফেলে। বড়ো হলে ঠিক হয়ে যাবে।

যত দিন যেতে থাকল রঞ্জুর বানিয়ে গল্প বলার অভ্যাস আরো বেড়ে যেতে থাকল। বছরখানেক পরে রঞ্জুকে নিয়ে সমস্যা আরো বেড়ে গেল—কারণ তখন হঠাৎ করে সে সায়েন্স ফিকশন পড়া আরম্ভ করেছে। সায়েন্স ফিকশনের উদ্ভট কাহিনি পড়ে তার মাথাটা পুরোপুরি বিগড়ে গেল—আগে বানিয়ে বানিয়ে সে যেসব গল্প বলত সেগুলো তবুও কোনো না কোনোভাবে সহ্য করা যেত। কিন্তু আজকাল যেগুলো বলে সেগুলো আর সহ্য করার মতো নয়।

রঞ্জুর এই গল্প বলা রোগের সবচেয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছে তার বড়ো বোন শিউলি। বড়ো বোনেরা সাধারণত নানাভাবে ছোটো ভাইদের উৎপাত করে থাকে, কিন্তু শিউলি মোটেও সেরকম মেয়ে না, সে ধৈর্য ধরে রঞ্জুর গল্প শুনত, গল্পের যেখানে বিস্ময় প্রকাশ করার কথা সেখানে বিস্ময় প্রকাশ করত, যেখানে দুঃখ পাওয়ার কথা সেখানে দুঃখ পেত, যেখানে খুশি হওয়ার কথা সেখানে খুশি হতো। গল্প শুনে সে কখনো বিরক্ত হতো না এবং যত আজগুবিই হোক না কেন সবসময় সে এমন ভান করত যেন সে গল্পটা বিশ্বাস করেছে।

রঞ্জুর সায়েন্স ফিকশনের প্রতি বাড়াবাড়ি প্রীতি জন্ম নেবার পর শিউলির জন্যেও গল্পগুলো হজম করা কঠিন হয়ে পড়তে শুরু করল। প্রায় প্রতিদিনই রঞ্জু এসে মহাকাশের কোনো এক আগন্তুকের কথা বলতে লাগল। কোনদিন সেই আগন্তুক তাকে ব্ল্যাকহোলের গোপন রহস্যের কথা বলে গেছে, তার কাছে কাগজ কলম ছিল না বলে লিখে রাখতে পারেনি, লিখে রাখতে পারলেই পৃথিবীতে হইচই শুরু হয়ে যেত। কোনদিন একটা ফ্লাইং সসার থেকে বিদঘুটে কোন প্রাণী লেজারগান দিয়ে তাকে গুলি করতে চেষ্টা করেছে আর সে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে, আবার কোনদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে একটা জারুল গাছের নিচে চতুষ্কোণ একটা উজ্জ্বল আলো দেখে সেখানে উঁকি মারতেই ভিন্ন একটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এক ঝলক দৃশ্য দেখে এসেছে।

একদিন রঞ্জু এসে শিউলিকে খুব উত্তেজিত গলায় বলল, আপু, যা একটা কাণ্ড হয়েছে!

শিউলি চোখেমুখে যথেষ্ট আগ্রহ ফুটিয়ে বলল, কী হয়েছে?

ফুটবল খেলে ফিরে আসছি, দেরি হয়ে গিয়েছিল বলে নূতন যে বিল্ডিংগুলো তৈরি হচ্ছে তার ভিতর দিয়ে শর্টকাট মারছি। মাঝামাঝি জায়গাটায় যেখানে ইটগুলো সাজিয়ে রেখেছে সেখানে আসতেই হঠাৎ একটা রোবট বের হয়ে এল।

শিউলি চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, রোবট?

হ্যাঁ। চকচকে স্টেনলেসের শরীর। মাথার দুই পাশ থেকে আলো বের হচ্ছে, চোখগুলো সবুজ। আমাকে দেখে হাত তুলে নাকি স্বরে বলল, এ-ই-ছে-লে-কো-থা-য়-যা-ও?

শিউলি হাসি গোপন করে বলল, তাই নাকি? আমি জানতাম শুধু পেতনিরা নাকি স্বরে কথা বলে, রোবটরাও তাহলে নাকি স্বরে কথা বলে?

রঞ্জু মাথা নেড়ে বলল, তাই তো দেখলাম। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, বাসায় যাই।

রোবটটা বলল, তু-মি-কি-আ-মা-র-এ-ক-টা-উ-প-কা-র-ক-র-তে-পা-র-বে?

আমি বললাম, কী উপকার? তখন সেটা বলল তার নাকি ভীষণ খিদে পেয়েছে। আমি তো অবাক! রোবটের আবার খিদে পায় নাকি? তখন রোবটটা আমাকে বলল তাদের যখন খিদে পায় তখন তাদের ব্যাটারি খেতে হয়। মোটা মোটা ডি সাইজের ব্যাটারি।

শিউলি বিস্ময়ের ভান করে বলল, তাই নাকি?

রঞ্জু মাথা নাড়ল, হ্যাঁ।

তুই ব্যাটারি কিনে দিলি?

হ্যাঁ-দোকান থেকে দুই ডজন ব্যাটারি কিনে দিয়ে এলাম, আর আমার সামনে কচ কচ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল।

ব্যাটারি কেনার পয়সা পেলি কই?

রোবটটাই দিলো, তার কাছে সব দেশের টাকা আছে।

শিউলি হাসি গোপন করে বলল, তুই যে রোবটের এত বড়ো উপকার করলি, সে তোকে কিছু উপহার দিলো না?

রঞ্জু মনমরা হয়ে বলল, দিয়েছে।

কী দিয়েছে?

রঞ্জু পকেট থেকে কয়েকটা তেঁতুলের বিচি বের করে বলল, এইগুলো।

তেঁতুলের বিচি?

এগুলো দেখলে মনে হয় সাধারণ তেঁতুলের বিচি, আসলে এর থেকে যে গাছ বের হয় সেটা থেকে ক্যানসারের ওষুধ বের করা যাবে।

শিউলি গম্ভীর গলায় বলল, তাহলে এগুলো যত্ন করে রাখিস, আবার হারিয়ে না যায়।

হ্যাঁ, রাখব।

রঞ্জু তখন তেঁতুলের বিচি খুলে তার ছোটো বাক্সটার মাঝে গুছিয়ে রাখল ।

এর কয়দিন পরের কথা। আম্মা নানাকে একটা চিঠি লিখছেন। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ যখন বলপয়েন্ট কলম দিয়ে লিখছে তখন আম্মা কোন একটা বিচিত্র কারণে ফাউনটেন পেন ছাড়া লিখতে চান না। চিঠি লিখতে লিখতে হঠাৎ আম্মার ফাউনটেন পেনে কালি শেষ হয়ে গেল। আম্মা রঞ্জুকে ডেকে বললেন, কালির দোয়াতটা নিয়ে আয় তো।

রঞ্জু দোয়াতটা নিয়ে আসছিল আর ঠিক তখন কোনো কারণ নেই, কিছু নেই হঠাৎ করে সে হোঁচট খেল, সাথে সাথে হাত থেকে কালির দোয়াত ছিটকে গেল উপরে, তারপর আছড়ে পড়ল নিচে-আর কিছু বোঝার আগে দোয়াত ভেঙে একশ টুকরা হয়ে মেঝেতে কার্পেটে কালি ছড়িয়ে একটা বিতিকিচ্ছি অবস্থা হলো।

আম্মা তখন এমন রেগে গেলেন যে, সে আর বলার মতো নয়। রঞ্জুকে বকতে বকতে আম্মা তার বারোটা বাজিয়ে ছাড়লেন—এমন এমন কথা বলতে লাগলেন যে রঞ্জুর মনে হতে লাগল যে বেঁচে থাকার বুঝি কোনো অর্থই হয় না। খানিকক্ষণ সে ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদল, তারপর সে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে গেল।

নির্জন ছাদ, পাশে কয়েকটা নারকেল গাছ, বাতাসে তাদের পাতা ঝিরঝির করে নড়ছে। আকাশের মাঝামাঝি অর্ধেকটা চাঁদ, তাতেই চারদিকে আলো হয়ে আছে। ছাদে এসে রঞ্জুর মনটা একটু শান্ত হলো। এ রকম সময় রঞ্জুর মনে হলো পেছনে কেমন জানি এক ধরনের শোঁ শোঁ আওয়াজ হচ্ছে। একটু অবাক হয়ে পেছন ঘুরে সে যেটা দেখল তাতে তার সমস্ত শরীর শীতল হয়ে গেল, গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দেবে দেবে করেও সে অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে রাখল।

রঞ্জু দেখল তার পেছনে দুই মানুষ সমান উঁচু জায়গাতে গোলমতোন একটা মহাকাশযান ভাসছে। সেটি বিরাট বড়ো, প্রায় পুরো ছাদ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে—ঠিক নিচে একটা গোল গর্তের মতোন, সেখান থেকে নীল আলো বেরিয়ে আসছে। মহাকাশযানটি প্রায় নিঃশব্দ, শুধু হালকা একটা শোঁ শোঁ আওয়াজ, খুব কান পেতে থাকলে শোনা যায়।

রঞ্জু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না। প্রথমে মনে হলো সে বোধহয় পাগল হয়ে গেছে—পুরোটা একটা দৃষ্টিবিভ্রম, কিন্তু ভালো করে তাকাল সে, বুঝতে পারল এটা দৃষ্টিবিভ্রম নয়, সত্যি সত্যি দেখছে। কী করবে বুঝতে না পেরে সে মুখ হা করে তাকিয়ে রইল।

একটু পরে নীল আলোতে হঠাৎ একটা আবছা ছায়া দেখতে পায়, ছায়াটা কিলবিল করে নড়তে থাকে, তারপর হঠাৎ সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়, মনে হতে থাকে অনেক দিন না খেয়ে একটা মানুষ শুকিয়ে কাঠি হয়ে গেছে—শুধু মাথাটা না শুকিয়ে আরো বড়ো হয়ে গেছে, সেখানে গোল গোল চোখ, নাক নেই, সেখানে দুটি গর্ত। মুখের জায়গায় গোল একটা ফুটো দেখে মনে হয় বুঝি খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

প্রাণীটি কিলবিল করতে করতে একটা শব্দ করল। শব্দটি অদ্ভুত। শুনে মনে হয় একজন মানুষ হাঁচি দিতে গিয়ে থেমে গিয়ে কেশে ফেলেছে। রঞ্জু কী বলবে বুঝতে না পেরে বলল, ওয়েলকাম জেন্টলম্যান।

কেন জানি তার ধারণা হলো ইংরেজিতে কথা বললে সেটা এই প্রাণী ভালো বুঝতে পারবে। প্রাণীটা তখন হঠাৎ করে পরিষ্কার বাংলায় বলল, শুভসন্ধ্যা মানবশিশু।

রঞ্জু অবাক হয়ে বলল, তুমি বাঙালি?

প্রাণীটা বলল, না, আমি বাঙালি নই। তবে আমি তোমার গ্রহের যে কোনো মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারি। এই দেখো— বলে প্রাণীটা পরিষ্কার চাটগাঁয়ের ভাষায় বলল, ‘আসার বজা কুড়ার বজা ফত্যি আড়ত বেচি, বাজার গরি বাড়িত আইলে ইসাব লয় তোঁর চাচি’। ফ্লাইং সসার এবং তার রহস্যময় প্রাণী দেখে রঞ্জু যত অবাক হয়েছিল, তার মুখে চাটগাঁয়ের কথা শুনে সে তার থেকে বেশি অবাক হয়ে গেল। কিন্তু সাথে সাথে আরো একটা ব্যাপার ঘটল, তার ভেতর থেকে ভয়টা পুরোপুরি দূর হয়ে গেল। সে খুক খুক করে একটু হেসে ফেলে বলল, তোমার নাম কী?

তোমাদের মতো আমাদের নামের প্রয়োজন হয় না। আমরা এমনিতেই পরিচয় রাখতে পারি।

রঞ্জু বলল, আমার নাম রঞ্জু। তোমাকে দেখে আমার খুব মজা লাগছে।

কেন?

আমার তো সায়েন্স ফিকশন পড়তে খুব ভালো লাগে—তাই।

প্রাণীটা কাশির মতো একটা শব্দ করে বলল, সায়েন্স ফিকশন হচ্ছে গাঁজাখুরি।

তু—তুমি সায়েন্স ফিকশন পড় না?

আমাদের কিছু পড়তে হয় না। আমরা এমনিতেই সব জানি।

সত্যি?

সত্যি। আমরা তোমার কাছে এসেছি একটা কারণে। আমাদের এক্ষুনি ক্র্যাব নেবুলাতে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের ফুয়েল ট্যাংকে একটা লিক হয়েছে, সেটা সারানোর সময় নেই। তুমি সেজন্যে আমাদের সাহায্য করবে।

রঞ্জু অবাক হয়ে বলল, আমি?

হ্যাঁ তুমি ।

কীভাবে?

তোমার বাম পকেটে একটা চুইংগাম আছে। সেটা চিবিয়ে নরম করে দাও, আমাদের ট্যাংকের লিকটাতে সেটা লাগিয়ে নেব।

রঞ্জু অবাক হয়ে গেল, সত্যি সত্যি তার পকেটে চুইংগামের একটা স্টিক আছে। সেটা মুখে পুরে চিবিয়ে নরম করে মুখ থেকে বের করে প্রাণীটার দিকে এগিয়ে দেয়। প্রাণীটা বলল, আরও কাছে আসো। আমি এই নীল শক্তি বলয় থেকে বের হতে পারব না।

রঞ্জু আরেকটু এগিয়ে গেল। প্রাণীটা তখন তার তুলতুলে নরম হাত দিয়ে চুইংগামটা নিয়ে বলল, অনেক ধন্যবাদ।

রঞ্জু বলল, এখন তোমরা যাবে?

হ্যাঁ। তুমি আমাদের সাহায্য করেছ বলে আমরা তোমাকে একটা উপহার দিতে চাই।

রঞ্জু কাঁপা গলায় বলল, কী উপহার?

আমরা যেখানে থাকি, সেই ক্র্যাব নেবুলার একটি ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি আছে। তোমাদের গ্রহতেই পেয়েছি, আমরা অনেকগুলো নিয়ে যাচ্ছি আমাদের বাসস্থানে। তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি একটা। হাত বাড়াও-

উত্তেজনায় রঞ্জুর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা হলো। সে হাত বাড়িয়ে দেয় এবং সেখানে গোলমতোন একটা জিনিস এসে পড়ল।

প্রায় সাথে সাথেই নীল আলোটা ভেতরে ঢুকে যায় আর ফ্লাইং সসারের মতো জিনিসটা ঘুরপাক খেতে খেতে উপরে উঠে যেতে থাকে। রঞ্জু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল সেটা ছোটো হয়ে আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে।

গোলাকার জিনিসটা হাতে নিয়ে সে সিঁড়ির দিকে ছুটে যায়। সিঁড়ির আলোতে জিনিসটা ভালো করে দেখল এবং সবিস্ময়ে আবিষ্কার করল সেটা একটা আমড়া। সাথে সাথে তার মনে পড়ল আমড়ার আঁটিটা আসলে সত্যিই ক্র্যাব নেবুলার মতো দেখতে। মহাকাশের এক বিচিত্র প্রাণী তার সাথে এ রকম ফাজলামি করবে কে জানত!

রঞ্জু হতচকিতের মতো নিজের ঘরে এসে ঢুকল, শিউলি তাকে দেখে এগিয়ে আসে, কী রে রঞ্জু তুই কোথায় ছিলি, খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।

রঞ্জু নিচু গলায় বলল, ছাদে।

ছাদে একা একা কী করছিলি?

রঞ্জু খানিকক্ষণ শিউলির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, কিছু না।

কিছু না?

না।

শিউলি একটু অবাক হয়ে রঞ্জুর দিকে ঘুরে তাকাল, তাকে ভালো করে দেখল, তারপর জিজ্ঞেস করল, তোর কী হয়েছে? এ রকম করে তাকিয়ে আছিস কেন?

কী রকম করে?

মনে হচ্ছে তুই ভূতটুত কিছু একটা দেখে এসেছিস!

রঞ্জু কিছু বলল না। শিউলি আবার জিজ্ঞেস করল, তোর হাতে ওটা কী?

আমড়া।

আমড়া! শিউলির মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, আমার জন্যে এনেছিস?

রঞ্জু দুর্বলভাবে হেসে বলল, তুমি নেবে?

দে- শিউলি রঞ্জুর হাত থেকে আমড়া নিয়ে ওড়না দিয়ে মুছে একটা কামড় দিয়ে বলল, উহ্! কী টক! কোথায় পেলি এই আমড়া?

রঞ্জু কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল, একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, কোথায় আবার পাব? সবাই যেখানে পায় সেখানেই পেয়েছি!

শব্দের অর্থ

আগন্তুক: হঠাৎ চলে আসা ব্যক্তি।ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদা: চাপা গলায় কাঁদা।
উদ্ভট: আজগুবি।বলপয়েন্ট কলম: যে কলমের মাথায় সূক্ষ্ম বল থাকে।
ওয়েলকাম জেন্টেলম্যান: ভদ্রমহোদয়গণ, স্বাগত জানাই।বারোটা বাজানো: অবস্থা খুব খারাপ করে দেওয়া।
কচ কচ: কোনো কিছু চিবানোর শব্দ।বিতিকিচ্ছি অবস্থা: খারাপ অবস্থা।
কার্পেট: মেঝেতে পাতা হয় এমন পুরু চাদর।বিশ্বব্রহ্মাণ্ড: মহাবিশ্ব।
কিলবিল করে নড়া: স্থির না থেকে আঁকাবাঁকা হয়ে নড়া।ব্ল্যাক হোল: কৃষ্ণ গহ্বর; মহাশূন্যে নক্ষত্রের একটি অন্তিম অবস্থা ।
ক্যানসার: একটি রোগের নাম।ভান করা: ভাব ধরা।
ক্র্যাব নেবুলা: মহাকাশের একটি নীহারিকা।ভুক্তভোগী: ভুগেছে এমন।
খুক খুক করে হাসা: মৃদু শব্দে হাসা।মনমরা হওয়া: মন খারাপ করা।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা: জোরে চিৎকার করা ।মহাকাশযান: মহাকাশে চলাচলের উপযোগী যান।
গাঁজাখুরি: অবিশ্বাস্য।মাথা বিগড়ে যাওয়া: চিন্তা এলোমেলো হওয়া।
গুটি গুটি পায়ে: ধীরে ধীরে পা ফেলে।লেজার গান: যে বন্দুক থেকে গুলির বিকল্প হিসেবে এক ধরনের আলোকরশ্মি বের হয়।
চুইংগামের স্টিক: চুইংগামের পাতলা টুকরা।শক্তি বলয়: নিয়ন্ত্রণে থাকা বৃত্তাকার অঞ্চল।
ঝালর: নকশা-করা বাড়তি অংশ।শরীর শীতল হওয়া: ভয় পেয়ে যাওয়া।
ঝিরঝির: মৃদু আওয়াজ।শর্টকাট মারা: সংক্ষেপে কাজ সারা।
ডি সাইজের ব্যাটারি: বড়ো আকারের ব্যাটারি।শোঁ শোঁ: দ্রুত ছুটে চলার শব্দ।
ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি: দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে এমন ছবি।সায়েন্স ফিকশন: বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি।
দৃষ্টি বিভ্রম: চোখের ভুল।স্টেনলেস: মরিচা পড়ে না এমন চকচকে লোহা।
দোয়াত: কালির পাত্র ।হজম করা: গ্রহণ করতে পারা।
নাকিস্বর: নাক দিয়ে উচ্চারিত শব্দ।হতচকিত: হতভম্ব।
নির্জন: জনশূন্য।ফুয়েল ট্যাংক: যে পাত্রে জ্বালানি তেল থাকে।
ফাউনটেন পেন: যে কলমে তরল কালি ব্যবহার করা হয়। 

 

পড়ে কী বুঝলাম

ক. ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি' বলতে কী বোঝ?……………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

খ. আগে আর কোন ধরনের কল্পকাহিনি তুমি পড়েছ?…………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

গ. ‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা' গল্পের কোন কোন ঘটনা কাল্পনিক?………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

ঘ. এই গল্পের কোন কোন ঘটনা বাস্তব?………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

ঙ. রূপকথার সাথে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মিল-অমিল কোথায়?……………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

 

বলি ও লিখি

‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা' গল্পটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

 

লেখা নিয়ে মতামত

‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা' রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।

‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা' রচনায় যা আছেআমার মতামত ও জিজ্ঞাসা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি

চারপাশের যে জগৎ আমরা দেখতে পাই, তাকে বলে বাস্তব জগৎ। অনেক গল্পে বাস্তব জীবনের ঘটনার বর্ণনা থাকে। আবার এমন কিছু গল্প আছে যেগুলো বাস্তবের ঘটনার সাথে মেলে না। এগুলোকে কাল্পনিক গল্প বা কল্পকাহিনি বলে। তার মানে, বাস্তব জগতে বাস করেও গল্পকাররা কল্পনার জগৎ তৈরি করতে পারেন। বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে লেখা এমন কাল্পনিক গল্পকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বলে। এসব কাহিনিতে থাকে মহাকাশের কাল্পনিক প্রাণী, তাদের যাতায়াতের জন্য ফ্লাইং সসার, মানুষের মতো আচরণকারী রোবট ইত্যাদি। তাছাড়া এমন কিছু বিষয় থাকে যা বিজ্ঞান হয়তো এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি, কিন্তু লেখকরা সেই বিষয়কেও গল্পে নিয়ে আসেন।

রূপকথাও এক ধরনের কল্পনানির্ভর লেখা। তবে এর সাথে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মিল যেমন আছে, তেমনি অমিলও আছে। রূপকথার ঘটনা ও চরিত্র অতীতের-আধুনিক প্রযুক্তি আসার আগেকার। অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বিষয় ও চরিত্র সময়ের বিচারে আধুনিক-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রসরতায় এর জন্ম। রূপকথায় যে রাজপুত্র-রাজকন্যা বা দৈত্য-ডাইনি তুমি দেখতে পাও, বাস্তবের পৃথিবীতে তাদের দেখা যায় না। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে মহাকাশের কাল্পনিক প্রাণী কিংবা রোবট নিয়ে যেসব গল্প তৈরি হয়েছে, তার কিছু কিছু ভবিষ্যতে সত্যি হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।

 

কল্পনানির্ভর রচনা লিখি

এবার তুমি একটি কল্পনানির্ভর গল্প লেখো। লেখাটি তুমি বানিয়ে লিখতে পারো, কিংবা সেটি তোমার আগে থেকে পড়া বা কারো কাছ থেকে শোনা গল্পও হতে পারে। লেখার শুরুতে একটি শিরোনাম দাও।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

Content added || updated By