সব অবস্থানে ধাতু জোড় দিতে হয়। উত্তম জোড় সৃষ্টিতে জোড়ের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। অনুপযুক্ত অবস্থানে দক্ষ ওয়েল্ডার উত্তম ইলেকট্রোড, উত্তম মেশিন ব্যবহারের পরও ভালো জোড় উৎপাদন সম্ভব হয় না। ভালো জোড়ের জন্য প্রয়োজন জোড়ের ভালো অবস্থান। অবস্থান ভেদে ওয়েল্ডিং করার পদ্ধতিও পরিবর্তন হয়। এক এক অবস্থানে জোড়কে আটকানো, ইলেকট্রোড চালনার ও বিভিন্ন হয়। অবস্থান ভেদে নিরাপত্তাও ভিন্নতর হয়। ভালো জোড় সৃষ্টিতে ওয়েল্ডারের বিভিন্ন অবস্থানে জোড় দেওয়ার সব কৌশল রপ্ত করতে হয়। বিশেষ করে পাইপ জোড়ের ক্ষেতে এর গুরুত্ব অত্যাধিক। প্লেট জোড়ের ক্ষেতে পেনিট্রেশন পরীক্ষণ ছাড়া দেখা সম্ভব হয় না। তাই প্লেট জোড় এবং পাইপ জোড়ের ওয়েল্ডারের প্রাপ্ত সনদ ভিন্ন। প্লেট জোড়ের ক্ষেত্রে ওয়েল্ডারের প্রাপ্ত সনদে তার দক্ষতার সীমাবদ্ধতা মোতাবেক 1 F2 F3 F4 F আলাদা আলাদা বা একত্রে সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। আবার পাইপ জোড়ের ক্ষেত্রে । G2,  3G,  5G,  G বা 6 G এর আলাদা আলাদা বা একত্রে সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। 5 G এর সনদ পাওয়ার অর্থ 1G, 2G, 3G, 5G এর দক্ষতা মান অতিক্রম করা হয়েছে। তাই ওয়েল্ডারের জোড়ের উক্ত অবস্থানগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকতে হবে। আবার 6 G প্রাপ্ত সনদ মানে ওয়েল্ডারের পাইপ জোড়ের ক্ষেত্রে সকল অবস্থানে জোড় দানের সমর্থ রয়েছে।

1-G বা ফ্ল্যাট অবস্থানঃ 

এ অবস্থানকে পাইপ জোড়ের প্রাথমিক অবস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যান্য অবস্থান থেকে এ অবস্থানে পাইপ জোড় অনেকটা সহজ। কার্যবস্তুকে সমতল অবস্থানে রেখে এ জোড় দেওয়া হয়। কার্যবস্তুকে সঠিকভাবে সতল অবস্থানে রেখে, সঠিক ইলেকট্রোড, সঠিক কারেন্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট ও সঠিক ইলেকট্রোড চালনার কোণ ও গতি ঠিক থাকলে এ অবস্থানে জোড়ের গুণগত মান ও পরিমাণ ঠিক থাকে। অন্যান্য অবস্থানের তুলনায় পাইপ জোড়ের এ অবস্থানে ধাতু জোড়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি হ্রাস পায় ।

2-G/ হরিজন্টাল অবস্থান:

2G অবস্থানকে পাইপ জোড়ের হরিজন্টাল অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুইটি পাইপের সঠিক প্রাপ্তদেশ আটকানো হয়। জোড়ের ক্ষেত্রে এ অবস্থানটি ফ্ল্যাট অবস্থান থেকে একটু কঠিন। এ অবস্থানে ইলেকট্রোডের কোণ এবং চালনার গতি ঠিক রাখতে হয়। ইলেকট্রোডের সঠিক কোণ, সঠিক আর্ক লেংথ এবং সঠিক চালনার গতি না হলে নানান ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা যাবে। আর্ক লেংথ অপেক্ষাকৃত ছোট রেখে সঠিক গতিতে ইলেকট্রোড চালনা করলে পেনিট্রেশন ভালো হবে। পাইপ জোড়ের ক্ষেত্রে পেনিট্রেশন জরুরি। এ অবস্থানের মূল সমস্যা গলিত ধাতু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়। যার ফলে ল্যাক অব পেনিট্রেশন, বার্নথ্রো, আন্ডার কাট, গ্যাস পকেট, স্লাগ ইনক্লুশান ইত্যাদি ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিতে পারে। সঠিক কার্য পদ্ধতি, অপ্রয়োজনীয় ধাতুমল ও সঠিকভাবে স্লাগ পরিষ্কার দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি হ্রাস করা সম্ভব।

3-G বা উলম্ব অবস্থান:

এ অবস্থানে পাইপ জোড়কে উলম্ব অবস্থানে আটকানো হয়। দুইটি পাইপের প্রান্তদেশ প্রস্তুতি ও ট্যাক ওয়েল্ড শেষে উলম্ব অবস্থানে আটকানো হয়। ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নাভিমুখী উলম্ব প্লেট জোড়ের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পাইপ জোড়ের ক্ষত্রে এর আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইলেকট্রোডকে সঠিক কোণে রেখে ডানমুখী অথবা বামমুখী ইলেকট্রোড চালনা করতে হয়। উভয়ক্ষেত্রে গলিত ধাতু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়। উলম্ব অবস্থানে পাইপ জোড়ের প্রথম রান বা রুট রানের বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন। ইলেকট্রোডের কোণ, আর্ক লেংথ, ইলেকট্রোড চালনার গতি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এর একটিও ভুল হলে নানান ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেয়। এ অবস্থানে যেহেতু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা প্রভাবিত সেহেতু মূল ধাতুর প্রাপ্তদেশ দুইটি সমহারে গলার প্রতি সতর্ক থাকতে হয়। প্রতিটি রানের শেষে অপ্রয়োজনীয় ধাতুমল পরিষ্কার করতে হবে। এ অবস্থানে আন্ডার কাট, বার্নথ্রো, ল্যাক অব ফিউশান, অতিরিক্ত ধাতুমল জমা ইত্যাদি ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা যায় ।

4-G (ওভারহেড অবস্থান ) :

এ অবস্থানটি পাইপের সাথে প্লেট জোড় অথবা প্লেটের সাথে প্লেট জোড় হতে পারে। এ অবস্থানে পাইপের সাথে পাইপ জোড় দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ পাইপের নিচের অংশ জোড় দেওয়ার পর উপর অংশ জোড় দেওয়া যায় না। তাছাড়া পাইপ জোড়ের জন্য কঠিনতম অবস্থান হিসেবে স্বীকৃত হলো 6-G অবস্থান। আর প্লেটটের ক্ষেত্রে 4-G অবস্থান হলো ওভারহেড অবস্থান। এ অবস্থানটিও প্লেট জোড়ের কঠিনতম অবস্থান। কোন ওয়েল্ডার-এর এ অবস্থানে জোড় দেওয়ার সামর্থ মানে তার বাকি অবস্থানে জোড় দেওয়ার দক্ষতা রয়েছে। পাইপকে প্লেটের সাথে ওভারহেড অবস্থানে রেখে জোড় দিতে কার্যবস্তুকে মাথার উপর অবস্থানে স্থাপন করা হয়। এ জোড় যেহেতু মাথার উপর অবস্থানে স্থাপন করা হয়। সেহেতু জোড় দেওয়া এবং জোড়ের গুণাগুণ বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন দক্ষতার। এ জোড়ের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন। সঠিক ইলেকট্রোডের কোণ, আর্ক লেংথ ইলেকট্রোড চালনার গতি অত্যাবশ্যাক। সঠিক ইলেকট্রোডের কোণ বজায় না রাখলে এ অবস্থায় জোড় দেওয়া অসম্ভব। এ অবস্থায় ধাতুমল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা প্রভাবিত। নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামাদি না পরলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে উত্তপ্ত ধাতুমল পড়ে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে।

ওভার হেড জোড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:

- খুব কম কারেন্ট হলে ফ্ল্যাগ আটকা পড়ে ফাঁক সৃষ্টি করবে, আবার কখনও আর্ক সৃষ্টি করা কঠিন হবে। 

- অত্যাধিক বেশি কারেন্ট হলে, আন্ডার কাট, বার্নথ্রো, ধাতুমলে এবড়ো ভাব এবং খারাপ আকৃতির জোড় সৃষ্টি হবে । 

- ইলেকট্রোডের আবরণ ধাতু গলার সাথে পুড়তে হবে।

- ইলেকট্রোড চালনার গতি অত্যধিক কম হলে জোড় স্থানে তাপ বৃদ্ধি পেয়ে জোড় স্থানে গর্ত সৃষ্টি করবে। 

- ইলেকট্রোডের গতি অত্যাধিক বেশি হলে জোড় স্থানে পেনিট্রেশন হবে না ।

- জোড় স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করা না হলে স্ল্যাপ ইনক্লুশান দেখা যেতে পারে।

Content added By
Promotion