SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - ধর্মীয় উৎসব: কঠিন চীবর দান | NCTB BOOK

কঠিন চীবর দান সম্পর্কিত যে গানটি শুনেছ, তার বাণী লিখে ফেলো।

 

 

গানের নাম:

শিল্পীর নাম:

গীতিকারের নাম:

সুরকারের নাম:

গানের বাণী/কথা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

 

 

 

 

কঠিন চীবর দানের নিয়মাবলি

 

বিনয় অনুসারে কঠিন চীবর দান চারটি পদ্ধতিতে করা যায়।

প্রথম: যেদিন কঠিন চীবর দান করা হবে, সেই দিনের সূর্যোদয় থেকে পরের দিন সূর্যোদয়ের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে সুতা কাটা থেকে শুরু করে কাপড় বোনা, সেলাই করা এবং রং করে চীবর তৈরির যাবতীয় কাজ শেষ করে তা দান করতে হয়।

দ্বিতীয়: ভালো মানের সাদা কাপড় দিয়ে চীবর সেলাই ও রং করে দান দেওয়া যায়। 

তৃতীয়: আগে তৈরি করা চীবর দিয়েও কঠিন চীবর দান দেওয়া যায়। 

চতুর্থ: সেলাই না করেও শুধু সাদা কাপড় কঠিন চীবরের মতো দান করা যায়। তবে সেই সাদা বস্তুটি চীবরে পরিণত করতে হলে পরের দিনের সূর্যোদয়ের আগেই সেলাই ও রং করে কঠিন চীবরে পরিণত করতে হবে।

ভিক্ষু, শ্রামণ, দায়ক-দায়িকা ও উপাসক-উপাসিকাদের মধ্যে যে কেউ কঠিন চীবর দান করতে পারেন। কঠিন চীবর দানের দিনে প্রতিটি বিহারে প্রচুর ধর্মপ্রাণ উপাসক-উপাসিকা উপস্থিত হন। তাঁরা ত্রিশরণসহ পঞ্চশীল গ্রহণ করে ত্রিরত্ন বন্দনা ও বুদ্ধপূজা ইত্যাদি সম্পন্ন করে উপস্থিত পূজনীয় ভিক্ষু সংঘকে উদ্দেশ্য করে কঠিন চীবর দান দিয়ে থাকেন। কঠিন চীবর দানের সময় তাঁরা এই উৎসর্গ মন্ত্রটি উচ্চারণ করেন:

'ইমং কঠিন চীবরং ভিষ্ণু সংঘম্স দেম কঠিনং অত্থরিতুং।' (৩ বার)

এই কথার অর্থ হলো- এই কঠিন চীবর ভিক্ষুসংঘকে কঠিনে আস্তীর্ণ করার জন্য দান করছি।

চীবরকে কঠিনে পরিণত করতে হলে কঠিন চীবর গ্রহণকারী ভিক্ষুসহ কমপক্ষে পাঁচজন ভিক্ষুর প্রয়োজন হয়। চীবর গ্রহণের পর তা ভিক্ষু সীমায় (বিহারের পাশে স্থাপিত বিশেষ স্থান) নিয়ে গিয়ে যে ভিক্ষু চীবর গ্রহণ করবেন, সে ভিক্ষুর নাম উল্লেখ করে ভিক্ষুরা কর্মবাচা পাঠ করে তাঁকে চীবর প্রদান করেন। যে বিহারে ভিক্ষু সীমা নেই, সে ক্ষেত্রে বিহারের উদকসীমা বা বুদ্ধাসনের সামনে বসে ভিক্ষুরা বিনয় অনুসারে দানপ্রক্রিয়া সম্পাদন করেন। যেদিন যে বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন অনেক ভিক্ষুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে সেই বিহারে যতজন ভিক্ষু উপস্থিত থাকেন, প্রত্যেকে চীবরদানের পুণ্য লাভ করেন।

কঠিন চীবর দানের দিনে শুধু চীবর নয়, সদ্ধর্মপ্রাণ দায়ক-দায়িকারা ভিক্ষুসংঘের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বস্তুও দান করে থাকেন। এসব দানীয় বস্তুও কঠিন চীবর দানের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হয়। এতেও কঠিন চীবর দানের মতো পুণ্য হয়। সে কারণে শ্রদ্ধাচিত্তে কঠিন চীবর দান দেওয়া উত্তম কাজ।

 

 

 

কঠিন চীবর দানের সুফল

 

কঠিন চীবর দানের সুফল অনেক বেশি। ভগবান বুদ্ধ ছয় অভিজ্ঞাসম্পন্ন পাঁচ শ ভিক্ষুকে নিয়ে হিমালয়ের অনোমতপ্ত হ্রদে গিয়ে কঠিন চীবরদানের সুফল বর্ণনা করেছিলেন। বুদ্ধ প্রথমে নাগিত স্থবিরকে কঠিন চীবর দানের সুফল বর্ণনা করতে বলেছিলেন। নাগিত স্থবির বলেছিলেন:

 

'কঠিন দানং দাতুন সংঘে গুণ বরুত্তমে

ইতো তিংসে মহাকল্পে নাভি জানামিদুগ্নাতিং।'

অনুবাদ: আজ থেকে ত্রিশকল্প পূর্বে অর্থাৎ শিখি বুদ্ধের সময়ে গুণোত্তম সংঘকে কঠিন চীবর দান করে কোনোদিন নরক যন্ত্রণা ভোগ করিনি।

নাগিত স্থবিরের বর্ণনা মতে, কঠিন চীবর দানের ফলে তিনি আঠার কল্প দেবলোকে দিব্যসুখ উপভোগ করেন; চৌত্রিশবার স্বর্গের ইন্দ্ররূপে জন্মলাভ করে দেবলোক শাসন করেন; মাঝেমধ্যে রাজ চক্রবর্তীর সুখ লাভ করেন। তিনি যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন, সব সময় সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁর কখনো ভোগ সম্পদের অভাব হয়নি। হাজারবার ঐশ্বর্যশালী ব্রহ্মা হয়েছিলেন। মনুষ্যকুলে জন্মগ্রহণ করলে বরাবরই মহাবিত্তশালী ধনীর গৃহে জন্মলাভ করেছিলেন।

নাগিত স্থবিরের পর বুদ্ধ নিজেই কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, অন্যান্য দানীয়বস্তু এক শ বছর দান করলেও একটা কঠিন চীবর দানজনিত পুণ্যের ষোলো ভাগের এক ভাগও হয় না। সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান স্বর্গের মতো রত্নখচিত চুরাশি হাজার সুরম্য বিহার নির্মাণ করে দান করলেও কঠিন চীবর দানের ষোলো ভাগের এক ভাগ হয় না। সম্যক সম্বুদ্ধ, পচ্চেক বুদ্ধ এবং বুদ্ধের মহাশ্রাবকগণ সবাই কঠিন চীবর দানের ফল লাভ করে নির্বাণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

এ ছাড়া ত্রিপিটকে বলা আছে কঠিন চীবর গ্রহণকারী ভিক্ষুগণ ও দায়ক-দায়িকারাও কঠিন চীবর দানের সুফল ভোগ করতে পারেন।

কঠিন চীবরদানকারী দাতারা যে পাঁচটি ফল লাভ করতে পারেন সেগুলো হলো- 

১. সকম্মাবচরে যাবতীয় ভোগ সম্পদের অধিকারী হতে পারা: 

২. ভারনিক্সেপে চলাচলে বিপদমুক্ত থাকতে পারা: 

৩. বহুবখিকো বহু বস্তু (রেশমি, পশমি) লাভ করা; 

৪. নেকা ভোজনলাভী অর্জিত ভোগসম্পদ নির্বিঘ্নে ভোগ করতে পারা এবং 

৫. না দিন্নোদান লন্দ সম্পত্তি পরিপূর্ণ থাকে।

 

কঠিন চীবর দান বিনয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই দান যখন তখন করা যায় না। বছরের নির্ধারিত সময়েই করতে হয়। এদিকে সংঘদান, পুগুলিক দান, অষ্টপরিষ্কার দান বিনয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় বলে যে কোনো সময় তা সম্পাদন করা যায়। এই কারণে কঠিন চীবর দান অন্য দানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কঠিন চীবর দানের ফলে ভিক্ষুসংঘ ও দায়ক-দায়িকা সবারই প্রভৃত পুণ্য হয়। এই পুণ্য লাভের বিবেচনায় কেউ কেউ কঠিন চীবর দানকে 'দানোত্তম' বলে অভিহিত করে থাকেন।

 

কঠিন চীবর দানের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

 

দানোত্তম কঠিন চীবর দান বৌদ্ধদের অন্যতম জাতীয় উৎসব। এই উৎসবের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব অনেক। প্রতি বছর প্রবারণা শেষে এক মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব চলতে থাকে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে নানা আয়োজন চলে। প্রতিটি বিহারকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। প্রত্যেক বৌদ্ধ গ্রামে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের আগমন ঘটে। বিভিন্ন গ্রাম, নগর ও জনপদ হতে পুণ্যার্থীরা কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তখন ঘরে ঘরে যেন আত্মীয়স্বজনের মিলন মেলা বসে।

 

কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের আয়োজন এককভাবে কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। পাড়া-প্রতিবেশী, দায়ক-দায়িকা, বিহার পরিচালনা কমিটি ও ভিক্ষুসংঘ মিলে একত্রে এই দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। এই আয়োজন করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় প্রত্যেকে যার যার মতামত দিতে পারেন। বিভিন্ন জনের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সবার গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থাৎ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা চর্চার সুযোগ করে দেয়। তাছাড়া দায়ক-দায়িকা ও ভিক্ষুসংঘ যখন একত্রে মিলিত হয়, তখন ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও গ্রামের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজ উন্নয়নের নানা বিষয়েও আলোচনা হয়। এতে করে সমাজ উন্নয়নে নানা উপায় বের হয়ে আসে। ভিক্ষুসংঘ ও দায়ক-দায়িকাদের মধ্যে কাজের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের দিনে বিভিন্ন বিহার থেকে অভিজ্ঞ পন্ডিত ভিক্ষুমণ্ডলীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিন মাস বর্ষাব্রতের সময় তাঁরা ধর্ম অধ্যয়ন ও ধ্যান সাধনায় রত থাকেন। কঠিন চীবন দানের দিনে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশে বর্ষাবাস, প্রবারণা, কঠিন চীবর দান ও বৌদ্ধধর্মের দান, শীল ও ভাবনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের উপস্থিতিতে কঠিন চীবর দানসভা দেবসভায় পরিণত হয়। ধর্মদেশনা ও ধর্মসভার মাধ্যমে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘ যেমন গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা প্রচারের সুযোগ পান, তেমনি ধর্ম সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে দায়ক-দায়িকাদেরও ধর্মীয় চেতনা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরাও এ অনুষ্ঠানে তাঁদের কাছ থেকে ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হন। কঠিন চীবরদানকে কেন্দ্র করে অনেক বিহারে সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কঠিন চীবর দান উপলক্ষ্যে স্মারকগ্রন্থ ও বিভিন্ন সাময়িকী প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো বিহারে বিহার পরিচালনা কমিটি বা বৌদ্ধ সংগঠনের উদ্যোগে মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চতর ডিগ্রি লাভ এবং সমাজসেবা ও রাষ্ট্রীয় কোনো কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভিনন্দন ও সম্মাননা জানানো হয়। এ রকম উদ্যোগের মাধ্যমে নবীন প্রজন্ম উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ এবং সমাজকর্মীরা সমাজসেবা ও মানব সেবার কাজে অংশ নিতে উৎসাহ বোধ করেন।

কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতেও সহায়তা করে। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলায় জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে থাকে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার কঠিন চীবর দান এই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়। আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও পূজা-পার্বণে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। এতে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক জানাশোনা, বোঝাপড়া ও হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

অনেক বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরাও ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের গুরুত্ব সবার কাছে তুলে ধরেন। কাজেই কঠিন চীবর দান আন্তঃসম্প্রদায়গত সম্প্রীতি বজায় রাখতে অনন্য ভূমিকা রাখে।

Content added || updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.