নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - রসায়ন - রসায়নের ধারণা | NCTB BOOK

বিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো মানবজাতির কল্যাণসাধন করা। এ উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানী নাম শুনতেই তোমাদের নিশ্চয়ই আইনস্টাইন, নিউটন, আর্কিমিডিস, ল্যাভয়সিয়ে, গ্যালিলিও এরকম মহান মনীষীর কথা মনে পড়ে যায়। হ্যাঁ, তাঁরা তো অবশ্যই মহান বিজ্ঞানী। তবে বিজ্ঞানী বলতে যা বোঝায় তাতে তোমরাও হতে পারো এক একজন বিজ্ঞানী। আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পদ্ধতিগতভাবে যে সুসংবদ্ধ জ্ঞান অর্জন হয় সেই জ্ঞানই হলো বিজ্ঞান। আর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো কিছু জানার চেষ্টাই হচ্ছে গবেষণা। যিনি এই গবেষণা করেন তিনিই বিজ্ঞানী।

কাজেই তুমিও যদি এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান অন্বেষণ করো তাহলে তুমিও হতে পারবে একজন বিজ্ঞানী। সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো কিছু জানার নামই গবেষণা। তাহলে তোমরা বুঝতে পারছো গবেষণার জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। রসায়ন গবেষণারও পদ্ধতি রয়েছে। এখন রসায়ন গবেষণার পদ্ধতি তোমাদের কাছে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হবে।

গবেষণার জন্য প্রথমেই তোমাকে নির্ধারণ করতে হবে যে তুমি কী জানতে চাও বা কোন ধরনের নতুন পদার্থ তুমি আবিষ্কার করতে চাও। ধরা যাক, তুমি জানতে চাও অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভূত করলে তাপ উৎপাদিত হবে না শোষিত হবে? একে বলে বিষয় নির্বাচন। তাহলে তোমাকে সবার আগে এই বিষয়ে কিছু বইপত্র পড়তে হবে অথবা এ ধরনের অন্য কোনো পরীক্ষা আগে করা হয়েছে এমন ধরনের গবেষণাপত্র ইন্টারনেট থেকে বা অন্য কোনোভাবে সংগ্রহ করে তা থেকে তোমার ফলাফল সম্পর্কে আগেই একটি অনুমান করে নিতে হবে। ধরো, তুমি কোনো বই বা গবেষণাপত্র থেকে জানতে পেলে ক্যালসিয়াম অক্সাইড পানিতে দ্রবীভূত হলে তাপ সৃষ্টি হয়। তুমি এই গবেষণাপত্র থেকে আরো জানতে পারবে ক্যালসিয়াম অক্সাইড পানিতে দ্রবীভূত করার জন্য কোন কোন যন্ত্রপাতি, কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ এবং কোন প্রণালি ব্যবহার করা হয়েছিল। এ থেকে তোমার পরীক্ষাটি (অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভূত করা) করার জন্য কী কী পাত্র, যন্ত্রপাতি বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতে হবে এবং কোন প্রণালি অনুসরণ করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা পাবে। তুমি হয়তো মনে করলে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভূত করলে তাপ উৎপন্ন হতে পারে। অর্থাৎ তুমি ফলাফল সম্পর্কে অনুমান করতে পারলে।

আবার, প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং কোন প্রণালিতে তুমি পরীক্ষাটি করবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তুমি ধারণা পেয়েছো যে এ পরীক্ষাটি করতে বিকার, পানি, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, থার্মোমিটার, কাচের তৈরি রড, ব্যালেন্স (নিক্তি) ইত্যাদি জিনিস  লাগবে। প্রথমে বিকারে পানি নিতে হবে। তারপর থার্মোমিটার দিয়ে পানির তাপমাত্রা নিতে হবে। তারপর কয়েকবার করে ওজন করে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড বিকারের পানিতে যোগ করতে হবে এবং কাচের রড দিয়ে সেটুকুকে দ্রবীভূত করতে হবে। প্রতিবার থার্মোমিটারের সাহায্যে পানির তাপমাত্রা দেখে নিতে হবে। এটি হলো প্রণালি যার সাহায্যে তুমি পরীক্ষাটি করবে। এবার শুরু হবে তোমার পরীক্ষণ।

                     

     টেবিল 1.03: অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড পানিতে দ্রবীভূতকরণ 
বিকারে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের পরিমাণ   দ্রবণের তাপমাত্রা
০ গ্রাম (দ্রবীভূত করা হয়নি) 25°C
5 গ্রাম 20°C
10 গ্রাম 15°C
15 গ্রাম 10°C

 

তুমি বিকারে 250 মিলি পানি নিয়ে এর তাপমাত্রা থার্মোমিটারে দেখে নাও। ধরো, এখন তাপমাত্রা 25°C। তুমি এটি তোমার খাতায় লিখে রাখো। এবার ব্যালেন্সের সাহায্যে 5 গ্রাম অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড মেপে নিয়ে বিকারের পানিতে দাও। কাচদণ্ড দিয়ে নেড়ে নেড়ে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডটুকু দ্রবীভূত করো। দ্রবীভূত হবার সঙ্গে সঙ্গে থার্মোমিটার দিয়ে আবার তাপমাত্রা মাপ। ধরো, এবার তাপমাত্রা 20°C হলো। ব্যালেন্সের সাহায্যে আবার 5 গ্রাম অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড বিকারের দ্রবণে একইভাবে দ্রবীভূত করো। এতে বিকারের দ্রবণে মোট অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড হলো 10 গ্রাম। এই রকম পরীক্ষা আরও একবার করো। তৃতীয়বারে বিকারে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের পরিমাণ হলো 15 গ্রাম এবং ধরা যাক দ্রবণের তাপমাত্রা হলো 10°C। প্রতিটি ধাপে প্রাপ্ত তথ্য (Data) খাতায় লিখে রাখো। এবার তোমাকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সাজাতে হবে এবং সেই তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে। তথ্যগুলো কেমন হতে পারে সেটি 1.03 টেবিলে দেখানো হয়েছে।

 

পাশের তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবে দ্রবণে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড যত বেশি পরিমাণে দ্রবীভূত হচ্ছে দ্রবণের তাপমাত্রা তত কমে যাচ্ছে। এ থেকে তুমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে যেহেতু পানিতে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড দ্রবীভূত করলে দ্রবণের তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে, তাই এখানে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড পানি থেকে তাপ শোষণ করে দ্রবীভূত হচ্ছে। অর্থাৎ ফলাফল (Result ) এই যে, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড পানিতে দ্রবীভূত করলে ভাগ শোষিত হয়। উপরের পরীক্ষা সম্পন্ন করতে তুমি যে সকল ধাপ অনুসরণ করলে সেগুলোকে ফ্লো চার্ট (Flow Chart) বা প্রবাহমান তালিকার মাধ্যমে নিম্নরূপে দেখানো যায়।

 

 

ধাপ: 

  • বিষয়বস্তু নির্ধারণ    
  • বই বা পূর্বের গবেষণাপত্রের সাহায্যে বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু ধারণা নেওয়া    
  • প্রয়োজনীয় বস্তু ও পরীক্ষা প্রণালি নির্ধারণ 
  • পরীক্ষণ
  • তথ্য সংগ্রহ ও তথ্যের বিশ্লেষণ  
  • ফলাফল ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা

                                                                                চিত্র 1.02: রসায়নে অনুসন্ধান বা গবেষণা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ।
                                                       

রসায়নের যেকোনো পরীক্ষা বা গবেষণার জন্য সব সময় উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
                   

Content added || updated By