SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ - NCTB BOOK

ভূমিকা (Introduction): সফল উদ্যোক্তার ঘটনা বিশ্লেষন করে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে এবং সাফল্যের কারণ সমূহ জানতে পারবে। ব্যবসা সম্বন্ধে বাস্তব ধারণা অর্জনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করা আবশ্যক। পরিদর্শন পর্যায়ক্রমে ও সুশৃঙ্খল হওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তগুলো খাতায় লিখে নেওয়া উচিত যাতে প্রতিবেদন রচনায় কোনো অসুবিধা না হয় ।

একজন সফল উদ্যোক্তার ঘটনা বিশ্লেষণ

মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী ১৯২৬ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ধেওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি আর্যমিত্র হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৪৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । উপমহাদেশে চল্লিশের দশকে যখন বিশ্বযুদ্ধের তাণ্ডব চলছিল তখন পাকিস্তান আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । ঐ সময় জনাব চৌধুরী এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। আর্থিক সংকটের কারণে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অপরাগ হয়ে তিনি একটি চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে বিকল্প চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন ।

১৯৪৫ সালে তিনি একজন বন্ধুসহ রাউজানের ফকিরহাটে ৬২০ টাকা মূলধন নিয়ে একটি বই-এর দোকান স্থাপন করে ব্যবসা শুরু করেন । মূলধনের অধিকাংশ মালিক ছিলেন তার বন্ধু । মূলধনে তাঁর নিজের অংশ যেটুকু ছিল তা তিনি আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার কর্জ করে সংগ্রহ করেন। শিক্ষার প্রতি তাঁর অনুরাগ থেকেই তিনি বইয়ের ব্যবসায় প্রবৃত্ত হন । কিন্তু শুধু জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে স্কুলগামী ছাত্রদের প্রয়োজনানুসারে বই বিক্রি করে যে আয় হতো তাতে চলা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাঁরা বন্ধু মিলে বইয়ের ব্যবসায়ের সাথে মনিহারি দ্রব্যের ব্যবসাও শুরু করলেন, যাতে আয় বৃদ্ধি পায় । দুইবছর যাবৎ ব্যবসা চালিয়েও আশানুরূপ মুনাফা করতে না পেরে জনাব চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরে বর্তমান সমবায় সমিতি সদনের সামনে মাসিক ১৮ টাকা ভাড়ায় একটি ছনের তৈরি দোকান ভাড়া নেন । সেখানে তিনি দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মনিহারি দোকান শুরু করেন (রাউজানের ব্যবসায় গুটিয়ে তার বন্ধু ১৯৪৮ সালে তাঁর সাথে যোগ দেন) ।

কিন্তু, দোকান থেকে যে আয় হতো তা দিয়ে একটি ছোট পরিবারই চালানো খুব কঠিন ছিল । তখন জনাব চৌধুরী অন্যান্য সুযোগের সন্ধ্যানে ব্যাপৃত হন এবং পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত ডন গ্রুপের “ইলাস্ট্রেটেড উইকলি' নামে একটি পত্রিকা চট্টগ্রামের জন্য নিজের নামে এজেন্সী গ্রহণ করেন । এই এজেন্সির জন্য তাঁকে এক হাজার টাকা জামানত প্রদান করতে হয়। এ টাকা তাঁর পিতা সংগ্রহ করে দেন । এই সময় তিনি পুরনো দোকানের সন্নিকটে 'নিউজ ফ্রন্ট' নামে আর একটি দোকান মাসিক ৯ টাকা ভাড়ায় দখল নেন ।

আপোসের মাধ্যমে পুরা দোকানটি বন্ধুকে দিয়ে দেন । তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত মর্নিং নিউজ ও পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার এজেন্ট নিযুক্ত হন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন উর্দু বই ও জার্নালও তাঁর দোকানে বিক্রি হতো । ১৯৫১-৫২ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক পত্রিকা 'ডন” এবং ‘পাকিস্তান টাইমস', 'গুজ বাড়ী ডন', 'মিল্লাত' প্রভৃতির এজেন্সি পান। ফলে তাঁর ব্যবসায় উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এ সময়ে তিনি পার্শ্ববর্তী দোকানটি ভাড়া নিয়ে তার বড় ভাইয়ের সহায়তার ব্যবসায় চালাতে থাকেন ।

তাঁর ব্যবসায়ের যখন রমরমা অবস্থা তখন তিনি পেংগুইন ও পেলিকান পেপারব্যাক বইপত্র আমদানি শুরু করেন । তাঁর এসব বই ও ইংরেজি সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনের প্রধান খরিদ্দার ছিল বিদেশিরা।

এই পর্যায়ে জনাব চৌধুরী একটি প্রিন্টিং প্রেস (ছাপাখানা) প্রতিষ্ঠা করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন । এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৫ সালে বিশ হাজার টাকা ব্যায়ে তিনি 'সিগনেট' প্রেস স্থাপন করেন। এই প্রেসে ২০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়। প্রেসের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারি প্রথমে স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং আমেরিকা ও পশ্চিম জার্মানি থেকে আমদানি করা হয়। ১৯৬০ সালে বিদেশ থেকে কিছু প্রিন্টিং ও কাটিং মেশিন আমদানি করে ব্যবসায়ের পরিধি বিস্তৃত করেন। এই সময়ে তিনি প্রকাশনা ব্যবসায়েও আত্মনিয়োগ করেন । তিনি কতিপয় বাংলা উপন্যাস ও গল্পের বই ছাপান এবং সম্ভাবনাময় লেখকদেরকে ধারে বই ছাপানোর ব্যাপারে সাহায্য করেন। কিন্তু প্রকাশিত বইগুলি ভালো বিক্রি না হওয়ায় সাহায্য গ্রহণকারী লেখকরা তাঁদের বইগুলি ডেলিভারি নেননি। প্রকাশনা ব্যবসায়ে মার খেয়ে তিনি প্যাকেজিং শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট নন । ১৯৬১ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান শিল্পোন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবিপি) থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পশ্চিম জার্মানি থেকে প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং মেশিনারি আমদানি করেন ।

সে সময় চট্টগ্রামে আরও দুটি প্যাকেজিং ইউনিট ছিল। তিনি তাঁর ছাপাখানার পাশে আলাদা জমিতে প্যাকেজিং শিল্প স্থাপন করেন। সেখানে ত্রিশ জন লোককে নিয়োজিত করতে হয়েছিল ।

তখনকার আমলে প্যাকেজিং মেশিন চালানোর জন্য আমাদের দেশে দক্ষ কারিগর ছিল না। করাচিতে অবস্থানরত পশ্চিম জার্মানির হাইডেলবার্গ কোম্পানির প্রকৌশলীরা এসে জনাব চৌধুরীর কর্মচারীকে মেশিন পরিচালনায় প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তৎকালীন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৬৭ সালে প্যাকেজিং ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আইডিবিপি-এর নিকট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এবং '৬৯ সালে মেশিনারি আমদানি করেন । তিনি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাথে তাদের ইমারতের পেছনে ছয় হাজার বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট একটি দালান তৈরি করার জন্য (এক লাখ টাকা অগ্রিম ভাড়া দিয়ে) একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হন । এই দালানে পরে ছাপাখানা ও প্যাকেজিং ইউনিট স্থানান্তর করা হয়। ইতোপূর্বে ১৯৬৫ সালেই বিপনি বিতানে নিউজ ফ্রন্ট ও পুরানো দোকানটি স্থানান্তর করা হয় ।

১৯৭০ সালে প্যাকেজিং মেশিনারিজ শেষ চালান এসে পৌঁছায়। যন্ত্রপাতি স্থাপিত হওয়ার পরপরই স্বাধীনতা যুদ্ধ আরম্ভ হয় । সবকিছু একজন গার্ডের তত্ত্বাবধানে রেখে দিয়ে তিনি রাউজানে গ্রামের বাড়িতে চলে যান ।

তাঁর অবর্তমানে ব্যবসায়ের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্বে দুইজন মিলিটারি, আলবদর, রাজাকারদের একটি বাহিনীসহ জনাব চৌধুরীর বাড়ি ঘেরাও করে তাকে পরিবারসহ মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তিনি যথাসর্বস্ব প্রদান করে জীবন রক্ষা করেন। যুদ্ধের সময়ে তিনি অনাদায়ী নিউজ পেপার বিল বাবদ এক লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হন। হকারদেরকে প্রদত্ত ত্রিশটি বাইসাইকেলও হারান।

স্বাধীনতার পর অবাঙালি কারিগররা পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় কারিগরের সংকটে পড়ে তাঁর ব্যবসা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয় । তিনি নিজ উদ্যোগে স্থানীয় কিছু লোককে প্রশিক্ষণ দিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করেন । ১৯৮৪ সালে জনাব চৌধুরী ষোলশহরের বিসিক শিল্প নগরীতে সিগনেট বক্স ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করেন । এই প্রকল্পে বিনিয়োজিত পুঁজির পরিমাণ ছিল এক কোটি টাকা ।

১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দশ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে 'পূর্বকোণ' নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন ।

জনাব চৌধুরী একজন সফল উদ্যোক্তা, শূন্য থেকে আরম্ভ করে তিনি একটি সম্প্রসারণশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। বর্তমানে বাজার দরে তাঁর চারটি প্রতিষ্ঠানের সম্পদের মোট মূল্য চার কোটি টাকার বেশি । তাঁর দীর্ঘ বিচিত্র অভিজ্ঞতা হতে তিনি উপলব্ধি করেন যে, সফল উদ্যোক্তার কয়েকটি বিশেষ গুণ অপরিহার্য । কারণ প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ তত্ত্বাবধান; ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা পূর্বানুমান করার ক্ষমতা, ভবিষ্যৎ কারবার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ এবং পণ্য বিপণনের জন্য সঠিক বণ্টন প্রণালির ব্যবহার। তিনি উল্লেখ করেন যে, সফল উদ্যোগের পথে অন্যতম অন্তরায় হলো সঠিক পরামর্শ ও নির্দেশনার অভাব।

কেসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত শিল্পোদ্যোগ পরিচিতি বই থেকে সংকলিত যা ২০১৬ সালের পূর্বে তৈরি করা হয়েছে ।

পরিদর্শনের সংজ্ঞা (Definition of Inspection )

ব্যবসা সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রকৃতি, আকৃতি, অবস্থা, উৎপাদন ও সেবা সম্পর্কে ধারণা লাভের প্রক্রিয়াকে পরিদর্শন বলে। পরিদর্শনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে সম্যক ও বাস্তব ধারণা প্রদান করা, যাতে ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা ও কার্যাবলি সম্পর্কে তারা প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করতে পারে ।

পরিদর্শনের সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যাবলি 

তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জন করলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় বিষয়ে ধারণা অনেক বৃদ্ধি পায় । পরিদর্শনের কতকগুলো সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

ক. সাধারণ উদ্দেশ্য 

পরিদর্শনের সাধারণ উদ্দেশ্য হলো ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে সম্যক ও বাস্তব ধারণা অর্জন করা, যাতে ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা ও কার্যাবলি সম্বন্ধে তারা জ্ঞান অর্জন করতে পারে ।

খ. সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য 

পরিদর্শনের কতিপয় সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. ছাত্র-ছাত্রীদের একটি ব্যবসায় বা শিল্পের পরিবেশ ও কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখার ও কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করার সুযোগ দান । 

২. ব্যবসাকে যারা জীবিকা অর্জনের অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছে, তাদের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচিত হওয়ার সুযোগ দান । 

৩. ক্ষুদ্র ব্যবসায় বা শিল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকীয় ও শিল্পোদ্যোগীর ভূমিকা কী সে সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করার সুযোগ দান । 

৪. ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাসী, স্বাবলম্বী, উদ্ভাবনী, সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী হওয়ার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা । 

৫। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শিল্পোদ্যোগ গ্রহণের উদ্দীপনা সৃষ্টি করা । 

৬। ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মকর্মসংস্থানে উদ্দীপ্ত করা ।

পরিশেষে বলা যায় যে, পরিদর্শনের সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যাবলি অনুসরণের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা ও কার্যাবলি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবে । তাছাড়া পরিদর্শনের ফলে তাদের কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে ।

ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের কার্যপ্রণালি

ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের পূর্বে ছাত্র-ছাত্রীদের কতিপয় নিয়ম/শর্ত অনুসরণ করতে হয় । যেমন-  সময়: পরিদর্শনের দিন ও তারিখ স্থির করতে হবে। 

শিক্ষাদান পদ্ধতি: ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, প্রশ্নাবলির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে ।

প্রতিষ্ঠান নির্বাচন: সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক পরিদর্শনের জন্য নিকটবর্তী বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবেন।

অনুমতি গ্রহণ: পরিদর্শনের পূর্বে অধ্যক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মালিক বা ম্যানেজারের অনুমতি নিতে হবে ।

তথ্যাবলি: শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের উপর তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ প্রদান করা যেতে পারে :

১. ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত তথ্যাবলি 

২. উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্যাবলি 

৩. কর্মীর দক্ষতা সম্পর্কিত ইত্যাদি

৪. পণ্য বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত তথ্যাবলি 

৫. ব্যবসায় বা শিল্পোদ্যোক্তার সাফল্যের বিবরণ।

কার্যাবলি: প্রতিটি গ্রুপের সাথে পরিদর্শনকালে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকবেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহায়তা প্রদান করবেন। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরাই বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। পরিদর্শনের ৬/৭ দিন পর ছাত্র-ছাত্রীরা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে রিপোর্ট উপস্থাপন করবে। প্রতিটি গ্রুপ হতে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক রিপোর্টের উপর আলোচনা করবেন। এতে সকল ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিতে পারবে। এর ফলে একটি গ্রুপ অন্য গ্রুপের রিপোর্টের উপর আলোচনার সুযোগ পাবে। এতে সামগ্রিকভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা অধিকতর লাভবান হবে ।

ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের ফলপ্রসূ আলোচনায় বিবেচনাযোগ্য প্রশ্নাবলি

ফলপ্রসু আলোচনার জন্য অত্যাবশ্যকীয় প্রশ্নপত্র

ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. একজন ব্যবসায়ী বা শিল্পোদ্যোক্তার কী কী গুণাবলি থাকা প্রয়োজন? 

২. ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কি আশাপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে? 

৩. উদ্যোক্তা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং তিনি কীভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছেন। 

৪. প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো কী রূপ? 

৫. প্রতিষ্ঠানের কর্মী নির্বাচন, পদ্ধতি কী রূপ ।

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা উপরে উল্লিখিত বিষয় আলোচনা করে বুঝতে পারবে ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান কতটুকু সফল হয়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীরা পরিদর্শনের ক্ষেত্রে কী রূপ ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে ?

ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান ও বাস্তব ধারণা অর্জন করা এবং হাতে-কলমে জ্ঞান অর্জন করা । ছাত্র-ছাত্রীরা যে রূপ ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে তা নিম্নরূপ:

১. ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ যেন সুন্দর হয় । 

২. ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি থেকে যেন বেশি দূরে না হয় । 

৩. ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক বা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ধরনের হলে ভালো হয় ।

পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে । এতে তারা তাদের প্রত্যাশিত জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।

জ. প্রতিবেদন প্রণয়ন: পরিদর্শন শেষে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের উপর সংগৃহীত তথ্যাবলির আলোকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রতিবেদনের নির্ধারিত কাঠামো অনুসরণ করে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ণ করে । উক্ত প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের নিকট জমা দেবে ।

ঝ. উপসংহারঃ বাস্তব শিক্ষা একজন শিক্ষার্থীকে শিল্প স্থাপন, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তার গুণাবলি পর্যবেক্ষণ, সাধারণ সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং তার সমাধান বের করা ইত্যাদি বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান দান করে। মূলত এই লক্ষ্যেই ব্যবসায়ের শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ।

Content added By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১। পরিদর্শন কী? 

২। পরিদর্শনের সাধারণ উদ্দেশ্য কী?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১। শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের উদ্দেশাবলি আলোচনা কর । 

২। ছাত্র ছাত্রীরা পরিদর্শনের ক্ষেত্রে কী রূপ ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে, উল্লেখ কর ।

রচনামূলক প্রশ্ন 

১। পরিদর্শনের সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশাবলি আলোচনা কর । 

২। ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের কর্মপ্রণালি আলোচনা কর । 

৩। একটি সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের প্রতিবেদন তৈরি কর ।

Content added || updated By