SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আদর্শ জীবন চরিত | NCTB BOOK

খন্দকের যুদ্ধের পটভূমি

মক্কার কুরাইশরা উহুদের যুদ্ধে সাময়িকভাবে জয়লাভ করলেও যেসব উদ্দেশে তারা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, সেসবের কোনোটাই অর্জিত হয়নি। তারা মদিনায় রাসুল (সা.) এর শক্তি, সম্মান ও মর্যাদা দুর্বল করতে পারেনি। সিরিয়ার সাথে তাদের বাণিজ্য পথও নিরাপদ হয়নি। তাছাড়া কুরাইশরা ফিরে যাওয়ার পরে মদিনার মুসলমানরা আরো বেশি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হয়ে ওঠে। তাই কুরাইশরা তাদের ধর্মীয়, সামাজিক এবং বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এ সময় মদিনা শহরতলিতে বসবাসরত বেদুঈনরা তাদের লুটতরাজ বজায় রাখার জন্য কুরাইশদের সাথে আঁতাত শুরু করে দেয়। তাছাড়া উহুদ যুদ্ধের পর বনু নাখির গোত্রকে বিশ্বাসঘাতকতা ও অন্তর্যাতমূলক কার্যকলাপের জন্য মদিনা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী লোকদের উসকানি দিতে থাকে। যার ফলে আরেকটি যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। 

যুদ্ধের প্রস্তুতি

৬২৭ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ, মদিনার পার্শ্ববর্তী বেদুঈন এবং মদিনা থেকে বিতাড়িত ইহুদি এই তিনশক্তি একত্রিত হয়। তারা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ১০,০০০ (দশ হাজার) সৈন্যের একটি বিরাট বাহিনী গঠন করে। এই ত্রিশক্তির ঐক্যবদ্ধ আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) ৩,০০০ (তিন হাজার) সৈন্য সংগ্রহ করেন। তিনি শত্রু মোকাবেলার জন্য সাহাবাদের নিয়ে পরামর্শ সভা আহ্বান করেন। সালমান ফার্সির পরামর্শক্রমে পরিখা খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মদিনার দক্ষিন দিক ঘন খেজুর বাগান দ্বারা সুরক্ষিত ছিল আর পূর্বদিকে বনু কুরাইযার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল। তাই মদিনার উত্তর ও পশ্চিম দিক অরক্ষিত ও উন্মুক্ত থাকায় এ দু'দিকে পরিখা খনন করা হয়। প্রায় ৩০০০ মুহাজির ও আনসার কঠোর পরিশ্রম করে এক সপ্তাহে খনন কাজ সমাপ্ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও খনন কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

খন্দক বা পরিখা খননের মাধ্যমে কাফিরদের মোকাবেলা করা হয়েছিল বলে এ যুদ্ধকে পরিখা বা খন্দকের যুদ্ধ বলা হয়। এছাড়া কাফির-মুশরিকদের বিভিন্ন দল একত্রিত হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল বলে এ যুদ্ধ আহযাবের (আহযাব অর্থ দল বা সম্প্রদায়সমূহ) যুদ্ধ নামেও পরিচিত।

যুদ্ধের ঘটনা

কুরাইশদের সৈন্যবাহিনী মদিনার উপকন্ঠে তাঁবু স্থাপন করে। তারা মদিনা শহর রক্ষায় মহানবি (সা.) -এর অভিনব কৌশল দেখে বিস্মিত হল্যে। ৩১ মার্চ ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শুরু হলো। আবু সুফিয়ান ২৭ দিন মদিনা অবেরোধ করে রাখেন। এ সময় কুরাইশবাহিনী পরিখা অতিক্রম করে হামলা চালাতে বারবার ব্যর্থ হয়। আস্তে আস্তে তাদের খাদ্য ও রসদের অভাব দেখা দেয়। প্রবল ঝড়-কঞ্জা ও বাতাসে তাদের তাঁবুগুলো উড়ে যায়। ফলে আবু সুফিয়ান অবরোধ ত্যাগ করে মক্কার ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

যুদ্ধের ফলাফল

মহানবি (সা.) -এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, উন্নত রণকৌশল এবং গোয়েন্দাদের সফলতার কারণে মুসলমানরা এ যুদ্ধে জয়লাভ করে। অপরদিকে কাফির-মুশরিক ও ইহুদিদের সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হয়। মুসলমানদের ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং দৃঢ় মনোবলের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং খাদ্য-রসদের সংকট কাফিরদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ।
এ যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে কাফিরদের দন্ত শেষ হয়ে যায়। তাদের সামরিক শক্তির দুর্বলতা প্রকাশ পায় এবং তাদের সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায়। অপরদিকে মহানবি (সা.)-এর প্রভাব-প্রতিপত্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। মুসলমানদের ধর্ম ও বাণিজ্য প্রসারের সমস্ত বাধা দূর হয়। মদিনার পার্শ্ববর্তী ইহুদি ও বেদুঈন গোত্রের উপর মুসলমানরা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ফলে তারা স্বেচ্ছায় মুসলমানদের মিত্রে পরিণত হয়।

বনু কোরায়যা গোত্রের ইহুদিরা চুক্তি ভঙ্গ করে বিশ্বাসঘাতকতা করায় তাদের যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয়। 

 

Content added || updated By

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.