SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - রসায়ন - রাসায়নিক বন্ধন | NCTB BOOK

আমরা জানি, সাধারণ অবস্থায় পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যতটি ধনাত্মক আধান বা পজিটিভ চার্জবিশিষ্ট প্রোটন থাকে এবং নিউক্লিয়াসের বাইরে বিভিন্ন শক্তিস্তরে ঠিক ততটি ঋণাত্মক আধান বা নেগেটিভ চার্জবিশিষ্ট ইলেকট্রন থাকে। এর ফলে পরমাণুটি সামগ্রিকভাবে আধান বা চার্জ নিরপেক্ষ হয়। এরকম একটি আধান নিরপেক্ষ পরমাণুর বাইরের শক্তিস্তর থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রনকে সরিয়ে নিলে পরমাণুটি আর আধান নিরপেক্ষ থাকবে না। এটি সামগ্রিকভাবে ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট আয়নে পরিণত হবে। ধনাত্মক আধান বা পজিটিভ চার্জ বিশিষ্ট এরূপ আয়নকে ক্যাটায়ন বলে। সাধারণত পর্যায় সারণির বামের মৌল বা ধাতুগুলো তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরের এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের মাধ্যমে ক্যাটায়নের সৃষ্টি করে। যেমন: লিথিয়াম পরমাণু তার সর্বশেষ শক্তিস্তরের একটি ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জনের মাধ্যমে লিথিয়াম ক্যাটায়ন (Li+) তৈরি করে।

অনুরূপে, Na পরমাণু তার সর্বশেষ শক্তিস্তরের একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাস Ne এর ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের মাধ্যমে সোডিয়াম ক্যাটায়ন (Na+) তৈরি করে।
 

বলতে পারবে কি, ধাতুসমূহ কেন তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে ক্যাটায়ন তৈরি করে?

আমরা জানি, পর্যায় সারণির যেকোনো একটি পর্যায়ে বাম থেকে ডানে গেলে মৌলসমূহের ধাতব ধর্ম ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং অধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ যেকোনো পর্যায়ের বামের মৌলসমূহ হলো ধাতু এবং ডালের মৌলসমূহ হলো অধাতু। আবার একই পর্যায়ে ৰাম থেকে ডানে গেলে মৌলসমূহ আকারও ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। এই কারণে একই পর্যায়ে অবস্থিত অন্য মৌলসমূহের চেয়ে ধাতুগুলোর আকার বড় হয়ে থাকে। আবার ধাতুগুলোর সর্বশেষ শক্তিস্তরে সাধারণত 1, 2 বা 3টি ইলেকট্রন থাকে। আকার বড় হওয়ার কারণে ধাতুগুলোর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলোর নিউক্লিয়াস থেকে দূরে থাকে এবং নিউক্লিয়াসের সাথে আকর্ষণ কম হয় অর্থাৎ দুর্বলভাবে আবদ্ধ থাকে। ফলে এদের আরনিকরণ শন্তির মান অনেক কম হয়। অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ শক্তি প্রয়োগ করলেই ধাতুগুলো তার সর্বশেষ শক্তিস্তরের এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে কাছাকাছি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে ক্যাটায়নে পরিণত হতে পারে। এই কারণেই ধাতুগুলোই মূলত ক্যাটায়নে পরিণত হয়।

অন্যদিকে অধাতুগুলো ক্যাটায়ন তৈরি করে না। এর কারণও তোমরা এখন নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছো। অধাতুগুলো পর্যায় সারণির ডানে অবস্থান করে। এদের সর্বশেষ শক্তিস্তরে সাধারণত 5, 6 বা 7টি ইলেকট্রন বিদ্যমান থাকে। এদের আকার একই পর্যায়ের ধাতুসমূহের চেয়ে অনেক ছোট হয়। ছোট আকারের কারণে সর্বশেষ শক্তিস্তর নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি থাকে এবং এদের সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ অনেক বেশি হয়, অর্থাৎ এদের আয়নিকরণ শক্তির মান অনেক বেশি হয়। এরূপ কোনো মৌলের সর্বশেষ শক্তিস্তরের এক বা একাধিক ইলেকট্রনকে সরিয়ে নিতে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, যা সাধারণ অবস্থায় কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে সহজে পাওয়া যায় না। এ কারণে অধাতুগুলো সাধারণত ধনাত্মক আধান তথা ক্যাটায়ন তৈরি করে না।
তাহলে কি অধাতুগুলো তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের কোনো পরিবর্তন ঘটায় না? অবশ্যই ঘটায় । যেহেতু এদের সর্বশেষ শক্তিস্তরে অষ্টক অপেক্ষা সাধারণত 1, 2 কিংবা এটি ইলেকট্রন কম থাকে সেহেতু এরা সেই সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে সহজেই নিষ্ক্রিয় গ্যাসের স্থিতিশীল ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। অন্যভাবে বলা যায়, এদের ইলেকট্রন আসন্তির মান বেশি। ইলেকট্রন গ্রহণের ফলে এদের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ধনাত্মক প্রোটন সংখ্যার চেয়ে ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট ইলেকট্রনের সংখ্যা বেশি হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে অধাতব পরমাণুসমূহ ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট হয়। এভাবে ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট অধাতব পরমাণুকে অ্যানায়ন বলে। যেমন ক্লোরিন (Cl) পরমাণু একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাস আর্গনের (Ar) ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের মাধ্যমে ক্লোরাইড (Cl-) আয়ন তৈরি করে।

Content added By